আন্তর্জাতিক
যুক্তরাষ্ট্রের ভুট্টা সয়াবিন-গম রফতানি ৫ শতাংশ কমেছে

যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৩-২৪ বিপণন মৌসুমের শুরু থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ভুট্টা, সয়াবিন ও গম রফতানি আগের মৌসুমের তুলনায় ৫ শতাংশ কমেছে। মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) গ্রেইন ট্রান্সপোর্টেশন রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্র গত বছরের তুলনায় এবার অন্তত ১৯ শতাংশ বেশি ভুট্টা রফতানির লক্ষ্যমাত্রা হাতে নেয়। কিন্তু দেশটির শীর্ষ ভুট্টা ক্রেতা চীন এ বছর শস্যটির আমদানি প্রায় ৭২ শতাংশ কমিয়েছে। দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের বদলে ব্রাজিল থেকে কম দামে ভুট্টা আমদানি বাড়াচ্ছে। গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ব্রাজিল ৪ কোটি ৫২ লাখ টন ভুট্টা রফতানি করেছে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই পাঠানো হয়েছে চীনে।
এদিকে ব্রাজিল বড় একটি অংশই চীনে রফতানি করে দেয়ায় অন্য ভুট্টা আমদানিকারক দেশগুলো বিপাকে পড়েছে। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রকে শস্যটির রফতানি বাড়াতে সুযোগ করে দিয়েছে বলে জানান খাতসংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে মেক্সিকোয় যুক্তরাষ্ট্রের ভুট্টার চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে।
এ বছর সয়াবিনের রফতানি লক্ষ্যমাত্রাও ১৯ শতাংশ বাড়িয়ে নির্ধারণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ইউএসডিএর প্রাক্কলন অনুযায়ী, মৌসুমের শুরু থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত রফতানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ শতাংশ কমে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন রফতানি প্রধান পাঁচ বাজারেই কমেছে। এর মধ্যে মিসরে ৫২ শতাংশ, চীনে ২৫, জাপানে ৫ ও মেক্সিকোয় ২ শতাংশ কমেছে। মূলত ব্রাজিলে রেকর্ড উৎপাদনের কারণেই রফতানিতে এমন ধস নেমেছে।
যুক্তরাষ্ট্র এবার ৩ শতাংশ বাড়িয়ে গমের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। কিন্তু মৌসুমের শুরু থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত শস্যটির রফতানি ৯ শতাংশ কমেছে। রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৮ লাখ টন, যা গত মৌসুমের তুলনায় ৬১ শতাংশ বেশি, তবে তিন বছরের গড় রফতানির তুলনায় ১৮ শতাংশ কম।
ইউএসডিএ জানায়, ২০২৪-২৫ বিপণন মৌসুমে যুক্তরাষ্ট্রের ভুট্টা, সয়াবিন ও গম রফতানি বাড়বে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা সেদিকেই ইঙ্গিত করছে। এর মধ্যে ভুট্টা রফতানি ২ ও সয়াবিন ৯ শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া গম রফতানি বাড়তে পারে ৭ শতাংশ। সয়ামিল রফতানি বেড়ে রেকর্ড ১ কোটি ৬৫ লাখ টনে পৌঁছার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইউএসডিএ জানায়, প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো থেকেও এসব শস্যের সরবরাহ বাড়বে। ফলে রফতানি বাজারে প্রতিযোগিতাও তীব্র হবে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের হিস্যা সংকুচিত হয়ে পড়তে পারে।

আন্তর্জাতিক
আমিরাতে ‘লাইফটাইম গোল্ডেন ভিসা’ দেওয়ার খবরটি গুজব

বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকরা কোনো ধরনের বিনিয়োগ ছাড়াই সংযুক্ত আরব আমিরাতের ‘লাইফটাইম গোল্ডেন ভিসা’ পাবেন, সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ছড়ানো এমন খবরগুলো গুজব বলে জানিয়েছে আমিরাতের কর্তৃপক্ষ। কাউকে এ ধরনের গুজব ও ভুয়া বিজ্ঞাপনের ফাঁদে না পড়তে এবং কোনো পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাছে অর্থ প্রদান বা ব্যক্তিগত নথিপত্র জমা না দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে তারা।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) আমিরাতের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ওয়ামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এবং ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘নির্দিষ্ট কিছু জাতীয়তাবিশিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য আজীবন গোল্ডেন ভিসা’ দেওয়া হচ্ছে—এমন খবর সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
আমিরাতের ফেডারেল অথোরিটি ফর আইডেন্টিটি, সিটিজেনশিপ, কাস্টমস অ্যান্ড পোর্ট সিকিউরিটি (আইসিপি) এক বিবৃতিতে জানায়, দেশটির গোল্ডেন ভিসার জন্য যে শ্রেণি, শর্ত ও নিয়ম রয়েছে, তা আইনি কাঠামো, প্রযোজ্য আইন ও মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত। এসব তথ্য আইসিপির অফিশিয়াল ওয়েবসাইট বা স্মার্ট অ্যাপ্লিকেশনে বিস্তারিত পাওয়া যায়।
কর্তৃপক্ষ আরও স্পষ্ট করে জানায়, গোল্ডেন ভিসার আবেদন কেবল সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভেতরে সরকারি চ্যানেলগুলোর মাধ্যমেই করা সম্ভব। কোনো অভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদিত আবেদন প্রক্রিয়াকারী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।
বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি একটি বিদেশভিত্তিক কনসালটেন্সি অফিস ‘সব শ্রেণির মানুষ আজীবন গোল্ডেন ভিসা পেতে পারেন’—এমন দাবি করে কিছু বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং আমিরাত সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো ধরনের সমন্বয় ছাড়াই করা হয়েছে।
আইসিপি জানায়, তারা নিরাপদ ও স্বচ্ছ সেবা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সরকারি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেই সেবার মান উন্নয়নের কাজ করছে। একই সঙ্গে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কর্তৃপক্ষ সবাইকে অনুরোধ করেছে—যারা সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভ্রমণ, বসবাস বা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী, তারা যেন এ ধরনের গুজব ও ভুয়া বিজ্ঞাপনের ফাঁদে না পড়েন এবং কোনো পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাছে অর্থ প্রদান বা ব্যক্তিগত নথিপত্র জমা না দেন।
এর আগে, একাধিক ভারতীয় সংবাদম্যধমের খবরে দাবি করা হয়, বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকদের জন্য নতুন একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে কোনো ধরনের বিনিয়োগ ছাড়াই আজীবন বসবাসের সুযোগ পাবেন বাংলাদেশি ও ভারতীয় নাগরিকরা।
তবে আমিরাতের কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা এ ধরনের কোনো প্রকল্প চালু করেনি। এসব খবর পুরোপুরি ভুয়া।
আন্তর্জাতিক
শুল্ক নিয়ে কোনো ধরনের ছাড় বা সময়সীমা বদলাবে না: ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি করা পণ্যের ওপর ঘোষিত নতুন শুল্কহার কার্যকর হওয়ার সময়সীমা আর পেছাবে না বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, আগামী ১ আগস্ট থেকেই এসব শুল্ক পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক হবে এবং কোনো ধরনের ছাড় বা সময়সীমা বৃদ্ধির সুযোগ থাকবে না।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) নিজের ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টের এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, গতকাল যেসব দেশের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং আজ, আগামীকাল ও সামনের কিছুদিনেও যেসব চিঠি পাঠানো হবে, সবগুলোতে পরিষ্কার বলা আছে—শুল্ক সংগ্রহ শুরু হবে ২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে। এই তারিখে কোনো পরিবর্তন আসেনি এবং আসবেও না। অর্থাৎ, ১ আগস্ট থেকেই সব অর্থ পরিশোধযোগ্য হয়ে যাবে। কোনো ধরনের সময় বাড়ানো হবে না।
এর আগে, গত ৭ জুলাই ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৪টি দেশের ওপর আমদানি শুল্কের নতুন হার ঘোষণা করেন। এসব দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪০ শতাংশ শুল্ক পড়েছে মিয়ানমার ও লাওসের ওপর। বাংলাদেশকে ৩৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের কথা জানানো হয়েছে।
ট্রাম্পের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই দেশগুলোর বাণিজ্য সম্পর্ক ‘অসম’ এবং তাদের সঙ্গে বাণিজ্য ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতেই এই শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেই জানিয়েছেন, এই সময়সীমা ‘শতভাগ চূড়ান্ত নয়’। অর্থাৎ আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে কোনো সমঝোতা হলে শুল্কহারের পরিবর্তন হতে পারে।
আন্তর্জাতিক
গোল্ডম্যান স্যাক্সের সিনিয়র উপদেষ্টা হলেন ঋষি সুনাক

বিশ্বখ্যাত বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাক্সের সিনিয়র উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। ব্যাংক খাত ভূ-রাজনৈতিক ও নিয়ম-কানুনের অনিশ্চয়তায় থাকায়, অভিজ্ঞ এই নীতিনির্ধারকের যোগদান গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
গোল্ডম্যান স্যাক্সে ঋষি সুনাকের এই নিয়োগ একধরনের প্রত্যাবর্তনও বটে। ২০০০ সালে তিনি প্রথম গোল্ডম্যান স্যাক্স গ্রীষ্মকালীন ইন্টার্ন হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং ২০০১ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিতে বিশ্লেষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
গোল্ডম্যান স্যাক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ডেভিড সলোমন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই ভূমিকায় তিনি আমাদের বৈশ্বিক ক্লায়েন্টদের গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয়ে পরামর্শ দেবেন এবং সামষ্টিক অর্থনীতি ও ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তার বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্লেষণ শেয়ার করবেন।’
রয়টার্স জানায়, এই পদক্ষেপটি একটি সুপ্রতিষ্ঠিত ক্যারিয়ারধারার ইঙ্গিত দেয়। প্রাক্তন সরকারি কর্মকর্তারা প্রায়ই আর্থিক খাতে প্রবেশ করেন। তাদের নীতিগত অভিজ্ঞতা ও বৈশ্বিক সংযোগকে এই খাতে কৌশলগত সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এর আগেও যুক্তরাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী জর্জ অসবর্ন ব্ল্যাকরকে উপদেষ্টা হিসেবে এবং সাজিদ জাভিদ সেন্ট্রিকাস বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানে পার্টনার হিসেবে যোগ দেন।
বর্তমানে, ব্যাংকগুলো এমন অভিজ্ঞতাকে আরও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, কারণ তারা ক্রমশ জটিল হয়ে ওঠা বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ক্লায়েন্টদের গাইড করতে চায়।
সুনাক ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত অর্থমন্ত্রীর (চ্যান্সেলর অফ দ্য এক্সচেকার) দায়িত্বে ছিলেন।
২০২৪ সালে লেবার পার্টির কেয়ার স্টারমারের কাছে বড় ব্যবধানে হেরে যাওয়ার পর তিনি প্রধানমন্ত্রী এবং কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। বর্তমানে তিনি রিচমন্ড এবং নর্থালারটনের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
কাফি
আন্তর্জাতিক
৩৫শ বছরের পুরনো শহরের সন্ধান পেলেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুর উত্তরাঞ্চলের বারাঙ্কা প্রদেশে এক প্রাচীন শহরের সন্ধান পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। ‘পেনিকো’ নামের এই শহরটি প্রায় ৩৫০০ বছরের পুরোনো বলে মনে করা হচ্ছে।
রবিবার (৬ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পেনিকো ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র, যা প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলীয় জনগোষ্ঠীকে আন্দিজ পর্বতমালা এবং আমাজন জঙ্গলের সঙ্গে সংযুক্ত করত। শহরটি রাজধানী লিমা থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার উত্তর দিকে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬০০ মিটার (প্রায় ২০০০ ফুট) উঁচুতে অবস্থিত।
ধারণা করা হয়, শহরটি গড়ে উঠেছিল খ্রিস্টপূর্ব ১৮০০ থেকে ১৫০০ সালের মধ্যে— সে সময় মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ার পাশাপাশি পৃথিবীর অন্য প্রান্তেও প্রাচীন সভ্যতাগুলোও গড়ে উঠছিল।
গবেষকরা বলছেন, এই আবিষ্কার আমেরিকার প্রাচীনতম সভ্যতা ‘কারাল’ সম্পর্কে নতুন ধারণা দিতে পারে। বিশেষত, এই সভ্যতা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ধ্বংস হওয়ার পর কী হয়েছিল, তা বোঝার ক্ষেত্রে।
ড্রোনচিত্রে দেখা যায়, একটি পাহাড়ের ঢালে গোলাকৃতি একটি কাঠামো, যার চারপাশে রয়েছে মাটি ও পাথরের তৈরি ভবনের ধ্বংসাবশেষ। এখন পর্যন্ত সেখানে খনন করে পাওয়া গেছে ১৮টি প্রাচীন স্থাপনা। যার মধ্যে উপাসনালয়, বসবাসযোগ্য ঘরবাড়ি এবং ধর্মীয় কেন্দ্রও রয়েছে।
এসব ভবনে খুঁজে পাওয়া গেছে নানা ধর্মীয় সামগ্রী, মানুষের এবং পশুর মূর্তি এবং ঝিনুক ও পুঁতির তৈরি গয়না। মূলত পেনিকো শহরটি কারাল সভ্যতার মূল কেন্দ্রস্থল সুপে উপত্যকার কাছাকাছি অবস্থিত। সেখানে প্রায় ৫০০০ বছর আগে (খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সালে) আমেরিকার প্রাচীনতম শহর ‘কারাল’ গড়ে উঠেছিল।
কারাল শহরে রয়েছে ৩২টি স্মৃতিস্তম্ভ, যার মধ্যে রয়েছে বিশাল পিরামিড আকৃতির স্থাপনা, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং প্রাচীন নগর জীবনযাপন। বিশ্বাস করা হয়, এই সভ্যতা ভারত, মিসর, সুমের এবং চীনের মতো প্রাচীন সভ্যতাগুলোর সঙ্গে কোনো সংযোগ ছাড়াই নিজস্বভাবে গড়ে উঠেছিল।
প্রখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ ড. রুথ শ্যাডি ১৯৯০-এর দশকে কারাল আবিষ্কার করেছিলেন এবং পেনিকোর সাম্প্রতিক গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, “পেনিকো শহরটি বাণিজ্যিক যোগাযোগের জন্য একটি কৌশলগত স্থানে গড়ে উঠেছিল। এটি উপকূল, পাহাড় এবং জঙ্গলের জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিনিময়ের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করত।”
পেরুর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদ মার্কো মাচাকুয়াই বলেন, “পেনিকোর গুরুত্ব শুধু এর প্রাচীনত্বে নয় বরং এটি কারাল সভ্যতার ধারাবাহিকতারও প্রমাণ।”
উল্লেখ্য, পেরুতে এর আগেও বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার হয়েছে। যেমন আন্দিজ পর্বতের ইনকা দুর্গ ‘মাচু পিচু’ এবং উপকূলীয় মরুভূমির ‘নাজকা রেখা’। এখন পেনিকো আবিষ্কার এই ঐতিহাসিক ঐতিহ্যেই নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
আন্তর্জাতিক
এবার ব্রিকস সম্মেলনে থাকছেন না পুতিন-শি জিনপিং

ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওতে আজ রোববার পর্দা উঠছে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের। তবে প্রথমবারের মতো এ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। একই সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও সশরীরে এ সম্মেলনে হাজির থাকছেন না।
এবারের সম্মেলনে জোটটির সদস্যভুক্ত দেশগুলোর নেতারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কট্টর বাণিজ্যনীতি বা নতুন শুল্কনীতির কড়া সমালোচনা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া পশ্চিমা বিশ্বের আধিপত্য নিয়ে উদ্বেগ মোকাবিলায় কীভাবে নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা আরও দৃঢ় করা যায়, ব্রিকস নেতাদের আলোচনায় সে বিষয়টিও গুরুত্ব পেতে পারে। খবর আল-জাজিরার।
এদিকে, ২০১২ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আরোহনের পর ব্রিকসের কোনো শীর্ষ সম্মেলনে শি জিনপিং ছিলেন না, এমন নজির নেই। এবার রিওতে তার প্রতিনিধিত্ব করবেন চীনা প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াং।
অন্যদিকে, ২০২২ সালের শুরুর দিকে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের প্রেক্ষাপটে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। ব্রাজিল যেহেতু আইসিসির সদস্য দেশ, সেদিক থেকে পুতিন দেশটিতে গেলে তাকে গ্রেফতারে চাপে পড়তে পারে ব্রাসিলিয়া। ধারণা করা হচ্ছে, এ ধরনের জটিলতা এড়াতেই ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে সশরীরে থাকতে চাইছেন না প্রেসিডেন্ট পুতিন।
তবে শীর্ষ সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ এ দুই নেতার যোগদান না করা জোটটির অভ্যন্তরীণ সংহতি ও বৈশ্বিক প্রভাবকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে।
ব্রিকস দেশগুলো বরাবরই বলে আসছে, তারা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধের বেশি, মোট ভূমির ৩৬ শতাংশ ও বিশ্ব অর্থনীতির এক চতুর্থাংশের প্রতিনিধিত্ব করে। এ জোট নিজেদেরকে ‘গ্লোবাল সাউথের’ দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার একটি ফোরাম এবং পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন অর্থনৈতিক জোট জি-৭ এর প্রতিপক্ষ শক্তি হিসেবে বিবেচনা করে।
তবে পর্দার আড়ালে জোট দেশগুলোর মধ্যে বিভাজনও স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি বার্তা সংস্থার দাবি, গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা এবং ইরানের ওপর সাম্প্রতিক হামলা নিয়ে কিছু সদস্য দেশ জোটটিকে আরও সুদৃঢ় অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। তবে মধ্যপ্রাচ্য সংকট ইস্যুতে অখণ্ড অবস্থানে থাকার ক্ষেত্রে বিভাজন কাটাতে হিমশিম খাচ্ছে জোটটি।
এদিকে, ব্রিকসের এবারের শীর্ষ সম্মেলনে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ও মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি যোগ দিচ্ছেন, না প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র আল-জাজিরাকে এ তথ্য জানিয়েছে।
ব্রিকসের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা। এই পাঁচ দেশের নামের প্রথম অক্ষর নিয়েই ব্রিকস শব্দটি এসেছে। ২০০৯ সালে এ জোটের প্রথম সম্মেলন হয়। পরবর্তী সময়ে এর একে একে জোটের পূর্ণ সদস্য হয় মিশর, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
জোটটির ১০টি কৌশলগত অংশীদার দেশও রয়েছে এখন। গত বছর তৈরি করা এ ক্যাটাগরিতে রয়েছে বেলারুশ, কিউবা ও ভিয়েতনাম।