শিল্প-বাণিজ্য
বিশ্বে পরিবেশবান্ধব কারখানায় শীর্ষস্থানে বাংলাদেশ
বিশ্বের ১০০টি পরিবেশবান্ধব সুবজ কারখানার মধ্যে ৫৬টি রয়েছে বাংলাদেশে। দিন যতই যাচ্ছে দেশে গ্রিণ ফ্যাক্টরি বা পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা ততই বাড়ছে। অনেক ধাক্কা সামাল দিয়ে এক দশকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের পোশাক খাত। বিশ্বে হয়েছে রোল মডেল।
গ্রিন ফ্যাক্টরি কী?
একটি ফ্যাক্টরিতে সকাল সকাল দলবেঁধে সেখানে প্রবেশ করেন কর্মীরা। যাদের কাছে তাদের কর্মস্থল আতঙ্ক নয়, স্বস্তির জায়গা। যেখানে বসে প্রকৃতির সতেজ বাতাস নেয়া যায়। ভারী ভারী যন্ত্রপাতির ভিড়েও যেখানে প্রকৃতির গায়ে কোনো আঁচ লাগে না। গ্রিন ফ্যাক্টরির চিত্র এমনই। গ্রিন ফ্যাক্টরি বা সবুজ কারখানা হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব কারখানা। যে কারখানায় উন্নতমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়ে, তবে পরিবেশের ক্ষতি করে নয়।
পুরো বিশ্বের পরিবেশই যখন প্রতিনিয়তই উন্নত বিশ্বের কারণে দূষিত হচ্ছে তখন পোশাক খাতের যেসব ক্রেতা আছেন তারা চাচ্ছেন পোশাক কারখানাগুলো পরিবেশবান্ধব ভাবে গড়ে উঠুক। কারখানার খারাপ প্রভাব পরিবেশের গায়ে না লাগুক। এরই ধারাবাহিকতায় ইউনাইটেড স্টেটস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) নামক একটি প্রতিষ্ঠান কোন স্থাপনা বা ভবনের পরিবেশগত কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভাইরোনমেন্ট ডিজাইন বা লিড নামক একটি সার্টিফিকেশন পদ্ধতি প্রবর্তন করে। যার মাধ্যমে কারখানাটি পরিবেশবান্ধব কিনা যাচাই করা হয়।
গ্রিন ফ্যাক্টরির প্রকারভেদ
মোট চার ক্যাটাগরিতে ভাগ করে গ্রিন ফ্যাক্টরির সনদ দেয়া হয়। পরিবেশবান্ধব স্থাপনার শর্তগুলো কতটা মানা হয়েছে তা পরীক্ষা করে ইউএসজিবিসি সনদ প্রদান করে। মোট ১১০ পয়েন্টের মধ্যে যাচাই করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে ভালো ক্যাটাগরি হচ্ছে প্লাটিনাম। যার জন্য ১১০ এর মধ্যে পেতে হয় ৮০’র বেশি পয়েন্ট।
এরপরের ক্যাটাগরি গোল্ড। যে ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত হলে থাকতে হয় ৬০-৬৯ পয়েন্ট। এরপর আসে সিলভার ক্যাটাগরি তার জন্য থাকতে হয় ৫০-৫৯ পয়েন্ট। আর সবশেষ ক্যাটাগরি সার্টিফাইড ক্যাটাগরি। তার জন্য থাকতে হয় ৪০-৪৯ পয়েন্ট।
কীভাবে নির্ধারিত হয়?
এই পয়েন্টগুলো নির্ধারণের জন্য আবার শর্ত থাকে। লিড কারখানার স্বীকৃতি পেতে হলে বেশ অনেকগুলো শর্ত পালন করতে হয়। সবার আগে প্রাধান্য দেয়া হয় কারখানা তৈরিতে যে নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার হয়েছে তাতে যেন কার্বন নিঃসরণ কম হয়। এ ছাড়া ইট, সিমেন্ট ও অন্যান্য সামগ্রী পুনরুৎপাদনের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে কিনা।
সব উপকরণ কারখানার সবচেয়ে কাছের প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা হয়েছে কিনা। কারণ, এতে পরিবহনের জন্য জ্বালানি কম খরচ হয়। যেখানে কারখানা হবে তার নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে শ্রমিকদের বাসস্থান, স্কুল, বাজার, বাস বা টেম্পো স্ট্যান্ড থাকতে হবে। কারণ দূরে হলেই শ্রমিকদের কারখানায় আসতে গাড়ির প্রয়োজন হবে। এতে জ্বালানি খরচের পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণ হবে।
১১০ পয়েন্টকে আবার সাতটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে এই সার্টিফিকেশন দেয়া হয়। সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয় প্রাকৃতিক শক্তির ব্যবহারকে। এর জন্য বরাদ্দ থাকে ৩৫ পয়েন্ট। এরপর সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট জমির ভৌগোলিক অবস্থানের ওপর। এর জন্য বরাদ্দ আছে ২৬ পয়েন্ট। অভ্যন্তরীণ পরিবেশের জন্য থাকে ১৫ পয়েন্ট, পরিবেশ বান্ধব নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের জন্য থাকে ১৪ পয়েন্ট। পানি সাশ্রয়ের জন্য থাকে ১০ পয়েন্ট। অতি সাম্প্রতিক উদ্ভাবিত যন্ত্রের ব্যবহারের জন্য ৬ পয়েন্ট এবং এলাকাভিত্তিক প্রাধান্যের জন্য ৪ পয়েন্ট।
এছাড়াও বেশ কিছু শর্ত থাকে। যেমন- কারখানায় সূর্যের আলোর কী পরিমাণ ব্যবহার হয়, বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার করা হয় কিনা, সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতি ব্যবহার করা হয় কিনা, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে তা ব্যবহার করা হয় কিনা, কারখানা নির্মাণে নির্দিষ্ট পরিমাণ খোলা জায়গা রাখা হয়েছে কিনা, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আছে কিনা, বৈদ্যুতিক ফিটিংস স্থাপন ছাড়াও অগ্নি দুর্ঘটনা এড়াতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে কিনা।
এমন আরও সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বিষয়কে যাচাই করা হয় লিড সার্টিফিকেট দেয়ার জন্য। মোট কথা একটি পোশাক কারখানা তার নিয়মে কাজ করবে তবে সেখানে কর্মীদের শতভাগ নিরাপত্তা থাকতে, পরিবেশের নিরাপত্তা থাকতে হবে। আর এর ওপর নির্ভর করবে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা সেই কারখানার পোশাক কিনবে কি কিনবে না।
বাংলাদেশের সফলতা
এবার আসি বাংলাদেশের সফলতার গল্পে। তবে সফলতায় আসার আগে সেই কালো অধ্যায়কে স্মরণ করতে হবে। ২০১২-১৩ সেই সময়টা বাংলাদেশের পোশাক খাতের ইতিহাসের জন্য সবচেয়ে খারাপ সময় বলা যায়। তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ড ও রানাপ্লাজা ধসে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পোশাক খাতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। বাংলাদেশি পণ্য বয়কটের ডাক ওঠে।
এরপরই মূলত ঘটে সবুজ বিপ্লব। যা বাংলাদেশের পোশাক খাতকে বিশ্ব-দরবারে নতুন করে হাজির করে। ধীরে ধীরে বাংলাদেশের পোশাক আবার ফিরে পেতে থাকে গ্রহণযোগ্যতা। শুধু তাই নয়, এরপর আর বাংলাদেশের ধারে কাছে আসতে পারেনি বিশ্বের অন্য কোনো দেশ।
বাংলাদেশে বর্তমানে মোট ২১৮টি লিড কারখানা আছে। যার মধ্যে প্লাটিনাম ৮৪টি, গোল্ড ১২০টি, সিলভার ১০টি, সার্টিফাইড ৪টি। বিশ্বসেরা ১০০টি কারখানার মধ্যে ৫৬টিই বাংলাদেশের।
বাংলাদেশের পরে আছে পাকিস্তান তবে সে সংখ্যা মাত্র ৯ টি। আবার প্রথম ১০ টির মধ্যে ৮ টি বাংলাদেশের কারখানা। বাংলাদেশের সফলতা চোখে পড়ার মত।
গ্রিন ফ্যাক্টরি হয়ে লাভ কী?
অতিরিক্ত খরচ করে, কারখানাকে পরিবেশ বান্ধব করে পরিবেশের অনেক লাভ হচ্ছে তা ঠিক, তবে ব্যবসায়ীদের কী লাভ? পরিবেশ বান্ধব কারখানা তৈরিতে অতিরিক্ত খরচ যদি হয়ও সেই খরচটাকে ব্যবসায়ীরা দেখতে পারে বিনিয়োগ হিসেবে। কারণ বর্তমানে পরিবেশবান্ধব কারখানায় পণ্য তৈরি হওয়া মানে বিশ্ববাজারে একধাপ এগিয়ে থাকা।
পোশাক খাতের ক্রেতারা অর্ডার করে এই গ্রিন ফ্যাক্টরি দেখে। তিনি যেই পণ্যটি কিনছেন সে পণ্য তৈরিতে পরিবেশের বা কর্মীর কোনো ক্ষতি হয়েছে কিনা এটা আন্তর্জাতিক মহলে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। এগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক বড় বিষয়। তাই পরিবেশ বান্ধব কারখানাগুলোর আন্তর্জাতিক বাজারে গ্রহণযোগ্যতাও বেশি থাকে। স্বাভাবিকভাবে লাভের হিসেবের পাল্লা তাদেরই ভারী থাকবে।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
শিল্প-বাণিজ্য
দুর্গা পূজায় ছয়দিন বন্ধ থাকবে ভোমরা বন্দর
শারদীয় দুর্গা পূজা উপলক্ষে ছয় দিন বন্ধ থাকবে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। সরকারি ছুটির সঙ্গে মিল রেখে উভয় দেশের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৯ অক্টোবর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত ভোমরা স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ভোমরা স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মাকসুদ খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ উৎসব দুর্গা পূজা উপলক্ষে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য আগামী ৯ অক্টোবর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ছয়দিন বন্ধ থাকবে। ১৫ অক্টোবর থেকে বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পুনরায় শুরু হবে।
ভারত ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান মাকসুদ খান।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
দুই মাসে রাজস্ব ঘাটতি ১৫ হাজার কোটি টাকা
জুলাই ও আগস্টে সরকারবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে সরকারের রাজস্ব আয়ে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪২ হাজার ১০৬ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ১৫ হাজার ৬৯ কোটি টাকা কম।
২০২৩-২৪ অর্থ বছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৪৭ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ শতাংশ। রাজস্ব বোর্ড সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। যার মধ্যে আয়কর ১ লাখ ৭৭ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা, মূসক ১ লাখ ৭৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ও শুল্ক রয়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
অর্থবছরের প্রথম ২ মাসে শুল্ক আদায়ের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ১৭ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ১৪ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা। কম আদায় হয়েছে ২ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় শুল্কে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ শতাংশ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ১৬ হাজার ৭৪ কোটি টাকার শুল্ক আদায় হয়েছিল।
এছাড়া, আদায়ের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ২১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ১৬ হাজার ২৮ কোটি টাকা। কম আদায় হয়েছে ৫ হাজার ১২২ কোটি টাকা।
গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় মূসকে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ শতাংশ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ১৮ হাজার ২৬২ কোটি টাকার মূসক আদায় হয়েছিল।
আদায়ের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ১৮ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ১১ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা। কম আদায় হয়েছে ৭ হাজার ৪১ কোটি টাকা।
গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আয়করে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ শতাংশ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ১৩ হাজার ২২৪ কোটি টাকার আয়কর আদায় হয়েছিল।
সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, বিগত সরকারের বেঁধে দেওয়া রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অন্তর্বর্তী সরকার কাটছাঁট করবে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত সরকারের প্রকৃত তথ্য ‘ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানোর’ প্রবণতা থেকে অন্তর্বর্তী সরকার বের হয়ে এসেছে। ফলে রাজস্ব আদায় কিছুটা কম হলেও এখন প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাচ্ছে। জুলাই আগস্টে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও শিল্প কারখানায় হামলার কারণে রাজস্ব আদায়ে ভাটা পড়েছে।
জানতে চাইলে সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, বিগত অর্থবছরের ন্যায় চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার অবস্থা দেখছিনা। আগামীর কথা চিন্তা করে কর ফাঁকিরোধে ব্যাপক সংস্কার করতে হবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
শিল্প-বাণিজ্য
শ্রমিকদের ১৮ দফা দাবি মেনে নিয়েছে মালিক পক্ষ: শ্রম সচিব
পোশাক শ্রমিকদের ১৮ দফা দাবি মালিক পক্ষ মেনে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে সম্প্রতি দেশে চলমান শ্রমিক অসন্তোষের প্রেক্ষিতে শ্রমিকপক্ষ এবং মালিকপক্ষের যৌথ বিবৃতি প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সচিব বলেন, পোশাক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ চলছে। এ অসন্তোষ নিরসণে ১৮দফা দাবিতে শ্রমিক-মালিক ঐক্যমতে পৌঁছেছে। বিগত সরকারের আমলে শ্রমিকদের দাবিকে দমিয়ে রাখা হয়েছে। ধীরে ধীরে সব ন্যায্য দাবি পূরণ করা হবে।
আর তৈরি পোশাক শিল্পে অসন্তোষ বাদ দিয়ে শ্রমিকদের কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। তারা বলেন, শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। তাদের কাজে ফেরার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
এর আগে পোশাক শিল্পে সাম্প্রতিক অস্থিরতা নিরসনের লক্ষ্যে ৪ জন উপদেষ্টার সমন্বয়ে সভা করা হয়। পরবর্তীতে শ্রমিক নেতা ও পোশাক শিল্পের মালিকপক্ষের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করা হয়। ফলশ্রুতিতে শ্রমিকদের নিম্নবর্ণিত দাবীর বিষয়গুলো ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়। আলোচনার মাধ্যমে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো হলো-
শ্রমিক ও মালিক পক্ষের ৩ জন করে প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত অতিরিক্ত সচিবের (শ্রম) নেতৃত্বে একটি কমিটি নিম্নতম মজুরির বিধি-বিধান পর্যালোচনা করে নিম্নতম মজুরি বোর্ড বরাবর একটি সুপারিশ প্রদান করবে। অক্টোবর মাসের মধ্যে সকল কারখানায় সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন করতে হবে।
শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিৎ করার জন্য বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮) পুনরায় সংশোধনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে ডিসেম্বরের মধ্যে সংশোধন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।
শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকের সার্ভিস বেনিফিট প্রদান করা হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ শ্রম আইন এর ২৭ ধারাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে। আগামী অক্টোবরের মধ্যে শ্রমিকের সকল বকেয়া মজুরি বিনা ব্যর্থতায় প্রদান করতে হবে। অন্যথায় শ্রম আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিজিএমইএভুক্ত সকল কারখানায় শ্রমিকের বিদ্যমান হাজিরা বোনাস হিসেবে অতিরিক্ত ২২৫ টাকা ও রাত ৮টার পর বিদ্যমান টিফিন বিলের সঙ্গে ১০ টাকা এবং বিদ্যমান নাইট বিলের সাথে ১০ টাকা বাড়ানো হবে।
কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ডের বিষয়ে পর্যালোচানার জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মাধ্যমে শ্রমিক ও মালিক উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট সম্পন্ন অন্যান্য দেশের উত্তম চর্চার আদলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নিম্নতম মজুরি পুনঃনির্ধারণ কমিটি বর্তমান মূল্যস্ফীতি বিবেচনা করে শ্রম আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে করণীয় বিষয়ে নভেম্বরের মধ্যে একটি সুপারিশ প্রদান করবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
শিল্প-বাণিজ্য
পরিবেশবান্ধব সনদ পেলো তিনটি পোশাক ও সুতা তৈরির কারখানা
দেশে পরিবেশবান্ধব (গ্রিন) তৈরি পোশাক ও বস্ত্র কারখানার সংখ্যা বেড়ে ২২৯টিতে দাঁড়িয়েছে। এ তালিকায় নতুন করে স্থান করে নেয়া কারখানাগুলো হলো- নারায়ণগঞ্জের অনন্ত হুয়াজিং লিমিটেড, গাজীপুরের সেপাল গার্মেন্টস লিমিটেড ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ইউনিটেক্স স্পিনিং লিমিটেড (দ্বিতীয় ইউনিট)।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) থেকে পরিবেশবান্ধবের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নারায়ণগঞ্জের অনন্ত হুয়াজিং ৬৩ নম্বর নিয়ে গোল্ড সনদ ও গাজীপুরের সেপাল গার্মেন্টস ৮৫ নম্বর নিয়ে লিড প্লাটিনাম সনদ অর্জন করেছে। সীতাকুণ্ডের ইউনিটেক্স স্পিনিং (দ্বিতীয় ইউনিট) ৮৩ নম্বর নিয়ে প্লাটিনাম সনদ পেয়েছে।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ আজ শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য জানিয়েছে। সংগঠনটি বলেছে, বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ১০০ পরিবেশবান্ধব কারখানার ৬১টি বাংলাদেশে অবস্থিত।
বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে বর্তমানে লিড সনদ পাওয়া পরিবেশবান্ধব কারখানা বেড়ে হয়েছে ২২৯টি। এর মধ্যে ৯১টিই লিড প্লাটিনাম সনদধারী। এ ছাড়া ১২৪টি গোল্ড, ১০টি সিলভার ও ৪টি কারখানা সার্টিফাইড সনদ পেয়েছে।
সর্বশেষ গত ১৬ আগস্ট দুটি রফতানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা পরিবেশবান্ধব সনদ পায়। কারখানাগুলো হলো—আশুলিয়ার সাদাতিয়া সোয়েটার্স ও গাজীপুরের এক্সিকিউটিভ গ্রিনটেক্স লিমিটেড। এর মধ্যে সাদাতিয়া সোয়েটার্স ৯১ নম্বর নিয়ে লিড প্লাটিনাম সনদ ও এক্সিকিউটিভ গ্রিনটেক্স ৬৯ নম্বর নিয়ে লিড গোল্ড সনদ অর্জন করে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
শিল্প-বাণিজ্য
শুল্ক সুবিধা পেয়েও চীনে বাড়েনি বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি
সম্প্রতি বাংলাদেশ ও অন্যান্য স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশকে শতভাগ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেওয়ার কথা জানিয়েছে চীন। যদিও ২০২০ সালের জুলাই থেকে ট্যারিফ লাইনের আওতায় ৯৭ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা কার্যকর করে চীন সরকার। এরপরও দেশটিতে আশানুরূপ বাড়েনি বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি। এ অবস্থায় চীনে রপ্তানি বাড়াতে রপ্তানিপণ্যের বহুমুখীকরণ প্রয়োজন বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
চীন বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক পরাশক্তি ও শীর্ষ রপ্তানিকারক। দেশটি বাংলাদেশের বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। বাংলাদেশ থেকে চীনে রপ্তানি হওয়া পণ্যের মধ্যে প্রায় ৯৮ শতাংশ পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। এরপরও রয়েছে দুই দেশের মধ্যে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চীনে পণ্য রপ্তানি আশানুরূপ না বাড়ার কারণ খুজেঁ বের করা দরকার। দেশটিতে রপ্তানি বাড়াতে ও বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাড়াতে হবে বিপণন দক্ষতা।
চীন সরকার ২০২০ সালের জুলাই থেকে ট্যারিফ লাইনের আওতায় ৯৭ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা কার্যকর করে। পরবর্তীতে ২০২২ সালে আরও ১ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৯৮ শতাংশ করা হয়। ট্যারিফ লাইনে ৮ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি পণ্য দেশটিতে শুল্ক সুবিধা পাচ্ছে। তারপরও গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৬৭ কোটি ডলারের।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্রসচিব মো. জসিম উদ্দিন জানান, চীনের রাষ্ট্রদূত আমাদের যেটি জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সিনো-আফ্রিকান যে শীর্ষ সম্মেলন হয়েছে সেখানে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে (এলডিসি) শতভাগ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেবে চীন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, চীনের বাজারে বিক্রি করার মতো বাংলাদেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্যের অভাব রয়েছে। এছাড়া রয়েছে মার্কেটিং বা বিপণনব্যবস্থার দুর্বলতা। ইউরোপে যুদ্ধ ও আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের বিষয় বিবেচনায় চীন অভ্যন্তরীণ বাজারে মনোনিবেশ করেছে। তৈরি পোশাক উৎপাদনে তারা নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছে। বাংলাদেশের শীর্ষ রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক দিয়ে চীনা বাজার ধরা কঠিন। দেশটিতে রপ্তানি বাড়াতে প্রয়োজন রপ্তানি বহুমুখীকরণ।
বাংলাদেশ চারকোল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনরে সহ-সভাপতি এ কে আজাদ গণমাধ্যমকে বলেন, এত সুবিধা পেয়েও চীনে কেন রপ্তানি বাড়ছে না সেটার কারণ অনুসন্ধান করা দরকার। হয়তো আমাদের অ্যাপ্রোচ ঠিক নেই। অর্থ্যাৎ আমাদের ব্যবসায়ীরা চীনের ব্যবসায়ীরদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। চীনের বাজারে ঠিকমতো বিপণন করতে পারছি না। ভাষা ও বিপণন দক্ষতায় সমস্যা আছে।
তিনি আরও বলেন, চীনের বাজারে রপ্তানি করার মতো পণ্য আমাদের খুব কম। কারণ তারাই প্রায় সব পণ্যের কাঁচামাল প্রস্তুত করে। চীনে বাংলাদেশি চামড়ার প্রচুর চাহিদা আছে। বাংলাদেশ থেকে তারা কমদামে প্রচুর চামড়া নিয়ে যায়। কমপ্লায়েন্সের কারণে চামড়ার প্রকৃত দাম পাওয়া যাচ্ছে না।
রপ্তানির পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ থেকে চীন প্রচুর আমদানিও করে জানিয়ে এ কে আজাদ বলেন, তারা নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে ও পণ্য বানাতে সমগ্র পৃথিবী থেকে পণ্য নেয়। আমরা পণ্যের গুণ-মান বাজায় রাখতে পারছি না, আবার তাদের বাজারেও পৌঁছাতে পারছি না।
বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন মৃধা বলেন, চীনের যেসব পণ্য প্রয়োজন সেগুলো আমরা তৈরি করতে পারছি না। চীনে বাংলাদেশি কৃষিজাত পণ্য ও হিমায়িত মাছের চাহিদা আছে। আমরা তাদের মান মেনে চলতে পারলে এসব পণ্যের রপ্তানি বাড়বে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষিজাত পণ্য ছাড়াও পরিশোধিত তামা, পলিমার, প্রসাধনী, ইলেকট্রনিক সার্কিট, অপরিশোধিত তেল, ফোন সিস্টেম ডিভাইস, পেট্রোলিয়াম গ্যাস, তামার তার ও ডেটা প্রসেসিং মেশিনের চাহিদা রয়েছে চীনে।