জাতীয়
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ আজ

আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক অনন্য দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তদানীন্তন রেসকোর্স ময়দান) বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন।
এ দিন লাখ লাখ মুক্তিকামী মানুষের উপস্থিতিতে এই মহান নেতা বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেবো, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একাত্তরের ৭ মার্চ দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণ পরবর্তীতে স্বাধীনতার সংগ্রামের বীজমন্ত্র হয়ে পড়ে। একইভাবে এ ভাষণ শুধু রাজনৈতিক দলিলই নয়, জাতির সাংস্কৃতিক পরিচয় বিধানের একটি সম্ভাবনাও তৈরি করে। মূলত বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণের আহ্বানেই মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করে বাঙালি।
পরে ২৫ মার্চের কালরাতে পাকবাহিনীর নৃশংস গণহত্যার পর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ।
২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো।
একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর এই উদ্দীপ্ত ঘোষণায় বাঙালি জাতি পেয়ে যায় স্বাধীনতার দিকনির্দেশনা। এরপরই দেশের মুক্তিকামী মানুষ ঘরে ঘরে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর এই বজ্রনিনাদে আসন্ন মহামুক্তির আনন্দে বাঙালি জাতি উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। যুগ যুগ ধরে শোষিত-বঞ্চিত বাঙালি ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যায় কাঙ্ক্ষিত মুক্তির লক্ষ্যে।
১৯৪৭ সালে ধর্মীয় চিন্তা, সাম্প্রদায়িকতার মানসিকতা ও দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে গঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যদিয়ে বাঙালি জাতিসত্ত্বা, জাতীয়তাবোধ ও জাতিরাষ্ট্র গঠনের যে ভিত রচিত হয় তারই চূড়ান্ত পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর ছাত্র-কৃষক-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের বাঙালি স্বাধীনতা অর্জনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনে বাঙালি জাতি। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণে গর্জে ওঠে উত্তাল জনসমুদ্র। লাখ লাখ মানুষের গগনবিদারী স্লোগানের উদ্দামতায় বসন্তের মাতাল হাওয়ায় সেদিন পত্ পত্ করে ওড়ে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল-সবুজের পতাকা। লাখো শপথের বজ্রমুষ্টি উত্থিত হয় আকাশে। সেদিন বঙ্গবন্ধু মঞ্চে আরোহণ করেন বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে। ফাগুনের সূর্য তখনো মাথার ওপর। মঞ্চে আসার পর তিনি জনতার উদ্দেশ্যে হাত নাড়েন। তিনি দরাজ গলায় তার ভাষণ শুরু করেন, ‘ভাইয়েরা আমার, আজ দুঃখ-ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।’ এরপর জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বাংলা ও বাঙালির স্বাধীনতার মহাকাব্যের কবি ঘোষণা করেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
মাত্র ১৯ মিনিটের ভাষণ। এই স্বল্প সময়ে তিনি ইতিহাসের পুরো ক্যানভাসই তুলে ধরেন। তিনি তার ভাষণে সামরিক আইন প্রত্যাহার, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, গোলাগুলি ও হত্যা বন্ধ করে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া এবং বিভিন্ন স্থানের হত্যাকাণ্ডের তদন্তে বিচারবিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি জানান।
বঙ্গবন্ধু বলেন, ভাইয়েরা আমার, আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, মানুষের অধিকার চাই। প্রধানমন্ত্রিত্বের লোভ দেখিয়ে আমাকে নিতে পারেনি। ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে দিতে পারেনি। আপনারা রক্ত দিয়ে আমাকে ষড়যন্ত্র-মামলা থেকে মুক্ত করে এনেছিলেন। সেদিন এই রেসকোর্সে আমি বলেছিলাম, রক্তের ঋণ আমি রক্ত দিয়ে শোধ করবো। আজও আমি রক্ত দিয়েই রক্তের ঋণ শোধ করতে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, আমি বলে দিতে চাই- আজ থেকে কোর্ট-কাচারি, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান- সব অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। কোনো কর্মচারী অফিসে যাবেন না। এ আমার নির্দেশ।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সর্বশেষ দুটি বাক্য, যা পরবর্তীতে বাঙালির স্বাধীনতার চূড়ান্ত লড়াইয়ের দিকনির্দেশনা ও প্রেরণার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলেন, রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেবো। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয়বাংলা।
দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ভোর ৬টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।
এছাড়াও এদিন বিকেল ৪টায় ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবনে (তেজগাঁও) আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতীয়
৫ আগস্ট সব পক্ষের উপস্থিতিতে জুলাই ঘোষণাপত্র: প্রেস উইং

আগামী ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সব পক্ষের উপস্থিতিতে জুলাই ঘোষণাপত্র জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
শনিবার (২ আগস্ট) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। আগামী ৫ আগস্ট বিকেল ৫টায় গণঅভ্যুত্থানের সব পক্ষের উপস্থিতিতে জুলাই ঘোষণাপত্র জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত অবিলম্বে জানানো হবে।
জাতীয়
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত এলেন ৩৯ বাংলাদেশি

যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থানের অভিযোগে দেশটি থেকে ৩৯ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
শনিবার (২ আগস্ট) সকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক বিমানে তারা ঢাকার শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান।
এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার ও কল্যাণ অনুবিভাগের এক বার্তায় জানানো হয়, মার্কিন সামরিক বাহিনীর বিমানে করে ৬১ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
তবে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) একটি সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে চার্টার্ড ফ্লাইটে অন্তত ৩০ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এই দফায় ফেরত আসার সংখ্যা প্রথমে ৬০ জনের কথা বলা হলেও পরে ৩০ জন ফেরত আসছেন।
গত জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অবৈধ অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো শুরু করে ট্রাম্প প্রশাসন। ভারত, ব্রাজিলসহ অনেক দেশের নাগরিকদের হাতকড়া পরিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। তবে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে যেসব বাংলাদেশি নাগরিককে ফেরত পাঠানো হয়েছে, তাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করেছে সে দেশের কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশি নাগরিকের কাউকে হাতকড়া পরানো হয়নি। ফেরত পাঠানোর আগের বিভিন্ন স্তরের আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মানবিক আচরণের বিষয়ে জোর দেওয়া হয়। সে অনুরোধে সাড়াও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই দফায়ও যারা আসছেন তাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করা হবে। বিভিন্ন সময় আরও ১১৮ বাংলাদেশি নাগরিককে ফেরত পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র।
প্রসঙ্গত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অবৈধ হয়ে ধরা পড়া বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে প্রতি মাসে কিছু মানুষকে ফিরতে হচ্ছে ঢাকায়। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে শুক্রবার (১ আগস্ট) কিছু বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
জাতীয়
৫ আগস্টের মধ্যে ঘোষিত হবে জুলাই ঘোষণাপত্র: উপদেষ্টা মাহফুজ

জুলাই ঘোষণাপত্র এখন বাস্তবতা বলে উল্লেখ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেছেন, ৫ আগস্টের মধ্যে ঘোষিত হবে ঘোষণাপত্র।
শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টায় ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এসব কথা জানান মাহফুজ আলম।
তিনি লিখেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্র এখন বাস্তবতা। ৫ আগস্টের মধ্যেই ঘোষিত হবে ঘোষণাপত্র। ঘোষণাপত্র ইস্যুকে গণআকাঙ্ক্ষায় বাঁচিয়ে রেখে এটা বাস্তবায়নের পথ সুগম করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়, যার মূল ম্যান্ডেট হলো রাষ্ট্রের বিভিন্ন কাঠামোগত সংস্কার এবং জনগণের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা। এই প্রেক্ষাপটে জুলাই ঘোষণাপত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দলিল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। খসড়ার একটি কপি প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) পাঠানো হয়েছে তাদের মতামত দেওয়ার জন্য।
সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, আগস্টের ৫ তারিখের মধ্যে যে কোনো দিন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এটি প্রকাশ করবেন।
যেকোনও ধরনের বিতর্ক এড়াতে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে প্রণীত, খসড়া ঘোষণাপত্রে ২৬ দফা রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে জুলাই অভ্যুত্থান হয়েছে। প্রথম খসড়ায় বলা হয়েছিল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে অভ্যুত্থান হয়েছে।
ঘোষণাপত্রে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা আসার পর টানা তিন মেয়াদের ১৫ বছরের শাসনামলে বিএনপি, জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলোর সংগ্রামকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, বিএনপির মতামতের ভিত্তিতে ৭৫-এর ৭ নভেম্বরের সিপাহী বিপ্লব, ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সরকারের করা সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
জাতীয়
বাণিজ্য উপদেষ্টা নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন: জ্বালানি উপদেষ্টা

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক কমানোর আলোচনায় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আজ শুক্রবার এক পোস্টে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ পণ্যমূল্য স্থিতিশীলতা বজায় রাখা থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সফল শুল্ক আলোচনায় তিনি (বাণিজ্য উপদেষ্টা) নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন, সমালোচকদের হতাশ করে।
যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে, সেসব দেশের ওপর গত ২ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক বা রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ আরোপ করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বের ৫৭টি দেশের ওপর বিভিন্ন হারে বাড়তি পাল্টা শুল্ক বসানো হয়। তখন বাংলাদেশের পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক ছিল ৩৭ শতাংশ। তিন মাসের জন্য এ সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৮ জুলাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের জন্য পাল্টা শুল্ক হবে ৩৫ শতাংশ, যা কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে।
যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের আরোপ করা পাল্টা শুল্ক কমাতে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) কর্মকর্তাদের সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন। একই আদেশে দেশে আরও কয়েক ডজন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক বসান তিনি।
শুল্ক হার কমানোর ঘোষণার পর ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে তা জানান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। এর দুই ঘণ্টা পর বাণিজ্য উপদেষ্টাকে নিয়ে ইংরেজিতে আরেকটি পোস্ট দেন এই উপদেষ্টা। বাণিজ্য উপদেষ্টাকে নিয়ে তাঁর পোস্টটি তুলে ধরা হলো:
শেখ বশিরউদ্দীন—আমাদের অসাধারণ বাণিজ্য উপদেষ্টা
আমি প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে শেখ বশিরউদ্দীনসহ কয়েকজনের সঙ্গে দেখা করার দায়িত্ব পাই, সম্ভাব্য বাণিজ্য উপদেষ্টা পদে। ফোনে তাঁকে ধরি ভোলায়, তখন তিনি একটি ব্যবসায়িক সফরে ছিলেন। পরে আমরা দেখা করি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে, আমার অফিসে।
পূর্বপরিচয় না থাকলেও আমরা এক ঘণ্টা খোলামেলা কথা বলি। আমার অফিস থেকে যে নাশতা দেওয়া হয়েছিল, তিনি বিনয়ের সঙ্গে সেটি নেননি! তবে আমি তাঁর মধ্যে যে বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি, তা হলো দেশপ্রেম, যুক্তিহীন কোনো কিছু সহ্য না করার দৃঢ় মনোভাব, আর অনেক তথ্য একসঙ্গে গুছিয়ে বিশ্লেষণ করার অসাধারণ দক্ষতা। আমি আমার এই অনুভূতিগুলো প্রধান উপদেষ্টাকে জানাই।
আল্লাহর রহমতে, দেশ ও জাতির জন্যই বলা যায়, প্রধান উপদেষ্টা তাঁকে (শেখ বশিরউদ্দীন) দায়িত্ব দেন। আর তিনিও তা গ্রহণ করেন।
দেশের অভ্যন্তরীণ পণ্যমূল্য স্থিতিশীলতা বজায় রাখা থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সফল শুল্ক আলোচনায় তিনি (বাণিজ্য উপদেষ্টা) নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন, সমালোচকদের হতাশ করে।
আল্লাহ তাঁকে (বাণিজ্য উপদেষ্টা) হায়াতে তাইয়্যেবা দান করুন, যাতে তিনি দেশকে সেবা দিতে পারেন—হোক তা সরকারে বা বেসরকারি খাতে।
জাতীয়
মুরাদনগরে এক উপদেষ্টার ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টির অপচেষ্টা

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ অভিযোগ করেছেন, কুমিল্লার মুরাদনগরে একটি মহল ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি দাবি করেন, এই পরিস্থিতির জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কিছু সদস্য এবং ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ এক উপদেষ্টা দায়ী।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কায়কোবাদ বলেন, আমি একটি দলের রাজনীতি করি, তাই বিচারাধীন বিষয়ে মন্তব্য না করাই উচিত। তবে মুরাদনগরে যেসব ঘটনা ঘটছে, তা উদ্বেগজনক এবং এর পেছনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এই ঘটনার জন্যে আমি দায়ী করব পুলিশ প্রশাসনকে। কারণ তারা মুরাদনগরে গেছে আসিফ মাহমুদের তদবিরে। আসিফ মাহমুদ সাহেব উনাদেরকে তদবির করে নিয়ে গেছেন মুরাদনগরে।
কায়কোবাদ দাবি করেন, মুরাদনগরে প্রশাসনিক পদে রদবদল এনে কিছু লোকজনকে পুনরায় সক্রিয় করা হয়েছে, যারা আগে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। এসপি ও ওসি বদলির পর পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে। সেইসঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা কিছু দুষ্কৃতিকারী আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে, যোগ করেন তিনি।
আসিফ মাহমুদ নামের ওই উপদেষ্টাকে ঘিরেই অভিযোগের তীর ছোড়েন কায়কোবাদ। তার ভাষায়, এই তরুণ উপদেষ্টা দলে যোগ না দিলেও দলের হয়ে কাজ করছেন এবং তার প্রভাবেই প্রশাসন পক্ষপাত দেখাচ্ছে। সরকারি সাহায্য বণ্টন থেকে শুরু করে এলাকায় সন্ত্রাস কায়েম—সবকিছুতেই তাদের হাত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মুরাদনগরে তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে—এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও বর্বরোচিত। অথচ মূল অভিযুক্তদের এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি, অথচ আমাদের ৭০-৮০ বছরের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানো হচ্ছে।
কায়কোবাদ তদন্তের দাবিতে বলেন, এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সৎ ও সাহসী তদন্ত কর্মকর্তার অধীনে তদন্ত ছাড়া সত্য উন্মোচিত হবে না।
তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগে কিছু সন্ত্রাসী গ্রুপ আছে, যারা এখনো তৎপর। তারাই দলকে বিতর্কিত করেছে। সাধারণ আওয়ামী লীগ কর্মীরা ভিন্ন। কিন্তু এই সন্ত্রাসীদের উৎসাহ দেওয়ার ফলেই তারা আজ এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করছে।
নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে কায়কোবাদ বলেন, ৯১-৯৬ সালের মধ্যে আমাকে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছিল। এখন সেই চক্রই আবার সক্রিয় হয়ে আমাকে দমন করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমি এখনও রাজনীতি করছি এবং জনগণের পাশে আছি।
শেষে তিনি বলেন,এই অন্যায় ও অবিচারের বিচার একদিন হবেই। যারা নিরপরাধ নেতাকর্মীদের জেলখানায় পাঠিয়েছে, তাদের বিচার হবে এই দুনিয়াতেই অথবা হাশরের ময়দানে। আল্লাহর উপর আমার সম্পূর্ণ ভরসা।