পুঁজিবাজার
সোনালী লাইফের সাবেক চেয়ারম্যানের আর্থিক অনিয়ম তদন্তে প্রমাণিত

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও তার পরিবারের সদস্য অন্যান্য পরিচালকদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিলো। এ অনিয়ম ও দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কতৃপক্ষ (আইডিআরএ) নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘হুদাভাসি চৌধুরী এন্ড কোং’ কে নিয়োগ দিয়েছিলো। অবশেষে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও অন্যান্য পরিচালকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।
সম্প্রতি আইডিআরএ থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি সোনালী লাইফের চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণে আইডিআরএ’র চিঠিতে বলা হয়, কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদকে সাসপেন্ড করে প্রশাসক নিয়োগ দিতে হবে। প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে তাদের কোনো বক্তব্য থাকলে তা আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানাতে হবে। অথবা মৌখিকভাবে শুনানি করতে চাইলে আগামী ১৮ এপ্রিল সকাল ১১টায় আইডিআরএ হাজির হয়ে মৌখিকভাবে শুনানি করতে পারবে।
এতে আরও বলা হয়, কোম্পানির মূলধন বৃদ্ধির জন্য উদ্যোক্তা পরিচালকদের মধ্যে প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যের ১ কোটি ৫ লাখ শেয়ার ইস্যুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২০২৮ সালের ১৪ জুন নগদ অর্থের বিনিময়ে উক্ত শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন প্রদান করে। কিন্তু পরিচালক নূর এ হাফজা, ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া, রূপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, শাফিয়া সোবহান চৌধুরী ও শেখ মোহম্মদ ড্যানিয়েলের কাছ থেকে কোনো টাকা গ্রহণ না করেই তাদের নামে প্রতিটি ১০ টাকা করে মোট ৯ লাখ ১৬ হাজার ৫০ হাজার টাকার শেয়ার ইস্যু করা হয়েছে। অন্যদিকে মায়া রাণী রায়, আহমেদ রাজীব সামদানী ও হোদা আলী সেলিমের কাছ থেকে শেয়ার প্রতি ২০ টাকা মূল্য গ্রহণ করা হয়েছে।
অপরদিকে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের এফডিআরের বিপরীতে সাউথ বাংলা ব্যাংকে বিনা প্রয়োজনে এসওডি হিসাব খুলে ঋণের ৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা উত্তোলন করে। পাশাপাশি একই ব্যাংকে কোম্পানির সঞ্চয়ী হিসাব থেকে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকাসহ মোট ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। পরে সাউথ বাংলা ব্যাংকেই কোম্পানির আরেকটি হিসাবে জমা করা হয়। এই টাকা উল্লেখিত পরিচালকদের শেয়ার ক্রয়ের মূল্য হিসেবে দেখানো হয়।
অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরে চিঠিতে আরও বলা হয়, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস তার ছেলে মোস্তফা কামরুস সোবহান ও মেয়ে ফৌজিয়া কামরুন তানিয়ার কাছে থেকে ২৬ লাখ ৮০ হাজার শেয়ার, মোস্তফা কামরুস সোবহানের স্ত্রী শাফিয়া সোবহান চৌধুরীর কাছ থেকে ৩ লাখ শেয়ার, তাসনিয়া কামরুন অনিকার স্বামী শেখ মোহম্মদ ড্যানিয়েলের কাছ থেকে ১২ লাখ এবং ফজিলাতুননেসা রুপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি থেকে ৬ লাখ ২৫ হাজার শেয়ার লাভ করে পরিচালক হন।
পরবর্তীতে মোস্তফা গোলাম কুদ্দস ১৪ লাখ ৮০ হাজার শেয়ার তার মেয়ে ফৌজিয়া কামরুন তানিয়াকে ও ২ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার স্ত্রী ফজিলাতুননেসাকে হস্তান্তর করে। একইসঙ্গে শাফিয়া সোবহান চৌধুরী তার স্বামী মোস্তফা কামরুস সোবহানকে ৬ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার হস্তান্তর করে কোম্পানির আর্টিকেল অব এসোসিয়েশনের ৯০(জে) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ন্যূনতম শেয়ার বজায় রাখেন। এর মাধ্যমে পরিবারের ৭ জন সদস্য কোম্পানির বোর্ডে পরিচালক রেখে পারিবারিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস অনিয়মের সুযোগ তৈরি করেছেন বলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস প্রতি মাসে ৩ কোটি টাকা হিসেবে মোট ১৮ কোটি টাকা নিয়েছেন। এই টাকা তিনি নিয়েছেন তার নিজের প্রতিষ্ঠান ড্রাগন সোয়েটারের নামে। পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছাড়াই তিনি অবৈধভাবে এসব টাকা নিয়েছেন। এছাড়া মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন কম্যুনিকেশন লিমিটেড, ড্রাগন সোয়েটার লিমিটেড, ড্রাগন ইনফরমেশন টেকনোলজি, ইম্পেরিয়াল সোয়েটার লিমিটেড ও ড্রাগন সোয়েটার ও স্পিনিং লিমিটেডকে বিভিন্ন সময়ে ১৪১ কোটি ৫৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, আইডিআরএ’র অনুমোদনের আগে এ ধরনের টাকা পরিশোধ অবৈধ। প্রকৃতপক্ষে কোম্পানির ১৪১ কোটি ৫৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে অবৈধভাবে প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি জমি বা ভবন ক্রয়ের অগ্রিম হিসেবে বৈধতা দেয়ার অপপ্রয়াস নেয়া হয়েছে।
এদিকে সোনালী লাইফের তহবিল থেকে ২০২১-২৩ মেয়াদে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন ইম্পেরিয়াল স্যুটস এন্ড কনভোকেশন সেন্টারকে আপ্যায়ন বাবদ ১ কোটি ৭৮ লাখ ৬২ হাজার ৫৯২ টাকা, ড্রাগন ইনফরমেশন টেকনোলজি ও কম্যুনিকেশন লিমিটেডকে ইআরপি মেইনটেনেন্স ও সোয়েটার ক্রয় বাবদ ৩ কোটি ৪২ লাখ ৬ হাজার ২২৫ টাকা এবং ড্রাগন সোয়টার লিমিটেডকে সোয়েটার ক্রয় বাবদ ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। অর্থাৎ এই তিন বছরের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠঅনে অবৈধভাবে মোট ৭ কোটি ৮৫ লাখ ৬৮ হাজার ৮১৭ টাকা দেওয়া হয়েছে।
আইডিআরএ’র চিঠিতে বলা হয়, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস নিজে প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা অবৈধভাবে বেতন নিয়েছেন। একইসঙ্গে তার পরিবারের ৬ সদস্য যথা- ছেলে মোস্তফা কামরুস সোবহান প্রতি মাসে ৩ লাখ টাকা, ছেলের বউ শাফিয়া সোবহান চৌধুরী প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা, স্ত্রী ফজলুতুননেসা প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা, মেয়ে ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা, মেয়ে তাসনিয়া কামরুন অনিকা প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা ও মেয়ের জামাই শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েল প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা এবং আরেকজন সাবেক চেয়ারম্যান নুর এ হাফজা প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা করে ৮ পরিচালক অবৈধভাবে বেতন হিসাবে এ পর্যন্ত মোট ২ কোটি ২৪ লাখ টাকা নিয়েছেন। যা নগদ উত্তোলন করে তাদের ব্যাংক হিসাবে জমা দেয়া হয়েছে।
নিজ পরিবারের সদস্য পরিচালকদের মাসিক বেতন বাবদ নেয়া হয়েছে ২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। অবৈধভাবে বিলাসবহুল অডি কার ক্রয়ে খরচ করা হয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। গাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে বোর্ডের অনুমোদন নেই। এছাড়া গাড়ির ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় কোম্পানির অর্ধবার্ষিক সভায় আলোচনা ও এজিএমে পেশ করার বিধান থাকলেও তা করা হয়নি বলেও নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
অপরদিকে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের পরিবারের সদস্য পরিচালকদের অতিরিক্ত ডিভিডেন্ড দেয়া হয়েছে ১ কোটি ৬০ লাখ ১০ হাজার ৭৫০ টাকা। বিদেশে চিকিৎসা, শিক্ষা, ভ্রমণ ব্যয় ১ কোটি ৫৪ লাখ ৯০ হাজার ৮শ’ টাকা। গ্রুপ বীমা পলিসি থেকে ড্যানিয়েলকে অবৈধ কমিশন দেয়া হয়েছে ৯ লাখ টাকা।
আইপিও খরচ, ঋণ সমন্বয়, অনুদান, এসি ক্রয়, কোরবানির গরু ক্রয়, বিদেশ ভ্রমণ, পলিসি নবায়ন উপহারের নামে নেয়া হয়েছে ৮ কোটি ২৬ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫৯ টাকা। অফিস ভাড়ার নামে ড্রাগন আইটিকে প্রদান করা হয়েছে ১১ কোটি ৯৪ লাখ ২০ হাজার ১৭ টাকা। সম্পূর্ণ ইম্পেরিয়েল ভবনের ইউটিলিটি বিল পরিশোধ ১ কোটি ৭২ লাখ ৪২ হাজার ২২৩ টাকা। ড্রাগন সোয়েটার ও স্পিনিং লিমিটেডের ট্যাক্স পরিশোধ ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, তদন্ত কার্যক্রম কার্যপরিধির মধ্যে সীমিত রেখে নমুনা ভিত্তিক যাচাইয়ের ফলে সকল অনিয়মের তথ্য এ প্রতিবেদনে আসেনি। পূর্ণাঙ্গ চিত্রের জন্য কোম্পানিটির বিস্তারিত নিরীক্ষা প্রয়োজন। কোম্পানির অসম্পূর্ণ তথ্য সংরক্ষণ বা তথ্য গোপন, অস্বচ্ছ হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি, অভ্যন্তরীণ কন্ট্রোল সিস্টেমের অনুপস্থিতি কোম্পানির অর্থ আত্মসাতের সহায়ক অবস্থা তৈরী করেছে।
বছরে গড়ে ২২ কোটি বা মাসে প্রায় ২ কোটি টাকা পেটি ক্যাশ হিসেবে ব্যয় হয়েছে এবং অনেক এককালীন বড় অংকের লেনদেন ক্যাশ চেকে হয়েছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনী ও অর্থ তছরুপের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ব্যাংক সিগনেটরিরা প্রায় সকলেই একই পরিবারের সদস্য যার ফলে তাদের স্বাক্ষরিত চেকের মাধ্যমে বেশিরভাগ অবৈধ লেনদেন হয়েছে।
এছাড়া আরও বলা হয়, অবৈধভাবে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির তহবিল থেকে বের করে নেয়া অর্থের পরিমাণ মোট ১৮৭ কোটি ৮৪ লাখ ১৫ হাজার ৯৬৬ টাকা। এর মধ্যে পরিচালকদের নামে শেয়ার ক্রয় করতে তহবিল থেকে নেয়া হয়েছে ৯ কোটি ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। জমি বা ভবন ক্রয়ের অগ্রিম দেখিয়ে অবৈধভাবে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে সোনালী লাইফের তহবিল থেকে অবৈধভাবে দেয়া হয়েছে ১৪১ কোটি ৫৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। আপ্যায়ন, ইআরপি মেইনটেনেন্স এবং সোয়েটার ক্রয় বাবদ সাবেক এ চেয়ারমানের প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে ৭ কোটি ৮৫ লাখ ৬৮ হাজার ৮১৭ টাকা।

পুঁজিবাজার
উত্তরা ব্যাংকের পরিচালকের শেয়ার ক্রয়ের ঘোষণা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের কোম্পানি উত্তরা ব্যাংক পিএলসির এক পরিচালক শেয়ার ক্রয়ের ঘোষণা দিয়েছেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, উত্তরা ব্যাংকের পরিচালক মো. আসিফ রহমান কোম্পানির ১ লাখ শেয়ার ক্রয়ের ঘোষণা দিয়েছেন।
আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ডিএসইর পাবলিক অথবা ব্লক মার্কেটে ঘোষিত এই শেয়ার ক্রয় সম্পন্ন করবে তিনি।
এসএম
পুঁজিবাজার
সূচক নিম্নমুখী, দুই ঘণ্টায় ১৭২ শেয়ারের দরপতন

সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের নেতিবাচক প্রবণতায় চলছে লেনদেন। এদিন প্রথম দেড় ঘণ্টায় লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৭২ কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, মঙ্গলবার (০৩ জুন) ডিএসইর লেনদেন শুরুর দুই ঘণ্টা পর অর্থাৎ বেলা ১২টা পর্যন্ত ডিএসইর প্রধান সূচক বা ‘ডিএসইএক্স’ ৮ দশমিক ৬২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪ হাজার ৬৮০ পয়েন্টে।
প্রধান সূচকের সঙ্গে শরিয়াহ সূচক বা ‘ডিএসইএস’ ১ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট কমে আর ‘ডিএস-৩০’ সূচক ৩ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট কমে যথাক্রমে ১০২১ ও ১৭৫১ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
আলোচ্য সময়ে ডিএসইতে মোট ১০৪ কোটি ২৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ১১৪টির, কমেছে ১৭২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৯৭ কোম্পানির শেয়ারদর।
এসএম
পুঁজিবাজার
ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের আয় কমেছে ৩৩ শতাংশ

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ঢাকা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ৩১ মার্চ,২০২৪ তারিখে সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি’২৪-মার্চ’২৪) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) কমেছে ৩৩ শতাংশের বেশি।
বুধবার (১৫ মে) অনুষ্ঠিত কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে আলোচিত প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর তা প্রকাশ করা হয়। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চলতি হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএসে) হয়েছে ৫০ পয়সা। গত বছর একই সময়ে ইপিএস হয়েছিল ৭৫ পয়সা।
গত ৩১ মার্চ,২০২৫ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ৩৬ টাকা ৫৬ পয়সা।
এসএম
পুঁজিবাজার
ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের লভ্যাংশ ঘোষণা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ঢাকা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড গত ৩১ ডিসেম্বর,২০২৪ সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটি আলোচিত বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদেরেক ১০ শতাংশ হারে নগদ লভ্যাংশ দেবে।
সোমবার (০২ জুন) অনুষ্ঠিত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে সর্বশেষ বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে লভ্যাংশ সংক্রান্ত এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, আলোচিত বছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২ টাকা ৪১ পয়সা, যা আগের বছর ২ টাকা ৮৪ পয়সা ছিল।
ঘোষিত লভ্যাংশ অনুমোদনের জন্য আগামী ৭ আগস্ট কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এর জন্য রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ জুলাই।
পুঁজিবাজার
প্রতিবারের মতো এবারও বাজেটকে অভিনন্দন জানালো ডিএসই

চরম সংকটে থাকা পুঁজিবাজার ঘিরে বাজেটে যে আশার আলো খুঁজছিলেন বিনিয়োগকারীরা, তা পূরণ হয়নি। টানা দরপতন আর কমে যাওয়া লেনদেনে বিপর্যস্ত পুঁজিবাজারে প্রত্যক্ষ কোনও প্রণোদনা না থাকায় বিনিয়োকারীদের হতাশা আরও বেড়েছে। বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিলো বাজেটে শেয়ারবাজারে গতি ফেরাতে কার্যকর ও স্পষ্ট উদ্যোগ থাকবে, থাকবে মূলধনি মুনাফা বা লভ্যাংশ আয়ে কর রেহাই। কিন্তু এসব কিছুই মেলেনি ঘোষিত বাজেটে। অথচ প্রতিবারের মতো ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটকে পুঁজিবাজারবান্ধব বলে মন্তব্য করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। ফ্যাসিস্ট সরকারের বাজেটেও বিনিয়োগকারীদের জন্য কার্যকরী কোনো উদ্যোগ না থাকলেও তখনও বাজেটকে অভিনন্দন জানিয়েছিলো ডিএসই। পুঁজিবাজারের মূল শক্তি বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো উদ্যোগ না থাকলেও প্রতিবার বাজেটকে সমর্থন ও অভিনন্দন জানানোকে-‘হয়তো ডিএসই কিছু না বুঝে নইলে সরকারকে খুশি করাতেই’ এমনটি করে বলে মন্তব্য করেছে শেয়ারবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ বাজার সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন। এর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ডিএসইর চেয়ারম্যান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অর্থ উপদেষ্টাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানায়। সেই সঙ্গে বাজেট পুঁজিবাজারবান্ধব বলে মন্তব্য করেন।
এরআগে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স আরোপ না করাসহ কয়েকটি দাবি করেছিলো ডিএসই। কিন্তু বাজেটে তার কোনটিই রাখা হয়নি। অথচ বাজেট ঘোষণার পরেই সমর্থন জানিয়ে অভিনন্দন জানায় ডিএসই। সেসময় ডিএসই জানায়, উন্নয়ন ও উৎপাদনমুখী কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্থনীতিকে গতিশীল করার কৌশল নিয়ে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে ২০৪১ সালের মধ্যে সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ, উন্নয়ন ও উৎপাদনমুখী পরিকল্পিত কর্মপন্থা ও ব্যবস্থাপনা কৌশল বাজেটে প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়াও, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেটকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, সরকার পুঁজিবাজারকে আন্তর্জাতিককরণের লক্ষ্যে নানাবিধ সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রস্তাবিত বাজেটে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পুঁজিবাজারের সহায়ক ইকোসিস্টেম ও সার্বিক সুযোগ সুবিধার উন্নয়ন করার জন্য আগের বছরের বাজেটের শেয়ারবাজারবান্ধব নীতি বলবত রাখায় ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে আবারো অভিনন্দন জানাচ্ছে।
এদিকে, দীর্ঘদিনের পতনে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ নেমে এসেছে পাঁচ বছর আগের অবস্থানে। রাজপথে নামা বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা আশা করেছিলেন, নতুন সরকারের বাজেটে বাজারকে চাঙা করতে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কিন্তু অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের বাজেট প্রস্তাবে প্রত্যক্ষভাবে বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনও উল্লেখযোগ্য প্রণোদনা দেখা যায়নি।
বাজেট পরবর্তী ডিএসইর প্রতিক্রিয়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সমালোচনা করে বলেন, ডিএসই বরাবরই সরকারের খুশি করতে ব্যস্ত। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য বাজেটে কোনো প্রকার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। তবুও ডিএসইিএটাকে পুঁজিবাজারবান্ধব বলে মনে করছে। এটি নতুন নয়, ডিএসই সুযোগকে কাজে লাগায়। এরআগেও ফ্যাসিস্ট সরকারের বাজেটেও কোনো প্রকার উদ্যোগ না রাখলেও এমনকি ডিএসইর প্রস্তাব না রাখলেও তাতে সমর্থন ও অভিনন্দন জানিয়েছিলো।
তবে বাজেটে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারে পার্থক্য বাড়ানো, ব্রোকারেজ হাউজের লেনদেনে উৎসে কর হ্রাস এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট কর কমানোর প্রস্তাব।
বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর করহার শর্তসাপেক্ষে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। আর অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার হবে সাড়ে ২৭ শতাংশ। তবে নির্ধারিত কিছু শর্ত পূরণ করলে এই ব্যবধান ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শর্ত হলো— সব ধরনের লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পন্ন করা এবং নির্ধারিত সীমার বেশি লেনদেন নগদে না করা।
ব্রোকারেজ হাউজের প্রতি ১০০ টাকার লেনদেনে বিদ্যমান ৫ পয়সা উৎসে কর কমিয়ে ৩ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি, মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট করহার ১০ শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ২৭ শতাংশে আনার ঘোষণা এসেছে বাজেটে।
তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব উদ্যোগ মূলত প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে প্রণোদনা হিসেবে বিবেচিত হলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীর সরাসরি উপকারে আসবে না। স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ মূলধনি মুনাফা ও লভ্যাংশ আয়ে কর অব্যাহতির প্রস্তাব দিলেও তা বিবেচনায় নেয়নি সরকার।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আগে তালিকাভুক্ত এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ব্যবধান ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু অর্থ উপদেষ্টা তা পুরোপুরি আমলে নেননি। ফলে বাজারে ভালো কোম্পানি আনার যে প্রয়াস, তাতে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাজার সংস্কারের নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তার বাস্তবায়ন চলছে ধীরগতিতে। এতে শেয়ারবাজারের মন্দা আরও প্রকট হয়েছে। বাজেট-পরবর্তী সময়ে বাজারে এসব ঘোষণার কী ধরনের প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।
এসএম