ধর্ম ও জীবন
তীব্র গরমে যেসব আমল করবেন

বাংলাদেশে এখন গ্রীষ্মকাল। তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। গরমের মধ্যে ইবাদত বন্দেগি সহজ করেছে ইসলাম। হযরত আবু জার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এক সফরে আমরা আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে ছিলাম।
একসময় মুয়াজ্জিন জোহরের আজান দিতে চেয়েছিল। তখন নবিজি সাল্লাল্লাগু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, গরম কমতে দাও। কিছুক্ষণ পর আবার মুয়াজ্জিন আজান দিতে চাইলে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুনরায় বলেন, গরম কমতে দাও। এভাবে তিনি (নামাজ আদায়ে) এত বিলম্ব করলেন যে আমরা টিলাগুলোর ছায়া দেখতে পেলাম। এরপর নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ হতে। কাজেই গরম প্রচণ্ড হলে উত্তাপ কমার পর নামাজ আদায় করো। ’ (বুখারি ৫৩৯)
গরমে অল্প আমলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। একজন মুমিন সে আমল করে সহজেই আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে। অল্প আমলে বেশি সওয়াব পাওয়ার বেশ কিছু আমল রয়েছে। তাহলো-
নফল রোজা
গরমের রোজা শীতের থেকে বেশি কষ্টকর। সে কষ্ট উপেক্ষা করে যদি নফল রোজা রাখা যায়, তাহলে আল্লাহ তাআলা বেশি নেকি দেবেন। সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈন বেশি সওয়াবের আশায় গরমকালে রোজা রাখতেন।
পিপাসার্তকে পানি পান করানো
পিপাসার্তকে পানি পান করানো একটি উত্তম কাজ। আর যদি প্রচন্ড গরমে কাউকে ঠাণ্ডা পানি পান করানো হয়, তাহলে তো কাজটি আরো উত্তম হবে। এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করলেন, ‘কোন দান উত্তম? তিনি বললেন, ‘পানি পান করানো। ’ (নাসাই ৫৪৫৬)
ইমাম কুরতুবি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘তৃষ্ণার্তের তৃষ্ণা নিবারণ সর্বোত্তম মহৎ কাজের একটি। ’
হাদিসের অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সদকা বা দান জাহান্নামের আগুন নির্বাপণ করে। আর পানি পান করানো উত্তম সাদকা। ’ (আবু দাউদ ৭৪৩৫)
নফল নামাজ
অতিরিক্ত গরম হলো জাহান্নামের নিঃশ্বাস, তাই জাহান্নামের ভয়ে বেশি করে এবং লম্বা লম্বা সুরা দিয়ে নফল নামাজ আদায় করা উত্তম। হাদিসে পাকে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন গরম বেশি পড়বে, তখন বেশি নামাজ আদায় করো। কারণ অতিরিক্ত গরম হলো জাহান্নামের নিশ্বাস। ’ (মেশকাত ৫৯১)
গরম থেকে শিক্ষা
গরমের তীব্রতা থেকে মুমিনের জন্য রয়েছে শিক্ষা। কেননা জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ পৃথিবীর আগুনের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি। তাই এ গরম থেকে জাহান্নমের তীব্রতা অনুমান করে গুনাহ থেকে মুক্ত থাকা। হাদিসে পাকে এসেছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘জাহান্নাম তার প্রতিপালকের কাছে এ বলে নালিশ করেছিল, হে আমার প্রতিপালক! (দহনের প্রচণ্ডতায়) আমার এক অংশ আরেক অংশকে গ্রাস করে ফেলছে। ফলে আল্লাহ তাকে দুইটি শ্বাস ফেলার অনুমতি দেন। একটি শীতকালে অপরটি গ্রীষ্মকালে। আর তাই তোমরা গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড উত্তাপ এবং শীতকালে তীব্র ঠাণ্ডা অনুভব করো। ’ (বুখারি ৫৪৫৫)
গরিবদের ফল বিতরণ
আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার আরও মাধ্যম হচ্ছে, গরিব-দুখীর মাঝে সুমিষ্ট ফল বিতরণ করা। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করা। ঘামে ভেজা শরীরে জনসমাগমে গমন না করা। গরমের সময় প্রবাহিত ঘামের গন্ধ যেন অন্যের কষ্টের কারণ না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখা। গ্রীষ্মকালকে গালমন্দ না করা বিষয়টিও খেয়াল রাখার নির্দেশ দেয় ইসলাম।

ধর্ম ও জীবন
জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের বিশেষ আমল ও ফজিলত

ইসলামের ইতিহাসে জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা কোরআনে এই দিনগুলোর নামে শপথ করেছেন, যা এদের বিশেষ মর্যাদা নির্দেশ করে। ইরশাদ হয়েছে, “শপথ ফজর কালের। এবং ১০ রাতের।” (সুরা: ফজর, আয়াত: ১-২)। মুফাসসিরদের মতে, এখানে ‘ফজর’ বলতে জিলহজের ১০ তারিখের ফজর এবং ‘১০ রাত’ বলতে জিলহজের প্রথম ১০ রাত বোঝানো হয়েছে।
১০ দিনের শ্রেষ্ঠত্বের কারণ
এই দিনগুলোতে হজ ও কোরবানি, আরাফাহ দিবসের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতগুলো একত্রিত হয়, যা এদের বিশেষ ফজিলত দান করে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এই ১০ দিনের সৎকাজ আল্লাহ তাআলার নিকট অন্য যেকোনো দিনের সৎকাজ অপেক্ষা বেশি প্রিয়। এমনকি আল্লাহ তাআলার পথে জিহাদ করাও এর চেয়ে বেশি প্রিয় নয়, তবে যদি কেউ জানমাল নিয়ে জিহাদে বের হয়ে আর ফিরে না আসে (শহীদ হয়), তার মর্যাদা ভিন্ন। (তিরমিজি, হাদিস: ৭৫৭)।
আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, জিলহজের এই ১০ দিনের বৈশিষ্ট্যের কারণ হলো, এ সময় ইসলামের মৌলিক কিছু ইবাদতের (নামাজ, রোজা, সদকা ও হজ) সম্মিলন ঘটে, যা বছরের অন্য কোনো সময়ে দেখা যায় না। (ফাতহুল বারি, আসকালানি: ২/৪৬০)।
১০ দিনের বিশেষ কিছু আমল
সামর্থ্যবানদের জন্য হজ ও কোরবানি ছাড়াও এই মাসে আরও কিছু বিশেষ আমল রয়েছে, যার মাধ্যমে মুমিনরা নিজেদের জীবনকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারেন:
-
বেশি পরিমাণে তাকবির বলা: এই ১০ দিনে বেশি পরিমাণে আল্লাহর জিকিরে নিজেকে ব্যস্ত রাখা উচিত, বিশেষ করে তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলা। ইবনে ওমর ও আবু হুরায়রা (রা.)-এর আমল ছিল, এই ১০ দিন তারা তাকবির বলতে বলতে বাজারের দিকে যেতেন এবং তাদের তাকবিরের সঙ্গে অন্যরাও তাকবির বলত। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৬৯)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এই সময়ে অধিক পরিমাণে তাকবির, তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) এবং তাহমিদ (আলহামদু লিল্লাহ) পাঠ করতে। (শুআবুল ঈমান, হাদিস: ৩৭৫৮)।
-
রোজা রাখা: জিলহজের প্রথম ৯ দিন রোজা রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমল। নবী (সা.)-এর স্ত্রী থেকে বর্ণিত যে, রাসুল (সা.) জিলহজ মাসের ৯ দিন, আশুরার দিন এবং প্রতি মাসের তিন দিন রোজা পালন করতেন। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ২৪১৭)। বিশেষ করে আরাফাহর দিনের রোজার (৯ই জিলহজ) বিশেষ ফজিলত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আরাফাতের দিনের রোজা পূর্ববর্তী এক বছর এবং পরবর্তী এক বছরের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়। (জামে তিরমিজি, হাদিস: ৭৪৯)।
-
নখ ও চুল না কাটা: এই ১০ দিনের আরেকটি আমল হচ্ছে জিলহজের চাঁদ দেখার পর থেকে কোরবানি করার আগ পর্যন্ত নখ, চুল এবং শরীরের অবাঞ্ছিত লোম ইত্যাদি কর্তন না করা। কোরবানি দেওয়ার পর এগুলো পরিষ্কার করবে। এই আমল সবার জন্য প্রযোজ্য, চাই সে কোরবানি করুক বা না করুক। (তাহাবি শরিফ, হাদিস: ৬১৭২)।
এই বিশেষ দিনগুলোতে বেশি বেশি ইবাদত ও নেক আমল করে আমরা আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভ করতে পারি।
ধর্ম ও জীবন
যেসব পশু দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ

১০ জিলহজ সুবহে সাদিক থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত, যেসব প্রাপ্তবয়স্ক, বোধসম্পন্ন ও স্বাধীন পুরুষ ও নারী ঋণমুক্ত এবং নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকেন, তাদের ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব।
গৃহপালিত উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা এগুলোর মধ্যে নর-মাদী উভয়টি দ্বারাই কোরবানি করা জায়েজ।
উক্ত পশু ব্যতীত অন্য কোনো গৃহপালিত প্রাণী যেমন- হাঁস, মুরগি এবং বন্যপ্রাণী ও বন্য গরু দ্বারা কোরবানি জায়েজ হবে না।
উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। গরু, মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। ছাগল ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। ৬ মাস ঊর্ধ্ব বয়সের ভেড়া ও দুম্বা যদি এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছর বয়সের মতো মনে হয়, তাহলে তা দ্বারাও কোরবানি করা জায়েজ হবে। ছাগলের বয়স এক বছরের কম হলে তা দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ হবে না। (ফাতাওয়ায়ে কাযীখান: ৩/৩৪৮, ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী: ৫/২৯৭)
গর্ভবতী পশু কোরবানি জায়েজ। তবে প্রসবের সময় আসন্ন, এমন পশুর কোরবানি করা মাকরূহ। আর গর্ভবতী পশু কোরবানি করার পূর্বে যদি বাচ্চা প্রসব করে, তাহলে বাচ্চা জীবিত সদকা করবে, কিংবা এর সঙ্গে বাচ্চাকেও কোরবানির দিন জবাই করে বাচ্চার গোস্ত সদকা করা ওয়াজিব। তবে জীবিত সদকা করা উত্তম।
আর গর্ভবতী পশু কোরবানির নিয়তে জবাইয়ের পর বাচ্চা জীবিত বের হলে কোরবানির সময়সীমার মাঝে সেটাও জবাই করে মা ও বাচ্চা উভয়টির গোশত খেতে পারবে। কিন্তু সময়সীমার মাঝে বাচ্চা জবাই না করলে পরবর্তীতে বাচ্চাটিকে জীবিত সদকা করে দেওয়া ওয়াজিব। (ফাতাওয়ায়ে কাযীখান : ৩/৩৬৭-৩৫৪-৩৫০)
উল্লেখ্য, বলদ গরু ও বন্ধ্যা পশুর কোরবানি জায়েজ। এছাড়া খাসিকৃত ছাগল দ্বারা কোরবানি করা উত্তম। পাগল পশুর কোরবানি জায়েয। তবে যদি এমন পাগল হয় যে, কোনো খাবার খেতে চায় না, তাহলে তা দ্বারাকোরবানি জায়েজ নেই। জবাইয়ের জন্য পশু শোয়ানোর সময় পা ভেঙে গেলে কিংবা চোখে আঘাত লেগে চোখ নষ্ট হয়ে গেলেও কোরবানি করা জায়েজ। (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী: ৫/২৯৭-২৯৮-২৯৯, বাদাইউস সানায়ে: ৬/৩১২-৩১৩)
ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ মুসলিম উম্মাহর জন্য এক বিশেষ খুশির উৎসব। একই সঙ্গে জিলহজ মাস আরবি হিজরি সনের মাসগুলোর মধ্যে অন্যতম। এদিন এবং মাসটির সঙ্গে ইসলামের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিধান জড়িত। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান হলো মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করা।
কোরবানির বিষয়টি কেবল সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং এটি একটি মহান এক ইবাদত। এতে রয়েছে তাকওয়া ও ইখলাসের একটি মহান পরীক্ষা।
পবিত্র কোনআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তার কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া। এমনিভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের বশ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা কর এ কারণে যে, তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন’। (সূরা: হজ, আয়াত: ৩৭)।
জাতীয়
সৌদি পৌঁছেছেন ৪০ হাজার ৬০৮ হজযাত্রী

হজ পালনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে এখন পর্যন্ত ৪০ হাজার ৬০৮ হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি মোট ১০১টি ফ্লাইটে তারা সৌদিতে পৌঁছান। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪ হাজার ৫৮৩ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩৬ হাজার ০২৫ হজযাত্রী রয়েছেন। এখন পর্যন্ত ৮৬ হাজার ৪৪৭টি ভিসা ইস্যু করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ মে) হজ সম্পর্কিত সবশেষ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এয়ারলাইন্স, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ হজ অফিস ঢাকা এবং সৌদি আরব সূত্রে এ তথ্য জানিয়েছে হেল্প ডেস্ক।
হেল্প ডেস্কের তথ্য মতে, ১০১টি ফ্লাইটের মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৫১টি, সৌদি এয়ারলাইন্সের ৩৪টি এবং ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্স ১৬টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে।
চলতি বছর হজ করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজন পুরুষ ও একজন নারী। এরা হলেন— জামালপুর বকশীগঞ্জের হাফেজ উদ্দিন (৭৩), রাজবাড়ীর খলিলুর রহমান, কিশোরগঞ্জের মো. ফরিদুজ্জামান, পঞ্চগড়ের আল হামিদা বানু, ঢাকার মোহাম্মদপুরের মো. শাহজাহান কবীর ও নীলফামারির ফয়েজ উদ্দীন (৭২)।
গত ২৯ এপ্রিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রথম ডেডিকেটেড ফ্লাইট ৩৯৮ জন হজযাত্রী নিয়ে সৌদির উদ্দেশে যাত্রা করে। এর মধ্য দিয়েই চলতি বছরের হজের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। শেষ হবে ৩১ মে।
চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনা হজ করতে যাবেন ৫ হাজার ২০০ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন ৮১ হাজার ৯০০ জন।
সৌদি আরবে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৫ জুন হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। হজ কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী হজ এজেন্সির সংখ্যা ৭০টি। হজ ফ্লাইট শুরু হয়েছে ২৯ এপ্রিল। শেষ হজ ফ্লাইট ৩১ মে। হজযাত্রীদের প্রথম ফিরতি ফ্লাইট ১০ জুন, আর শেষ ফিরতি ফ্লাইট ১০ জুলাই।
কাফি
জাতীয়
সৌদি পৌঁছেছেন ৩৮ হাজার ৫৭০ হজযাত্রী

হজ পালনের উদ্দেশ্যে এখন পর্যন্ত সৌদি আরবে পৌঁছেছেন ৩৮ হাজার ৫৭০ জন হজযাত্রী। এছাড়া চলতি বছর হজে গিয়ে সৌদি আরবে আরও একজন বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট ছয়জন মৃত্যুবরণ করেছেন।
সর্বশেষ শুক্রবার (১০ মে) মো. ফয়েজ উদ্দিন (৭২) মদিনায় মারা গেছেন। তার বাড়ি নীলফামারী। তিনি সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে গিয়েছিলেন।
সোমবার (১২ মে) হজ পোর্টালে পবিত্র হজ-২০২৫ প্রতিদিনের বুলেটিন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। অন্যদিকে রোববার সকাল পর্যন্ত ৩৮ হাজার ৫৭০ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন।
এবার বাংলাদেশ থেকে মোট ৮৭ হাজার ১০০ জন হজযাত্রী হজ পালনের জন্য সৌদি আরব যাবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫ হাজার ২০০ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮১ হাজার ৯০০ জন হজ পালন করবেন।
মোট ৯৬টি হজ ফ্লাইটে ৩৮ হাজার ৫৭০ জন হজযাত্রী সৌদি আরব গেছেন। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পরিচালিত ফ্লাইট সংখ্যা ৪৭টি, সৌদি এয়ারলাইন্স পরিচালিত ফ্লাইট সংখ্যা ৩৩টি, ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্স পরিচালিত ফ্লাইট সংখ্যা ১৬টি।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৫ জুন হজ অনুষ্ঠিত হবে। হজযাত্রীদের সৌদি আরবে যাওয়ার ফ্লাইট শুরু হয় ২৯ এপ্রিল। সৌদি আরবে যাওয়ার শেষ ফ্লাইট ৩১ মে।
হজ শেষে ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ১০ জুন। হজযাত্রীদের দেশে ফেরার ফ্লাইট শেষ হবে ১০ জুলাই।
ধর্ম ও জীবন
তাওয়াফের সময় যে দোয়া পড়বেন

হজ ও ওমরার সময় পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফ করা হয়। হজ ছাড়াও নফল তাওয়াফের নিয়ম রয়েছে। পবিত্র কোরআনে একাধিক জায়গায় কাবাঘর তাওয়াফের কথা বলা হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে, ‘আর আমার ঘরকে পবিত্র রাখবে তাওয়াফকারী, নামাজ কায়েমকারী ও রুকু-সিজদাকারীদের জন্য।’ (সূরা হজ, আয়াত : ২৬)
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি ইবরাহিম ও ইসমাঈলকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম যে তোমারা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র করো।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১২৫)
তাওয়াফের ফজিলত সম্পর্কে ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, বাইতুল্লাহর চারদিকে তাওয়াফ করা নামাজ আদায়ের অনুরূপ। তবে তোমরা এতে (তাওয়াফকালে) কথা বলতে পারো। সুতরাং তাওয়াফকালে যে ব্যক্তি কথা বলে সে যেন ভালো কথা বলে। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৬০)
তাওয়াফের সময় যার যেটা মনে চায় একান্তভাবে আল্লাহ তায়ালার সামনে পেশ করতে পারে। তবে হজরত আতা রহ. বলেন, আবু হুরায়রা রা. আমার নিকট হাদিস বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সা.–কে বলতে শুনেছেন,…যে ব্যক্তি সাতবার বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করে এবং কোন কথা না বলে নিম্নোক্ত দোয়া পড়ে
سُبْحَانَ اللّٰهِ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰه
উচ্চারণ : সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লি-ল্লাহি ওয়ালা ইলাহা- ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ
তার দশটি গুনাহ মুছে যাবে। তার জন্য দশটি নেকী লেখা হবে এবং তার মর্যাদা দশগুণ বর্ধিত করা হবে। আর যে ব্যক্তি তাওয়াফ করে এবং এ অবস্থায় কথা বলে, (উপরোক্ত জিকির করে বা অন্য কোনো মাসনুন জিকির করে।) সে তার দুই পা রহমতের মধ্যে ডুবিয়ে রাখে; যেমন কারো পা পানিতে ডুবিয়ে রাখে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৯৫৭)
হাদিসে উত্তম কথা ছাড়া কোনো কথা না বলতে নির্দেশ করা হয়েছে। তাছাড়া যেহেতু বিধানগতভাবে তাওয়াফও আংশিক নামাজের অন্তর্ভুক্ত তাই তাতে উত্তম কথা (জিকির, তিলাওয়াত এবং সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ ছাড়া) অন্য কোনো কাজ ও কথা বলা উচিত নয়।