শিল্প-বাণিজ্য
বিশ্ববাজারে টানা দুই বছর কমবে পণ্যের দাম

বিশ্ববাজারে এ বছর পণ্যের দাম নিম্নমুখী থাকবে, একই ধারাবাহিকতায় আগামী বছরও দাম কমবে। তবে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে বা যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে দাম বেড়ে যেতে পারে। পণ্যবাজার নিয়ে বিশ্বব্যাংকের এক পূর্বাভাসে এমন দাবি করা হয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমবে ৩ শতাংশ, ২০২৫ সালে কমবে ৪ শতাংশ।
তবে এ দাম এখনো ২০১৫ এবং করোনা-পূর্ববর্তী ২০২০ সালের গড় দামের চেয়ে ৩৮ শতাংশ বেশি। যদিও ২০২৪ সালে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বাড়বে ২ শতাংশ এবং সোনা ও তামার দাম বাড়বে যথাক্রমে ৮ শতাংশ ও ৫ শতাংশ। পূর্বাভাসে প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০২২ সালের মধ্যভাগ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যভাগ পর্যন্ত বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমেছে ৪০ শতাংশ। এর মধ্যে রয়েছে তেল, গ্যাস ও গম। এর ফলে ওই সময়ে বিশ্ববাজারে মূল্যস্ফীতি কমেছিল ২ শতাংশীয় পয়েন্ট।
পূর্বাভাসে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় আবশ্যকীয় পণ্যের বাজারে উচ্চমুখী চাপ তৈরি করেছে। বিশেষত তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ছে। এর পাশাপাশি তামার দাম বেড়েও দুই বছরে সর্বোচ্চ হয়েছে। এতে সরবরাহ উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
এদিকে বিশ্ববাজারে বেশির ভাগ পণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশের জন্য এই সুখবর খুব বেশি স্বস্তির বার্তা বয়ে আনতে পারবে না। কারণ জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল, তুলার মতো বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান আমদানি পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়বে বলে মনে করে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে দেশে আগামী দু-এক বছর মূল্যস্ফীতি কতটা কমবে তা নিয়ে সংশয় আছে।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে, ওই ১০টি পণ্যের মধ্যে ছয়টি পণ্যের দাম কমবে, আর বাকি চারটির দাম বাড়বে।
দাম কমতে পারে এমন ছয়টি পণ্য হলো ইউরিয়া সার, কয়লা, এলএনজি, চিনি, গম ও ভুট্টা। আর দাম বাড়তে পারে জ্বালানি তেল, পামতেল, সয়াবিন তেল ও তুলার। দেশের প্রধান আমদানি পণ্য তালিকায় এই ১০টি পণ্য বিশাল জায়গা দখল করে আছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০২৩ সালে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের গড় দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি সাড়ে ৮২ ডলার। চলতি বছরে তা বেড়ে ৮৪ ডলার হতে পারে। তবে আগামী বছর তা কমে ৭৯ ডলার হতে পারে। জ্বালানি তেল আমদানিতেই সরকার সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষের হিসাবে ৪৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেল আমদানি হয়েছিল। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে, এ বছর এই খরচ আরো বাড়তে পারে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ আমদানিপণ্য হলো তুলা। এটি বস্ত্র খাতের মূল কাঁচামাল। বিশ্বব্যাংক বলছে, আগামী দুই বছর তুলার দাম বাড়বে। এ বছর প্রতি কেজি তুলার দাম উঠতে পারে ২.১৫ ডলারে। আগামী বছর তা আরো পাঁচ সেন্ট বাড়তে পারে। গত অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি মূল্যের তুলা আমদানি হয়েছে।
পামতেল ও সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে, চলতি বছরে প্রতি টন পামতেলের দাম ২০-২১ ডলার বাড়তে পারে। প্রতি টন তেলের গড় দাম হতে পারে ৯০৫ ডলার। অন্যদিকে সয়াবিন তেলের দামও বাড়ার কথা বলছে বিশ্বব্যাংক। বর্তমানের টনপ্রতি এক হাজার ১১৯ ডলার থেকে বেড়ে এক হাজার ১৩০ ডলার হতে পারে সয়াবিন তেলের দাম। দেশে প্রতিবছর গড়ে ৩০-৩৫ লাখ টন পামতেল ও সয়াবিন তেল আমদানি হয়। গত অর্থবছরে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার পামতেল ও সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে কোন পণ্যের কত দাম কমছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরিয়া সারের দাম টনপ্রতি ৩৫৮ ডলার থেকে কমে ৩৫০ ডলার হতে পারে। চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরের প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার সার আমদানি হয়েছে। এবার একটু কম খরচ হতে পারে। একইভাবে এলএনজি এবং কয়লার দামও কমতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, কয়লার দাম ব্যাপক কমতে পারে। ২০২৩ সালে প্রতি টন কয়লার গড় দাম ছিল প্রায় ১৭৩ ডলার। চলতি অর্থবছরে এর গড় দাম হতে পারে ১২৫ ডলার। অন্যদিকে প্রতি বিএমএমটিইউ এলএনজির দাম ১৪ ডলার থেকে কমে সাড়ে ১২ ডলার হতে পারে।
চিনি হলো আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নিত্যপণ্য। দেশে চিনির চাহিদার প্রায় পুরোটাই আমদানি করে মেটাতে হয়। বিশ্বব্যাংক বলছে, চিনিতে সুখবর আছে। প্রতি কেজি ০.৫২ থেকে কমে ০.৫০ ডলার হতে পারে। একইভাবে প্রতি টন গমের দামও ৩৪০ থেকে কমে ২৯০ ডলার হতে পারে। পোলট্রি ফিডের জন্য বিপুল পরিমাণ ভুট্টা আমদানি করা হয় বাংলাদেশে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভুট্টার দামও কমতে পারে।

শিল্প-বাণিজ্য
বাংলাদেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়ে বিশাল তালিকা পাঠালো যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়ে পণ্যের ‘বিশাল’ তালিকা পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানান, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) গতকাল রোববার তাকে এসব পণ্যের একটি তালিকা ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠিয়েছে।
বাংলাদেশের ওপর আরোপিত ট্রাম্প-শুল্ক নিয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত আলোচনায় অংশগ্রহণ শেষে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার পর গতরাতে টেলিফোনে এ তথ্য জানান তিনি। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রধান বাণিজ্য আলোচনাকারী সংস্থার সঙ্গে আলোচনার পর ঢাকায় ফিরেছেন।
মাহবুবুর বলেন, ‘ওয়াশিংটন ডিসিতে ইউএসটিআরের সঙ্গে আলোচনার সময় কয়েকটি বিষয় ছাড়া প্রায় সব বিষয়ে উভয় দেশ একমত হয়েছে।’ কোন কোন পণ্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তালিকা বিশাল’। সুনির্দিষ্ট সংখ্যা তিনি তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বহু বছর ধরে অনেক মার্কিন পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়ে আসছে। যেমন: তুলা, গম, সয়াবিন বীজ ও তেল এবং অন্যান্য কৃষিপণ্য আমদানিতে শুল্ক নেই।’
আরও পণ্য এই শুল্কমুক্ত তালিকায় যুক্ত করার এখতিয়ার এককভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেই এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মতামত নিতে আগামী শনিবার একটি বৈঠক হবে বলে জানান মাহবুবুর।
এরপর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবে, যাতে আগামী ১ আগস্ট থেকে ৩৫ শতাংশ ট্রাম্প-শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগেই নতুন করে শুল্কহার চূড়ান্ত করা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত আলোচনায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ হারে শুল্ক নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। পরবর্তী বৈঠকও ওয়াশিংটন ডিসিতে হওয়ার কথা রয়েছে।
গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প-শুল্কের ঘোষণা আসার পর বাংলাদেশ অনেক মার্কিন পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করে এবং উড়োজাহাজ, এলএনজি, তুলা, গম, সয়াবিনসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য আমদানির পরিমাণ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেয়।
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করে থাকে। গত বছর বাংলাদেশ আট বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে এবং দেশটি থেকে আমদানি করেছে দুই বিলিয়ন ডলারের পণ্য।
‘ফ্রেমওয়ার্ক ডিল’
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গতকাল বলেছেন, ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ফ্রেমওয়ার্ক ডিল করতে চায়—যেখানে নিরাপত্তা উদ্বেগসহ বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলোচনা শুধু বাণিজ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি বলেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্র) তাদের জাতীয় নিরাপত্তাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে।’
তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র মূল্যায়ন করছে যে বাংলাদেশ কীভাবে অন্যান্য দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি কাঠামো প্রস্তুত করা হচ্ছে এবং বিষয়টি আলোচনাধীন।’
ওয়াশিংটন ও ঢাকার মধ্যকার আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে এবং ট্রাম্প-শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগেই আলোচনা শেষ হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
কাফি
শিল্প-বাণিজ্য
আট মাস পর ভারত থেকে এলো ১০ টন কাঁচা মরিচ

দীর্ঘ আট মাস বন্ধ থাকার পর দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ভারত থেকে দুটি ট্রাকে করে ১০ টনের বেশি কাঁচা মরিচ বাংলাদেশের হিলি স্থলবন্দরে প্রবেশ করে।
হিলি স্থলবন্দর পরিচালনাকারী পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকেলে বগুড়ার এন পি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ৩ টন ৫০০ কেজি ও হিলি স্থলবন্দরের মেসার্স সততা বাণিজ্যালয় নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ৬ টন ৭২০ কেজি কাঁচা মরিচ আমদানি করে।
হিলি স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ গত বছরের ১৪ নভেম্বর হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৩টি ট্রাকে ৩১ টন ৮৩ কেজি কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছিল। এরপর ৭ মাস ২৬ দিন ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি বন্ধ ছিল।
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিরামপুর ও আশপাশের উপজেলার খুচরা বাজারে কাঁচা মরিচ মানভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। তবে মে মাসের শেষে দাবদাহের কারণে জমিতে থাকা কাঁচা মরিচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে উৎপাদনও কমে যায়। ফলে সে সময় থেকে বিরামপুর ও হিলি বাজারে কাঁচা মরিচ খুচরা বাজারে মানভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছিল। তবে গতকাল সকালে বিরামপুরের খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়।
বিরামপুর পৌর শহরের নতুনবাজার এলাকায় সবজির পাইকারি বাজারের কাঁচা মরিচের ব্যবসায়ী মানিক হোসেন বলেন, গত মাসে খরার কারণে কাঁচা মরিচের উৎপাদন ব্যাহত হয়। এতে বাজারে সরবরাহ কমে গেছে, দামও বাড়তি। তিন দিন আগেও পাইকারিতে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গতকাল সকালে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ (বিজলী প্লাস) ১৩০ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি করেছি। ভারত থেকে কাঁচা মরিচের আমদানি বাড়লে বাজারে দামও কমবে।
হিলি স্থলবন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী সঙ্গনিরোধ কর্মকর্তা ইউসুফ আলী বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে কাঁচা মরিচ আমদানির জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে এ পর্যন্ত তিনটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আড়াই হাজার টন কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি (আইপি) পেয়েছে।
শিল্প-বাণিজ্য
৪৩ পণ্য রপ্তানিতে আগের মতোই প্রণোদনা পাবেন ব্যবসায়ীরা

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৪৩ খাতে রপ্তানি প্রণোদনা ও নগদ সহায়তা আগের মতোই বহাল রেখেছে সরকার। জাহাজীকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে রপ্তানি প্রণোদনা এবং নগদ সহায়তার হার পণ্যভেদে দশমিক ৩০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। এ নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, তিন কারণে রপ্তানি খাতে আর্থিক প্রণোদনা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের সময়সীমা আরও পাঁচ মাস পিছিয়ে দিয়েছে সরকার। আগামী বছরের (২০২৬) জুলাই থেকে এটি কার্যকর করার কথা ছিল। এখন তা পিছিয়ে আগামী বছরের নভেম্বর মাস নির্ধারণ করা হয়েছে।
সূত্রটি জানায়, যে কারণে এই সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে তা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর অধিক হারে শুল্কারোপ, স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে ভারতের বিধিনিষেধ এবং গত বছর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিল্প খাতে অস্থিরতা। বিগত সাত অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি খাতে প্রণোদনা দেওয়ার পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। এই আর্থিক প্রণোদনার সিংহভাগ (৮০ ভাগের বেশি) পেয়েছে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার গত বছরের দুই দফায় রপ্তানি প্রণোদনা কমায়। তখন বলা হয়, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশ হবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধিবিধান অনুসারে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর কোনো ধরনের রপ্তানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা দেওয়া যায় না। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর একবারে সহায়তা প্রত্যাহার করা হলে রপ্তানি খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তাই ধাপে ধাপে সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
কোন খাতে কত প্রণোদনা
নগদ সহায়তার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাত। দেশি সুতা ব্যবহার করে উৎপাদিত তৈরি পোশাক নতুন বাজারে রপ্তানি করলে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৯ শতাংশ প্রণোদনা মিলবে; যা গত বছরের জুনের আগে ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ।
বর্তমানে দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনা ১০ শতাংশ এবং ক্রাস্ট ও ফিনিশড লেদারে ৬ শতাংশ প্রণোদনা মিলবে। এ ছাড়া প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যে নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ মিলবে।
কয়েক বছর ধরেই পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি কমছে। তারপরও বৈচিত্র্যময় পাটপণ্য রপ্তানিতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা বহাল থাকবে। এ ছাড়া পাটজাত পণ্যে ৫ শতাংশ এবং পাট সুতায় প্রণোদনা মিলবে ৩ শতাংশ। একইভাবে হালকা প্রকৌশল পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ, ওষুধের কাঁচামালে ৫ শতাংশ, বাইসাইকেল রপ্তানিতে ৩ শতাংশ এবং আসবাব পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা থাকবে ৮ শতাংশ। এ ছাড়া হিমায়িত চিংড়ি, মোটরসাইকেল, ইলেকট্রনিকস, পেট বোতল ফ্লেক্স, জাহাজ, প্লাস্টিক পণ্য, হাতে তৈরি পণ্য যেমন হোগলা, খড়, আখ বা নারিকেলের ছোবড়া, তৈরি পোশাক কারখানার ঝুট, গরু, মহিষের নাড়ি, ভুঁড়ি, শিং ও রগ, কাঁকড়া, কুঁচে, আগর, আঁতর ইত্যাদি পণ্য রপ্তানিতেও নগদ সহায়তা আগের মতো থাকবে।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, রপ্তানিতে নগদ সহায়তার অর্থ পেতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয় ব্যবসায়ীদের। এটি কমিয়ে আনতে প্রবাসী আয়ের বিপরীতে যেভাবে প্রণোদনা দেয়, সেভাবে রপ্তানিকারকদেরও দিতে পারে সরকার। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভারত বিভিন্নভাবে প্রণোদনা দিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহ দিচ্ছে। তবে বাংলাদেশে ঘটছে উল্টো। এদিকে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি খরচ বাড়লেও প্রণোদনা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
শিল্প-বাণিজ্য
আশুরায় হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রফতানি বন্ধ

পবিত্র আশুরা উপলক্ষে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। তবে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টে যাত্রী পারাপার কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।
রবিবার (৬ জুলাই) হিলি কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফএজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, রোববার পবিত্র আশুরা উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকায় বন্ধ রয়েছে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যসহ সকল কার্যক্রম। তবে ছুটি শেষে আগামীকাল সোমবার (৭ জুলাই) থেকে পুনরায় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দুদেশের মাঝে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য কার্যক্রম চালু হবে।
শিল্প-বাণিজ্য
তুলা আমদানিতে অগ্রিম কর প্রত্যাহার চান ব্যবসায়ীরা

তুলা আমদানির ওপর আরোপিত ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বস্ত্রকলের মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ। তারা বলেছে, অগ্রিম আয়কর আরোপ সরকারের রাজস্ব সংগ্রহের জন্য সুবিধাজনক মনে হলেও সিদ্ধান্তটি আত্মঘাতী। এতে বস্ত্র খাত বড় ধরনের সংকটে পড়বে। চলতি মূলধন সংকুচিত হতে হতে একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে যাবে অনেক বস্ত্রকল।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানকে দেওয়া এক চিঠিতে এমনটাই উল্লেখ করেছেন বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল। গতকাল বৃহস্পতিবার এই চিঠি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাণিজ্য উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের কাছেও পাঠানো হয়েছে।
২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার ছাড়াও দেশি বস্ত্রকলে উৎপাদিত তুলার সুতা ও কৃত্রিম আঁশ এবং অন্যান্য আঁশের সংমিশ্রণে তৈরি সুতার ওপর উৎপাদন পর্যায়ে কেজিপ্রতি সুনির্দিষ্ট কর ৫ টাকা অব্যাহতি প্রদানের সুপারিশ করেছে বিটিএমএ।
বিটিএমএর তথ্যানুযায়ী, সংগঠনটির ১ হাজার ৮৫৮টি সুতাকল, উইভিং ও ডাইং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং বস্ত্রকল রয়েছে। এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলার। দেশের শীর্ষ রপ্তানি আয়ের খাত তৈরি পোশাকশিল্পের সুতা ও কাপড়ের ৭০ শতাংশের জোগানদাতা হচ্ছে বস্ত্র খাত। ফলে বস্ত্রশিল্পের যেকোনো সমস্যা তৈরি হলে তা পোশাকশিল্পেও এর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
বিটিএমএ সভাপতি চিঠিতে বলেন, তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপ করায় বস্ত্রকলগুলোর উৎপাদন ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বাড়বে, যা আমাদের সক্ষমতাকে প্রতিযোগী দেশের তুলনায় পিছিয়ে দেবে। ফলে কোনো অবস্থাতেই দেশি বস্ত্রকলগুলো আগামী দিনে টিকে থাকতে পারবে না। আমদানি করা তুলা খালাসে প্রতিবার ২ শতাংশ হারে এআইটি পরিশোধ করতে হলে বছর শেষে করভার বেড়ে গিয়ে ২৯ শতাংশে উঠবে। এতে চলতি মূলধন ধারাবাহিকভাবে সংকুচিত হবে, যা বস্ত্র খাতের মতো আমদানি পরিপূরক শিল্পের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠবে। এভাবে চক্রবৃদ্ধি হারে এআইটি পরিশোধ করতে হলে তিন বছরের মধ্যে চলতি মূলধন শূন্য হয়ে যাবে। ফলে দেশি বস্ত্রকলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং প্রতিযোগী দেশগুলো থেকে আমাদের দেশে সুতা আমদানি বেড়ে যাবে। তাতে পণ্য রপ্তানিতে মূল্য সংযোজন কমবে। সে জন্য ২ শতাংশ এআইটি প্রত্যাহার করা জরুরি।
দেশি কারখানায় উৎপাদিত সুতার ওপর সুনির্দিষ্ট কর প্রত্যাহারের দাবির সপক্ষে বিটিএমএ সভাপতির যুক্তি হচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের সুতার ওপর উৎপাদন পর্যায়ে কেজি প্রতি সুনির্দিষ্ট কর ৩ টাকা বাড়িয়ে ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে দেশি স্পিনিং খাতে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। তার কারণ সুতার বিক্রয়মূল্য বৃদ্ধি পাবে এবং ক্রেতা প্রতিষ্ঠান দেশি সুতা কিনতে নিরুৎসাহিত হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অনেক বস্ত্রকল বন্ধ হয়ে যাবে।
শওকত আজিজ আরও দাবি করেন, সরকারের এমন সিদ্ধান্তে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ৭৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে। ফলে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে বিপুলসংখ্যক শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা পরিশোধে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
বিটিএমএ জানিয়েছে, বর্তমানে তীব্র জ্বালানিসংকট, শ্রমিকের মজুরি, বৈশ্বিক বিভিন্ন সংকটজনিত কারণে বস্ত্র খাতের উৎপাদন ব্যয় ১৫-২০ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে জ্বালানিসংকটের কারণে উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে দেশি বস্ত্রকল, বিশেষ করে সুতার কলগুলো সংকটে পড়েছে।