শিল্প-বাণিজ্য
২০২৯ সাল পর্যন্ত নগদ সহায়তা অব্যাহত চান ব্যবসায়ীরা

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আন্ডারে সরকারের ২০২৬ সাল পর্যন্ত তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীদের নগদ সহায়তা দেওয়ার কথা। ব্যবসায়ীরা ২০২৯ সাল পর্যন্ত এ সহায়তা অব্যাহত চান। নগদ সহায়তার কারণেই দেশের এ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক ক্রাইসিসেও তারা টিকে আছেন বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
এছাড়া তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে আগের মতো শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করাসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একাধিক দাবি জানান তৈরি পোশাকখাতের ব্যবসায়ী নেতারা। শনিবার (২৫ মে) প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি এস এম মান্নান (কচি), ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি নির্বাচিত মাহবুবুল আলম। এসময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানও উপস্থিত ছিলেন।
এফবিসিসিআইয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়েছে। ডলার সংকটসহ সম্প্রতি ব্যবসায়ীরা কী ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন, বাজেট সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন।
আয়কর আইন অনুযায়ী, রপ্তানিখাতের উৎসে কর ১ শতাংশ নির্ধারিত। তবে ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নানা সময়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে এই করহার ছাড় দেওয়া হয়েছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে তৈরি পোশাকসহ সব ধরনের পণ্য রপ্তানির ওপর উৎসে কর ১ শতাংশ কেটে রাখার আদেশ জারি করা হয়। পরে পোশাক রপ্তানিকারকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ অন্য ব্যবসায়ী সংগঠনের দাবির মুখে ওই অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে সেটা কমিয়ে দশমিক ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে এনবিআর। এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দশমিক ৭০ শতাংশ উৎসে কর দেন রপ্তানিকারকরা।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি এস এম মান্নান (কচি) বলেন, উৎসে কর যেটা এখন ১ শতাংশ আছে, সেটা দশমিক ৫০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছি।
এর আগে গত মার্চে এনবিআরের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে আগের মতো শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করে তা আগামী পাঁচ বছর কার্যকর রাখার দাবি জানান রপ্তানিকারকরা। পাশাপাশি পোশাক শিল্পের সক্ষমতা বাড়াতে নগদ সহায়তার ওপর আয়কর কর্তনের হার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার দাবি জানানো হয়। যদিও ২০২৯ সাল নাগাদ এই প্রণোদনা অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
চলতি বছরের শুরুতে পোশাকসহ ৪৩টি খাতে পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা কমায় সরকার। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ হবে। এ লক্ষ্যে, পর্যায়ক্রমে সব ধরনের রপ্তানিতে প্রণোদনা কমানোর অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আগে রপ্তানি আয়ের ওপর ১ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ সহায়তা দেওয়া হতো। এতে রপ্তানিকারকরা উৎসাহিত হতেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, প্রণোদনার সর্বোচ্চ হার ১৫ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত প্রযোজ্য হবে। নতুন নির্দেশনায় অনুযায়ী তৈরি পোশাক খাতে দশমিক ৫০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা পাচ্ছেন রপ্তানিকারকরা, যা আগে ছিল ১ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তীসময়ে রপ্তানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা সম্পূর্ণভাবে একত্রে প্রত্যাহার করা হলে রপ্তানিখাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। সেজন্য সরকার এখন থেকেই বিভিন্ন ধাপে নগদ প্রণোদনার হার অল্প অল্প করে কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘সরকার ২০২৬ সাল পর্যন্ত নগদ সহায়তা দিতে পারে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আন্ডারে। সেক্ষেত্রে আমাদের বিকল্প নগদ সহায়তা দেওয়ার আগ পর্যন্ত ২০২৯ সালের আগে যেন নগদ সহায়তা প্রত্যাহার না করা হয়। কারণ নগদ সহায়তার কারণে আমরা নতুন বাজার তৈরি করতে পেরেছি। আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আজ যে অর্থনৈতিক ক্রাইসিসে টিকে আছি, তা এই নগদ সহায়তার কারণে।’
তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে বৈশ্বিক মন্দা আমরা মোকাবিলা করছি। নগদ সহায়তার টাকায় নতুন বাজার তৈরি করতে পেরেছি, নানান সহযোগিতা পেয়েছি।
এছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল, শিল্প এলাকার বাইরের আর কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বিদ্যুৎ-গ্যাস সংযোগ না দেওয়া এবং গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকলে শিল্প মালিকদের ঋণ না দেওয়ার সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, হঠাৎ গ্যাস, বিদ্যুৎ, ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত পুনরায় বিবেচনা করার অনুরোধ করেছি। এর মধ্যে অনেক ব্যবসায়ী সেখানে ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ বিনিয়োগ করেছেন। আমাদের কোনো গ্রেস পিরিয়ড দেওয়া হয়নি। আমাদের ফ্যাক্টরিগুলো শিল্পাঞ্চলে হবে। কিন্তু আমরা সেগুলো বুঝে পাচ্ছি না। গ্যাস-বিদ্যুৎসহ সব মিলিয়ে আরও ২-৩ বছর লাগবে। আমাদের যেহেতু ২-৩ বছর আরও লাগবে, এরই মধ্যে যে বিনিয়োগ করেছি সেগুলোর কী হবে? বিভিন্ন সুযোগও প্রয়োজন। আমরা শিল্পাঞ্চলে যেতে চাই। সেখানে গেলে আমরা বিভিন্ন ধরনের সুবিধা পাবো।
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় যে অর্থনৈতিক অঞ্চল মীরসরাই, সেটা এখনো প্রস্তুত নয়। আরও ২-৩ বছর লাগবে। রাস্তাঘাট হয়নি সেখানে। সব ঠিক করে আমাদের বুঝিয়ে দিলে আমরা ভবন করবো, সেটাপ করবো। এতে আরও সময় লাগবে।’
প্রস্তাবে পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘মীরসরাইয়ে তো আর জায়গা নেই। এখন শিল্পায়ন হচ্ছে, মানুষ শিল্পাঞ্চলে বিনিয়োগ করতে চায়। আপনি কেন বিনিয়োগ করতে দেবেন না। তাহলে শিল্পাঞ্চল গড়ে দিন আমরা সেখানে যাবো। আমাদের শিল্পাঞ্চলের স্বার্থে, বিনিয়োগের স্বার্থে এটা বিবেচনা করা প্রয়োজন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, পোশাকশিল্প দেশের শীর্ষ রপ্তানি আয় অর্জনের খাত। সরকার এক শিল্পের প্রসারে দীর্ঘদিন ধরেই নানান সুবিধা দিয়ে আসছে। এবারও তাদের প্রস্তাব বিবেচনা করে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।

শিল্প-বাণিজ্য
তুলা আমদানিতে অগ্রিম কর প্রত্যাহার চান ব্যবসায়ীরা

তুলা আমদানির ওপর আরোপিত ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বস্ত্রকলের মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ। তারা বলেছে, অগ্রিম আয়কর আরোপ সরকারের রাজস্ব সংগ্রহের জন্য সুবিধাজনক মনে হলেও সিদ্ধান্তটি আত্মঘাতী। এতে বস্ত্র খাত বড় ধরনের সংকটে পড়বে। চলতি মূলধন সংকুচিত হতে হতে একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে যাবে অনেক বস্ত্রকল।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানকে দেওয়া এক চিঠিতে এমনটাই উল্লেখ করেছেন বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল। গতকাল বৃহস্পতিবার এই চিঠি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাণিজ্য উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের কাছেও পাঠানো হয়েছে।
২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার ছাড়াও দেশি বস্ত্রকলে উৎপাদিত তুলার সুতা ও কৃত্রিম আঁশ এবং অন্যান্য আঁশের সংমিশ্রণে তৈরি সুতার ওপর উৎপাদন পর্যায়ে কেজিপ্রতি সুনির্দিষ্ট কর ৫ টাকা অব্যাহতি প্রদানের সুপারিশ করেছে বিটিএমএ।
বিটিএমএর তথ্যানুযায়ী, সংগঠনটির ১ হাজার ৮৫৮টি সুতাকল, উইভিং ও ডাইং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং বস্ত্রকল রয়েছে। এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলার। দেশের শীর্ষ রপ্তানি আয়ের খাত তৈরি পোশাকশিল্পের সুতা ও কাপড়ের ৭০ শতাংশের জোগানদাতা হচ্ছে বস্ত্র খাত। ফলে বস্ত্রশিল্পের যেকোনো সমস্যা তৈরি হলে তা পোশাকশিল্পেও এর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
বিটিএমএ সভাপতি চিঠিতে বলেন, তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপ করায় বস্ত্রকলগুলোর উৎপাদন ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বাড়বে, যা আমাদের সক্ষমতাকে প্রতিযোগী দেশের তুলনায় পিছিয়ে দেবে। ফলে কোনো অবস্থাতেই দেশি বস্ত্রকলগুলো আগামী দিনে টিকে থাকতে পারবে না। আমদানি করা তুলা খালাসে প্রতিবার ২ শতাংশ হারে এআইটি পরিশোধ করতে হলে বছর শেষে করভার বেড়ে গিয়ে ২৯ শতাংশে উঠবে। এতে চলতি মূলধন ধারাবাহিকভাবে সংকুচিত হবে, যা বস্ত্র খাতের মতো আমদানি পরিপূরক শিল্পের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠবে। এভাবে চক্রবৃদ্ধি হারে এআইটি পরিশোধ করতে হলে তিন বছরের মধ্যে চলতি মূলধন শূন্য হয়ে যাবে। ফলে দেশি বস্ত্রকলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং প্রতিযোগী দেশগুলো থেকে আমাদের দেশে সুতা আমদানি বেড়ে যাবে। তাতে পণ্য রপ্তানিতে মূল্য সংযোজন কমবে। সে জন্য ২ শতাংশ এআইটি প্রত্যাহার করা জরুরি।
দেশি কারখানায় উৎপাদিত সুতার ওপর সুনির্দিষ্ট কর প্রত্যাহারের দাবির সপক্ষে বিটিএমএ সভাপতির যুক্তি হচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের সুতার ওপর উৎপাদন পর্যায়ে কেজি প্রতি সুনির্দিষ্ট কর ৩ টাকা বাড়িয়ে ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে দেশি স্পিনিং খাতে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। তার কারণ সুতার বিক্রয়মূল্য বৃদ্ধি পাবে এবং ক্রেতা প্রতিষ্ঠান দেশি সুতা কিনতে নিরুৎসাহিত হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অনেক বস্ত্রকল বন্ধ হয়ে যাবে।
শওকত আজিজ আরও দাবি করেন, সরকারের এমন সিদ্ধান্তে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ৭৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে। ফলে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে বিপুলসংখ্যক শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা পরিশোধে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
বিটিএমএ জানিয়েছে, বর্তমানে তীব্র জ্বালানিসংকট, শ্রমিকের মজুরি, বৈশ্বিক বিভিন্ন সংকটজনিত কারণে বস্ত্র খাতের উৎপাদন ব্যয় ১৫-২০ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে জ্বালানিসংকটের কারণে উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে দেশি বস্ত্রকল, বিশেষ করে সুতার কলগুলো সংকটে পড়েছে।
শিল্প-বাণিজ্য
ভোমরা স্থলবন্দরে বেড়েছে রপ্তানি, রাজস্ব আয় ৯৭৮ কোটি টাকা

ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানি কিছুটা কমলেও বেড়েছে রপ্তানি ও রাজস্ব আয়। সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বন্দরের রাজস্ব আয় হয়েছে ৯৭৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
ভোমরা কাস্টমস স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বন্দর দিয়ে ৫৯ হাজার ৬৯৩টি গাড়িতে ২০ লাখ ৮২ হাজার ৭২২ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। এসব পণ্যের বাজারমূল্য প্রায় ৮ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। এতে রাজস্ব আয় হয়েছে ৯৭৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
অন্যদিকে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৬৩ হাজার ৯০২টি গাড়িতে ২৩ লাখ ৫৫ হাজার ৬২ টন পণ্য। সেই সময়ে রাজস্ব আয় হয়েছিল ৯০৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। ফলে আমদানির পরিমাণ কমলেও রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ২২ হাজার ৯৩৭টি গাড়িতে। এতে পণ্যের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৮৬ হাজার ১৩০ মেট্রিক টন এবং বাজারমূল্য ছিল ৩ হাজার ৪০৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ২৪ হাজার ৫৮০টি গাড়িতে। পণ্য ছিল ২ লাখ ৭৪ হাজার ১১০ টন, বাজারমূল্য ৩ হাজার ৯০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। সেই হিসেবে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ২৩ শতাংশ।
ভোমরা কাস্টমস স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা রাসেল আহমেদ বলেন, ভোমরা একটি সম্ভাবনাময় স্থলবন্দর। রাজস্ব, আমদানি ও রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি এই বন্দরের সক্ষমতারই প্রমাণ। আশা করছি, আগামীতে এই ধারা আরও এগিয়ে যাবে।
বন্দরের আমদানি কমলেও রপ্তানি ও রাজস্ব আয়ের ইতিবাচক প্রবণতা সরকারকে দিয়েছে স্বস্তি। ব্যবসায়ীদের মতে, অবকাঠামো ও নীতিগত সহায়তা বাড়ালে ভোমরা হতে পারে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক হাব।
শিল্প-বাণিজ্য
আগামী অর্থবছরে ৭.০৫ লাখ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা

আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে পাট চাষের জন্য জমির লক্ষ্যমাত্রা ৭.০৫ লক্ষ হেক্টর। উক্ত জমিতে চাষাবাদের জন্য পাট বীজ প্রয়োজন ৫০০০-৬০০০ টন। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিজেআরআই) কৃষি উইং কর্তৃক আয়োজিত ‘বার্ষিক অভ্যন্তরীণ গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা-২০২৫’ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে পাটের মোট উৎপাদন ১৫ লক্ষ মেট্রিক টন, পাটকাঠির মোট উৎপাদন ৩০ লক্ষ মেট্রিক টন, চারকোলের উৎপাদন ৬ লক্ষ মেট্রিক টন।
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, পাট নিয়ে অনেক কিছু করার আছে, পাটের সম্ভাবনা কোনদিন শেষ হবে না। “কাঁচা পাট নিয়ে অন্যান্য দেশ কিভাবে কাজ করছে তার উপরেও মার্কেট রিসার্চ এ গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। বদ্ধ চিন্তাধারা থেকে বের হয়ে বিজ্ঞানীদের বিশদভাবে কাজ করতে হবে, কারণ পাট নিয়ে অনেক কিছু করার আছে, পাটের সম্ভাবনা কোনদিন শেষ হবে না। মার্কেট এবং বাস্তবতার নিরিক্ষে গবেষণা করতে হবে। আমাদের সীমাবদ্ধ জমিতে পাটের উৎপাদনকে আরও বাড়ানো যায়, তা নিয়েও কাজ করতে হবে,” বলেন তিনি।
কৃষি সচিব আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এর রিসার্চ সেক্টর এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান একত্রিত হয়ে কাজ করলে পাটের গবেষণা আরও এগিয়ে যাবে। “পাট শুধু অর্থকরী ফসল নয়, পাট বাংলাদেশের গর্ব, বাংলার পরিচিতির মাধ্যম। পৃথিবীর অন্য প্রান্তের দেশ কিউবাও বাংলাদেশ থেকে পাট আমদানি করে দুইটি কারখানা তৈরি করেছে। চাহিদা থাকা সত্ত্বেও পৃথিবীর অনেক দেশ পাট উৎপাদন করতে পারে না সেদেশের পরিবেশের কারণে, সে হিসেবে পাটের জন্য বাংলাদেশ আশীর্বাদপুষ্ট। প্রযুক্তি দিন দিন যেমন পরিবর্তন হচ্ছে, ঠিক তেমনই পাটের প্রযুক্তি দিয়ে পাটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করতে হবে,” বলেন কৃষি সচিব।
সভাপতির বক্তব্যে বিজেআরআইর মহাপরিচালক ড. নার্গীস আক্তার বলেন, পাট কেবল আমাদের সোনালি আঁশ নয়, আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের এক সোনালি অধ্যায়। সূচনালগ্ন হতে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট মোট ৫৭টি জাত ২২৩টি কৃষি প্রযুক্তি এবং ৬৯টি শিল্প ও কারিগরি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। “পাট কৃষিজাত পণ্য হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় চাষিরা কৃষিঋণের মতো পাটঋণ এবং পণ্য রপ্তানিতে সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। সরকার থেকে ২০% নগদ প্রণোদনা পায় চারকোল রপ্তানিকারকরা। বাংলাদেশে প্রায় ৫০ টি চারকোলের কারখানা রয়েছে। বর্তমানে কিছু কারখানা বন্ধ আছে।”
কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মানীত অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা অনুবিভাগ) মো. আবু জুবাইর হোসেন বাবলু, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজমুন নাহার করিম এবং শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আব্দুল লতিফ।
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বিজেআরআই এর প্রজনন বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. গোলাম মোস্তফা এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিজেআরআই এর জেনোম গবেষণা কেন্দ্র এর সমন্বয়ক ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস. এম. মাহবুব আলী।
অন্যান্যদের মাঝে আরো উপস্থিত ছিলেন, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট এর মহাপরিচালক ড. বেগম সামিয়া সুলতানা, তুলা উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী পরিচালক মো. রেজাউল আমিন, কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক মো. মসীহুর রহমান, জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমির মহাপরিচালক মো. সাইফুল আজম খান, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সী এর পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (গবেষণা অধিশাখা) ড. মো. লুৎফর রহমান, যুগ্মসচিব (আইন অধিশাখা) ড. মো. মোকতার হোসেন, বিজেআরআই এর পরিচালক (জুট-টেক্সটাইল) ড. ফেরদৌস আরা দিলরুবা, পরিচালক (পিটিসি) ড. মাহমুদ আল হোসেন, উক্ত ইনস্টিটিউটের সকল মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) ড. মো. ইয়ারউদ্দিন সরকার, কৃষি সচিবের একান্ত সচিব (উপসচিব) মো. মাকছুদুল ইসলাম, বিজেআরআইর সকল স্তরের বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাবৃন্দ সহ কৃষি সেক্টরের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং কৃষক প্রতিনিধিগণ।
অর্থনীতি
ব্যাংকিং খাত বর্তমানে সংকটময় মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে: ডিসিসিআই সভাপতি

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত বর্তমানে এক সংকটময় মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতের খেলাপির কারণে আর্থিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগের ওপর বড় ঝুঁকি তৈরি করছে। এর ফলে ঋণপ্রাপ্তি কঠিন হয়ে গেছে এবং এসএমই খাতসহ উৎপাদনমুখী ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়ছেন বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকিন আহমেদ।
শনিবার (২৮ জুন) রাজধানীর ডিসিসিআই অডিটরিয়ামে ‘বর্তমান ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জ: ঋণগ্রহীতাদের দৃষ্টিকোণ’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (মুদ্রানীতি বিভাগ) ড. মো. এজাজুল ইসলাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিভারস্টোন ক্যাপিটাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী ও ডিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি মো. আশরাফ আহমেদ।
তাসকিন আহমেদ বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ এবছরের জুন পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। এটি মোট ঋণের ২৪ শতাংশের বেশি। যা আর্থিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগের ওপর বড় ঝুঁকি তৈরি করছে। এর ফলে ঋণপ্রাপ্তি কঠিন হয়ে গেছে, এসএমই খাতসহ উৎপাদনমুখী ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়ছেন এবং বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ৭.৫৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে থাকায় নীতি সুদহার ও তারল্য সংকুচিত হয়েছে, ফলে মূলধনের খরচ বেড়েছে। এতে করে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
এ অবস্থায় তিনি কয়েকটি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ঋণগ্রহীতাদের পুনর্বাসনমূলক উদ্যোগ গ্রহণ, উৎপাদনমুখী খাতে (যেমন এসএমই, কৃষি, সবুজ শিল্প) সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা, সেক্টরভিত্তিক প্রণোদনা এবং গ্যারান্টি স্কিম, ঋণের শর্ত শিথিল করে দীর্ঘ মেয়াদে পরিশোধের সুযোগ দেওয়া, ঋণ শ্রেণিকরণ সময়সীমা ৬ মাস বাড়ানো এবং ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত খেলাপি আলাদা করে চিহ্নিত করা।
ঢাকা চেম্বার সভাপতি বলেন, ব্যাংকিং খাতের সংস্কার শুধু ঝুঁকির দিক থেকে নয়, ঋণগ্রহীতাদের কথাও মাথায় রেখে করতে হবে। নইলে বিনিয়োগ, উদ্ভাবন ও প্রতিযোগিতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সেমিনারে বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী নেতা ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
কাফি
শিল্প-বাণিজ্য
এমএসএমই দিবস আজ

আন্তর্জাতিক অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এমএসএমই) দিবস আজ। ২০২৫ সালে এ দিবসের প্রতিপাদ্য– টেকসই প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবনের চালিকাশক্তি হিসেবে এমএসএমইর ভূমিকা সম্প্রসারণ।
অর্থনীতিতে ছোট ও মাঝারি উদ্যোগের অবদানকে স্বীকৃতি দিতে এবং সচেতনতা তৈরিতে বিশ্বজুড়ে ২৭ জুন পালন করা হয় এ দিবস। ২০১৭ সালে জাতিসংঘ ২৭ জুনকে এমএসএমই দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
বাংলাদেশে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক এমএসএমই দিবস পালন করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে মূল আয়োজন করে এসএমই ফাউন্ডেশন। এছাড়া বেসরকারি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এ দিবস পালন করে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, এবার এমএসএমই দিবস দুটি বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলন সামনে রেখে উদযাপিত হচ্ছে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্পেনের সেভিলায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন’ শীর্ষক চতুর্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এছাড়া কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে সামাজিক উন্নয়ন-বিষয়ক দ্বিতীয় বিশ্ব সম্মেলন।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ব্যবসার ৯০ শতাংশ, কর্মসংস্থানের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ এবং জিডিপিতে ৫০ শতাংশ অবদান এমএসএমই খাতের। বিশ্বজুড়ে কর্মক্ষম দরিদ্র, নারী, যুবক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার উন্নয়নের মেরুদণ্ড হিসেবে ভূমিকা রাখছে এমএসএমই খাত।