জাতীয়
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালির শৃঙ্খল মুক্তির পথ দেখিয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে দেশের শাসনভার জনগণের হাতেই তুলে দেন। সেই মর্মস্পর্শী বজ্রনিনাদ ৭ কোটি বাঙালির হৃদয়কে বিদ্যুৎ গতিতে আবিষ্ট করেছিল।
তিনি বলেন, রাজনীতির কালজয়ী মহাকবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই ভাষণের মাধ্যমে দেশের শাসনভার জনগণের হাতেই তুলে দেন, ক্ষমতাকে কি করে নিয়ন্ত্রিতভাবে সবার কল্যাণে ব্যবহার করতে হয় তাও বুঝিয়ে দেন। শিখিয়ে দেন আত্মরক্ষামূলক কিংবা প্রতিরোধক সমরনীতি, যুদ্ধকালীন সরকার ব্যবস্থা এবং অর্থনীতি।
প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষ্যে আজ (বুধবার) দেওয়া এক বাণীতে একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ৭ মার্চ বাঙালি জাতির জীবনে এক অবিস্মরণীয় দিন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দান বর্তমানে শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে বজ্রকণ্ঠে একটি মহাকাব্য রচনা করেছিলেন।’
এই মাহেন্দ্রক্ষণে প্রধানমন্ত্রী গভীর শ্রদ্ধায় প্রথমেই স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন জাতীয় চার নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ, দু’লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোন এবং অগণিত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে—যাদের মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং বাংলাদেশ একইসূত্রে গাঁথা। পূর্ব বাংলার মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায় এবং পৃথিবীর মানচিত্রে তাদের জন্য একটি স্বাধীন ভূখণ্ড প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতির পিতা শেখ মুজিব পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৪ বছর লড়াই-সংগ্রাম করেছেন, জেল-জুলুম-অত্যাচার সহ্য করেছেন এবং সব আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। একমাত্র তিনিই ছিলেন হাজার বছরের শোষিত-বঞ্চিত বাঙালিদের মধ্যে সবচেয়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু, পাকিস্তানিরা আওয়ামী লীগের হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ না করে নানা টালবাহানা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। ৭ মার্চের ভাষণে তিনি আমাদের ‘স্বাধীনতা’ নামের এক অমরবাণী শোনান এবং সংগ্রামের মাধ্যমে শৃঙ্খলমুক্তির পথ দেখান। তিনি বীর বাঙালির অবশ্যম্ভাবী বিজয়কে উৎকীর্ণ করেন তার ভাষণের শেষ দুটি শব্দে— ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে।
একটি ব্রিটিশ পত্রিকা বঙ্গবন্ধু ভবনকে লন্ডনের ১০-ডাউনিং স্ট্রিটের সঙ্গে তুলনা করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ শুনে ঢাকায় রাষ্ট্রপতির বাসভবনে বাঙালি বাবুর্চি ইয়াহিয়া খানের জন্য রান্না বন্ধ করে দিয়েছিল। ২৫ মার্চ পর্যন্ত দেশের প্রতিটি মানুষ ইয়াহিয়ার শাসনকে অগ্রাহ্য করে শেখ মুজিবের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিল। সেই রাতে পাকিস্তানি শাসক তাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্বেই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বাংলার দামাল ছেলেরা হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে নয় মাস যুদ্ধ করে পাকিস্তানিদের বাংলার মাটিতে পরাস্ত করে ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পাকিস্তানে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে আসেন এবং তার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরেই তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে একটি উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত করেন। দুর্ভাগ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের পরাজিত শত্রুদের এ দেশীয় দোসররা পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়। তারা ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করে এবং ‘জয় বাংলা’ স্লোগানও নিষিদ্ধ করে। ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধু মুজিবের নাম মুছে দিতে উদ্যত হয়।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর খুনি মোস্তাক-জিয়ার আনীত দায়মুক্তি অধ্যাদেশ বাতিল করে এবং জাতির পিতার খুনিদের বিচার শুরু করে। পরবর্তী সময়ে আমরা ২০০৯ সাল থেকে পরপর চার দফা সরকার গঠন করে জাতির পিতার আদর্শে দেশের সার্বিক উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করি। জাতির পিতা হত্যার বিচারের রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করি। ফলে, জাতি গ্লানিমুক্ত হয়। আমরা সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১ প্রণয়ন করে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে সংবিধানের ১৫০(২) অনুচ্ছেদের পঞ্চম তফশিলে অন্তর্ভুক্ত করি। জাতিসংঘের ইউনেস্কো ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর এ ভাষণকে ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। শুধু তাই নয়, ইউনেস্কো মনে করে এ ভাষণটির মাধ্যমে জাতির পিতাই প্রকারান্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ-এর বিশ্বস্বীকৃতি আজ বাঙালি জাতির জন্য এক বিরল সম্মান ও গৌরবের স্মারক। আমাদের হাইকোর্টের রায়ের ওপর ভিত্তি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ‘জয় বাংলা’-কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকারের গৃহীত উদ্যোগের ফলে বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ২০৪১ সালে দেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত করা হবে।
তিনি বিশ্বাস করেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান এবং জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান-এর ৭ মার্চের ভাষণ যুগে-যুগে বাঙালিদের বিশ্বের বুকে আত্মমর্যাদার সঙ্গে মাথা উঁচু করে চলতে অনুপ্রেরণা যোগাবে।

জাতীয়
এখন আর শেখ হাসিনার পালানোর পথ নেই: প্রেস সচিব

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, এখন আর শেখ হাসিনার পালানোর কোনো পথ নেই।
বুধবার (৯ জুলাই) বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।
শফিকুল আলমের এ মন্তব্য আসে বিবিসির একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের প্রেক্ষিতে, যেখানে দাবি করা হয়—২০২৩ সালের জুলাইয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানোর আদেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পোস্টে তিনি লেখেন, “বিবিসির গভীর অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন বলছে, শেখ হাসিনা সরাসরি বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাতে নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দেন। শতাধিক শিশুর মৃত্যুর বিষয়টিও ওই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এই প্রকাশনার পর শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়বে।”
তিনি আরও লেখেন, “শেখ হাসিনাকে অবশ্যই গণহত্যার দায়ে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে যে দমননীতি ও সহিংসতা তিনি চালিয়েছেন, তার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। তিনি এবং তার আদেশে যারা হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, তারাও শাস্তি এড়াতে পারবে না।”
বিবিসির ‘আই ইনভেস্টিগেশন’ ইউনিটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১৮ জুলাই শেখ হাসিনা একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার সময় বলেন, “যেখানেই ওদের পাওয়া যাবে, গুলি করা হবে।” ওই ফোনালাপের একটি অডিও ফাঁস হয় চলতি বছরের মার্চ মাসে।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, তারা ওই অডিওর সত্যতা যাচাই করেছে এবং নিশ্চিত হয়েছে—ফোনালাপে যিনি কথা বলছেন, সেটি শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর। বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)–ও অডিওটি যাচাই করে নিশ্চিত করেছে কণ্ঠস্বরটি তার সাথেই মিলে যায়। প্রতিবেদনে এটিকে আন্দোলনকারীদের ওপর সরাসরি প্রাণঘাতী হামলার আদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়।
কাফি
জাতীয়
জুলাইয়ে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন হাসিনা

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথোপকথনের একটি ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং থেকে জানা গেছে, গত বছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের অনুমতি তিনি নিজেই দিয়েছিলেন।
বিবিসির যাচাই করা ওই রেকর্ডিং অনুসারে, শেখ হাসিনা তার নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার’ করার অনুমতি দিয়েছেন এবং ‘তারা (এসব বাহিনীর সদস্যরা) যেখানেই তাদের (আন্দোলনকারী) পাবে, তারা গুলি করবে’।
অজ্ঞাত একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে শেখ হাসিনার কথোপকথনের ফাঁস হওয়া অডিওটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ যে তিনি সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের গুলি করার জন্য সরাসরি অনুমতি দিয়েছিলেন।
ফাঁস হওয়া অডিওটি সম্পর্কে জানেন এমন একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, গত ১৮ জুলাই নিজের সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে শেখ হাসিনা ওই ফোনালাপটি করেন।
চলতি বছরের মার্চের শুরুতে ফোনালাপের অডিওটি কে ফাঁস করেছে তা স্পষ্ট নয়। বিক্ষোভের পর থেকে হাসিনার কলের অসংখ্য ক্লিপ অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে যার অনেকগুলোই যাচাই করা হয়নি।
১৮ জুলাইয়ের ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংয়ের কণ্ঠের সঙ্গে শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বরের মিল শনাক্ত করেছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
বিবিসি আলাদাভাবে ইয়ারশটের অডিও ফরেনসিক এক্সপার্টদের দিয়ে এই রেকর্ডিংয়ের সত্যতা যাচাই করেছে এবং তারা এটিতে এডিট করার বা কোনো রকম পরিবর্তন করার কোনো প্রমাণ পায়নি। অডিওটি কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে এমন সম্ভাবনাও খুবই কম বলে তারা জানিয়েছে।
মানবাধিকার বা পরিবেশ রক্ষার ইস্যুতে অডিও সংক্রান্ত তদন্তের কাজ করে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইয়ারশট। তারা বলছে, ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংটি সম্ভবত এমন একটি ঘরে ধারণ করা হয়েছিল যেখানে ফোন কলটি স্পিকারে বাজানো হয়েছিল। কারণ এতে স্বতন্ত্র টেলিফোনিক ফ্রিকোয়েন্সি এবং ব্যাকগ্রাউন্ডে কিছু শব্দ ছিল।
ইয়ারশটের বিশেষজ্ঞরা রেকর্ডিংজুড়ে ইলেকট্রিক নেটওয়ার্ক ফ্রিকোয়েন্সি বা ইএনএফ শনাক্ত করেছে, যে ফ্রিকোয়েন্সি অন্য একটি ডিভাইস থেকে অডিও রেকর্ডিংয়ের ক্ষেত্রে প্রায়ই উপস্থিত থাকে। এটি এমন এক সূচক যার মানে হলো অডিওটিতে হেরফের করা হয়নি।
তারা শেখ হাসিনার বক্তব্যে ছন্দ, স্বর এবং শ্বাসের শব্দ বিশ্লেষণ করেছে এবং ধারাবাহিক নয়েজের স্তরও শনাক্ত করেছে। অডিওতে কৃত্রিম কোনো পরিবর্তন আনার প্রমাণও খুঁজে পায়নি।
ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান বিবিসিকে বলেছেন, ‘রেকর্ডিংগুলো তার (শেখ হাসিনার) ভূমিকা প্রমাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এগুলো স্পষ্ট এবং সঠিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে এবং অন্যান্য প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত।’
তিনি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন যেখানে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে।
আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘বিবিসির উল্লেখ করা টেপ রেকর্ডিংটি সত্য কি না তা আমরা নিশ্চিত করতে পারছি না’ এবং এই টেপটিতে কোনো ‘বেআইনি উদ্দেশ্য’ বা ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া’ দিতেও দেখা যায়নি।
আইসিটি মোট ২০৩ জনকে অভিযুক্ত করেছে যার মধ্যে ৭৩ জন গ্রেফতার রয়েছে। আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও বাংলাদেশের আদালতে বিচার চলছে।
জাতীয়
বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা শিল্পের বিকাশে সহায়তা দেবে তুরস্ক

বাংলাদেশে প্রতিরক্ষা শিল্পের বিকাশে সম্ভাব্য কারিগরি ও কৌশলগত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থার সচিব অধ্যাপক হালুক গরগুন।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এ আশ্বাস দেন তিনি। সেনাসদরে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
সাক্ষাৎকালে পারস্পরিক কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি দুদেশের মধ্যে বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও জোরদারের বিষয়ে আলোচনা করেন তারা। তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থার সচিব বাংলাদেশে প্রতিরক্ষা শিল্পের বিকাশে সম্ভাব্য কারিগরি ও কৌশলগত সহায়তার আশ্বাস দেন।
সেনাপ্রধান তুরস্কের সহযোগিতায় দেশে বিভিন্ন আধুনিক যুদ্ধসরঞ্জাম তৈরি এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি উন্নয়নের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
একই দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন অধ্যাপক হালুক গরগুন।
জাতীয়
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কচুক্তি নিয়ে ফের আলোচনা শুরু আজ

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক শুল্ক চুক্তি নিয়ে দ্বিতীয় দফার আলোচনা আজ শুরু হবে। আজ থেকে শুক্রবার (১১ জুলাই) পর্যন্ত ওয়াশিংটনে এ আলোচনা হবে। ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর) দপ্তর এ আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
বুধবার (৯ জুলাই) সকালে প্রধান উপদেষ্টা প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বার্তায় বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ৭ জুলাই তারিখে ১৪টি দেশের নেতার কাছে পাঠানো চিঠির পর বাংলাদেশ প্রথম দিকের দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে যারা এই আলোচনা পুনরায় শুরু করছে। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন, যিনি সরাসরি ওয়াশিংটন ডিসিতে অংশ নিচ্ছেন। ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি আলোচনায় যুক্ত হবেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান। এ ছাড়া বাণিজ্য সচিব ও একজন অতিরিক্ত সচিবসহ সিনিয়র কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে ওয়াশিংটনে পৌঁছেছেন।
গত ২৭ জুন অনুষ্ঠিত প্রথম দফার গঠনমূলক আলোচনার অগ্রগতির ভিত্তিতে বাংলাদেশ আশাবাদী যে চুক্তির চূড়ান্তকরণ দ্রুত সম্ভব হবে।
জাতীয়
বৈশ্বিক গড় আয়ুর চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশিরা

বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৈশ্বিক গড়কে ছাড়িয়ে গেছে। দেশের নারী ও পুরুষ উভয়ের গড় আয়ু এখন বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি। জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) ‘বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি (এসডব্লিউওপি) ২০২৫’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে যেখানে পুরুষদের গড় আয়ু ৭১ বছর, সেখানে বাংলাদেশে তা ৭৪ বছর। নারীদের বৈশ্বিক গড় আয়ু ৭৬ বছর হলেও বাংলাদেশে তা ৭৭ বছর।
মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে জাতিসংঘ ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ইউএনএফপিএর বাংলাদেশ প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন ১৭ কোটি ৫৭ লাখ। এর অর্ধেক নারী এবং দুই-তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ প্রায় ১১ কোটি ৫০ লাখ মানুষ কর্মক্ষম (১৫-৬৪ বছর বয়সী)। মোট জনসংখ্যার ১৯ শতাংশ কিশোর-কিশোরী (প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ) এবং ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীর সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি, যা দেশের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড কাজে লাগানোর একটি বিশাল সুযোগ।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৭ শতাংশ (প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ) মানুষের বয়স ৬৫ বছরের বেশি, যা দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ার ইঙ্গিত দেয়।
ইউএনএফপিএর প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং বলেন, ‘আসল সংকট জন্মহার নিয়ে নয়, বরং সংকটটি হলো প্রজননস্বাস্থ্যের বিষয়ে মানুষের, বিশেষ করে নারী ও তরুণদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার অভাব।’
তার ভাষ্য, বাংলাদেশে মোট প্রজনন হার (টিএফআর) ২.১ হলেও নানা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পদ্ধতিগত বাধার কারণে মানুষ তাদের ইচ্ছানুযায়ী সন্তান নিতে পারছে না। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবার উচ্চ ব্যয় এবং শিশুদের যত্নআত্তির পর্যাপ্ত সুবিধার অভাবে অনেক পরিবার সন্তান নিতে দেরি করছে বা সন্তান নিচছে না। সামাজিক প্রথা ও বৈষম্যের কারণে মেয়েদের ওপর অল্প বয়সে বিয়ে এবং মা হওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি হয়। এছাড়া নারীর অবৈতনিক কাজের বোঝা, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলোও নারীদের প্রজনন সিদ্ধান্তকে বাধাগ্রস্ত করছে।
প্রতিবেদনে এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ০.৭ শতাংশ থেকে বরাদ্দ বাড়িয়ে ৫ শতাংশে এবং জাতীয় বাজেটের ১৫ শতাংশে উন্নীত করা, মাতৃস্বাস্থ্য সেবার উন্নতি, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা এবং দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী ধরে রাখা।
এছাড়া সমন্বিত যৌনশিক্ষা, সাশ্রয়ী আবাসন, সবেতন মাতৃত্বকালীন ও পিতৃত্বকালীন ছুটি এবং নারীর অবৈতনিক কাজের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
ইউএনএফপিএ মনে করে, এই পদক্ষেপগুলো বাংলাদেশের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড কাজে লাগানোর প্রচেষ্টার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
অনুষ্ঠানে ইউএনএফপিএর ডেমোগ্রাফিক ডেটা অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, দেশে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের হার ৭ শতাংশে পৌঁছেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে শ্রমশক্তি সংকুচিত হওয়া এবং বয়স্কদের যত্ন ও সামাজিক সুরক্ষার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার মতো চ্যালেঞ্জ দেখা দেবে।
কাফি