অর্থনীতি
আট মাসে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ ২০৩ কোটি ডলার

চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) প্রথম আট মাসে সরকার সুদ ও আসলসহ বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করেছে ২০৩ কোটি ডলার। এর মধ্যে সুদ ৮০ দশমিক ৫৯ মার্কিন ডলার এবং আসল ১২২ দশমিক ৪০ কোটি ডলার। অথচ গত বছরের একই সময় অর্থাৎ প্রথম আট মাসে বাংলাদেশ বৈদেশিক ঋণ পরিশাধ করেছিল ১৪২ দশমিক ৪১ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ৮ মাসে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে ৬১ কোটি ডলার।
সোমবার (২৫ মার্চ) অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্যে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ইআরডি জানিয়েছে, ঋণ পরিশোধের ব্যয় এতটা বাড়ার পেছনে সুদ পরিশোধই মূলত ভূমিকা রাখছে। আট মাসে সুদ পরিশোধ করা হয়েছে ৮০ কোটি ৬০ লাখ ডলার (৮০৬ মিলিয়ন ডলার)। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ৪০ কোটি ৩০ লাখ ডলার সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয়, যার তুলনায় এটি দ্বিগুণ হয়েছে।
ইআরডি জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ প্রতিশ্রুতি বেড়েছে। উন্নয়ন সহযোগীরা এসময়ে ৭২০ কোটি ডলারের ঋণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৭৮ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছর বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে ৯৯২ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি আদায়ের লক্ষ্য রয়েছে বলেও জানানো হয়।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে এডিবির কাছ থেকে। এই সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া গেছে ২৬২ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি। এছাড়া জাপানের কাছ থেকে ২০২ কোটি ডলার, বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ১৪১ কোটি ডলারের ঋণ প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।
ইআরডির তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বৈদেশিক অর্থছাড় হয়েছে ৪৯৯ দশমিক ৭ কোটি ডলার। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে অর্থছাড়ের পরিমাণ ছিল ৪৮৭ কোটি ডলার। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে এডিবি। এই সংস্থা অর্থছাড় করেছে ১৩০ কোটি ডলার। জাপান ছাড় করেছে ১০৪ কোটি ডলার। এরপর বিশ্বব্যাংক ছাড় করেছে ৮৭ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। এছাড়া রাশিয়া ৮০ কোটি ৫০ লাখ ডলার এবং চীন ৩৬ কোটি ১৭ লাখ ডলার ছাড় করেছে।
গত অর্থবছরে (জুলাই-জুন) বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগীদের পরিশোধ করেছে ২৬৭ কোটি ডলার। এর মধ্যে সুদ হিসেবে পরিশোধ করেছে ৯৩ কোটি ৫৬ লাখ, আর আসল পরিশোধ করেছে ১৭৩ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরে পরিশোধ বেড়ে হবে ৩৫৬ কোটি ডলার। আগামী দুই অর্থবছরে তা আরও বেড়ে হবে যথাক্রমে ৪২১ কোটি এবং ৪৭২ কোটি ডলার।

অর্থনীতি
ঈদযাত্রার ৬ দিনে যমুনা সেতুতে ১৯ কোটির বেশি টাকা টোল আদায়

ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে ১ থেকে ৬ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত ছয় দিনে যমুনা সেতু দিয়ে ২ লাখ ৫৫ হাজার ২২০টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ১৯ কোটি ২৫ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫০ টাকা।
যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, গত রবিবার (১ জুন) যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে ২৭ হাজার ১৭৩টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৫৯ লাখ ২৭ হাজার ৮৫০ টাকা।
এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী ১৩ হাজার ৮৬৮টি যানবাহন পারাপার হয়। টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৮ হাজার ২০০ টাকা। অপর দিকে ঢাকাগামী ১৩ হাজার ৫টি যানবাহন পারাপার হয়। এর বিপরীত টোল আদায় ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৮ হাজার ২০০ টাকা।
গত সোমবার (২ জুন) যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে ৩০ হাজার ১৬৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৭৫ লাখ ৪৫ হাজার ৮৫০ টাকা। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী ১৫ হাজার ৩৯৮টি যানবাহন পারাপার হয়। টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ১৩ হাজার টাকা।
অপরদিকে ঢাকাগামী ১৪ হাজার ৭৬৯টি যানবাহন পারাপার হয়। বিপরীত টোল আদায় এক কোটি ৩৮ লাখ ৩২ হাজার ৪০০ টাকা।
গত মঙ্গলবার (৩ জুন) সেতুর ওপর দিয়ে ৩৩ হাজার ৫৬৪টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী ১৭ হাজার ৬৫৭টি যানবাহন পারাপার হয়। টোল আদায় হয় ১ কোটি ৪৪ লাখ ৮২ হাজার ৮৫০ টাকা।
অপর দিকে ঢাকাগামী ১৫ হাজার ৯০৭টি যানবাহন পারাপার হয়। এর বিপরীত টোল আদায় ১ কোটি ৪১ লাখ ৮১ হাজার ৫০ টাকা।
গত বুধবার (৪ জুন) সেতু দিয়ে ৫১ হাজার ৮৪৯টি যানবাহন পারাপার হয়। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী ৩০ হাজার ৮৪৫টি যানবাহন পারাপার হয়। টোল আদায় হয় ১ কোটি ৮৪ লাখ ৯৭ হাজার ৩৫০ টাকা। অপর দিকে ঢাকাগামী ২১ হাজার ৪টি যানবাহন পারাপার হয়। বিপরীত টোল আদায় ১ কোটি ৭৪ লাখ ৮৫ হাজার ৬৫০ টাকা। গত বৃহস্পতিবার (৫ জুন) যমুনা সেতু দিয়ে যানবাহন ও টোল আদায়ে নতুন রেকর্ড করে যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষ। এদিন সেতু দিয়ে ঈদযাত্রায় ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের ৬৪ হাজার ২৮৩টি যানবাহন পারাপার হওয়ায় এ রেকর্ডের সৃষ্টি হয়। যা যমুনা সেতু চালু হওয়ার সর্বোচ্চ সংখ্যক যানবাহন পারাপার করে নতুন রেকর্ড গড়ল। ছোট-বড় বিপুলসংখ্যক গাড়ি পারাপার হওয়ায় এদিন ৪ কোটি ১০ লাখ ৮০ হাজার ৯৫০ টাকার টোল আদায় করেছে করেছে কর্তৃপক্ষ। এর ফলে সেতু চালু হওয়ার পরে একদিনে সর্বোচ্চ টোল আদায় হয়।
গতকাল শুক্রবার (৬ জুন) সেতু দিয়ে ৪৮ হাজার ১৮৪টি যানবাহন পারাপার হয়। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী ৩৩ হাজার ৮৫৪টি যানবাহন পারাপার হয়। টোল আদায় হয় ২ কোটি ৩৩ লাখ ৮০ হাজার ১৫০ টাকা। অপর দিকে ঢাকাগামী ১৪ হাজার ৩৩০টি যানবাহন পারাপার হয়। বিপরীত টোল আদায় হয় ১ কোটি ৯ লাখ ৯২ হাজার ৬০০ টাকা।
প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, অতিরিক্ত গাড়ির চাপ ও সেতুর ওপর গাড়ি বিকল হওয়ায় টোল আদায়ে বিঘ্ন ঘটে। যার ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়। এইজন্য বেশ কয়েক দফায় টোল আদায় বন্ধ ছিল। ঈদযাত্রায় উভয় পাশেই ৯টি করে বুথ দিয়ে যানবাহন পারাপার হয়। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা দুটি করে বুথ করা হয়। মহাসড়ক এখন স্বাভাবিক আছে। স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন গন্তব্য যাচ্ছে।
অর্থনীতি
এবার ৮৫ লাখ চামড়া সংগ্রহ করতে চান ট্যানারিমালিকেরা

চলতি বছর কোরবানির ঈদের মৌসুমে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন ট্যানারিমালিকেরা। তাঁরা আশা করছেন, ঠিকভাবে চামড়া ছাড়ানো ও লবণজাত করা হলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চামড়া সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।
সাধারণত কোরবানির মৌসুমেই সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পশু জবাই করা হয়। ফলে চামড়ার পরিমাণও অনেক বেশি হয়। সারা বছর যে পরিমাণ চামড়া সংগ্রহ করা হয়, তার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ আসে এ মৌসুমে।
কোরবানি ঈদের দিন সকাল থেকেই চামড়া সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু হয়। পশু কোরবানির পর বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে চামড়া সংগ্রহ করেন স্থানীয় মৌসুমি ব্যবসায়ী ও মাদ্রাসা–এতিমখানার শিক্ষার্থীরা। তাঁরা এসব চামড়া নিয়ে ট্যানারিমালিক বা চামড়া লবণজাতকারী ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। এভাবে লবণ দেওয়া চামড়া শেষ পর্যন্ত ট্যানারিতে পৌঁছায়।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, এ বছর কোরবানির পশুর চাহিদা প্রায় ১ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার। সেখানে গরু-ছাগলসহ কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার পশু।
রাজধানীর পুরান ঢাকার লালবাগের পোস্তা এলাকার চামড়ার আড়তগুলো কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের অন্যতম বড় জায়গা। কোরবানির ঈদের দিন সকাল থেকেই চামড়া সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করেন পোস্তার আড়তদারেরা। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কেনেন তাঁরা। এরপর তা আড়তে এনে লবণ দেন। ঈদের তৃতীয় দিন পর্যন্ত চলে চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণের এ কার্যক্রম।
পোস্তা এলাকায় বর্তমানে ৩৫টির মতো কাঁচা চামড়ার আড়ত রয়েছে। পোস্তার পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, কোরবানির আগে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁরা। আড়তগুলো ধুয়েমুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন কর্মীরা; আবার আড়তে থাকা পুরোনো চামড়া পাঠিয়ে দিচ্ছেন ট্যানারি ও গোডাউনে। এ ছাড়া নতুন চামড়ায় লবণ দিতে আগেভাগেই অনেকে লবণ কিনে রেখেছেন।
এর বাইরে সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়াশিল্প নগর–সংলগ্ন এলাকায় চামড়া সংগ্রহের প্রায় ১০০টি আড়ত রয়েছে। গত কয়েক বছরে এসব আড়ত গড়ে উঠেছে। পোস্তা এলাকা থেকেও অনেকে সেখানে গেছেন। ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে এটিই এখন চামড়া সংগ্রহের বড় জায়গা। পোস্তার মতো সেখানেও চামড়া সংগ্রহ করা হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, ঠিকভাবে সংরক্ষণ না করায় প্রতিবছর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কোরবানির চামড়া নষ্ট হয়। ট্যানারিমালিকদের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) জানিয়েছে, গত বছর কোরবানির ঈদের প্রথম দুই দিনে সংরক্ষণের অভাবে সারা দেশে প্রায় পাঁচ লাখ কাঁচা চামড়া নষ্ট হয়েছিল।
মূলত ঢাকার বাইরের জেলাগুলোয় চামড়ার দাম একটু কম থাকে। তাই অনেকে বেশি দামের আশায় রাজধানীতে কাঁচা চামড়া নিয়ে আসেন। এতে অনেক সময় চামড়ার গুণগত মান কমে যায় বা নষ্ট হয়। এ জন্য নিকটস্থ এলাকাতেই চামড়া বিক্রি ও লবণজাতের পরামর্শ দেন ব্যবসায়ীরা।
অর্থনীতি
চাঁদপুরে ইউসিবির এটিএম বুথ বন্ধ, গ্রাহকদের চরম দুর্ভোগ

ঈদুল আযহার ছুটি শুরুর প্রথম দিন থেকেই ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) গ্রাহকরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। নেটওয়ার্ক সমস্যার অজুহাতে রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাংকের এটিএম বুথ হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, ফলে নগদ টাকা উত্তোলন করতে না পেরে বিপাকে পড়েছে ব্যাংকটির অসংখ্য গ্রাহক। তেমনি চাঁদপুর শহর ও বাবুরহাট এলাকা ঘুরে অন্য ব্যাংকের এটিএম বুথ খোলা থাকলেও ইউসিবির বুথ বন্ধ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, চাঁদপুর শহর ও বাবুরহাটে ইউসিবির দুটি শাখা রয়েছে। এতে বৃহস্পতিবার সকালে কিছু গ্রহক টাকা উঠাতে পারলেও দুপুর ১টার পর থেকে বন্ধ হয়ে যায় বুথের কার্যক্রম। এতে স্থানীয় গ্রাহক সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নাড়িরটানে গ্রামে ঈদ করতে আসা ঘরমুখো মানুষ গুলো টাকা না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন। ইউসিবির এটিএম বুথে টাকা না পেয়ে গ্রাহকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
চাঁদপুরের বিভিন্ন এলাকায় ইউসিবির এটিএম বুথে গিয়ে দেখা গেছে, বুথের দরজায় সাঁটানো রয়েছে “ছুটির কয়েকটা দিন এই এটিএম বন্ধ থাকবে” লেখা নোটিশ। এতে যাদের জরুরি নগদ টাকা প্রয়োজন ছিল, তারা চরম বিপাকে পড়েছেন।
ব্যাংকটির অন্য একটি বুথের সামনে সাঁটানো এক নোটিশে লেখা রয়েছে, “পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষ্যে আগামী ৫ জুন, বৃহস্পতিবার থেকে ১২ জুন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ থাকবে। কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার আপগ্রেডেশনের জন্য আগামী ৯ জুন সোমবার থেকে ১৪ জুন শনিবার পর্যন্ত ইউসিবির সকল ব্যাংকিং সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে”। তবে আগামী ৯ জুন থেকে এটিএম বন্ধ রাখার কথা থাকলেও আজ ৫ জুন থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এসব বুথ।
অন্যদিকে ঈদের বন্ধে এটিএম বুথের নিরাপত্তা ও টাকা রাখার বিষয়ে আগাম সতর্কতা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ঈদের ছুটি শুরুর প্রথম দিন থেকেই টাকা পাওয়া যাচ্ছে না ইউসিবির এটিএম বুথে। বেশির ভাগ ব্যাংক অন্য ব্যাংকের কার্ড দিয়ে টাকা উত্তোলন বন্ধ বা সীমিত করেছে। বিভিন্ন বুথ ঘুরে টাকা তুলতে না পেরে বিড়ম্বনায় পড়ছেন অনেকে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত সোমবার এটিএম বুথ, এমএফএস, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, পয়েন্ট অব সেলস, কিউআর কোড ও অনলাইন ই-পেমেন্ট গেটওয়েতে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও ইউসিবির বুথ বন্ধ করে দেওয়াকে প্রতারণা বলছেন গ্রাহকরা।
ঢাকা থেকে ঈদ উদযাপন করতে আসা মনির হোসেন জানান, টাকা না পেলে সমস্যায় পড়তে হবে। মো. সোহেল আকন টাকা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একাধিক গ্রাহক জানান, কোনো আগাম নোটিশ ছাড়াই এভাবে বুথ বন্ধ করে দেওয়ার কারণে বাজার করা, পরিবহন খরচসহ নানা কাজে বিপর্যয় ঘটেছে।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। গ্রাহকরা দ্রুত সমস্যার সমাধান এবং ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে আগাম প্রস্তুতির দাবি জানিয়েছেন ইউসিবি কর্তৃপক্ষের প্রতি।
ইউসিবির বুথ বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে জানতে ইউসিবির ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) মোহাম্মদ মামদুদুর রশিদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিরি রিসিভ করেননি। এ কারণে তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এবিষয়ে জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করে তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
অর্থসংবাদ/কাফি
অর্থনীতি
ঈদের আগে রিজার্ভ ছাড়াল ২৬ বিলিয়ন ডলার

রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানি আয় ইতিবাচক থাকায় বাড়ছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মোট মজুত বা রিজার্ভ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৪ জুন পর্যন্ত দেশে বৈদেশিক মুদ্রার মোট বা গ্রোস রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ০৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ২০ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। তবে, ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ এখনো ১৬ বিলিয়নের ঘরে রয়েছে।
শুক্রবার (৬ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, রিজার্ভ বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈদেশিক লেনদেনে চাপ কমেছে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় মূল্য বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরও ডলারের দাম ১২৩ টাকার মধ্যে স্থিতিশীল রয়েছে। একইসঙ্গে, এখন অনেক ব্যাংক গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী ঋণপত্র খুলতে পারছে, যার ফলে পণ্যের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে।
এর আগে, গত ৬ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মার্চ ও এপ্রিল মাসের আমদানি বিল বাবদ ১ দশমিক ৮৮৩ বিলিয়ন (১৮৮ কোটি ৩০ লাখ) মার্কিন ডলার পরিশোধ করার পর মোট রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়; বিপিএম-৬ কমে নামে ২০ বিলিয়ন ডলারে।
তারও আগে, ৪ মে মোট রিজার্ভ ছিল ২৭ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার; আর বিপিএম-৬ বা প্রকৃত রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার।
মোট রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় বিয়োগ করলে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ পাওয়া যায়। তবে, এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, তা হলো ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ। এ তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেখানে আইএমএফের এসডিআর খাতে থাকা ডলার, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা এবং আকুর বিল বাদ দিয়ে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের হিসাব করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেই হিসাবে দেশের ব্যয়যোগ্য প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৬ বিলিয়ন ডলার। প্রতি মাসে ৫ বিলিয়ন ডলার হিসেবে এ রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়।
দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রিজার্ভ উঠেছিল ২০২২ সালের আগস্টে। ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে ছিল ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে প্রতি মাসে কমতে কমতে সরকার পতনের আগে গত জুলাই শেষে তা ২০ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। তবে, সরকার পতনের পর আর রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার বিক্রি করছে না বাংলাদেশ ব্যাংক।
মূলত, রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানি আয় বাড়ার কারণেই রিজার্ভ বাড়ছে বলে অভিমত অর্থনীতিবিদদের। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ঈদের আগে চলতি জুন মাসের প্রথম তিন দিনে ৬০ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা) যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৭ হাজার ৪২৯ কোটি টাকার বেশি।
এর আগে, গেল মে মাসে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২৯৭ কোটি মার্কিন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাসিক প্রবাসী আয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ছিল ৩৬ হাজার ৫৩১ কোটি টাকারও বেশি।
এছাড়া, চলতি বছরের মার্চ মাসে বৈধপথে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছে ৩২৯ কোটি ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি। একক মাসে এত বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স আগে কখনো আসেনি বাংলাদেশে।
চলতি অর্থবছর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে ৩ জুন পর্যন্ত প্রবাসীরা মোট ২ হাজার ৮১১ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ২৯ দশমিক ৮০ শতাংশ বেশি। আগের অর্থবছরে একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল দুই হাজার ১৬৬ কোটি মার্কিন ডলার।
এদিকে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সংকট ও বৈশ্বিক প্রতিকূলতার মধ্যেও পণ্য রপ্তানিতে শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গেল মে মাসে বাংলাদেশ থেকে ৪৭৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি।
এছাড়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে— এই ১১ মাসে দেশের মোট পণ্য রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪৯৫ কোটি মার্কিন ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি।
কাফি
অর্থনীতি
ইউসিবির এটিএম বুথে মিলছে না টাকা, বিপাকে গ্রাহকরা

ঈদুল আযহার ছুটি শুরুর প্রথম দিনেই ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) গ্রাহকরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। নেটওয়ার্ক সমস্যার অজুহাতে ব্যাংকের বেশিরভাগ এটিএম বুথ হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, ফলে নগদ টাকা উত্তোলনে ব্যর্থ হয়েছেন বহু গ্রাহক।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাতে রাজধানীর মতিঝিল-দিলকুশা সহ বিভিন্ন এলাকায় ইউসিবির এটিএম বুথে গিয়ে দেখা গেছে, বুথের দরজায় সাঁটানো রয়েছে “ছুটির কয়েকটা দিন এই এটিএম বন্ধ থাকবে” লেখা নোটিশ। এতে যাদের জরুরি নগদ টাকা প্রয়োজন ছিল, তারা চরম বিপাকে পড়েছেন।
ব্যাংকটির আরও একটি বুথের সামনে সাঁটানো এক নোটিশে লেখা রয়েছে, “পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষ্যে আগামী ৫ জুন, বৃহস্পতিবার থেকে ১২ জুন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ থাকবে। কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার আপগ্রেডেশনের জন্য আগামী ৯ জুন সোমবার থেকে ১৪ জুন শনিবার পর্যন্ত ইউসিবির সকল ব্যাংকিং সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে”। তবে আগামী ৯ জুন থেকে এটিএম বন্ধ রাখার কথা থাকলেও আজ ৫ জুন থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এসব বুথ।
অন্যদিকে ঈদের বন্ধে এটিএম বুথের নিরাপত্তা ও টাকা রাখার বিষয়ে আগাম সতর্কতা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ঈদের ছুটি শুরুর প্রথম দিনেই টাকা পাওয়া যাচ্ছে না ইউসিবির এটিএম বুথে। বেশির ভাগ ব্যাংক অন্য ব্যাংকের কার্ড দিয়ে টাকা উত্তোলন বন্ধ বা সীমিত করেছে। বিভিন্ন বুথ ঘুরে টাকা তুলতে না পেরে বিড়ম্বনায় পড়ছেন অনেকে।
ভুক্তভোগীরা জানান, ঈদের বাজার ও ভ্রমণের ব্যস্ত সময়ে এমন ভোগান্তি তাদের পরিকল্পনা ব্যাহত করেছে। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগাম নোটিশ না দিয়ে এমন গুরুত্বপূর্ণ সময় বুথ বন্ধ রাখা গ্রাহকসেবার চরম ব্যর্থতা। এসব ছলচাতুরি ও প্রতারণার ছাড়া কিছুই না।
এ নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন গ্রাহকরা। মতিঝিল এলাকায় একজন গ্রাহক বলেন, “ঈদের ছুটি শুরুর প্রথম দিনেই এমন সংকট মেনে নেওয়া যায় না। টাকা না থাকলে জরুরি কেনাকাটা, যাতায়াত-সব কিছুই বন্ধ হয়ে যায়।” এমন সময়ে এ ধরনের সিদ্ধান্তে ভোগান্তি চরমে উঠেছে। গ্রাহকরা দ্রুত বুথ সচল এবং বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার থেকে টানা ১০ দিনের ছুটি শুরু হয়েছে। বন্ধের মধ্যেও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় সীমিত পরিসরে কয়েকদিন ব্যাংক চলবে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশের ১৮টি পশুর হাটসংলগ্ন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একটি হাটসংলগ্ন ব্যাংক শাখা গতকাল থেকে ঈদের আগের রাত পর্যন্ত খোলা থাকবে। এ ছাড়া আজ ৫ জুন ঢাকা মহানগর, আশুলিয়া, টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার, ভালুকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের তৈরি পোশাক সংশ্লিষ্ট শাখা এবং ঈদের পর ১১ ও ১২ জুন ওষুধ শিল্পসহ আমদানি, রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকার বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী শাখা খোলা রাখতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত সোমবার এটিএম বুথ, এমএফএস, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, পয়েন্ট অব সেলস, কিউআর কোড ও অনলাইন ই-পেমেন্ট গেটওয়েতে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
এবিষয়ে জানতে ইউসিবির ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) মোহাম্মদ মামদুদুর রশিদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান অর্থসংবাদ’কে বলেন, এটিএম বুথের নিরাপত্তা ও পর্যাপ্ত টাকা রাখার বিষয়ে আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছে। তবে ইউসিবির বুথ বন্ধ থাকার নোটিশের বিষয়ে আমরা অবগত না। ব্যাংককে শাস্তি দেওয়া আমাদের উদ্দেশ্য না। আমাদের উদ্দেশ্য গ্রাহকের সেবা নিশ্চিত করা।
অর্থসংবাদ/কাফি