আন্তর্জাতিক
ইস্পাতের বৈশ্বিক উৎপাদনে ভাটা

বৈশ্বিক উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেড়ে চলা চড়া সুদহারে চাপের মুখে পড়েছে ইস্পাত খাত। ধীর হয়ে পড়েছে ধাতুটির উৎপাদন প্রবৃদ্ধির হার। জানুয়ারিতে অপরিশোধিত ইস্পাতের বৈশ্বিক উৎপাদন গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ কোটি ৮১ লাখ টনে, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে যা ছিল ১৫ কোটি ৬ লাখ টন। ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশন মাসভিত্তিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিশ্বের শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদক দেশগুলোর তালিকায় প্রথম চীন। জানুয়ারিতে সেখানে ধাতুটির উৎপাদন গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে। উৎপাদন হয়েছে ৭ কোটি ৭২ লাখ টন। তবে দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ ভারতে উৎপাদন ৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ১ কোটি ২৫ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে।
তুরস্কের উৎপাদন ২৪ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে ৩২ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। ইরানে ২৬ লাখ টন উৎপাদন হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে রাশিয়ায় এক বছরের ব্যবধানে ইস্পাত উৎপাদন ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ৬২ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া উৎপাদন করেছে ৫৭ লাখ টন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়া জাপানের উৎপাদন দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ৭৩ লাখ টনে পৌঁছেছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে উৎপাদন যথাক্রমে দশমিক ৩ শতাংশ কমে ৬৮ লাখ ও দশমিক ৯ শতাংশ কমে ২৯ লাখ টনে নেমেছে। ব্রাজিলে উৎপাদন ২ দশমিক ৯ শতাংশ কমে ঠেকেছে ২৫ লাখ টনে।
অঞ্চলভেদে জানুয়ারিতে আফ্রিকার দেশগুলোয় অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোয় তা কমেছে ১ দশমিক ৮ শতাংশ। এশিয়া ও ওশেনিয়া মহাদেশে উৎপাদন ৩ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। মধ্যপ্রাচ্যে তা বেড়েছে ২৩ দশমিক ১ শতাংশ। উত্তর আমেরিকায় ২ দশমিক ১ শতাংশ ও দক্ষিণ আমেরিকায় ৬ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে।
অর্থসংবাদ/এমআই

আন্তর্জাতিক
বাংলাদেশিদের কম খরচে গোল্ডেন ভিসা দেবে দুবাই, সুবিধা কী

সংযুক্ত আরব আমিরাতের গোল্ডেন ভিসা পেতে বড় ধরনের বিনিয়োগের প্রয়োজন হতো। তবে এখন ভারতীয় এবং বাংলাদেশিদের জন্য চালু হয়েছে একটি নতুন ধরনের গোল্ডেন ভিসা, যেটি মূলত মনোনয়ন-ভিত্তিক। ফলে এ ভিসা পেতে আর ব্যবসা বা সম্পত্তিতে বিশাল বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে না।
ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগে দুবাইয়ের গোল্ডেন ভিসা পেতে দেশটিতে কোনো ব্যবসা অথবা কমপক্ষে ২ মিলিয়ন দিরহাম (৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকার বেশি) মূল্যের সম্পত্তি কিনতে হতো। তবে, নতুন ‘মনোনয়ন-ভিত্তিক ভিসা নীতি’র আওতায় ভারতীয় ও বাংলাদেশিরা ১ লাখ দিরহাম (প্রায় ৩৩ লাখ টাকার কিছু বেশি) ফি দিয়ে দুবাইয়ের গোল্ডেন ভিসা পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রায় ৫ হাজার ভারতীয় এ নতুন ভিসার জন্য আবেদন করতে প্রস্তুত।
ভারত ও বাংলাদেশের জন্য এ নতুন ভিসা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার প্রক্রিয়া চলছে। রায়াদ গ্রুপ নামে একটি পরামর্শক সংস্থা ভারত ও বাংলাদেশে মনোনয়ন-ভিত্তিক গোল্ডেন ভিসার প্রাথমিক রূপটি পরীক্ষা করার দায়িত্ব পেয়েছে। রায়াদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রায়াদ কামাল আইয়ুব এ নতুন ভিসাকে ভারতীয় ও বাংলাদেশিদের জন্য একটি ‘সুবর্ণ সুযোগ’ বলে অভিহিত করেছেন।
ভারত ও বাংলাদেশের জন্য এই পাইলট প্রকল্প সফলভাবে শেষ হওয়ার পর, সংযুক্ত আরব আমিরাতের অন্যান্য সিইপিএ (কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট) আওতাভুক্ত দেশগুলোতেও এই নতুন ভিসা চালু করা হবে।
আবেদন প্রক্রিয়া কেমন হবে?
নতুন গোল্ডেন ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া এবং অনুমোদনের বিষয়ে রায়াদ কামাল আইয়ুব বলেন, যারা এই ভিসার জন্য আবেদন করবেন, তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড (অতীত ইতিহাস) যাচাই করা হবে। এর আওতায় অর্থপাচার এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের রেকর্ড যাচাইও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। আবেদনকারীর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও পরীক্ষা করা হবে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, এই ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য হলো, সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাজার এবং ব্যবসাগুলো যেন আবেদনকারীর কাছ থেকে সংস্কৃতি, অর্থ, বাণিজ্য, বিজ্ঞান, স্টার্টআপ, পেশাদার পরিষেবা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে কীভাবে উপকৃত হতে পারে, তা নির্ধারণ করতে পারে।
রায়াদ সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেন, ‘এরপর রায়াদ গ্রুপ আবেদনপত্রটি সরকারের কাছে পাঠাবে, সরকারের নির্দিষ্ট দপ্তর মনোনয়ন-ভিত্তিক গোল্ডেন ভিসার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’
আবেদনকারীদের দুবাই ভ্রমণ করতে হবে এবং তারা নিজ দেশ থেকে প্রাথমিক অনুমোদন নিতে পারবেন।
রায়াদ জানান, আবেদনগুলো ভারত ও বাংলাদেশের ওয়ান ভাস্কো সেন্টার (ভিসা কনসিয়ারজ সার্ভিস কোম্পানি), তাদের নিবন্ধিত অফিস, অনলাইন পোর্টাল, অথবা তাঁদের ডেডিকেটেড কল সেন্টারের মাধ্যমে জমা দেওয়া যাবে।
নতুন ভিসার সুবিধা
এই নতুন ভিসার অন্যতম বড় সুবিধা হলো, এটি সম্পত্তি-ভিত্তিক গোল্ডেন ভিসা থেকে আলাদা। সম্পত্তি-ভিত্তিক ভিসা সম্পত্তি বিক্রি বা ভাগ হয়ে গেলে বাতিল হয়ে যেতে পারে, কিন্তু মনোনয়ন-ভিত্তিক ভিসা একবার পেলে তা স্থায়ী হবে।
রায়াদ আরও জানান, যারা এই ভিসার জন্য মনোনীত হবেন, তারা পরিবারকে দুবাইতে নিয়ে আসতে পারবেন এবং তাদের ভিসার ওপর ভিত্তি করে গৃহকর্মী ও গাড়িচালক রাখতে পারবেন। এ ছাড়া তারা দুবাইতে যেকোনো ব্যবসা বা পেশাদার কাজ করতে পারবেন।
কাফি
আন্তর্জাতিক
৩৫শ বছরের পুরনো শহরের সন্ধান পেলেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুর উত্তরাঞ্চলের বারাঙ্কা প্রদেশে এক প্রাচীন শহরের সন্ধান পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। ‘পেনিকো’ নামের এই শহরটি প্রায় ৩৫০০ বছরের পুরোনো বলে মনে করা হচ্ছে।
রবিবার (৬ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পেনিকো ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র, যা প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলীয় জনগোষ্ঠীকে আন্দিজ পর্বতমালা এবং আমাজন জঙ্গলের সঙ্গে সংযুক্ত করত। শহরটি রাজধানী লিমা থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার উত্তর দিকে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬০০ মিটার (প্রায় ২০০০ ফুট) উঁচুতে অবস্থিত।
ধারণা করা হয়, শহরটি গড়ে উঠেছিল খ্রিস্টপূর্ব ১৮০০ থেকে ১৫০০ সালের মধ্যে— সে সময় মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ার পাশাপাশি পৃথিবীর অন্য প্রান্তেও প্রাচীন সভ্যতাগুলোও গড়ে উঠছিল।
গবেষকরা বলছেন, এই আবিষ্কার আমেরিকার প্রাচীনতম সভ্যতা ‘কারাল’ সম্পর্কে নতুন ধারণা দিতে পারে। বিশেষত, এই সভ্যতা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ধ্বংস হওয়ার পর কী হয়েছিল, তা বোঝার ক্ষেত্রে।
ড্রোনচিত্রে দেখা যায়, একটি পাহাড়ের ঢালে গোলাকৃতি একটি কাঠামো, যার চারপাশে রয়েছে মাটি ও পাথরের তৈরি ভবনের ধ্বংসাবশেষ। এখন পর্যন্ত সেখানে খনন করে পাওয়া গেছে ১৮টি প্রাচীন স্থাপনা। যার মধ্যে উপাসনালয়, বসবাসযোগ্য ঘরবাড়ি এবং ধর্মীয় কেন্দ্রও রয়েছে।
এসব ভবনে খুঁজে পাওয়া গেছে নানা ধর্মীয় সামগ্রী, মানুষের এবং পশুর মূর্তি এবং ঝিনুক ও পুঁতির তৈরি গয়না। মূলত পেনিকো শহরটি কারাল সভ্যতার মূল কেন্দ্রস্থল সুপে উপত্যকার কাছাকাছি অবস্থিত। সেখানে প্রায় ৫০০০ বছর আগে (খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সালে) আমেরিকার প্রাচীনতম শহর ‘কারাল’ গড়ে উঠেছিল।
কারাল শহরে রয়েছে ৩২টি স্মৃতিস্তম্ভ, যার মধ্যে রয়েছে বিশাল পিরামিড আকৃতির স্থাপনা, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং প্রাচীন নগর জীবনযাপন। বিশ্বাস করা হয়, এই সভ্যতা ভারত, মিসর, সুমের এবং চীনের মতো প্রাচীন সভ্যতাগুলোর সঙ্গে কোনো সংযোগ ছাড়াই নিজস্বভাবে গড়ে উঠেছিল।
প্রখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ ড. রুথ শ্যাডি ১৯৯০-এর দশকে কারাল আবিষ্কার করেছিলেন এবং পেনিকোর সাম্প্রতিক গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, “পেনিকো শহরটি বাণিজ্যিক যোগাযোগের জন্য একটি কৌশলগত স্থানে গড়ে উঠেছিল। এটি উপকূল, পাহাড় এবং জঙ্গলের জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিনিময়ের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করত।”
পেরুর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদ মার্কো মাচাকুয়াই বলেন, “পেনিকোর গুরুত্ব শুধু এর প্রাচীনত্বে নয় বরং এটি কারাল সভ্যতার ধারাবাহিকতারও প্রমাণ।”
উল্লেখ্য, পেরুতে এর আগেও বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার হয়েছে। যেমন আন্দিজ পর্বতের ইনকা দুর্গ ‘মাচু পিচু’ এবং উপকূলীয় মরুভূমির ‘নাজকা রেখা’। এখন পেনিকো আবিষ্কার এই ঐতিহাসিক ঐতিহ্যেই নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
আন্তর্জাতিক
এবার ব্রিকস সম্মেলনে থাকছেন না পুতিন-শি জিনপিং

ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওতে আজ রোববার পর্দা উঠছে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের। তবে প্রথমবারের মতো এ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। একই সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও সশরীরে এ সম্মেলনে হাজির থাকছেন না।
এবারের সম্মেলনে জোটটির সদস্যভুক্ত দেশগুলোর নেতারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কট্টর বাণিজ্যনীতি বা নতুন শুল্কনীতির কড়া সমালোচনা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া পশ্চিমা বিশ্বের আধিপত্য নিয়ে উদ্বেগ মোকাবিলায় কীভাবে নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা আরও দৃঢ় করা যায়, ব্রিকস নেতাদের আলোচনায় সে বিষয়টিও গুরুত্ব পেতে পারে। খবর আল-জাজিরার।
এদিকে, ২০১২ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আরোহনের পর ব্রিকসের কোনো শীর্ষ সম্মেলনে শি জিনপিং ছিলেন না, এমন নজির নেই। এবার রিওতে তার প্রতিনিধিত্ব করবেন চীনা প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াং।
অন্যদিকে, ২০২২ সালের শুরুর দিকে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের প্রেক্ষাপটে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। ব্রাজিল যেহেতু আইসিসির সদস্য দেশ, সেদিক থেকে পুতিন দেশটিতে গেলে তাকে গ্রেফতারে চাপে পড়তে পারে ব্রাসিলিয়া। ধারণা করা হচ্ছে, এ ধরনের জটিলতা এড়াতেই ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে সশরীরে থাকতে চাইছেন না প্রেসিডেন্ট পুতিন।
তবে শীর্ষ সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ এ দুই নেতার যোগদান না করা জোটটির অভ্যন্তরীণ সংহতি ও বৈশ্বিক প্রভাবকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে।
ব্রিকস দেশগুলো বরাবরই বলে আসছে, তারা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধের বেশি, মোট ভূমির ৩৬ শতাংশ ও বিশ্ব অর্থনীতির এক চতুর্থাংশের প্রতিনিধিত্ব করে। এ জোট নিজেদেরকে ‘গ্লোবাল সাউথের’ দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার একটি ফোরাম এবং পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন অর্থনৈতিক জোট জি-৭ এর প্রতিপক্ষ শক্তি হিসেবে বিবেচনা করে।
তবে পর্দার আড়ালে জোট দেশগুলোর মধ্যে বিভাজনও স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি বার্তা সংস্থার দাবি, গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা এবং ইরানের ওপর সাম্প্রতিক হামলা নিয়ে কিছু সদস্য দেশ জোটটিকে আরও সুদৃঢ় অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। তবে মধ্যপ্রাচ্য সংকট ইস্যুতে অখণ্ড অবস্থানে থাকার ক্ষেত্রে বিভাজন কাটাতে হিমশিম খাচ্ছে জোটটি।
এদিকে, ব্রিকসের এবারের শীর্ষ সম্মেলনে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ও মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি যোগ দিচ্ছেন, না প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র আল-জাজিরাকে এ তথ্য জানিয়েছে।
ব্রিকসের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা। এই পাঁচ দেশের নামের প্রথম অক্ষর নিয়েই ব্রিকস শব্দটি এসেছে। ২০০৯ সালে এ জোটের প্রথম সম্মেলন হয়। পরবর্তী সময়ে এর একে একে জোটের পূর্ণ সদস্য হয় মিশর, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
জোটটির ১০টি কৌশলগত অংশীদার দেশও রয়েছে এখন। গত বছর তৈরি করা এ ক্যাটাগরিতে রয়েছে বেলারুশ, কিউবা ও ভিয়েতনাম।
আন্তর্জাতিক
ইয়েমেনের তিনটি বন্দর ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইসরায়েলের হামলা

ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান ইয়েমেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় হোদেইদাহ, রাস ইসা ও সাইফ বন্দরসহ তিনটি ইয়েমেনি বন্দরে হুতিদের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। হামলার শিকার হয়েছে রাস কান্টিব বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং একটি জাহাজও।জাহাজটি দুই বছর আগে ছিনতাই হয়েছিল।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইয়েমেনে হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত প্রায় এক মাসের মধ্যে ইয়েমেনে এটিই প্রথম ইসরায়েলি হামলা—সোমবার (৭ জুলাই) ভোরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
আসন্ন বিমান হামলা নিয়ে সতর্কতা জারি করে সেখানকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পরপরই এ হামলা চালানো হয়।
হুতি পরিচালিত সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, হোদেইদাহ বন্দরে হামলা হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, হামলার কিছুক্ষণ পরই হুথিদের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়, তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলো ইসরায়েলের যুদ্ধবিমানের মুখোমুখি হয়েছে।
এক্স-এ এক পোস্টে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এ ধরনের হামলাকে ‘অপারেশন ব্যাক ফ্যাগ’র অংশ হিসেবে উল্লেখ করেন। হুতিদের কর্মের জন্য চড়া মূল চুকাতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
‘ইয়েমেন ও তেহরানের ভাগ্য এক’ মন্তব্য করে কাৎজ বলেন, তাদের যে-ই ইসরায়েলের ক্ষতি করার চেষ্টা করবে তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হবে। কেউ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হাত তুললে সেই হাত কেটে ফেলা হবে’
গাজায় ইসরায়েল হামলা শুরুর পর থেকে হুতি বিদ্রোহীরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে নিয়মিত ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ আর লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা করছে।
ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে ছিল ২০২৩ সালের নভেম্বরে হুতিদের জব্দ করা বাণিজ্যিক জাহাজ গ্যালাক্সি লিডার, যেটি আন্তর্জাতিক জলসীমায় সামুদ্রিক জাহাজের ওপর নজর রাখার কাজে ব্যবহার হচ্ছিল।
রাস কানাতিক বিদ্যুৎকেন্দ্রেও হামলা চালানো হয়েছে। এই কেন্দ্রটি আশপাশের ইব ও তাইজ শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতো, জানিয়েছে ইসরায়েল।
এছাড়া হোদেইদাহ বন্দরটি লাখ লাখ ইয়েমেনির খাবার ও মানবিক সহায়তার প্রধান প্রবেশপথ। গত বছর সেখানে বেশ কয়েকবার হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
এসব হামলাকে ইসরায়েল ও তার জনগণের ওপর হুতিদের অব্যাহত আক্রমণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখছে তেল আবিব।
আন্তর্জাতিক
যুদ্ধের পর প্রথম প্রকাশ্যে এলেন খামেনি

পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর মার্কিন হামলার পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি প্রথমবারের মতো জনসম্মুখে হাজির হয়েছেন। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, তিনি তেহরানে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
৮৬ বছর বয়সী এই নেতা তেহরানের ইমাম খোমেইনি মসজিদে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। শিয়া মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আশুরা উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে তিনি কালো পোশাক পরে উপস্থিত হন।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, খামেনিকে স্বাগত জানাচ্ছেন উপস্থিত মুসল্লিরা ও স্লোগান দিচ্ছেন, আমাদের রক্ত আমাদের নেতার জন্য।
ভিডিওটি রাজধানী তেহরানের কেন্দ্রে অবস্থিত ইমাম খোমেইনি মসজিদে ধারণ করা হয়, যেটি ইরানের ইসলামী প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতার নামে নামকরণ করা।
খামেনি সর্বশেষ জনসম্মুখে এসেছিলেন ১৩ জুনের আগে। যখন তিনি সংসদ সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর ইসরায়েলের আকস্মিক বিমান হামলার মাধ্যমে যুদ্ধ শুরু হয়, যা ১২ দিন ধরে চলে।
গত সপ্তাহে তিনি একটি রেকর্ড করা ভিডিও ভাষণে বক্তব্য রাখলেও জনসম্মুখে হাজির হননি।
ইসরায়েল দাবি করে, তারা ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি প্রতিহত করতেই হামলা চালিয়েছে। যদিও তেহরান সব সময়ই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
ইরানের বিচার বিভাগ জানায়, ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৯০০ জন নিহত হয়েছেন, অন্যদিকে ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন অন্তত ২৮ জন।