আন্তর্জাতিক
এশিয়ার মুদ্রা শক্তিশালী করতে সমন্বিত পদক্ষেপের ইঙ্গিত

ডলারের শক্তিশালী অবস্থানের বিপরীতে চলতি বছরে এশিয়ার বেশির ভাগ মুদ্রাই দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। এরই মধ্যে একাধিক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, এভাবে পরিস্থিতির শিগগিরই উন্নতি হবে না। বরং পূর্বাভাস পরিস্থিতির আরো অবনতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ অবস্থায় প্রধান অর্থনীতিগুলো সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারে বলে সাম্প্রতিক এক বিবৃতি থেকে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে কাজ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। খবর নিক্কেই এশিয়া।
বিরল এক সতর্ক বার্তায় গতকাল যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রা ব্যবস্থার নীতিনির্ধারকরা ইয়েন ও ওনের পতনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ওয়াশিংটনে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পর এ যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।
সেখানে বলা হয়, বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে জাপানের ইয়েন ও দক্ষিণ কোরিয়ার ওনের সাম্প্রতিক দ্রুত অবমূল্যায়নের বিষয়ে তারা উদ্বিগ্ন। বিদ্যমান জি-২০ প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরিস্থিতির উন্নয়নে দেশগুলো ঘনিষ্ঠভাবে আলোচনা চালিয়ে যাবে।
টোকিও ও সিউলের উদ্বেগের প্রতি ওয়াশিংটনের সম্মতি মুদ্রার বাজারে হস্তক্ষেপের কাছাকাছি একটি পদক্ষেপ হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন কিছু বিশ্লেষক। ইউবিএস সুমি ট্রাস্ট ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের জাপান অংশের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা দাইজু আওকি বলেন, ‘বিবৃতির ওপর ভিত্তি করে সরকারি হস্তক্ষেপের ঝুঁকি স্পষ্টতই বেড়েছে।’
বর্তমান অবস্থায় হস্তক্ষেপের পূর্বাভাস না দিয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু জাপান সরকারের একক হস্তক্ষেপ ইয়েনের ওপর অর্থপূর্ণ প্রভাব ফেলবে না। তবে যদি দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের সঙ্গে কাজ করতে পারে, এ প্রভাব অনেক বড় হবে।’
এদিকে যৌথ বিবৃতি ও হস্তক্ষেপ বিষয়ে সতর্কতার পর গতকাল বিনিময় হারে উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। এদিন বাজারে ১ ডলারের বিনিময়ে ১৫৩ ইয়েন পাওয়া যায়। এর আগে মঙ্গলবার ছিল ১৫৪ দশমিক ৭৮ ইয়েন, যা ৩৪ বছরের মধে সর্বনিম্ন বিনিময় হার। তার পরও ডলারের বিপরীতে বেশি প্রভাবিত এশিয়ান মুদ্রাগুলোর একটি ইয়েন। কুইক ফ্যাক্টসেট অনুসারে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলতি বছরে ডলারের কাছে ৮ শতাংশের বেশি বিনিময় হার হারিয়েছে ইয়েন। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার ওনের বিনিময় হার প্রায় ৬ শতাংশ এবং তাইওয়ান ডলার ও ইন্দোনেশীয় রুপিয়া উভয়ই প্রায় ৫ শতাংশ কমেছে।
তবে ডলারের বিপরীতে এশিয়ার মুদ্রার শক্তিশালী অবস্থানের ওপর দেশটির নীতি সুদহারবিষয়ক সিদ্ধান্ত প্রভাব রাখবে। সম্প্রতি মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল সুদহার কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। এর অর্থ হলো এশিয়ার মুদ্রার তুলনায় ডলার আরো অনেক দিন শক্তিশালী অবস্থানে থাকবে। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ সম্প্রতি নীতি সুদহারের লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ২৪ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে, যা জাপানের দশমিক ১ শতাংশ, থাইল্যান্ডের ২ দশমিক ৫ ও দক্ষিণ কোরিয়ার ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে অনেক বেশি।
বিনিয়োগবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইনভেস্কোর এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের কর্মকর্তা ডেভিড চাও বলেন, ‘এখানে বড় বিষয় হলো যুক্তরাষ্ট্রে প্রবৃদ্ধি আবার ত্বরান্বিত হয়েছে। শ্রমবাজারের পুনরায় সংকোচন ও মূল্যসংকোচন কিছু ঝুঁকি নিয়ে স্থবির হয়ে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে।’
১ ডলারের বিপরীতে ১৫৪ ইয়েনের বিনিময় হার সম্ভাব্য সরকারি হস্তক্ষেপের সম্ভাবনাকে সামনে নিয়ে আসছে। কারণ এটি গত বছরের প্রাথমিক পূর্বাভাসের চেয়ে অনেক দুর্বল অবস্থা দেখাচ্ছে।
মঙ্গলবার দক্ষিণ কোরিয়ার ওনের বিনিময় হার দেড় বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো মিডডে ট্রেডিংয়ে ১ ডলারের বিপরীতে ১ হাজার ৪০০ ওনে ছুঁয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা ওইদিন মৌখিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানান।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও ব্যাংক অব কোরিয়ার যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা বৈদেশিক মুদ্রার হারের গতিবিধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ ও চাহিদার দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছি। বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে অতিরিক্ত অস্থিরতা আমাদের অর্থনীতির জন্য কাম্য নয়।’
এদিকে মঙ্গলবার চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ১ ডলারের বিনিময়ে ইন্দোনেশিয়ার ১৬ হাজার ২০০ রুপিয়ার হওয়ার পর দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্থানীয় মুদ্রাকে সমর্থন করার পদক্ষেপ নেয়। প্রতিবেশী মালয়েশিয়ারও মুদ্রার বিনিময় হার পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই করছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ১ ডলারের বিপরীতে ৪ দশমিক ৭৯৬৫ রিঙ্গিত বিনিময় হার ছিল ২৫ বছরের সর্বনিম্ন। মালয়েশিয়ার কর্মকর্তারা নিজস্ব মুদ্রার দুর্বলতা কাটানোর জন্য চেষ্টা করছেন। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, আর্থিক বাজার সুশৃঙ্খল রাখতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এদিকে গতকাল ভারতে ১ ডলারের বিপরীতে় ৮৩ দশমিক ৭৩৯ রুপি বিনিময় হার ছিল রেকর্ড সর্বনিম্ন। গত বছর ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার মুদ্রাকে শক্তিশালী করতে হস্তক্ষেপ করেছিল।

আন্তর্জাতিক
মালয়েশিয়ায় বিদেশি শ্রমশক্তির ৩৭ শতাংশই বাংলাদেশি

মালয়েশিয়ায় মোট বিদেশি শ্রমশক্তির ৩৭ শতাংশই বাংলাদেশি। দেশটিতে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত কাজের অনুমতি পেয়েছেন ৮ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি নাগরিক।
সোমবার (২৫ আগস্ট) মালয়েশিয়ার সংসদে বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা সংক্রান্ত প্রশ্ন তোলেন হাসান করিম নামে এক সংসদ সদস্য। এর জবাবে এই তথ্য জানায় দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের তথ্যের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) মালয়েশিয়ার গণমাধ্যম দ্য স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইমিগ্রেশন বিভাগের নথি অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় অস্থায়ী অনুমতিপত্র নিয়ে কাজ করছেন ৮ লাখ ৩ হাজার ৩৩২ বাংলাদেশি। এই সংখ্যা দেশটির মোট বিদেশি শ্রমশক্তির ৩৭ শতাংশ। মালয়েশিয়ায় বর্তমানে স্বল্পদক্ষ সবচেয়ে বেশি বিদেশি শ্রমিক আসে বাংলাদেশ থেকে।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, করোনা মহামারির পর ২০২২ সালে উন্মুক্ত হয় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। তখন দেশটিতে পাড়ি জমান ৪৯ হাজার ৩৫৩ বাংলাদেশি। ২০২৩ সালে সাময়িকভাবে বিদেশি কর্মী নিয়োগ শিথিলকরণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। দ্রুত ও সহজভাবে বিদেশি কর্মী নিয়োগ পরিকল্পনার আওতায় নতুন করে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করেন ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৫৪৮ বাংলাদেশি।
২০২২ সালে ২০ হাজার ৩৩১ এবং পরের বছর ২৩ হাজার ৬৫ জন বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠান তাদের নিয়োগকর্তারা। অবৈধ অভিবাসী কর্মীদের বিষয়ে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অনুমতিপত্র মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও অবস্থান করায় মোট ৭৯০ বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক
চীনের ওপর ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের

এবার চীনের ওপর ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বেশি ম্যাগনেট দিতে হবে, না হলে চীনের ওপর এই শুল্ক আরোপ করা হবে।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, চীনকে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বেশি ম্যাগনেট দিতে হবে, নইলে তাদের পণ্যে ২০০ শতাংশ বা তারও বেশি শুল্ক বসানো হবে। সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আল জাজিরা বলছে, দুর্লভ খনিজ উপাদান নিয়ে বেইজিং অত্যন্ত সংবেদনশীল। গত এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধির পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে চীন বেশ কিছু দুর্লভ খনিজ ও ম্যাগনেট রপ্তানিতে সীমাবদ্ধতা আরোপ করে। বর্তমানে বৈশ্বিক ম্যাগনেট বাজারের প্রায় ৯০ শতাংশই চীনের দখলে। এসব উপাদান সেমিকন্ডাক্টর চিপসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ পণ্যে অপরিহার্য, যার ব্যবহার রয়েছে স্মার্টফোনের মতো প্রযুক্তিপণ্যে।
ট্রাম্পের এই মন্তব্য এসন এক সময়ে এসেছে যখন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টেল করপোরেশনে ১০ শতাংশ শেয়ার নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সেমিকন্ডাক্টর চিপ প্রস্তুতকারী এই কোম্পানি দুর্লভ খনিজ উপাদানের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
এদিকে চীনের রপ্তানি প্রবণতা উল্টো চিত্র দেখিয়েছে। গত জুলাই মাসে দেশটির বিরল খনিজের রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। চীনা কাস্টমসের তথ্যে দেখা যায়, জুনের তুলনায় জুলাইয়ে বিরল খনিজ আকরিক আমদানি ৪ হাজার ৭০০ টনের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে চলমান শুল্ক বিরোধের প্রেক্ষাপটে ট্রাম্পের এ বক্তব্য সামনে এসেছে। চলতি মাসের শুরুতে বিরোধ কিছুটা প্রশমিত হওয়ার ইঙ্গিত মিললেও নতুন হুমকি পরিস্থিতিকে আবার জটিল করছে বলেই মনে হচ্ছে।
সম্প্রতি ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক কার্যকরের সময়সীমা আরও ৯০ দিন বাড়িয়েছেন, যাতে উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনার আরও সুযোগ তৈরি হয়। এ আদেশ না হলে শুল্কের হার ১৪৫ শতাংশে পৌঁছাত।
এর আগে গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সমঝোতায় এসেছিল যে, শুল্ক হার ১২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে আনা হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।
আন্তর্জাতিক
তিন সপ্তাহের মধ্যেই গাজা যুদ্ধের সমাপ্তি: ট্রাম্প

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে গাজা যুদ্ধের সমাপ্তি হতে পারে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
সোমবার (২৫ আগস্ট) ওয়াশিংটনে তিনি এসব কথা জানান।
ট্রাম্প বলেন, আমি মনে করি আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধের একটি নিশ্চিত সমাপ্তি হবে। ক্ষুধা, মৃত্যুর মতো পরিস্থিতি আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। মানুষ প্রতিদিন মারা যাচ্ছে। যুদ্ধের অবসান ঘটাতেই হবে।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ট্রাম্প একাধিকবার যুদ্ধ শেষের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো যুদ্ধবিরতি হয়নি। বরং যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সহায়তা দিয়েছে এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতির আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাও প্রত্যাখ্যান করেছে।
এর আগে, সকালে গাজার নাসের হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় পাঁচজন সাংবাদিকসহ ২১ জন নিহতের এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, এ ঘটনায় আমি খুশি নই। এমন দৃশ্য দেখতে চাই না। তবে আমাদের অবশ্যই এই দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটাতে হবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ট্রাম্প তার বক্তব্যে গাজায় আটক ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তির প্রচেষ্টার কথাও উল্লেখ করেন।
এর আগে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প গাজা থেকে সব ফিলিস্তিনিকে সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন। আন্তর্জাতিক আইনে এটা জাতিগত নির্মূল হিসেবে বিবেচিত এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ বলেও জানায় কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
আন্তর্জাতিক
শুল্ক কার্যকরের আগে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন লবিস্ট নিয়োগ করলো ভারত

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতীয় পণ্যের ওপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্ক আরোপ কার্যকর হতে যাচ্ছে দুদিন পরই। এই শুল্ক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায় ভারতের উদ্বেগ আরও বেড়েছে। তাই শেষ মুহূর্তে শুল্ক কমানোর জন্য ওয়াশিংটনে দ্বিতীয় একটি লবিং ফার্ম ভাড়া করেছে নয়াদিল্লি।
ভারতীয় দূতাবাস এবার চুক্তি করেছে মার্কারি পাবলিক অ্যাফেয়ার্স নামের একটি লবিং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। প্রতি মাসে প্রতিষ্ঠানটিকে দিতে হবে ৭৫ হাজার ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯১ লাখ টাকার সমান। তিন মাসের জন্য এই চুক্তি কার্যকর হবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ট্র এই প্রতিষ্ঠান ১৫ আগস্ট থেকেই ভারতের হয়ে কাজ শুরু করেছে। তারা মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করবে ও কৌশলগত প্রচারণায় সহায়তা দেবে।
এই নিয়োগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের প্রভাব খাটানোর প্রচেষ্টা আরও তীব্র হলো বলে মনে করছে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো। কূটনৈতিক মহলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে পাকিস্তান ওয়াশিংটনে ভারতের চেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করছে। কারণ, ইসলামাবাদ ইতিমধ্যেই ট্রাম্পের সাবেক বডিগার্ড কিথ শিলারের প্রতিষ্ঠিত এক লবিং ফার্মকে কাজে লাগাচ্ছে।
ভারতের পক্ষে এবার লবিং করবেন চার সদস্যের একটি দল। এর নেতৃত্বে রয়েছেন মার্কারি অ্যাফেয়ার্সের অংশীদার ডেভিড ভিটার, যিনি আগে লুইজিয়ানার রিপাবলিকান সিনেটর ছিলেন, এবং ব্রায়ান লানজা, যিনি ট্রাম্প ট্রানজিশন টিমের যোগাযোগ পরিচালক ছিলেন। এ দলে আরও আছেন নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটে নির্বাচিত প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত সদস্য কেভিন থমাস।
মারকারি অ্যাফেয়ার্স অতীতে চীনা টেলিকম জায়ান্ট জেডটিই এবং হাংঝো হিকভিশনের পক্ষে লবিং করেছে। এই দুই কোম্পানিই ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিল।
এপ্রিল মাসেই ভারত আরেকটি ফার্ম—এসএইচডব্লিউ পার্টনার্স এলএলসির সঙ্গে চুক্তি করে। সেটির নেতৃত্বে ছিলেন ট্রাম্পের সাবেক সহকারী জেসন মিলার। তাদেরকে প্রতি মাসে দিতে হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিকে ১৮ লাখ ডলার পরিশোধ করেছে নয়াদিল্লি।
সব মিলিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ সহজ করতে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের চাপ কমাতে ভারত একের পর এক প্রভাবশালী লবিস্ট ভাড়া করছে। তবুও সমালোচকরা বলছেন, রাশিয়া থেকে সস্তায় অপরিশোধিত তেল কেনা চালিয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষোভ কমার সম্ভাবনা আপাতত কমই।
আন্তর্জাতিক
সৌদিতে এক সপ্তাহে ২২ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার

সৌদি আরবে বিভিন্ন আইন লঙ্ঘনের কারণে এক সপ্তাহে ২২ হাজারের বেশি প্রবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সৌদির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতির বরাত দিয়ে এই খবর জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইংরেজি দৈনিক গালফ নিউজ।
এতে বলা হয়েছে, গত ১৪ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত সৌদি আরবের বিভিন্ন প্রান্তে অভিযান চালিয়ে ২২ হাজার ২২২ জন প্রবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশজুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তা অভিযানের অংশ হিসেবে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। দেশটির বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনী ও সরকারি সংস্থা যৌথ অভিযান চালিয়ে এই প্রবাসীদের গ্রেপ্তার করেছে।
দেশটির কর্মকর্তারা বলেছেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আবাসন আইন লঙ্ঘনের ঘটনায় ১৩ হাজার ৫৫১ জন, সীমান্ত নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনে ৪ হাজার ৬৬৫ জন এবং শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ৪ হাজার ৬ জন রয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃত প্রবাসীদের মধ্যে ২০ হাজার জনকে দেশে ফেরত পাঠানোর আগে ভ্রমণের প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহের জন্য তাদের নিজ নিজ কূটনৈতিক মিশনে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ১২ হাজার ৯২০ জনকে ইতোমধ্যে সৌদি আরব থেকে নিজ নিজ দেশে প্রত্যাবাসন করা হয়েছে।
এছাড়া অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে সৌদি আরবে প্রবেশের চেষ্টার সময় গ্রেপ্তার হয়েছেন ১ হাজার ৭৮৬ জন। তাদের মধ্যে ইথিওপিয়ান ও ইয়েমেনি নাগরিকদের সংখ্যাই বেশি। পাশাপাশি অবৈধ উপায়ে সৌদি আরব ত্যাগের চেষ্টার সময় আরও ৩৩ জন প্রবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
একই সময়ে আবাসন ও কর্মবিধি লঙ্ঘনকারীদের পরিবহন এবং আশ্রয় দেওয়ায় সৌদিতে বসবাসরত ১৮ ব্যক্তিকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশটিতে বর্তমানে ২৫ হাজার ৯২১ জন প্রবাসীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাদের মধ্যে ২৩ হাজার ৪১৯ জন পুরুষ এবং ২ হাজার ৫০২ জন নারী।
মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে অবৈধভাবে প্রবেশে সহায়তার চেষ্টাকারী ব্যক্তির ১৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ সৌদি রিয়াল জরিমানার বিধান রয়েছে। সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে বারবার সতর্ক করে দিয়ে আসছে।
মরু অঞ্চলের দেশ সৌদি আরবে বর্তমানে প্রায় ৩ কোটি ৪৮ লাখ মানুষের বসবাস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লাখ লাখ অভিবাসী শ্রমিক সৌদিতে কর্মরত রয়েছেন। সৌদি আরবের স্থানীয় গণমাধ্যম নিয়মিতভাবে দেশটিতে আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে নিরবচ্ছিন্ন ধরপাকড় অভিযান ও অবৈধ প্রবাসীদের আটকের খবর প্রকাশ করছে।