ধর্ম ও জীবন
দিল্লি জামে মসজিদের নতুন শাহী ইমাম শাবান বুখারী
শবে বরাতে দিল্লি জামে মসজিদের নতুন ইমাম ঘোষণা করা হয়েছে। রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) পবিত্র এই রাতে মসজিদের আঙিনায় অনুষ্ঠিত দস্তরবন্দীর (পাগড়ি প্রদান অনুষ্ঠান) মাধ্যমে নতুন ইমাম ও উত্তরসূরির কথা জানান মসজিদটির বর্তমান শাহী ইমাম সৈয়দ আহমাদ বুখারি। নতুন ইমামের নাম সৈয়দ শাবান বুখারী।
দস্তরবন্দীর (পাগড়ি প্রদান অনুষ্ঠান) মাধ্যমে দিল্লি জামে মসজিদের শাহী ইমাম ঘোষণা করা হয়। যিনি পরবর্তীতে ঐতিহাসিক এই মসজিদে নামাজের দায়িত্ব পালন করেন। জামে মসজিদের নিয়ম অনুযায়ী ইমাম জীবদ্দশাতেই পরবর্তী ইমামের নাম ঘোষণা করেন।
অনুষ্ঠানে দিল্লি জামে মসজিদের বর্তমান শাহী ইমাম সৈয়দ আহমাদ বুখারী বলেন, আজ ইবাদতের রাত। এ রাতে গুনাহ মাফ করা হয় এবং রহমত বর্ষিত হয়। সবার উচিত এ রাতে ইবাদত করা।
তবে এই অনুষ্ঠানের পরও বর্তমান ইমামই জামে মসজিদের সব দায়িত্ব পালন করবেন। আগামীতে তিনি অসুস্থ হলে তার উত্তরাধিকারী জামে মসজিদের কার্যকরী ইমাম হিসেবে নিযুক্ত হবেন।
দিল্লির নিজামুদ্দিন দরগায় শবে রাত উদযাপন করা হয়েছে। এ রাতকে ঘিরে পবিত্র দরগাতে ঘিরে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। শবে বরাত ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্তা গ্রহণ করেছে দিল্লি পুলিশ। ভারতের জাতীয় রাজধানীর চারপাশে বিভিন্ন চেক পোস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
মোগল সম্রাট শাহজাহান দিল্লি জামে মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করেন ১৬৫০ খ্রিস্টাব্দে। এ বিশাল ধর্মীয় স্থাপত্যশৈলী নির্মাণ সম্পন্ন হয় ১৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে। সম্রাট শাহজাহান শাহী মসজিদের ইমামতির জন্য বুখারা নগরীর (বর্তমান উজবেকিস্থানের একটি শহর) সৈয়দ আব্দুল গফুর শাহ বুখারিকে নিয়ে আসেন। এবং তাকে ইমাম হিসেবে নিয়োগদান করেন। সৈয়দ আব্দুল গফুর শাহ বুখারী দিল্লী জামে মসজিদেরর প্রথম ইমাম, তার ইমামতিতে ১৬৫৬ সালের ২৩শে জুলাই প্রথম নামাজ আদায় করা হয়। সম্রাট শাহজাহান তাকে শাহী ইমাম উপাধী প্রদান করেন এবং ইমামত-এ-উজমার উচ্চ পদে নিয়োগ প্রদান করেন।
এরপর থেকে এই পদ বরাবরই বুখারি পরিবারের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। মোগল শাসনের ইতি হওয়ার পরও বুখারি পরিবার বংশ পরম্পরায় নিজেরাই জামে মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালন করছেন।
সূচনালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত জামে মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালন করা ইমামরা হলেন- সৈয়দ আব্দুল গফুর শাহ বুখারি, সৈয়দ আব্দুল শাকুর শাহ বুখারি, সৈয়দ আব্দুল রাহিম শাহ বুখারি, সৈয়দ আব্দুল গফুর শাহ বুখারি থানি, সৈয়দ আব্দুল রেহমান শাহ বুখারি, সৈয়দ আব্দুল কারিম শাহ বুখারি, সৈয়দ মীর জীবন শাহ বুখারি, সৈয়দ মীর আহমেদ আলী শাহ বুখারি, সৈয়দ মোহাম্মাদ শাহ বুখারি, সৈয়দ আহমেদ বুখারি, সৈয়দ হামিদ বুখারি, সৈয়দ আব্দুল্লাহ বুখারি, সৈয়দ আহমেদ বুখারি।
তবে সাম্প্রতিককালে দিল্লি জামে মসজিদের ইমাম পদ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে দিল্লির ওয়াকফ বোর্ড। বুখারি পরিবার জামে মসজিদকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে এবং এই মসজিদকে পরিবারের সম্পত্তি হিসেবে দেখে বলে অভিযোগ দিল্লি ওয়াকফ বোর্ডের।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্ম ও জীবন
সারাদেশে আনন্দ-উৎসবে বড়দিন উদযাপিত
খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ বড়দিন’ আজ। এই ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট ২৫ ডিসেম্বর বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা এ দিনটিকে ‘শুভ বড়দিন’ হিসেবে উদযাপন করে থাকেন।
দিনটি উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের খ্রিস্ট ধর্মের মানুষ আনন্দোৎসবের মধ্য দিয়ে দিনটি নানা আনুষ্ঠানিকতায় উদযাপন করছেন।
রাজধানীর বিভিন্ন চার্চে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রার্থনা, মানবকল্যাণে যিশুর বাণী পড়ে শোনানো এবং ধর্মীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর প্রীতি ভোজ ও র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়। চার্চের প্রীতিভোজে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোক ছাড়াও আমন্ত্রিত অতিথি ও ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করা হয়।
দিনটি উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের নানা চার্চ ও স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হয়েছে। সরকারি ছুটির দিন হওয়ার কারণে অনেকে বড়দিন উদযাপনে শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন।
রাজধানীতে বড়দিনের জাঁকালো অনুষ্ঠানটি হয় ফার্মগেটের হলি রোজারি চার্চে। এখানে বড়দিন উদযাপনে ঢাকার নানা প্রান্ত থেকে আসেন যিশু খ্রিস্টের অনুসারীরা। এছাড়া বিভিন্ন মহল্লায়ও বড় দিনের অনুষ্ঠান হয়।
বিভিন্ন এলাকার চার্চে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৫ ডিসেম্বরের পর থেকেই চার্চে প্রশাসনের নিয়মিত বাহিনীসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তৎপর হন। জোরদার করা হয় নিরাপত্তা। এছাড়া সেনাবাহিনীর গাড়িও টহল দেয়।
মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চের সাধারণ সম্পাদক বাবলু কুমার সিংহ, ঢাকা ইভানজেলিক্যাল রিভাইবেল চার্চের কর্মী সুনীল, গেৎশিমানী ব্যাপ্টিস্ট চার্চের ম্যানেজার সেনিস ওঝা জানান, প্রশাসনের নিবিড় তৎপরতার কারণে শতভাবে নিরাপত্তার সঙ্গে বড়দিনের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। কোনো নিরাপত্তাহীনতার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।
সকাল ১০টা থেকে মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে প্রার্থনা শুরু হয়। এতে প্রায় দেড় হাজারের মত পূণ্যার্থী অংশ নেন। দুপুরে হয় প্রীতিভোজ। এরপর বড়দিন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়।
চার্চটির আয়োজনে অংশ নেওয়া এলবার্ট সুনীল কুমার বিশ্বাস বলেন, সকাল থেকে সব ধরনের অনুষ্ঠানের সঙ্গে ছিলাম। ছেলে-মেয়েরা লটারির ড্র করছে, আনন্দ করছে। আজ যিশুকে স্মরণ আর আনন্দ ছাড়া আমাদের কোনো কাজ নেই।
রাজধানীর গেৎশীমানী ব্যাপ্টিস্ট চার্চে দুপুরের প্রীতিভোজ শেষ হলে প্রার্থনাকারীর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ চলে যান। তবে বিকেল পর্যন্ত কিশোর-কিশোরীরা ছবি তোলা ও গল্পে মশগুল হয়। কুশল বিনিময় করেন বয়স্করা।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্ম ও জীবন
টানা ৩ জুমা আদায় না করলে যে গুনাহ হবে
জুমার দিনের মর্যাদা ও সম্মান সপ্তাহের অন্য দিনের চেয়ে বেশি। এই দিনকে আল্লাহ তায়ালা সব দিনের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। কোরআন ও হাদিসে এই দিনের বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন , হে মুমিনগণ! জুমার দিন যখন নামাজের আহ্বান জানানো হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে (মসজিদে) এগিয়ে যাও এবং বেচা-কেনা (দুনিয়াবি যাবতীয় কাজকর্ম ছেড়ে দাও। এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর; যদি তোমরা জানতে। (সূরা জুমা- ০৯)।
আল্লাহর রাসুল (সা.) একটি হাদিসে বলেছেন, মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন।(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১০৯৮)
জুমার দিনের অনেক আমলের কথা বিভিন্ন হাদিসে চমৎকারভাবে আলোচিত হয়েছে। আউস ইবনে আউস (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করাবে (জুমার নামাজের পূর্বে স্ত্রী-সহবাস করে তাকেও গোসল করাবে) এবং নিজেও গোসল করবে অথবা উত্তমরূপে গোসল করবে। এরপর ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে আসবে, আসার সময় হেঁটে আসবে, কোনো বাহনে চড়বে না, ইমামের কাছাকাছি বসবে, এরপর দুটি খুতবা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং (খুতবার সময়) কোনো অনর্থক কাজকর্ম করবে না, সে মসজিদে আসার প্রতিটি পদক্ষেপে একবছর নফল রোজা ও একবছর নফল নামাজের সওয়াব পাবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৫)
ফজিলতের পাশাপাশি জুমার নামাজ অনাদায়ে হাদিসে শাস্তির কথা বলা হয়েছে। কেউ পর পর তিন জুমা আদায় না করলে তার জন্য সতর্কবাণী উল্লেখ করেছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
এক হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত পর পর তিন জুমা পরিত্যাগ করে, আল্লাহ তায়ালা তার অন্তরে মোহর এঁটে দেন।’ (বুখারি, হাদিস : ১০৫২; তিরমিজি, হাদিস : ৫০২; মুসলিম, হাদিস : ১৯৯৯)
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পর পর তিনটি জুমা পরিত্যাগ করবে, সে ইসলামকে পেছনের দিকে নিক্ষেপ করল। (মুসলিম)।
তবে অপর এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, চার শ্রেণির লোক ব্যতীত জুমার নামাজ ত্যাগ করা কবিরা গোনাহ। চার শ্রেণির লোক হলো- ক্রীতদাস, স্ত্রীলোক, অপ্রাপ্তবয়স্ক বালক, মুসাফির ও রোগাক্রান্ত ব্যক্তি। (আবু দাউদ)।
এছাড়া নামাজ পড়া মুসলিমদের একটি নিদর্শন। তাই হজরত উমর (র.) বলতেন, ‘নামাজ ত্যাগকারী নির্ঘাত কাফের’ (বায়হাকি: ১৫৫৯, ৬২৯১)। হজরত আলি (রা.) বলেন, ‘যে নামাজ পড়ে না সে কাফের’ (বায়হাকি: ৬২৯১)। নামাজ পরিত্যাগকারীর ব্যাপারে কোরআন-সুন্নাহর দলিলগুলো প্রমাণ করে, বে-নামাজি ব্যক্তি ইসলাম নষ্টকারী বড় কুফরিতে লিপ্ত। তাই জুমা ও যেকোনো ওয়াক্তের ফরজ নামাজের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্ম ও জীবন
জুমার নামাজ চার ধনের ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব নয়
ইয়াওমুল জুমা। সপ্তাহের সেরা মহিমান্বিত দিন। এ নামে আল্লাহ তাআলা একটি সুরা নাজিল করেছেন। সুরাটিতে জুমার পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ৪ শ্রেণির লোক এবং ওজর ছাড়া জুমা তরক করা কবিরা গুনাহ। তারা কারা যাদের জন্য জুমা আবশ্যক নয়?
জুমার নামাজ পড়া ফরজ। জুমার দিন দ্রুত প্রস্তুতি নিয়ে আগে আগে জুমা আদায় করতে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ। কোরআনে এসেছে-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ
‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনে নামাজের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও। আর বেচা-কেনা বর্জন কর। এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা জুমআ : আয়াত ৯)
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিঃসন্দেহে জুমার দিন সেরা দিন ও আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম দিন। আল্লাহর কাছে তা ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতরের দিনের চেয়েও উত্তম।’ (ইবনে মাজাহ)
তবে ৪ শ্রেণির লোক ব্যতীত জুমার নামাজ ত্যাগ করা কবিরা গোনাহ। হাদিসে পাকে তাদের ব্যাপারে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
হজরত ত্বারিক ইবনু শিহাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমার নামাজ সত্য। যা প্রত্যেক মুসলিমের উপর জামাতের সাথে আদায় করা ফরজ। তবে চার শ্রেণীর লোকের জন্য তা ফরজ নয়। তারা হলেন-
১. ক্রীতদাস।
২. নারী।
৩. শিশু ও
৪. রোগী।’ (আবু দাউদ,)
জুমার নামাজ পরিত্যাগ করার পরিণাম খুবই ভয়াবহ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতকে এ ব্যাপারে সাবধান করেছেন। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা ওঠে এসেছে-
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পরপর তিন জুমা বিনা ওজরে ও ইচ্ছা করে ছেড়ে দেবে, আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির অন্তরে মোহর মেরে দেবেন।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘আর এরপর তারা (জুমা পরিত্যাগ কারীরা) আত্মভোলা হয়ে যাবে। এরপর তারা সংশোধন লাভের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হয়ে যাবে।’ (মুসলিম)।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পরপর তিন জুমা পরিত্যাগ করবে, সে ইসলামকে পেছনের দিকে নিক্ষেপ করলো। (মুসলিম)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, নিয়মিত জুমা আদায় করা। হাদিসে উল্লেখিত ৪ শ্রেণির ব্যক্তি ছাড়া কারো জন্য জুমা থেকে বিরত থাকা উচিত নয়। কেননা জুমা আদায় করা ফরজ। কেউ তা থেকে বিরত থাকলে ফরজ তরকের কবিরা গুনায় লিপ্ত হবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমা আদায় করার তাওফিক দান করুন। জুমার গুরুত্ব ও ফজিলত পেতে জুমার দিনের যথাযথ হক আদায় করে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্ম ও জীবন
নারী হজ যাত্রীদের নিয়ে সৌদি আরবের নতুন নির্দেশনা
মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদ এবং মসজিদে নববী কর্তৃপক্ষ নারী হজ যাত্রীদের জন্য নয় নির্দেশনা জারি করেছে। ইনফোগ্রাফির মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ এক্স পোস্টে এ নির্দেশনা শেয়ার করে। এসব নির্দেশনা নারীদের নামাজের স্থানগুলোতে মেনে চলতে বলা হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যথাযথ ইসলামিক পোশাক পরিধান করা, দায়িত্বরত কর্মীদের সঙ্গে উত্তম আচারণ করা, ফ্লোরে ঘুমানো কিংবা বসা পরিহার করা এবং নামাজে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানো।
নির্দেশনায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের ওপর জোর দেয়া হয়েছে, বিশেষ করে নামাজের স্থানে খাওয়া বা পানি পান করা থেকে বিরত থাকা, হইচই না করা এবং জুতা পায়ে কার্পেটের ওপর না হাঁটা। এছাড়া নারীদের হজ যাত্রীদের ব্যক্তিগত মালামাল সাবধানে রাখতে বলা হয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্ম ও জীবন
আল্লাহর কাছে যে ব্যক্তি সবচেয়ে নিকৃষ্ট
দুনিয়ার সৃষ্টিকুলের মধ্যে শুধু জিন ও মানুষকেই আল্লাহ তাআলা বিবেক ও চিন্তাশক্তি দান করেছেন। সত্য ও কল্যাণ বুঝে গ্রহণ করার সামর্থ্য দান করেছেন। অসত্য ও অকল্যাণ প্রত্যাখ্যান করার সামর্থ্য দান করেছেন। আল্লাহ তাআলা চান মানুষ তার এই নেয়ামতের মূল্যায়ন করুক। চিন্তাশক্তি কাজে লাগাক। চোখে দেখে, কানে শুনে পর্যবেক্ষণ করার শক্তি কাজে লাগাক।
মানুষ যখন নিজের বিবেক, চিন্তা ও পর্যবেক্ষণশক্তি কাজে লাগায় এবং সত্য গ্রহণ করে, তখন মানুষ হয় সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ, যে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে আল্লাহ তাআলা তাকে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু মানুষ যখন নিজের চিন্তাশক্তি অকেজো করে রাখে, আল্লাহ তাআলা চোখ, কান ও অন্তর দেওয়ার পরও অন্ধ ও বধির হয়ে থাকে, নির্বোধ হয়ে থাকে, তখন মানুষ হয় সবচেয়ে নিকৃষ্ট। মানুষের মধ্যে নিকৃষ্ট তো বটেই, চতুস্পদ জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্ট। কারণ আল্লাহ তাআলার নেয়ামত পেয়েও সে সেগুলোর মূল্যায়ন করতে পারে নি।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَقَدۡ ذَرَاۡنَا لِجَهَنَّمَ كَثِیۡرًا مِّنَ الۡجِنِّ وَ الۡاِنۡسِ لَهُمۡ قُلُوۡبٌ لَّا یَفۡقَهُوۡنَ بِهَا۫ وَ لَهُمۡ اَعۡیُنٌ لَّا یُبۡصِرُوۡنَ بِهَا وَ لَهُمۡ اٰذَانٌ لَّا یَسۡمَعُوۡنَ بِهَا اُولٰٓئِكَ كَالۡاَنۡعَامِ بَلۡ هُمۡ اَضَلُّ اُولٰٓئِكَ هُمُ الۡغٰفِلُوۡنَ
আর অবশ্যই আমি সৃষ্টি করেছি জাহান্নামের জন্য বহু জিন ও মানুষকে। তাদের রয়েছে অন্তর, তা দ্বারা তারা বোঝে না; তাদের রয়েছে চোখ, তা দ্বারা তারা দেখে না এবং তাদের রয়েছে কান, তা দ্বারা তারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তারা অধিক পথভ্রষ্ট। তারাই হচ্ছে গাফেল। (সুরা আ’রাফ: ১৭৯)
আল্লহ তাআলা ‘জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছেন’ এর অর্থ এই নয় যে বিনা কারণে তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছিল। বরং তারা নিজেদের কাজের কারণে জাহান্নামের উপযুক্ত হয়। যেহেতু আল্লাহ তাআলা তাদেরকে অন্তর, মস্তিষ্ক, কান, চোখ সবকিছু দিয়েই সৃষ্টি করার পরও তারা এগুলোকে যথাযথভাবে ব্যবহার করে না। তারা কিছু বোঝে না, দেখে না, শোনে না। অথচ তারা পাগল বা উম্মাদ নয় যে কিছুই বুঝতে পারবে না। অন্ধও নয় যে কোনো কিছু দেখবে না, বা বধিরও নয় যে কোনো কিছু শুনবে না। বরং তারা পার্থিব বিষয়ে অধিকাংশ লোকের তুলনায় অধিক সতর্ক ও চতুর।
কোরআনের আরেকটি আয়াতেও এ ধরনের ব্যক্তিদের সৃষ্টিকুলের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَطِیۡعُوا اللّٰهَ وَ رَسُوۡلَهٗ وَ لَا تَوَلَّوۡا عَنۡهُ وَ اَنۡتُمۡ تَسۡمَعُوۡنَ وَ لَا تَكُوۡنُوۡا كَالَّذِیۡنَ قَالُوۡا سَمِعۡنَا وَ هُمۡ لَا یَسۡمَعُوۡنَ اِنَّ شَرَّ الدَّوَآبِّ عِنۡدَ اللّٰهِ الصُّمُّ الۡبُكۡمُ الَّذِیۡنَ لَا یَعۡقِلُوۡنَ
হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য কর এবং তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না, অথচ তোমরা শুনছ। আর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা বলে আমরা শুনেছি অথচ তারা শোনে না। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে নিকৃষ্টতম বিচরণশীল প্রাণী হচ্ছে বধির, বোবা, যারা বোঝে না। (সুরা আনফাল: ২২)
অর্থাৎ আল্লাহর সৃষ্টিকুলের মধ্যে সেসব মানুষই সবচেয়ে নিকৃষ্ট যারা সত্য ও ন্যায় শ্রবণের ব্যাপারে বধির এবং তা গ্রহণ করার ব্যাপারে বোবা হয়ে থাকে। কারণ আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সত্য জানা ও সে পথে চলার জন্য চোখ ও কান দিয়েছিলেন, কিন্তু তারা সেগুলো কাজে লাগায়নি।
আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, মানুষের চোখ, কান ও অন্তর সম্পর্কে কেয়ামতের দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে যে আল্লাহর এই নেয়ামতগুলো সে কী কাজে লাগিয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَ لَا تَقۡفُ مَا لَیۡسَ لَكَ بِهٖ عِلۡمٌ اِنَّ السَّمۡعَ وَ الۡبَصَرَ وَ الۡفُؤَادَ كُلُّ اُولٰٓئِكَ كَانَ عَنۡهُ مَسۡـُٔوۡلًا
আর সে বিষয়ের পেছনে ছুটো না, যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই। কান, চোখ আর অন্তর- এগুলোর প্রতিটির ব্যাপারেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সুরা ইসরা: ৩৬)