লাইলাতুল কদর হল পবিত্র রজনী। আল্লাহ তায়ালা কোরআন নাজিলের মধ্য দিয়ে এই রাতকে বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি মহিমান্বিত রাজনীতে। আর আপনি কি জানেন মহিমান্বিত রজনী কী? মহিমান্বিত রাজনী হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এ রজনীতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ এবং রূহ তাদের প্রতিপালকের আদেশত্রুমে অবতীর্ণ হয়। এবং ভোর উদিত হওয়ার আগ পর্যন্ত কেবল শান্তি আর শান্তি বিরাজ করে।’ (আল-কদর, আয়াত : ১-৫)
কদর রাতের ইবাদত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এই রাত পাওয়ার জন্য নবীজি সা. রমজানের শেষ দশক ইবাদতের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করতেন, যাতে কোনোভাবেই কদরের বরকত ও ফজিলত থেকে বঞ্চিত না হন।
কদরের রাতে ইবাদত গুজার বান্দাদেরকে ফেরেশতারা জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তির বাণী শুনিয়ে থাকেন। এবং নফল সালাত আদায়কারী মুমিনদের অতীতের সগীরা গুনাহগুলো মাফ করে দেওয়া হয়।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াব লাভের আশায় কদরের রাতে নফল সালাত আদায় ও রাত জেগে ইবাদত করবে আল্লাহ তার পূর্বের সকল সগীরা (ছোট) গুনা ক্ষমা করে দেন।’ (বুখারি, ১৯০১; মুসলিম : ৭৬০)
কিন্তু রমজানের কোন রাতটি শবে কদরের তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি কোরআন হাদিসে। তবে এ সম্পর্কে কিছু আলামত দেওয়া হয়েছে-
১. রাতটি গভীর অন্ধকারে ঢেকে যাবে না।
২. নাতিশীতোষ্ণ হবে। অর্থাৎ অতিরিক্ত গরম বা শীত থাকবে না।
৩.মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হতে থাকবে।
৪. সে রাতে ইবাদত করে মানুষ অপেক্ষাকৃত অধিক তৃপ্তিবোধ করবে।
৫. কোন ঈমানদার ব্যক্তিকে আল্লাহ স্বপ্নে হয়তো তা জানিয়েও দিতে পারেন।
৬. ওই রাতে বৃষ্টি বর্ষণ হতে পারে।
৭. সকালে হালকা আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে। যা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মত। (সহীহ ইবনু খুযাইমাহ: ২১৯০; বুখারি, ২০২১; মুসলিম: ৭৬২)
নবীজি রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে কদর তালাশ করতে বলেছেন।
আয়েশা রা.) বলেন, ‘নবীজি বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের সন্ধান কর।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০১৭, সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৬৯)
আবু বাকরা রা. এর কাছে একবার লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন, ‘আমি লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশ দিন ছাড়া অন্য কোনো রাতে অনুসন্ধান করব না।’
অর্থাৎ, লাইলাতুল কদর প্রতি বছর নির্দিষ্ট এক রাতে হতে পারে বা বিভিন্ন রাতেও হতে পারে। হতে পারে এক বছর ২১ তারিখে, আরেক বছর ২৩ তারিখে এবং অন্য আরেক বছর ২৫, ২৭ বা ২৯ তারিখে। আবার একই বছরে অঞ্চলভিত্তিক বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক একাধিক রাত লাইলাতুল কদর হতে পারে। যেমন বাংলাদেশে ২৭ তারিখ এবং সৌদি আরবে ২৯ তারিখ।
একবার আয়েশা (রা.) নবীজি কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা.), যদি আমি জানতে পারি যে কোন রাতটি লাইলাতুল কদর, তাহলে সে রাতে আমি কী বলব (কী দোয়া করব)?
নবীজি উত্তরে বললেন, ‘তুমি বলবে, (আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নী)
হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। কাজেই আমাকে ক্ষমা করে দিন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫১৩)
লাইলাতুল কদরে যেহেতু বান্দার দুআ কবুল ও গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয় তাই আমাদের উচিৎ একাগ্রচিত্তে দোয়া করা। বেশি বেশি ও বারবার দোয়া করা। আর এসব দোয়া হবে একাকী ও বিনম্র চিত্তে কবুল হওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে।