ব্যাংক
রেমিট্যান্স আহরণে রেকর্ড গড়লো ইসলামী ব্যাংক

চলতি ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ৭০০ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আহরণের মাধ্যমে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি। নতুন বছরের প্রথম মাসে দেশে আহরিত মোট রেমিট্যান্সের প্রায় ৩৫ শতাংশ আর ইসলামি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি প্রবাসী আয় আসে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে।
বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) ব্যাংকটির সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ৭০০ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আহরণের মাধ্যমে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। জানুয়ারি মাসে ইসলামী ব্যাংকের আহরিত রেমিট্যান্স দেশে আহরিত মোট রেমিট্যান্সের প্রায় ৩৫ শতাংশ আর ইসলামি ব্যাংকগুলোর মধ্যে এই পরিমাণ ৫০ শতাংশের বেশি। মাস জুড়ে বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশী প্রবাসীরা এই রেমিট্যান্স ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন। গত মাসেও বরাবরের মত প্রবাসীদের পছন্দের শীর্ষে ছিল বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি। ফলে সবচেয়ে বেশী রেমিট্যান্স আহরণ করে দেশে প্রবাসী আয় এনে এক মাসে সর্বোচ্চ প্রবাসী রেমিট্যান্স আহরণের নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে এ ব্যাংক।
ইসলামী ব্যাংক দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে প্রবাসী আয়ে শীর্ষ স্থানে রয়েছে। ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে নিজস্ব আমদানী ব্যায় পরিশোধের পর এই পর্যন্ত সরকারী রিজার্ভে ১২ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশী যোগ করে অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রেখেছে। ইসলামী ব্যাংক সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ ও প্রবাসী সেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় দেশী বিদেশী নানা পুরস্কার ও স্বীকৃতি পেয়ে আসছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ইসলামী ব্যাংক প্রবাসীদের রেমিট্যান্স আহরণ ও প্রবাসীদের সেবায় বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে। বর্তমানে ব্যাংকের ২৯ জন প্রতিনিধি বিশ্বের সৌদি আরব, সংয্ক্তু আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, জর্ডান ও সিঙ্গাপুরে প্রবাসীদের সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। বিশ্বের ৬৪ টি দেশের ৫৯৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে ইসলামী ব্যাংকের। প্রবাসীদের কষ্টার্জিত আয়কে বৈধ পথে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে আনয়নের জন্য ২১ দেশের ১৫৫টি ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ হাউজের সাথে ইসলামী ব্যাংকের চুক্তি রয়েছে যার মাধ্যমে ২০০ এর অধিক দেশ থেকে রেমিট্যান্স বেনিফিসিয়ারির হিসাবে অর্থ জমা হয়।
বাংলাদেশের প্রবাসীদের অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত। এসব দেশ থেকে বাংলাদেশে আগে টাকা পাঠানোর সহজ, নিরাপদ ও দ্রুত উপায় না থাকায় প্রবাসীগণ অবৈধ উপায় গ্রহণ করতো। ইসলামী ব্যাংক প্রবাসীদের সাথে নিয়মিত মতবিনিময় সভা ও বিশেষ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মানুষকে বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত করে। প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ দেশে আসছে নিরাপদে। বিনিয়োগ হচ্ছে জাতীয় উন্নয়ন নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ খাতে।
প্রবাসীদের স্বজনদের হাতে দ্রুত ও নিরাপদে টাকা পৌঁছে দিতে ইসলামী ব্যাংক অচও স্থাপন করেছে যার মাধ্যমে ব্যাংকের নিবেদিত কর্মকর্তারা ২৪ ঘন্টা রেমিট্যান্স সেবা প্রদানের কাজ করে যাচ্ছেন। ইসলামী ব্যাংকের ৩৯৪টি শাখা, ২৪ টি উপ-শাখা, ২৭৭৩টি এজেন্ট ব্যাংক ও ২৯৯৪টি এটিএম/সিআরএম এর সমন্বয়ে গঠিত দেশের সর্ববৃহৎ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে রেমিট্যান্স বেনিফেসিয়ারিরা তাৎক্ষণিক রেমিট্যান্সের টাকা সংগ্রহ করতে পারেন। প্রবাসী এবং তাদের সুবিধাভোগীদের আরো দ্রুত ও উন্নত সেবা প্রদানের জন্য ব্যাংকের প্রত্যেকটি শাখায় রেমিট্যান্স লাউঞ্জ স্থাপন কার্যক্রম চলমান রয়েছে যা খুব দ্রুত শেষ হবে। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে এককভাবে ইসলামী ব্যাংক ৫ বিলিয়ন ডলার সম মূল্যের প্রবাসী রেমিট্যান্স আহরণ করে যা দেশের মোট রেমিট্যান্সের ২৩ শতাংশ।
অর্থসংবাদ/এমআই

অর্থনীতি
একীভূতকরণে তিন ব্যাংকের সম্মতি, সময় চায় দুটি

বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে ইসলামী ব্যাংক খাতের সংস্কার প্রক্রিয়ায় বড় অগ্রগতি এসেছে। পাঁচটি বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক একীভূত হতে সম্মতি দিয়েছে। অন্যদিকে এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক সময় চেয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দীর্ঘদিন ধরে মূলধন ঘাটতি, খেলাপি ঋণ ও তারল্য সংকটে ভোগা এসব ব্যাংককে রক্ষা করতে একীভূতকরণের উদ্যোগ নেন। গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে পাঁচটি ব্যাংকের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক হয়। বৈঠকে ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা অংশ নেন।
সবশেষ বৃহস্পতিবার গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের নেতৃত্বে চারজন ডেপুটি গভর্নর ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন। ব্যাংক দুটির পক্ষে চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশ নেন।
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক শেষে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূরুল আমিন জানান, তাদের ব্যাংকের মোট ঋণের পরিমাণ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১২ হাজার কোটি টাকা এস আলম গ্রুপের নামে-বেনামে নেওয়া, যা বর্তমানে খেলাপি। এসব ঋণের বিপরীতে জামানত রয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশেরও কম। এরপর বিকেলে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক হয়।
বৈঠক শেষে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, এস আলম গ্রুপ তাদের ব্যাংক থেকে ছয় হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। তবে সময় ও মূলধন পেলে ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
এর আগে বুধবার এক্সিম ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তার আগের দিন মঙ্গলবার ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক একীভূত হতে সম্মতি জানায়। তবে এক্সিম ব্যাংক এখনই এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে রাজি হয়নি। ব্যাংকটি জানিয়েছে, তারা আগে নিজেদের পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করতে চায় এবং এজন্য কিছুটা সময় প্রয়োজন।
বৈঠক শেষে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বপন বলেন, আমরা একটি রোডম্যাপ উপস্থাপন করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক সেটি আরও স্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করতে বলেছে। সংশোধন করে আমরা পরবর্তী বৈঠকে তা তুলে ধরব।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, পাঁচ ব্যাংকের সম্মিলিত মূলধন ঘাটতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ দুই লাখ ছিয়াশি হাজার কোটি টাকারও বেশি। একীভূতকরণ-পরবর্তী ব্যাংককে স্থিতিশীল করতে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ সহায়তা তহবিল গঠন করা হবে। তহবিলের অর্থ সরকারের পাশাপাশি ডিপোজিট ইন্সুরেন্স ট্রাস্ট ফান্ড থেকেও জোগান দেওয়া হবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই একীভূতকরণ ব্যাংক খাতের বড় ধরনের সংস্কার আনবে। এতে খেলাপি ঋণ পুনর্গঠন, ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা এবং আমানতকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা সহজ হবে। তবে তারা সতর্ক করেছেন, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন না হলে কাঙ্ক্ষিত ফল আসবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, ব্যাংকগুলোর দুরবস্থার কারণে আমানতকারীদের ঝুঁকি কমাতে ও আর্থিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে একীভূতকরণ এখন একমাত্র কার্যকর সমাধান। খুব শিগগিরই প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন শুরু হবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে এক্সিম ব্যাংকের মালিকানা ছিল আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মজুমদারের হাতে। বাকি চার ব্যাংক— গ্লোবাল ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, ইউনিয়ন এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক— এসব ব্যাংকের মালিকানা রয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী এস আলম গ্রুপের কাছে।
বিগত সরকার আমলে এই মালিকপক্ষ বিভিন্ন নামে ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে নেয়, যার ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এসব ব্যাংকে নতুন পর্ষদ দায়িত্ব নেয়। এক্সিম ব্যাংক ছাড়া বাকি চারটিতে নিয়োগ দেওয়া হয় স্বতন্ত্র পরিচালক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকের সারাদেশে মোট শাখা রয়েছে ৭৭৯টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২২৬টি শাখা রয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের। এরপর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১৮০টি, এক্সিম ব্যাংকের ১৫৫টি, ইউনিয়ন ব্যাংকের ১১৪টি এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের রয়েছে ১০৪টি শাখা।
এ ছাড়া এই ব্যাংকগুলোর অধীনে ৬৯৮টি উপশাখা, ৫০০ জন এজেন্ট ও ১ হাজারের বেশি এটিএম বুথ রয়েছে।
ব্যাংকগুলোতে কর্মরত জনবল রয়েছে ১৫ হাজারের বেশি। সবমিলিয়ে এসব ব্যাংকে গ্রাহক হিসাবের সংখ্যা প্রায় ৯২ লাখ। আমানতের পরিমাণ ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা, তবে দেওয়া ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা— যার একটি বড় অংশ বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংক থেকে ধার করে সরবরাহ করা হয়েছে।
ঋণ বিতরণেও রয়েছে চরম অনিয়ম। গ্লোবাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংকের প্রায় ৯০ শতাংশ ঋণ দেওয়া হয়েছে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে, যা বর্তমানে খেলাপি হয়ে পড়েছে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৭০ শতাংশ এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ২০ শতাংশ ঋণ একই গ্রুপের কাছে গেছে। এক্সিম ব্যাংকের প্রায় ১০ শতাংশ ঋণ রয়েছে সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে।
এই বিপুল অঙ্কের বিতরণকৃত ঋণের বড় একটি অংশই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে, যা আদায় করতে পারছে না ব্যাংকগুলো।
ব্যাংক
একীভূত হতে রাজি গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক

ব্যাংক খাত সংস্কারের অংশ হিসেবে চলমান একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় এবার গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকও রাজি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০৪ সেপ্টেম্বর) সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের শুনানি শেষে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূরুল আমিন এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, ব্যাংকের বর্তমান ঋণ স্থিতি ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১২ হাজার কোটি টাকাই এস আলম গ্রুপ নামে-বেনামে নিয়েছে, যা বর্তমানে খেলাপি। এসব ঋণের বিপরীতে জামানত আছে ২৫ শতাংশেরও কম।
এর আগে একীভূত হতে সম্মতি দিয়েছে ইউনিয়ন ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংক দুটি থেকে প্রায় ৬৬ হাজার কোটি টাকা লুট করেছে এস আলম গ্রুপ।
তবে এক্সিম ব্যাংক এই প্রক্রিয়ায় এখনই অংশ নিতে রাজি হয়নি। ব্যাংকটির পর্ষদ জানিয়েছে, অন্তত দুই বছর সময় প্রয়োজন তাদের। এ ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন নজরুল ইসলাম মজুমদার।
দুর্বল পাঁচ ব্যাংককে একীভূত করার উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক সপ্তাহব্যাপী শুনানির আয়োজন করেছে। এতে ইতোমধ্যে অংশ নিয়েছে ইউনিয়ন, ফার্স্ট সিকিউরিটি, এক্সিম ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। শেষ ধাপে আজ বিকেলে অংশ নেবে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক।
শুনানিতে চেয়ারম্যানরা তাদের ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন। জানা যায়, একীভূত প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচ ব্যাংকের সম্মিলিত মূলধন ঘাটতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছাড়িয়েছে ২ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোকে একীভূত করতে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকারের সম্মতি পেলে এতে অর্থায়ন করবে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান।
কর্পোরেট সংবাদ
ব্র্যাক ব্যাংকের নতুন এমডি ও সিইও হলেন তারেক রেফাত উল্লাহ খান

ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও হিসেবে তারেক রেফাত উল্লাহ খানকে নিয়োগ দিয়েছে। এই নিয়োগ ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ থেকে কার্যকর হয়েছে।
তারেক রেফাত উল্লাহ খান গত ২৭ মে ২০২৫ থেকে ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও (কারেন্ট চার্জ) হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এর আগে, উদ্ভাবন, ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি ও প্রতিষ্ঠানের ট্রান্সফর্মেশনে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এপ্রিল ২০২৫-এ তাঁকে অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড হেড অব করপোরেট অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল ব্যাংকিং পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইওর দায়িত্ব গ্রহণ সম্পর্কে ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারপারসন মেহেরিয়ার এম. হাসান বলেন, ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও পজিশনের জন্য তারেক রেফাত উল্লাহ খানই আদর্শ লিডার, যিনি ব্যাংকটিকে আগামীর প্রবৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেবেন। তাঁর ভিশন, সততা ও নেতৃত্ব ব্যাংককে আরও বেশি আস্থার, উদ্ভাবনী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান করে গড়ে তুলবে—যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে গ্রাহকদের জীবনে, ব্যাংকিং খাতে, সমাজে ও দেশে।
ব্যাংকিং খাতের নির্ভরযোগ্য লিডার তারেক ২০১৭ সালে ব্র্যাক ব্যাংকে হেড অব ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট হিসেবে যোগ দেন। ব্র্যাক ব্যাংকে যোগদানের পূর্বে তিনি প্রায় তিন দশকের বেশি সময় ধরে ইস্টার্ন ব্যাংক, এবি ব্যাংক এবং আইএফআইসি ব্যাংকে কাজ করেন। তাঁর কর্মজীবনে করপোরেট ও ইনস্টিটিউশনাল ব্যাংকিং, ট্রানজেকশন ব্যাংকিং এবং রিস্ক ম্যানেজমেন্টে উদ্ভাবনের বিশেষ দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন। ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে তাঁর এই দীর্ঘ পথচলা উদ্ভাবন, শুদ্ধাচার এবং ইমপ্যাক্টের এক পরিপূর্ণ সমন্বয়।
আইএফআইসি ব্যাংকে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে এবি ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংকে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ইস্টার্ন ব্যাংকে তিনি করপোরেট ব্যাংকিং ডিভিশনে এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব রিলেশনশিপ হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে অসাধারণ কর্মদক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ সিইও ও চেয়ারম্যান’স অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
গ্লোবাল আউটলুক ও একাডেমিক উৎকর্ষতা তারেক ভারত, মালয়েশিয়া, বাহরাইন, জার্মানি ও ইতালিতে ক্রেডিট রিস্ক, লোন স্ট্রাকচারিং, করপোরেট গভর্নেন্স, লিডারশিপ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.কম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.কম (মার্কেটিং) এবং এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া, যুক্তরাজ্যের ওমেগা পারফরম্যান্স করপোরেশন থেকে ক্রেডিট রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট সার্টিফিকেশন অর্জন করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আইভি লীগ খ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে মর্যাদাপূর্ণ সিনিয়র এক্সিকিউটিভ লিডারশিপ প্রোগ্রাম সম্পন্ন করেছেন। ভবিষ্যৎ নির্মাণে অঙ্গীকার তারেক রেফাত উল্লাহ খানের নেতৃত্বে ব্র্যাক ব্যাংক নতুন এক প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবনের যুগে প্রবেশ করছে, যা ব্যাংকটিকে বাংলাদেশের সবচেয়ে আস্থার ও অগ্রসরমান ব্যাংক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করবে।
ব্যাংক
ঋণ, ওভারড্রাফট ও গ্যারান্টির জন্য মাস্টার সার্কুলার জারি

ঋণ, ওভারড্রাফট ও গ্যারান্টি সংক্রান্ত সব বিধান এক কাঠামোয় আনতে নতুন মাস্টার সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) জারি করা এ সার্কুলারের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের নীতিমালা সহজ, সুসংহত ও আরও স্বচ্ছ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাষ্য অনুযায়ী, এতদিন বিভিন্ন গাইডলাইন ও সার্কুলারে ছড়িয়ে থাকা নির্দেশনাগুলো প্রয়োজনীয় সংশোধনের মাধ্যমে নতুন সার্কুলারে একত্রিত করা হয়েছে। এতে ঋণ, ওভারড্রাফট এবং গ্যারান্টি সংক্রান্ত বিধানসমূহকে একক কাঠামোর আওতায় আনা হয়েছে, যা জারির তারিখ থেকে এক বছরের জন্য কার্যকর থাকবে।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, এতে বাণিজ্যিক ঋণ, বিদেশে প্রদত্ত গ্যারান্টি বা জামানতের বিপরীতে ঋণ, দেশীয় ও বিদেশি উভয়পক্ষের জন্য বিভিন্ন ধরনের গ্যারান্টি, রিপেমেন্ট গ্যারান্টি এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বৈদেশিক ঋণ প্রদানের বিধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ব্যাংকগুলোকে গ্যারান্টি, স্ট্যান্ডবাই লেটার অব ক্রেডিট (এসবিএলসি) ও অন্যান্য পেমেন্ট প্রতিশ্রুতির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিয়ম যেমন URDG, UCP, ISP ইত্যাদি অনুসরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে তা দেশের আইন ও বিধিবিধানের সঙ্গে অবশ্যই সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
নতুন সার্কুলারে আরও উল্লেখ রয়েছে- বিশেষায়িত অঞ্চলের প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণ সুবিধা, বৈদেশিক ও স্থানীয় মুদ্রায় বিভিন্ন ধরনের ঋণ গ্রহণের সুযোগ, Usance বিল ডিসকাউন্টিং, চলতি মূলধন সুবিধা, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি বৈদেশিক ঋণের বিধান সরকারি, বেসরকারি ও বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণ গ্রহণ ও গ্যারান্টি সংক্রান্ত নির্দেশনা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একীভূত এই মাস্টার সার্কুলারের মাধ্যমে ঋণ, ওভারড্রাফট ও গ্যারান্টি সংক্রান্ত বৈদেশিক লেনদেন আরও সহজ, স্বচ্ছ ও সময়োপযোগী হবে। বিশেষ করে বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এটি সহায়ক হবে বলে তারা মনে করছেন।
এই উদ্যোগকে বৈদেশিক মুদ্রানীতি সরলীকরণ এবং আন্তর্জাতিক লেনদেনের আধুনিকায়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অর্থনীতি
ডিজিটাল ব্যাংকের আবেদনপত্র চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক দেশীয় প্রথম ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করেছে। চলতি বছরের ১–৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। আবেদনকারীদের পাঁচ লাখ টাকা ফি জমা দিতে হবে, এবং সব সেবা হবে সম্পূর্ণ ডিজিটাল। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রযুক্তিনির্ভর আর্থিক খাতে বৈশ্বিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এর লক্ষ্য হলো আর্থিক খাতের দক্ষতা বাড়ানো, সেবার পরিসর বিস্তৃত করা আর ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (সিএমএসই) অর্থায়নের সুযোগ সহজ করা।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুযোগ কাজে লাগিয়ে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ঋণপ্রবাহ সহজ করতে ডিজিটাল ব্যাংককে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার মনে করছে তারা।
আবেদনকারীদের নির্ধারিত প্রস্তাবপত্রের সঙ্গে পাঁচ লাখ টাকা (অফেরতযোগ্য) ফি জমা দিতে হবে। এ টাকা যেকোনো তফসিলি ব্যাংক থেকে ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুকূলে দিতে হবে। শর্ত পূরণ না করলে আবেদন বাতিল হবে।
এ ছাড়া আবেদনপত্র সরাসরি জমা দেওয়ার পাশাপাশি ই-মেইলের মাধ্যমেও সব নথি জমা দিতে হবে। বিস্তারিত নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রেগুলেশন ও নীতি বিভাগের (বিআরপিডি) মহাব্যবস্থাপক মো. বায়াজিদ সরকার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, ধারাবাহিক প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ফলে বৈশ্বিক আর্থিক খাতের চিত্র বদলে গেছে। এই পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়ে আর্থিক পণ্য ও সেবা প্রদানে অধিক কার্যকারিতা আনতে এবং আর্থিক ব্যবস্থার বিস্তৃত পরিসর তৈরি করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
এর আগে ২০২৩ সালের ১৪ জুন ডিজিটাল ব্যাংকের নীতিমালা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ছিল ১২৫ কোটি টাকা। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা বৃদ্ধি করে ৩০০ কোটি টাকা করেছে। প্রচলিত ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে প্রয়োজন ৫০০ কোটি টাকা। ১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইনের আওতায় ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হবে। পেমেন্ট সার্ভিস পরিচালিত হবে ২০১৪ সালের বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেম রেগুলেশনের অধীন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালনার জন্য প্রধান কার্যালয় থাকবে। সেবা দেওয়ার বেলায় স্থাপনা লাগবে না। অর্থাৎ এই ব্যাংক ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) সেবা দেবে না। ডিজিটাল ব্যাংকের নিজস্ব শাখা বা উপশাখা, এটিএম, সিডিএম অথবা সিআরএমও থাকবে না। সব সেবাই হবে অ্যাপনির্ভর, মুঠোফোন বা ডিজিটাল যন্ত্রে।
You must be logged in to post a comment Login