ধর্ম ও জীবন
ইহরাম অবস্থায় যেসব কাজ নিষিদ্ধ

হজ ও ওমরার প্রধান ফরজগুলোর একটি হলো ইহরাম বাঁধা বা পুরুষের জন্য দুইটি সেলাইবিহীন সাদা কাপড় পরা এবং নারীদের জন্য নিজেরদে স্বাভাবিক পোশাক পড়া।
হজ-ওমরা পালনকারীদের মক্কার উদ্দেশে বের হওয়ার সময় মিকাত (নির্ধারিত স্থান) অতিক্রম করার আগে ইহরামের কাপড় পরে নিতে হয়। ইহরাম না পরে মিকাত অতিক্রম করা জায়েজ নয়।
হজ কিংবা ওমরার ইহরাম অবস্থায় হজ পালনকারীদের জন্য বেশ কিছু কাজ নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধ কাজগুলো তিনভাগে বিভক্ত। তাহলো-
১. এমন কিছু কাজ যা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য হারাম।
২. এমন কিছু কাজ যা শুধু পুরুষের জন্য হারাম।
৩. এমন কিছু কাজ যা শুধু নারীর জন্য হারাম।
নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য হারাম
সুগন্ধি ব্যবহার
ইহরামের কাপড়ে বা শরীরে ইহরাম গ্রহণের পর আতর বা সুগন্ধি লাগানো নিষেধ। ইয়ালা ইবনে উমাইয়্যা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলে (সা.) যখন জিঈররানা নামক স্থানে অবতরণ করলেন, তখন এক ব্যক্তি তার কাছে এলেন, লোকটির পরনে জাফরান মিশ্রিত এক ধরনের সুগন্ধিযুক্ত জুব্বা ছিল। রাসুল (সা.) তাকে বললেন, সুগন্ধির চিহ্ন দূর করো এবং জুব্বা খুলে ফেল। (মুসলিম, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৩৭৩)
ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধিযুক্ত তেল, জায়তুন, এমনকি তিলের তেলও লাগানো যাবে না। সুগন্ধি সাবান, পাউডার, স্নো, ক্রীম ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না। বিখ্যাত তাবেয়ি আতা (রহ.) বলেন, ইহরাম গ্রহণকারী তার শরীরে কিংবা কাপড়ে সুগন্ধিযুক্ত তেল লাগালে তার উপর কাফফারা ওয়াজিব হবে। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং: ১৪৮৩৩)
পৃথকভাবে সুগন্ধি জর্দা খাওয়াও নিষেধ। আর পানের সঙ্গে খাওয়া মাকরূহ। (মানাসিক: ১২১; আহকামে হজ: ৩৪)
বিখ্যাত তাবেয়ি কাসেম (রহ.) মুহরিমের জন্য খাবারের সঙ্গে সুগন্ধি জাফরান খাওয়া অপছন্দ করতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং: ১৩২৭৮)
নখ কাটা, শরীরের কোনো স্থানের চুল, পশম কাটা-উপড়ানো নিষেধ
আতা, তাউস ও মুজাহিদ রাহ. প্রমুখ বিখ্যাত তাবেয়িগণ বলেন, মুহরিম তার বগলের নিচের পশম উপড়ালে বা নখ কাটলে তার উপর ফিদয়া দেওয়া ওয়াজিব হবে। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং: ১৩৬০৪)
স্বামী-স্ত্রীর সহবাস
ইহরাম অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন বা স্ত্রীর সামনে এ সংক্রান্ত কোনো কথা বা কাজ করা নিষেধ। কোরআন মজিদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, হজ্বের মাসগুলি সুবিদিত। অতএব যে ব্যক্তি এ মাসগুলিতে হজ করা সি’র করে অতঃপর হজে না অশ্লীলতা আছে এবং না অসৎ কাজ এবং না ঝগড়া-বিবাদ। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৯)
এক ব্যক্তি তাওয়াফে জিয়ারতের পূর্বে স্ত্রীর সঙ্গে সহবাসে লিপ্ত হয়ে যায়। তাদের সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি একটি উট জবাই করার নির্দেশ দেন। (মুয়াত্তা মুহাম্মাদ, পৃষ্ঠা: ২৩৮)
যৌন কামনার সঙ্গে চুম্বন দেওয়া, স্পর্শ করা কিংবা জড়িয়ে ধরা
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-কে এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, আমি ইহরাম অবস্থায় কামভাবের সঙ্গে নিজ স্ত্রীকে চুম্বন করেছি। এখন আমার করণীয় কী? তিনি উত্তরে বললেন, তুমি একটি কোরবানি করো। (কিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মাদ, পৃষ্ঠা নং: ৫৩)
পশু শিকার
বন্য পশু শিকার বা শিকারীকে সহযোগিতা করা নিষিদ্ধ। কোরআন মজিদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, তোমাদের ওপর প্রাণী শিকার করা হারাম করা হয়েছে, যে পর্যন্ত ইহরাম অবস্থায় থাকো। (সুরা মায়িদাহ, আয়াত: ৯৬)
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ইহরাম অবস্থায় স্থলভাগের শিকারকৃত প্রাণী তোমাদের জন্য হালাল, যদি তা তোমরা নিজেরা শিকার না করো কিংবা তোমাদের উদ্দেশ্যে শিকার করা না হয়। (তিরমিজি, খণ্ড: ১, হাদিস নং: ১৭৩)
মাথার চুল মুণ্ডন করা বা ছোট করা কিংবা উঠিয়ে ফেলা
আল্লাহ বলেন- আর কোরবানি যথাস্থানে না পৌঁছা পর্যন্ত নিজেদের মস্তক মুণ্ডন করো না। আলেমরা, শরীরের সব চুলকে মাথার চুলের ওপর কেয়াস করেছেন। তাই ইহরাম অবস্থায় থাকা ব্যক্তির জন্য শরীরের কোনো চুল দূর করা জায়েয নয়।
ঝগড়া-বিবাদ, সাধারণ সময়েও নিষিদ্ধ
ইহরাম অবস্থায় আরো ভয়াবহ। কোরআন কারিমে বলা হয়েছে, হজের মাসগুলি সুবিদিত। অতএব যে ব্যক্তি এ মাসগুলিতে হজ করা স্থির করে, অতঃপর হজে না অশ্লীলতা আছে এবং না অসৎ কাজ এবং না ঝগড়া-বিবাদ। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৯৭)
জাবির ইবনে যায়েদ (রহ.) আল্লাহ তাআলার বাণী ‘এবং না ঝগড়া-বিবাদ’ প্রসঙ্গে বলেছেন, তোমার জন্য এই অবকাশ নেই যে, সঙ্গীর সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হবে এবং তাকে রাগান্বিত করবে। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং: ১৩৩৯৪)
ইহরাম অবস্থায় যেসব কাজ নিষিদ্ধ তাতে লিপ্ত হওয়া গুনাহ। এর কারণে হজ অসম্পূর্ণ হয়ে যায়। উপরন্তু কিছু বিষয় এমন রয়েছে যাতে লিপ্ত হলে ‘দম’ ওয়াজিব হয়। ইবরাহিম নাখাঈ (রহ.) বলেন, বলা হতো, যে ব্যক্তি হজে নিষিদ্ধ কোনো কাজ করলো, সে এর জন্য একটি পশু জবাই করবে। ’ মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ১৫১৯১)
সেলাই করা কাপড় পরা
পুরুষের জন্য শরীর বা কোনো অঙ্গের আকার অনুযায়ী তৈরিকৃত বা সেলাইকৃত কাপড় পরা নিষিদ্ধ। যেমন- পাঞ্জাবি, জুব্বা, শার্ট, সেলোয়ার, প্যান্ট, গেঞ্জি, কোট, সোয়েটার, জাঙ্গিয়া ইত্যাদি।
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করল, মুহরিম (ইহরাম পরিহিত) কী কী কাপড় পরতে পারবে? তখন তিনি বলেন, জামা-পাগড়ি, পাজামা, টুপি ও মোজা পরবে না। তবে জুতা না থাকলে চামড়ার মোজা গিরার নিচ পর্যন্ত কেটে পরতে পারবে। তোমরা এমন কোনো কাপড় পরিধান করো না যাতে ‘জাফরান’ বা ‘ওয়ারছ’ লেগেছে। (মুসলিম, খণ্ড: ০১, হাদিস নং: ৩৭২)
ইহরামের কাপড় ছিঁড়ে গেলে তা সেলাই করে কিংবা জোড়া দিয়ে পরা করা যাবে। তবে ইহরামের কাপড় এ ধরনের সেলাইমুক্ত হওয়াই ভালো। (রদ্দুল মুহতার, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৪৮১; শরহু লুবাবিল মানাসিক: ৯৮)
ইহরাম অবস্থায় সেলাইযুক্ত ব্যাগ ব্যবহার করা ও বেল্ট বাঁধা নিষিদ্ধ নয়। তাবেয়ি উরওয়া (রহ.) মুহরিমের জন্য টাকা-পয়সা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রক্ষার উদ্দেশে ব্যাগ ব্যবহার করা বৈধ মনে করতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং: ১৫৬৯৯)
তাউস (রহ.) বলেন, মুহরিম কোমরবন্দ (বেল্ট) ব্যবহার করতে পারবে। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং: ১৫৬৮৯)
মাথা ও মুখমণ্ডল আবৃত করা
পুরুষের জন্য মাথা ও মুখমণ্ডল আবৃত করা নিষেধ। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, মুখমণ্ডল ও তার উপরের অংশ মাথার অন্তর্ভুক্ত। অতএব ইহরাম গ্রহণকারী থুতনী থেকে উপরের দিকে আবৃত করবে না। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং: ১৪৪৫২)
হাড় ঢেকে যায় এমন জুতা
পুরুষের জন্য পায়ের পাতার উপরের উঁচু হাড় ঢেকে যায় এমন জুতা পরিধান করা নিষেধ। তাই এমন জুতা বা স্যান্ডেল পরতে হবে যা পরলে ওই উচু অংশ খোলা থাকে। (রদ্দুল মুহতার ২/৪৯০)
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা চাদর, লুঙ্গি ও চপ্পল পরে ইহরাম বাঁধবে। যদি চপ্পল না থাকে তবে চামড়ার মোজা গীরার নিচ পর্যন্ত কেটে পরিধান করবে। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং: ৪৮৮১)
নারীদের জন্য নিষিদ্ধ
>> নারীদের জন্য অলঙ্কার ও সাজ-সজ্জা প্রকাশ করা যাবে না।
>> হাত মোজা পরা যাবে না।
>> মুখমণ্ডলের উপর নিকাব (ফাটল বিশিষ্ট পর্দা) পরবে না এবং সামনে কাছে কোনো অপর পুরুষ না থাকলে মুখমণ্ডলও আবৃত করবে না।
কাপড় বা শরীরের উকূন মারা নিষিদ্ধ
বিখ্যাত তাবেয়ি ইকরামা (রহ.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, ইহরাম গ্রহণকারী তার কাপড়ে উকূন দেখতে পেলে কী করবে? উত্তরে তিনি বলেন, আলতোভাবে ধরে জমিনে রেখে দেবে, মেরে ফেলবে না। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং: ১৩২৯৭)

ধর্ম ও জীবন
জুমার দিনের ১০ আমল

মুসলমানদের জন্য জুমার দিনটি বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ। রাসুল (সা.) বলেছেন,
إِنَّ هَذَا يَوْمُ عِيدٍ جَعَلَهُ اللَّهُ لِلْمُسْلِمِينَ فَمَنْ جَاءَ إِلَى الْجُمُعَةِ فَلْيَغْتَسِلْ وَإِنْ كَانَ طِيبٌ فَلْيَمَسَّ مِنْهُ وَعَلَيْكُمْ بِالسِّوَاكِ
নিশ্চয় আল্লাহ এ দিনটিকে মুসলমানদের জন্য ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। তাই যে ব্যক্তি জুমার নামাজ আদায় করতে আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য। (সুনানে ইবনে মাজা: ৮৩)
জুমার সালাতের গুরুত্ব বোঝাতে রাসুল (সা.) বলেন,
من تَرَكَ ثلاث جمعٍ تهاوناً بها طبع الله على قلبه
যে ব্যক্তি অলসতা করে ধারাবাহিকভাবে তিনটি জুমার জামাতে অনুপস্থিত থাকে, আল্লাহ তা’আলা তার অন্তরে মোহর মেরে দেন। (সুনানে নাসাঈ: ১৩৭২) অর্থাৎ সেই অন্তর হেদায়াত পাওয়ার অযোগ্য হয়ে যায়।
জুমার নামাজে দেরি করে যাওয়া কিংবা দায়সারাভাবে জুমা আদায় করাও জুমার ব্যাপারে অলসতা হিসেবে গণ্য হতে পারে; তাই এ ব্যাপারে সবার সাবধান হওয়া উচিত।
জুমার দিন যে ১০টি আমল করবেন:
১. জুমার নামাজের প্রস্তুতি হিসেবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে ভালোভাবে গোসল করুন।
২. দাঁত ব্রাশ/ মিসওয়াক করুন, সম্ভব হলে সুগন্ধী ব্যবহার করুন এবং উত্তম পোশাক পরিধান করুন।
৩. জুমার নামাজের জন্য দ্রুত মসজিদে উপস্থিত হওয়ার চেষ্টা করুন। ইমাম খুতবা শুরু করার আগে অবশ্যই মসজিদে উপস্থিত হোন।
৪. ইমাম খুতবা শুরু করার আগে মসজিদে পৌঁছতে পারলে তাহিয়াতুল মসজিদ বা দুই রাকাত নফল সালাত আদায় করুন।
৫. ইমামের কাছাকাছি বসার চেষ্টা করুন। তবে মসজিদে পৌছতে দেরি হলে অন্যদের কষ্ট দিয়ে কাতার ডিঙ্গিয়ে সামনে যাবেন না; যেখানে জায়গা পাওয়া যায় সেখানেই বসে পড়ুন।
৬. মনযোগ দিয়ে খুতবা শুনুন। খুতবার সময় কথা বলবেন না। অন্য কাউকে চুপ থাকতে বলার প্রয়োজন হলে ইশারায় বলুন।
৭. উত্তমরূপে জুমার নামাজ আদায় করুন।
রসূল সা. বলেন,
مَنِ اغْتَسَلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَتَطَهَّرَ بِمَا اسْتَطَاعَ مِنْ طُهْرٍ، ثُمَّ ادَّهَنَ أَوْ مَسَّ مِنْ طِيبٍ، ثُمَّ رَاحَ فَلَمْ يُفَرِّقْ بَيْنَ اثْنَيْنِ، فَصَلَّى مَا كُتِبَ لَهُ، ثُمَّ إِذَا خَرَجَ الإِمَامُ أَنْصَتَ، غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الأُخْرَى
যে ব্যাক্তি জুমার দিন গোসল করে এবং যথাসম্ভব উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, তেল মেখে নেয় অথবা সুগন্ধি ব্যবহার করে, তারপর মসজিদে যায়, মানুষকে ডিঙ্গিয়ে সামনে যাওয়া থেকে বিরত থাকে, তার ভাগ্যে নির্ধারিত পরিমাণ নামাজ আদায় করে, ইমাম যখন খুতবার জন্য বের হন তখন চুপ থাকে, তার এ জুমা এবং পরবর্তী জুমার মধ্যবর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (সহিহ বুখারি: ৯১০)
৮. জুমার দিন বেশি বেশি দরূদ পাঠ করুন। রাসুল (সা.) বলেছেন,
إِنَّ مِنْ أَفْضَلِ أَيَّامِكُمْ يَومَ الجُمُعَةِ فَأَكْثِرُوا عَلَيَّ مِنَ الصَّلاةِ فِيهِ فَإِنَّ صَلاَتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَيَّ
তোমাদের দিনগুলির মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে জুমআর দিন। সুতরাং ঐ দিন তোমরা আমার উপর অধিকমাত্রায় দরূদ পড়। কেননা, তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়। (সুনানে আবু দাউদ: ১৫৩৩)
৯. আল্লাহর কাছে দু’আ করুন। জুমার দিনের যে কোনো একটি সময় আল্লাহ তা’আলা দু’আ করার সাথে সাথেই কবুল করে নেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একদিন রাসুল সা. জুমার উল্লেখ করে বলেছেন,
فِيهِ سَاعَةٌ لاَ يُوَافِقُهَا عَبْدٌ مُسْلِمٌ، وَهْوَ قَائِمٌ يُصَلِّي، يَسْأَلُ اللَّهَ تَعَالَى شَيْئًا إِلاَّ أَعْطَاهُ إِيَّاهُ ”. وَأَشَارَ بِيَدِهِ يُقَلِّلُهَا
এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যে কোন মুসলিম বান্দা যদি এ সময় নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহ্র কাছে কিছু চায়, তা হলে তিনি তাকে অবশ্যই তা দান করে থাকেন। রাসুল (সা.) হাত দিয়ে ইশারা করে বুঝিয়ে দিলেন যে, সে মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত। (সহিহ বুখারি: ৯৩৫)
১০. সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করুন। জুমার দিন সুরা কাহাফ তিলাওয়াতের ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন,
من قرأ سورة الكهف ليلة الجمعة أضاء له من النور فيما بينه وبين البيت العتيق
যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা আল কাহাফ পড়বে, তার তার জন্য পরবর্তী জুমা পর্যন্ত নুর হবে। (সহিহুল জামি: ৬৪৭০)
ধর্ম ও জীবন
হজ ও ওমরাহ নিয়ে বিশাল সুখবর

পবিত্র হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের জন্য যুগান্তকারী একটি সুবিধা চালু করেছে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়। এখন থেকে ইন্টারনেট বা মোবাইল ডেটা ছাড়াই সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ব্যবহার করা যাবে নুসুক অ্যাপ।
এই সুবিধা বাস্তবায়নে সৌদি টেলিকম কোম্পানি এসটিসি, মোবিলি এবং জাইনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করেছে মন্ত্রণালয়। খবর গালফ নিউজের।
সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহবিষয়ক মুখপাত্র ড. ঘাসান আল নুওয়াইমি বলেন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে হজ ও ওমরাহর যাত্রাপথ আরও সহজ, সাশ্রয়ী এবং ডিজিটালভাবে সাবলীল হবে। ইন্টারনেট ছাড়াই মিলবে বেশ কিছু সুবিধা। এগুলোর মধ্যে আছে আল রওদাহ আল শরীফায় প্রবেশের অনুমতিপত্র ইস্যু, হারামাইন হাই-স্পিড ট্রেনের টিকিট বুকিং, নুসুক ম্যাপের মাধ্যমে পথনির্দেশনা, যেকোনো জিজ্ঞাসা বা রিপোর্ট জমা দেওয়া ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ‘নুসুক এআই’ সহায়তা।
নুসুক অ্যাপের সিইও আহমেদ আল মাইমান বলেন, এই সুবিধা ভ্রমণকে আরও নিরাপদ ও দক্ষ করে তুলবে, ভিড় নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে এবং হজযাত্রীদের হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা কমাবে।
সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা একটি সর্বজনীন, প্রতিবন্ধকতাহীন প্রযুক্তিগত অবকাঠামো গড়ে তুলতে কাজ করছে, যাতে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে আগত হজ ও ওমরাহ যাত্রী নির্বিঘ্নে সব ডিজিটাল সুবিধা ভোগ করতে পারেন।
ধর্ম ও জীবন
জোহর-আসর নামাজের কেরাত আস্তে পড়তে হয় কেন?

জোহর ও আসরের নামাজে কিরাত আস্তে পড়তে হয়। আর মাগরিব, এশা এবং ফজরের নামাজে কিরাত জোরে বা উচ্চস্বরে পড়া হয়। এটা শরিয়ত কর্তৃক আল্লাহর আদেশ। আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর আমল দ্বারা প্রমাণিত।
ফলে এই অনুযায়ী আমল করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য কর্তব্য। তবে কেন এই বিধান এসেছে, তা জানা থাকতে হবে— বিষয়টা এমন নয়। শুধু এতটুকু জানা ও মানা উচিত যে, এটি মহান আল্লাহ তাআলার হুকুম। আল্লাহর রাসুল (সা.) এভাবেই নামাজ পড়েছেন।
জোহর-আসর নামাজে কিরাত আস্তে পড়ার দলিল
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে তিনি বলেন, ‘তিনি প্রত্যেক নামাজে তেলাওয়াত করতেন। তিনি যে নামাজগুলোতে আমাদের শুনিয়ে তেলাওয়াত করতেন; সেসব নামাজে আমরাও তোমাদের শুনিয়ে তেলাওয়াত করি। আর তিনি যেসব নামাজে আমাদের না শুনিয়ে তেলাওয়াত করতেন, সেসব নামাজে আমরাও তোমাদের না শুনিয়ে তেলাওয়াত করি।’ (বুখারি, হাদিস : ৭৩৮; মুসলিম, হাদিস : ৩৯৬)
আবু মামার (রহ.) সাহাবি খাব্বাব (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, রাসুল (সা.) জোহর ও আসরে কিরাত পড়তেন কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ পড়তেন। আবু মামার পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কীভাবে বোঝা যেত? তিনি উত্তরে বলেন, রাসুল (সা.)-এর দাড়ি নড়াচড়া দেখে বোঝা যেত। (বুখারি, হাদিস : ৭৬০)
আল্লামা ইবনে কুদামা ও ইমাম নববি (রহ.)-এর বক্তব্য
ইমাম নববী বলেন, ‘সুন্নত হচ্ছে— ফজর, মাগরিব ও এশার দুই রাকাতে এবং জুমার নামাজে উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করা। আর জোহর ও আসরের নামাজে এবং মাগরিবের তৃতীয় রাকাতে এবং এশার তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে চুপেচুপে তেলাওয়াত করা। সুস্পষ্ট সহিহ হাদিসের সঙ্গে মুসলিম উম্মাহর ঐকমত্যের ভিত্তিতে এসব বিধান সাব্যস্ত।’ (আল-মাজমু, খণ্ড : ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৮৯)
ইবনে কুদামা (রহ.) বলেন, জোহর ও আসরের নামাজে চুপেচুপে তেলাওয়াত করবে। মাগরিব ও এশার নামাযের প্রথম দুই রাকাতে এবং ফজরের নামাজের সব রাকাতে উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করবে…।
এর দলিল হচ্ছে— নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমল। এটি পূর্ববর্তীদের কাছ থেকে পরবর্তীদের কাছে প্রচারের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়েছে। অতএব, কেউ যদি চুপেচুপে পড়ার নামাজে উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করে কিংবা উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করার নামাজে চুপেচুপে পড়ে— তাহলে সে সুন্নতের বিপরিত কাজ করলো। তবে এমন করলেও তার নামাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে।’ (আল-মুগনি, খণ্ড : ০২, পৃষ্ঠা : ২৭০)
এভাবে নামাজ পড়া সুন্নত নাকি ওয়াজিব
প্রথমত এটি শরিয়তের বিধান। ইসলাম এভাবে পড়তে বলেছে, তাই এভাবে পড়তে হয়। প্রত্যেক মাজহাবের ইমামগণ এক্ষেত্রে একমত। আর হানাফি মাজহাব মতে, উল্লেখিত নামাজগুলোতে এভাবে নামাজ পড়া— ইমামের জন্য ওয়াজিব। মুনফারিদ বা একাকী নামাজ আদায়কারীর জন্য সুন্নত।
এছাড়াও জোহর-আসর নামাজ দিনে হয়। আর মাগরিব, এশা ও ফজরের নামাজ রাতে আদায় করা হয়। দিনে মানুষ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকে এবং বিভিন্ন ধরনের আওয়াজ হয়ে থাকে। তাই দিনের নামাজের ক্ষেত্রে আস্তে কেরাত পড়ার কথা বলা হয়েছে।
এতে কোরআন তিলাওয়াত শ্রবণে কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না। রাতে মানুষের ব্যস্ততা কম থাকে। সাধারণত আওয়াজও থাকে কম। চারদিক থাকে নীরব নিস্তব্ধ। তাই রাতে জোরে পড়ার কথা বলা হয়েছে। মুসল্লিরা এতে ভালোভাবে কোরআন শ্রবণ করতে পারে। (হাশিয়াতুত তাহতাভি আলা মারাকিল ফালাহ, পৃষ্ঠা : ২৫৩; ফাতাওয়া মাহমুদিয়া, খণ্ড : ০৭, পৃষ্ঠা : ৪০)
জোহর-আসরের নামাজে কিরাত আস্তে পড়ার হিকমত
মৌলিকভাবে এর নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা নেই। তবে একটি হিকমত এই ছিল যে, দিনের বেলা জোরে কিরাত পড়লে— আরবের মুশরিকরা কিরাতকে ঠাট্টা করে জোরে জোরে আওয়াজ করে বিরক্ত করত। যেটা রাতের বেলায় করা হতো না। তাই দিনে আস্তে কিরাতের বিধান এসেছে, আর রাতে জোরের বিধান।
তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, একটি কেবল একটি হিকমত ও প্রজ্ঞানিঃসৃত ভাবনা। মূলত আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী নবী কারিম (সা.) যেভাবে নামাজ পড়েছেন, আমরাও সেভাবে নামাজ পড়ি।
আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন।
ধর্ম ও জীবন
ব্যবসা-বাণিজ্যে ইসলামের ৭ নির্দেশনা

ইসলামের নীতি ও নির্দেশনার আলোকে ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করলে একজন ব্যবসায়ী শুধুমাত্র দুনিয়াতেই নয় পরকালেও লাভবান হবেন নি:সন্দেহে। যারা সততা ও আমানতদারিতার সাথে ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করে নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের জন্য পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। আবু সাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত নবি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীরা আখেরাতে নাবিগণ, সিদ্দিকগণ ও শহীদগণের সঙ্গে থাকবে। (সুনানে তিরমিজি: ১২০৯)
এখানে আমরা ব্যবসা-বাণিজ্যে ইসলামের ৭টি নির্দেশনা তুলে ধরছি:
এক. ব্যবসায় কারো ক্ষতি করা যাবে না
মানুষের ক্ষতি হয় এমন সব পন্থাকে ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। সুতরাং ব্যবসা- বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। মানুষের উপকার করার মানসিকতা থাকতে হবে। কারও ক্ষতি যেন না হয় সেদিকে সজাগ থাকতে হবে।
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কারো ক্ষতি করাও যাবে না, নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া যাবে না। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ২৩৪১)
ব্যবসায় গ্রাহকের কাছ থেকে আমরা শুধু লাভ করছি তা নয়; বরং আমরা তাদের পণ্য ও সেবা প্রদান করছি। যদি আমরা যৌক্তিক লাভ করি এবং একচেটিয়া ব্যবসা না করি তবে সমাজের জন্য এটি একটি বড় সহায়তা। ভালো জিনিস যৌক্তিক দামে প্রদান করায় সমাজের মানুষ সন্তুষ্ট হবে, তাতে মহান আল্লাহও আমাদের ওপর সন্তুষ্ট হবেন। যখন ব্যবসায়ী ও গ্রাহক উভয় পক্ষ অনুভব করবে আমরা উপকৃত হয়েছি, তখন তাদের মধ্যে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হবে যা একটি সুগঠিত সমাজের জন্য প্রয়োজন। এতে উভয় পক্ষই পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার সাওয়াব পাবেন।
দুই. ধোঁকা, প্রতারণা ও ফাঁকিবাজি করা যাবে না
বেচাকেনার ক্ষেত্রে মন্দ জিনিস ভালো বলে চালিয়ে দেওয়া, ভালোর সঙ্গে মন্দের মিশ্রণ ঘটিয়ে ধোঁকা দেওয়া ইত্যাদি সম্পূর্ণ হারাম। বিখ্যাত সাহাবি হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসুল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বাজারে গিয়ে একজন বিক্রেতার স্তুপীকৃত খাদ্যপণ্যের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দেখলেন ভেতরের পণ্য ভেজা বা নিম্নমানের। এ অবস্থা দেখে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এটা কী করলে তুমি? লোকটি বললো, হে আল্লাহর রসুল! বৃষ্টি পড়ে ভিজে গিয়েছিল। রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ভেজা পণ্য তুমি ওপরে রাখলে না কেন? তাহলে ক্রেতারা দেখতে পেত। যে ধোঁকা দেয় সে আমার উম্মত নয়। (সহিহ মুসলিম: ১০২)
তিন. মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া যাবে না
ইসলামে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রেই মিথ্যা নিন্দনীয় ও বড় ধরনের অপরাধ। কোনো মুসলমান সত্যের সঙ্গে মিথ্যার সংমিশ্রণ করতে পারে না। সত্য গোপন করতে পারে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা সত্যের সঙ্গে অসত্যের মিশ্রণ ঘটাবে না। জেনেশুনে সত্য গোপন করবে না। (সুরা বাকারা: ৪২)
একজন মুমিনের মধ্যে মিথ্যা ও খেয়ানতের দোষ থাকা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একবার আল্লাহর রাসুলকে (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞাসা করা হলো, একজন মুমিন দুর্বল হওয়া কি স্বাভাবিক? তিনি বললেন, হ্যাঁ, হতে পারে। আবারও জিজ্ঞাসা করা হলো, মুমিন কি কৃপণ হতে পারে? বললেন, হ্যাঁ। তারপর জিজ্ঞাসা করা হলো, একজন মুমিন মিথ্যুক হতে পারে? তিনি বললেন, না। (বাইহাকি, শুআবুল ঈমান: ৪৮১২)
চার. ওজনে কমবেশি করা যাবে না
অন্যকে দেয়ার সময় ওজনে কম দেওয়া আর নেওয়ার সময় বেশি করে নেয়া জঘন্য অপরাধ। মহান আল্লাহ বলেন, যারা পরিমাপে কম দেয় তাদের জন্য ধ্বংস। যারা লোকদের কাছ থেকে মেপে নেয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে আর যখন তাদেরকে মেপে দেয় অথবা ওজন করে দেয় তখন কম দেয়। (সুরা মুতাফফিফিন: ১-৩)
সুতরাং বেচাকেনার সময় কাউকে দেওয়ার সময় কম দেওয়া যাবে না। আপনি যে কাজটি নিজের জন্য পছন্দ করেন না, তা অন্যের জন্য কীভাবে পছন্দ করেন? যখন নিজের জন্য নেন তখন তো মাপে কম দিলে আপনি পছন্দ করবেন না। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আপনারা নিজের জন্য যা ভালোবাসেন তা অন্যের জন্যও ভালোবাসার আগ পর্যন্ত ইমানদার হতে পারবেন না। (সহিহ বুখারি: ১৩)
পাঁচ. পণ্য বিক্রির জন্য মিথ্যা শপথ করা যাবে না
মিথ্যা বলে বা মিথ্যা শপথ করে পণ্য বিক্রি করার পরিণতি খুবই ভয়াবহ। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তিন ব্যক্তির সাথে কোনো ধরনের কথা বলবেন না, তাদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করবেন না, তাদের পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। তাদের একজন হলো ওই ব্যক্তি যে তার ব্যবসার পণ্য মিথ্যা কসম খেয়ে বিক্রি করে। (সহিহ মুসলিম: ১০৬)
অন্য একটি হাদিসে এ দৃষ্টান্ত এভাবে তুলে ধরা হয়েছে, এক ব্যক্তি আসরের পর তার পণ্য সম্পর্কে কসম খেয়ে বলে, সে পণ্যটি এত এত মূল্যে কিনেছে, তার কথা ক্রেতা বিশ্বাস করে, অথচ সে মিথ্যুক। (সুনানে আবু দাউদ: ৩৪৭৪)
ছয়. ব্যবসার সাথে সুদ মেশানো যাবে না
সুদ একটি মারাত্মক অপরাধ। সুদ থেকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে। ব্যবসার নামে কোন প্রকার সুদে জড়িত হওয়া যাবে না। সুদের পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, যারা সুদ খায় তারা কেয়ামতের দিন দণ্ডায়মান হবে শয়তানের আসরে মোহাবিষ্টদের মতো। কারণ, তারা বলে ব্যবসাওতো সুদের মতো, অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন। (সুরা বাকারা: ২৭৫)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খায়রাতকে বর্ধিত করেন। (সুরা বাকারা: ২৭৬)
হাদিসে এসেছে, জাবের ইবন আব্দুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুদ গ্রহণকারী, প্রদানকারী, হিসাবকারী এবং সাক্ষী সকলকে অভিশাপ দিয়েছেন এবং তিনি বলেন তারা সকলেই সমান। (সহিহ মুসলিম: ১৫৯৮)
সাত. মজুদদারি বা সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা যাবে না
অনেক অসাধু ব্যবসায়ী মজুদদারি বা সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে। এতে মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয় এবং জনসাধারণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইসলামে মজুদদারি গর্হিত অপরাধ। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
শুধুমাত্র পাপী ব্যক্তিই মজুদদারি করে থাকে। (সহিহ মুসলিম: ১৬০৫)
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া গাফুরিয়া মাখযানুল উলুম টঙ্গী গাজীপুর, খতিব, আউচপাড়া জামে মসজিদ টঙ্গী গাজীপুর
ধর্ম ও জীবন
আশুরার দিন যে আমল করতেন নবীজি (সা.)

আগের নবীগণের উম্মতের তুলনায় এ উম্মতের হায়াত খুব কম। তবে মহান আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য বিশেষ কিছু সময় ও মৌসুম দিয়েছেন যে সময়ে সামান্য আমল করে সহজেই তার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। এটি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ রহমত। আশুরা বলা হয়, মহররমের ১০ তারিখকে।
পবিত্র রমজানের পর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মাস বলা হয়েছে মহররমকে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, তিনি বলেন, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রমজানের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা হচ্ছে আল্লাহর মাস মহররমের রোজা। (মুসলিম: ২৬৪৫)
আশুরার রোজার ফজিলত
বিভিন্ন হাদিসে আশুরার রোজার ফজিলত রয়েছে। হজরত আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মহান আল্লাহর কাছে আমি আশা পোষণ করি যে, তিনি আশুরার রোজার মাধ্যমে আগের এক বছরের পাপ ক্ষমা করে দেবেন। (তিরমিজি: ৭৫২)
আশুরার রোজা রাখার বিধান
রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা ওয়াজিব ছিল। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর এ দিন রোজা রাখা মুস্তাহাব। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, জাহেলি সমাজের লোকেরা রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার দিন রোজা রাখত। এ দিন কাবায় গিলাফ জড়ানো হতো। এরপর যখন রমজানের রোজা ফরজ হলো তখন নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যিনি এ দিন রোজা রাখতে চায় সে রাখুক। যিনি না চায় না রাখুক। (বুখারি: ১৫৯২)
তওবা করা
তওবা গুরুত্বপূর্ণ আমল। সবার কর্তব্য এটির কদর করা। আশুরার দিন তওবা কবুলের মোক্ষম সময়। এদিনে তওবা কবুল হওয়া, নিরাপত্তা এবং অদৃশ্য সাহায্য লাভ করার কথাও রয়েছে। এ জন্য এ সময়ে এমন সব আমলের প্রতি মনোনিবেশ করা উচিত, যাতে মহান আল্লাহর রহমত বান্দার দিকে আরও বেশি ধাবিত হয়।
নবীজির এক সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রসুল! রমজানের পর আপনি কোন মাসে রোজা রাখতে বলেন? নবীজি বলেন, তুমি যদি রমজানের পর রোজা রাখতে চাও তাহলে মহররমে রোজা রাখো। কেননা মহররম হচ্ছে আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন এক দিন আছে, যেদিন মহান আল্লাহ অতীতে অনেকের তওবা কবুল করেছেন। ভবিষ্যতেও অনেকের তওবা কবুল করবেন। (তিরমিজি: ৭৪১)
আশুরার রোজা কবে?
বাংলাদেশে সোমবার (৮ জুলাই) থেকে মহররম মাস গণনা শুরু হয়। সে হিসেবে বুধবার (১৭ জুলাই) পালিত হবে পবিত্র আশুরা। এ হিসেবে মহররমের ১০ তারিখ বুধবার (১৭ জুলাই) একটি, আর এর আগে মহররমের ৯ তারিখ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) অথবা পরের দিন মহররমের ১১ তারিখ বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) আরও একটি।
আশুরার রোজা কয়টি রাখতে হবে?
আশুরার রোজা দুটি রাখতে হবে। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা আশুরার দিনে রোজা রাখো, তবে এ ক্ষেত্রে ইহুদিদের সঙ্গে মিল না হওয়ার জন্য ১০ তারিখের আগের দিন অথবা পরের দিন আরও একটি রোজা রেখো। (মুসনাদে আহমদ: ২১৫৪)