ক্যাটাগরি: পুঁজিবাজার

বিআইপিডির আমানতের কোটি টাকা ফেরত দিচ্ছে না ফারইস্ট ফাইন্যান্স

দেশের আর্থিক খাতের শিক্ষক-ছাত্রদের প্রশিক্ষণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্টের (বিআইপিডি) ৬টি অ্যাকাউন্টে আমানত রাখা এক কোটি ৮ লাখ টাকা ফেরত দিচ্ছে না পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ‘জেড’ ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠান ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। শনিবার (২০ এপ্রিল) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এই অভিযোগ তুলে ধরেছে বিআইপিডি।

এ সময় বিআইপিডির চেয়ারম্যান মো. এহসান খসরু, পরিচালক কাজী মো. মোরতুজা আলী, জেনারেল সেক্রেটারি এ কে এম এহসানুল হকসহ প্রতিষ্ঠানটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ফারইস্ট ফাইন্যান্সের অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরে বিআইপিডির চেয়ারম্যান লিখিত বক্তব্যে বলেন, বিআইপিডি ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে সর্বমোট ১ কোটি ৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকার ছয়টি ফিক্সড ডিপোজিট রিসিপ্ট একাউন্ট বা এফডিআর খুলেছিল। সবকটি এফডিআরের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড বিআইপিডির কোনো অর্থ পরিশোধ করেনি। এমনকি আমানতের লভ্যাংশও প্রদান করছে না।

তিনি জানান, কোম্পানিটিকে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত ৫৬টি চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এমন কি ২০২০ সালের পরে কোনো পত্রের জবাবও দেয়নি।

এহসান খসরু বলেন, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের বিষয়টি নিয়ে বিআইপিডি ২০১৯ সালের ১১ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর প্রথম চিঠি দিয়েছিলো। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল চিঠি পাঠানো হয়। এ যাবত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর এবং ফিন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস বিভাগ বরাবর ৩৬টি পত্র ও ইমেইল পাঠানো হলেও আজ পর্যন্ত কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। জবাব না দেওয়ার কোনো কারণ আছে কি না আমরা তাও জানতে পারিনি।

তিনি বলেন, ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর এবং ২০২৩ সালের ২ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড কর্তৃক বিআইপিডির অর্থ পরিশোধ না করার বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে পত্র দেওয়া হয়। এই পত্র দেওয়ার পরে ৮ মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বা আমাদেরকে অবহিত করেনি।

তিনি আরও বলেন, চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি সরাসরি সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিএফআইএম’র ডিরেক্টর মো. আমির উদ্দিন উল্লেখ করেন যে, কোম্পানি ম্যাটার নং-২৪৩/২০২০ এর প্রেক্ষিতে মহামান্য আদালতের ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারির আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে রক্ষিত বিআইপিডির আমানত অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

বিআইপিডির অভিযোগ, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এবং পিএফআই প্রোপারটিজ লিমিটেডের মধ্যে চলমান মামলায় এমন আদেশ দেয় মহামান্য আদালত। এর সাথে বিআইপিডি কোনোভাবে জড়িত নয় এবং আদালতের আদেশে বিআইপিডির হিসাব স্থগিত করার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পরিষ্কার করে বলা হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

এদিকে আমানতের অর্থ না পেয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) চিঠি দেয় বিআইপিডি। ২০২২ সালের ২৩ মার্চ বিএসইসি এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করে। যেখানে ফারইস্ট ফাইন্যান্সকে অভিযোগকৃত বিষয়টি দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু বিএসইসির আদেশ অমান্য করে ফারইস্ট ফাইন্যান্স এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন সমাধানে পৌঁছায়নি।

এদিকে ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ৯০ শতাংশ ঋণ খেলাপি থাকা স্বত্ত্বেও কেন সেখানে আমানত রাখা হয় সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিআইপিডির পরিচালক কাজী মো. মোরতুজা আলী বলেন, ফারইস্ট ফাইন্যান্সে ২০১৬ সালে আমানত রাখা শুরু করে বিআইপিডি। তখন কোম্পানিটিতে সুদের হার বেশি ছিলো, আবার বিআইপিডির কিছু পরিচালকদের সেখানে স্টেক ছিলো। ফলে সবার সম্মতিক্রমে সেখানে ছয় হিসাবের মাধ্যমে কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হয়।

বিআইপিডির পরিচালকদের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগের প্রশ্নে বিআইপিডির পরিচালক বলেন, কোন ব্যক্তির নাম বা কারো সংশ্লিষ্টতার কারণে বিআইপিডির আমানত হিসাব স্থগিত করা হয়নি। ফারইস্ট ফাইন্যান্স বা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এমন কোন নির্দেশনাও আসেনি। ব্যক্তিগত হিসাব স্থগিত করা হলেও সেখানে বিআইপিডির কথা উল্লেখ ছিলো না। তবে আইনি জটিলতা এবং ভয়ভীতির কারণে এসব ব্যক্তির নাম সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেনি বিআইপিডি।

এদিকে সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ার পরেও বেসরকারি কোম্পানিতে আমানত রাখার বিষয়টি ভুল অভিহিত করে মোরতুজা আলী জানান, ফারইস্ট ফাইন্যান্সে আমানতের অর্থ আটকে যাওয়ার পর বিআইপিডি সেখানে আর কোন টাকা জমা রাখেনি। এমনকি কোন লিজিং কোম্পানিতেও টাকা রাখবে না বলে কোম্পানিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমানে কোম্পানিটি বিভিন্ন ব্যাংকে অর্থ আমানত রাখছে।

পুঁজিবাজারে বর্তমানে দুর্বল ক্যাটাগরির কোম্পানি হিসেবে পরিচিত ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ঋণের বোঝা বেড়েই চলছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০২৩ সালের মার্চ শেষে ফারইস্ট ফাইন্যান্সের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ রয়েছে ৮৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ, মোট ঋণের ৯৪ শতাংশই খেলাপি।

এছাড়া, ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটির তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে কোম্পানিটির মোট নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা, যা ২০২২ সালের একই সময়ে ছিল প্রায় ৪৮ কোটি টাকা। এ সময় কোম্পানিটির প্রতি শেয়ারের বিপরীতে দায় দাঁড়িয়েছে ৪ টাকা ২০ পয়সা।

এমআই

শেয়ার করুন:-
শেয়ার