শিল্প-বাণিজ্য
বিশ্বে পরিবেশবান্ধব কারখানায় শীর্ষস্থানে বাংলাদেশ

বিশ্বের ১০০টি পরিবেশবান্ধব সুবজ কারখানার মধ্যে ৫৬টি রয়েছে বাংলাদেশে। দিন যতই যাচ্ছে দেশে গ্রিণ ফ্যাক্টরি বা পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা ততই বাড়ছে। অনেক ধাক্কা সামাল দিয়ে এক দশকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের পোশাক খাত। বিশ্বে হয়েছে রোল মডেল।
গ্রিন ফ্যাক্টরি কী?
একটি ফ্যাক্টরিতে সকাল সকাল দলবেঁধে সেখানে প্রবেশ করেন কর্মীরা। যাদের কাছে তাদের কর্মস্থল আতঙ্ক নয়, স্বস্তির জায়গা। যেখানে বসে প্রকৃতির সতেজ বাতাস নেয়া যায়। ভারী ভারী যন্ত্রপাতির ভিড়েও যেখানে প্রকৃতির গায়ে কোনো আঁচ লাগে না। গ্রিন ফ্যাক্টরির চিত্র এমনই। গ্রিন ফ্যাক্টরি বা সবুজ কারখানা হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব কারখানা। যে কারখানায় উন্নতমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়ে, তবে পরিবেশের ক্ষতি করে নয়।
পুরো বিশ্বের পরিবেশই যখন প্রতিনিয়তই উন্নত বিশ্বের কারণে দূষিত হচ্ছে তখন পোশাক খাতের যেসব ক্রেতা আছেন তারা চাচ্ছেন পোশাক কারখানাগুলো পরিবেশবান্ধব ভাবে গড়ে উঠুক। কারখানার খারাপ প্রভাব পরিবেশের গায়ে না লাগুক। এরই ধারাবাহিকতায় ইউনাইটেড স্টেটস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) নামক একটি প্রতিষ্ঠান কোন স্থাপনা বা ভবনের পরিবেশগত কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভাইরোনমেন্ট ডিজাইন বা লিড নামক একটি সার্টিফিকেশন পদ্ধতি প্রবর্তন করে। যার মাধ্যমে কারখানাটি পরিবেশবান্ধব কিনা যাচাই করা হয়।
গ্রিন ফ্যাক্টরির প্রকারভেদ
মোট চার ক্যাটাগরিতে ভাগ করে গ্রিন ফ্যাক্টরির সনদ দেয়া হয়। পরিবেশবান্ধব স্থাপনার শর্তগুলো কতটা মানা হয়েছে তা পরীক্ষা করে ইউএসজিবিসি সনদ প্রদান করে। মোট ১১০ পয়েন্টের মধ্যে যাচাই করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে ভালো ক্যাটাগরি হচ্ছে প্লাটিনাম। যার জন্য ১১০ এর মধ্যে পেতে হয় ৮০’র বেশি পয়েন্ট।
এরপরের ক্যাটাগরি গোল্ড। যে ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত হলে থাকতে হয় ৬০-৬৯ পয়েন্ট। এরপর আসে সিলভার ক্যাটাগরি তার জন্য থাকতে হয় ৫০-৫৯ পয়েন্ট। আর সবশেষ ক্যাটাগরি সার্টিফাইড ক্যাটাগরি। তার জন্য থাকতে হয় ৪০-৪৯ পয়েন্ট।
কীভাবে নির্ধারিত হয়?
এই পয়েন্টগুলো নির্ধারণের জন্য আবার শর্ত থাকে। লিড কারখানার স্বীকৃতি পেতে হলে বেশ অনেকগুলো শর্ত পালন করতে হয়। সবার আগে প্রাধান্য দেয়া হয় কারখানা তৈরিতে যে নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার হয়েছে তাতে যেন কার্বন নিঃসরণ কম হয়। এ ছাড়া ইট, সিমেন্ট ও অন্যান্য সামগ্রী পুনরুৎপাদনের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে কিনা।
সব উপকরণ কারখানার সবচেয়ে কাছের প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা হয়েছে কিনা। কারণ, এতে পরিবহনের জন্য জ্বালানি কম খরচ হয়। যেখানে কারখানা হবে তার নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে শ্রমিকদের বাসস্থান, স্কুল, বাজার, বাস বা টেম্পো স্ট্যান্ড থাকতে হবে। কারণ দূরে হলেই শ্রমিকদের কারখানায় আসতে গাড়ির প্রয়োজন হবে। এতে জ্বালানি খরচের পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণ হবে।
১১০ পয়েন্টকে আবার সাতটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে এই সার্টিফিকেশন দেয়া হয়। সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয় প্রাকৃতিক শক্তির ব্যবহারকে। এর জন্য বরাদ্দ থাকে ৩৫ পয়েন্ট। এরপর সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট জমির ভৌগোলিক অবস্থানের ওপর। এর জন্য বরাদ্দ আছে ২৬ পয়েন্ট। অভ্যন্তরীণ পরিবেশের জন্য থাকে ১৫ পয়েন্ট, পরিবেশ বান্ধব নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের জন্য থাকে ১৪ পয়েন্ট। পানি সাশ্রয়ের জন্য থাকে ১০ পয়েন্ট। অতি সাম্প্রতিক উদ্ভাবিত যন্ত্রের ব্যবহারের জন্য ৬ পয়েন্ট এবং এলাকাভিত্তিক প্রাধান্যের জন্য ৪ পয়েন্ট।
এছাড়াও বেশ কিছু শর্ত থাকে। যেমন- কারখানায় সূর্যের আলোর কী পরিমাণ ব্যবহার হয়, বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার করা হয় কিনা, সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতি ব্যবহার করা হয় কিনা, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে তা ব্যবহার করা হয় কিনা, কারখানা নির্মাণে নির্দিষ্ট পরিমাণ খোলা জায়গা রাখা হয়েছে কিনা, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আছে কিনা, বৈদ্যুতিক ফিটিংস স্থাপন ছাড়াও অগ্নি দুর্ঘটনা এড়াতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে কিনা।
এমন আরও সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বিষয়কে যাচাই করা হয় লিড সার্টিফিকেট দেয়ার জন্য। মোট কথা একটি পোশাক কারখানা তার নিয়মে কাজ করবে তবে সেখানে কর্মীদের শতভাগ নিরাপত্তা থাকতে, পরিবেশের নিরাপত্তা থাকতে হবে। আর এর ওপর নির্ভর করবে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা সেই কারখানার পোশাক কিনবে কি কিনবে না।
বাংলাদেশের সফলতা
এবার আসি বাংলাদেশের সফলতার গল্পে। তবে সফলতায় আসার আগে সেই কালো অধ্যায়কে স্মরণ করতে হবে। ২০১২-১৩ সেই সময়টা বাংলাদেশের পোশাক খাতের ইতিহাসের জন্য সবচেয়ে খারাপ সময় বলা যায়। তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ড ও রানাপ্লাজা ধসে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পোশাক খাতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। বাংলাদেশি পণ্য বয়কটের ডাক ওঠে।
এরপরই মূলত ঘটে সবুজ বিপ্লব। যা বাংলাদেশের পোশাক খাতকে বিশ্ব-দরবারে নতুন করে হাজির করে। ধীরে ধীরে বাংলাদেশের পোশাক আবার ফিরে পেতে থাকে গ্রহণযোগ্যতা। শুধু তাই নয়, এরপর আর বাংলাদেশের ধারে কাছে আসতে পারেনি বিশ্বের অন্য কোনো দেশ।
বাংলাদেশে বর্তমানে মোট ২১৮টি লিড কারখানা আছে। যার মধ্যে প্লাটিনাম ৮৪টি, গোল্ড ১২০টি, সিলভার ১০টি, সার্টিফাইড ৪টি। বিশ্বসেরা ১০০টি কারখানার মধ্যে ৫৬টিই বাংলাদেশের।
বাংলাদেশের পরে আছে পাকিস্তান তবে সে সংখ্যা মাত্র ৯ টি। আবার প্রথম ১০ টির মধ্যে ৮ টি বাংলাদেশের কারখানা। বাংলাদেশের সফলতা চোখে পড়ার মত।
গ্রিন ফ্যাক্টরি হয়ে লাভ কী?
অতিরিক্ত খরচ করে, কারখানাকে পরিবেশ বান্ধব করে পরিবেশের অনেক লাভ হচ্ছে তা ঠিক, তবে ব্যবসায়ীদের কী লাভ? পরিবেশ বান্ধব কারখানা তৈরিতে অতিরিক্ত খরচ যদি হয়ও সেই খরচটাকে ব্যবসায়ীরা দেখতে পারে বিনিয়োগ হিসেবে। কারণ বর্তমানে পরিবেশবান্ধব কারখানায় পণ্য তৈরি হওয়া মানে বিশ্ববাজারে একধাপ এগিয়ে থাকা।
পোশাক খাতের ক্রেতারা অর্ডার করে এই গ্রিন ফ্যাক্টরি দেখে। তিনি যেই পণ্যটি কিনছেন সে পণ্য তৈরিতে পরিবেশের বা কর্মীর কোনো ক্ষতি হয়েছে কিনা এটা আন্তর্জাতিক মহলে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। এগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক বড় বিষয়। তাই পরিবেশ বান্ধব কারখানাগুলোর আন্তর্জাতিক বাজারে গ্রহণযোগ্যতাও বেশি থাকে। স্বাভাবিকভাবে লাভের হিসেবের পাল্লা তাদেরই ভারী থাকবে।
কাফি

শিল্প-বাণিজ্য
ঢাকায় পর্যটন মেলা ৩০ অক্টোবর

দেশের সবচেয়ে বড় ভ্রমণ ও পর্যটন মেলা ১৩তম বাংলাদেশ ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ফেয়ার (বিটিটিএফ) আয়োজন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন (টোয়াব)।
আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর ২০২৫ তিন দিনব্যাপী এই মেলা অনুষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে (বিসিএফসিসি)।
রবিবার (২০ জুলাই) টোয়াব কার্যালয়ে এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (এটিজেএফবি) কার্যনির্বাহী কমিটির সঙ্গে এক আলোচনা সভায় এ কথা জানান টোয়াবের সভাপতি মোহাম্মদ রাফিউজ্জামান।
এসময় তিনি বাংলাদেশের পর্যটন ব্যবসার নানা বাধাবিপত্তি ও সমস্যার কথা তুলে ধরেন। সাংবাদিকদের লেখনীর মাধ্যমে এসব সমস্যার বিষয়ে তুলে এনে এই খাতকে অনেকটা এগিয়ে নেওয়া সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দেশের সবচেয়ে বড় ভ্রমণ ও পর্যটন মেলা ১৩তম বাংলাদেশ ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ফেয়ার (বিটিটিএফ) আয়োজন করতে যাচ্ছে
আলোচনায় টোয়াব সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের পর্যটন খাতের রয়েছে অপার সম্ভাবনা, তবে এর পূর্ণ বাস্তবায়নে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যথাযথ অবকাঠামোর ঘাটতি, দক্ষ জনবলের অভাব, পরিকল্পিত পর্যটন নীতির প্রয়োগে দুর্বলতা, নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা সংক্রান্ত সমস্যা—এসবই আমাদের পর্যটন শিল্পের বিকাশে অন্তরায় হয়ে আছে। এসব সমস্যার টেকসই সমাধানে সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ, আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ ও গন্তব্য উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি। টোয়াব ও সাংবাদিকদের সমন্বয়ে এই সমস্যাগুলোর ওপর আলোকপাত করে কার্যকর সমাধানের সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে যা এই খাতকে সামনে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে।
পর্যটন মেলা নিয়ে তিনি বলেন, ২০০৭ সাল থেকে প্রতি বছর এই মেলার আয়োজন করে আসছে টোয়াব। দেশের পর্যটন খাতে তারা মূল অংশীদার হিসেবে কাজ করছে। মেলাটি শুধু দেশের পর্যটন শিল্পেই নয়, বরং প্রতিবেশী ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশি-বিদেশি অংশগ্রহণকারীদের আগ্রহ বাড়ছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
এ সময় এটিজেএফবির সভাপতি তানজিম আনোয়ার বলেন, বিটিটিএফ পর্যটন শিল্প বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। এই মেলার মাধ্যমে দেশি-বিদেশি পর্যটন উদ্যোক্তা ও অংশীজনদের মধ্যে সংযোগ সৃষ্টি হয়, যা পর্যটন শিল্পে বিনিয়োগ, নীতি সহায়তা এবং নতুন গন্তব্য প্রসারে ভূমিকা রাখে।
দেশের সবচেয়ে বড় ভ্রমণ ও পর্যটন মেলা ১৩তম বাংলাদেশ ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ফেয়ার (বিটিটিএফ) আয়োজন করতে যাচ্ছে
এবারের আয়োজনে আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ বাড়ার যে আভাস পাওয়া যাচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের পর্যটন খাতের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত। এটিজেএফবি সবসময় এই খাতের টেকসই উন্নয়নের পক্ষে এবং আমরা এই আয়োজনের সফলতা কামনা করছি।
এটিজেএফবির সাধারণ সম্পাদক ও এশিয়ান টেলিভিশনের প্রধান প্রতিবেদক বাতেন বিপ্লব বলেন, পর্যটন উন্নয়নের জন্য শুধু মেলা আয়োজনই নয়, এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নীতিমালা, প্রচার ও আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে সক্ষম সেবা নিশ্চিত করাও জরুরি। বিটিটিএফের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো বাংলাদেশের পর্যটনকে বিশ্ব-দরবারে তুলে ধরার সুযোগ তৈরি করে, তবে এর সুফল পেতে হলে আমাদের সামগ্রিক খাতকে আরও পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে নিতে হবে।
এবারের আয়োজনে যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, ভারত, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, ফিলিপাইন এবং চীনসহ মোট ২২০টি স্টল থাকবে। থাকবে বিটুবি এক্সচেঞ্জ, রাউন্ড টেবিল আলোচনা, সেমিনার, গন্তব্য উপস্থাপনা, সংবাদ সম্মেলন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আয়োজকদের ভাষ্যে, এসব সুযোগ যেকোনো অংশগ্রহণকারীর জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
পাশাপাশি, প্রতিবেশী দেশের বিভিন্ন ন্যাশনাল ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন (এনটিও), বিদেশি ট্যুর অপারেটর ও অংশগ্রহণকারীদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।
আলোচনা সভায় এটিজেএফবির সহ-সভাপতি রাজীব ঘোষ, যুগ্ম সম্পাদক মো. শফিউল্লাহ সুমন, সাংগঠনিক সম্পাদক জুলহাস কবীর ও আদনান রহমান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আলতাব হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য মাসুদ রুমি, রাশিদুল হাসান ও গোলাম মর্তুজা অন্তু উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন টোয়াবের ডিরেক্টর (ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, ডিরেক্টর (প্রোপার্টি অ্যান্ড অ্যাসেটস) জিয়াউর রহমান জাকির, টোয়াবের সাবেক সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশী প্রমুখ।
শিল্প-বাণিজ্য
বাংলাদেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়ে বিশাল তালিকা পাঠালো যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়ে পণ্যের ‘বিশাল’ তালিকা পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানান, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) গতকাল রোববার তাকে এসব পণ্যের একটি তালিকা ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠিয়েছে।
বাংলাদেশের ওপর আরোপিত ট্রাম্প-শুল্ক নিয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত আলোচনায় অংশগ্রহণ শেষে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার পর গতরাতে টেলিফোনে এ তথ্য জানান তিনি। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রধান বাণিজ্য আলোচনাকারী সংস্থার সঙ্গে আলোচনার পর ঢাকায় ফিরেছেন।
মাহবুবুর বলেন, ‘ওয়াশিংটন ডিসিতে ইউএসটিআরের সঙ্গে আলোচনার সময় কয়েকটি বিষয় ছাড়া প্রায় সব বিষয়ে উভয় দেশ একমত হয়েছে।’ কোন কোন পণ্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তালিকা বিশাল’। সুনির্দিষ্ট সংখ্যা তিনি তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বহু বছর ধরে অনেক মার্কিন পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়ে আসছে। যেমন: তুলা, গম, সয়াবিন বীজ ও তেল এবং অন্যান্য কৃষিপণ্য আমদানিতে শুল্ক নেই।’
আরও পণ্য এই শুল্কমুক্ত তালিকায় যুক্ত করার এখতিয়ার এককভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেই এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মতামত নিতে আগামী শনিবার একটি বৈঠক হবে বলে জানান মাহবুবুর।
এরপর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবে, যাতে আগামী ১ আগস্ট থেকে ৩৫ শতাংশ ট্রাম্প-শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগেই নতুন করে শুল্কহার চূড়ান্ত করা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত আলোচনায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ হারে শুল্ক নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। পরবর্তী বৈঠকও ওয়াশিংটন ডিসিতে হওয়ার কথা রয়েছে।
গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প-শুল্কের ঘোষণা আসার পর বাংলাদেশ অনেক মার্কিন পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করে এবং উড়োজাহাজ, এলএনজি, তুলা, গম, সয়াবিনসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য আমদানির পরিমাণ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেয়।
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করে থাকে। গত বছর বাংলাদেশ আট বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে এবং দেশটি থেকে আমদানি করেছে দুই বিলিয়ন ডলারের পণ্য।
‘ফ্রেমওয়ার্ক ডিল’
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গতকাল বলেছেন, ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ফ্রেমওয়ার্ক ডিল করতে চায়—যেখানে নিরাপত্তা উদ্বেগসহ বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলোচনা শুধু বাণিজ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি বলেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্র) তাদের জাতীয় নিরাপত্তাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে।’
তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র মূল্যায়ন করছে যে বাংলাদেশ কীভাবে অন্যান্য দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি কাঠামো প্রস্তুত করা হচ্ছে এবং বিষয়টি আলোচনাধীন।’
ওয়াশিংটন ও ঢাকার মধ্যকার আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে এবং ট্রাম্প-শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগেই আলোচনা শেষ হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
কাফি
শিল্প-বাণিজ্য
আট মাস পর ভারত থেকে এলো ১০ টন কাঁচা মরিচ

দীর্ঘ আট মাস বন্ধ থাকার পর দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ভারত থেকে দুটি ট্রাকে করে ১০ টনের বেশি কাঁচা মরিচ বাংলাদেশের হিলি স্থলবন্দরে প্রবেশ করে।
হিলি স্থলবন্দর পরিচালনাকারী পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকেলে বগুড়ার এন পি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ৩ টন ৫০০ কেজি ও হিলি স্থলবন্দরের মেসার্স সততা বাণিজ্যালয় নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ৬ টন ৭২০ কেজি কাঁচা মরিচ আমদানি করে।
হিলি স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ গত বছরের ১৪ নভেম্বর হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৩টি ট্রাকে ৩১ টন ৮৩ কেজি কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছিল। এরপর ৭ মাস ২৬ দিন ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি বন্ধ ছিল।
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিরামপুর ও আশপাশের উপজেলার খুচরা বাজারে কাঁচা মরিচ মানভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। তবে মে মাসের শেষে দাবদাহের কারণে জমিতে থাকা কাঁচা মরিচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে উৎপাদনও কমে যায়। ফলে সে সময় থেকে বিরামপুর ও হিলি বাজারে কাঁচা মরিচ খুচরা বাজারে মানভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছিল। তবে গতকাল সকালে বিরামপুরের খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়।
বিরামপুর পৌর শহরের নতুনবাজার এলাকায় সবজির পাইকারি বাজারের কাঁচা মরিচের ব্যবসায়ী মানিক হোসেন বলেন, গত মাসে খরার কারণে কাঁচা মরিচের উৎপাদন ব্যাহত হয়। এতে বাজারে সরবরাহ কমে গেছে, দামও বাড়তি। তিন দিন আগেও পাইকারিতে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গতকাল সকালে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ (বিজলী প্লাস) ১৩০ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি করেছি। ভারত থেকে কাঁচা মরিচের আমদানি বাড়লে বাজারে দামও কমবে।
হিলি স্থলবন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী সঙ্গনিরোধ কর্মকর্তা ইউসুফ আলী বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে কাঁচা মরিচ আমদানির জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে এ পর্যন্ত তিনটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আড়াই হাজার টন কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি (আইপি) পেয়েছে।
শিল্প-বাণিজ্য
৪৩ পণ্য রপ্তানিতে আগের মতোই প্রণোদনা পাবেন ব্যবসায়ীরা

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৪৩ খাতে রপ্তানি প্রণোদনা ও নগদ সহায়তা আগের মতোই বহাল রেখেছে সরকার। জাহাজীকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে রপ্তানি প্রণোদনা এবং নগদ সহায়তার হার পণ্যভেদে দশমিক ৩০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। এ নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, তিন কারণে রপ্তানি খাতে আর্থিক প্রণোদনা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের সময়সীমা আরও পাঁচ মাস পিছিয়ে দিয়েছে সরকার। আগামী বছরের (২০২৬) জুলাই থেকে এটি কার্যকর করার কথা ছিল। এখন তা পিছিয়ে আগামী বছরের নভেম্বর মাস নির্ধারণ করা হয়েছে।
সূত্রটি জানায়, যে কারণে এই সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে তা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর অধিক হারে শুল্কারোপ, স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে ভারতের বিধিনিষেধ এবং গত বছর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিল্প খাতে অস্থিরতা। বিগত সাত অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি খাতে প্রণোদনা দেওয়ার পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। এই আর্থিক প্রণোদনার সিংহভাগ (৮০ ভাগের বেশি) পেয়েছে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার গত বছরের দুই দফায় রপ্তানি প্রণোদনা কমায়। তখন বলা হয়, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশ হবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধিবিধান অনুসারে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর কোনো ধরনের রপ্তানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা দেওয়া যায় না। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর একবারে সহায়তা প্রত্যাহার করা হলে রপ্তানি খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তাই ধাপে ধাপে সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
কোন খাতে কত প্রণোদনা
নগদ সহায়তার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাত। দেশি সুতা ব্যবহার করে উৎপাদিত তৈরি পোশাক নতুন বাজারে রপ্তানি করলে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৯ শতাংশ প্রণোদনা মিলবে; যা গত বছরের জুনের আগে ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ।
বর্তমানে দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনা ১০ শতাংশ এবং ক্রাস্ট ও ফিনিশড লেদারে ৬ শতাংশ প্রণোদনা মিলবে। এ ছাড়া প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যে নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ মিলবে।
কয়েক বছর ধরেই পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি কমছে। তারপরও বৈচিত্র্যময় পাটপণ্য রপ্তানিতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা বহাল থাকবে। এ ছাড়া পাটজাত পণ্যে ৫ শতাংশ এবং পাট সুতায় প্রণোদনা মিলবে ৩ শতাংশ। একইভাবে হালকা প্রকৌশল পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ, ওষুধের কাঁচামালে ৫ শতাংশ, বাইসাইকেল রপ্তানিতে ৩ শতাংশ এবং আসবাব পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা থাকবে ৮ শতাংশ। এ ছাড়া হিমায়িত চিংড়ি, মোটরসাইকেল, ইলেকট্রনিকস, পেট বোতল ফ্লেক্স, জাহাজ, প্লাস্টিক পণ্য, হাতে তৈরি পণ্য যেমন হোগলা, খড়, আখ বা নারিকেলের ছোবড়া, তৈরি পোশাক কারখানার ঝুট, গরু, মহিষের নাড়ি, ভুঁড়ি, শিং ও রগ, কাঁকড়া, কুঁচে, আগর, আঁতর ইত্যাদি পণ্য রপ্তানিতেও নগদ সহায়তা আগের মতো থাকবে।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, রপ্তানিতে নগদ সহায়তার অর্থ পেতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয় ব্যবসায়ীদের। এটি কমিয়ে আনতে প্রবাসী আয়ের বিপরীতে যেভাবে প্রণোদনা দেয়, সেভাবে রপ্তানিকারকদেরও দিতে পারে সরকার। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভারত বিভিন্নভাবে প্রণোদনা দিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহ দিচ্ছে। তবে বাংলাদেশে ঘটছে উল্টো। এদিকে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি খরচ বাড়লেও প্রণোদনা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
শিল্প-বাণিজ্য
আশুরায় হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রফতানি বন্ধ

পবিত্র আশুরা উপলক্ষে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। তবে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টে যাত্রী পারাপার কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।
রবিবার (৬ জুলাই) হিলি কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফএজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, রোববার পবিত্র আশুরা উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকায় বন্ধ রয়েছে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যসহ সকল কার্যক্রম। তবে ছুটি শেষে আগামীকাল সোমবার (৭ জুলাই) থেকে পুনরায় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দুদেশের মাঝে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য কার্যক্রম চালু হবে।