জাতীয়
খুলনায় সুইডেন রাজকন্যা ক্রাউন ভিক্টোরিয়া

জলবায়ু পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্থানীয় লোকজনের জীবনমান অবলোকন করতে খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রায় পৌঁছেছেন সুইডেনের প্রিন্সেস ক্রাউন ভিক্টোরিয়া। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সকাল ৮টায় তিনি মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের গিলাবাড়ি এলাকার নয়নী মাঠে নির্মিত হেলিপ্যাডে অবতরণ করেছেন।
জানা যায়, তিনি পর্যায়ক্রমে মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ন পরিষদ, মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ ও মদিনাবাদ ডিজিটাল পোস্ট অফিসসহ ৬টি স্থান পরিদর্শন শেষে বেলা ১২টায় কপোতাক্ষ কলেজ মাঠে আসবেন। এখানে নির্মিত হেলিপ্যাড থেকে তিনি কয়রা ত্যাগ করবেন। সংক্ষিপ্ত সময়ে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝুঁকিতে থাকা ২টি এলাকা পরিদর্শন করবেন ও ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের অনুভূতি শুনবে, তাদের জীবন-জীবিকা অবলোকন করবেন।
প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্থানীয় লোকজনের জীবনমান অবলোকন, মহারাজপুর ও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ন পরিষদ ডিজিটালাইজেশনে রূপান্তর কার্যক্রম নিজ চোখে দেখা, মদিনাবাদ স্মার্ট পোস্ট সেন্টারের উদ্বোধন এবং ব্যবসায়িক খাতের ভূমিকার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে এসডিজি বাস্তবায়নে অগ্রগতি এবং চলমান কয়রার দূর্যোগ কবলিত চ্যালেঞ্জগুলো পরিদর্শন করবেন।
কয়রা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রীয় অতিথি কয়রায় আগমন উপলক্ষ্যে ৫০০ স্থানে ১ হাজার ৬০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি, র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী, কোস্টগার্ড, গোয়েন্দা নজরদারিসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
অর্থসংবাদ/এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয়
পাহাড় থেকে সমতল, সারাদেশে আজ নববর্ষের আমেজ: শিল্প উপদেষ্টা

পাহাড় থেকে সমতল, সারাদেশে আজ নববর্ষের আমেজ। বাংলাদেশের মানুষ আজ এক হয়ে উদযাপন করছে নববর্ষ। সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা চলছে সারা দেশে। আমরা একটা ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে ফ্যাসিবাদ উত্তর বাংলাদেশে দাঁড়িয়েছি। আমরা এই উৎসব ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে চাই বলে জানিয়েছেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
আজ সোমবার (১৪ এপ্রিল) ঢাকায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) ও বাংলা একাডেমির যৌথ আয়োজনে শুরু হয়েছে সাত দিনব্যাপী ‘বৈশাখী মেলা-১৪৩২’।
মেলার উদ্বোধন করেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমান, সংস্কৃতিবিষয়ক সচিব মো. মফিদুর রহমান এবং বাংলা একাডেমির সভাপতি আবুল কাসেম ফজলুল হক।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিসিক চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম।
শিল্প উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, হস্তশিল্প, খাদ্যজাতপণ্যের বিদেশে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। উদ্যোক্তারা এই মেলার মাধ্যমে এসব পণ্যের বিদেশে রপ্তানি যোগ্য করে তুলবে। উদ্যোক্তারা যেভাবে ৫ আগস্ট উত্তর বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তাতে আরেকটি শিল্প বিপ্লবের দিকে এগিয়ে যাবে দেশ। আমি আশা করি বাংলা একাডেমি আয়োজিত এই মেলা উদ্যোক্তাদের উন্নয়নের ভূমিকা রাখবে।
শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, বাংলা নববর্ষ আমাদের জীবনের অংশ হয়ে আছে। বাংলা নববর্ষ আমাদের সর্বজনীন অনুষ্ঠান। আজকের মেলার মাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি ও তরুনদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
সংস্কৃতিবিষয়ক সচিব মো. মফিদুর রহমান বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক সংস্কৃতির মাধ্যমে ঢাকাসহ সারাদেশে বৈশাখী মেলার আয়োজন হয়েছে।
আলোচনা পর্ব শেষে অতিথিরা মেলা ঘুরে দেখেন, উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
নানা ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বর্ষবরণ আয়োজন সফল: ঢাবি ভিসি

দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেছেন, অনেক বাধা বিপত্তি ছিল, অযৌক্তিক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছিল। সবার সহযোগিতায় ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এ আয়োজন সফল হয়েছে।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
ঢাবি উপাচার্য বলেন, মাত্র ৮ দিনের মধ্যে এমন আয়োজন সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। নানা ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এ আয়োজন সফল হয়েছে। কঠিন সময়ে সাংবাদিকরা আমাদের সাথে নিরবচ্ছিন্নভাবে ছিলেন বলেও ধন্যবাদ জানান তিনি।
তিনি বলেন, বড় মাপের একটি উৎসব আমরা বাধা-বিপত্তি ছাড়া শেষ করতে পেরেছি।
উপাচার্য বলেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে জাতিসংঘ আমাদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছিল, সেখানে তিনটি বিষয়। একটি ছিল আমাদের যত নৃগোষ্ঠী আছে এবং সংস্কৃতি আছে তা যেন তুলে ধরতে পারি। এবার কিন্তু সেটিই করা হয়েছে। এবার সব থেকে জাকজমকপূর্ণ এবং সবচেয়ে বৈচিত্রপূর্ণ শোভাযাত্রা বের করা হয়েছে।
বহু মানুষের রক্তের বিনিময়ে ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানে যে সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচিত হয়েছে তা যেন আমরা হারাতে না দেই বলেও জানান তিনি।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ৪ স্তরের নিরাপত্তা

রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ড্রোন শোতে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র্যাব। সোমবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে র্যাব-২ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খালিদুল হক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ মূলমন্ত্র ধারণ করে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হচ্ছে। র্যাব দুইদিন আগে থেকেই বিভিন্ন নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ফুট পেট্রোল, রবোস্ট পেট্রোল, সাদা পোশাকে নিরাপত্তা এবং ড্রোন ও সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।
র্যাব-২ এর অধিনায়ক বলেন, সন্ধ্যায় চীন দূতাবাস ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে প্রথমবারের মতো ড্রোন শো প্রদর্শিত হবে। এটি নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ ও উদ্দীপনা রয়েছে। আগ্রহ ও উদ্দীপনা নিয়ে আশা করছি ব্যাপক দর্শক সমাগম হবে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে এবং আনন্দের সঙ্গে এই অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে। অতীতের যে কোনো সময়ের রেকর্ড ভেঙে দেবে।
কোনো নিরাপত্তার শঙ্কা আছে কি না জানতে চাইলে অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খালিদুল হক বলেন, আশঙ্কা থাকবে, আশঙ্কাকে আমরা আন্ডারমাইন্ড করি না। অঘটন ও দুর্ঘটনা মাথায় রেখেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সর্বোচ্চ শক্তি ও সর্বোচ্চ ডেপ্লয়মেন্টের মাধ্যমে সুন্দরভাবে এই অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে পারবো।
এর আগে ১২ এপ্রিল রাতে সংসদ ভবন এলাকায় পরীক্ষামূলক ড্রোন শো হয়। সেই রাতেই সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ড্রোন শোর কিছু ছবি শেয়ার করেন।
ফারুকী লেখেন, আজকের ড্রোন শোর কিছু ঝলক! এটি পুরো শোর কেবল এক ঝলক মাত্র। ১৪ এপ্রিল বিকেল ৩টায় মানিক মিয়া এভিনিউয়ে ড্রোন শো আর লাইভ মিউজিকের অসাধারণ এক প্রদর্শনী দেখার আমন্ত্রণ।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
দেশ থেকে অশুভ দূর হয়েছে: প্রেস সচিব

দেশ থেকে ইতোমধ্যে অমঙ্গল দূর হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, আমরা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের চেষ্টা করছি। যেটুকু অশুভ আছে, তাও দূর হয়ে যাবে।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) রমনার বটমূলে বর্ষবরণ উৎসবে যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
শফিকুল আলম বলেন, নতুন বাংলাদেশে নববর্ষের উৎসব একটি মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। সবাই সকাল থেকে খুব আনন্দে আছি। নববর্ষকে বরণ করছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ইচ্ছা ছিল আমরা সবাই সমতল ও পাহাড়ের জাতি-গোষ্ঠী সবাই মিলে একসঙ্গে মিলে আনন্দ করব, আনন্দ ভাগাভাগি করব। এটা হয়েছে।
এ সময় দেশের উত্তরোত্তর উন্নতির প্রচেষ্টার কথাও জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
মধ্যরাত থেকে ৫৮ দিন সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা

প্রজনন মৌসুমে সামুদ্রিক মাছ, বিশেষ করে ইলিশ রক্ষায় বাংলাদেশসহ উপকূলীয় অনেক দেশই প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সমুদ্রগামী মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে আগামী সোমবার (১৫ এপ্রিল) মধ্যরাত থেকে শুরু হচ্ছে বঙ্গোপসাগরে ৫৮ দিনের সর্বাত্মক মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা, যা চলবে ১১ জুন পর্যন্ত। তবে এবারও নিষেধাজ্ঞার পূর্বে খাদ্য সহায়তা পাননি জেলেরা।
অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারতও ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত তাদের সমুদ্রসীমায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অর্থাৎ দু’দেশের সমন্বিত এই উদ্যোগে বৃহৎ পরিসরে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ও মাছের প্রজননে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গ্রীষ্মের এই সময়টি সামুদ্রিক মাছ, বিশেষ করে ইলিশের প্রধান প্রজননকাল। মাছগুলো ডিম ছাড়ে উপকূলবর্তী এলাকায়। এই সময়ে যদি অধিক হারে মাছ ধরা হয়, তাহলে প্রজনন ব্যাহত হয় এবং পরবর্তী মৌসুমে মাছের উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। এ কারণেই ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার সমুদ্রগামী সব প্রকার মাছ ধরায় প্রতি বছর গ্রীষ্মকালীন এই নিষেধাজ্ঞা চালু করে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রজননকালে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে পরবর্তী মৌসুমে ইলিশের উৎপাদন প্রায় ২০-২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। পটুয়াখালী জেলার মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এই সময়ে সামুদ্রিক মাছগুলো নিরাপদে ডিম ছাড়ে ও বংশবৃদ্ধি করে। দুই দেশের সমন্বিত এই নিষেধাজ্ঞা বঙ্গোপসাগরের মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে।’
সমুদ্র শান্ত, কিন্তু উত্তাল উপকূল
তবে মাছ ধরার ওপর এই দীর্ঘমেয়াদি নিষেধাজ্ঞা সরাসরি আঘাত হানে উপকূলের লাখো মানুষের জীবিকায়। বিশেষ করে দিনমজুর নির্ভর জেলে পরিবারগুলো এই সময়ে চরম দুর্দশায় পড়ে। সরকার প্রতি বছর নিবন্ধিত জেলেদের জন্য খাদ্য সহায়তা ঘোষণা করলেও, বাস্তব চিত্র কিছুটা ভিন্ন।
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার জেলে নুরুল হক মাঝি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা হলেই আমাদের কাজ বন্ধ। সরকার বলে চাল দেবে, কিন্তু অনেক সময় পাই না, আবার দেরি হয়। অনেকেই পাই না যারা সত্যিই মাছ ধরে।’
পটুয়াখালী জেলায় বর্তমানে নিবন্ধিত জেলে ৬৯ হাজারের বেশি। কিন্তু স্থানীয়ভাবে ধারণা করা হয়, অনিবন্ধিত ও ভাসমান জেলে মিলিয়ে এ সংখ্যা ১ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এদের অনেকে সরকারি সহায়তার বাইরে থেকে যান।
স্থানীয় মৎস্যজীবী সংগঠনগুলোর দাবি, সহায়তার তালিকায় অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি রয়েছে। সহায়তার চাল সময়মতো পৌঁছায় না, এবং প্রকৃত জেলের জায়গায় অনেক সময় সুবিধাভোগী হন প্রভাবশালী ব্যক্তি বা রাজনৈতিক সংযোগধারীরা।
সমন্বিত প্রচেষ্টা, ভবিষ্যতের জন্য সম্ভাবনা
এই বছর বাংলাদেশের নিষেধাজ্ঞা ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন, আর ভারতের ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। ফলে এই সময়টায় বঙ্গোপসাগরের বড় একটি অঞ্চল কার্যত নিষ্ক্রিয় থাকবে মাছ ধরার ক্ষেত্রে, যা ভবিষ্যতের জন্য টেকসই মাছ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সামুদ্রিক মাছের উৎপাদন বাড়াতে এবং প্রজাতিসমূহের টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা বন্ধ রাখার এই উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ফিশের সাবেক গবেষক ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সময়টি ইলিশসহ অনেক সামুদ্রিক মাছের জন্য প্রজননের উপযুক্ত সময়। এই সময়ে মাছ ধরা বন্ধ রাখা মানে শুধু পরবর্তী মৌসুমের উৎপাদন বাড়ানো নয়, বরং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষা, খাদ্য চক্র বজায় রাখা ও দীর্ঘমেয়াদে সমুদ্রসম্পদ টেকসই করার জন্য একটি অত্যন্ত কার্যকর কৌশল।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বের উন্নত মৎস্যসম্পন্ন দেশগুলোও এই ধরনের নিষেধাজ্ঞাকে সমুদ্রসম্পদ ব্যবস্থাপনার মূল অংশ হিসেবে বিবেচনা করে। আমাদের মতো দেশগুলোর জন্য এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আমাদের বিপুল জনগোষ্ঠী সামুদ্রিক মাছের ওপর নির্ভরশীল। তাই বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ এই সিদ্ধান্ত একটি প্রশংসনীয় অগ্রগতি। তবে, এটি যেন শুধু প্রশাসনিক আদেশে সীমাবদ্ধ না থাকে। মাঠপর্যায়ে জেলেদের জন্য বিকল্প জীবিকা, খাদ্য সহায়তা এবং সচেতনতা নিশ্চিত করতে হবে—তা না হলে তারা অনিয়মিতভাবে মাছ ধরায় ফিরে যেতে পারে, যা পুরো উদ্যোগকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞা একটি সময়োপযোগী ও বৈজ্ঞানিক পদক্ষেপ, তবে এর সাথে সমান্তরালভাবে জেলেদের জন্য সঠিক তালিকাভুক্তি, নিয়মিত খাদ্য সহায়তা, এবং জীবিকা বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরি। সাগর যেমন বিশ্রাম পাচ্ছে, তেমনি বিশ্রামের দরকার উপকূলবাসীর দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মনেও।
বাংলাদেশ-ভারতের এই সমন্বিত নিষেধাজ্ঞা সাগরের জন্য নিঃসন্দেহে ইতিবাচক বার্তা। কিন্তু উপকূলের লাখো জেলের জীবিকা যদি না পায় সুরক্ষা, তবে এই উদ্যোগ থেকে যাবে কেবল কাগজে-কলমে। সরকারি সহায়তা না পেলে পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে পা দিতে পারেন আইনের ফাঁদে।