ক্যাটাগরি: স্বাস্থ্য

রোজায় অন্তঃসত্ত্বা মায়ের করণীয়

মায়ের গর্ভে শিশুর বেড়ে ওঠা এবং মেধাবিকাশ অনেকাংশেই নির্ভর করে অন্তঃসত্ত্বা মায়ের যথাযথ পুষ্টি প্রাপ্তির উপর। গর্ভাবস্থায় রোজা রাখা কতটা নিরাপদ—তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই সংশয় কাজ করে। প্রকৃতপক্ষে মা ও গর্ভস্থ শিশু উভয়েই যদি সুস্থ থাকে এবং মায়ের যদি কোনো গর্ভজনিত জটিলতা না থাকে তাহলে অন্তঃসত্ত্বা মা রোজা রাখতে পারবেন।

সর্বোপরি রোজা পালনের কারণে মা ও শিশুর যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। গর্ভকালীন নয় মাস সময়কে তিন মাস করে করে মোট তিনটি ট্রাইমেস্টারে ভাগ করা হয়েছে। তিনটি ট্রাইমেস্টার ভিন্ন ভিন্ন গুরুত্ব বহন করে।

১ম ট্রাইমেস্টার (১-১২ সপ্তাহ)
এই সময় গর্ভস্থ শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গঠিত হয়ে থাকে। তাই এ সময় পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। তাছাড়া গর্ভের প্রথম তিন মাস খাবারে অরুচি ও বমিভাব থাকার কারণে রোজা পালন করা কষ্টকর হতে পারে। খুব বেশি শারীরিক সমস্যা করে এই তিন মাস রোজা না রাখাই ভালো।

২য় ট্রাইমেস্টার (১৩-২৬ সপ্তাহ)
মায়ের জন্য এই সময়টি তুলনামূলকভাবে স্বস্তিদায়ক। তবে এই সময় ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত হওয়ার সময়। সাধারণত কোনো জটিলতা না থাকলে এই তিনমাস রোজা রাখায় কোনো বাধা নেই। উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো জটিলতা থাকলে রোজা রাখতে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

৩য় ট্রাইমেস্টার (২৭-৪০ সপ্তাহ)
এই সময়ে গর্ভস্থ শিশুর দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে থাকে। শিশুর সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে কিছুক্ষণ পরপর ঘন ঘন খাদ্যগ্রহণ প্রয়োজন। পানিশূন্যতা দেখা দিলে বা বাচ্চার নড়াচড়া কমে গেলে রোজা না রাখাই ভালো হবে। মা ও শিশুর কোনো জটিলতা না থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে রোজা রাখা যেতে পারে।

রোজা রাখলে অন্তঃসত্ত্বা মা যেসব সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন

১. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার পরেও ক্লান্তভাব বা দুর্বল লাগা।
২. বমিভাব বা মাথাব্যথা হওয়া।
৩. প্রস্রাবের ইনফেকশনের লক্ষণসমূহ যেমন- জ্বরজ্বরভাব,তলপেটে ব্যথা, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ও ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া।
৪. কোষ্ঠকাঠিন্য বা পাতলা পায়খানা হওয়া।
৫. মায়ের ওজন কমে যাওয়া।
৬. গর্ভস্থ শিশুর ওজন বৃদ্ধি না পাওয়া।
৭. গর্ভের শিশুর নড়াচড়া কমে যাওয়া।
৮. গর্ভস্থ পানি বা অ্যামনিওটিক ফ্লুইড কমে যাওয়া।

ওপরের যেকোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

রোজা রাখলে অন্তঃসত্ত্বা মায়ের অবশ্য করণীয়
১. প্রশান্ত ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুন।
২. বেশি হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করবেন না।
৩. পরিশ্রমের মাত্রা কমিয়ে দিন।
৪. ভাজাপোড়া ও তেলচর্বিযুক্ত খাবার যতটা সম্ভব পরিহার করুন।
৫. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
৬. পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
৭. রাতে পরিপূর্ণ ঘুম নিশ্চিত করুন।
৮. সেহেরি ও ইফতারে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সহজপাচ্য খাবার রাখুন।
৯. রোজা ভাঙার পর থেকে জেগে থাকা পর্যন্ত ফলমূল, শরবত, স্যুপ ইত্যাদি সহজপাচ্য খাবার খাদ্যতালিকায় রাখুন।

গর্ভকালীন সময় প্রতিটি নারীর জীবনে অতুলনীয় অভিজ্ঞতার সময়। গর্ভাবস্থা নিরাপদ রাখতে সঠিক পরিকল্পনার কোনো বিকল্প নেই। পানাহার, ঘুম থেকে শুরু করে পোশাক বাছাইকরণ পর্যন্ত সবকিছুতেই সুষ্ঠু পরিচালনা প্রয়োজন। অনাগত শিশুর সুস্থতা ও বেড়ে ওঠা অনেকাংশেই মায়ের উপর নির্ভরশীল। তাই যেকোনো সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ নিতে সতর্ক হওয়া উচিত। মনে রাখবেন, একজন সুস্থ মা-ই পারেন সুস্থ শিশু জন্ম দিতে।

লেখক: ডা. ফরিদা ইয়াসমিন সুমি, সহকারী অধ্যাপক (গাইনি), চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার