শিল্প-বাণিজ্য
চেম্বার-অ্যাসোসিয়েশন প্রধানদের সঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের মতবিনিময়

চেম্বার ও খাতভিত্তিক অ্যাসোসিয়েশন প্রধানদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট মতবিনিময় সভা করেছে দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানি শুল্ক, আয়কর, মূসক ও অন্যান্য কর সম্পর্কিত প্রস্তাবনা ও সুপারিশ নিয়ে এ আলোচনার আয়োজন করে সংগঠনটি।
শনিবার (২৩ মার্চ) দুপুর ১২ টায় এফবিসিসিআইর বোর্ড রুমে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, আগামী ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটের জন্য এফবিসিসিআইয়ের বাজেট প্রস্তাবনা প্রণয়নের কার্যক্রম ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। বিভিন্ন চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন থেকে বেশ কিছু প্রস্তাবনা আমরা পেয়েছি যেগুলো যাচাই- বাছাইপূর্বক এফবিসিসিআইয়ের প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্তকরণের বিষয়ে কার্যক্রম চলছে। পাশাপাশি বাজেট প্রস্তাবনা নিয়ে এফবিসিসিআই কর্তৃক গঠিত বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
এছাড়াও এফবিসিসিআইয়ের আয়কর, আমদানি শুল্ক ও মূসক বিষয়ে মৌলিক প্রস্তাবনাসমূহ নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়কর, মূসক ও শুল্ক বিষয়ক বাজেট টাস্কফোর্সে আলোচনা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মাহবুবুল আলম আরও বলেন, দেশের জাতীয় অর্থনীতি একটি শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়ালেও চলমান বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকট অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্যও চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে চলেছে। করোনা পরবর্তী দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং মধ্যপ্রাচ্য সংকট প্রভৃতি এবং এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সহায়ক পরিবেশকে আরও সুদৃঢ় ও জোরদার করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বিদ্যমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জসমূহ বিবেচনায় নিয়ে জাতীয় লক্ষ্যমাত্রাসমূহের আলোকে সুষ্ঠু অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সমুন্নত রাখতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় পর্যায়ক্রমে সুদৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সে লক্ষ্যে আগামী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকবে বলে এফবিসিসিআই মনে করে। এরই আলোকে এফবিসিসিআইয়ের বাজেট প্রস্তাবনা প্রণয়ন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানকে দৃঢ় করতে ব্যবসায়িক খরচ (কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস) কমিয়ে আনা, বিনিয়োগ সুরক্ষা, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সুষম বিনিয়োগ সহায়ক মুদ্রা ও শুল্ক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, শিপিং খরচসহ সকল ধরনের পরিবহণ খরচ হ্রাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানীসহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে স্থায়ী পরিকাঠামো উন্নয়নে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি কর আদায়ের ক্ষেত্রে হয়রানি দূরীকরণের মাধ্যমে ব্যবসা-বান্ধব কর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে আগামী বাজেটে বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য প্রস্তাবনায় আহ্বান জানানো হবে বলেও মন্তব্য করেন মাহবুবুল আলম।
এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী জানান ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন মতামত ও সুপারিশ নিয়ে যৌক্তিক প্রস্তাবনা তৈরিতে এফবিসিসিআই কাজ করছে। এছাড়াও এনবিআর, ভ্যাট ও কাস্টমস এর সাথে এ বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আজকের আলোচনার বিষয়গুলি আগামী বাজেট প্রস্তাবনা প্রস্তুতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
মতবিনিময় সভায় আসন্ন বাজেট নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন বিভিন্ন চেম্বার ও খাতভিত্তিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রধানগণ। বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্থানীয় শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ তুলে ধরা হবে।
এছাড়াও পণ্যের এইচএস কোড, বর্ধিত জরিমানা, শুল্কায়ন মূল্য বিষয়ে জোরালো ভাবে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে এফবিসিসিআইর সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী, বর্তমান সহ-সভাপতি মো. মুনির হোসেন, পরিচালকবৃন্দ, চেম্বার ও খাতভিত্তিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রধানগণ, এবং ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কাফি

শিল্প-বাণিজ্য
যুক্তরাষ্ট্রে ৭ মাসে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২২ শতাংশ

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পাল্টা শুল্ক পুরোপুরি কার্যকর হয়েছে গত মাসে। এর আগে গত জানুয়ারি থেকে জুলাই (সাত মাসে) এই বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ২২ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির এই হার যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষ পাঁচ রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।
চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ থেকে ৪৯৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি। শুধু জুলাইয়ে রপ্তানি হয়েছে ৭০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৪ হাজার ৫৮০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই আমদানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেশি।
গত ৩১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন বিভিন্ন দেশের পণ্য আমদানির ওপর সংশোধিত পাল্টা শুল্কহার ঘোষণা করে। গত ৭ আগস্ট এই শুল্কহার কার্যকর হয়। সংশোধিত হার অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের পণ্যে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বসেছে। ভারতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে হারটি দাঁড়িয়েছে ২৫ শতাংশ। আর ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া ও পাকিস্তানের পাল্টা শুল্কের হার ১৯ শতাংশ। এখন পর্যন্ত চীনের পণ্যে পাল্টা শুল্ক ৩০ শতাংশ।
একাধিক তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক বলেন, চীনের হারানো ক্রয়াদেশের একটা অংশ বাংলাদেশে আসছে। ছয় থেকে আট মাস ধরে তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। পাল্টা শুল্কের কারণে সামনের মৌসুম থেকে আরও বাড়তি ক্রয়াদেশ আসতে পারে। যদিও কোনো কোনো ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাড়তি শুল্কের একটি অংশ বহন করতে রপ্তানিকারকদের চাপ দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে দীর্ঘদিন ধরে চীন শীর্ষস্থানে থাকলেও উভয় দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে সেই জায়গাটি দখলে নিয়েছে ভিয়েতনাম। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ভিয়েতনাম ৯৪৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি। শুধু জুলাইয়ে ভিয়েতনাম ১৬৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ১২ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে চীন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ে চীন ৬৯২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১ শতাংশ কম। শুধু জুলাইয়ে চীন ১১৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এই রপ্তানি গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় ৩৮ শতাংশ কম। শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে চীনের রপ্তানিই সবচেয়ে বেশি কমেছে।
অটেক্সার তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চতুর্থ শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারক ভারত চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ৩৩১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়া চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ২৬৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ।
বাংলাদেশের একাধিক উদ্যোক্তা জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে জড়ায়। তখন থেকেই চীন থেকে অল্প অল্প ক্রয়াদেশ সরছে। গত বছর নির্বাচনী প্রচারণায় চীনের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের অনেকে বাংলাদেশে বাড়তি ক্রয়াদেশ দেওয়া শুরু করে। সে জন্য দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বাড়তে থাকে।
বাংলাদেশের শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি অনন্ত গ্রুপ। গত অর্থবছরে শিল্প গ্রুপটির ছয়টি প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে ৪৬ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে।
জানতে চাইলে অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির বলেন, মার্কিন ক্রেতাদের কেউ কেউ আমাদের কাছে বাড়তি পাল্টা শুল্কের একটি অংশ দাবি করছেন। শুধু তা–ই নয়, মিসর, হাইতির যেসব দেশে পাল্টা শুল্ক কম সেসব দেশে আমাদের উৎপাদন ইউনিট স্থাপনের পরামর্শ দিচ্ছে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা অন্য দেশের উদ্যোক্তাদেরও একই প্রস্তাব দিচ্ছে। ফলে সামনের দিনে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গত বছর বাংলাদেশ থেকে ৭৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। এই রপ্তানি ২০২৩ সালের তুলনায় দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। যদিও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ২০২৩ সালে রপ্তানি কমেছিল ২৫ শতাংশ। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছিল ৭২৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক।
শিল্প-বাণিজ্য
তিন বছর পর হিলি দিয়ে টমেটো আমদানি শুরু

টানা তিন বছর বন্ধের পর দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে টমেটো আমদানি শুরু হয়েছে। চট্টগ্রামের বড় বাজার নামক একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে এসব টমেটো আমদানি করছে।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ভারত থেকে টমেটোবোঝাই একটি ট্রাক হিলি বন্দরে প্রবেশের মধ্যদিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রথমদিন ২৮ টন টমেটো আমদানি হয়েছে। প্রতিকেজি টমেটো শুল্কসহ আমদানি খরচ গুনতে হচ্ছে ৬১ টাকা।
আমদানিকারক এনামুল হক বলেন, দেশের বাজারে চাহিদা থাকায় ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে এসব টমেটো আমদানি করা হচ্ছে। বন্দরে প্রতিকেজি টমেটো ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা থাকলে আরও বেশি পরিমাণ আমদানি করা হবে।
হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে এক ট্রাকে ২৮ টন টমেটো আমদানি হয়েছে। আমদানিকৃত এসব টমেটো ৫০০ ডলারে শুল্কায়ন করা হচ্ছে। যেহেতু টমেটো কাঁচাপণ্য তাই দ্রুত ছাড়করণে আমদানিকারককে সবধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
হিলি উদ্ভিদ সংগোনিরোধের তথ্যমতে, ২০২২ সালের ৬ আগস্ট সবশেষ এ বন্দর দিয়ে টমেটো আমদানি হয়েছিল।
শিল্প-বাণিজ্য
বেনাপোল দিয়ে চাল আমদানি শুরু, দাম কমার আশা

চার মাস বন্ধ থাকার পর আবারও বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হয়েছে। এতে দেশের বাজারে চালের দাম কমে আসবে বলে দাবি আমদানিকারকদের।
প্রথম চালানে বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে ভারতীয় ৯টি ট্রাকে ৩১৫ মেট্রিক টন চাল বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করেছে। বন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবীর তরফদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বেনাপোলের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাজি মুসা করিম অ্যান্ড সন্স এসব চাল আমদানি করেছে। এতে রপ্তানিকারক ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সুধর্ম আয়াতনিরিয়াত প্রাইভেট লিমিটেড।
জানা গেছে, প্রতিকেজি চালের আমদানি মূল্য ধরা হয়েছে শূন্য দশমিক ৪০৫ মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫১ টাকার সমান। বাজারজাত করতে এর সঙ্গে পরিবহন, সরকারি শুল্ক, গুদামভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ যুক্ত হবে।
বেনাপোল বন্দরের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাজী মুসা করিম অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুস সামাদ জানান, গত মঙ্গলবার থেকে ভারতীয় ৯ ট্রাক ভর্তি ৩১৫ মেট্রিক টন মোটা চাল আমদানির জন্য ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে অপেক্ষায় ছিল। এসব চাল বৃহস্পতিবার বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করেছে। পেট্রাপোল বন্দরে আরও চাল বোঝাই ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। শনিবার বেনাপোল কাস্টমসে বিল অফ এন্ট্রি জমা দিয়ে ওই চাল ছাড় করার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি আরও জানান, দেশের বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির অনুমতি দিতে ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে আবেদন আহ্বান করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। চলতি বছরের ২৩ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত আবেদন করার শেষ সময় ছিল। সারাদেশের মতো বেনাপোল স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা চাল আমদানির অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। বেনাপোল স্থলবন্দরের বেশ কয়েকজন আমদানিকারক চালের বরাদ্দ পেয়েছেন। আমদানির অনুমতিপত্র বা আইপি পাওয়ার পর অনেকে এলসি খুলেছেন। যার বিপরীতে বন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু হয়েছে।
তিনি জানান, আমদানির অনুমতিপ্রাপ্ত আরও আমদানিকারকরা পর্যায়ক্রমে এলসি খুলছেন। ফলে রোববার (২৪ আগস্ট) থেকে চাল আমদানি বাড়তে পারে। চাল আমদানির ফলে দেশের বাজারে চালের দাম কমে আসবে। কেজি প্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা দাম কমে যাবে। ভালো মানের চিকন জাতের চাল ৬৭ থেকে শুরু করে ৭০ টাকার মধ্যে থাকবে। স্বর্ণা জাতের চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকার মধ্যে থাকবে বলেও জানান তিনি।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা বলেন, চার মাস বন্ধ থাকার পর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে আবারও ভারতীয় চাল আমদানি শুরু হয়েছে। বন্ধের পর শুরুর প্রথম দিনে ৯ ট্রাকে ৩১৫ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। আরও অনেক ট্রাক চাল ঢোকার অপেক্ষায় রয়েছে।
বেনাপোল উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কর্মকর্তা শ্যামল কুমার নাথ জানান, চলতি বছরের গত ১৫ এপ্রিল এ বন্দর দিয়ে সর্বশেষ চাল আমদানি হয়। বৃহস্পতিবার থেকে আবারো চাল আমদানি শুরু হয়েছে। এদিন ৯টি ট্রাকে ৩১৫ মেট্রিক টন ভারতীয় চাল আমদানি হয়েছে। আমদানিকৃত চালের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দ্রুত সনদ প্রদান করা হবে যাতে দ্রুত ছাড়করণ নিতে পারেন।
শিল্প-বাণিজ্য
হিলি স্থলবন্দরে দেড় মাসে আয় ১৮ কোটি টাকা

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চলতি অর্থ বছরের ৩০ জুন থেকে ভারতে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি শুরু হয়েছে। এতে আগের তুলনায় রপ্তানি খাতে বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার আয়। এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৯১ টন পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়েছে। যা থেকে ১৭ লাখ ১০ হাজার ৫০০ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ সরকার।
এই বন্দর দিয়ে বিগত কয়েক বছর তেমন কোনো পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়নি। তবে বর্তমান ভারতে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। হিলি স্থলবন্দর মূলত আমদানি নির্ভর হলেও এখানে দিন-দিন বাড়ছে পণ্য রপ্তানি পরিমাণ। এই বন্দর দিয়ে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয় তার বিপরীতে প্রায় ৭০ শতাংশ পণ্যই ভারত থেকে আমদানি হয়ে থাকে। বর্তমানে হিলি বন্দর থেকে রাইস ব্রান (তুষের তেল), টোস্ট বিস্কুট, ম্যাংগো জুস, ঝুট কাপুড়, নুডুলসসহ বিভিন্ন ধরনের বেকারি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। চলতি বছরের ৩০ জুন থেকে আগস্টের ২০ তারিখ পর্যন্ত ২ হাজার ৯১ টন পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যা থেকে ১৭ লাখ ১০ হাজার ৫০০ ডলার আয় এসেছে। যা বাংলা টাকায় প্রায় ১৮ কোটি।
বাংলাহিলি সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি ফেরদৌস রহমান বলেন, সরকারের আয়ের পাশাপাশি এই স্থলবন্দরে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অনেক শ্রমিক। ভারতের অভ্যন্তরে কিছু সমস্যা সমাধান করা গেলে এখানকার রপ্তানির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে মনে করেন বন্দরের ব্যবসায়ীরা।
এদিকে হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা নিজাম উদ্দীন বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দীর্ঘদিন রপ্তানি বন্ধ থাকলেও বর্তমানে ভারতে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারির পর থেকে আর কোনো পণ্য রপ্তানি হয়নি। পরে চার মাস পর ৩০ জুন থেকে ভারতে আবার পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। কাস্টমসের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
শিল্প-বাণিজ্য
পরিবেশবান্ধব লিড সনদ পেলো আরও ৫ পোশাক কারখানা

বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাত পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের দিক থেকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জনের পথে পা রেখেছে। সম্প্রতি আরও পাঁচটি পোশাক কারখানা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের ‘লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন’ (লিড) সনদ পেয়েছে।
ফলে বাংলাদেশের মোট লিড সনদপ্রাপ্ত কারখানার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫৮টি, যার মধ্যে রয়েছে ১০৯টি প্লাটিনাম এবং ১৩৩টি গোল্ড সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত কারখানা। এ অর্জনের ফলে বাংলাদেশ বিশ্বে পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানার সংখ্যায় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।
নতুন সনদপ্রাপ্ত পাঁচটি কারখানার মধ্যে একটি হলো ময়মনসিংহের ভালুকায় অবস্থিত রাইদা কালেকশন সবচেয়ে বেশি ৯০ পয়েন্ট পেয়ে টেকসই ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার জন্য প্লাটিনাম সনদ অর্জন করেছে।
আশুলিয়ায় অবস্থিত সাউথ অ্যান্ড সুয়েটার কোং লিমিটেড নতুন নির্মিত ভবনের পরিবেশবান্ধব নকশা ও নির্মাণের মাধ্যমে ৮৫ পয়েন্ট পেয়ে প্লাটিনাম সার্টিফিকেশন অর্জন করেছে।
চট্টগ্রামের কেডিএস ফ্যাশন লিমিটেড টেকসই ব্যবস্থাপনা ও শক্তি দক্ষতার জন্য ৮৪ পয়েন্ট পেয়ে প্লাটিনাম সনদ পেয়েছে।
সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে অবস্থিত পুরবাণী ফ্যাশন লিমিটেড পুরাতন ভবনের দক্ষ ব্যবস্থাপনার জন্য ৮৩ পয়েন্ট পেয়ে প্লাটিনাম সার্টিফিকেশন পেয়েছে।
গাজীপুরে অবস্থিত টেক্সইউরোপ বিডি লিমিটেড পরিবেশবান্ধব নতুন অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে ৭০ পয়েন্ট পেয়ে গোল্ড সার্টিফিকেশন পেয়েছে।
এই অর্জন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক এবং বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বর্তমানে যেখানে বৈশ্বিক বাজার অনিশ্চয়তা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশোধমূলক শুল্ক এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা আমাদের পোশাক খাতের জন্য বড় বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে, সেখানে উদ্যোক্তাদের টেকসই অবকাঠামোতে ধারাবাহিক বিনিয়োগ নিঃসন্দেহে একটি দূরদর্শী ও সাহসী সিদ্ধান্ত।
প্রতিটি লিড-সনদপ্রাপ্ত কারখানা কেবল একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নয়, বরং এটি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের পরিবেশবান্ধব ভবিষ্যতের প্রতি অঙ্গীকারের প্রতিচ্ছবি। এমন নেতৃত্ব ও অগ্রযাত্রা আমাদের শুধু আশাবাদীই করে না, বরং বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে টেকসই শিল্পের রোল মডেল হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করে।