উচ্চ সম্ভাবনাময় নতুন একটি খাত হতে যাচ্ছে জুয়েলারি। এটা রপ্তানিকে বেগবান করতে পারে, আবার রপ্তানি বাস্কেটেও বৈচিত্র্য আনতে পারে। সোনাশিল্পের ক্ষেত্রে আমাদের যে ঐতিহ্য, ভুল পলিসির কারণে তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ট্যারিফ ন্যাশনালাইজেশন ট্যাক্স পলিসিটি ঠিক করা হলে এই খাতের সম্ভাবনা ও রাজস্ব আয় বাড়বে।
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) নবরাত্রি হলে ‘রাজস্ব সম্ভাবনা ও যৌক্তিক কর কাঠামো’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে সরকার ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসি বলে একটি পলিসি গ্রহণ করেছে। সেখানে রপ্তানিতে নানা সুযোগ রাখা হয়েছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে সম্ভাবনাময় শিল্প হতে যাচ্ছে জুয়েলারি। তাই বসুন্ধরা গ্রুপের মতো বড় কম্পানিগুলোকে জুয়েলারি খাতে এগিয়ে আসতে হবে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাজুসের সাবেক সভাপতি কাজী সিরাজুল ইসলাম, কার্যনির্বাহী সদস্য ডা. দিলীপ কুমার রায়, এফবিসিসিআইয়ের ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ পলিসি অ্যাডভাইজার মনজুর আহমেদ, এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র অতিরিক্ত মহাসচিব শাহ মো. আব্দুল খালেক, রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, জাতীয় কর আইনজীবী ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট ড. মো. নুরুল আজহার শামীম, বাজুসের সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায়, কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন ও সহসভাপতি মাসুদুর রহমান।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সিইও ড. এম. মাসরুর রিয়াজ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাজুসের সহসভাপতি রিপনুল হাসান। সঞ্চালনায় ছিলেন বাজুসের উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বারবার বলছেন রপ্তানিতে জোর দেওয়ার কথা। আমরা শুধু আরএমজির ওপর নির্ভর করছি। আমার মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের জন্য আরেকটি রপ্তানিতে সম্ভাবনাময় খাত হতে যাচ্ছে জুয়েলারিশিল্প।
দীর্ঘ পরীক্ষিত ট্যারিফ পলিসিতে বলা আছে, আপনি যে পরিমাণ রপ্তানি করবেন, তার বিপরীতে যে পরিমাণ কাঁচামাল আমদানি করবেন তাতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবেন।’
আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, আমি ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের পক্ষ হয়ে কথা দিচ্ছি, আপনাদের বিশ্লেষণগুলো আমাদেরকে দেন। আমরা আপনাদেরকে নিয়ে আবার বসব। প্রয়োজনে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে। এই কমিটির সুপারিশের আলোকে প্রয়োজনীয় সুপারিশ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) দেব। স্বর্ণশিল্প বিকাশে একটি সুষম কর ও শুল্ক কাঠামো তৈরিতে ট্যারিফ কমিশন যাতে ভূমিকা রাখতে পারে, সেই কাজটি আমরা করব।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম. মাসরুর রিয়াজ বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে আমরা এখন যেসব সুবিধা পাচ্ছি, এলডিসিতে গেলে সেগুলো আর থাকবে না। তাই যদি এখনই নতুন নতুন পণ্য তৈরি করতে না পারি তাহলে সেই জায়গায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে জুয়েলারি খাতের বড় একটি সম্ভাবনা আছে।
পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আরো বলেন, আমাদের স্থানীয় সোনার বাজার ২০২০ সালে ছিল প্রায় তিন বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি, যা প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি হচ্ছে। ২০৩০ সালে এটা প্রায় ২৭ বিলিয়ন ডলারের বাজার হয়ে যাবে। এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জকে সামনে আনতে হবে।
বাজুসের উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমরা শুধু কর কমানো বা বাড়ানোর কথাই বলছি না। আমরা বলতে চাই, এই খাত থেকে সরকার বছরে মাত্র ৪৫ কোটি টাকা রাজস্ব পায়। এই তথ্যটি সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আমাদের এক সেমিনারে জানিয়েছেন। তিন লাখ কোটি টাকার স্থানীয় বাজার, সেখানে এই রাজস্ব আসার কথা নয়।