আবহাওয়া
কালবৈশাখী ঘূর্ণিঝড়ের খবর দিলো আবহাওয়া অফিস

এপ্রিলে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে ৮১ শতাংশই কম তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি ঊর্ধ্বে : দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাতে কমছে গরমের দাপট চলতি মে (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ) মাসে দেশে উচ্চ তাপপ্রবাহ ও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা, বজ্রপাত ও বজ্র-ঝড়, কালবৈশাখী ঝড় ও ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস প্রদানের জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার আবহাওয়া বিভাগের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় এই পূর্বাভাস দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেনআবহাওয়া বিভাগের পরিচালক ও কমিটির চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান। দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে আরও জানা গেছে, এ মাসে দেশে ৩ থেকে ৫ দিন বজ্র শিলাবৃষ্টিসহ হালকা ধরনের কালবৈশাখী ঝড় এবং ২ থেকে ৩ দিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ মাঝারি থেকে প্রবল কালবৈশাখী ঝড় সংঘটিত হতে পারে।
তাছাড়া চলতি মে মাসে দেশের কোথাও কোথাও এক থেকে ৩টি মৃদু তাপপ্রবাহ (তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ (৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সে.) এবং এক থেকে ২টি তীব্র তাপপ্রবাহ (তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২) বয়ে যেতে পারে। গত মাসের মতো এ মাসেও দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকতে পারে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে ২টি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে এবং এর মধ্য থেকে একটি এ মাসের মাঝামাঝি সময়ে নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।
চলতি মে মাসে উজানে ভারতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীসমূহের পানি দ্রæত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং কতিপয় স্থানে বিপদসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হতে পারে।
আবহাওয়া বিভাগের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি মে মাসে সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞ কমিটির উক্ত সভায় পর্যালোচনায় জানা গেছে, গেল এপ্রিল মাসে (চৈত্র-বৈশাখ) সারা দেশে গড়ে মৌসুমের এ সময়ের স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ৮১ শতাংশই কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবার বিভাগ-জেলাওয়ারি হিসাবে বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে অসঙ্গতি রয়েছে।
উত্তর জনপদের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে কোন বৃষ্টিপাতই হয়নি। ঢাকা বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে ৯১ ভাগ কম, চট্টগ্রামে ৮৪ ভাগ কম, খুলনায় ৮৯ ভাগ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবার সিলেট বিভাগে মৌসুমের এ সময়ে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ২৯৬ মিলিমিটারের স্থলে ২৯৩ মি.মি., অর্থাৎ স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ নিয়ে সারা দেশে পর পর চার মাসে দেশে ধারাবাহিকভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে প্রায় ৩৫ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগের পর্যালোচনায় আরো জানা গেছে, গেল এপ্রিল মাসে মার্চে দেশে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় যথাক্রমে গড়ে ৩ দশমিক ২ এবং ২ দশমিক ৮ সেলসিয়াস বেশি ছিল। সারা দেশে গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ ডিগ্রি সে. ঊর্ধ্বে ছিল। আগের মাসে মার্চে দেশে গড় তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সে. কম ছিল। গত এপ্রিল মাসে দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩০ এপ্রিল যশোর জেলায় ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সে.।
জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব, বৈশি^ক উষ্ণতা, আবহাওয়ায় ‘এল নিনো’ অবস্থার কারণে গত এপ্রিল মাসে দেশে ৫২ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, ৭৬ বছরের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী টানা উচ্চতাপ এবং ৪৩ বছরের মধ্যে কালবৈশাখী ঝড়-বৃষ্টি, বজ্র-ঝড় বৃষ্টিহীন চৈত্র-বৈশাখ মাসের ব্যতিক্রম এবং চরম-ভাবাপন্ন আবহাওয়া বিরাজ করে।
এ অবস্থায় ফল-ফসল, কৃষি-খামার, চিংড়িসহ মৎস্য, পোলট্রি ও ডেইরী খাত, জনস্বাস্থ্য, প্রাণ-প্রকৃতির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইতোমধ্যে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে অনেকেই। হিট শকে আধাপাকা ইরি-বোরো ধান, অর্থকরী ফল-ফলাদি আম, লিচু, পেঁপে, আতা, সফেদা, জামরুল ইত্যাদির ফলন বা উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
বৃষ্টি বজ্রবৃষ্টিতে কিছুটা কমছে গরমের দাপট : চলমান তাপদাহ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ জায়গায় অব্যাহত রয়েছে। তবে গত মঙ্গলবারের তুলনায় গত দুই দিনে উচ্চতাপের দাপট কিছুটা কমেছে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন বুধবার যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২.৮, তার আগের দিন মঙ্গলবারে (৩০ এপ্রিল) মৌসুমের রেকর্ড তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৪৩.৮ ডিগ্রি সে.। গতকাল ঢাকার তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ ৩৮.৩ এবং সর্বনিম্ন ২৯.৩ ডিগ্রি সে.। এছাড়া উচ্চ তাপ ছিল রাজশাহী, পাবনা ও যশোরে ৪১, কুষ্টিয়ায় ৪০.৫ ডিগ্রি সে.।
এক মাসের টানা উচ্চ তাপপ্রবাহ খরা-অনাবৃষ্টির পর গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, বজ্র-ঝড়, বজ্রবৃষ্টির সুবাদে চলমান উচ্চ তাপপ্রবাহের দাপট কিছুটা কমতে শুরু করেছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিতে স্বস্তি দেখা দিচ্ছে জনজীবনে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে কুতুবদিয়ায় ২৭ মিলিমিটার। এছাড়া চট্টগ্রাম, ফেনী ও স›দ্বীপে ৭, সীতাকুÐে ৬, বান্দরবানও নোয়াখালীতে ৪, রাঙ্গামাটিতে ২২, কক্সবাজারে ১১ মি.মি. ছাড়াওÑ রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে হালকা কিংবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল বুধবার চট্টগ্রামে সকালে হঠাৎ আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে হিমেল দমকা হাওয়ার সাথে ঘণ্টাখানেক বৃষ্টিপাত হয়। এ সময়ে অনেকেই রাস্তাঘাটে-মাঠে বৃষ্টিতে ভিজে স্বস্তি প্রকাশ করেন। এক মাস টানা উচ্চতাপ ও খরার পর চট্টগ্রামে ক্ষণিকের বৃষ্টিতে সাময়িক স্বস্তি দেখা দেয়।
আগামী এক সপ্তাহের পূর্বাভাস
শুক্রবার (৩মে) সন্ধ্যাসহ পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার (তিন দিন) আবহাওয়া পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা, ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
যশোর, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা, কুষ্টিয়া ও রাজশাহী জেলাসমূহের উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এছাড়া দেশের অন্যত্র মৃদু থেকে মাঝারী তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই তাপপ্রবাহ কিছু জায়গায় কমে আসতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস এবং রাতের তাপমাত্রা এক থেকে ২ ডিগ্রি সে. হ্রাস পেতে পারে।
আগামীকাল শনিবার (৪মে) সন্ধ্যা পর্যন্ত আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা, ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে।
আগামী রোববার (৫মে) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা, ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত শিলাবৃষ্টি হতে পারে। দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা হ্রাস ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
চলমান তাপপ্রবাহ কিছু এলাকায় কমে আসতে পারে। উচ্চ তাপপ্রাবাহের তীব্রতা হ্রাস পেতে পারে। এর পরের ৫ দিনে সারাদেশে বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে এবং বৃষ্টিপাত ক্রমেই বিস্তার লাভ করতে পারে। তাপমাত্রা আরও হ্রাস পেতে পারে। তাপপ্রবাহের এলাকা কমে যেতে পারে। আবহাওয়া বিভাগ জানায়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
সিলেটে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির আভাস
ভারতের উজানে অতিবৃষ্টির ঢলে সিলেট অঞ্চলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কোন কোনটি বিপদসীমায় প্রবাহের পূর্বাভাস দিয়েছে পাউবো। গতকাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দেয়া পূর্বাভাস বুলেটিনে জানা গেছে, বাংলাদেশ ও বৈশি^ক আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং এর সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব ভারতে উজানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট জেলার ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন সুরমা নদীর কানাইঘাট, লুভাছড়া নদীর লুভাছড়া, সারিগোয়াইন নদীর সারিঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট জেলায় সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়ে স্বল্প মেয়াদে বিপদসীমার উপরে অবস্থান করতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট অঞ্চলের উজানে ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ১২০ মিলিমিটার এবং আসামের সিলচরে ২৯ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে।

আবহাওয়া
তীব্র বজ্রপাতসহ ভারী বৃষ্টির আভাস

দেশেল তিন বিভাগের সকল জেলা ও বাকি বিভাগের বেশ কয়েকটি জেলায় তীব্র বজ্রপাতসহ মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আজ রবিবার (১ জুন) বিকেলে ফেসবুকে এক পোস্টে বেসরকারি আবহাওয়াবিষয়ক ওয়েবসাইট আবহাওয়া ডটকমের প্রধান আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগ, বরিশাল, ঢাকা বিভাগের সকল জেলা, খুলনা বিভাগের দক্ষিণ দিকের সকল জেলা, রাজশাহী বিভাগের বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, জয়পুরহাট; ময়মনিসংহ বিভাগের জামালপুর, রংপুর বিভাগের পঞ্চগড়, নীলফামারী, লালমনিরহাট এবং সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার জেলায় রোববার রাত ১০ টার মধ্যে তীব্র বজ্রপাতসহ মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবল আশঙ্কা করা যাচ্ছে।
এদিকে, সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো বা হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
এছাড়া এ সময়ে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
আবহাওয়া
ঈদের দিন আবহাওয়া কেমন থাকবে

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গত কয়েকদিন ধরে টানা বা থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। আট বিভাগেই এই মেঘলা আবহাওয়া বিরাজ করছে, যখন দেশজুড়ে ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদের প্রস্তুতি চলছে। যারা ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফিরবেন বা কোরবানির পশু কিনবেন, তাদের মনে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে আবহাওয়া কেমন থাকবে।
বৃষ্টির কারণ ও বর্তমান পরিস্থিতি: আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৭ মে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবেই সারা দেশে বৃষ্টি হচ্ছে। লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত না হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করেছে।
ঈদের আগের ও পরের কয়েক দিনের পূর্বাভাস: আজ শনিবার দুপুরে আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, বাংলাদেশে আগামী কয়েকদিনে ঘূর্ণিঝড় বা লঘুচাপ সৃষ্টির কোনো আভাস নেই। তবে, এখন যেহেতু দেশব্যাপী মৌসুমি বায়ু বইছে, তাই আগামী কয়েকদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থেমে থেমে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
- আজ (শনিবার, ৩১ মে): সকাল থেকে ঢাকায় থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে।
- আগামীকাল (রবিবার, ১ জুন): ঢাকাসহ সিলেট, বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রামের কিছু কিছু জায়গায় এক-দুই পশলা বৃষ্টি হতে পারে।
- ২ জুন: বৃষ্টিপাত কিছুটা কমে আসবে, তবে পুরোপুরি থামবে না।
- পুরো সপ্তাহ: সারা দেশেই হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার বৃষ্টিপাত হবে। তবে উত্তরাঞ্চলের বিভাগ রাজশাহী ও রংপুরে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা তুলনামূলক কম থাকবে।
ঈদের দিন : আবুল কালাম মল্লিক জানান, ঈদের দিন সারা দেশেই বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। তবে, ঈদের তিন দিন আগে আরও নির্দিষ্ট করে পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হবে।
গরমের অনুভূতি: এই পুরো সময়টা জুড়েই ভ্যাপসা গরম থাকবে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য থাকবে বলে গরম অনুভূত হবে। মূলত, বাতাসে যখন জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি বেশি থাকে, তখন গরম অনুভূত হয়।
তিনি আরও জানান, ২ জুনের পর গরম কিছুটা বাড়বে এবং ৭ জুনের পর তাপমাত্রা ৩২ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মাঝে ওঠানামা করবে।
আজ সকাল ৯টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস: আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো বা হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায়, ঈদের দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও এর তীব্রতা বা স্থায়িত্ব সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে ঈদের কয়েক দিন আগে আবহাওয়ার সর্বশেষ পূর্বাভাস জেনে নেওয়া ভালো।
আবহাওয়া
নিম্নচাপটির অবস্থান এখন স্থলভাগে, ৫ বিভাগে ভারী বৃষ্টির আভাস

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি এখন স্থলভাগে উঠে এসেছে। পরিণত হয়েছে স্থল গভীর নিম্নচাপে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতেই এটি স্থলভাগে উঠে আসে। আর ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকে। যদিও এর প্রভাব আজ শুক্রবার সারা দিন ধরেই থাকবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদেরা।
তাদের দেওয়া তথ্য মতে, এর প্রভাবে আজ দেশের পাঁচ বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। আগামীকাল শনিবারও এর প্রভাবে বৃষ্টি হতে পারে বেশ কিছু এলাকায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া সর্বশেষ সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, গভীর নিম্নচাপটি গতকাল রাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ ও বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করে সাতক্ষীরা এবং এর কাছাকাছি অঞ্চলে ছিল। পরবর্তীতে এটি স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি ধীরে ধীরে আরও দুর্বল হয়ে উত্তর থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে যেতে পারে। এর প্রভাবে আজ ময়মনসিংহ ,খুলনা , বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
ভারী বৃষ্টি বলতে বুঝায় ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টিকে বোঝায় আর অতি ভারী বৃষ্টি হয় ৮৮ মিলিমিটারের ওপর।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক আজ সকাল সাতটায় গণমাধ্যম কে বলেন, গভীর নিম্নচাপটি এখনো স্থল গভীর নিম্নচাপ রূপে আছে। এটি ধীরে ধীরে উত্তর থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে এগোচ্ছে। এর প্রভাবে আজ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বৃষ্টি হবে।
আজ সকাল থেকেই রাজধানীর আকাশ মেঘলা এবং বৃষ্টি হচ্ছে ঝিরঝির করে। রাজধানীতেও আজ সারা দিন এভাবে বৃষ্টি হতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে।
এটিএম নাজমুল হক বলেন, আগামীকাল শনিবার রংপুর , রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অনেক জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। গভীর নিম্নচাপের পরবর্তী সময়ে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এই বৃষ্টি হতে পারে।
গত মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। পরদিন বুধবার এটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে প্রথমে নিম্নচাপ পরে এটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। এর প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হয়। গতকাল সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয় নোয়াখালীর মাইজদী কোর্টে ১৬৮ মিলিমিটার। রাজধানীতে ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়।
নিম্নচাপের প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টির মধ্যে গতকাল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় অতি বর্ষণের কারণে।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ভারী বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। উঁচু জোয়ারে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ভোলা-পটুয়াখালীসহ কয়েকটি এলাকায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। টানা বৃষ্টিতে অনেক এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন উপকূলের বাসিন্দারা।
কাফি
আবহাওয়া
১৬ জেলায় জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা

অমাবস্যা ও গভীর নিম্নচাপের কারণে দেশের ১৬ জেলায় জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিকেল বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৩ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ২ থেকে ৪ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
এ অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না-দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে এবং ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে।
আবহাওয়া
ঢাকার বাতাস আজ কানাডা-ফিনল্যান্ডের চেয়েও স্বাস্থ্যকর

গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টির পর অবশেষে ঢাকার বাতাসের মান ‘ভালো’ পর্যায়ে পৌঁছেছে। আজ বৃহস্পতিবার (২৯ মে) ভোরের বৃষ্টিতে ঢাকার বায়ুমান এতটাই উন্নত হয়েছে যে, তা বিশ্বের অনেক উন্নত শহরের চেয়েও স্বাস্থ্যকর।
সকাল ১০টায় আইকিউ এয়ারের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বাতাসের একিউআই (Air Quality Index) স্কোর ছিল ৩৯। কণা দূষণের একিউআই মান ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে তা ‘ভালো’ হিসেবে বিবেচিত হয়। এর ফলে, একিউআই স্কোর ৩৯ নিয়ে ঢাকা আজ দূষিত বাতাসের শহরগুলোর তালিকার ৮০ নম্বরে অবস্থান করছে।
আজ সকালে পর্তুগালের লিসবন (৫০), জাপানের টোকিও (৫০), কানাডার মন্ট্রিয়াল (৪৯), ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কি (৪৭), ইতালির রোম (৪৭), যুক্তরাষ্ট্রের লেক সল্ট সিটি (৪৭) ও লস অ্যাঞ্জেলেস (৪৩) এবং নেদারল্যান্ডসের রটারডামের (৪৬) মতো শহরগুলোকে পেছনে ফেলেছে বিশ্বের একসময়ের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর অন্যতম ঢাকা। এই শহরগুলোর বেশিরভাগের সুনাম থাকলেও ঢাকাবাসী আজ তাদের বাসিন্দাদের চেয়ে স্বাস্থ্যকর বাতাস গ্রহণ করছে।
বর্তমানে মাত্র ৩ একিউআই স্কোর নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বিশুদ্ধ বায়ুর শহর হলো রাশিয়ার ক্রাসনোইয়ার্স্ক। দুদিন আগে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া অস্ট্রেলিয়ার সিডনি এখন ১৩ বায়ুমান নিয়ে এই তালিকার তিন নম্বরে আছে।
অপরদিকে, ২০২ একিউআই স্কোর নিয়ে কুয়েতের রাজধানী কুয়েত সিটি আজ বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর। এর পরেই রয়েছে যথাক্রমে মিসরের কায়রো (১৬৪), পাকিস্তানের লাহোর (১৫৯) ও ভারতের দিল্লি (১৫৪)।
একিউআই সূচকের মানদণ্ড:
- ০-৫০: ‘ভালো’
- ৫১-১০০: ‘মাঝারি’
- ১০১-১৫০: ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ (এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়)
- ১৫১-২০০: ‘অস্বাস্থ্যকর’
- ২০১-৩০০: ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’
- ৩০১-এর বেশি: ‘বিপজ্জনক’ (জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি)
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে: বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। সাধারণত শীতকালে এখানকার বায়ুমান সবচেয়ে খারাপ থাকে এবং বর্ষাকালে তা তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়, যার প্রধান কারণ স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।