আন্তর্জাতিক
তিন গুণ বাড়তে পারে রাশিয়ার এলএনজি রফতানি

বিশ্ববাজারে বড় পরিসরে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রফতানি বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে রাশিয়া। এ লক্ষ্যে দেশটিতে বিদ্যমান ও নতুন এলএনজি টার্মিনালগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। চলতি দশকের শেষ নাগাদ জ্বালানিটির রফতানি তিন গুণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছেন।
এলএনজি রফতানিতে শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া। রফতানি বাড়ানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সফল হলে দেশটি ছয়-আট বছরের মধ্যে প্রথম কিংবা দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আলেকজান্ডার নোভাকের উদ্ধৃতি দিয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা আরআইএর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৩০ সাল নাগাদ রাশিয়ার বার্ষিক এলএনজি রফতানি দাঁড়াতে পারে ১১ কোটি টনে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় অন্তত তিন গুণ বেশি।
এলএনজির বৈশ্বিক রফতানি বাণিজ্যে রাশিয়ার বর্তমান বাজার হিস্যা ৮ শতাংশ। পরিকল্পিত রফতানি প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হলে ছয় বছরের মধ্যে এ হিস্যা ২০ শতাংশে উন্নীত হতে পারে বলে জানিয়েছেন দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী।
তিনি জানান, রফতানি বৃদ্ধির পরিকল্পনা বাস্তবায়নে স্থানীয় উৎপাদন লক্ষ্যণীয় মাত্রায় বাড়াতে হবে। রফতানির অবকাঠামোগুলোকে পূর্ণ সক্ষমতায় কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। তা না হলে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।
এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বেশকিছু প্রতিবন্ধকতাও মোকাবেলা করতে হবে দেশটিকে। এর মধ্যে রয়েছে বিনিয়োগস্বল্পতা, টেকনিক্যাল ইস্যু ও জ্বালানি খাতে পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা।
রফতানিতে এমন প্রবৃদ্ধির পরিকল্পনাকে উচ্চাভিলাষী আখ্যা দিয়ে আলেকজান্ডার নোভাক বলেন, ‘এটি বাস্তবায়নে এলএনজি উৎপাদন ক্লাস্টারের উন্নয়ন করতে হবে। প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন, পরিশোধন, তরলীকরণ ও রফতানি সমানতালে বাড়াতে হবে।’ বাল্টিক ক্লাস্টারে ২০৩০ সাল নাগাদ উৎপাদন বেড়ে বছরে ১ কোটি ৫০ লাখ টনের গণ্ডি স্পর্শ করবে বলে আশা করছেন নোভাক। এখনো উৎপাদনে যায়নি মার্মানস্ক ক্লাস্টার। সেখানে বছরে দুই কোটি টন উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। ইয়ামাল ক্লাস্টারে বর্তমানে বছরে দুই কোটি টন করে উৎপাদন হচ্ছে। আট বছরের মধ্যে তা ছয় কোটি টনে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। অন্যদিকে সাখালিন ক্লাস্টারে উৎপাদন ১ কোটি ১০ লাখ থেকে বেড়ে ১ কোটি ৫০ লাখ টনে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
ইউক্রেনে হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েক দফা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে রুশ জ্বালানি খাত। সমুদ্রপথে দেশটি থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে অঞ্চলটি। এতে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস আমদানিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েনি রুশ এলএনজি রফতানি। ইউরোপে গত বছর থেকেই এলএনজি রফতানি বাড়ছে। পাশাপাশি এশিয়ার বাজারেও পেয়েছে নতুন মাত্রা। বিশেষ করে ভারত ও চীনে বিপুল পরিমাণ এলএনজি রফতানি করছে রাশিয়া।
এলএনজির বৈশ্বিক চাহিদা ২০২৪ সাল নাগাদ ৫০ শতাংশেরও বেশি বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বৈশ্বিক চাহিদা প্রবৃদ্ধিতে রসদ জোগাচ্ছে চীন এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে জ্বালানিটির ব্যবহার বাড়াচ্ছে এসব দেশ। ব্রিটিশ বহুজাতিক জ্বালানি তেল ও গ্যাস কোম্পানি শেল এনার্জি সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এমনটা জানায়। চাহিদা প্রবৃদ্ধির এমন সম্ভাবনাও রাশিয়াকে রফতানি বাড়াতে উৎসাহিত করছে।

আন্তর্জাতিক
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে যাচ্ছেন হিমেল: চীন প্রবাসী কমিউনিটির সংবর্ধনা

চীন-বাংলা কমিউনিটির পরিচিত মুখ, জাতীয় সাঁতার দলের সাবেক তারকা নাজমুল হক হিমেল আসন্ন জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ছোটবেলার লালিত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে এবার তিনি সাহসী এ যাত্রায় নামছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে হিমেল বাংলাদেশ ত্যাগ করে ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন।
হিমেলের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে গতকাল শনিবার (১৪ জুন) রাজধানীর ভাটারায় চীন-বাংলা ব্রিজ কমিউনিটির উদ্যোগে আয়োজিত হয় এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। এতে উপস্থিত ছিলেন কমিউনিটির বিভিন্ন সদস্য ও হিমেলের শুভাকাঙ্ক্ষীরা।
কিশোরগঞ্জের নিকলিতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা হিমেল জানান, হাওড় অঞ্চলে পানির সঙ্গে বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতা তাকে সাহসী করে তুলেছে। তবে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়া যে সহজ কাজ নয়, সেটিও তিনি ভালোভাবেই জানেন। হিমেল বলেন, নিঃসন্দেহে এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। হিমশীতল পানি, উত্তাল ঢেউ, জেলিফিশের আক্রমণ, সব কিছুই মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুতির দাবি রাখে। কিন্তু আমি খুবই এক্সসাইটেড। সবার ভালোবাসা ও দোয়া থাকলে ইনশাআল্লাহ সফলভাবে এই যাত্রা সম্পন্ন করে দেশে ফিরতে পারব।
হিমেল বিকেএসপিতে প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা শেষ করে পাড়ি জমিয়ে ছিলেন চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে। সেখানে তিনি সাঁতারে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে দীর্ঘদিন কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। এখন তার লক্ষ্য ইংলিশ চ্যানেল, যেটি বিশ্বব্যাপী একজন সাঁতারুর জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত।
প্রসঙ্গত, ৩৭ বছর পর কোনো বাংলাদেশি সাঁতারু ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে যাচ্ছেন। হিমেলের সঙ্গে একই অভিযানে অংশ নেবেন আরেক তারকা সাঁতারু মাহফিজুর রহমান।
আন্তর্জাতিক
ভারতে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত, নিহত ৫

ভারতে কেদারনাথগামী একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে পাঁচজন নিহত হয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেদারনাথধাম থেকে যাত্রা করা একটি হেলিকপ্টার জঙ্গলে বিধ্বস্ত হয়ে পাঁচজন নিহত হয়েছে।
আরিয়ান এভিয়েশনের ওই হেলিকপ্টারটি গুপ্তকাশী থেকে কেদারনাথ ধামের দিকে যাচ্ছিল। উড্ডয়নের প্রায় ১০ মিনিট পর গৌরীকুণ্ড এবং সোনপ্রয়াগের মাঝামাঝি এলাকায় হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়।
স্থানীয় সময় রোববার (১৫ জুন) ভোর ৫টা ২০ মিনিটে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়েছে। উত্তরাখণ্ড সিভিল অ্যাভিয়েশন ডিপার্টমেন্ট অথরিটি (ইউসিএডিএ) জানিয়েছে, দুর্ঘটনার সময় হেলিকপ্টারে পাইলটসহ সাত আরোহী ছিল। এর মধ্যে ছয়জনই তীর্থযাত্রী যাদের মধ্যে এক শিশুও ছিল।
ওই তীর্থযাত্রীরা উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং গুজরাটের বাসিন্দা। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি সামাজিক মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে ওই দুর্ঘটনার খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন।
কী কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে তা এখনও জানা যায়নি। তবে যান্ত্রিক ত্রুটি এবং খারাপ আবহাওয়ার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মাত্র কয়েকদিন আগেই ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদে একটি প্লেন দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ২৭৯ জন প্রাণ হারায়। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) দুপুরে রাজ্যের মেঘানি এলাকায় আদানি বিমানবন্দরের কাছে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই ভেঙে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার প্লেন। স্থানীয় সময় দুপুর ১টা থেকে ২টার মধ্যে এটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। প্লেনটি লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল।
আন্তর্জাতিক
ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা ইরানের

ইরানের একজন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরায়েলি বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক অভিযানের সময় কমপক্ষে ১৫০টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সামরিক ঘাঁটিও রয়েছে।
শনিবার (১৪ জুন) ভোরে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে কথা বলার সময়, ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ডস কর্পস (আইআরজিসি) এর প্রধান কমান্ডারের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ ওয়াহিদি বলেন, আইআরজিসি এরোস্পেস ডিভিশন কর্তৃক অপারেশন ট্রু প্রমিজ ৩ সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে।
ওয়াহিদি বলেন, এই লক্ষ্যবস্তুগুলিতে একাধিক পর্যায়ে সফলভাবে আঘাত করা হয়েছে। কর্মকর্তা বলেন, নেভাতিম এবং ওভদা বিমানঘাঁটিতে হামলার কথা উল্লেখ করেছেন। তার কথায়, “এই ঘাঁটিগুলিতে কমান্ড এবং নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ইলেকট্রনিক যুদ্ধ কেন্দ্র ছিল এবং যেখান থেকে ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালানো হয়েছিল।”
এছাড়া তেল আবিব শহরের কাছে সরকারের তেল নফ বিমানঘাঁটিতেও হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি ওই কর্মকর্তার। আইআরজিসি কমান্ডারের মতে, ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের প্রতিশোধের সময় সরকারের সামরিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সামরিক-শিল্প কেন্দ্রগুলিতেও আঘাত হানা হয়েছিল।
এদিকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান থাকার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ফার্স নিউজ প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তার বরাতে জানিয়েছে, “গত রাতের সীমিত পদক্ষেপের মাধ্যমে এই সংঘর্ষ শেষ হবে না এবং ইরানের হামলা অব্যাহত থাকবে। এই পদক্ষেপ আক্রমণকারীদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক এবং দুঃখজনক হবে।”
অন্যদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ইরানে আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। সেনাবাহিনী রাতারাতি ইরানের কয়েক ডজন স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালানোর কথা বলার পর এই ঘোষণা আসলো। যার মধ্যে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র অবকাঠামোও রয়েছে।
ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে যে তারা ইরানের লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। টেলিগ্রামে পোস্ট করা একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে, আইডিএফ বলেছে যে “ইসরায়েলি বিমান বাহিনী ইরানের হুমকি দূর করার জন্য লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে”।
আন্তর্জাতিক
ইরান ও ইসরায়েলকে যে বার্তা দিলেন জাতিসংঘ মহাসচিব

গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ ইরানে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের এই অভিযানে রাজধানী তেহরানসহ ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা, পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র ও আবাসিক স্থাপনায় হামলা চালায় ইহুদিবাদী সেনারা।
এই হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, দেশটির ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) প্রধান কমান্ডার হোসেইন সালামি, খাতাম আল-আনবিয়া সদরদপ্তরের কমান্ডার ও বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মেজর জেনারেল গোলাম আলি রশিদ ও ৬ জন পরমাণু বিজ্ঞানীসহ অন্তত ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ইসরায়েলের হামলার পর পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে শুক্রবার (১৩ জুন) রাতে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩ নামে’ অভিযান শুরু করে ইরান। মিসাইল হামলা শুরু হতেই নিজের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান ও উচ্চপদস্থ মন্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে মাটির নিচে বাংকারে আশ্রয় নিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
চলমান এই সংঘাতের প্রেক্ষাপটে দুই পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। নিজের ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক বার্তায় গুতেরেস লিখেছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ, আর তেল আবিবে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা- যথেষ্ট হয়েছে। এবার থামার সময়। শান্তি ও কূটনীতির জয় হোক।
এদিকে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েনও এই সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজকের সঙ্গে কথা বলে তিনি ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করেছেন, তবে পাশাপাশি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার গুরুত্বও তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, আমি সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছি। উত্তেজনা হ্রাসে সক্রিয় ও কার্যকর ভূমিকা রাখা জরুরি।
এদিকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, তিন ধাপে শুক্রবার (১৩ জুন) রাতে ইরানের ছোড়া কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি ইসরায়েলের বাণিজ্যিক রাজধানী তেল আবিবে আঘাত হানে। এতে এক নারী নিহতসহ অন্তত ৪৮ জন আহত হয়েছেন।
সূত্র: এএফপি, আল জাজিরা
আন্তর্জাতিক
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম

ইসরায়েল ও ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। তেল আবিব, তেহরানসহ অঞ্চলের বিভিন্ন বিমানবন্দরে ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় তেল কোম্পানি, জাহাজ চলাচল সংস্থা ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে হরমুজ প্রণালীসহ গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক পথে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেড়েছে।
বাণিজ্যিক জাহাজ এখনও হরমুজ প্রণালী দিয়ে চলাচল করছে। তবে এখন খুব বেশি সতর্কতার সঙ্গে তাদের চলতে হচ্ছে। ইরান আগে পশ্চিমাদের চাপের জবাবে এই গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছিল। এসব বিষয় বিশ্ববাজারে এক ধরনের শঙ্কার জন্ম দিয়েছে, যার ফলে তেলের দাম বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক ভাষণও পরিস্থিতি শান্ত করতে পারছে না। তিনি বলেন, যদি ইরান কোনো চুক্তিতে না আসে, তাহলে আরও বেশি মৃত্যু ও ধ্বংস হতে পারে।
শিপিং সংগঠন বিমকোর নিরাপত্তা প্রধান জ্যাকব লার্সেন রয়টার্সকে বলেন, যদি সবাই মনে করে যুক্তরাষ্ট্র হামলায় যুক্ত, তাহলে পরিস্থিতি আরো বেশি উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠবে।
নিউ ইয়র্ক সময় বিকেল ৪টার দিকে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম গতকালের বাজার বন্ধের দামের চেয়ে ৫ শতাংশ বেড়ে গেছে।
এক পর্যায়ে তেলের দাম ১৩ শতাংশের বেশি বেড়ে যায়। এটি এখন পর্যন্ত এই বছরের জানুয়ারির পর থেকে সবচেয়ে বেশি দাম। সহজ কথায়, তেলের দাম হঠাৎ অনেক বেশি উঠেছিল।
আরব উপসাগর ও ওমান উপসাগরের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথ হল হরমুজ প্রণালী। বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ তেল এই পথে যায়। যদি এই পথটি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে তেলের দাম আরও বেশি বেড়ে যেতে পারে। এতে বিশ্বব্যাপী, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি বা দাম বৃদ্ধির চাপ বাড়বে।
এই দাম বেড়ে যাওয়ার খবর এসেছে এমন এক সময়ে, যখন সপ্তাহের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (মৌলিক মূল্য সূচক) রিপোর্ট প্রত্যাশার চেয়ে ভালো ছিল। ওই রিপোর্টে দেখা যায়, মাসে দাম মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছিল।
আমেরিকায় সাম্প্রতিক সময়ে দাম প্রায় বাড়েইনি, পেট্রোলের দামও কমেছিল। এজন্য মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিল। কিন্তু নতুন সংঘাতে এই স্বস্তি দ্রুত চলে যেতে পারে। অর্থাৎ দাম আবার বাড়তে পারে এবং মানুষকে কষ্ট করতে হতে পারে।
জেপি মরগ্যান চেজের বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি জ্বালানির দাম অনেক দিন ধরে বাড়তেই থাকে, তাহলে আমেরিকায় যেভাবে পণ্যের দাম কমছিল, সেটা আবার উল্টো দিকে যেতে পারে। অর্থাৎ, জিনিসপত্রের দাম আবার বাড়তে শুরু করতে পারে।
তারা আরও বলেন, ট্রাম্পের মূল লক্ষ্য হলো জ্বালানির দাম কম রাখা— এটি তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। তাই এমন কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনা কম, যা তেলের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে এবং মূল্যস্ফীতি বাড়ায়।
সংঘাতের খবর প্রকাশ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে বড় ধস নামে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ১ দশমিক ১ শতাংশ, ডাও জোন্স ১ দশমিক৭ শতাংশ এবং নাসডাক ১ দশমিক ৩ শতাংশ কমে গেছে।
আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক তৌফিক রহিম বলেন, আজকের বাজার দেখলে বোঝা যায়—এসঅ্যান্ডপি হোক বা বিটকয়েন—সবকিছুই মোটামুটি স্থিতিশীল বা কিছুটা নিচের দিকে। সবাই এখন অপেক্ষা করে দেখছে পরিস্থিতি কোন দিকে যায়।
তিনি বলেন, তেলের বাজারে তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়েছে, কারণ ইরান বৈশ্বিক তেল সরবরাহের বড় অংশীদার। এখন পর্যন্ত ইসরায়েল ইরানের তেল অবকাঠামোয় বড় ধরনের হামলা করেনি। তবে যদি ভবিষ্যতে তেমন কিছু হয়, তাহলে এর প্রভাব হবে অনেক বেশি।
যদি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক পথ, যেমন হরমুজ প্রণালী সাময়িকভাবেই বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) জরুরি পরিস্থিতির জন্য তাদের সংরক্ষিত তেল ছাড়ার প্রস্তুতি রাখে। তবে এতে সংরক্ষণ শেষ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
আইইএর স্ট্র্যাটেজিক রিজার্ভে প্রায় ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ব্যারেল তেল রয়েছে, যেখানে বিশ্ব দৈনিক প্রায় ১০০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল ব্যবহার করে।
ম্যাক্রোইকোনোমিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিসিএ রিসার্চের প্রধান ভূরাজনৈতিক কৌশলবিদ ম্যাট গার্টকেন আল জাজিরাকে বলেন, যদি হরমুজ প্রণালী বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সেটাই হবে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তেল সংকট।