অর্থনীতি
রপ্তানি বাড়াতে বন্দর ব্যবস্থাপনা সহজীকরণের দাবি ব্যবসায়ীদের

রপ্তানি সম্প্রসারণ এবং প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে বন্দর ব্যবস্থাপনা আরও সহজীকরণের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে এফবিসিসিআই স্ট্যান্ডিং কমিটি অন পোর্ট অ্যান্ড শিপিং-এর প্রথম সভায় তারা এ দাবি জানান।
সভায় অংশ নিয়ে কমিটির সদস্যরা জানান, চলমান বৈশ্বিক সংকটের কারণে দেশে কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস অর্থাৎ ব্যবসায় পরিচালন ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন স্থানীয় উদ্যোক্তারা। এমন পরিস্থিতিতে পণ্য বা কাঁচামাল আমদানি-রপ্তানির জটিলতা কমিয়ে আনা জরুরি।
তাদের মতে, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরসহ অন্যান্য বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডেলিং সক্ষমতা বৃদ্ধি, জেটির সীমাবদ্ধতা দূরীকরণ, হেভি লিফট স্থাপন, কাস্টমস এবং এইচএস কোড সংক্রান্ত জটিলতা দূরীকরণ, রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণের সময় (লিড টাইম) হ্রাস, বন্দর সমূহে টেস্টিং ল্যাবের সক্ষমতা বৃদ্ধি, কনটেইনার খালাসের ক্ষেত্রে অযৌক্তিক চার্জ আদায় রোধ করা গেলে রপ্তানি খাত উপকৃত হবে।
কমিটির চেয়ারম্যান তরফদার মো. রুহুল আমিন বলেন, বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বেসরকারি খাত। আগামীতে ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দেশের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। পণ্য ও কাঁচামাল আমদানি-রপ্তানিতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করতে হবে।
পণ্য পরিবহন, জাহাজীকরণ ও কাস্টমসসহ পণ্য রপ্তানিতে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে কমিটির সদস্যদের কাছে সুনির্দিষ্ট মতামত ও পরামর্শ চান এফবিসিসিআই পরিচালক এবং পোর্ট অ্যান্ড শিপিং বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির ডিরেক্টর-ইন-চার্জ এ এম মাহবুব চৌধুরী।
ওই সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিন হেলালী বলেন, পোর্ট এবং শিপিং সেক্টরে ৮ থেকে ১০ টি স্টেকহোল্ডার (অংশীজন) রয়েছে। সব পক্ষের সমস্যাগুলো পর্যালোচনা করে সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা তৈরির মাধ্যমে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের তাগিদ দেন তিনি।
বৈঠকে আলোচ্য মতামতগুলো লিখিত আকারে এফবিসিসিআইতে জমা দেওয়ার আহ্বান জানান আমিন হেলালী। ব্যবসায়ীদের এসব সমস্যা নিয়ে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এফবিসিসিআই আলোচনা করবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।
এদিকে বিকেলে এফবিসিসিআইতে অনুষ্ঠিত রপ্তানি বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে দেশের বাজারে ডলারের মূল্য বৈষম্য কমিয়ে আনার দাবি জানান ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।
তারা বলেন, রপ্তানিকারক হিসেবে বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা কিংবা ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার কেনা গেলেও, পণ্যের কাঁচামালসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে একজন রপ্তানিকারককে প্রতি ডলারের বিপরীতে ১২০ টাকা থেকে ১২২ টাকা গুণতে হয়। যা রীতিমতো বৈষম্য।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেব যোগ দিয়ে এফবিসিসিআইর সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বর্তমান ডলার সংকট মোকাবিলায় এ রপ্তানি বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। রপ্তানির ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের সমস্যা সমাধানসহ রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ এবং সম্প্রসারণে এফবিসিসিআই সব ধরনের সহযোগিতা দেবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
রপ্তানি বিষয়ক এ সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিটির চেয়ারম্যান মেহদী আলী। তিনি বলেন, ভূ-রাজনৈতিক কারণে বিশ্বেজুড়ে ব্যবসা স্থানান্তরিত হচ্ছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে বাংলাদেশকে এখনই উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সভা দুটিতে আরও উপস্থিত ছিলেন, এফবিসিসিআইর পরিচালক সৈয়দ বখতিয়ার, পোর্ট অ্যান্ড শিপিং বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির কো-চেয়ারম্যান আহমেদ সাখাওয়াত সেলিম চৌধুরী, এফবিসিসিআইর পরিচালক এবং রপ্তানি বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির ডিরেক্টর ইন চার্জ সালমা হোসেন, এফবিসিসিআই এর মহাসচিব মো. আলমগীর, কমিটির সদস্য, ব্যবসায়ী নেতা ও অন্যান্যরা।

অর্থনীতি
আগস্টের ২০ দিনে রেমিট্যান্স এলো ২০ হাজার কোটি টাকা

চলতি আগস্ট মাসের ২০ দিনে অর্থাৎ ২০ আগস্ট পর্যন্ত দেশে ১৬৪ কোটি ২০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এসেছে। স্থানীয় মুদ্রায় যা ২০ হাজার ৩২ কোটি ৪০ লাখ টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক ও সহকারী মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, আগস্টের ২০ দিনে ১৬৪ কোটি ২০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। যা গত বছরের (২০২৪ সালের আগস্টের ২০ দিন) একই সময়ের চেয়ে ১১ কোটি ২০ ডলার বেশি। গত বছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫৩ কোটি ডলার।
এ নিয়ে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে আগস্টের ২০ তারিখ পর্যন্ত ৪১২ কোটি ডলার এসেছে দেশে। গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ৩৪৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার। সে হিসাবে আলোচ্য সময়ে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি প্রায় ২০ শতাংশ।
এর আগে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে এসেছে ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ ১০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩০ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। তবে এ মাসে ৮ ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি।
গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মার্চ মাসে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল, যা ছিল বছরের রেকর্ড পরিমাণ। পুরো অর্থবছরে (২০২৪-২৫) প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ডলার, আগস্টে আসে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে আসে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ ডলার। এরপর অক্টোবরে আসে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার, নভেম্বরে আসে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে। পরের মাস জানুয়ারিতে আসে ২১৯ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার, মার্চ মাসে আসে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি ডলার, মে মাসে আসে ২৯৭ কোটি ডলার এবং জুনে ২৮২ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার ঘোষিত প্রণোদনা ও প্রবাসী আয়ের পথ সহজ করায় রেমিট্যান্স প্রবাহ ইতিবাচক ধারায় রয়েছে।
কাফি
অর্থনীতি
এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি পৃথক বিভাগ তৈরির অধ্যাদেশ পাস

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে দুটি পৃথক বিভাগ ‘রেভিনিউ পলিসি ডিভিশন’ এবং ‘রেভিনিউ ম্যানেজমেন্ট ডিভিশন’ তৈরির অধ্যাদেশ পাস হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) ২০২৫ নীতিগত ও চুড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
অধ্যাদেশটিতে আনা সংশোধনী অনুযায়ী, নতুন দুটি বিভাগের মধ্যে ‘রেভিনিউ ম্যানেজমেন্ট ডিভিশন’ বা রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধানের পদে এনবিআরের বর্তমান কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেই নিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ‘রেভিনিউ পলিসি ডিভিশন’ বা রাজস্ব নীতি বিভাগেও সরকার চাইলে এনবিআর অথবা যোগ্যতা সম্পন্ন অন্য কোনো বিভাগ থেকে নিয়োগ দিতে পারবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম বলেছেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড(এনবিআর) ভেঙে যে দুটি বিভাগ করা হচ্ছে, সেখানে রাজস্ব নীতি বিভাগের প্রধান বা সচিব হিসেবে যেকোনো ক্যাডারেরর কর্মকর্তারা নিয়োগ পাবেন। এক্ষেত্রে যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও নায্যতার ভিত্তিতে এই নিয়োগ হবে।
ফাওজুল কবির খানের নেতৃত্বে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান শফিকুল আলম। তিনি বলেন, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব নিয়োগ আগের মতোই রাখা হয়েছে।
আগের অধ্যাদেশে ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের’ প্রধান পদে রাজস্ব আহরণ সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞদের ‘অগ্রাধিকার’ দেওয়ার কথা থাকলেও সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ‘রাজস্ব আহরণ সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতা রয়েছে, এরকম কোনো যোগ্য সরকারি কর্মকর্তাকে ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনে নিয়োগ দেবে।’ এর মাধ্যমে মূলত এনবিআরের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেই এই বিভাগের প্রধান নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে।
একইভাবে, ‘রাজস্ব নীতি বিভাগের’ প্রধান হিসেবে আগে ‘উপযুক্ত কোনো কর্মকর্তাকে’ নিয়োগের কথা বলা ছিল। নতুন সংশোধনীতে বলা হয়েছে, সরকার সামষ্টিক অর্থনীতি, বাণিজ্য নীতি, পরিকল্পনা, রাজস্ব নীতি বা ব্যবস্থাপনা কাজে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মকর্তাকে রেভিনিউ পলিসি ডিভিশনে নিয়োগ দিতে পারবে।”
ফলে এক্ষেত্রে সরকার চাইলে এনবিআর বাদেও অন্য কোনো বিভাগের যোগ্য কর্মকর্তাকে এ বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবে।
এছাড়া উভয়-বিভাগে কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রেও সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
গত মে মাসে সরকার এনবিআর বিলুপ্ত করে নতুন অধ্যাদেশ জারির পরে এনবিআরের বর্তমান কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। তাদের আন্দোলনের মুখে পরবর্তীতে অধ্যাদেশটি সংশোধন করা হয়।
কর্মকর্তাদের অভিযোগ ছিল, অধ্যাদেশটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে দুটি বিভাগের প্রধান হিসেবে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি হয় এবং রাজস্ব কর্মকর্তাদের শীর্ষ পদে আসার পথ সংকুচিত হয়ে পড়ে।
এর প্রতিবাদে কর্মকর্তারা গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে আন্দোলন শুরু করেন এবং জুনের শেষ দিকে বন্দর অচল করার মতো কর্মসূচিও পালন করেন। এর প্রেক্ষিতে সরকার কঠোর অবস্থান নেয়। এখন পর্যন্ত ৩৬ জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বহিষ্কার, পাঁচজনকে বাধ্যতামূলক অবসর এবং প্রায় ৪০০ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।
তবে অধ্যাদেশে সংশোধনী আনার ফলে এনবিআর কর্মকর্তাদের মধ্যে কিছুটা সন্তোষ ফিরেছে। তারা বলছেন, অন্তত একটি বিভাগের প্রধান হিসেবে এনবিআর কর্মকর্তাদের নিয়োগ নিশ্চিত হওয়ায় তাদের আন্দোলন যৌক্তিক ছিল বলে প্রমাণিত হয়েছে।
অর্থনীতি
ব্যাংকখাতে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ ৭ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা

২০২৪ সালের শেষ নাগাদ দেশের ব্যাংক খাতের দুর্দশাগ্রস্ত বা ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩ সাল শেষে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ ছিল চার লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য প্রকাশিত ‘ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট ২০২৪’–এ এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের শেষে এ ধরনের ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এক বছরে তা ৪৪.২১ শতাংশে গিয়ে পৌঁছেছে, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় অর্ধেক। আইএমএফের সংজ্ঞা অনুযায়ী, খেলাপি, পুনঃতফসিল এবং অবলোপনকৃত (রাইট-অফ) ঋণকে সম্মিলিতভাবে ‘দুর্দশাগ্রস্ত ঋণ’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ২০২৪ সালের শেষে ব্যাংকখাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা, পুনঃতফসিলকৃত ঋণ ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা এবং রাইট-অফ করা ঋণের পরিমাণ ৬২ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্নীতি ও তদবিরের মাধ্যমে দেওয়া ঋণ এখন খেলাপিতে রূপ নিচ্ছে। আগে এসব তথ্য গোপন থাকলেও এখন আইএমএফের চাপের মুখে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিতভাবে এসব তথ্য প্রকাশ করছে।
প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, ২০২৪ সালে দেশের ব্যাংকখাত চরম চাপের মুখে পড়ে, বিশেষ করে মূলধন পর্যাপ্ততার ক্ষেত্রে। সিআরএআর (ক্যাপিটাল টু রিস্ক-ওয়েইটেড অ্যাসেট রেসিও) মাত্র ৩.০৮ শতাংশে নেমে আসে, যেখানে তা কমপক্ষে ১০ শতাংশ থাকার কথা। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও বেশকিছু ইসলামি ব্যাংক।
মূলধন অনুপাত ও লিভারেজ অনুপাত যথাক্রমে ০.৩০ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গোটা ব্যাংক খাতের কাঠামোগত দুর্বলতা এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার অভাব স্পষ্ট করে।
তবে ব্যাংকখাতের তারল্য পরিস্থিতি এখনো তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। অ্যাডভান্স-ডিপোজিট রেশিও (এডিআর) ৮১.৫৫ শতাংশে পৌঁছেছে, যা এখনো বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার মধ্যে রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, দেশের আর্থিক খাত সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীল থাকলেও খেলাপি ঋণ, বৈদেশিক মুদ্রার চাপ এবং সুশাসনের অভাব এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সময়োপযোগী নীতিমালা, কঠোর তদারকি এবং প্রযুক্তিনির্ভর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই এই খাতকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব।
অর্থনীতি
কর কমিশনার মুস্তাকসহ ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

নথি গায়েব করে ১৪৬ কোটি টাকার কর ফাঁকির অভিযোগে ঢাকা কর অঞ্চল-৫ এর কর কমিশনার আবু সাঈদ মো. মুস্তাকসহ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সংস্থাটির কমিশন এই মামলার অনুমোদন দেন। শিগগিরই দুদকের সহকারী পরিচালক মিনহাজ বিন ইসলাম মামলাটি দায়ের করবেন জানা গেছে।
অনুমোদিত মামলার আসামিরা হলেন— কর অঞ্চল-৫ এর কর কমিশনার আবু সাঈদ মো. মুস্তাক, অতিরিক্ত কর কমিশনার গোলাম কবীর এবং উপ-কর কমিশনার লিংকন রায়।
অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ করবর্ষে ধামশুর ইকোনমিক জোন লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটির বিপরীতে কর দাবির পরিমাণ ছিল মোট ১৪৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। কিন্তু কর্মকর্তা বদলিতে নতুন কর্মকর্তা নথিতে কর নির্ধারণী আদেশ পরিবর্তন ও পরিমার্জন করে কর দাবির পরিমাণ কমিয়ে যথাক্রমে শূন্য টাকা ও ১ হাজার টাকা করে রাজস্ব ফাঁকি দিতে সরাসরি সহায়তা করেন। শুধু তাই নয়, মূল কর নির্ধারণী আদেশের নথিও গায়েব করে দেওয়া হয়, যা দুদকের অভিযানে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
গত ৯ জুলাই নথিপত্র গায়েব করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর অঞ্চল-৫ থেকে ১৪৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকার কর ফাঁকির ঘটনায় এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালায় দুদক। অভিযানেও অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
অর্থনীতি
নির্ধারিত সময়ে রিটার্ন দাখিল না করলে যে শাস্তি-ঝুঁকি

আয়কর রিটার্ন নির্ধারিত সময়ে দাখিল না করলে করদাতাদের নানা শাস্তি ও জটিলতার মুখোমুখি হতে হবে। আয়কর নির্দেশিকা ২০২৫-২৬ অনুযায়ী, দেরি করলে ধারা ২৬৬ অনুসারে জরিমানা, ধারা ১৭৪ অনুসারে কর অব্যাহতির সুযোগ সীমিত হওয়া এবং মাসিক ২ শতাংশ হারে অতিরিক্ত কর পরিশোধের বিধান রয়েছে।
এ ছাড়া রিটার্ন দাখিলে গড়িমসি করলে বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ ইউটিলিটি সার্ভিসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। একই সঙ্গে বেতন-ভাতা গ্রহণেও জটিলতার মুখে পড়তে পারেন করদাতারা।
কর বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব ঝুঁকি এড়াতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই রিটার্ন দাখিল করা অপরিহার্য।