পরিবার ছাড়াই ঈদ কাটে তাদের

কোলাহল পরিপূর্ণ ক্যাম্পাস উচ্ছাসিত পরিবেশ বজায় থাকে। তবে ঈদে ক্যাম্পাস হয়ে উঠে নির্জনতার কেন্দ্রবিন্দু। এ নির্জনতায় সবসময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে আনসার সদস্যদবৃন্দ। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দায়িত্বের পিছনে লুকিয়ে আছে স্বজনের সাথে ইদ করতে না পারার কষ্ট। দেশের দক্ষিণবঙ্গের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) নিরাপত্তা প্রহরী তথা আনসার সদস্যদের কথা।

কখনো মামা হিসেবে, কখনো ভাই আবার কখনো আঙ্কেল পরিচয়ে শিক্ষার্থীদের আস্থাভাজন হন। দায়িত্বের মশাল কাঁধে নিয়ে ক্যাম্পাসকে ছন্দময় রাখছেন তারা। দায়িত্ব পালনে বিন্দুমাত্র অবহেলা করেন না। ঈদে ক্যাম্পাস ছুটি হলে তাদের দায়িত্ব আরও কয়েকগুণে বেড়ে যায়। দায়িত্বের জালে আটকে থাকায় নিরবে-নিভৃতে, হাসিমুখে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। পরিচিতদের দেখছেন এবং হাসিমুখে বিদায় দিচ্ছেন। এ যেন একা রেখে চলে যাওয়া তীব্র বেদনা।

সামনে অপেক্ষা করছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। সবাই বাড়ির উদ্দেশ্যে আস্তে আস্তে ক্যাম্পাস ছেড়ে যাচ্ছে। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা ও সময় কাটানো উদ্দ্যেশ্য। কিন্তু তাদের বাসায় ফেরা হয় না। ক্যাম্পাস যেনো তাদের পরিবার। এখানে যে তাদের সহকর্মীদের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে হবে ঈদের আনন্দ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটি কালীন সময়ে মোট ৮৮ জন আনসার সদস্য তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। এরমধ্যে ঈদের ছুটি কেউই পায়নি। যারা ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন তারা হয়তো পরিবারের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারবে না ফলে সহকর্মীদের সাথে তাদের ঈদ কাটবে। প্রায় প্রতিবছর সন্তান ও পরিবার ব্যতিত বিষাদময় ইদ কাটে তাদের। ঈদ ব্যাতিত অন্যান্য সময়ে পরিবারের সাথে সময় কাটানোর জন্য তাদের ছুটি বের করে নিতে হয়।

এই ঈদে বাড়ি ফেরা আনসার সদস্য অলক অর্থসংবাদকে বলেন, ‘সবারই মন চায় পরিবারের সাথে এই ঈদের সময়টুকু কাটাইতে। কিন্তু আমাদের দায়িত্বের জায়গা থেকে সেটা হয়ে উঠে না। আমাদের দায়িত্ব তো পালন করতে হবে। আমার পরিবারে আপনার মামী সহ ছেলেমেয়ে রয়েছে তাদের কথা চিন্তা করেও খারাপ লাগে। কিন্তু কিছু করার নেই আসলে সব মিলিয়ে আমাদের কাজের মধ্যে আনন্দ খুঁজে নিয়েছি। এখন আপনাদের ভার্সিটি আমার দ্বিতীয় পরিবার।’

আনসার সদস্য ইব্রাহিম বলেন , ‘সব দুঃখ-কষ্ট মাটি চাপা দিয়ে পরিবারের জন্য টাকা ইনকাম করতে আর শত কিলোমিটার দূরে। কিন্তু দেখেন, এই পরিবার ছেড়েই ঈদ করতে হচ্ছে আমাদের। আমি গত কয়েক বছর যাবত পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারি না। কারণ ঈদে বাড়ি যাওয়া হয় না। এমনিতে ঈদের পর গিয়ে দেখা করবো সবার সাথে। তাতে কি আর ঈদের আনন্দ পাওয়া যায় মামা? আমাগো কি পরিবারের সাথে ঈদ করতে ইচ্ছা করে না? কিন্তু ডিউটি দিবে কে তখন!

নিরাপত্তার সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সিকিউরিটি ইনচার্জ মোঃ আব্দুস সালাম অর্থসংবাদকে বলেন, আমাদের এখন এই ছুটিতে ৮৮ জন আনসার সদস্য কর্মরত আছেন। ক্যাম্পাস যতদিন ছুটিতে থাকবে আমাদের নিরাপত্তায় কোনো ঘাটতি রাখবো না ইনশাআল্লাহ।

এবার ইবিতে পরিবার ছাড়া ঈদ পালন করবে ৮৮ জন আনসার সদস্য। ঈদে সবাই চায় তার পরিবারের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে। কিন্তু ফেরা হচ্ছে না বাসায়। দায়িত্বের দায়বদ্ধতা থেকেই ঈদের আনন্দ বিসর্জন দিয়ে ক্যাম্পাসকে নিরাপদে রাখতে হচ্ছে। তাদের এ আত্মত্যাগ মনে করিয়ে দেয় মানুষ মানুষের জন্য। কেও অন্য একজনের আনন্দের জন্য নিজের সুখটাও বিসর্জন দেয় কখনো কখনো। এটাই পৃথিবীর নিয়ম।

এমআই

শেয়ার করুন:-
শেয়ার