ধর্ম ও জীবন
রমজানে ইচ্ছাকৃত রোজা না রাখার গুনাহ

রোজা ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম। আল্লাহ মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতের ওপর রমজানের রোজা ফরজ করেছেন। রোজার সুফল হলো এর মাধ্যমে তাকওয়া বা আল্লাহভীতি লাভ হয়।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, হে মুমিনরা, তোমাদের ওপর রোজাকে ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যেন তোমরা আল্লাহভীরু হতে পারো। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)
শরিয়ত অনুমোদিত কারণ ছাড়া রোজা ত্যাগ করা কবিরা গুনাহ। কেননা আল্লাহর নির্দেশ হলো, রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারি এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে রোজা পালন করে। কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করবে। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)
সুতরাং যে ব্যক্তি শরিয়ত অনুমোদিত কারণ ছাড়া রোজা ত্যাগ করল সে ইসলামের রোকন ও ফরজ বিধান ত্যাগ করল, সে কবিরা গুনাহ করল।
রোজা না রাখার ভয়াবহতা
১. কুফরিসদৃশ কাজ : শরিয়ত অনুমোদিত কারণ ছাড়াই যারা রমজানের রোজা ত্যাগ করে তারা কুফরিসদৃশ কাজ করে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ইসলামের হাতল ও দ্বিনের মূল বিষয় তিনটি; যার ওপর ইসলামের ভিত্তি। যে ব্যক্তি তার একটি ত্যাগ করল, সে এমন অবিশ্বাসীতে পরিণত হলো, যার রক্তপাত বৈধ। সেগুলো হচ্ছে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই বলে সাক্ষ্য দেওয়া, ফরজ নামাজ ও রমজানের রোজা। (মাজমাউল জাওয়াইদ : ১/৪৮)
২. মুসলিম হওয়ার ব্যাপারে সংশয় : ইমাম জাহাবি (রহ.) মুমিনদের কাছে এ কথা প্রমাণিত, যে ব্যক্তি কোনো অসুস্থতা ও শরিয়ত অনুমোদিত কারণ ছাড়া রোজা ছেড়ে দেয় সে মদ্যপ ও ব্যভিচারকারীর চেয়েও নিকৃষ্ট; বরং তারা তার ইসলামের ব্যাপারে সন্দেহ করে এবং তাকে জিন্দিক তথা ধর্মদ্রোহী বলে সন্দেহ করে। (আল-কাবায়ির, পৃষ্ঠা ৬৪)
৩. জাহান্নামে ভয়াবহ শাস্তি : আবু উমামা বাহিলি (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, একবার আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। এ সময় দুজন মানুষ এসে আমার দুই বাহু ধরে আমাকে দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে গেল। সেখানে নিয়ে তারা আমাকে বলল, পাহাড়ে উঠুন। আমি বললাম, আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তারা বলল, আমরা আপনার জন্য সহজ করে দিচ্ছি। তাদের আশ্বাস পেয়ে আমি উঠতে লাগলাম এবং পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত গেলাম। সেখানে প্রচণ্ড চিৎকারে শব্দ শোনা যাচ্ছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কিসের শব্দ? তারা বলল, এটা জাহান্নামিদের চিৎকার। এরপর তারা আমাকে এমন কিছু লোকের কাছে নিয়ে গেল যাদের পায়ের টাকনুতে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের গাল ছিন্নভিন্ন এবং তা থেকে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? তারা বলল, এরা হচ্ছে এমন রোজাদার যারা রোজা পূর্ণ করার আগে ইফতার করত। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৭৪৯১)

ধর্ম ও জীবন
আশুরায় রোজা রাখার ফজিলত

মহররম মাসের ১০ তারিখ ‘আশুরা’ উপলক্ষে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রোজা রেখেছেন এবং সাহাবিদেরও রোজা রাখতে বলেছেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হিজরতের পর মদিনার ইহুদিদের আশুরার দিন রোজা রাখতে দেখে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তারা বলল, এটি একটি উত্তম দিন যেদিন আল্লাহ মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের মুক্তি দিয়েছেন। তাই মুসা (আ.) এ দিন রোজা রাখতেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘আমি তোমাদের চেয়েও মুসার (আ.) অধিক নিকটবর্তী।’ এরপর তিনি এ দিন রোজা রাখেন, অন্যদেরও রোজা রাখার নির্দেশ দেন। (সহিহ মুসলিম: ২৫৪৮)
আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সব সময় আশুরার রোজা রাখতেন। কখনও তিনি আশুরার রোজা বাদ দেননি। উম্মুল মুমিনীন হাফসা (রা.) বলেন, নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কখনো চারটি আমল পরিত্যাগ করেননি। সেগুলো হলো, আশুরার রোজা, জিলহজের প্রথম দশকের রোজা, প্রতি মাসে তিন দিন রোজা, ও ফজরের পূর্বের দুই রাকাত নামাজ। (সুনানে নাসাঈ: ২৪১৬)
আশুরার দিন রোজা রাখলে আল্লাহ তাআলা এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেন। আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ وَصِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ
আশুরার রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, এ রোজার কারণে আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন। (সহিহ মুসলিম: ২৬১৭)
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রমজান মাসের রোজা ও আশুরার দিনের রোজার মতো অন্য কোনো রোজাকে এত বেশি গুরুত্ব দিতে দেখিনি। (সহিহ বুখারি: ২০০৬)
আশুরার রোজা রাখবেন যে দুই দিন
ইহুদিরা আশুরা উপলক্ষে এক দিন রোজা রাখতো। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুসলমানদের নির্দেশ দেন আশুরার দিনটির আগে বা পরে আরও এক দিন মিলিয়ে দুই দিন রোজা রাখতে যেন মুসলমানদের আমল ইহুদিদের আমলের সাথে পুরোপুরি মিলে না যায়। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
صُومُوا عَاشُورَاءَ وَخَالِفُوا فِيهِ الْيَهُودَ، صُومُوا قَبْلَهُ يَوْمًا وَبَعْدَهُ يَوْمًا
তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখ এবং তাতে ইহুদিদের বিরোধিতা কর, আশুরার আগে একদিন বা পরে একদিন রোজা রাখো। (মুসনাদে আহমদ: ২১৫৫)
আমাদের দেশে এ বছর (২০২৫ ইংরেজি মোতাবেক ১৪৪৭ হিজরি) মহররম শুরু হয়েছে গত ২৭ জুন, ১০ মহররম বা পবিত্র আশুরার দিনটি হলো ৬ জুলাই, রোববার। যারা আশুরা উপলক্ষে দুটি রোজা রাখবেন, তাদের ৫ ও ৬ জুলাই শনি ও রোববার অথবা ৬ ও ৭ জুলাই রবি ও সোমবার রোজা রাখতে হবে।
ধর্ম ও জীবন
তওবা কবুল হওয়ার পাঁচ শর্ত

তওবা মানে ফিরে আসা; সঠিক পথে ফিরে আসা, আল্লাহর পথে ফিরে আসা, জান্নাতের পথে ফিরে আসা। মানুষ যখন গুনাহ করে, আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়, তখন সে জাহান্নামের পথে এগিয়ে যায়। গুনাহের জন্য অনুশোচিত হয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করে আল্লাহর পথে ফিরলে বান্দার জন্য রয়েছে ক্ষমা ও জান্নাতের প্রতিশ্রুতি। আল্লাহ বলেন,
وَ سَارِعُوْۤا اِلٰي مَغْفِرَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَ جَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمٰوٰتُ وَ الْاَرْضُ اُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِيْنَ.
আর তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে, যার পরিধি আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সমান, যা মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। (সুরা আলে ইমরান: ১৩৩)
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তার বিপথগামী বান্দাদের আহ্বান জানাচ্ছেন তার রহমত ও মাগফেরাতের দিকে ছুটে আসতে বা তওবা করতে। যে তওবা করবে সে আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাত লাভ করবে যা আল্লাহ নেক ও পরহেজগার বান্দাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
কোরআনের আরেকটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইস্তেগফার বা তওবা করলে রিজিক বৃদ্ধি, উত্তম প্রাকৃতিক পরিবেশ, সম্পদ ও সন্তান দিয়ে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দুনিয়ার সুখ সমৃদ্ধি দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহর নবি নুহের (আ.) ভাষায় আল্লাহ বলেছেন,
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْ اِنَّهٗ كَانَ غَفَّارًا،يُّرْسِلِ السَّمَآءَ عَلَيْكُمْ مِّدْرَارًا، َّ يُمْدِدْكُمْ بِاَمْوَالٍ وَّ بَنِيْنَ وَ يَجْعَلْ لَّكُمْ جَنّٰتٍ وَّ يَجْعَلْ لَّكُمْ اَنْهٰرًا.
আর বলেছি, তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান- সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা। (সুরা নুহ: ১০-১২)
অর্থাৎ ইস্তিগফার ও ক্ষমা প্রার্থনার ফলে পরকালের নেয়ামত তো রয়েছেই, দুনিয়ার জীবনেও আল্লাহ বরকত দান করবেন। দুনিয়ার সুখ-সমৃদ্ধি, ধন-সম্পদ ও উত্তম সন্তান-সন্ততি দান করবেন।
তওবা শুধু মুখে ক্ষমা চাওয়ার নাম নয়। মুখে ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি কাজকর্মে ও সর্বান্তকরণে তওবা করতে হয়। কোরআন-হাদিসের আলোকে আলেমগণ বলেন, তওবাকারী তখনই প্রকৃত তওবাকারী গণ্য হয় এবং আল্লাহর কাছে তার তওবা কবুল হয়, যখন সে পাঁচটি শর্ত পূরণ করে। শর্তগুলো হলো,
১. ইখলাস—অর্থাৎ সে যেন শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ক্ষমা লাভ করার উদ্দেশ্যে তওবা করে। অন্য কাউকে দেখানো, খুশি করা বা দুনিয়াবি কোনো লাভের জন্য তওবা করলে আল্লাহর দরবারে ওই তওবা কবুল হয় না।
২. পাপ কাজ পরিত্যাগ করা। পাপ কাজে জড়িত থেকে তওবা করলে ওই তওবা কবুল হয় না।
৩. গুনাহের জন্য অন্তরে সত্যিকারভাবে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া। কেউ যদি গুনাহের জন্য অনুতপ্ত না হয়, শুধু মুখে তওবা করে, তার তওবা কবুল হয় না।
৪. ভবিষ্যতে ওই গোনাহের দিকে আর ফিরে না যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা। অন্তরে যদি ওই গুনাহ আবার করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে তওবা কবুল হয় না।
৫. তওবা করতে হবে মৃত্যু যন্ত্রণা শুরু হওয়া বা মৃত্যুর লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার আগেই। মুমূর্ষু ব্যক্তির তওবা কবুল হয় না।
ইমাম নববি (রহ.) বলেন, তওবা কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো—তওবা করতে হবে গলার কাছে আত্মা পৌঁছানোর আগেই। সহিহ হাদিসে এসেছে, আর যখন আত্মা কণ্ঠনালিতে পৌঁছে যায়, অর্থাৎ মৃত্যুর নিকটবর্তী মুহূর্ত আসে, তখন আর তওবা কবুল হয় না। (শরহে মুসলিম লিন-নববি)
এই শর্তগুলো এমন গুনাহসমূহের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যে গুনাহ শুধু বান্দা ও আল্লাহর মাঝে সীমাবদ্ধ থাকে—যেমন নামাজ বা রোজা ছেড়ে দেওয়া ইত্যাদি।
যেসব গুনাহ মানুষের হক বা অধিকার সংশ্লিষ্ট, অর্থাৎ কারো ওপর জুলুম করা, কারো হক নষ্ট করা, কারো সম্পদ চুরি, ছিনতাই বা যে কোনোভাবে আত্মসাৎ করা ইত্যাদি গুনাহের তওবা কবুল হওয়ার জন্য শুধু উপরোক্ত পাঁচটি শর্ত পূরণ করা যথেষ্ট নয়, বরং এর পাশাপাশি যে ব্যক্তি জুলুম বা ক্ষতির শিকার হয়েছে, তাকেও সন্তুষ্ট করতে হবে। কারো সম্পদ আত্মসাৎ করে থাকলে তা ফিরিয়ে দিতে হবে—ওপরের পাঁচটি শর্ত পূরণের পাশাপাশি।
মানুষের ওপর জুলুমের পাপ শুধু আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলেও মাফ হয়ে যায় না। এ রকম পাপ আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিনও ক্ষমা করবেন না। বরং এসব পাপের বদলায় নিজের সওয়াব তাদের দিতে হবে বা তাদের পাপের বোঝা নিজের কাঁধে নিতে হবে।
রাসুল (সা.) বলেন, কারো উপর তার ভাইয়ের কোনো দাবি থাকলে সে যেন তা থেকে মুক্ত হয়। কারণ কেয়ামতের দিন পাওনা পরিশোধের জন্য টাকা-পয়সা থাকবে না। তখন অন্যায়ের সমপরিমাণ সওয়াব পাওনাদারের জন্য নিয়ে নেওয়া হবে। সওয়াব না থাকলে পাওনাদারের গুনাহগুলো তার উপরে চাপিয়ে দেওয়া হবে। (সহিহ বুখারি)
ধর্ম ও জীবন
পবিত্র আশুরা ৬ জুলাই

দেশের আকাশে ১৪৪৭ হিজরি সনের মহররম মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে আগামীকাল শুক্রবার থেকে মহররম মাস গণনা করা হবে। এ হিসাবে পবিত্র আশুরা পালিত হবে আগামী ৬ জুলাই রোববার।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সন্ধ্যায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমের সভাকক্ষে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মহররম মাসের চাঁদ দেখা সম্পর্কে সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। এতে দেখা যায় যে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র মহররম মাসের চাঁদ দেখা গেছে।
সভায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামাণিক, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) আব্দুস ছালাম খান, ওয়াকফ প্রশাসক মো. নূর-ই-আলম, তথ্য অধিদপ্তরের উপ- প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী সরকার, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন, ঢাকা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পারভেজ চৌধুরী, বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কাফি
ধর্ম ও জীবন
সৌদি আরবে কক্সবাজারের ওয়াহিদুর রহমানের পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন

কক্সবাজারের কৃতী সন্তান আ.ফ.ম.ওয়াহিদুর রহমান মাক্কী সৌদি আরবের মক্কা উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২৫ সালে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেছেন।
তিনি কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলাধীন গর্জনীয়া পূর্ব বোমাংখিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম মাওলানা মোহাম্মদ ইসমাইল ছিলেন, গর্জনীয়া ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হেড মাওলানা। তার দাদা মাওলানা ওবায়দুল হক চট্টগ্রামের বিখ্যাত দারুল উলুম আলিয়া মাদরাসার শিক্ষক ছিলেন।
অ.ফ.ম ওয়াহীদুর রহমান বর্তমানে পবিত্র হারামাইন শরীফাইন সৌদি আরবের অনুবাদ প্রকল্পে বাংলা বিভাগে অনুবাদক, ভাষ্যকার ও তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কর্মরত।
তিনি সৌদি আরবের মক্কা উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২৫ সালে পিএইচডি অর্জন করেন। তার গবেষণা অভিসন্দর্ভের শিরোনাম ছিল- ‘ইমাম আল-বায়হাকী আস-সুনান আল-কুবরায় যা বর্ণনা করেছেন তার মাধ্যমে আল্লাহর দিকে ডাকার আইনশাস্ত্র’।
তিনি ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশের প্রখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকার তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা থেকে হাদিস বিভাগে কামিল ও ঐতিহ্যবাহী মাদ্রাসা-ই- আলিয়া, ঢাকা থেকে কামিল তাফসির বিভাগে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন।
এর আগে কক্সবাজারের টেকনাফের রঙ্গিখালী দারুল উলুম মাদ্রাসা থেকে দাখিল এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের উম্মুল মাদারিস খ্যাত চুনতী হাকিমিয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে যথাক্রমে আলিম ও ফাজিল পরীক্ষায় সম্মানের সাথে উত্তীর্ণ হন।
তিনি ১৯৯৯-২০০৪ ইংরেজি সাল পর্যন্ত ঢাকা মোহাম্মদপুরে অবস্থিত গাউছিয়া ইসলামীয়া ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসার আরবি প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
আ.ফ.ম.ওয়াহীদুর রহমান মাক্কী সৌদি সরকারের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ পৃথিবীর ২০টি ভাষায় খুতবাতুল আরাফার তথা হজের খুতবাহ সম্প্রচার প্রকল্পে বাংলা ভাষ্যকার হিসেবে ২০২০, ২০২১ ও ২০২৩ সালে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া ও তিনি মক্কায় ইসলামিক সেন্টার এর একজন দায়ী হিসেবে বাংলা ভাষাভাষীদের মাঝে দাওয়াতী কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন।
কাফি
ধর্ম ও জীবন
কেয়ামতের দিন হিসাব সহজ হওয়ার দোয়া

কিয়ামতের দিন নেককার, বিশ্বাসী এবং আল্লাহতে অবিশ্বাসী প্রত্যেকেই তার আমলনামা, কাজকর্ম নিজের চোখে দেখতে পাবে। সেদিন অবিশ্বাসী কাফেরেরা নিজেদের বদ আমল দেখে আফসোস করবে।
এ বিষয়ে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, কিয়ামতের দিন ভূপৃষ্ঠ সমতল ভূমিতে রুপান্তর করা হবে। সবার হিসাব নেওয়া হবে। কেউ কারো ওপর জুলুম করলে তার কাছ থেকে এর বদলা নেওয়া হবে। পশু-পাখি জীব-জন্তুদের মধ্যে কেউ দুনিয়াতে কারো ওপর জুলুম- অত্যাচার করে থাকলে তার কাছ থেকে প্রতিশোধ নেওয়া হবে। পশু-পাখির হিসাব নেওয়া শেষ হলে তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা বলবেন, ‘তোমরা মাটি হয়ে যাও’। তখন সব মাটি হয়ে যাবে।
এ দৃশ্য দেখে তখন অবিশ্বাসী কাফেরেরা আফসোস করে বলবে, وَ یَقُوۡلُ الۡکٰفِرُ یٰلَیۡتَنِیۡ کُنۡتُ تُرٰبًا
‘হায়! আমরা যদি মাটি হয়ে যেতাম। এমন হলে আমরা হিসাব-নিকাশ ও জাহান্নামের আজাব থেকে বেঁচে যেতাম।’ (তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন, ৮ম খণ্ড, পৃষ্ঠা, ৬৮১, তাফসিরে ইবনে কাসির, ১১ তম খণ্ড, পৃষ্ঠা, ৩৯৪, সূরা নাবা, (৭৮), আয়াত, ৪০, পারা, ৩০)
কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা যাদের ক্ষমা করবেন তারা হবেন সৌভাগ্যবান আর যাদের হিসাব নেবেন কঠিন করে তাদের রক্ষা পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না।
এ বিষয়ে হজরত আব্দুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন-
আল্লাহ ঈমানদারদের কাছাকাছি হবেন। নিজের উপর একটা পর্দা রেখে দিবেন। আর তাকে বলবেন, তুমি কি সেই পাপটি সম্পর্কে জানো? সেই পাপটির কথা কি তোমার মনে আছে? সে উত্তরে বলবে, হ্যা, প্রভূ। এভাবে সে সকল পাপের কথা স্বীকার করবে। আর ধারনা করবে আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। আল্লাহ তায়ালা তখন তাকে বলবেন, আমি দুনিয়াতে তোমার পাপগুলো গোপন রেখেছি আর আজ তা ক্ষমা করে দিলাম। এ কথা বলে তার নেক আমলের দফতর তাকে দেওয়া হবে। আর যারা কাফির বা মুনাফিক সকলের সামনে তাদের ডাকা হবে। ফিরিশতারা বলবে, এরাইতো তাদের প্রতিপালক সম্পর্কে মিথ্যা বলেছে। জালিমদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৪৪১)
কিয়ামতের দিন হিসাব সহজ হওয়ার জন্য হাদিসে বর্ণিত এই দোয়াটি পড়া যেতে পারে— اَللّٰهُمَّ حَاسِبْنِـىْ حِسَابًا يَّسِيْــرًا
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা হাসিব-নি হিসাবাই-ইয়াসিরা
অর্থ: হে আল্লাহ! আমার হিসাব সহজ করে দাও। (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস: ৮৭২৭)