অর্থনীতি
ব্যাংকের আমানত তুলে খরচ মেটাচ্ছেন পোশাকশ্রমিক-কৃষকরা

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের অনেক মানুষই এখন সঞ্চয় ভাঙছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন থেকেও সেই তথ্য মিলেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ এক প্রতিবেদন বলছে, গত বছরের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) পোশাককর্মীরা ব্যাংকে থাকা তাঁদের আমানত থেকে ১৮ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। এই সময়ে কৃষকেরা সঞ্চয় ভেঙেছেন ৯১ কোটি টাকা। আর মুক্তিযোদ্ধাদের হিসাব থেকে আমানত তুলে নেওয়া হয়েছে ১৪৬ কোটি টাকা। তার বিপরীতে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবে সঞ্চয়ের পরিমাণ বেড়েছে। শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবে এই তিন মাসে আমানত বেড়েছে ২০৫ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে পোশাকশ্রমিকদের ৯ লাখ ৩ হাজার ব্যাংক হিসাবে সব মিলিয়ে ৩০০ কোটি টাকা সঞ্চয় ছিল। কিন্তু অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে সেই সঞ্চয় কমে দাঁড়িয়েছে ২৮২ কোটি টাকায়। যদিও এ সময়ে পোশাকশ্রমিকদের ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯ লাখ ৩৯ হাজার। সেই হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে পোশাকশ্রমিকদের ব্যাংক হিসাব বাড়লেও সঞ্চয়ের পরিমাণ ১৮ কোটি টাকা বা ৬ শতাংশ কমে গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, একই ঘটনা ঘটেছে কৃষক ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঞ্চয় বা আমানতের ক্ষেত্রেও। গত অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে কৃষকদের ব্যাংক হিসাবে থাকা আমানতের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৫৯২ কোটি টাকায়। কৃষকদের দেড় কোটির মতো ব্যাংক হিসাব রয়েছে। আমানত কমলেও কৃষকের ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা আগের প্রান্তিকের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। কৃষকের চেয়ে আমানত বেশি কমেছে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাংক হিসাবে। তিন মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের হিসাবে থাকা আমানত ১৪৬ কোটি টাকা কমে দাঁড়িয়েছে ৮৬৩ কোটি টাকায়। যদিও এই সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাংক হিসাব বেড়েছে।
দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে কৃষক ও মুক্তিযোদ্ধাদের যেসব হিসাব রয়েছে, সেখানে সরকারের দেওয়া নানা সুবিধার টাকাও জমা হয়। সরকারের আর্থিক সহায়তার অর্থ জমা হওয়ার পরপরই তা অনেকে তুলে নেন। এ কারণে কয়েক মাস পরপর কৃষক ও মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাংক হিসাবে জমা অর্থের কমবেশি হয়।
পোশাককর্মী, কৃষক ও মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাংক হিসাবে জমা অর্থের পরিমাণ কমলেও শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবে আমানত বা সঞ্চয় করা অর্থের পরিমাণ বেশ বেড়েছে। গত অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবে জমা অর্থের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবে জমা অর্থের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে শিক্ষার্থীদের জমানো অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ২০৫ কোটি টাকা। এ সময়ের ব্যবধানে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় পৌনে দুই লাখ।
কৃষক, শ্রমিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাংক হিসাবে সঞ্চয় কমে যাওয়ার জন্য উচ্চ মূল্যস্ফীতিকেই দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদেরা। তাঁরা বলছেন, জীবনযাত্রার ব্যয় যেভাবে বেড়েছে, তা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন সীমিত আয়ের মানুষ। তাই বাধ্য হয়ে অনেকে সঞ্চয় ভাঙছেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়েছে। মার্চ শেষে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। বিবিএসের তথ্য বলছে, মার্চে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত উভয় মূল্যস্ফীতিই বেড়েছে। গত মাসে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ, আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
গত বছরের মার্চে প্রকাশিত বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা শহরের চারজনের একটি পরিবারকে প্রতি মাসে খাবারের পেছনেই ২২ হাজার ৬৬৪ টাকা খরচ করতে হয়। একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মোট আয়ের ৬০ শতাংশই খরচ করতে হয় খাবারের পেছনে।

অর্থনীতি
মানুষের হাতে নগদ অর্থ আবারও বাড়ছে

মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ আবারও বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের মে মাসে ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা, যা জুনে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসে মানুষের হাতে বেড়েছে ২ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা।
এর আগে এপ্রিলে মানুষের হাতে নগদ টাকার পরিমাণ কমলেও মে মাসে তা বেড়েছিল ১৬ হাজার ৪১১ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মানুষের হাতে নগদ টাকার প্রবাহ কমছিল। তবে মার্চে হঠাৎ তা বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। এপ্রিলে আবার কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। পরের মাস মে থেকে নগদ টাকার পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের খরচ বেড়েছে, এজন্য তারা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে হাতে রাখছেন। অন্যদিকে ব্যাংক খাতের অনিয়ম ও আস্থাহীনতাও নগদ টাকার প্রবাহ বৃদ্ধির পেছনে একটি বড় কারণ।
গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত মানুষের হাতে নগদ টাকা ক্রমাগত বাড়ছিল। তবে ওই বছরের ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর ব্যাংক খাতে মানুষের আস্থা কিছুটা ফিরতে শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় সেপ্টেম্বরে নগদ টাকার প্রবাহ কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা, অক্টোবরে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি এবং ডিসেম্বরে ২ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে আরও কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭৪ হাজার ২৩০ কোটি এবং ফেব্রুয়ারিতে কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা।
তবে গত মার্চে মানুষের হাতে নগদ টাকার পরিমাণ আবার বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। এরপর এপ্রিলে তা কিছুটা কমলেও মে ও জুনে আবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে।
এদিকে শুধু নগদ টাকার প্রবাহই নয়, বাজারে মুদ্রা সরবরাহও বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, মে মাসে ছাপানো টাকার স্থিতি (রিজার্ভ মানি) ছিল ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা, যা জুনে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ১৩ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসে মুদ্রা সরবরাহ বেড়েছে ১৪ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা।
অর্থনীতি
খেলাপি ঋণের ৪৯.৪৩ শতাংশই শিল্প খাতে

ব্যাংক খাতের ক্যানসার হিসেবে পরিচিত খেলাপি ঋণ এখন উৎপাদনমুখী শিল্প খাতে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন-২০২৪ অনুযায়ী, মোট খেলাপি ঋণের প্রায় অর্ধেক (৪৯.৪৩ শতাংশ) এখন তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, চামড়া, জাহাজ নির্মাণসহ বিভিন্ন উৎপাদনমুখী শিল্প খাতে কেন্দ্রীভূত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ১১ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছিল ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ২০.২৫ শতাংশ।
এক বছর পর ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে উৎপাদনমুখী শিল্প খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা। আগের বছর এই খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৭২ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা। অর্থাৎ, এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৯৮ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা।
তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতের সংকট
সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ হয়েছে তৈরি পোশাক খাতে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে এই খাতে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮৮ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ৪৮ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা (১৪.০৪ শতাংশ)। আগের বছর এই খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৭০২ কোটি টাকা। এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৫ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, টেক্সটাইল খাতে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে বিতরণকৃত ঋণ ছিল ১ লাখ ৪৯ হাজার ১৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ৩৬ হাজার ৫২০ কোটি টাকা (১০.৫৪ শতাংশ)। ২০২৩ সালে এ খাতের খেলাপি ঋণ ছিল ১৫ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২১ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা।
অন্যান্য শিল্প খাত
চামড়া খাত: ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে ঋণ ১৪ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা, খেলাপি ৫ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। আগের বছর খেলাপি ছিল ২ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা।
জাহাজ নির্মাণ খাত: ঋণ ২০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা, খেলাপি ৮ হাজার ৩১ কোটি টাকা। এক বছরে বেড়েছে ৪ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা।
কৃষিভিত্তিক শিল্প খাত: ঋণ ৬৬ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা, খেলাপি ৭ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা।
ব্যবসা-বাণিজ্য খাতেও ঋণখেলাপি
২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যবসা ও বাণিজ্য খাতে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ২৩ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৮৮ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা, যা মোটের ২৫.৫১ শতাংশ।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিল্পখাতে ঋণ বিতরণে নিয়মকানুন মানা হয় না। বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা সহজেই ঋণ পায় এবং অনেক ক্ষেত্রে তা ফেরত দেয় না। কেউ কেউ আবার নামে-বেনামে টাকা বিদেশে পাচার করছে। ফলে শিল্পখাতের খেলাপি ঋণ লাগামহীনভাবে বাড়ছে।
অর্থনীতি
সবজির দামে পুড়ছে মানুষ, ডিমের ডজন ১৫৫

বেশ কিছুদিন ধরে সবজির বাজারে ঊর্ধ্বগতির দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। প্রায় সব ধরনের সবজির দাম ৮০ টাকার ঘরে আটকে আছে। তবে করলা, বেগুন ও টমেটোর মতো সবজিগুলোর দাম আরও বেশি। সবজির সঙ্গে সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ডিমের দামও। প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে ১৫৫ টাকা দরে।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে সবজির চড়া দামের এমন চিত্র দেখা গেছে।
রাজধানীর শনিরআখরা কাঁচাবাজারে সবজি কিনতে আসা ইকরাম আহমেদ বলেন, আমাদের আয় সীমিত, টানাটানির সংসার। এরমধ্যে কোনো ক্ষেত্রে বেশি খরচ হলে অন্যদিকে টান পড়ে যায়। সবজির মূল্যবৃদ্ধি আসলেই আমাদের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগের চেয়ে সবজি কেনা কমিয়ে দিয়েছি। তবে দু-এক কেজি না কিনলে তো রান্না চলবে না। অল্প অল্প করে নিচ্ছি।
শুধু শুধু ইকরাম নন, বাজারে আসা ক্রেতাদের সবাই সবজির চড়া দামে নাকাল। অনেকে দাম বেশি হওয়ায় সবজি কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। কেউ আবার সবজি না কিনেই ফিরে যাচ্ছেন খালি হাতে।
বিক্রেতারা বলছেন, টানা বৃষ্টির কারণে এখন সবজির উৎপাদন আর সরবরাহ কম। তাই দাম বেড়েছে।
সবুজ হোসেন নামের একজন বিক্রেতা বলেন, এখন কম উৎপাদনের মৌসুম চলছে। এসময় আবহাওয়ার কারণে জমিতে সবজি চাষ কম হয়, ফলে সরবরাহও কমে যায়। এরমধ্যে অস্বাভাবিক বৃষ্টিতে অনেক এলাকার সবজিক্ষেত তলিয়ে গেছে। এ কারণে বাজারে সবজির দাম বেড়েছে।০
বাজারে এখন আলু, বই কচু ও কাঁচা পেঁপে ছাড়া আর কোনো সবজি ৮০ টাকার কমে মিলছে না। এমনকি গ্রীষ্মের সবজি ঢ্যাঁড়স-পটোলও বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। এছাড়া বরবটি, বেগুন, উস্তা, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গার, ধুন্দল কাঁকরোলের দাম বাজারভেদে ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে এখন কাঁচামরিচের দামও অনেক চড়া। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩২০ টাকা পর্যন্ত। কয়েকদিন আগেও প্রতি কেজি কাঁচামরিচের দাম ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। বাজারে এখন প্রতি পিস চালকুমড়া ৭০ টাকা, লাউ ১০০ টাকা, প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়ার ফালি ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
সবজির সঙ্গে সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ডিমের দামও। আগে প্রতি ডজন ডিম ১৪০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বেড়ে হয়েছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। পাড়া-মহল্লার দোকানে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা দরে। মাত্র একমাস আগেও প্রতি ডজন ডিমের দাম ছিল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা।
ডিমের দাম বেশি কেন—জানতে চাইলে মালিবাগ বাজারের ডিম বিক্রেতা বুলু মিয়া জানান বাজারে অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ায় প্রভাব পড়েছে ডিমের দামেও। সবজির দাম বাড়লেই স্বাভাবিকভাবে ডিমের চাহিদা বেড়ে যায়। এছাড়া বৃষ্টির কারণে ডিমের সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে।
বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি দরে।
কাফি
অর্থনীতি
দুই মাসে বাংলাদেশি পোশাকের ক্রয়াদেশ বেড়েছে ৩২ শতাংশ

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতির কারণে বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিদেশি ক্রেতারা ধীরে ধীরে নয়াদিল্লি, ইসলামাবাদ ও বেইজিং থেকে মুখ ফিরিয়ে এখন লাল-সবুজের পতাকার দিকে ঝুঁকছেন। এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্রেতারা অর্ডার নিয়ে ঢাকায় আসছেন, ফলে গত দুই মাসে আগের একই সময়ের তুলনায় ক্রয়াদেশ বেড়েছে প্রায় ৩২ শতাংশ।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও সরাসরি পোশাক রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, দেশের তৈরি পোশাক খাতে নতুন সম্ভাবনা জেগে উঠেছে। চলতি আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বিশ্ববাজারের ক্রেতাদের মধ্যে বাংলাদেশে নতুন রপ্তানি আদেশ দেওয়ার প্রবল আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে সেপ্টেম্বর থেকে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে।
পোশাক খাতের সংশ্লিষ্টদের মতে, গত দুই মাসে আগের একই সময়ের তুলনায় ক্রয়াদেশ প্রায় ৩২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসেই মোট রপ্তানি আয়ে ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে কেবল পোশাক খাত থেকেই রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩৯৬ কোটি ডলার, যা দেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮৩ শতাংশ।
ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জানান, ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী রপ্তানি আদেশ গ্রহণ ও সময়মতো শিপমেন্ট সম্পন্ন হলে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) শেষে মোট রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কিংবা তারও বেশি হতে পারে। এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আট মাসের মধ্যেই রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও জানান, শুধু তৈরি পোশাক নয়—চীন ও ভারত থেকে আগে যুক্তরাষ্ট্রে যেসব পণ্য রপ্তানি হতো, সেসবের ক্রেতারাও এখন বাংলাদেশে আসছেন। উদ্যোক্তারা যদি তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেন, তবে এসব ক্রেতা স্থায়ীভাবেই বাংলাদেশমুখী হতে পারেন। তবে এর জন্য দ্রুত বিদ্যুৎ-জ্বালানি সংকট সমাধান ও বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, গত ছয়-সাত মাস ধরে চীনের পরিবর্তে অনেক ক্রেতা তাদের আমদানি আদেশ ভারতে স্থানান্তর করছিলেন। কারণ, তারা আগেই অনুমান করেছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে চীনের রপ্তানিকারকদের কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতে হবে। তবে হঠাৎ ভারতের ওপর বাড়তি মার্কিন শুল্ক আরোপ সেই প্রবণতাকে বদলে দিয়েছে। এর সঙ্গে চীনের পোশাক কারখানাগুলোতে শ্রমিক সংকট তৈরি হওয়ায় বাংলাদেশ এ সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারবে।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী সব রপ্তানি আদেশ বাস্তবায়ন করা গেলে চলতি অর্থবছরেই রপ্তানি খাতের প্রবৃদ্ধি ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে শিল্পে বিনিয়োগ ও উৎপাদন প্রবাহ এখনো কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতের কারণে। তার মতে, ব্যাংকগুলো বর্তমানে পুরোপুরি রিকভারি মোডে আছে, তারা ঋণ আদায়ে মরিয়া। কিন্তু বহু বছরের অনিয়ম ও লুটপাটের সমস্যাগুলো রাতারাতি সমাধান সম্ভব নয়। ঋণের সুদহার বাড়ানো বা ঋণ প্রবাহ কমিয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণও সম্ভব নয়। এখনো পরিস্থিতি এমন নয় যে একদিনে সব ঠিক করে ফেলা যাবে। তিনি বলেন, সহনীয় নীতির বিপরীতে গিয়ে যেমন রাজস্ব আয় বাড়ানো যায় না, তেমনি উদ্যোক্তাদের আতঙ্কিত করে ঋণ আদায় করাও সম্ভব নয়।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল আমার জানান, সাধারণত জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে তুলনামূলক কম রপ্তানি হয়ে থাকে; কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। রপ্তানি আয় বাড়ছে, একই সঙ্গে আসছে নতুন নতুন ক্রয়াদেশ। আগে যেখানে শুধু বড় ক্রেতারা অর্ডার দিতেন, সেখানে গত এক মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারের জন্য ছোট ছোট ক্রেতারাও অর্ডার দিতে শুরু করেছেন। এতে গত মাসে রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর সেখানকার ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে বাংলাদেশ ভালো সাড়া পাচ্ছে। প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় চীন ও ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে থাকায় আমাদের পণ্যের চাহিদা বেড়েছে।
পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বাড়তি ক্রয়াদেশ গ্রহণে সতর্ক হতে হবে। কোনো অবস্থাতেই মূল্যছাড়ে পণ্য বিক্রি করা উচিত নয়। কারণ, একবার কম দামে পণ্য বিক্রি করলে পরে ক্রেতারা আর সঠিক দাম দিতে চাইবে না। এতে রপ্তানি আয় বাড়লেও অল্প সময়ের মধ্যেই অনেক প্রতিষ্ঠান উৎপাদন বন্ধ করে দেনার ফাঁদে পড়তে পারে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় একটি টাস্কফোর্স গঠন করা উচিত সরকারের।
অর্থনীতি
দেউলিয়া হচ্ছে ৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান

বাংলাদেশের আর্থিক খাতে বড় ধরনের ধাক্কা আসছে। দেশের ৩৫টি নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনের (এনবিএফআই) মধ্যে ৯টি প্রতিষ্ঠানকে লিকুইডেশনের (দেউলিয়া ঘোষণা করে কার্যক্রম বন্ধ) পথে নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম, যা খাতটির অস্থিরতা ও দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনাকে স্পষ্ট করে তুলছে। আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংক এ প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে গত মে মাসে খারাপ অবস্থায় থাকা ২০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না জানতে চেয়ে নোটিশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সন্তোষজনক জবাব না পাওয়ায় ৯ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান অবসায়নে সরকারের ৯ হাজার কোটি টাকা লাগবে বলে জানা গেছে।
বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো– পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, আভিভা ফাইন্যান্স, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি ও প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। গতকাল গভর্নরের সম্মতি নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান অবসায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রেজল্যুশন বিভাগে তথ্য পাঠানো হয়। অবসায়নের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। কর্মরত কর্মচারীদের চাকরিবিধি অনুযায়ী সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে– এফএএস ফাইন্যান্সের মোট ঋণের এক হাজার ৮১৪ কোটি টাকা বা ৯৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ খেলাপি। ক্রমপুঞ্জীভূত লোকসান এক হাজার ৭১৯ কোটি টাকা। ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ৯৮ শতাংশ ঋণ খেলাপি। এ ছাড়া লোকসান এক হাজার ১৭ কোটি টাকা। বিআইএফসির ৯৭ দশমিক ৩০ শতাংশ ঋণখেলাপি এবং লোকসান এক হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের তিন হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা ঋণের ৯৬ শতাংশ খেলপি। ক্রমপুঞ্জীভূত লোকসান চার হাজার ২১৯ কোটি টাকা। পিপলস লিজিংয়ের ৯৫ শতাংশ খেলাপি, লোকসান চার হাজার ৬২৮ কোটি টাকা। আভিভা ফাইন্যান্সের দুই হাজার ৪৩০ কোটি টাকা বা ৮৩ শতাংশ খেলাপি। লোকসান তিন হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। প্রিমিয়ার লিজিংয়ের ৯৮৪ কোটি টাকা বা ৭৫ শতাংশ খেলাপি, লোকসান ৯৪১ কোটি টাকা। জিএসপি ফাইন্যান্সের ৫১৫ কোটি টাকা বা ৫৯ শতাংশ খেলাপি, লোকসান ৩৩৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া প্রাইম ফাইন্যান্সের ৫৩৪ কোটি টাকা বা ৭৮ শতাংশ ঋণখেলাপি। ক্রমপুঞ্জীভূত লোকসান ৩৫১ কোটি টাকা।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর পর্যালোচনা প্রতিবেদন তৈরির জন্য গত জানুয়ারিতে একটি কমিটি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই কমিটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাইসেন্স পাওয়া ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সূচক পর্যালোচনা, ঋণের প্রকৃত অবস্থা নিরূপণ, তারল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং সম্পদ দায়ের পরিমাণের ভিত্তিতে ২০টি প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে। সমস্যাগ্রস্ত অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো– ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, হজ ফাইন্যান্স কোম্পানি, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এবং সিভিসি ফাইন্যান্স।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০২৩ সালে প্রণীত ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠান অবসায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই আইনের ৭(১) ধারা অনুযায়ী মোট ৯টি কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল হতে পারে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে উল্লেখিত (ঘ) আমানতকারীর স্বার্থ পরিপন্থী ব্যবসা পরিচালনা এবং (ঙ) আমানতকারীর দায় পরিশোধে সম্পদের অপর্যাপ্ততায় লাইসেন্স বাতিলের সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া (চ) উপধারায় মূলধন সংরক্ষণ করতে না পারলে লাইসেন্স বাতিল করা যাবে। লাইসেন্স বাতিলের আগে ৭(২) ধারা অনুযায়ী ১৫ দিনের সময় দিয়ে নোটিশ দিতে হবে।
জানা গেছে, একীভূত করার আগে আইনগত বাধ্যবাধকতা মেনে গত ২২ মে কেন লাইসেন্স বাতিল করা হবে না জানতে চেয়ে পরিচালনা পর্ষদকে নোটিশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নোটিশ পাওয়ার ১৫ দিনের জন্য জবাব দিতে বলা হয়। ওই নোটিশে বলা হয়, ‘আপনাদের প্রতিষ্ঠানের ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরভিত্তিক বিবরণী পর্যালোচনা করে আমানতকারীর দায় পরিশোধে সম্পদের অপর্যাপ্ততা, শ্রেণিকৃত ঋণের উচ্চহার ও ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হয়েছে। এসব ব্যর্থতার ফলে ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন ২০২৩ এর ৭(১) ধারার (ঘ), (ঙ) ও (চ) উপধারাসমূহ কেন লঙ্ঘিত হয়নি ব্যাখ্যা দিতে হবে। এ ছাড়া ৭(২) ধারা অনুযায়ী কেন লাইসেন্স বাতিল করা হবে না সে বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলো।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের মোট ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট ঋণ রয়েছে ৭৫ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এসব ঋণের বিপরীতে বন্ধকি সম্পদের মূল্য ৩৬ হাজার ৬৮ কোটি টাকা। ডিসেম্বর পর্যন্ত সমস্যাগ্রস্ত ২০ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ২৫ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ২১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। এসব প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের যা ৮৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। তাদের বন্ধকি সম্পত্তির মূল্য মাত্র ছয় হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। মোট ঋণের যা ২৬ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানগুলোর পুঞ্জীভূত লোকসান ২৩ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা। মূলধন ঘাটতি ১৯ হাজার ২১৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে, তুলনামূলক ভালো হিসেবে চিহ্নিত ১৫টি প্রতিষ্ঠানের ৪৯ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি মাত্র তিন হাজার ৬২৭ কোটি টাকা। মোট ঋণের যা ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ। বন্ধকি সম্পত্তির মূল্য ২৯ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। এ হিসাবে মোট বন্ধকি সম্পত্তির প্রায় ৮১ শতাংশ ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোর। গত বছর এসব প্রতিষ্ঠান মুনাফা করেছে এক হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। তাদের মূলধন উদ্বৃত্ত রয়েছে ছয় হাজার ১৮৯ কোটি টাকা।
সব মিলিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ৪৮ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা আমানত এবং অন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ ১৮ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট আমানতের মধ্যে সমস্যাগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের আমানত ২২ হাজার ১২৭ কোটি টাকা এবং অন্য ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ধার পাঁচ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে খারাপ প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যক্তি আমানত রয়েছে পাঁচ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭৮৯ কোটি টাকা আমানতের বিপরীতে ঋণ নিয়েছেন গ্রাহক। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের নিট ব্যক্তি আমানত চার হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন বা একীভূতকরণের জন্য প্রাথমিকভাবে এ পরিমাণ তহবিল দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে।
কাফি