উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অনেকের ভোগক্ষমতা কমে যাওয়ায় চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চরম দারিদ্র্যসীমায় নেমে আসতে পারে দেশের প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ। বিশ্বব্যাংকের ম্যাক্রো পোভার্টি আউটলুক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। সংস্থাটির সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেটের অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, চলতি অর্থবছর বাংলাদেশে চরম দারিদ্র্যের হার বেড়ে মোট জনসংখ্যার ৫ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে যা ছিল ৪ দশমিক ৯ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের দেওয়া সংজ্ঞা অনুসারে, যাদের আয় দৈনিক ২ দশমিক ১৫ ডলারেরও কম, তারা চরম দরিদ্র। এই ধরনের জনগোষ্ঠীকে চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষও বলা হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য রেখা ব্যবহার করে চরম দারিদ্র্যের হার বের করা হয়। দারিদ্র্যের সবচেয়ে নাজুক অবস্থা এটি।
বিশ্বব্যাংক মনে করছে, চলতি অর্থবছর বাংলাদেশে চরম দারিদ্র্যের পাশাপাশি মাঝারি দারিদ্র্যের হারও বাড়তে পারে। মাঝারি দারিদ্র্যের হার পৌঁছতে পারে ২৯ দশমিক ৪ শতাংশে। গত অর্থবছর এ হার ছিল ২৯ দশমিক ৩ শতাংশ। যাদের দৈনিক আয় ২ দশমিক ১৫ ডলার বা তার বেশি হলেও ৩ দশমিক ১৫ ডলারের কম, তাদের মাঝারি দরিদ্র বলে গণ্য করা হয়।
এদিকে চলতি অর্থবছর শেষে গড় মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৬ শতাংশে ঠেকতে পারে। গত অর্থবছরে যা ছিল ৯ শতাংশের মতো।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ খানা আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২ অনুসারে, গত পাঁচ বছরে দেশে দারিদ্র্যের হার বেশ খানিকটা কমেছে। দারিদ্র্যের হার কমে হয়েছে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। যেটি ২০১৬ সালের জরিপে ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। কমেছে অতি দারিদ্র্যের হারও। ২০১৬ সালে এ হার ছিল ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২২ সালে তা কমে হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অনেক মানুষের ব্যক্তিগত ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে দারিদ্র্য হ্রাসের গতি থমকে গেছে। খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্য নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর ওপর বিশেষভাবে প্রভাব ফেলেছে। এ পরিবারগুলো তাদের আয়ের অর্ধেকেরও বেশি খাবারের পেছনে ব্যয় করে।
তবে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামীতে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে আসতে পারে। এতে ব্যক্তির ভোগক্ষমতা কিছুটা বাড়বে। সমস্যায় থাকা মানুষের জন্য খাদ্যপণ্যে সরকারের দেওয়া ভর্তুকির একটা সুফলও মিলবে। এ ছাড়া মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শেষ হলে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উদ্যেক্তাদের মধ্যে একটা আস্থাও কাজ করবে, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে কর্মসংস্থানে।
এমআই