ক্যাটাগরি: কর্পোরেট সংবাদ

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ৩০ বছরের পথচলা ও সাফল্য উদযাপন

বাংলাদেশে ৩০ বছরের গৌরবময় যাত্রা উদযাপন করেছে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। এ উদযাপনের জন্য বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও গ্র্যান্ড বলরুমে দিনব্যাপী এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

গৌরবের এই ৩০ বছরের পথচলায় প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বিগত তিন দশক ধরে একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ও মানবিক সংস্থা হিসেবে সারা বাংলাদেশে সক্রিয়ভাবে দেশের ৪০টি জেলায় কাজ করছে। ১৯৯৪ সালে, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল সেবা প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশে তার উন্নয়ন প্রচেষ্টা শুরু করে এবং সময়ের সাথে সাথে বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের; বিশেষত কন্যাশিশু ও যুব নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায়, তাদের শিক্ষায়, সুরক্ষায়, তাদের দক্ষতা ও নেতৃত্ব বিকাশে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করে চলেছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, প্রতিষ্ঠানের কাজ শুধু রুটিন কাজ করে যাওয়া নয়, প্রতিষ্ঠানের কাজ সমাজ পরিবর্তনের অনুঘটক হিসেবে কাজ করা। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সেই কাজটাই করে চলেছে।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম সিমিন হোসেন (রিমি); ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশনের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী; মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ; প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের এশিয়া রিজিওনাল অফিস, রিজিওনাল ডিরেক্টর ভাগ্যশ্রী ডেঙ্গলে, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের ডিরেক্টর অব সাব রিজিওন এশিয়া প্যাসিফিক শ্যারন কেইন এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করেন।

সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারবৃন্দের বিশিষ্ট প্রতিনিধিরা, উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার ও কমিউনিটি-ভিত্তিক সেবা সংস্থার প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস বলেন, এখনো প্রতি ৩ জন নারীর একজন তার পরিবার থেকে শুরু করে নানা পর্যায়ে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। জাতিসংঘের জরিপ অনুযায়ী আমরা জানি এই বৈষম্য দূর করতে ১৩১ বছর লাগবে। বাংলাদেশের সকল স্তরে সমতা ও সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাবে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। বিগত ৩০ বছরের অর্জিত অভিজ্ঞতায় আমরা দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছি এবং ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের বিভিন্ন সফলতা ও অর্জনের গল্প তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ৩০ বছরের একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষ্য, রূপান্তরের গল্প: প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের অবদান। এ আয়োজনে আরও ছিল প্রকাশনা উন্মোচন, প্রাক্তন প্ল্যান কর্মীদের স্মৃতিচারণ।

উদযাপনের অংশ হিসাবে, বিশিষ্ট প্যানেলিস্টদের সাথে একটি প্যানেল আলোচনার আয়োজন করা হয়েছিল, যা উদযাপনকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা জলবায়ু পরিবর্তন, মেয়ে ও যুব নারীদের ক্ষমতায়ন, শিশু অধিকার, স্বাস্থ্য, সুরক্ষা এবং শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করেন।

বিগত ৩০ বছরে, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ নিবেদিতপ্রাণ প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশব্যাপী ও কমিউনিটির সাথে শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করেছে। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বিশ্বব্যাপী কিশোরী এবং যুব নারীদের নেতৃত্বের ভূমিকা গ্রহণ করতে, চলমান স্টেরিওটাইপকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য একটি পরিবেশ তৈরি করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিনিয়ত এ দেশে বাল্যবিবাহ রোধ, শিক্ষা, জেন্ডার সমতা, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য, সুরক্ষা ও কিশোরী ও নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য সাফল্যের সাথে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছে, যা এই প্রতিষ্ঠানটির কাজের মূল ক্ষেত্র। বিশেষত, গত ১০ বছরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সরকার, দূতাবাস, দাতা ও অংশীদার সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবক, সমর্থক, সহযোগী যুব ও যুব গোষ্ঠীর সহায়তায় কন্যাশিশুর অধিকার ও চাহিদা পূরণে নিজেদেরকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পেরেছে।

রেজিলিয়েন্স এবং মানবিক উৎকর্ষতা গড়ে তোলার লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্ল্যান বাংলাদেশ, দূর্যোগ ও মানবিক সংকটের সময় নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী ব্যবস্থাপনায় প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ যে তৎপর কার্যক্রম চালু রেখেছে তা ক্ষতিগ্রস্তদের চাহিদা পূরণ করে সংকটের জন্য একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ প্রদর্শন করেছে। প্রতিষ্ঠানটি সরকারের সহায়তায় অন্তর্ভুক্তিমূলক মানসম্পন্ন শিক্ষা, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার এবং যুব কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তার জন্য দক্ষতা এবং সুযোগের মাধ্যমে সারা দেশে মানবিক কর্মসূচিতে মানসম্পন্ন পরিষেবা প্রদান করছে প্রতিনিয়ত। সরকার, দূতাবাস, দাতা ও অংশীদার সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবক, সমর্থক, সহযোগী যুব ও যুব গোষ্ঠী প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশকে নিরলসভাবে তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, যার ফলে সম্ভব হয়েছে এই সাফল্য।

৩০ বছর ধরে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এ দেশের সরকার, স্থানীয় সহযোগী সংস্থা, স্থানীয় প্রশাসন, পরিবার এবং কমিউনিটির সাথে মেলবন্ধনের সাথে কাজ করে আসছে। প্ল্যান বিশ্বাস করে যে, এই সমন্বিত প্রচেষ্টাই বাল্যবিবাহ সমূলে নির্মূলের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে যা ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ বন্ধ করার জন্য দেশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিশ্চিতকরণে সহায়তা করবে।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার