অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক পরিশোধন সক্ষমতার এক-পঞ্চমাংশ বা ২১ শতাংশ বন্ধ হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। জ্বালানি পণ্যের বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান উড ম্যাকেনজির এক বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উন্নত দেশগুলোয় কার্বন নিঃসরণ কমানোর চাপ বাড়ছে। জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে স্থানান্তরের তোড়জোড় চলছে বিশ্বজুড়ে। বিষয়টি সক্ষমতা কমে যাওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া গ্যাসোলিন উৎপাদনে মুনাফা মার্জিন কমে যাওয়ার বিষয়টিও এক্ষেত্রে রসদ জোগাবে।
নিট ক্যাশ মার্জিন, কার্বন নিঃসরণ ব্যয়, মালিকানা, জলবায়ুসংক্রান্ত বিনিয়োগ ও পরিশোধনাগারগুলোর কৌশলগত মূল্যের ওপর ভিত্তি করে এ বিশ্লেষণ করেছে উড ম্যাকেনজি।
উড ম্যাকেনজি বিশ্বজুড়ে ৪৬৫টি পরিশোধন কেন্দ্রের ওপর জরিপ চালিয়েছে। এতে দেখা গেছে, জ্বালানি তেলের ২০২৩ সালের বৈশ্বিক পরিশোধন সক্ষমতার ২১ শতাংশই বর্তমানে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে ইউরোপ ও চীনের পরিশোধনাগারগুলো। এসব পরিশোধনাগারে দৈনিক ৩৯ লাখ ব্যারেল পরিশোধন সক্ষমতা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে দেখা গেছে, ইউরোপের ১১টি সাইট ৪৫ শতাংশ ঝুঁকিতে আছে। ২০০৯ সালের পর থেকে অঞ্চলটিতে বন্ধ হয়ে গেছে ৩০টি পরিশোধনাগার। মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ায় নতুন এবং কমপ্লেক্স প্লান্টের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরেই মূলত এসব পরিশোধন কেন্দ্র বন্ধ হয়েছে। এক্ষেত্রে নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর অভিঘাতও বড় ভূমিকা পালন করেছে। তবে ইউরোপে ৯০টি পরিশোধনাগার এখনো কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
উড ম্যাকেনজির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, চলতি দশকের শেষ নাগাদ গ্যাসোলিন উৎপাদনের মুনাফা মার্জিন আরো কমে আসবে। কারণ এটির চাহিদা কমছে। পাশাপাশি রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞাও শিথিল হয়ে আসছে। এদিকে প্রত্যাশিত কার্বন ট্যাক্সও মার্জিনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
উড ম্যাকেনজির জ্বালানি তেল ও কেমিক্যালবিষয়ক জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক ইমা ফক্স বলেন, জ্বালানি তেল পরিশোধনাগারগুলোর পরিচালন ব্যয় অনেক বেশি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিশ্ববাজারে দাম বাড়াতে গত বছর কয়েক দফায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন ও রফতানি কমিয়েছে ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাস। ফলে জ্বালানিটির বাজারে সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) বলছে, উত্তোলন ও রফতানি কমানোর এ ধারা অব্যাহত থাকলেও চলতি বছর সরবরাহ উদ্বৃত্তে ফিরবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চলতি বছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সরবরাহ চাহিদাকে ছাড়িয়ে যাবে। ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো কমালেও যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলসহ জোটের বাইরের দেশগুলোয় উত্তোলন বাড়বে লক্ষণীয় মাত্রায়, যা বৈশ্বিক সরবরাহ বাড়াতে প্রধান ভূমিকা রাখবে।