অর্থনীতি
ব্যবসার ভবিষ্যত পরিকল্পনা প্রণয়নে ধারণা দিবে পিএমআই

দেশের অর্থনীতির তথ্য-উপাত্তসহ ব্যবসার ভবিষ্যত পরিকল্পনা প্রণয়নের পূর্বাভাসের তথ্য জানাবে পারচেজিং ম্যানেজার ইনডেক্স (পিএমআই)। যা কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানের নতুন ক্রয়াদেশ, উৎপাদন, কর্মসংস্থান, সরবরাহ এবং ইনভেন্টরির মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করে, যা অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য এবং সম্ভাব্য খাতভিত্তিক সুযোগগুলোর একটি বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি সরবরাহ করে। স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশের উন্নীত হওয়ার আলোকে, বিশেষ করে মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্বের চ্যালেঞ্জ দৃশ্যমান হওয়ার পর বাংলাদেশের উন্নয়ন গতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে পিএমআই বা ক্রয় ব্যবস্থাপনা সূচকের মাধ্যমে ব্যবসার পূর্বাভাসের তথ্য জানা বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স (এমসিসিআই) ও পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ (পিইবি) যৌথভাবে এখন থেকে এসব তথ্য জানাবে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর গুলশানে এমসিসিআই কার্যালয়ে পিএমআই তৈরি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। বিস্তারিত তুলে ধরেন পিইবির চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিইবির অর্থনীতিবিদ ও সিনিয়র ম্যানেজার হাসনাত আলম। পিএমআই যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের (এফসিডিও) সহায়তায় এমসিসিআই ও পিইবির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতামূলক কার্যক্রম। অনুষ্ঠানে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার ম্যাট ক্যানেল, এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি রহমান।
মাশরুর রিয়াজ জানান, পিএমআই বাংলাদেশে নতুন হলেও বিশ্বে এটি নতুন নয়। যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৪৯ সালেই এটি চালু হয়। বাংলাদেশের কিছু প্রধান শিল্প খাতের অন্য দিকগুলো প্রতিফলিত করতে এবং মোকাবিলার জন্য এটি ব্যবহার হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন খাতের নীতিনির্ধারকরা খুব সহজেই অর্থনীতির পূর্বাভাস বুঝে বিনিয়োগ করতে পারবেন। সরকার, বেসরকারি খাত, সিভিল সোসাইটি এ টুল ব্যবহার করতে পারবেন।
তিনি জানান, ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে এটি সহায়ক হবে। কারণ এর মাধ্যমে প্রতি মাসের অর্থনৈতিক পরিবেশ বোঝা যাবে। সর্বোচ্চ ১০ দিনের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ১১তম দিনের তথ্য আমাদের কোনো কাজে আসবে না। তখন চিহ্নিত করা যাবে কে সঠিক উত্তর দিচ্ছেন, কী করছেন।
ইউনিলিভারের জিনিয়া হকের এক প্রশ্নের জবাবে মাশরুর রিয়াজ বলেন, ধার যাক, ইউনিলিভার সাবান তৈরির জন্য কাঁচামাল কিনেছে। এটি প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য কতটুকু সহায়ক হবে, কতটুকু প্রভাব ফেলবে—তা পিএমআইর মাধ্যমে জানা যাবে।
ভারপ্রাপ্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার ম্যাট ক্যানেল বলেন, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ১০ বছর ধরে ৬ শতাংশের ওপরে অবস্থান করছে। বিশ্বজুড়ে পিএমআই ব্যবহার হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিনিয়োগের জন্যও এটি জরুরি।
তিনি বলেন, এলডিসি থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার প্রক্রিয়া নির্দেশ করবে এ টুল। রিয়েল টাইম ডাটা অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনীতির পরের ধাপে কীভাবে পৌঁছানো যাবে—সেটি জানা জরুরি। এর মাধ্যমে পরের ধাপে পৌঁছানোর নির্দেশনা মিলবে।
ব্রিটিশ হাইকমিশনারের মতে, পরিবর্তনশীল বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বা সংগতিপূর্ণ থাকতে পিএমআই অবশ্যই প্রয়োজন।
মূল প্রবন্ধে হাসনাত আলম জানান, এটি এখন পাইলট প্রকল্প হিসেবে আছে। গত নভেম্বর কাজ শুরু হয়েছে। আগামী মার্চ নাগাদ একটি প্রতিবেদন আমরা প্রকাশ করতে পারব বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি নতুন হওয়ায় চ্যালেঞ্জ অনেক। বিশেষ করে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের তথ্য প্রকাশ করতে চাইবে না। তবে আমরা প্রশ্নগুলো সেভাবেই সাজিয়েছি। এতে কোম্পানি যে কোনোভাবেই তথ্য দিতে পারবে।
অর্থসংবাদ/এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অর্থনীতি
দেশের বাজারে বাড়ল সোনার দাম, ভরি ১৫৩৪৭৫ টাকা

ঈদের আগে দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম ২ হাজার ৬১৩ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার (পাকা সোনা) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (১৬ মার্চ) এ দাম বাড়ানো হয়েছে।
সোমবার (১৭ মার্চ) থেকে নতুন দাম কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
১৫ দিনেই রেমিট্যান্স এলো ২০ হাজার কোটি টাকা

চলতি বছরের মাস মার্চে নতুন রেকর্ড হতে পারে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ে। ভাঙতে পারে অতীতে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্সের রেকর্ড। মার্চের প্রথম ১৫ দিনে ১৬৫ কোটি ৬১ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ ২০ হাজার ২০৪ কোটি টাকার বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, চলতি মাস মার্চে প্রতিদিন আসছে ১১ কোটি ডলারের (১৩৪৭ কোটি টাকা) বেশি। রেমিট্যান্স আসার এ ধারা অব্যাহত থাকলে মাসের পুরো সময়ে তিন বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে রেমিট্যান্স। যা দেশের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড গড়তে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দেশ থেকে অর্থপাচার কমেছে। একই সঙ্গে কমেছে হুন্ডি কারবারির দৌরাত্ম্যও। অন্য দিকে, খোলা বাজারের মতোই ব্যাংকে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম পাওয়া যাচ্ছে। এসব কারণে প্রবাসীরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাছাড়া আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে আরও বেশি বেড়েছে রেমিট্যান্স আসার গতি।
প্রাপ্ত তথ্য বলছে, আলোচিত সময়ে (মার্চে প্রথম ১৫ দিন) ১৬৫ কোটি ৬১ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এর মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৭ কোটি ১১ লাখ ডলারের বেশি, বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে এক ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩ কোটি ডলার। আর বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১১৫ কোটি ১৬ লাখ ২০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩১ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স।
এ সময়ে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি এমন ব্যাংকের সংখ্যা ৭টি। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা বিডিবিএল, বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং উরি ব্যাংক।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৮ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ৮৪৯ কোটি ডলার। যা গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথম ৮ মাসে ছিল এক হাজার ৪৯৪ কোটি ডলার। সে হিসেবে গত অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসের চেয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩৫৫ কোটি ডলার।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ টাকা করার প্রস্তাব সিপিডির

ব্যক্তি-শ্রেণি করদাতাদের বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে চার লাখ টাকা করার সুপারিশ করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। বর্তমানে একজন করদাতার করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা আছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তা আরও ৫০ হাজার টাকা বাড়ানোর কথা বলেছে সিপিডি।
রবিবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর ধানমন্ডি সিপিডি কার্যালয়ে ‘২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট: সিপিডির সুপারিশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এই সুপারিশ করা হয়।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানসহ আরও অনেকে।
বর্তমান ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের ওপর ৫, ১০, ১৫, ২০ ও ২৫ শতাংশ হারে কর বসে। প্রথম সাড়ে তিন লাখ টাকার ওপর কর নেই। পরের প্রথম এক লাখ টাকার জন্য ৫ শতাংশ, পরবর্তী ৪ লাখ টাকার জন্য ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকার জন্য ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকার জন্য ২০ শতাংশ এবং বাকি অর্থের ওপর ২৫ শতাংশ হারে কর বসবে।
এছাড়া মহিলা করদাতা এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা হলো চার লাখ টাকা। তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা এবং প্রতিবন্ধী স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার করমুক্ত আয়সীমা হবে পৌনে পাঁচ লাখ টাকা। গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা পাঁচ লাখ টাকা হবে। আর প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতামাতা বা আইনানুগ অভিভাবকের প্রত্যেক সন্তান বা পোষ্যর জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা আরও ৫০ হাজার টাকা বেশি হবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
নয় ব্যাংককে ২৯ হাজার কোটি টাকা ধার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক

গত আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আমানতকারীরা কয়েকটি ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে ভিড় করেন। এতে তীব্রতর হয় তারল্য সংকট। সংকটে টাকা ছাপিয়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ধার দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের আমলে ৯টি ব্যাংককে প্রায় সাড়ে ২৯ হাজার কোটি টাকা ধার দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এরমধ্যে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে (এসআইবিএল) ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংককে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। টাকা ছাপিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংককে ৫ হাজার কোটি টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংককে ২ হাজার কোটি টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা, আইসিবি ইসলামী ব্যাংককে ১০ কোটি টাকা, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংককে ২ হাজার কোটি টাকা, এক্সিম ব্যাংককে ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং এবি ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা ধার দেওয়া হয়েছে।
এসব ব্যাংককে টাকা ধার দেওয়া হয় জামানত ছাড়া। বিদায়ী বছরের শেষ দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর জানান, বলেছিলাম আমরা আর টাকা ছাপাব না। আগের সে অবস্থান থেকে সাময়িকভাবে সরে এসেছি, পুরোপুরিভাবে নয়। সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে যে পরিমাণ তারল্য সহায়তা দেওয়া হবে সমপরিমাণ টাকা বাজার থেকে বন্ড ছাড়ার মাধ্যমে তুলে ফেলবো। অর্থাৎ এক হাতে টাকা দেবো, অন্য হাতে বাজার থেকে তুলে নেবো।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হলে বছরে ক্ষতি ৮ বিলিয়ন ডলার

এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে বছরে ৮ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
তিনি বলেন, গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী সময়ে ইউরোপের বাজারে শুল্কছাড় সুবিধা উঠে যাবে। এ ছাড়া জলবায়ু অর্থায়নের ক্ষেত্রেও উন্নয়ন সহযোগিতা কমবে। আমাদের ব্যবসায়ীরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত নন।
গতকাল রাজধানীর এফডিসিতে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, বিগত সরকারের সময় যে অর্থনৈতিক তথ্য দেওয়া হয়েছিল, তা ছিল গোঁজামিলনির্ভর ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অর্থনৈতিক ডেটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারে বাংলাদেশ ছিল অন্যতম অগ্রগণ্য দেশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) নির্দেশ দেওয়ার মাধ্যমে তারা মনমতো ডেটা ব্যবহার করত। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পরে বাংলাদেশকে কমার্শিয়াল রেটে ঋণ নিতে হবে, যা পরিশোধ করা ও ঋণের শর্ত পূরণ করা কঠিন।
তিনি বলেন, চীনের ঋণের ব্যাপারে সব সময় একটা সংশয় থাকে। অন্যান্য দেশের ঋণের ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স স্পষ্ট থাকলেও চীনের ক্ষেত্রে তা থাকে না। কোনোভাবেই ঋণের ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। গত ১৫ বছরে ঋণের টাকা ব্যাপক অপচয়, দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে। ঋণ পরিশোধে বাস্তবভিত্তিক কোনো পরিকল্পনা না থাকায় এই ঋণ বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক ঋণ নেওয়ায় সতর্কতা ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় সুশাসন এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেও প্রশ্ন হচ্ছে, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের ভুয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হতে যাচ্ছি কি না?
তিনি বলেন, বিগত সরকারের আমলের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হতো। ভুল, মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত তথ্য দিয়ে উন্নয়নের মিথ্যা গল্প শোনানো হতো। দেশের রিজার্ভ, জিডিপি, রপ্তানি আয়, দারিদ্র্যবিমোচন, খাদ্য উৎপাদন, বাল্যবিয়ে এমনকি প্রকৃত জনসংখ্যা নিয়েও মিথ্যাচার করা হয়েছিল বিগত সময়ে। সরকার যেভাবে চাইত বিবিএস সেভাবেই তথ্য পরিসংখ্যান দিত। অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যকে বোগাস বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, বিদেশে রোড শোর নামে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় করে প্রমোদভ্রমণ করা হয়েছে। দেশের খেলাপি ঋণের প্রকৃত তথ্য কখনো জানতে দেওয়া হয়নি। যে পরিমাণে ঋণ আদায় হতো, তার চেয়ে বেশি অবলোপন হতো। ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন পাঁচ তারকা হোটেলে বসে সুদহার ও ডলারের মূল্য নির্ধারণ করে দিত। সরকার, কিছু রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ী এই চার চক্রের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল আওয়ামী সরকার।
যদিও অর্থনীতিবিদদের অনেকেই মনে করেন, গত এক দশকের বেশি সময় সরকার যে ডেটা ম্যানিপুলেট করেছে, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য তা মোকাবিলা করা সম্ভব। তবে বিগত সরকারের আমলে আর্থিক খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি, জ্বালানি সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সুদহার বৃদ্ধি, এফডিআই কমে যাওয়া, বেসরকারি বিনিয়োগের ঘাটতিসহ বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০২৬-এ বাংলাদেশের জন্য এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
তবে এলডিসি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় হাতে আছে। তাই এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এতে দেশের মর্যাদা আরও বাড়বে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করবে। নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপনের সুযোগ বাড়বে, অধিক কর্মসংস্থান তৈরি হবে। অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বাড়বে।