ক্যাটাগরি: আন্তর্জাতিক

চ্যালেঞ্জের মুখে ইন্দোনেশিয়ার পাম অয়েল উৎপাদন ও রফতানি

প্রধান আমদানিকারক দেশগুলোয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ধীরগতির কারণে বিপাকে পড়েছে ইন্দোনেশিয়ার পাম অয়েল খাত। এরই মধ্যে সেখানে পণ্যটির রফতানি কমতে শুরু করেছে। চাপের মুখে রয়েছে উৎপাদনও। নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে উঠে আসা বিশ্লেষণ অনুযায়ী, চীনসহ শীর্ষ পাম অয়েল আমদানিকারক দেশগুলোর অর্থনীতি ধীর হয়ে পড়ায় পণ্যটির চাহিদা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তাছাড়া ঊর্ধ্বমুখী দামও চাহিদা কমার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে।

ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের শীর্ষ পাম অয়েল উৎপাদনকারী দেশ। সেখানে উৎপাদন কিংবা রফতানি বাধাগ্রস্ত হলে পণ্যটির বৈশ্বিক বাজার আরো ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠতে পারে। ইন্দোনেশিয়ার পাম অয়েল অ্যাসোসিয়েশনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান ফাদিল হাসান বলেন, ‘‌ইন্দোনেশিয়ার শীর্ষ পাম অয়েল ক্রেতা দেশগুলোয় চলতি বছর চাহিদা নিম্নমুখী থাকবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় উৎপাদনও কম থাকবে। এর প্রভাব পড়বে পাম অয়েল থেকে উৎপাদিত পণ্যের বাজারেও।’

ইন্দোনেশিয়ান পাম অয়েলের অন্যতম শীর্ষ ক্রেতা চীন। দেশটি চলতি বছর ৫ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, গত বছর যা ছিল ৫ দশমিক ২ শতাংশ।

কুয়ালালামপুরভিত্তিক আর্থসামাজিক গবেষণা কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক লি হেং গুই চীনের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‌এ বছর দেশটির সরকার প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে না।’ প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৬ শতাংশে নামতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।

ইন্দোনেশিয়ার পাম অয়েল অ্যাসোসিয়েশনের দেয়া তথ্যমতে, চলতি বছর সেখানে ৫ কোটি ৪৪ লাখ টন পাম অয়েল উৎপাদন হতে পারে, যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি। তবে রফতানি কমে ২ কোটি ৯৫ লাখ টনে নেমে আসতে পারে, গত বছর যা ছিল ৩ কোটি ২২ লাখ টন।

ফাদিল হাসান জানান, ২০২৩ সালে ইন্দোনেশিয়ায় প্রতি টন পাম অয়েলের দাম ৯০০ থেকে ১ হাজার ডলারে ওঠানামা করেছে। ওই সময় সেখানে পণ্যটির গড় দাম ছিল টনপ্রতি ৯৬০ ডলার।

শিল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইন্দোনেশিয়ায় চলতি বছর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে পাম উৎপাদন। নতুন আবাদ কমে যাওয়া, ফলনে ধস, শ্রমিক ও সারের ব্যয় বেড়ে যাওয়াসহ বেশকিছু বিষয় উৎপাদন কমার পেছনে বড় ভূমিকা পালন করবে। ফলে বিশ্ববাজারে পণ্যটির দাম আকাশচুম্বী হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে।

পূর্বাভাস দাতা প্রতিষ্ঠান অয়েল ওয়ার্ল্ডের নির্বাহী পরিচালক থমাস মাইক জানান, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) পাম অয়েলের বৈশ্বিক উৎপাদন কমেছে। পাশাপাশি মজুদ কমেছে ১২ লাখ টন।

তিনি বলেন, ‌চলতি ও আগামী বছর মালয়েশিয়ান পাম অয়েলের দাম স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি থাকবে। দেশটি পাম অয়েল উৎপাদন ও রফতানিতে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ। সেখানেও পণ্যটির সরবরাহ সংকোচনের মুখে পড়েছে। আগামী তিন মাসে বুরসা মালয়েশিয়া ডেরিভেটিভস এক্সচেঞ্জে পাম অয়েলের দাম ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার ৩০০ রিঙ্গিতে ওঠানামা করতে পারে।

ইন্দোনেশিয়া গত বছর উৎপাদিত পাম অয়েলের ৫৮ শতাংশই রফতানি করেছে। তবে এটি বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেক কম। মূলত স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় রফতানি প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হয়েছে। এ বছরও রফতানি কমতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার