শিল্প-বাণিজ্য
বিড়ির শুল্ক প্রত্যাহার করে কুটির শিল্প ঘোষণার দাবিতে সমাবেশ

বঙ্গবন্ধুর আমলের মতো বিড়ির শুল্ক ও অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার করে বিড়ি শিল্পকে কুটির শিল্প ঘোষণা দাবি জানান বিড়ি শ্রমিকরা। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মতো সরকার কর্তৃক শ্রমিকদের সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা দাবি করে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির ষড়যন্ত্র বন্ধের আহ্বান জানান তারা।
রবিবার (২৬ মে) সকাল ১১ টায় রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে অনুষ্ঠিত শ্রমিক সমাবেশ থেকে এসব দাবি জানান বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশন বৃহত্তর রংপুর অঞ্চল।
বৃহত্তর রংপুর অঞ্চল বিড়ি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত লাভলুর সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিন উদ্দিন (বিএসসি)। প্রধান অতিথি ছিলেন রংপুর সিটি কর্পোরেশনের (রসিক) মেয়র মোস্তাফিজার রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন রংপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি সাফিউর রহমান সফি। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হারিক হোসেন।
বিড়ি শ্রমিক সবাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি নাজিম উদ্দিন, আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল গফুর, সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম ইসলাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফর রহমান প্রমূখ।
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের (রসিক) মেয়র মোস্তাফিজার রহমান বলেন, বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানির ষড়যন্ত্র থেকে দেশীয় প্রাচীন শ্রমঘন বিড়ি শিল্পকে বাঁচাতে হবে। সারাদেশে প্রায় ২০ লাখ শ্রমিক বিড়ি কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা ও কর্মসংস্থান রক্ষায় বিড়ি উপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করতে হবে। বিড়ি শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধি করে বিড়ি শিল্পকে কুটির শিল্প হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।
সবাবেশে বক্তারা বলেন, বর্তমানে নিম্নস্তরের সিগারেট টোব্যাকো মার্কেটের ৭৫ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ দখল করে আছে। এসব নিম্নস্তরের সিগারেট ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির। দেশীয় শিল্পের প্রসার এবং শ্রমিক বান্ধব বিড়ি শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষায় ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানীর নিম্নস্তরের ১০ শলাকার প্রতি প্যাকেট সিগারেটের মূল্য ৪৫ থেকে ৬৫ টাকা বৃদ্ধি করা হলে আরো ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরিত হবে। এছাড়া বিড়িতে অগ্রীম আয়কর ১০ শতাংশ আর সিগারেটে ৩ শতাংশ। সুতরাং বিড়ি শিল্পের উপর থেকে অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার করতে হবে।

শিল্প-বাণিজ্য
তিন বছর পর হিলি দিয়ে টমেটো আমদানি শুরু

টানা তিন বছর বন্ধের পর দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে টমেটো আমদানি শুরু হয়েছে। চট্টগ্রামের বড় বাজার নামক একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে এসব টমেটো আমদানি করছে।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ভারত থেকে টমেটোবোঝাই একটি ট্রাক হিলি বন্দরে প্রবেশের মধ্যদিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রথমদিন ২৮ টন টমেটো আমদানি হয়েছে। প্রতিকেজি টমেটো শুল্কসহ আমদানি খরচ গুনতে হচ্ছে ৬১ টাকা।
আমদানিকারক এনামুল হক বলেন, দেশের বাজারে চাহিদা থাকায় ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে এসব টমেটো আমদানি করা হচ্ছে। বন্দরে প্রতিকেজি টমেটো ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা থাকলে আরও বেশি পরিমাণ আমদানি করা হবে।
হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে এক ট্রাকে ২৮ টন টমেটো আমদানি হয়েছে। আমদানিকৃত এসব টমেটো ৫০০ ডলারে শুল্কায়ন করা হচ্ছে। যেহেতু টমেটো কাঁচাপণ্য তাই দ্রুত ছাড়করণে আমদানিকারককে সবধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
হিলি উদ্ভিদ সংগোনিরোধের তথ্যমতে, ২০২২ সালের ৬ আগস্ট সবশেষ এ বন্দর দিয়ে টমেটো আমদানি হয়েছিল।
শিল্প-বাণিজ্য
বেনাপোল দিয়ে চাল আমদানি শুরু, দাম কমার আশা

চার মাস বন্ধ থাকার পর আবারও বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হয়েছে। এতে দেশের বাজারে চালের দাম কমে আসবে বলে দাবি আমদানিকারকদের।
প্রথম চালানে বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে ভারতীয় ৯টি ট্রাকে ৩১৫ মেট্রিক টন চাল বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করেছে। বন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবীর তরফদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বেনাপোলের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাজি মুসা করিম অ্যান্ড সন্স এসব চাল আমদানি করেছে। এতে রপ্তানিকারক ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সুধর্ম আয়াতনিরিয়াত প্রাইভেট লিমিটেড।
জানা গেছে, প্রতিকেজি চালের আমদানি মূল্য ধরা হয়েছে শূন্য দশমিক ৪০৫ মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫১ টাকার সমান। বাজারজাত করতে এর সঙ্গে পরিবহন, সরকারি শুল্ক, গুদামভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ যুক্ত হবে।
বেনাপোল বন্দরের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাজী মুসা করিম অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুস সামাদ জানান, গত মঙ্গলবার থেকে ভারতীয় ৯ ট্রাক ভর্তি ৩১৫ মেট্রিক টন মোটা চাল আমদানির জন্য ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে অপেক্ষায় ছিল। এসব চাল বৃহস্পতিবার বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করেছে। পেট্রাপোল বন্দরে আরও চাল বোঝাই ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। শনিবার বেনাপোল কাস্টমসে বিল অফ এন্ট্রি জমা দিয়ে ওই চাল ছাড় করার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি আরও জানান, দেশের বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির অনুমতি দিতে ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে আবেদন আহ্বান করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। চলতি বছরের ২৩ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত আবেদন করার শেষ সময় ছিল। সারাদেশের মতো বেনাপোল স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা চাল আমদানির অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। বেনাপোল স্থলবন্দরের বেশ কয়েকজন আমদানিকারক চালের বরাদ্দ পেয়েছেন। আমদানির অনুমতিপত্র বা আইপি পাওয়ার পর অনেকে এলসি খুলেছেন। যার বিপরীতে বন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু হয়েছে।
তিনি জানান, আমদানির অনুমতিপ্রাপ্ত আরও আমদানিকারকরা পর্যায়ক্রমে এলসি খুলছেন। ফলে রোববার (২৪ আগস্ট) থেকে চাল আমদানি বাড়তে পারে। চাল আমদানির ফলে দেশের বাজারে চালের দাম কমে আসবে। কেজি প্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা দাম কমে যাবে। ভালো মানের চিকন জাতের চাল ৬৭ থেকে শুরু করে ৭০ টাকার মধ্যে থাকবে। স্বর্ণা জাতের চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকার মধ্যে থাকবে বলেও জানান তিনি।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা বলেন, চার মাস বন্ধ থাকার পর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে আবারও ভারতীয় চাল আমদানি শুরু হয়েছে। বন্ধের পর শুরুর প্রথম দিনে ৯ ট্রাকে ৩১৫ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। আরও অনেক ট্রাক চাল ঢোকার অপেক্ষায় রয়েছে।
বেনাপোল উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কর্মকর্তা শ্যামল কুমার নাথ জানান, চলতি বছরের গত ১৫ এপ্রিল এ বন্দর দিয়ে সর্বশেষ চাল আমদানি হয়। বৃহস্পতিবার থেকে আবারো চাল আমদানি শুরু হয়েছে। এদিন ৯টি ট্রাকে ৩১৫ মেট্রিক টন ভারতীয় চাল আমদানি হয়েছে। আমদানিকৃত চালের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দ্রুত সনদ প্রদান করা হবে যাতে দ্রুত ছাড়করণ নিতে পারেন।
শিল্প-বাণিজ্য
হিলি স্থলবন্দরে দেড় মাসে আয় ১৮ কোটি টাকা

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চলতি অর্থ বছরের ৩০ জুন থেকে ভারতে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি শুরু হয়েছে। এতে আগের তুলনায় রপ্তানি খাতে বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার আয়। এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৯১ টন পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়েছে। যা থেকে ১৭ লাখ ১০ হাজার ৫০০ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ সরকার।
এই বন্দর দিয়ে বিগত কয়েক বছর তেমন কোনো পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়নি। তবে বর্তমান ভারতে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। হিলি স্থলবন্দর মূলত আমদানি নির্ভর হলেও এখানে দিন-দিন বাড়ছে পণ্য রপ্তানি পরিমাণ। এই বন্দর দিয়ে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয় তার বিপরীতে প্রায় ৭০ শতাংশ পণ্যই ভারত থেকে আমদানি হয়ে থাকে। বর্তমানে হিলি বন্দর থেকে রাইস ব্রান (তুষের তেল), টোস্ট বিস্কুট, ম্যাংগো জুস, ঝুট কাপুড়, নুডুলসসহ বিভিন্ন ধরনের বেকারি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। চলতি বছরের ৩০ জুন থেকে আগস্টের ২০ তারিখ পর্যন্ত ২ হাজার ৯১ টন পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যা থেকে ১৭ লাখ ১০ হাজার ৫০০ ডলার আয় এসেছে। যা বাংলা টাকায় প্রায় ১৮ কোটি।
বাংলাহিলি সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি ফেরদৌস রহমান বলেন, সরকারের আয়ের পাশাপাশি এই স্থলবন্দরে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অনেক শ্রমিক। ভারতের অভ্যন্তরে কিছু সমস্যা সমাধান করা গেলে এখানকার রপ্তানির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে মনে করেন বন্দরের ব্যবসায়ীরা।
এদিকে হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা নিজাম উদ্দীন বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দীর্ঘদিন রপ্তানি বন্ধ থাকলেও বর্তমানে ভারতে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারির পর থেকে আর কোনো পণ্য রপ্তানি হয়নি। পরে চার মাস পর ৩০ জুন থেকে ভারতে আবার পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। কাস্টমসের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
শিল্প-বাণিজ্য
পরিবেশবান্ধব লিড সনদ পেলো আরও ৫ পোশাক কারখানা

বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাত পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের দিক থেকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জনের পথে পা রেখেছে। সম্প্রতি আরও পাঁচটি পোশাক কারখানা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের ‘লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন’ (লিড) সনদ পেয়েছে।
ফলে বাংলাদেশের মোট লিড সনদপ্রাপ্ত কারখানার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫৮টি, যার মধ্যে রয়েছে ১০৯টি প্লাটিনাম এবং ১৩৩টি গোল্ড সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত কারখানা। এ অর্জনের ফলে বাংলাদেশ বিশ্বে পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানার সংখ্যায় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।
নতুন সনদপ্রাপ্ত পাঁচটি কারখানার মধ্যে একটি হলো ময়মনসিংহের ভালুকায় অবস্থিত রাইদা কালেকশন সবচেয়ে বেশি ৯০ পয়েন্ট পেয়ে টেকসই ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার জন্য প্লাটিনাম সনদ অর্জন করেছে।
আশুলিয়ায় অবস্থিত সাউথ অ্যান্ড সুয়েটার কোং লিমিটেড নতুন নির্মিত ভবনের পরিবেশবান্ধব নকশা ও নির্মাণের মাধ্যমে ৮৫ পয়েন্ট পেয়ে প্লাটিনাম সার্টিফিকেশন অর্জন করেছে।
চট্টগ্রামের কেডিএস ফ্যাশন লিমিটেড টেকসই ব্যবস্থাপনা ও শক্তি দক্ষতার জন্য ৮৪ পয়েন্ট পেয়ে প্লাটিনাম সনদ পেয়েছে।
সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে অবস্থিত পুরবাণী ফ্যাশন লিমিটেড পুরাতন ভবনের দক্ষ ব্যবস্থাপনার জন্য ৮৩ পয়েন্ট পেয়ে প্লাটিনাম সার্টিফিকেশন পেয়েছে।
গাজীপুরে অবস্থিত টেক্সইউরোপ বিডি লিমিটেড পরিবেশবান্ধব নতুন অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে ৭০ পয়েন্ট পেয়ে গোল্ড সার্টিফিকেশন পেয়েছে।
এই অর্জন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক এবং বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বর্তমানে যেখানে বৈশ্বিক বাজার অনিশ্চয়তা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশোধমূলক শুল্ক এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা আমাদের পোশাক খাতের জন্য বড় বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে, সেখানে উদ্যোক্তাদের টেকসই অবকাঠামোতে ধারাবাহিক বিনিয়োগ নিঃসন্দেহে একটি দূরদর্শী ও সাহসী সিদ্ধান্ত।
প্রতিটি লিড-সনদপ্রাপ্ত কারখানা কেবল একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নয়, বরং এটি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের পরিবেশবান্ধব ভবিষ্যতের প্রতি অঙ্গীকারের প্রতিচ্ছবি। এমন নেতৃত্ব ও অগ্রযাত্রা আমাদের শুধু আশাবাদীই করে না, বরং বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে টেকসই শিল্পের রোল মডেল হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করে।
শিল্প-বাণিজ্য
মার্কিন শুল্ক হ্রাসের পর স্থগিত কার্যাদেশ ফিরছে, সুবাতাস পোশাকখাতে

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যে রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ (পাল্টা শুল্কও) হার কমিয়ে আনায়, দেশের রপ্তানিকারকদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বায়ারদের মধ্যেও কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। তাছাড়া শুল্কের নতুন নির্ধারিত হারও— চীন ও ভারতের তুলনায় কম, যা মার্কিন বাজারে বাংলাদেশকে আরও প্রতিযোগী করেছে।
এই ঘটনার ধারাবাহিকতায় বায়ারদের সঙ্গে ক্রয়াদেশ নিয়ে ফের আলোচনা শুরু হচ্ছে। কেউ কেউ আগের স্থগিত ক্রয়াদেশ অব্যাহত রাখার কথাও বলছেন বলে জানান রপ্তানিকারকরা।
গতকাল ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, অনেক রপ্তানিকারক আমাদের জানিয়েছেন, বায়ারদের প্রতিনিধিরা যোগাযোগ শুরু করেছন এবং হোল্ড হওয়া অর্ডার ফিরতে শুরু করেছে। তবে একইসঙ্গে এতে আত্মপ্রসাদে না ভুগে—প্রতিযোগিতায় নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।
গত ৩১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের উপর শুল্ক হার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করে। মার্কিন শুল্কের নতুন হারে– চীনের ৩০ শতাংশ এবং ভারতের ২৫ শতাংশের তুলনায় বাংলাদেশ এখন ভালো অবস্থানে রয়েছে। ভিয়েতনামের সঙ্গে ২০ শতাংশ হার সমান হলেও—পাকিস্তানের ১৯ শতাংশের চেয়ে একটু বেশি।
বিজিএমইএ বলছে, এই ২০ শতাংশ শুল্ক হারের সঙ্গে বিদ্যমান ১৬.৫ শতাংশ শুল্ক যোগ হয়ে মোট শুল্ক ৩৬.৫ শতাংশে দাঁড়াবে।
স্থগিত অর্ডার ফিরছে
ছয় জন রপ্তানিকারকের মধ্যে চার জন্য জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কের হার ঘোষণা করার পর আমেরিকান বায়াররা যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন। এর মধ্যে কোনও কোনও বায়ার তারা আগে যেসব অর্ডার স্থগিত রেখেছিলেন— সেগুলোর কাজ চালিয়ে যেতে বলেছেন।
স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ ৩ লাখ পিস পোশাকের অর্ডার হোল্ড করে রেখেছিলেন ইউএস বায়াররা ট্যারিফ ইস্যুর কারণে। ট্যারিফ রেট ২০ শতাংশে নামার পর তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে, এবং ওই অর্ডার কন্টিনিউ করার জন্য বলেছেন।
স্প্যারো গ্রুপ প্রতিবছর প্রায় ৩০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে, যার মধ্যে ১৬ কোটি ডলারের পণ্য যায় ১৭টি মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বা বায়ারদের কাছে।
তিনি বলেন, আমার শীর্ষস্থানীয় ১২ বায়ার নতুন শুল্ক হার নিজেরাই বহন করছে, আমাদের ওপর চাপিয়ে দেননি। নতুন করে যেসব অর্ডার কন্টিনিউ করতে বলেছেন, ওই বাড়তি ট্যারিফের চাপও আমাদের ওপর দেননি। এই প্রেশার তারা নিজেরা নিয়েছেন। তবে আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে যেসব পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানো সম্ভব হবে, অতিরিক্ত কস্ট-শেয়ারিং ছাড়াই তা আগের ট্যারিফ রেটের আওতায় থাকবে। এজন্য আমরা পণ্য ৫ আগস্টের মধ্যে পণ্য বন্দরে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি– বলেন তিনি।
অন্য রপ্তানিকারকরাও একই ধরনের ইতিবাচক অগ্রগতির কথা জানিয়েছেন। ঢাকাভিত্তিক মার্কিন বাইয়িং হাউজ– লিয়াং ফ্যাশন লিমিটেড জানায়, তাদের ক্লায়েন্ট সাউথপোল শুল্কহার কমানোর ঠিক সেই দিনেই ৭৬,৬০০ পিস লং প্যান্ট ও শর্টসের একটি অর্ডার চূড়ান্ত করেছে। খুব শিগগিরই একই ধরনের আরও একটি অর্ডার আসার সম্ভাবনাও রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আরেক শীর্ষ রপ্তানিকারক স্নোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম খালেদ বলেন, ট্যারিফ ইস্যুর কারণে আমাদের বড় আকারের একটি অর্ডার হোল্ড ছিল। আশা করছি, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ওই অর্ডার কনফার্ম হবে।
‘এখনো বায়ারদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ হয়নি। তবে প্রতিযোগী অন্য দেশে অর্ডারটি চলে যাওয়ার যে ভয় তৈরি হয়েছিল, তা কেটে গেছে। কেননা তাদের তুলনায় আমাদের ট্যারিফ প্রায় সমান’ – উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন দেখার বিষয় তারা ক্রয়াদেশ কতটুকু দেয়। কেননা ট্যারিফের কারণে পণ্যের দাম বাড়বে। ফলে তাদের চাহিদা কমতে পারে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বছরে প্রায় ৮ কোটি ডলারের এই রপ্তানিকারক জোর দিয়ে বলেন, দাম কমানোর চাপ সত্ত্বেও—আমরা প্রাইস কমানো কিংবা ডিসকাউন্ট দেব না।
দেশটির বাজারে বর্তমানে তার মোট রপ্তানির ২০ শতাংশ হলেও—তা অচিরেই ২৭ শতাংশ হবে বলেও আশার কথা জানান তিনি।
ডিবিএলজি গ্রুপের ৩০ হাজার কর্মী রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জব্বার বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। আমরা আশা করছি, দেশটির সঙ্গে আরো ভালো ব্যবসা হবে। কেননা কিছু অর্ডার চীন থেকে বাংলাদেশে সরে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের গ্রোথ রেট (প্রবৃদ্ধির হার) ভালো ছিল। এমনকি গত বছর দেশটিতে বাংলাদেশের গ্রোথ রেট ছিলো ১৪ শতাংশ। এমন অবস্থায় এই নতুন ট্যারিফের কারনে আমরা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। তবে সেই শঙ্কা কেটে গেছে। ওই বাজার আমাদের জন্য আরও ভালো হবে।
বিদেশী বায়ারদের পক্ষ হয়ে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কাজ করা প্রতিনিধিদের সংগঠন– বায়ার্স কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট কাজী ইফতেকার হোসেন মনে করেন, নতুন শুল্ক হারের কারণে বাংলাদেশ থেকে প্রতিযোগী দেশগুলোয় কিছু অর্ডার চলে যাওয়ার যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল, তা আর হবে না।
তিনি বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হোল্ড হওয়া অর্ডার নিয়ে নতুন করে নেগোসিয়েশন হবে। তখন বোঝা যাবে, বায়াররা কীভাবে এই বাড়তি ট্যারিফের প্রেশার সামলাতে চায়।
আমেরিকান কটনে বাড়ছে সুযোগ
বিজিএমইএর সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ট্যারিফ সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে বলা আছে, কোনো পোশাক উৎপাদনে যদি নূন্যতম ২০ শতাংশ আমেরিকার কাঁচামাল (যেমন আমেরিকার তুলা) ব্যবহার করা হয়, তাহলে এসব কাঁচামালের মূল্যের উপর এই অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ আমেরিকার কাঁচামাল ব্যবহার করলে বাড়তি শুল্ক ছাড় পাওয়া যাবে।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি করা পোশাকের ৭৫ শতাংশই কটনের বা তুলার সুতা থেকে তৈরি। ফলে এটি বাস্তবায়ন হলে তা বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হবে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি বাড়াতে বাংলাদেশের আমদানিকারকরা ইতোমধ্যে কিছু কার্যক্রম শুরু করছেন। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বছরে ৪০০ কোটি ডলারের বেশি তুলার প্রয়োজন হয়, যার মধ্যে মাত্র ৩০ কোটি ডলারের তুলা যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এই আমদানি বাড়িয়ে ১ বিলিয়ন ডলার করার পরিকল্পনা রয়েছে সংগঠনটির।
মার্কিন বাজারে বছরে প্রায় ৮৪০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ, যার মধ্যে প্রায় ৭০০ কোটি ডলার পোশাক পণ্য।
মূল্য সংযোজনের শর্ত নিয়ে অনিশ্চয়তা
এতসব ইতিবাচকতার মধ্যেও ২০ শতাংশ শুল্ক হার প্রয়োগের কিছু শর্ত নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। বিশেষ করে, ৪০ শতাংশ মূল্য সংযোজনের শর্ত থাকলে কিছু পণ্যে সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন রপ্তানিকারকরা।
এইচকেসি অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, ৪০ শতাংশ ভ্যালু এডিশনের শর্ত রয়েছে কিনা, তা আমরা এখনো জানি না। যদি থাকে, তাহলে আমরা সমস্যায় পড়ব। কেননা, কিছু পণ্যে এই হারে ভ্যালু এডিশন করা যায় না।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবুও বলেছেন, মূল্য সংযোজনসহ অন্যান্য শর্ত এখনো জানা নেই। একই কথা বলেছেন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ মোস্তফা আবিদ খান। তাঁর মতে, এসব শর্ত জানার আগে এখনই কোন কনক্লুশনে আসার সুযোগ নেই।
বাড়াতে হবে সক্ষমতা
রপ্তানিকারকরা বলছেন, বাড়তি ২০ শতাংশ শুল্ক ভারের একটি অংশ এখানকার তাদের ওপর আসার আশঙ্কাও রয়েছে। এমন অবস্থায় প্রতিযোগিতার সক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বন্দর, কাস্টমসের দক্ষতা, লজিস্টিকস সক্ষমতা এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি।
তিনি বলেন, আমরা একান্তভাবে আশা করি, শিল্প ও দেশের স্বার্থে সরকারের সকল নীতি সহায়তা চলমান থাকবে, এনবিআর-সহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের দক্ষতা বৃদ্ধি, বিশেষ করে কাস্টমস সংক্রান্ত নীতিগুলো শিল্পবান্ধব করা, চট্রগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং শিল্পে নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ রাখার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
ড. মোস্তফা আবিদ খান বলেন, এক্সপোর্টার, বায়ার ও কনজ্যুমার – এই তিন গ্রুপের সবার ওপরই কিছুটা চাপ আসবে। ফলে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের ওপরও কিছুটা প্রাইস প্রেশার আসতে পারে। এই প্রেশারে টিকে থাকতে হলে দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে ট্রেড কস্ট কমাতে হবে। কাস্টমসের অপ্রয়োজনীয় খরচ ও সময় কমানো সম্ভব হলে এফিসিয়েন্সি বাড়ানো সম্ভব।