মার্চে সমুদ্রপথে চীন ও ভারতের তাপীয় কয়লা আমদানি বেড়ে তিন মাসের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। স্থানীয় বিদ্যুৎ খাতে ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা মেটাতে বিশ্বের শীর্ষ ক্রেতা দেশ দুটি আন্তর্জাতিক বাজারে কম দামের সুবিধা নিয়েছে। কম দামের কারণেই আমদানিতে এমন উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
পণ্যবাজারবিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান কেপলারের দেয়া তথ্য বলছে, চীন বিশ্বের শীর্ষ কয়লা উত্তোলক ও আমদানিকারক। মার্চে দেশটি সমুদ্রপথে ২ কোটি ৯৭ লাখ টন তাপীয় কয়লা আমদানি করে, যা ফেব্রুয়ারিতে আমদানীকৃত ২ কোটি ৩০ লাখ ৩০ হাজার টনের চেয়ে বেশি। পাশাপাশি গত বছরের মার্চের তুলনায়ও আমদানি বেড়েছে।
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) চীন ৮ কোটি ৬ লাখ ৪০ হাজার টন তাপীয় কয়লা আমদানি করে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আমদানি ১৭ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। চীনের সরকারি তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশটিতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ খাতে কয়লার চাহিদা বাড়ছে।
চীনের স্থানীয় বাজারে বর্তমানে অনেক বেশি দামেই তাপীয় কয়লা বিক্রি হচ্ছে। সোমবার প্রতি টনের মূল্য দাঁড়ায় ৮২৫ ইউয়ান (১১৪ ডলার)। বিপরীতে বিশ্ববাজারে তাপীয় কয়লার দাম অব্যাহত কমছে। ফলে স্থানীয়ভাবে উত্তোলন হওয়ার কয়লার বদলে আমদানীকৃত কয়লার ওপর বেশি নির্ভর করছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো।
আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) জানায়, চলতি বছর চীনে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ঘুরে দাঁড়াতে পারে। পাশাপাশি সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনও বাড়ছে। ফলে এ সময় দেশটিতে কয়লার ব্যবহার কমবে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।
আরগাস মিডিয়ার দেয়া তথ্য বলছে, প্রতি কেজিতে ৫ হাজার ৫০০ কিলোক্যালোরিসমৃদ্ধ অস্ট্রেলিয়ান কয়লা ২৮ মার্চ শেষ হওয়া সপ্তাহে টনপ্রতি ৮৭ ডলার ৩৭ সেন্টে রফতানি হয়েছে। ওই মাসের শুরুর দিকে এ কয়লার দাম ছিল টনপ্রতি ৯৬ ডলার ৬৬ সেন্ট।
অন্যদিকে প্রতি কেজিতে ৪ হাজার ২০০ কিলোক্যালোরিসমৃদ্ধ ইন্দোনেশিয়ান কয়লার মূল্য ৮ মার্চ শেষ হওয়া সপ্তাহে ৫৫ ডলার ৭০ সেন্টে নেমে আসে, এর আগের সপ্তাহে যা ছিল টনপ্রতি ৫৮ ডলার ১৭ সেন্ট।
কেপলার জানায়, বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক চাহিদা থাকায় মার্চে ভারত ১ কোটি ৫২ লাখ ১০ হাজার টন তাপীয় কয়লা আমদানি করে। ফেব্রুয়ারিতে আমদানির পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৪০ লাখ ৯০ হাজার টন। এছাড়া গত বছরের মার্চে আমদানি হয়েছিল ১ কোটি ৩৪ লাখ ১০ হাজার টন। প্রথম প্রান্তিকে আমদানি করা হয় ৪ কোটি ২৭ লাখ ৯০ হাজার টন, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আমদানি ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে কয়লার সরবরাহ চাহিদার চেয়েও বেশি। তার ওপর এবার শীতের তীব্রতা কম থাকায় হিটিং জ্বালানি হিসেবে এটির ব্যবহার কমেছে। উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোয় শীত শেষ হয়ে এলে যা আরো কমে যেতে পারে। বাড়তি সরবরাহের বিপরীতে ব্যবহার কমায় চলতি বছরে তাপীয় কয়লার বৈশ্বিক দাম নিম্নমুখী থাকবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।