অন্যান্য
লভ্যাংশের অর্থ পায়নি এমারেল্ড অয়েলের বিনিয়োগকারীরা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের লভ্যাংশের অর্থ না পাওয়ার অভিযোগ করছেন বিনিয়োগকারীরা। সর্বশেষ বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীনসহ মোট ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের ঘোষণা দেয়। একই সঙ্গে শেয়ারহোল্ডারদের দিয়ে এ লভ্যাংশ অনুমোদনও করিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অথচ লভ্যাংশের সেই অর্থ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধই করা হয়নি। নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে তা না দেওয়াকে মহাপ্রতারণা বলছেন বিনিয়োগকারীরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা অনুযায়ী, কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের ঘোষণা করা লভ্যাংশ বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) শেয়ারহোল্ডদের অনুমোদনের ৩০দিনের মধ্যে বিতরণ সম্পন্ন করতে হবে। এ বিষয়ে ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি বিএসইসির জারি করা আদেশে বলা হয়, অনুমোদনের ৩০ দিনের মধ্যেই বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবে লভ্যাংশ জমা করতে হবে। অন্যথায় জরিমানাসহ শাস্তির আওতায় আসবে কোম্পানিটি।
সূত্র মতে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন নির্দেশনা থাকলেও ঘোষিত লভ্যাংশ অনুমোদনের পর প্রায় দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও সেই লভ্যাংশের অর্থ এখনো বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবে পাঠায়নি খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটি। কোম্পানিটির লভ্যাংশের এ অর্থ পাঠানোর শেষ সময় ছিল চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি।
এদিকে গত ৩০ জুন,২০২৩ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এমারেল্ড অয়েল কর্তৃপক্ষ ৫ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীনসহ মোট ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। যার রেকর্ড ডেট ছিলো একই বছরের ২৯ নভেম্বর। আর এজিএম ছিলো ২৭ ডিসেম্বর। কোম্পানিটির এজিএমে পূর্ববতী উদ্যোক্তা ও পরিচালকগণ যাদের শেয়ার ৩০ দশমিক ৪৫ শতাংশ ব্যতীত সকলের জন্য এ লভ্যাংশ অনুমোদিত হয়। নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও কোম্পানিটি লভ্যাংশের এ টাকা বিনিয়োগকারীদের বুঝিয়ে দেয়নি।
নির্ধারিত সময় শেষ হলেও লভ্যাংশের অর্থ বিতরণ না করায় কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন করেছে বলে মনে করছে বাজার সংশ্লিষ্টরা। লভ্যাংশ নিয়ে কোম্পানিটির এ ধরনের প্রতারণার আইনি ব্যবস্থা ও কঠিন শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ অবস্থায় লভ্যাংশ না পাওয়ায় আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির হস্তক্ষেপ কামনা করছে কোম্পানিটির বিনিয়োগকারীরা। এছাড়াও কোম্পানিটির শেয়ারদর নিয়ে কারসাজির অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
এ বিষয়ে জানতে এমারেল্ড অয়েলের কোম্পানি সচিব মো. ইমরান হোসাইনকে একাদিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তিতে অর্থসংবাদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জানতে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও কোনো সাড়া দেননি তিনি।
এমারেল্ড অয়েলের শেয়ার নিয়ে গেম্বলিংয়ের অভিযোগ উঠেছে কোম্পানিটির একজন পরিচালকের বিরুদ্ধে। জাপান প্রবাসী মিয়া মামুন নামের এক ব্যক্তি এ কোম্পানিটির শেয়ার দর নিয়ে কারসাজি করার অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন গল্প ছড়িয়ে ৮ টাকা দরের শেয়ার বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১৮৮ টাকা ৮০ পয়সা পর্যন্ত ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। যা বর্তমানে ৭০-৮০ টাকার মধ্যে দর উঠা-নামা করে। সেই হিসাবে বড় ধরনের ক্ষতির মধ্যে রয়েছে বিনিয়োগকারীরা।
এ বিষয়ে জানতে মিয়া মামুনকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে মন্তব্য জানতে অর্থসংবাদের পক্ষ থেকে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি তিনি।
জানা গেছ, দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত দুটি কোম্পানির মালিকানায় এসেছে কথিত জাপানি একটি প্রতিষ্ঠান। কোম্পানিগুলোর শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে মিনোরি বাংলাদেশ নামের প্রতিষ্ঠানটি দুই কোম্পানির মালিকানায় আসে। এ খবরসহ বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে মিয়া মামুন সিন্ডিকেট দুটি কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধিতে কারসাজি করেই যাচ্ছে। একটি কোম্পানির শেয়ার ৮ টাকা থেকে বেড়েছে ১৮৮ টাকা পর্যন্ত। এখন অপর একটি কোম্পানির শেয়ারদর নিয়ে একই রকম ফাঁদ পেতেছে এই চক্রটি। ২৩ টাকা দরের শেয়ারটি ৪৩ টাকায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ধরিয়ে দিয়ে ফের ২৫ টাকা করে কিনছে চক্রটি যার দর ৩০ টাকার উপরে। আবারও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মাঝে বিভিন্ন মুখরোচক গালগল্প সাজিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে অভিযোগ উঠেছে। মিনোরি বাংলাদেশের মালিকানায় রয়েছেন জাপান প্রবাসী বাংলাদেশি মিয়া মামুন। তাঁর বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে একাধিক কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গুজব ছড়িয়ে কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর আকাশচুম্বী করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র মতে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ফু-ওয়াং ফুড লিমিটেডের মালিকানায় যুক্ত হয়েছে মিনোরি বাংলাদেশ লিমিটেড। দুই কোম্পানির মালিকানায় মিনোরির যুক্ত হওয়ার খবরে প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারদর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও শেয়ারহোল্ডাররা এখনো লভ্যাংশ পাননি। এর মধ্যে এমারেল্ড অয়েলের কারখানাসহ সব সম্পত্তি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বেসিক ব্যাংক নিলামে তুলেছে। ফলে সম্পদবিহীন কাগুজে কোম্পানিতে পরিণত হতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। তবুও নিত্যনতুন গুজব ছড়িয়ে শেয়ারটির দর বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একইভাবে খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক খাতের কোম্পানি ফু-ওয়াং ফুডস নিয়েও কারসাজি করে যাচ্ছে মিয়া মামুন চক্র।
জানা গেছে, ২০১৪ সালে দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। ওই বছর পুঁজিবাজারে ২ কোটি শেয়ার ইস্যু করে ২০ কোটি টাকা উত্তোলন করে প্রতিষ্ঠানটি। ধানের কুঁড়া থেকে তেল উৎপাদন ও বাজারজাত করে এমারেল্ডের স্পন্দন ব্র্যান্ড সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়। তবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির মাত্র দুই বছর পরেই বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি মামলার কারণে ২০১৬ সালের ২৭ জুন থেকে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এ মামলার আসামি হয়ে পালিয়ে যায় এমারেল্ডের মালিকপক্ষ।
সূত্র জানায়, এমারেল্ড অয়েলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং মালিকপক্ষের পালিয়ে যাওয়ার খবরের সুযোগ নিতে মরিয়া হয়ে উঠে মিনোরি বাংলাদেশের মালিক মিয়া মামুন। ২০১৮ সাল থেকে শুরু হয় তাঁর এমারেল্ড অয়েলের শেয়ার নিয়ে কারসাজির পরিকল্পনা। তখন থেকেই কম মূল্যে কিনতে থাকে এমারেল্ড অয়েলের শেয়ার। এক্ষেত্রে নিজের ঘনিষ্ঠজনদের ব্যবহার করেন মিয়া মামুন। বিভিন্ন নামে-বেনামে এমারেল্ড অয়েলের শেয়ার কেনা সম্পন্ন হলে শুরু করে কারসাজির দ্বিতীয় ধাপ।
দ্বিতীয় ধাপে কৌশলে জাপানের কোম্পানি মিনোরিকে যুক্ত করা হয় এমারেল্ড অয়েলের মালিকানায়। শেয়ারবাজারে এই তথ্যটি ছড়িয়ে কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হয় কোম্পানিটির শেয়ারদর। কয়েক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ারদর প্রায় ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে- মূলত শেয়ার কারসাজি করতেই এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজের মালিকানায় এসেছে মিয়া মামুন।
জানা গেছে, এমারেল্ড অয়েলের সম্পদ নিলামে বিক্রি করতে বেসিক ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে অর্থঋণ আদালত। এর প্রেক্ষিতে একবার নিলামও করে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকটি। তবে কেউ নিলামে অংশ নেয়নি। ফলে আইন অনুযায়ী পুণরায় নিলাম করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বেসিক ব্যাংক। এরপরও এমারেল্ডের সম্পদ বিক্রি না করতে পারলে তা ভোগদখল করবে ব্যাংকটি।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি কোম্পানির কোন সম্পদ নেই জানা সত্ত্বেও কোম্পানিটি কেনার একমাত্র উদ্দেশ্য হতে পারে শেয়ারদর নিয়ে কারসাজি করা। তাঁরা বলছেন, মিনোরি নিয়ে বিভিন্ন তথ্য ছড়িয়ে ইতিমধ্যেই কোম্পানিটির শেয়ারদর আকাশচুম্বী করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মিয়া মামুন কোটি কোটি টাকা হাঁতিয়ে নিয়েছে। ফলে ঝুঁকিতে রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এদিকে এমারেল্ড অয়েলের ৩৮ শতাংশের বেশি শেয়ারের মালিক হলেও কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদে নাম নেই মিয়া মামুনের।
বেসিক ব্যাংক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থসংবাদকে বলেন, এমারেল্ড অয়েলের নতুন পরিচালনা পর্ষদকে ঋণ পরিশোধে অগ্রসর হওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করা হয়। বর্তমান পর্ষদ শর্ত দিয়েছে সুদ মওকুফ ও পুনঃতফসিলের আবেদন নিষ্পত্তি করতে। এমন অবস্থায় ব্যাংকের নিয়মাচার অনুযায়ী দলিলাদি সম্পাদন এবং সোলেনামার মাধ্যমে মামলা স্থগিতের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এক্ষেত্রে আইনি জটিলতা নিরসনের জন্য ব্যাংকের পক্ষ থেকে একাধিকবার প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে একাধিক চিঠি এবং আলোচনার প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু এসব সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে বর্তমান পর্ষদ প্রয়োজনীয় সহায়তা না করায় এবং আইনী জটিলতা থাকায় ঋণটি পুনঃতফসিল করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে এমারেল্ড অয়েলের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করার পর নতুন করে ফু-ওয়াং ফুড নিয়ে খেলছে মিয়া মামুন চক্র। এক্ষেত্রেও জাপানি প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশের বিনিয়োগের বিষয়টি সামনে আনা হয়েছে। সম্প্রতি ফু-ওয়াং ফুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদেও যোগ দিয়েছেন আলোচিত মিয়া মামুন।
মিয়া মামুনের জন্ম চট্টগ্রামের নাসিরাবাদে। ১৯৯৬ সালে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৯৮ সালে সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন তিনি। পরবর্তীতে ২০০০ সালে জাপানে পাঁড়ি জমান মিনোরির এই উদ্যোক্তা। ২০০৮ সালে পড়াশোনা শেষ করে তিন বছর চাকরি করেন। পরবর্তীতে জাপানে গড়ে তোলেন মিনোরি নামের কোম্পানি।
এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অন্যান্য
নীতি সহায়তা চেয়ে এনবিআরকে বিজিবিএর পাঁচ প্রস্তাব

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাক-বাজেট আলোচনায় বেশ কয়েকটি নীতি সহায়তা চেয়ে প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশন (বিজিবিএ)।
বিজিবিএর সহসভাপতি এ কে এম সাইফুর রহমান এ সহায়তা চেয়ে পাঁচটি প্রস্তাব দিয়েছেন। এগুলো হলো- অগ্রিম আয়কর (এআইটি) সাড়ে ৭ শতাংশ করা, নমুনার জন্য একটি পৃথক পাস বই চালু, লোকাল সোর্স ফ্যাব্রিক ও ট্রিমস ব্যবহার করে রপ্তানির অনুমতি, রপ্তানির পর শুল্ক প্রত্যাহার এবং আন্তর্জাতিক ট্রেড মেলার জন্য ভর্তুকি।
এ ছাড়াও পোশাক রপ্তানি বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে এমন কিছু সহায়তা চেয়েছেন সাইফুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে এ আলোচনায় বিভিন্ন সংগঠনের ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এনবিআর সভাপতিকে উদ্দেশ করে বাংলাদেশ টেরি টাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহদাত হোসেন সোহেল বলেন, ব্যবসায়ীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। আপনি দুর্নীতি বন্ধ করুন। ব্যবসায়ীরা আপনাদের সবকিছু দেবে। চট্টগ্রাম পোর্টের বিভিন্ন জায়গায় অনেক কিছু ঘটে। আমার কাছে অনেক তথ্য রয়েছে। ভয়েস ম্যাসেজসহ আপনাকে পাঠিয়েছিলাম। এখনও বন্ধ হয়নি। আপনার কাছে আবারও অনুরোধ করবো, আপনার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তারা অনেক শক্তিশালী। মেম্বার সাহেবও আপনার থেকে শক্তিশালী।
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ জানিয়ে বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কে এম ইকবাল বলেন, কদিন আগে পানগাঁও স্টেশনে দুটি কন্টেইনার আটকানো হয় আমান প্ল্যাস্টিকে। দুটির ডিউটি সাত কোটি টাকা দাবি করা হয়। ওই ছেলেটা এক সময় আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল। আমি ওকে ফিরিয়ে এনেছি। সরকার পরিবর্তনের পর সেই কনটেইনার ছেলেটি কোটি টাকা দিয়ে ছাড়িয়েছে।
আলোচনায় বাংলাদেশ টেরি টাওয়েল অ্যান্ড লিলেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন উৎসে কর্তনের হার হ্রাস, নগদ প্রণোদনা থেকে উৎসে কর কর্তনের হার কমানো এবং ১০ কাউন্ট ও ২০ কাউন্ট সুতায় শুল্ক ও কর কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়।
রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সরকারের নীতি সহায়তা চায় বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যাক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ)। পাশাপাশি আসন্ন বাজেটে রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর অর্ধেক কমানোর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
সংগঠনটি আগামী ৫ বছরের জন্য উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৫০ শতাংশ করার, ব্যক্তি পর্যায়ে করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা করার, কোম্পানির ক্ষেত্রে সঞ্চয়ী আমানত, স্থায়ী আমানত ইত্যাদির সুদ/মুনাফার ওপর উৎসে কর ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে।
বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা প্রদান, নগদ সহায়তার ওপর ১০ শতাংশ হারে অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ)। বাংলাদেশ বিস্কুট, ব্রেড ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতি কেক, বিস্কুট ও কনফেকশনারি পণ্যে শুল্ক অব্যাহতি চেয়েছে।
তথ্য প্রযুক্তিখাতে কর অব্যাহতি ২০৩১ সাল পর্যন্ত অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছে বেসিস। পাশাপাশি ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেম গড়ে ওঠার আগে ক্যাশলেস ট্রানজেকশনের শর্ত শিথিল করার, দেশি সফটওয়্যার ও তথ্য প্রযুক্তির ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার, সফটওয়্যার রপ্তানিতে প্রণোদনা ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে।
প্লাস্টিকের খেলনা প্রস্তুতে ২৪ ধরনের কাঁচামাল আমদানিতে করছাড় চেয়েছে বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ)।
বাংলাদেশ এলপিজি অটোগ্যাস স্টেশন অ্যান্ড কনভারসন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এলপিজি অটোগ্যাস সেক্টরকে ট্যাক্স হলিডে সুবিধা প্রদান, এলপিজি কনভারসন কিট, সিলিন্ডার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়েছে। পাশাপাশি ভোক্তা পর্যায়ে অটোগ্যাসের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে সংযোজিত মূসক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছে।
আমদানি করা ১৪টি কাঁচামালে কর ছাড় চেয়েছে বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতি। রপ্তানির উদ্দেশে উৎপাদিত পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কাঁচামাল বাবদ আরোপযোগ্য শুল্ক ও করের বিপরীতে শতভাগ ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে বন্ড সুবিধা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ফার্নিচার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন।
দি বাংলাদেশ জুয়েলারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন হিরা আমদানির রপ্তানিতে মূসকের ওপর ২০ শতাংশ ভর্তুকি ও স্বর্ণের গহনার ক্ষেত্রে তিন বছরের জন্য মূসকের ওপর ৫০ শতাংশ ভর্তুকি প্রদানের প্রস্তাব করেছে। আর বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশন ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে এআইটি ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএম) ২০৩০ সাল পর্যন্ত ১৫ শতাংশ হারে আয়কর দেওয়ার দাবি জানায় সংগঠনটি।
বিটিএমএর পরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, ভারতীয় সুতার প্রভাবে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ৭-৮ কোটি টাকার সুতা অবিক্রিত রয়েছে। আমরা মুনাফা করতে পারছি না।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করপোরেট কর যেটা নেই সেটা আয়ের ওপর পারসেন্টেজ। গত ৫-৭ বছরে করপোরেট কর অনেক কমিয়েছি। কমাতে কমাতে ২৫ শতাংশে এনেছি। ১০০ টাকা লাভ হলে ২৫ টাকা সরকারকে দেবেন। আপনাদের লাভ হয় না বলছেন। তাহলে সরকারকে টাকা দেওয়ার দরকার নেই। সেক্ষেত্রে আপনার রিডিউস রেট যেটা আছে ১৫ শতাংশ সেটা আপনাদের কেন দরকার। আমাকে বোঝান। এই ১২-১৫ শতাংশ কার দরকার, যার অনেক লাভ হয়। ২৫ শতাংশ হলে হাজার কোটি টাকা ট্যাক্স দেয়। রেগুলার ট্যাক্স রেট হলে সমস্যা কী। পাশাপাশি ভারতীয় সুতা এত কম দামে আসে কীভাবে?
তবে ১৫ শতাংশ কর হার রাখার যুক্তিতে নানান বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সদস্যরা। এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আপনার ১৫ শতাংশ কেন হবে। এটার কোনো লজিক দেখি না। এটাতে আপনাদের বদনাম হচ্ছে। বলা হচ্ছে টেক্সটাইল খাতে কর হার কম। আপনারা রেগুলার রেটে চলে আসেন। ট্যাক্স হলে দেবেন, না হলে দেবেন না।
তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে আমরা অনেক কর অব্যাহতি বাতিল করেছি। সে সব অব্যাহতি এ বছরের জুনে শেষ হবে, একটাও আর নতুন করে বাড়বে না। সবচেয়ে বেশি আপনাদের কথা শুনেছি। আপনারা বোঝাতে পারছেন না কেন। আরও বোঝান। দরকার হলে আজকে সারাদিন শুনবো। আমরা কেউ বুঝবো না এটা তো হয় না।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অন্যান্য
গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইন প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্ত মত প্রকাশের গুরুত্ব

একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি হলো নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের শাসন এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করা। সুইডেন একটি গণতান্ত্রিক দেশ, যেখানে জনগণের অধিকার সংরক্ষিত, তারা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তিদেরও প্রকাশ্যে সমালোচনা করতে পারে, প্রশ্ন তুলতে পারে এবং সরকারি নীতির জবাবদিহিতা দাবি করতে পারে। জনগণের এই অধিকারই একটি শক্তিশালী গণতন্ত্রের পরিচয় বহন করে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যখন আমরা গণতন্ত্রের চর্চার কথা বলি, তখন দেখা যায় যে, সেখানে এখনো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হয়, বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠানো হয়, সাধারণ জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হয় না, এবং দেশকে এক ধরনের পারিবারিক শাসনের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। অথচ, আইনের শাসন, জনগণের মৌলিক অধিকার, এবং গণতন্ত্রের সর্বোত্তম অনুশীলন নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশেও সুইডেনের মতো উন্মুক্ত আলোচনা ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে উঠতে পারে।
এবার সুইডেনে বর্তমান সংকট ও সরকারের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা যাক
‘দেশীয় সন্ত্রাসবাদ’ মোকাবিলার জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ঘোষণা করুন
সরকার ও সুইডিশ ডেমোক্র্যাট (Sverigedemokraterna – SD) দল থেকে অপরাধ মোকাবিলায় খালি কথা ও প্রতীকী রাজনীতি আর সহ্য করা যাবে না। এখন প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন (Ulf Kristersson) – যিনি মোডারেট পার্টির (Moderata samlingspartiet – M) নেতা, তাকে স্পষ্ট করতে হবে যে, “দেশীয় সন্ত্রাসবাদ” মোকাবিলা করতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, লিখেছেন সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট (Socialdemokraterna – S) দলের প্রাক্তন সংসদ সদস্য।
আজকের সুইডেনে, ইউরোপের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মাফিয়া গোষ্ঠী থাকতে পারে, যারা ঠান্ডা মাথায় তাদের শত্রুদের হত্যা করছে, সাধারণ মানুষের বসতবাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে, এবং দোকান ও ভবন লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালাচ্ছে। মাত্র ২৮ দিনে দেশে ৩২টি বিস্ফোরণ ঘটেছে, যার বেশিরভাগই রাজধানী স্টকহোমে।
১৩-১৪ বছর বয়সী শিশুদের, যাদের বেশিরভাগই অভিবাসী পটভূমি থেকে এসেছে এবং যারা সুইডেনে একটি সুন্দর ভবিষ্যতের আশা হারিয়ে ফেলেছে, তারা গ্যাংস্টার ও মাফিয়াদের হাতে ঘাতকের ভূমিকায় পরিণত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকার এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কী করছে? গত দুই বছরে, তারা শুধুই একের পর এক হাস্যকর সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে এবং নিজেদের গৃহীত ‘শক্তিশালী’ পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে। কিন্তু বাস্তবে, হত্যা ও বিস্ফোরণের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে এবং নাগরিকদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতাও ক্রমাগত বেড়ে চলেছে।
প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন যখন এই পরিস্থিতিকে ‘দেশীয় সন্ত্রাসবাদ’ বলে আখ্যা দেন, তখন ধরে নেওয়া যায় যে তিনি তার কথার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন। তাহলে, তিনি কি নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চান?
• গ্যাং সদস্যদের “সন্ত্রাসী” হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা?
• সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রয়োগ করা, যার ফলে সমাজ ও নাগরিকদের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে?
• বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়াই অ-নাগরিকদের নির্বাসিত করা?
• বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের জন্য আজীবনের জন্য সুইডেনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা?
• পুলিশের মধ্যে একটি বিশেষ সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিট গঠন করা, যা শুধুমাত্র গ্যাং সংক্রান্ত সন্ত্রাস মোকাবিলার জন্য দায়ী থাকবে?
• সন্ত্রাস মোকাবিলায় অভিজ্ঞ দেশগুলোর (যেমন জার্মানি, ইতালি, স্পেন ও আয়ারল্যান্ড) সঙ্গে সহযোগিতা ও শিক্ষা বিনিময় বৃদ্ধি করা?
প্রধানমন্ত্রী কি এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করতে চান? এই ধরনের পদক্ষেপ কি আইনের শাসনের ভিত্তিতে পরিচালিত একটি রাষ্ট্রে গ্রহণযোগ্য? এটি কি মাফিয়া ও সহিংসতা দমনের কার্যকর সমাধান?
সরকার ও SD দল, খালি প্রতিশ্রুতি যথেষ্ট হয়েছে, প্রতীকী রাজনীতিও আর চলবে না। আপনারা গ্যাং অপরাধ দমন ও সহিংসতা বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এখন স্পষ্টভাবে বলুন—আপনারা কীভাবে তা বাস্তবায়ন করবেন?
গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার একটি গ্রহণযোগ্য উদাহরণ
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, জনগণের ভোটাধিকার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার নিশ্চিত করা জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণ আফ্রিকার গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং নেলসন ম্যান্ডেলার নেতৃত্ব গণতন্ত্রের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বর্ণবাদী শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামের পর, দক্ষিণ আফ্রিকা যখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে, তখন তারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়।
সরকারের সমালোচনা করার অধিকার নিশ্চিত করা হয়, যাতে জনগণ তাদের দাবি সঠিকভাবে জানাতে পারে এবং রাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারে।
সুইডেন ও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য এই উদাহরণ গুরুত্বপূর্ণ। সুইডেনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে, কিন্তু সরকার এখনো গ্যাং সহিংসতা দমনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক চর্চার সীমাবদ্ধতা জনগণের কণ্ঠরোধ করছে, যা শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবও সৃষ্টি করছে।
তাই, একটি কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে, সরকারকে অবশ্যই জনগণের মতামত গ্রহণ করতে হবে, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক নীতি প্রণয়ন করতে হবে এবং সর্বস্তরে বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু আইন প্রণয়ন করলেই যথেষ্ট নয়, আইনের যথাযথ প্রয়োগ, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের অধিকার সংরক্ষণই প্রকৃত গণতন্ত্রের ভিত্তি।
এটি শুধু রাজনৈতিক লড়াই নয়, বরং একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের সংগ্রাম। যখন নাগরিকদের কণ্ঠরোধ করা হয়, তখন কেবল গণতন্ত্র নয়, বরং একটি দেশের সার্বিক উন্নয়ন, সামাজিক ন্যায়বিচার ও জনগণের মৌলিক অধিকারও হুমকির মুখে পড়ে। শুধুমাত্র শক্তিশালী আইন নয়, বরং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চাই একটি সমাজকে সন্ত্রাসবাদ, সহিংসতা, দুর্নীতি ও স্বৈরতন্ত্র থেকে মুক্ত করতে পারে।
বাংলাদেশের জন্য বাস্তবসম্মত প্রস্তাব
বাংলাদেশে সুইডেনের মতো গণতান্ত্রিক চর্চা প্রতিষ্ঠা এবং আইনের শাসন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব, তবে এটি অর্জন করতে হলে সুনির্দিষ্ট কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যেমন:
✅ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, যেখানে সাংবাদিকরা নির্ভয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারবে এবং সরকারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করতে পারবে, যা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করবে।
✅ বিচারব্যবস্থাকে আরও স্বাধীন ও শক্তিশালী করা, যাতে বিচারপ্রক্রিয়া কোনও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়া সঠিকভাবে পরিচালিত হয় এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
✅ সরকারের কার্যক্রমে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, বিশেষ করে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, সুশাসন এবং সরকারি নীতিনির্ধারণে জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটানো।
✅ বিরোধী মতের প্রতি সহনশীলতা বৃদ্ধি করা, যাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক গোষ্ঠী নির্বিঘ্নে তাদের মত প্রকাশ করতে পারে এবং একটি ভারসাম্যপূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ গড়ে ওঠে।
✅ শিক্ষাব্যবস্থায় গণতন্ত্র ও নাগরিক অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গণতন্ত্রের মূল্যবোধ বুঝতে পারে এবং সক্রিয়ভাবে নাগরিক দায়িত্ব পালন করতে পারে।
এসব পদক্ষেপ বাংলাদেশকে শুধু একটি কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে না, বরং সহিংসতা, সন্ত্রাসবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।
গণতন্ত্র কেবল একটি শাসনব্যবস্থা নয়, এটি একটি মূল্যবোধ, যা জনগণের অধিকার, স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কাজ করে। তাই, একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের জন্য শুধু সরকার নয়, জনগণকেও সচেতন ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অন্যান্য
গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে বাংলাদেশের পাশে থাকবে জাতিসংঘ: আন্তোনিও গুতেরেস

বাংলাদেশের বর্তমান সংস্কার ও পরিবর্তনে জাতিসংঘ সবসময় পাশে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই মন্তব্য করেন।
এক্স বার্তায় তিনি বলেন, আমি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বাংলাদেশের জনগণকে তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনার জন্য ধন্যবাদ জানাই। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সংস্কার ও রূপান্তরের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে একটি টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতিসংঘ সর্বদা আপনাদের পাশে থাকবে।
এর আগে, গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় পৌঁছান গুতেরেস। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান।
আজ শুক্রবার সকালে প্রথমে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও পরে প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এরপর সকাল ১০টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পৌঁছান তিনি। সেখানে ড. ইউনূসের সঙ্গে তার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন তারা। সেখানে অ্যান্তোনিও গুতেরেস ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেবেন। প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতারে অংশ নেবেন তারা।
এদিকে, আগামীকাল জাতিসংঘ মহাসচিব সুশীল সমাজের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
প্রসঙ্গত, পর্তুগালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অ্যান্তোনিও গুতেরেস কূটনীতিক হিসেবেও অভিজ্ঞ। জাতিসংঘ মহাসচিব নিযুক্ত হওয়ার আগে তিনি জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার প্রধান ছিলেন। ওই সময়েও তিনি রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অন্যান্য
আজ একই ফ্লাইটে কক্সবাজার যাচ্ছেন ড. ইউনূস ও গুতেরেস

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ঢাকায় সফররত জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আজ শুক্রবার (১৪ মার্চ) কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। একই ফ্লাইটে তারা কক্সবাজার যাবেন। সফরকালে দিনভর উভয়ে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টে ব্যস্ত সময় কাটাবেন।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যায় এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহমদ।
দুদিন আগে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়েছিলেন, কক্সবাজার থেকে জাতিসংঘের মহাসচিব রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন যাবেন এবং বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।
প্রধান উপদেষ্টা কক্সবাজারে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘের মহাসচিব রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করবেন। প্রধান উপদেষ্টার সৌজন্যে এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য ইফতারের আয়োজন করা হচ্ছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অন্যান্য
ধর্ষণের শিকার শিশুটি এখনো লাইফ সাপোর্টে: আইএসপিআর

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটি এখনো ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) লাইফ সাপোর্টে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। সেখানে তাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
সোমবার (১০ মার্চ) রাতে আইএসপিআর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।
আইএসপিআর জানায়, গত ৮ মার্চ সন্ধ্যা ৬টায় মাগুরা সদর উপজেলায় ধর্ষণের শিকার আট বছরের শিশুটি সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে লাইফ সাপোর্টে থাকাকালীন অবস্থায় সিএমএইচে পেডিয়াট্রিক আইসিইউতে ভর্তি হয়। এ সময় শিশুটি সম্পূর্ণ অচেতন অবস্থায় ছিল। এই সময় তার রক্তচাপ ১২০/৭০ মি.মি. (কার্ডিয়াক সাপোর্টসহ), হৃদ স্পন্দন ১১৮/মিনিট, অক্সিজেনের মাত্রা ৯৬ শতাংশ পাওয়া যায়।
শিশুটির গলার সামনের দিকে গভীর ক্ষত এবং শরীরের অন্যান্য স্পর্শকাতর স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। রোগীর যথাযথ অবস্থার নিরূপণ এবং সঠিক চিকিৎসা প্রদানের জন্য সিএমএইচের কমান্ড্যান্ট, চিফ সার্জন জেনারেল, শিশু বিভাগের উপদেষ্টা ও বিভাগীয় প্রধান, স্ত্রী ও ধাত্রী বিদ্যা বিভাগের উপদেষ্টা ও বিভাগীয় প্রধান, প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের উপদেষ্টা ও বিভাগীয় প্রধান, শিশু সার্জারি বিভাগের উপদেষ্টা ও বিভাগীয় প্রধান, সিনিয়র অবেদনবিদ্যা বিশেষজ্ঞ, সিনিয়র শিশু নিউরোলজিস্টের সমন্বয়ে উচ্চ পর্যায়ের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।
মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষা করে যথাযথ চিকিৎসা শুরু করা হয়।
আইএসপিআর আরও জানায়, পরীক্ষায় শিশুটির নিউমোথ্রোক্স (আরটি), এআরডিএস ও ডিফিউজ সেরিব্রাল ইডমা ধরা পড়ে এবং একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করা হয়। প্রতিদিন স্ট্যান্ডার্ড আইসিইউ প্রটোকল অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমানে শিশুটি লাইফ সাপোর্টে আছে।
গত ৫ মার্চ মাগুরায় বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় শিশুটি।