জাতীয়
সুস্থ সাংবাদিকতা চর্চার পরিবেশ তৈরিতে কাজ করছে সরকার: তথ্য প্রতিমন্ত্রী

মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাইলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খুবই জরুরি, এর কোনো বিকল্প নেই। গণতান্ত্রিক উন্নয়নমুখী বাংলাদেশ, জনগণের বাংলাদেশ গড়তে গেলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতা চর্চার কোনো বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ)-এর প্রকাশনা ‘বিএসআরএফ বার্তা’-এর মোড়ক উন্মোচন ও বিএসআরএফ সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, গণমাধ্যম যত স্বাধীনভাবে চলবে, গণমাধ্যম যত পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করবে, এ দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ততো বিস্তৃত হবে। এ চেতনার পক্ষে সরকার কাজ করতে চায়। তবে একইসঙ্গে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে যখন অপসংবাদিকতা হয় তখন শুধু দেশ, জাতি বা গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, পেশাদার সাংবাদিকতাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পেশাদার সাংবাদিকরা সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হন। কাজেই সবার স্বার্থে সাংবাদিকতা চর্চার সুস্থ পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন। এটা সরকার করতে চায়।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের সমাজ ও দেশ তৈরি করতে গেলে গণমাধ্যমের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়েছে এবং এটা এগিয়ে যাচ্ছে। দেশে অনেক গণমাধ্যম আছে বরং স্বাধীনতার জায়গাটি এমন জায়গায় চলে গেছে যে মুক্ত থেকে উন্মুক্ত হয়ে গেছে। এখন অনেক ক্ষেত্রে পেশাদার সাংবাদিকরাই বলেন গণমাধ্যমে শৃঙ্খলা আনা দরকার। সে জায়গায় সরকার কাজ করছে এবং সাংবাদিকদের পরামর্শ নিয়ে প্রতিটি জায়গায় শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তথ্য অধিকার আইন সংসদে পাস হয়। এটা নিশ্চিত করে যে, সরকার এবং প্রশাসন জনগণের স্বার্থে যে তথ্য প্রয়োজন সেটা দিতে বাধ্য হয়। এই আইনের মাধ্যমে সরকার নিজেকেই জবাবদিহিতায় এনেছে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের আরও ক্ষমতায়ন হয়েছে। তবে এ আইন যে সাংবাদিকদের ক্ষমতায়ন করেছে সেটি অনেক ক্ষেত্রে অনুধাবনের অভাব থাকে। আবার সরকারি জায়গা থেকে যাদের তথ্য দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে তাদের দিক থেকেও কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে, তথ্য না দেওয়ার দৃষ্টিভঙ্গি থাকে। সেদিক থেকে দুই পক্ষের কিছু দৃষ্টিভঙ্গির উন্নয়নের প্রয়োজন আছে। এই আইন যে অধিকার দিয়েছে, সেটা জানা, বোঝা ও সঠিকভাবে প্রয়োগের জন্য সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালার ব্যবস্থা নেয়া হবে। একইসঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্যও কাজ করা হচ্ছে।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী এক ধরনের অপতথ্যের প্রচার হচ্ছে। বাংলাদেশের মান-মর্যাদা এবং ইমেজ বিনষ্ট করার জন্য পরিকল্পিতভাবে কিছু কাজ হচ্ছে। এছাড়া দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের বিপক্ষে নতুন নয়। এর আগেও হয়েছে, এখনও হচ্ছে।
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যম হয়ে গণমাধ্যমকে শ্রেণিবিভাগ করে ব্র্যান্ড করলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হয়। পছন্দ হলে গণমাধ্যম ঠিক আছে, পছন্দ না হলে গণমাধ্যম প্রো গভর্নমেন্ট বা এন্টি গভর্নমেন্ট, এ মানসিকতা থাকা কোনভাবেই সঠিক নয়। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে এবং তার একটি দায়বদ্ধতাও থাকতে হবে। কোনো গণমাধ্যম যদি অপতথ্য ছড়ায়, তার দায়বদ্ধতাও নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের চোখ হয়ে কাজ করে গণমাধ্যম। গণমাধ্যম সরকারের ব্যর্থতা-বিচ্যুতি তুলে ধরে সরকারের উপকার করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকার এটিকে স্বাগত জানায়।
কাফি

জাতীয়
দেশের চামড়াশিল্প নিয়ে আমরা অপরাধ করেছি: প্রধান উপদেষ্টা

দেশের সম্ভাবনাময় চামড়াশিল্পের যথাযথ মূল্যায়ন না করায় এটিকে “অপরাধ” হিসেবে অভিহিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, “এই শিল্প দিয়ে আমাদের অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেটা হয়নি।”
বুধবার (৩০ জুলাই) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের পর্যালোচনাসভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
সভায় তিনি চামড়াশিল্পের সংকট নিরসনে একটি পৃথক বৈঠকের আয়োজনের নির্দেশ দেন। বলেন, দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে অব্যবহৃত শিল্প সম্ভাবনাগুলোর পুনর্মূল্যায়ন জরুরি।
প্রেস উইং জানিয়েছে, বৈঠকে ১৬টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে ৪টি বাস্তবায়নে কাজ করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), ৩টি শিল্প মন্ত্রণালয়, ২টি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, ৩টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ৪টি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান জানান, ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো বাস্তবায়নের কাজ এগোচ্ছে, যেখানে ইতোমধ্যে ১৯টি সংস্থা যুক্ত হয়েছে। এছাড়া ট্যারিফ পলিসি ২০২৩ বাস্তবায়ন নিয়েও অগ্রগতি হয়েছে।
সভায় ট্যানারি ভিলেজের ইটিপি পূর্ণমাত্রায় চালু, গজারিয়ায় এপিআই পার্ক বাস্তবায়ন, এবং ২০২২ সালের শিল্প নীতি হালনাগাদ সম্পর্কেও আলোচনা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের নিজেদের স্বার্থেই এসব উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যেসব আইন-নীতিমালা বাস্তবে কোনো কাজে আসছে না, সেগুলো পরিবর্তন করে সামনে এগোতে হবে।”
তিনি আগামী দুই মাসের মধ্যে এলডিসি উত্তরণ বিষয়ে পরবর্তী বৈঠক আয়োজনের নির্দেশও দেন।
সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ বিভিন্ন উপদেষ্টা, সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর উপস্থিত ছিলেন।
কাফি
জাতীয়
৩৯ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ: ইসি

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩৯টি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।
বুধবার (৩০ জুলাই) নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
ইসি বলেন, নির্বাচন কমিশনের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষায়িত কারিগরি কমিটি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনরায় নির্ধারণে সুপারিশ জমা দিয়েছে। সংসদীয় ৩০০ আসনের মধ্যে ৩৯টির সীমানা পরিবর্তন হচ্ছে। গাজীপুরে একটি আসন বাড়ছে এবং বাগেরহাটে একটি আসন কমছে।
আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, সীমানা পুনর্নির্ধারণ আইন ২০২১ এর ধারা ৬ এর উপ-ধারায় বলা হয়েছে, সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং আদমশুমারি এ তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে নির্ধারণ করতে হবে। তবে আদমশুমারি ২০২২ অনুযায়ী কিছু বিষয় আছে একটু অসামঞ্জস্যপূর্ণ। আমাদের কাছে আছে হালনাগাদ ভোটার সংখ্যা।
এছাড়া আমাদের ভোটার তালিকা ভিত্তিতে, ভোটার সংখ্যার ভিত্তিতে কমিটি গড়ে আসনভিত্তিক ভোটার সংখ্যা নির্ধারণ করেছেন। সেটি হলো ৪ লাখ ২০ হাজার সামথিং, অর্থাৎ ৩০০ আসনের এবার ভোটার সংখ্যা হলো ৪ লাখ ২০ হাজার। উনারা ভোটারের সংখ্যার ভিত্তিতে একটা গ্রেডিং করেছেন, সেটি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি ভোটার কোন জেলায় এবং সবচেয়ে কম ভোটার কোন জেলায়।
কারিগরি কমিটি ফাইন্ড আউট করেছেন যে, সবচেয়ে বেশি ভোটার যে জেলায় সেই জেলায় একটি আসন উনারা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন এবং সর্বনিম্ন ভোটার যে জেলায় সেই জেলায় একটি আসন কমানোর প্রস্তাব করেছে। সেই আলোকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। টেকনিক্যাল কমিটির তথ্যানুযায়ী, সর্বোচ্চ ভোটার হচ্ছে গাজীপুরে। আর বাগেরহাট জেলায় সবচেয়ে কম। মানে বিশেষায়িত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী তারা ভোটার সংখ্যা এবং জনসংখ্যা অ্যানালাইসিস করে প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের প্রস্তাব হচ্ছে বাগেরহাট একটি আসন কমবে, গাজীপুরে জনসংখ্যা ও ভোটারের সংখ্যার ভিত্তিতে একটি আসন বাড়বে।
যে ৩৯ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ হবে
পঞ্চগড়-১ ও ২, রংপুর-৩, সিরাজগঞ্জ-১ ও ২, সাতক্ষীরা-৩ ও ৪, শরিয়তপুর-২ ও ৩, ঢাকা-২, ৩, ৭, ১০, ১৪ ও ১৯, গাজীপুর-১, ২, ৩, ৫ ও ৬, নারায়ণগঞ্জ-৩, ৪ ও ৫, সিলেট- ১ও ৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ২ ও ৩, কুমিল্লা ১, ২, ১০ ও ১১, নোয়াখালী ১, ২, ৪ ও ৫, চট্টগ্রাম-৭ ও ৮ এবং বাগেরহাট-২ ও ৩ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হচ্ছে।
জাতীয়
৫ আগস্ট ঘিরে নাশকতার শঙ্কা নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

গণঅভ্যুত্থান দিবস উদ্যাপন নিয়ে কোনো নাশকতার শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
বুধবার (৩০ জুলাই) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আগামী ৫ আগস্ট দেশে নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ধরনের হুমকি নেই। সবকিছু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এ সময় বিশেষ অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দেশের নিরাপত্তা বজায় রাখার লক্ষ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে যে বিশেষ অভিযানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেটি তাদের নিজস্ব বিষয়। যে কোনো সময় নিরাপত্তার জন্য ডিএমপি এমন অভিযান চালাতে পারে বলে জানান তিনি।
রংপুরের গংগাচড়ায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, হামলার ঘটনায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
কাফি
জাতীয়
ফিলিস্তিনিদের রক্ষায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান বাংলাদেশের

ফিলিস্তিনি জনগণকে গণহত্যা ও নিষ্ঠুর বর্বরতা থেকে রক্ষা করতে অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। জাতিসংঘ সদরদপ্তরে আয়োজিত ‘ফিলিস্তিন সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বলেন, ইসরায়েল এ পর্যন্ত ৫৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যা নিঃসন্দেহে গণহত্যার চিত্র বহন করে। ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি বাংলাদেশের অব্যাহত সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় হলো ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।
গাজা পুনর্গঠনে আরব দেশগুলোর গৃহীত পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, জাতিসংঘের নেতৃত্বে পরিচালিত এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ। একইসঙ্গে তিনি গাজায় জাতিসংঘের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে যেকোনো ধরনের বাধা প্রদানের প্রচেষ্টা সর্বাত্মকভাবে প্রতিরোধের আহ্বান জানান।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলের লাগাতার আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে একটি স্থায়ী সমাধানের পথ সুগম করতে এবং স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতিসংঘের সদস্যদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করতেই এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তিনদিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজন করে ফ্রান্স ও সৌদি আরব।
‘ইউএন হাই-লেভেল ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স ফর দ্য পিসফুল সেটেলমেন্ট অব দ্য কোয়েশ্চেন অব প্যালেস্টাইন অ্যান্ড দ্য ইমপ্লিমেন্টেশন অব দ্য টু-স্টেট সল্যুশন’ শীর্ষক এই সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ১১৮টি দেশের প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে।
কাফি
জাতীয়
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে কাজ করছি: প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, একটি অংশগ্রহণমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা একটি নতুন রাজনৈতিক কাঠামোর চারপাশে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য কাজ করছি।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদনে সুপারিশ বাস্তবায়নে জুলাই স্মরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার মিশন।
ড. ইউনূস বলেন, আমাদের লক্ষ্য স্পষ্ট; এমন একটি সমাজ গড়ে তোলা যেখানে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ শান্তিতে, মর্যাদায়, স্বাধীনতায় ও গর্বের সঙ্গে বসবাস করতে পারে।
তিনি বলেন, আমাদের কাজ এখনো শেষ হয়নি। সংস্কার কর্মসূচির পাশাপাশি আমরা যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী, তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছি।
তার মতে, ন্যায়বিচার কেবল শাস্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ‘ন্যায়বিচার মানে হলো—রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যেন আর কখনো জনগণের বিরুদ্ধে দমন, নিপীড়ন বা ধ্বংসের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত না হয়’- বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান, ভুক্তভোগী পরিবারের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, তরুণ সমাজের প্রতিনিধি, সুশীল সমাজ ও আন্তর্জাতিক অংশীদাররা অংশ নেন।
প্রধান উপদেষ্টার অনুরোধে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) একটি স্বাধীন তথ্য-উপাত্ত অনুসন্ধান মিশন জুলাই-আগস্ট ২০২৪ এর ঘটনাবলির তদন্ত করে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বিস্তারিত তথ্য, সুপারিশ ও ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় করণীয় তুলে ধরা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে আমি জাতিসংঘকে ধন্যবাদ জানাই—আমাদের সবচেয়ে অন্ধকার সময়ে আমাদের পাশে থাকার জন্য। আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে আমরা জাতিসংঘের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
তিনি বলেন, এটি ছিল এমন এক মুহূর্ত, যখন হাজার হাজার নারী-পুরুষ—যাদের অধিকাংশই তরুণ—নির্মমতা ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে দেশের মর্যাদা ও ভবিষ্যৎ পুনরুদ্ধার করে। তাদের সাহস শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, মানবতার পক্ষেও এক অমোঘ বার্তা ছিল।
ড. ইউনূস বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে রোহিঙ্গা সংকট এবং ২০২৪ সালের অন্ধকার সময় পর্যন্ত জাতিসংঘ সবসময় বাংলাদেশের পাশে থেকেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিসংঘ সব মানুষের—ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ বা অবস্থান নির্বিশেষে অপরিহার্য অধিকার নিশ্চিত করতে যে ঘোষণা দিয়েছে, সেটি বাংলাদেশের সংবিধানে গভীরভাবে প্রোথিত।
তিনি বলেন, গত ১৬ বছর ধরে এ অধিকারগুলো বারবার লঙ্ঘিত হয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো দখল হয়ে গেছে, স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হয়েছে, সহিংসতা হয়ে উঠেছে শাসনের প্রধান হাতিয়ার। কিন্তু গত জুলাইয়ে জনগণ একযোগে এ বাস্তবতাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য সত্য উদ্ঘাটন শুধু ন্যায়বিচারের জন্য নয়, বরং সামাজিক নিরাময়ের জন্যও অপরিহার্য।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে দেখা যায়, মাত্র কয়েক সপ্তাহে আনুমানিক ১,৪০০ মানুষ নিহত হন। এ সহিংসতাকে পূর্বপরিকল্পিত, কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত এবং রাষ্ট্রক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সংঘটিত বলে উল্লেখ করা হয়। এতে সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের ব্যাপারে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এ প্রতিবেদনকে সমর্থন করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, বিশেষ করে বিবিসি ও আল-জাজিরা তাদের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে একই ধরনের তথ্য তুলে ধরে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জাতিসংঘ শুধু অপরাধ নথিবদ্ধ করেনি, বরং তারা এমন একটি সুসংগঠিত সুপারিশমালা তৈরি করেছে, যা ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে সহায়ক হবে।
তিনি বলেন, আমরা এ সুপারিশগুলোকে শুধু বাইরের চাপ হিসেবে নয়, নিজেদের দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করেছি।
সরকারের বিভিন্ন সংস্কার উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা দণ্ডবিধি সংশোধন করেছি এবং গুম হওয়া ব্যক্তিদের সুরক্ষা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশনে যোগ দিয়েছি। এ মাসের শুরুতে ওএইচসিএইচআরের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছি, যার মাধ্যমে ঢাকায় একটি সহযোগী মিশন স্থাপন করা হবে।
এ মিশন রাষ্ট্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে এবং মানবাধিকার সুরক্ষায় কাজ করবে।
প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে তার অকুণ্ঠ সমর্থন ও গত মার্চে বাংলাদেশ সফরের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। একই সঙ্গে তিনি মানবাধিকারবিষয়ক হাই কমিশনার ফলকার টুর্ক, ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং টিমের সদস্য, জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গুইন লুইস এবং সিনিয়র মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খানকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান।