ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপযুক্ত, পেশাগতভাবে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগ নিয়ে কড়া নির্দেশনা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিআরপিডির পরিচালক হারুন-অর-রশিদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। নির্দেশনাটি সকল তফসিলি ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোন ব্যাংকের এমডি ও সিইও নিয়োগে বা পুনঃনিয়োগের জন্য ব্যক্তির যোগ্যতা ও উপযুক্ততা বাছাই করতে হবে। এক্ষেত্রে তিনি জাল-জালিয়াতি, আর্থিক অপরাধ বা অন্য কোন অবৈধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকতে পারবেন না। নিবন্ধন অথবা লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে এমন কোম্পানির মালিকানা এবং কর্মকর্তা হিসেবে যুক্ত থাকতে পারবেন না নিয়োগ পেতে চলা ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। একইসাথে কোন ব্যাংক-কোম্পানি বা অন্য কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী, চেয়ারম্যান বা পরিচালক থেকে অপসারিত হলে তিনি এমডি ও সিইও হতে পারবেন না। পাশাপাশি তিনি ঋণ খেলাপি, কর খেলাপি বা আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হতে পারবেন না বলে নতুন নির্দেশনায় জানানো হয়।
এদিকে এমডি ও সিইও নিয়োগে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার মাপকাঠি নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আলোচ্য পদে নিয়োগ পেতে হলে তাঁকে যেকোন স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতে ন্যূনতম স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করতে হবে। তবে অর্থনীতি, হিসাববিজ্ঞান, ফাইন্যান্স, ব্যাংকিং, ব্যবস্থাপনা কিংবা ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে উচ্চতর প্রাতিষ্ঠানিক বা পেশাগত শিক্ষাকে অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হবে নির্দেশনায় জানানো হয়। এছাড়া ডিজিটাল ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী নিয়োগের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়কে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হবে।
শিক্ষাজীবনের এমডি ও সিইওদের কোনো পর্যায়ে তৃতীয় বিভাগ থাকতে পারবে না বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গ্রেডিং পদ্ধতিতে প্রকাশিত ফলাফলের ক্ষেত্রে এসএসসি বা সমমান ও এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষার ক্ষেত্রে জিপিএ ৩.০০ এর কম এবং অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত সিজিপিএ এর ক্ষেত্রে ৪.০০ পয়েন্ট স্কেলে ২.৫০ এর কম ও ৫.০০ পয়েন্ট স্কেলে ৩.০০ এর কম হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
ব্যাংক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্যাংকিং পেশায় সক্রিয় কর্মকর্তা হিসেবে কমপক্ষে ২০ বছরের অভিজ্ঞতাসহ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পূর্ববর্তী পদে কমপক্ষে ০২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ন্যূনতম বয়স হবে ৪৫ বছর এবং সর্বোচ্চ ৬৫। সাধারণভাবে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়োগের মেয়াদ হবে ৩ বছর, তবে তিনি পুনঃনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীর বয়স যদি ৬৫ বছর অতিক্রান্ত হতে ৩ বছরের কম সময় থাকে তবে ততটুকু সময়ের জন্যও তাঁকে নিয়োগ দেয়া যাবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানো এবং অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা যুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি আমানতকারীদের স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা পালন এবং লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হবে।
তবে ব্যাংক কোম্পানিতে এমডি ও সিইও নিয়োগ বা পুনঃনিয়োগে আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
অর্থসংবাদ/এমআই