Connect with us
৬৫২৬৫২৬৫২

মত দ্বিমত

প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুইডেন প্রবাসীর খোলা চিঠি

Published

on

ডরিন পাওয়ার

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কেমন আছেন? আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব, অনুপ্রেরণা ও চেতনায় গড়ে উঠা ১৯৭১-এর এক শিশু মুক্তিযোদ্ধা যে তার বাবা এবং বড় তিন ভাইয়ের অবর্তমানে মার দিক-নির্দেশনায় ছোট পাঁচ ভাইবোন নিয়ে দীর্ঘ নয় মাস নিজ দেশে শরণার্থী হয়ে জীবন-মরণের সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে দেশ স্বাধীনের ফেরিওয়ালা হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের, বাপ-চাচাদের বার্তাবাহক হয়ে কাজ করেছি ও সাহায্য করেছি।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

চোখের সামনে দেশ স্বাধীন হতে দেখেছি, বহু আত্মীয়-স্বজনের জীবনের বিনিময়ে বাংলাদেশ পেয়েছি সাথে হারিয়েছিও অনেক কিছু। আমরা বর্তমান ৯ ভাইবোন, সবাই দেশের বাইরে শুধু একজন ছাড়া। অল্প বয়সেই দেশ ছেড়েছি নিজেকে, পরিবার এবং দেশকে সোনার বাংলা করে গড়ে তুলব বলে। বাবা-মার নির্দেশনা এবং অনুপ্ররণায় দেশের জন্য সব করতে প্রস্তুত এমনটি মনমানসিকতায় এখনও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। চল্লিশ বছর দূরপরবাসে বসবাস হলেও দেশের উন্নয়নে বদ্ধপরিকর হয়ে কাজ করে চলছি। আমার দেশের বাড়ি মাগুরা জেলার (মাগুরা ২ আসন) নহাটা গ্রামে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আমরা অতি সহজেই পরনিন্দা এবং পরচর্চা করে থাকি অথচ নিজেদের মধ্যে যে একই সমস্যা রয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করাও যে অপরিহার্য সেটা ভুলে যাই।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আমরা বাংলাদেশে ধর্ষণ, ঘুস, মাদক, দুর্নীতি এসবের বিরুদ্ধে সব সময় লিখি, কথা বলি, সংগ্রাম করি। কিন্তু আমরা কখনো বলি না বা বলতে চাই না যে এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত তারা আর কেউ নয়, আমাদের সমাজেরই পরিচিত মুখ।

আজ আমি আমার পারিবারিক সমস্যা তুলে ধরতে চাই সরাসরি আপনার কাছে আমার এই খোলা চিঠির মাধ্যমে। আমার পরিবার শিক্ষা এবং অর্থে দেশে-বিদেশে সুনামের সঙ্গে চললেও আমার পরিবারে রয়েছে ভাই-বোনদের বঞ্চনাকারী এক বা একাধিক সদস্য। আমার পারিবারিক সমস্যা আমি দুঃখের সঙ্গে তুলে ধরছি শুধুমাত্র পরিবর্তনের জন্য। কারণ যদি এমনভাবে চলতে থাকে তবে পুরো দেশ এক সময় অচল হয়ে যাবে এসব কুৎসিত চরিত্রের মানুষের জন্য। আর এ ধরনের কুৎসিত চরিত্রের মানুষ বর্তমানে বাংলাদেশে দ্রুত বর্ধনশীল।

বাংলাদেশের যৌথ পরিবারের সংখ্যা দিন দিন কমতে শুরু করেছে। পরিবারে বড় ভাই-বোনদের সচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও বাবা-মা এবং ছোটদের ছেড়ে আলাদা হয়ে যাওয়া, খোঁজখবর না রাখা, এখন এসব ঘটনা সর্বত্র দেখা যাচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

দেখা যায় যে ভাইয়ের ওপর ছিল ভালোবাসা এবং মধুর স্মৃতি যখন সে বিয়ে করেনি। পরবর্তীতে সে মস্ত বড় অফিসার হয়ে সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে। সে পরিবার ছেড়ে নিজেকে লোভী করে ফেলেছে আর গড়েছে তার চারপাশে এক আত্মকেন্দ্রিক প্রাচীর। যে প্রাচীর বন্ধ করে রেখেছে তার মনুষ্যত্বকে, দিনের পর দিন আর বছরের পর বছর।

ছোট ভাই-বোনদের জন্য কিছু করে যদি কোনো বড় ভাই-বোন তা সুদে-আসলে তুলে নেয় এবং সারাক্ষণ কঠিনভাবে মানসিক অশান্তিতে রাখে তখন ভালোবাসার সম্পর্ক ঘৃণায় পরিণত হয়। অর্থনৈতিকভাবে ঋণগ্রস্ত ছোট ভাই-বোনের ওপর বড়দের জুলুমের পরিমাণ যখন সীমা লঙ্ঘন করে এবং তারা যখন ছোটদের প্রতি অত্যাচার এবং অবিচার করতে শুরু করে, তখন ঘৃণা ছাড়া ছোটদের আর কিছু করার থাকে না। সেক্ষেত্রে ব্যর্থ হয় ভালোবাসা, সেইসঙ্গে সম্পর্কেরও অবনতি হয়। তখন সম্পর্ক আর ভাই-বোনের থাকে না।

সে সামান্যতম ত্রুটি-বিচ্যুতি বড় করে তুলে ধরে সবাইকে নিচু করতে দ্বিধা করে না। আবার অনেকে পরিবারের সবকিছু ভোগ-দখল করে আসছে বছরের পর বছর, তারপরও খুশি নয়। এরা সেই বর্ণচোরা মুখোশধারী মানুষ নামের দানব যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুরো ফ্যামিলিকে ঠকিয়ে চলছে বহু বছর ধরে। এরা যখন সবে চাকরিতে ঢুকেছে কিন্তু বিয়ে করেনি তখন যা করেছে, শুধু সেই ইতিহাস বলে বেড়ায়। অথচ অনেক বছর পার হয়ে যায়, কারো খোঁজখবর নেয় না।

বাংলাদেশের লাখ লাখ পরিবারে প্রতিনিয়ত এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এর একটা বিহিত করা প্রয়োজন। তবে পাছে লোকে কিছু বলে এই ভয়ে কেউ কিছু করছে না। সরাসরি কিছু করতে বা বলতে গেলে পরিবারের গুডউইল নষ্ট হবে।

আমরা সবাই দানবের নয়; মানবের সমাজ ফিরে পেতে চাই। কিন্তু এই দানবদের আলোর পথে না আনতে পারলে সমাজ এবং দেশে এদের সংখ্যা এত বাড়তে থাকবে যে, শেষ পর্যন্ত সৎ মানুষ খুঁজে পাওয়া কষ্টকর হবে।

যে চরিত্রহীন, অসৎ ও দুর্নীতিগ্রস্ত তাকে লজ্জা দেওয়া যায় না। যে উলঙ্গ তাকে কে লজ্জা দেবে? কী করে সে দাবি করে সবার ভালোবাসা, শ্রদ্ধা? একজন শিক্ষিত এবং ক্ষমতাবান ব্যক্তি যে শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবে, এমন স্বার্থপর আপনজন কেউ চায় না। সবাই সু-শিক্ষায় গড়া ভালোবাসার সমন্বয়ে ভরা সাধারণ পরিবার চায়।

দুর্নীতি হয় না এমন দেশ সারাবিশ্বে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এখন প্রশ্ন কীভাবে দুর্নীতিবাজদের সৎ চরিত্রে ফিরিয়ে আনা সম্ভব? যদিও পরিবারের মধ্যে যে ক্ষতি হয়েছে সেটা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে না। তাহলে কীভাবে পরিবারে এ ধরনের মানুষদের চরিত্রের পরিবর্তন করা সম্ভব? পারবে কি এরা নতুন করে প্রমাণ করতে যে তারা পরিবার ও সমাজের সত্যিকার আপনজন? তাহলে তাদের প্রমাণ করে দেখাতে হবে, যে অন্যায় তারা করছে, তার জন্য তারা লজ্জিত ও অনুতপ্ত।

আমি সবকিছু বিচার বিবেচনা করে আজ আপনার কাছে আমার এই বার্তাটি তুলে ধরছি। কারণ বাংলাকে সোনার বাংলা করতে হলে আমাদের মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে এবং সে পরিবর্তন নিজ এবং নিজের পরিবারকে দিয়ে শুরু করতে হবে। সেক্ষেত্রে এগুলো পারিবারিকভাবে বসে মীমাংসা করতে চেষ্টা করার উদ্যোগ নিতে হবে এটাই সবাই বলবে।

এতে সীমিত সময়ের জন্য হয়তো পরিবারের সম্মান ক্ষুণ্ণ হবে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এটা পরিবারের তথা সমাজের জন্য সুফল বয়ে আনবে। সুশিক্ষা এবং মানবতার ধ্বংস নয়, ধ্বংস হোক তার নিজের কুশিক্ষা।

জীবনে চলার পথে কিছু লক্ষ্য থাকা দরকার যা শিক্ষণীয় এবং যা সোনার বাংলায় আদর্শ মানুষ হতে সাহায্য করবে। আমি গত চল্লিশ বছর ধরে চেষ্টা করেছি একটি সুন্দর পরিবার তৈরি করতে। চল্লিশ বছর প্র্যাক্টিস করেছি সৎ পথে চলতে, সত্য কথা বলতে, অন্যায় না করতে এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে। আমি পরিবারের ভালো-মন্দ সব কিছু জানি, জেনে শুনেও অনেক সময় চেষ্টা করেছি চুপ থাকতে, অনেক সময় সমাধানে ঢুকেছি, সমাধান করেছি।

অনেকবার আমি চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি পারিবারিক সমস্যাগুলোর পুরো সমাধান করতে। শেষে সবার সঙ্গে কথা বলে এবার ভেবেছিলাম বাবা-মা মারা গেছেন হয়তো আমরা পারব সব মেটাতে। কথা ছিল সবাই দরকারে একটু ছাড় দেবে। আমরা সকল ভাই-বোন যা কিছু করেছি দেশে তার সমস্ত দায়ভার আমাদের একমাত্র ভাই লে. কর্নেল (অব.) হান্নান মৃধার ওপর ন্যস্ত করি। কারণ সেই শুধু দেশে থাকে। আমরা তার ছেলেকে পর্যন্ত বিদেশে এনে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছে।

তারপরও সে আমাদের বিশ্বস্ততাকে ভঙ্গ করে আমাদের দেশের প্রায় সকল সম্পদ ভোগদখল করে চলছে। বয়স এবং সময়ের সাথে যখন আমরা সবাই দেশে ফিরে নিজেদের সম্পদের অংশবিশেষ ফেরত পেতে তাকে অনুরোধ করি ঠিক তখনই সে তার ক্ষমতার অপব্যবহার এবং প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে আমাদের সকল ভাই-বোনকে সবধরনের সুযোগ সুবিধা খেকে বঞ্চিত এবং ভয় দেখিয়ে সব কিছু ভোগ দখল করে চলছে।

আমরা নানাভাবে বোঝাতে এবং তার পাওনার চেয়ে বহুগুণ বেশি দিয়েও তাকে সৎপথে আনতে ব্যর্থ হয়েছি। শেষে তাকে এও বলেছি দরকারে আপনার সাহায্য নেব তবুও দুর্নীতিকে পরিবার থেকে আজীবনের জন্য দূর করবো। লে. কর্নেল (অব.) হান্নান মৃধা কথা দিয়েও শেষে অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে, এটাই আমাকে কষ্ট দিয়েছে। সে তার চাকরি জীবনে ডিজিএফআই, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ নানা দায়িত্বে কাজ করেছে।

সে নিজেই যখন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, আমার প্রশ্ন কোথায় আমরা সাধারণ মানুষ যাব? শেষে অন্য কোনো উপায় না পেয়ে আপনার এবং সমস্ত দেশবাসীর কাছে আমার এই লেখা। আশা করি আপনি আমাদের একটি ন্যায্যবিচার এবং অনীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে দুর্নীতিমুক্ত পরিবার দরকার, আশা করি আপনি সেটা করতে পারবেন। আপনার সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করি।

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-

মত দ্বিমত

গণতন্ত্রের সঠিক পথে: সংসদ নয়, স্থানীয় সরকার হোক উন্নয়নের প্রধান বাহক

Published

on

ডরিন পাওয়ার

বাংলাদেশের গণতন্ত্র আজ কঠিন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। একদিকে আমরা সংবিধানে গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এগোই, অন্যদিকে বাস্তবে রাজনৈতিক দখলদারিত্ব, পরিবারতন্ত্র, দলীয় চাঁদাবাজি এবং একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের বাস্তবতা আমাদের পথরোধ করে। নির্বাচন এখন আর গণরায় নয়—এটি হয়ে উঠেছে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার এক নিষ্ঠুর কৌশল। এই সংকট নিরসনে নির্বাচন পদ্ধতির কাঠামোগত পরিবর্তন এখন সময়ের দাবি।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বিশ্বের বহু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ব্যবহৃত প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (PR) বা অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ভিত্তিক পদ্ধতি বাংলাদেশের জন্য এখন একটি সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত বিকল্প। সুইডেনে আমার চার দশকের নাগরিক, গবেষক ও ভোটার অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি—কীভাবে PR ভিত্তিক সংসদীয় গণতন্ত্র একটি সমাজকে ন্যায়, শান্তি ও প্রগতির পথে নিয়ে যেতে পারে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সুইডেনে কোনো একক দল সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না, ফলে সরকার গঠনে জোট বাধ্যতামূলক। এতে গড়ে ওঠে রাজনৈতিক সহনশীলতা, আলোচনাভিত্তিক সংস্কৃতি ও পারস্পরিক দায়িত্ববোধ। প্রার্থী মনোনয়নে দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র ও জনমত প্রাধান্য পায়, ফলে পরিবারতন্ত্র ও আর্থিক দখলদারিত্ব দুর্বল হয়। শিক্ষক, নারী, অভিবাসী, শ্রমজীবী—সকলেই যোগ্যতার ভিত্তিতে সংসদে আসার সুযোগ পান। ঘুষের কোনো দরকার নেই; টিকিট কিনে মনোনয়ন নেওয়ার ব্যবস্থা নেই—যোগ্যতা ও জনসম্পৃক্ততাই এখানে আসল মূলধন।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এখানে সংসদ সদস্যদের কাজ সীমিত—তাঁরা কেবল নীতিনির্ধারণ ও আইন প্রণয়নের দায়িত্ব পালন করেন। বরাদ্দ, চাকরি বা ব্যক্তিগত সুপারিশে হস্তক্ষেপের এখতিয়ার তাঁদের নেই। এর ফলেই গড়ে উঠেছে জনগণের উপর আস্থা এবং নির্বাচনে ৮০-৯০ শতাংশ ভোটার অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়।

বাংলাদেশের বাস্তবতা একেবারে উল্টো। এমপি পদটি হয়ে উঠেছে যেন একটি ‘বিনিয়োগের প্রজেক্ট’—যেখানে মনোনয়ন পেতে লাগে কোটি টাকার ঘুষ, যার উৎস দুর্নীতির অর্থও হতে পারে। এই অর্থ খরচ করে নির্বাচিত হওয়ার পর, এমপি-রা পরিণত হন স্থানীয় দানবে—তাঁরা বাজার কমিটি নিয়ন্ত্রণ করেন, সরকারি চাকরির সুপারিশ দেন, বরাদ্দ ভাগ করেন, এমনকি রাস্তার ইটের কন্ট্রাক্টেও হস্তক্ষেপ করেন। তাঁদের মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায় বিনিয়োগ তোলা—জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন নয়।

ভোটের মূল্যও এখানে নষ্ট। নির্বাচনের আগেই টাকা দিয়ে ভোট কেনা হয়, রাতের আঁধারে প্রশাসনের সহায়তায় ভোট সম্পন্ন হয়, এবং ভোটার জানেন—তাঁর ভোটের কোনো দাম নেই। ফলে গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে জনগণ। এ এক পরস্পরবিনাশী চক্র—জনগণের আশা মর্যাদাহীন হয়ে পড়ে, আর রাজনীতির মঞ্চ হয়ে ওঠে লুটপাটের কেন্দ্র।

এই চক্র ভাঙতে হলে দরকার দুটি কাঠামোগত রূপান্তর—একসাথে ও সমান্তরালভাবে।

প্রথমত, PR পদ্ধতিতে নির্বাচন চালু করতে হবে। এতে দলীয় তালিকায় স্থান পাবে যোগ্য, জনসম্পৃক্ত প্রার্থীরা—not আর্থিকভাবে প্রভাবশালীরা। মনোনয়ন বাণিজ্য লোপ পাবে, কারণ মনোনয়ন নির্ধারিত হবে অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়। নির্বাচিত এমপি-রা কেবল আইন প্রণয়নের দায়িত্বে থাকবেন—তাঁরা আর তদবির, বরাদ্দ বণ্টন বা চাকরির সুপারিশে জড়াবেন না।

দ্বিতীয়ত, উন্নয়নের দায়িত্ব দিতে হবে স্থানীয় সরকারকে। বরাদ্দ, প্রকল্প বাস্তবায়ন ও নাগরিক সেবা পরিচালিত হবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে। স্থানীয় উন্নয়ন হবে জনগণের বাস্তব চাহিদা অনুযায়ী—not কোনো এমপি’র ইচ্ছেমাফিক নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে। প্রশাসন হবে সহযোগী—কিন্তু নিয়ন্ত্রক নয়। এই দুই কাঠামো—PR ভিত্তিক সংসদ নির্বাচন এবং ক্ষমতাবান স্থানীয় সরকার—একসাথে চালু হলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও প্রশাসনিক কাঠামোতে এক নতুন যুগের সূচনা হবে। প্রশাসন হবে সহযোগী—কিন্তু নিয়ন্ত্রক নয়। এবং শুধু এতটুকু যোগ করা জরুরি যে, প্রথমে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত—অথবা সম্ভব হলে, সুইডেনের মতো একই দিনে স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচন একসাথে করা উত্তম হবে। এতে সময়, খরচ এবং প্রশাসনিক জটিলতা কমবে, পাশাপাশি জনগণের অংশগ্রহণও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাবে। এতে করে জনগণ একসাথে দেশের ও নিজেদের এলাকার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।

উন্নয়ন মানে কেবল রাস্তা-ঘাট নয়; উন্নয়ন মানে মানুষের জীবনে ন্যায়, সেবা, এবং সুযোগের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা। কিন্তু যে সংসদ সদস্য কোটি টাকা খরচ করে নির্বাচিত হন, তিনি জনগণের উন্নয়নের জন্য কাজ করবেন কেন?—তাঁর প্রথম লক্ষ্য থাকে বিনিয়োগ ফেরত আনা। এই মানসিকতা বদলাতে পারে PR পদ্ধতি—যেখানে নেতৃত্ব মানে জনসম্পৃক্ততা, আর ক্ষমতা মানে দায়িত্ব।

এবার প্রশ্ন, PR পদ্ধতি আসলে কী?
প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (PR) বা অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব হলো একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থা, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের শতকরা অনুপাতে সংসদে আসন পায়। কোনো দল যদি পায় ৩০% ভোট, তবে সে পায় ৩০% আসনও। এতে প্রতিটি ভোটের মূল্য থাকে, ভোট হারায় না।

বর্তমানের First-Past-The-Post (FPTP) পদ্ধতিতে শুধু সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থী জয়ী হন, বাকি সব ভোট ‘অদৃশ্য’ হয়ে যায়। এতে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বহীনতা, আস্থা সংকট এবং বিভাজনমূলক রাজনীতির বিস্তার ঘটে।

PR পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য:
ন্যায়বিচার ও সমঅধিকার নিশ্চিত হয়।
সংলাপ ও সহনশীলতা গড়ে ওঠে।
মনোনয়নে স্বচ্ছতা আসে।
ভোটার আস্থা ও অংশগ্রহণ বাড়ে।
নেতৃত্বে বৈচিত্র্য সৃষ্টি হয়।

বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় বাস্তবতায় PR চালু করা আবশ্যক। কারণ FPTP পদ্ধতিতে—
বিরোধী কণ্ঠ দমন হয়,
ক্ষমতা পরিবার ও গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত হয়,
ভোটার আস্থা ক্ষয়ে যায়,
সংসদ হয়ে ওঠে গোষ্ঠীস্বার্থের প্ল্যাটফর্ম।

সুইডেনে PR পদ্ধতির সফল বাস্তবায়ন দেখেছি নিজ চোখে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় বাধ্যতামূলক সংলাপ হয়। সংসদে আসে শিক্ষক, অভিবাসী, বাসচালকসহ সকল শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব। ভোটার অংশগ্রহণ থাকে ৮৫-৯০%। রাজনৈতিক পরিবেশ ভদ্র, যুক্তিনির্ভর এবং সহানুভূতিশীল।

তবে PR কোনো যাদুর কাঠি নয়। এটি কেবল একটি দরজা, যার ভেতর দিয়ে যেতে হলে প্রয়োজন:
রাজনৈতিক সদিচ্ছা,
জবাবদিহিতাপূর্ণ প্রশাসন,
স্বাধীন ও সাহসী মিডিয়া,
সচেতন নাগরিক সমাজ,
এবং জাতিগত আত্মসমালোচনার সক্ষমতা।

PR শুধুই যান্ত্রিক সংস্কার নয়; এটি একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লব। ১৯৪৫ সালে হিরোশিমা ধ্বংস হওয়ার পর জাপান বলেছিল: ‘We shall not repeat the evil.’

আজ আমরা কি দাঁড়িয়ে বলতে পারি: ‘আমরা আর নিজেদের সন্তানদের হাতেই জাতিকে ধ্বংস হতে দেব না’?

আমরা কি গড়তে পারি এমন একটি বাংলাদেশ— যেখানে ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মা নিশ্চিন্তে বলতে পারে:
‘আমাদের রক্ত বৃথা যায়নি’?

যেখানে জুলাই মাস ফিরে আসবে স্বাধীনতার রোদের মতো— ভয়, গুম, দমন আর রক্ত নয়, বরং গণমানুষের গর্ব, মুক্তচিন্তা ও ভালোবাসার প্রতীক হয়ে। যেখানে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর হবে রক্তের নয়—মুক্তির জয়গান।

প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (PR) কেবল একটি ভোট গণনার পদ্ধতি নয়— এটি একটি পরিবর্তনের ঘোষণা, একটি নতুন মানসিকতার অভ্যুত্থান, একটি সাহসিকতার প্রতীক এবং এক মানবিক চেতনার পুনর্জন্ম।

যদি আমরা সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র চাই— যেখানে ক্ষমতা মানে দায়িত্ব, আর নেতৃত্ব মানে জনগণের সেবা, তাহলে PR পদ্ধতিই হবে আমাদের ভবিষ্যতের ভিত্তি।

এই মুহূর্তে প্রশ্ন একটাই— আপনি কি প্রস্তুত নিজের ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনের জন্য?

রহমান মৃধা, গবেষক, লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন

Published

on

ডরিন পাওয়ার

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস একান্তভাবেই গণমানুষের স্বপ্ন, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের ইতিহাস। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ কিংবা ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলন- দেশের প্রতিটি আন্দোলন ছিল ইতিহাসের একেকটি মোড় ঘোরানো ক্ষণ, যেখানে জনগণের আকাঙ্ক্ষা ছিল একটি ন্যায়ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের সন্ধানে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান আবারও প্রমাণ করেছে, রাষ্ট্র যখন নাগরিকদের ন্যায্যতা, সম্মান ও ভবিষ্যতের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়, তখন জনতার অভ্যুত্থানই হয়ে ওঠে পরিবর্তনের প্রধান নিয়ামক। তবে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, প্রতিটি বিপ্লবের পরবর্তী সময়ই সবচেয়ে সংকটময়, কারণ তখনই শুরু হয় পুরনো কাঠামো ভাঙার ও নতুন কাঠামো নির্মাণের জটিল প্রক্রিয়া।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বর্তমানের বাংলাদেশ সেই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। স্বৈরশাসনের পতনের পরও দেশে এখনো সুসংহত ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র কাঠামোর ছাপ সুস্পষ্ট নয়। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কালপর্বে একদিকে যেমন পুরনো শাসনযন্ত্রের ভাঙন, অন্যদিকে তেমনি নতুন রাষ্ট্রচিন্তার অস্পষ্টতা- উভয়ের দ্বন্দ্বই জাতিকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে জাতি হিসেবে আমাদের প্রয়োজন গভীরতর আত্মবিশ্লেষণ, সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা ও ব্যাপক জনশিক্ষাভিত্তিক সাংস্কৃতিক নবজাগরণ।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এই বাস্তবতায় ‘গণঅভ্যুত্থান’ কেবলমাত্র একটি দমনমূলক শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী জনতার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নয়; এটি এক নতুন সমাজব্যবস্থা নির্মাণের গভীর আকাঙ্ক্ষারও প্রতীক। এই আকাঙ্ক্ষা একটি ন্যায়ভিত্তিক, গণমুখী ও মানবিক রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বপ্নকে ধারণ করে, যেখানে নাগরিকের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা পায় নৈতিকতা, যুক্তি ও মানবিক বোধের ভিত্তিতে। এখানে ইনসাফ বা ন্যায়ের ধারণাটি আবেগনির্ভর কোনো কল্পনা নয়, বরং এটি একটি রূপান্তরধর্মী দার্শনিক ও রাজনৈতিক চেতনা, যার শিকড় বিস্তৃত মানবসভ্যতার গভীরে। প্লেটোর ‘ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র’ দর্শন থেকে শুরু করে ইবনে খালদুনের ‘আসাবিয়্যাহ’-নির্ভর সমাজ বিন্যাস, রুশোর ‘সামাজিক চুক্তি’ তত্ত্ব, মার্ক্সের শ্রেণিবিন্যাসহীন রাষ্ট্রভাবনা, গান্ধীর অহিংস মানবিকতা এবং নেলসন মেন্ডেলার ক্ষমাশীলতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নেতৃত্ব- সবই এক বিকল্প রাষ্ট্রচিন্তার দিকনির্দেশনা দেয়, যেখানে শাসনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে ন্যায়, কল্যাণ ও মানবিক মর্যাদা। সুতরাং গণঅভ্যুত্থান যখন রাষ্ট্র পরিবর্তনের হাতিয়ার হয়ে ওঠে, তখন তা কেবল প্রতিক্রিয়া নয়; বরং একটি সুসংগঠিত, সুনির্দিষ্ট ন্যায়ভিত্তিক ভবিষ্যতের ডাক।

ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের মৌলিক ভিত্তি হলো একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য বিচারব্যবস্থা যেখানে আইনের শাসন কেবল সাংবিধানিক ধারায় নয়, বরং নৈতিক ন্যায়ের বাস্তব রূপায়ণে প্রতিফলিত হয়। জন লক যেমন সতর্ক করে দিয়েছিলেন, ‘যেখানে আইন স্তব্ধ হয়, সেখানেই অত্যাচার জন্ম নেয়’। বাংলাদেশের বর্তমান বিচারব্যবস্থা এই সতর্কবাণীকে যেন শাসন-সংস্কৃতির এক বাস্তব অভিশাপে পরিণত করেছে। দলীয় প্রভাব, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি এখানে ন্যায় শব্দটিকেই প্রায় নিঃস্বার্থ প্রতীকে পরিণত করেছে। ইবনে খালদুন তাঁর ‘মুকাদ্দিমা’-তে গভীরভাবে উল্লেখ করেছিলেন, ‘অন্যায়ই সভ্যতার পতনের মূল কারণ’। এই কথাটি বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, প্রতিহিংসামূলক মামলা, নিরীহ নাগরিকের হয়রানি ইত্যাদি যদি রাষ্ট্রীয় স্তরে প্রশ্রয় পায়, তবে তা কেবল বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থার অবসান ঘটায় না; গণতন্ত্রের পথকে করে তোলে কন্টকাকীর্ণ। এর পরিণতিতে সমাজে সৃষ্টি হয় এক ভয়াবহ অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতা, যা কেবল আইন নয়, নাগরিক আচার- আচরণের ভিতকেও ভেঙে দেয়। ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্রে বিচার হবে কেবল শাস্তির অনুশাসনে নয়, বরং তা হবে ন্যায়বোধ, মানবিকতা ও প্রক্রিয়াগত স্বচ্ছতার সম্মিলন যেখানে ন্যায় শুধু আদেশ নয়, বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থারও প্রতিফলন।

ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র নির্মাণে বিচার ব্যবস্থার পাশাপাশি একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অপরিহার্য। আধুনিক বিশ্বের উদাহরণে দেখা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন কিংবা রুয়ান্ডার গ্যাকাকা আদালত এই দুই বিশেষ উদ্যোগই ইতিহাসের ভয়াবহ সহিংসতা ও নিপীড়নের পর ন্যায় ও পুনর্মিলনের পথ উন্মোচনে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও রাষ্ট্রের রাজনৈতিক সদিচ্ছার শক্ত সাক্ষ্য। এগুলো আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে ন্যায় কেবল একটি রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভিতরকার প্রক্রিয়া নয়, এটি একটি নৈতিক ও জনগণসম্পৃক্ত রাজনৈতিক সংস্কৃতি। কিন্তু আজকের বাংলাদেশে যখন নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ, ভোটারহীন নির্বাচন কিংবা দলীয় প্রশাসনের ছত্রছায়ায় সংঘটিত একতরফা ভোট সম্পন্ন হয়, তখন গণতন্ত্র এক অভিনয়মাত্র হয়ে পড়ে। এ অবস্থাকে যেন অগ্রিম অনুমান করেছিলেন জ্যাঁ জাক রুশো, যিনি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘দ্যা সোসাল কন্ট্রাক্ট’ লেখেন, ‘ইংল্যান্ডের জনগণ একমাত্র সংসদ নির্বাচনের সময় স্বাধীন। বাকি সময় তারা দাস’। অনুরূপ চিত্র বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় যেন প্রতিবিম্বিত হচ্ছে যেখানে জনগণের মতামত নির্বাচনকেন্দ্রিক আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে, কার্যকর অংশগ্রহণ নির্বাসিত।

আসন্ন নির্বাচনের আগেই নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের কার্যকলাপ নিয়ে জনমনে যে প্রশ্ন উঠছে, তা গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত। একটি ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্রে নির্বাচন কমিশন কেবল একটি প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান নয়, বরং এটি জনগণের আস্থা ও গণতান্ত্রিক চর্চার মূল স্তম্ভ। এর কার্যক্রম হতে হবে সর্বজনগ্রাহ্য, সম্পূর্ণ স্বাধীন, স্বচ্ছ এবং আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর, যাতে কোনো প্রকার দলীয় প্রভাব, প্রশাসনিক চাপ কিংবা অনিয়মের সুযোগ না থাকে। নির্বাচনের প্রকৃত অর্থ দাঁড়ায় জনগণের মতামতের প্রতিফলন, আর সে প্রক্রিয়ায় জনগণের অবাধ অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে গণতন্ত্র রূপ নেয় একটি ফাঁপা খোলসে। বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণে যেসব মডেল অনুকরণীয় হয়ে উঠেছে, তাদের মধ্যে চিলির গণভোট প্রক্রিয়া বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। একনায়কতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণে যেভাবে সেখানে একটি নতুন গণতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তোলা হয়েছিল, তা আমাদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। এই উদাহরণ প্রমাণ করে, নির্বাচন তখনই অর্থবহ হয় যখন তা হয় সর্বস্তরের মানুষের আস্থাভাজন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও ন্যায়ের চর্চার বহিঃপ্রকাশ। আমাদের নির্বাচন প্রক্রিয়াও যেন কেবলমাত্র আইনত নয়, কার্যতও জনগণের মালিকানায় পরিচালিত হয়; আর এমন চেতনায় রাষ্ট্রযন্ত্রকে পুনর্গঠন করাই হবে একটি ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র নির্মাণে অর্থনৈতিক ইনসাফ বা ন্যায্যতা একটি অপরিহার্য ভিত্তি। এটি কেবল আয়বৈষম্য হ্রাস করার উদ্দেশ্য নয়, বরং সামগ্রিকভাবে সম্পদের উৎপাদন, মালিকানা ও বণ্টনে একটি ন্যায়সংগত ও অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রশ্ন। এই দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের নিয়ে যায় একটি গভীরতর নৈতিক ও দার্শনিক আলোচনায়। ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ‘ইনসাফ’-এর ধারণা খুব স্পষ্ট, সম্পদের ‘মালিকানা স্রষ্টার, রক্ষণাবেক্ষণের দায়দায়িত্ব মানবের; ভোগে নির্ধারিত সীমা অনুসরণ, বণ্টনে ন্যায্যতা নিশ্চিতকরণ’। এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয় যে, মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অপরিহার্য হলেও তা সমাজকল্যাণ ও ন্যায়বিচারের নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। কার্ল মার্ক্স একটি সুস্পষ্ট বিকল্প সমাজব্যবস্থার কথা বলেছেন, যেখানে ‘প্রত্যেকের কাছ থেকে তার সামর্থ্য অনুযায়ী, প্রত্যেকের কাছে তার প্রয়োজন অনুযায়ী’ সম্পদ বণ্টিত হবে। এটি নিছক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নয়, বরং ন্যায্যতার একটি আদর্শিক ভিত্তি যেখানে ব্যক্তিরা সমাজের প্রতি তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী অবদান রাখবে এবং বিনিময়ে সমাজ তাদের প্রয়োজন মেটাবে। এর মাধ্যমে অর্থনীতির লক্ষ্য হবে শুধু মুনাফা নয়, বরং মানবিক মর্যাদা, সমতা এবং সামাজিক সাম্য নিশ্চিত করা।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইনসাফভিত্তিক অর্থনৈতিক কাঠামোর প্রয়োজনীয়তা আরও প্রকট হয়ে ওঠে, যখন দেখা যায় একদিকে অল্প কিছু মানুষের হাতে গচ্ছিত সম্পদের পাহাড়, অন্যদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ। এই বৈষম্য কেবল একটি অর্থনৈতিক ব্যর্থতা নয়, বরং রাষ্ট্রের ন্যায়ের নীতির সঙ্গে একটি ঘোরতর বিশ্বাসঘাতকতা। ইনসাফভিত্তিক অর্থনৈতিক কাঠামো কেবল করনীতির পুনর্বিন্যাস নয়; এটি একটি সমন্বিত জনকল্যাণকেন্দ্রিক রাষ্ট্রদর্শনের দাবিদার, যেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান ও কর্মসংস্থানকে নাগরিকের অধিকার হিসেবে নিশ্চিত করা হয়; জনগণের প্রতি অনুগ্রহ হিসেবে নয়। এই কাঠামো গঠনের জন্য প্রয়োজন স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা। এর জন্য জরুরি করব্যবস্থার প্রগতিশীল সংস্কার, ঋণ ও ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর রাজনৈতিক প্রভাবের অবসান, দুর্নীতির নির্মূল, এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও শ্রমজীবী মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা। কৃষক ও শ্রমিক এই দুই প্রধান উৎপাদনশক্তিকে কেন্দ্র করে অর্থনীতিকে পুনর্গঠনের মধ্য দিয়েই প্রকৃত ইনসাফ প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

লাতিন আমেরিকার বলিভিয়া ‘বুয়েন ভিভির’ বা ‘ভালোভাবে বেঁচে থাকা’ নামক দর্শনের মাধ্যমে এক বিকল্প উন্নয়ন চিন্তার পথ দেখিয়েছে, যার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে প্রকৃতি, সম্প্রদায় ও আত্মমর্যাদার সহাবস্থান। এই দর্শন বলিষ্ঠভাবে প্রচলিত ভোগবাদী ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক উন্নয়ন ধারণার বিপরীতে গিয়ে, সামষ্টিক কল্যাণ, পারস্পরিক নির্ভরতা এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে। এখানে মানুষকে প্রকৃতির শত্রু নয়, বরং সহযাত্রী ও রক্ষক হিসেবে কল্পনা করা হয়। এর মাধ্যমে একটি ন্যায্য সমাজ গঠনের প্রাকৃতিক-সামাজিক রূপরেখা হিসেবে বিবেচিত। বলিভিয়ার সংবিধানেও প্রকৃতিকে অধিকারসম্পন্ন সত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যা রাষ্ট্র ও নাগরিকদের উপর তার সংরক্ষণের নৈতিক ও আইনগত দায় আরোপ করে।

এই চিন্তাধারার সঙ্গে ইসলামী অর্থনীতির মৌলিক দর্শনের গভীর সাদৃশ্য রয়েছে। ইসলামে বলা হয়, দুনিয়ায় সম্পদের ‘মালিকানা স্রষ্টার, রক্ষণাবেক্ষনের দায়দায়িত্ব মানবের’ অর্থাৎ মানুষ ভোগদখলের চূড়ান্ত অধিকারী নয়, বরং সে এক দায়িত্বশীল তত্ত্বাবধায়ক (স্টুযার্ড)। তার প্রতি অর্পিত হয়েছে সম্পদের সুষম ব্যবহার, অপচয় রোধ এবং সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠার দায়। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যক্তি নয়, বরং সমষ্টি, প্রকৃতি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কল্যাণকে উন্নয়নের মূল পরিমাপক হিসেবে গণ্য করে। তাই বলিভিয়ার ‘বুয়েন ভিভির’ এবং ইসলামী অর্থনীতির এই দায়বদ্ধতাভিত্তিক দর্শন উভয়ই আমাদের উন্নয়ন ভাবনায় একটি ন্যায্যতাভিত্তিক, ইনসাফপূর্ণ বিকল্প কাঠামো গঠনের সম্ভাবনা তৈরি করে।

সুশিক্ষা ও সুস্বাস্থ্য কেবল ব্যক্তির উন্নয়নের উপাদান নয়, বরং রাষ্ট্রের ন্যায়ের ভিত্তিকে মজবুত করার প্রধান স্তম্ভ। অমর্ত্য সেন তাঁর ‘ক্যাপাবিলিটি অ্যাপ্রোচ’-এ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, উন্নয়ন বলতে বোঝায় মানুষের বাস্তব সুযোগ ও সক্ষমতা বৃদ্ধিকে যার ভিত্তি হলো মানসম্মত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় আজ উচ্চমানের শিক্ষা কেবল শহরের কিছু সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণির হাতে সীমাবদ্ধ, আর অধিকাংশ সরকারি হাসপাতাল সাধারণ মানুষের জন্য হয়ে উঠেছে অনিশ্চয়তা, দুর্নীতি ও অবহেলার প্রতীক। একটি ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য হবে বাজারনির্ভর সুবিধা নয়, বরং রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত ও প্রদত্ত অধিকার। এই রাষ্ট্র সবার জন্য সমান মানের শিক্ষা নিশ্চিত করবে, যেখানে পাঠ্যক্রম হবে নৈতিকতা, মানবিকতা ও সমাজকল্যাণ-ভিত্তিক। ‘শিক্ষা মানে শুধু ডিগ্রি নয়, মানুষ গড়ার যথার্থ প্রক্রিয়া’ এই দর্শনকে ভিত্তি করে রাষ্ট্রীয় আদর্শ ‘বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্য’কে প্রধান্য দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্গঠন হচ্ছে সময়ের দাবি। একইভাবে স্বাস্থ্যসেবাকে হতে হবে সহজপ্রাপ্য, সুলভ, সর্বজনীন ও সম্মানজনক। ইউনেস্কোর মানব উন্নয়ন সূচকে অনেক পিছিয়ে থাকা দেশগুলোতেও দেখা গেছে যেখানে রাষ্ট্র মানসম্মত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেছে, সেখানে জনগণের আস্থা ও অংশগ্রহণ বেড়েছে, গণতন্ত্র হয়েছে কার্যকর। ইনসাফ কেবল আইনের বইয়ে লেখা একটি ধারণা নয়, এটি মানুষের প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় বাস্তব, উপলব্ধিযোগ্য ন্যায়ের উপলব্ধি। তাই শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার মানেই শুধু উন্নয়ন নয়, বরং একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রগামী পদক্ষেপ।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইনসাফ মানে কেবল সকলের জন্য আইনগত সমতা নয়, বরং সমাজের প্রতিটি গোষ্ঠী ও ব্যক্তির মর্যাদা, পরিচয় ও বৈচিত্র্যের স্বীকৃতি। ন্যায় তখনই পূর্ণতা পায়, যখন তা শ্রেণি, ধর্ম, লিঙ্গ, ভাষা, পেশা কিংবা জাতিগোষ্ঠীর বিভাজনকে অতিক্রম করে সমানভাবে সকলকে মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে। চার্লস টেইলর তাঁর ‘দ্যা পলিটিক্স অব রিকোগনিশন’ প্রবন্ধে যে বক্তব্য রেখেছেন, তা আজকের রাষ্ট্রচিন্তার জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। বিশেষ বিশেষ জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব ও পরিচয়কে স্বীকৃতি না দেওয়া কেবল তাদের আত্মমর্যাদার উপর আঘাত নয়, বরং এটি একধরনের সাংস্কৃতিক নিপীড়ন। বাংলাদেশের বাস্তবতায় ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু, হিজড়া জনগোষ্ঠী (তৃতীয় লিঙ্গ), বেদে সম্প্রদায়, চা-শ্রমিকদের মত ভিন্ন জীবনধারার মানুষদের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য, ভাষাগত বৈচিত্র্য এবং জীবনচর্যার ভিন্নতাকে সম্মান না দিলে ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র নির্মাণের কথা কেবল স্লোগানে সীমিত থাকবে। যেমন ব্রাজিল, কানাডা কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার মতো বহু-বৈচিত্র্যময় সমাজগুলো ইনসাফ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক স্বীকৃতি ও অন্তর্ভুক্তির নীতি গ্রহণ করেছে, তেমনি আমাদের রাষ্ট্রেও দরকার একটি বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল গঠন করা যেখানে নানান পরিচয় বিরোধ নয়, বরং সম্প্রীতির ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে এবং রাষ্ট্রীয় আদর্শ ‘বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্য’-এর প্রতিফলন ঘটাবে। ন্যায়বিচার তখনই সুসংহত হয়, যখন রাষ্ট্র কেবল আইন প্রয়োগে নয়, বরং প্রতিটি মানুষের স্বাতন্ত্র্যকে মর্যাদা দিয়ে তাকে সম্মানিত নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া ইনসাফ কেবল একতরফা শাসন বা সংখ্যাগরিষ্ঠতার আধিপত্য হিসেবে রয়ে যাবে।

পরিবেশগত ন্যায্যতা কেবল একটি পরিবেশবাদী ধারণা নয়, এটি একটি নৈতিক ও আন্ত:প্রাজন্মিক দায়িত্ব। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত যেমন বাংলাদেশের মতো উপকূলীয় ও নদীনির্ভর দেশে সবচাইতে গভীরভাবে অনুভূত হয়, তেমনি এর প্রতিকারে রাষ্ট্রীয় উদাসীনতা ন্যায়ের পরিপন্থী। ‘পরিবেশগত ন্যায়বিচার’-এর দর্শন অনুযায়ী, শুধু বর্তমান প্রজন্ম নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকারও বিবেচনায় নেওয়া কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের কর্তব্য। জন রলস তাঁর ‘ন্যায়বিচারের তত্ত্ব’ (থিওরী অব জাস্টিস)-এ যে ‘আন্ত:প্রাজন্মিক ন্যায়বিচার’ (ইন্টারজেনারেশানাল জাস্টিস)-এর কথা বলেছেন, তা আমাদের রাষ্ট্রচিন্তার কেন্দ্রে থাকা উচিত যেখানে ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য সজীব,সতেজ ও বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যাওয়া একটি নৈতিক ও রাষ্ট্রীয় বাধ্যবাধকতা। বাংলাদেশে নদী দখল, বন উজাড়, পাহাড় কাটা, শহুরে দূষণ ও জলাভূমি ধ্বংসের পেছনে যেভাবে স্বার্থান্ধ উন্নয়ন ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় লুটপাট কাজ করে, তা একপ্রকার পরিবেশগত বৈষম্য ও নিপীড়ন। শহর ও গ্রামের নাগরিকদের মধ্যকার পরিবেশগত অধিকারবিভাজন, কিংবা উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী দরিদ্র মানুষের বাস্তুচ্যুতি এসবই প্রমাণ করে যে, ইনসাফ কেবল অর্থনীতিতে নয়, পরিবেশনীতি ও প্রাকৃতিক সম্পদের বণ্টনেও প্রয়োজনীয়। আদিবাসী সমাজের ‘প্রকৃতির সাথে যথাযোগ্য সহাবস্থান’ ধারণা এবং ধর্মীয় ঐতিহ্যে লোভ সংযমের তাগিদ আমাদের শেখায় যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভোগ নয়, বরং পরিমিতিবোধ ও ভবিষ্যত প্রজন্মের প্রতি সহানুভূতির মধ্য দিয়েই পরিবেশগত ন্যায়ের পথে অগ্রসর হওয়া সম্ভব। ইনসাফভিত্তিক কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠনে তাই পরিবেশবাদ একটি বিলাসিতা নয়, বরং তা একটি মৌলিক ন্যায্যতা ও অস্তিত্বের প্রশ্ন। গণঅভ্যুত্থান কখনোই কেবল প্রতিরোধ বা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নয়; এটি একটি নবজাগরণের আহ্বান, যেখানে জনগণ তাদের ন্যায্য অধিকার, সম্মান ও মর্যাদা ফিরে পাওয়ার সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করে।

একটি ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন কেবল সংবেদনশীলতা বা আবেগের বিষয় নয়, এটি একটি দার্শনিক, নৈতিক ও সাংগঠনিক প্রকল্প, যার ভিত্তি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিচার, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, পরিবেশ ও রাজনীতিতে ন্যায়ের সুষম প্রতিফলন। এই ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্রের লক্ষ্য হবে ব্যক্তি নয়, জনগণ; ক্ষমতা নয়, দায়িত্ব; দখল নয়, সেবা। তাই বাংলাদেশের জন্য গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী চ্যালেঞ্জ হলো এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে প্রয়োজনীয় নীতিনির্ধারণ, কাঠামোগত সংস্কার ও সর্বজনীন জনশিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা। ন্যায়ের ভিত্তিতে রাষ্ট্র গড়ার এই প্রয়াসে যদি সমাজের প্রতিটি মানুষ তথা সাধারণ নাগরিক, নীতিনির্ধারক, পেশাজীবী, শিক্ষক, যুবক প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নেয়, তবে একদিন এই স্বপ্নই হয়ে উঠবে একটি নতুন বাংলাদেশের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। আমরা বাস্তবের সেই সোনালী দিনের অপেক্ষায় রইলাম।

ড. মাহরুফ চৌধুরী, ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহ্যাম্পটন, যুক্তরাজ্য। mahruf@ymail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

শিক্ষা-দুর্নীতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে রাজনীতি: আমি চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু!

Published

on

ডরিন পাওয়ার

একটি দুর্ঘটনা ঘটতে দেখেছিলাম—আমি তা ঠেকাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারিনি। সে দুর্ঘটনাটি ছিল না কোনো সড়ক দুর্ঘটনা, কিংবা হঠাৎ কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়। এটি ছিল বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় দীর্ঘদিনের জমে থাকা এক ভয়ঙ্কর ক্যানসারের বিস্ফোরণ, যেখানে স্বচ্ছতা ছিল অনুপস্থিত, আর ন্যায়ের কাছে চেয়ে থাকা চোখগুলো ছিল অবহেলিত।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এক সময় যশোর বোর্ডের চেয়ারম্যান নিজেই আমাকে বলেছিলেন, “ভাই, দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। আপনি চেষ্টা করতে পারেন, তবে সফল হবেন না।” আমি তাঁকে বলেছিলাম, “আপনি পাশে থাকুন, আমি চেষ্টা করি। দেখা যাক কী ঘটে।”
তিনি কথা দিয়েছিলেন। কিন্তু সে কথা রাখতে পারেননি। এবং আজ আমি বুঝি, তিনি তখনই বলে দিয়েছিলেন আসল সত্যটি—এই ব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

দুর্নীতির রসুনবাঁধা রাজনীতি

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আমরা প্রায়ই শুনি, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। অথচ সেই মেরুদণ্ডেই আজ ঘা—পুঁজে ভরা ঘা। এই দুর্নীতির মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি অদৃশ্য, কিন্তু অতীব শক্তিশালী গোষ্ঠী। জানেন কারা তারা? রাজনীতিবিদেরা। এরা এই ব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে রসুনের মতো গেঁথে আছে—পৃথক শরীরে, কিন্তু একসঙ্গে গাঁথা। তাই একজন চলে গেলে আরেকজন আসে। এক দুর্নীতিবাজ নেতার জায়গা নেয় আরেক চাটুকার। কাঠামো অপরিবর্তিত থাকে।

একটি অনিয়ম ঠেকাতে গিয়ে, গোটা ব্যবস্থার মুখোমুখি

নহাটা গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি পদে এক নিছক নিয়োগ প্রক্রিয়া। কিন্তু সেই অনিয়ম থামাতে গিয়ে আমি যা দেখলাম, তা ছিল বিস্ময়কর, আতঙ্কজনক এবং অবিশ্বাস্য। আমি যোগাযোগ করেছিলাম মাগুরা জেলার ডিসি, বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষদের সঙ্গে। বিশেষ করে কথা বলেছিলাম এলাকার তিনজন রাজনীতিকের সঙ্গে—নিতাই রায় চৌধুরী, কাজি কামাল এবং রবিউল ইসলাম নয়ন। তিনজনেই ভদ্র, মিষ্টভাষী, আশ্বাসদাতা। তারা আমাকে বলেছিল: “আপনি চিন্তা করবেন না, আমরা দেখছি।” কিন্তু কেউ কথা রাখেনি। তবুও আমি বলবো—তারা খারাপ মানুষ না, কিন্তু এ দেশ পরিচালনার জন্য প্রয়োজন এমন নেতা, যারা কথা রাখে, ভয় পায় না, এবং চ্যালেঞ্জ নেয়।

পুরনো কথা কেন নতুন করে তুলছি?

হয়তো কেউ বলবেন, “এটা তো পুরনো ঘটনা। এখন আবার কেন?” হয়তো কেউ বলবেন, “দেশের বারোটা তো আগেই বাজে গেছে, এখন এক স্কুলের সভাপতির নিয়োগ নিয়ে এত প্যাঁচাল কেন?” আমি বলি, হ্যাঁ, হয়তো একটা বিন্দু। কিন্তু সিন্ধু তো বিন্দু থেকেই জন্মায়।

বাংলাদেশে দুর্নীতির সংস্কৃতি গর্তের মতো—একবার পা পড়লে আর উঠতে পারা যায় না। শিক্ষা খাত যদি রক্ষিত না থাকে, তাহলে ভোট, গণতন্ত্র, বিচার—সবই প্রশ্নবিদ্ধ। আজ ৫ আগস্ট, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার আদায়ের দিন। কিন্তু এই দিনে দাঁড়িয়ে আমি দেখছি—গত এক বছরে দুর্নীতি, লুটপাট, ধর্ষণ, খুন, গুম—সবকিছু যেন অতীতকেও হার মানিয়েছে।

নির্বাচন সামনে: পেস্ট নাকি কলেরা?

আমরা এক ভয়ঙ্কর নির্বাচন-প্রহসনের দিকে এগোচ্ছি। কারা দায়িত্ব নেবে? কে দেবে সুস্থ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্যারান্টি? যেদেশের শিক্ষাব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি, সেখানে কীভাবে আশা করবো রাজনীতিবিদদের হাত থেকে মুক্ত একটি নির্বাচন? একদিকে পেস্ট, অন্যদিকে কলেরা—তবে পছন্দ করতে তো হবেই। এখন সেই তিনজন রাজনীতিবিদের কথা ভাবুন—যাদের সঙ্গে আমি কথা বলেছিলাম, এবং যারা কথা রেখেনি। তারেক রহমানের মতো একজন নেতৃত্বকে এখন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে—কাকে রেখে কাকে সমর্থন করবেন?

এই একটি আসনের কথাই বলছি। দেশের ৬৪টি জেলা এবং দুটি করে আসন মিলিয়ে ১২৮টি স্থান। তার উপর মহিলা আসনও আছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার কাজ সহজ নয়। আমি উদাহরণ হিসাবে একটি দলের কথা উল্লেখ করলাম- ভাবুন অন্য দলের কথাও!

আমার উপদেশ—জাগো বাংলাদেশ, জাগো! এই ডাক আজ আবেগ নয়, দায়িত্ব। এই সময় আর কাঁদার নয়, দাঁড়ানোর। অন্যায়ের সঙ্গে আপস নয়, মুখোমুখি সাহসের সংঘর্ষ চাই এখন।

বাংলাদেশ আজ এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে একদিকে অন্ধকার, অন্যদিকে প্রতিশ্রুতি। মাঝখানে একটিই দরজা—সিদ্ধান্ত। আমরা যারা নিজেদের সৃজনশীল ও শিক্ষিত বা প্রতিবাদ করার মতো বিবেকবান মনে করি, তারা যদি চুপ থাকি—তাহলে ভবিষ্যৎ পাবে শুধু ধ্বংসস্তূপ আর দাসত্ব।

আপনার আশেপাশেই হয়তো অন্যায় ঘটছে—তুমিও প্রতিবাদ করতে পারো। শুধু লেখক, সাংবাদিক বা রাজনৈতিক কর্মী না—একজন শিক্ষক, একজন শিক্ষার্থী, একজন চাকরিজীবী এমনকি একজন অভিভাবকও হতে পারেন পরিবর্তনের অগ্রনায়ক।

আপনি কী করতে পারেন, আজ থেকেই:
১. ভোট দিন। নিজে ভোট দিন, অন্যকেও উদ্বুদ্ধ করুন।
২. অনিয়ম দেখলে রিপোর্ট করুন। থেমে যাবেন না।
৩. সোশ্যাল মিডিয়ায় বা বন্ধুদের মাঝে সাহসের ভাষা বলুন।
৪. ভয় পাবেন না। যে ভয় পায় না, সেই-ই নেতা হয়।
৫. আপনিই আলোর মশাল। নতুন প্রজন্মের চোখে আপনি হয় আশা, নয় অন্ধকার।

শেষ কথা: প্রতিবাদের চেয়ে পবিত্র আর কিছু নেই

আমি একটি সুইডিশ প্রবাদ দিয়ে শেষ করতে চাই—
“Beslut måste tas även detta är olagligt”
বাংলায় অর্থ: “সিদ্ধান্ত নিতেই হবে—even যদি তা কঠিন, ভয়ানক বা আইনের সীমার কাছাকাছি হয়।”

এটা কোনো বেপরোয়া আহ্বান নয়, এটি নৈতিক সাহসের আহ্বান।
যেখানে আইন দুর্নীতিগ্রস্ত, সেখানে বিবেকই শেষ সত্য।
তোমরা যারা আগামী প্রজন্মকে নেতৃত্ব দিতে চাও, শুনে রাখো—সত্যের পাশে দাঁড়াতে সাহস লাগে, এবং সাহসই একমাত্র মুদ্রা যা রাজনীতিকে পবিত্র করতে পারে। নেতা সেই, যে শোনে না কারা কী বলবে—শুধু জানে কী ঠিক আর কী ভুল।

জলের ফোঁটা থেকেই জোয়ার

হ্যাঁ, আজকের ঘটনাটি হয়তো অনেকের কাছে সামান্য, এক ফোঁটার মতো। কিন্তু ইতিহাস বলে—জোয়ার এক ফোঁটা জল থেকেই শুরু হয়।

আমার চেষ্টা হয়তো ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু আমি মাথা নিচু করিনি। নীতিকে বিসর্জন দিইনি। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এখন গড়ে তুলবে তারা, যারা ভয়কে পরোয়া করে না, যারা প্রশ্ন করতে জানে, এবং যারা “না” বলতে ভয় পায় না। এই লেখাটি কেবল একটি স্মৃতিকথা নয়—এটি প্রতিরোধের আগুনে জ্বলে ওঠা এক জ্বলন্ত দলিল।

রহমান মৃধা
গবেষক, লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার সুইডেন
Rahman.Mridha@gmail.com 

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

পদ্ধতির বাস্তবতা, প্রয়োগযোগ্যতা ও প্রতিনিধিত্ব কি গণতন্ত্রের সঠিক পথ?

Published

on

ডরিন পাওয়ার

প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (PR) বা অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব হলো এমন একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের শতকরা অনুযায়ী সংসদে আসন পায়। অর্থাৎ, কোনো দল যদি ৩০% ভোট পায়, তবে তার প্রাপ্ত আসনও হবে প্রায় ৩০%। এতে ভোটাররা নিশ্চিত হতে পারেন—তাদের ভোট হারাবে না, কোনো প্রার্থীর প্রতি তাদের সাপোর্ট ‘ফিকে’ বা ‘বিপথগামী’ হবে না।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এর বিপরীতে, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত First-Past-The-Post (FPTP) পদ্ধতিতে কেবল সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া প্রার্থী জয়ী হন, বাকিদের ভোট ‘অদৃশ্য’ হয়ে যায়। এ কারণে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বহীনতা তৈরি হয়, বঞ্চিত গোষ্ঠীর আস্থা কমে যায় এবং শাসনব্যবস্থার দায়বদ্ধতা দুর্বল হয়ে পড়ে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

PR পদ্ধতির মূল বৈশিষ্ট্যগুলো হলো—
১. ন্যায়বিচার ও সমঅধিকার
বড় দল, ছোট দল, সংখ্যালঘু, নারী, তরুণ—সবাই পায় সমান সুযোগ। এতে সংসদ হয়ে ওঠে দেশের প্রকৃত প্রতিচ্ছবি।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

২. সংলাপ ও সহনশীলতা
একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া কঠিন হওয়ায় দলগুলোকে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করে জোটবদ্ধ হতে হয়, যা গড়ে তোলে গণতন্ত্রের অন্তর্ভুক্তিমূলক সংস্কৃতি।

৩. মনোনয়নে স্বচ্ছতা
প্রার্থী মনোনয়ন দলীয় ভোট এবং জনগণের গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে হয়; অর্থ, প্রভাব বা আত্মীয়তন্ত্রের কোনো স্থান নেই।

৪. ভোটার আস্থা ও অংশগ্রহণ
ভোটার জানেন, তাদের ভোট বৃথা যাবে না, ফলে ভোটার উপস্থিতি ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়।

৫. নেতৃত্বে বৈচিত্র্য
নারী, তরুণ, সংখ্যালঘু ও সাধারণ পেশাজীবীরা সংসদে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়, যা জাতীয় রাজনীতিকে সমৃদ্ধ করে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে PR পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা
বাংলাদেশ একটি বহুদলীয় ও বৈচিত্র্যময় দেশ। তবুও, বর্তমান FPTP পদ্ধতি এই বৈচিত্র্যকে যথাযথভাবে প্রতিফলিত করতে ব্যর্থ।

– বিরোধী কণ্ঠকে গলা চাপা দেয়া হয়।
– ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয় পরিবার ও গোষ্ঠীর হাতে।
– ভোটারের আস্থা ক্রমেই ক্ষয়প্রাপ্ত।
– সংসদ ‘সিন্ডিকেট’ বা গোষ্ঠীনির্ভর শাসনের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে, জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধি নয়।

PR পদ্ধতি অবশ্যই একটি পরিবর্তনের প্রথম ধাপ হতে পারে। তবে এই পদ্ধতিকে হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা হবে না হলে বাস্তব ফল পাওয়া কঠিন।

সুইডেনের অভিজ্ঞতা: এক সফল উদাহরণ
আমি দীর্ঘ চার দশক ধরে সুইডেনে শিক্ষক, নাগরিক ও বিশ্লেষক হিসেবে বসবাস করছি। সেখানে PR পদ্ধতির কার্যকারিতা আমার কাছে স্পষ্ট।

– একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রায়ই হয় না, ফলে সংলাপ ও ঐক্য বাধ্যতামূলক।
– একজন সাধারণ শিক্ষক, অভিবাসী, বাসচালকসহ নানা পেশার মানুষ সংসদে সুযোগ পায়।
– ভোটার উপস্থিতি ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশের ওপরে, কারণ ভোট ‘হারায় না’।
– রাজনৈতিক পরিবেশ ভদ্র, যুক্তিবাদী ও ব্যক্তিগত আক্রমণ থেকে মুক্ত।

এটি প্রমাণ করে PR শুধু একটি ভোট গণনার পদ্ধতি নয়, এটি একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি।

তাহলে কি PR চালু করলেই সব সমস্যা দূর হবে?
না। PR হলো একটি দরজা, যা দিয়ে প্রবেশ করলে সুবিচার, অংশগ্রহণ, ন্যায্যতা এবং নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির পথ খুলে যায়। তবে এই দরজার ওপারে যেতে হলে দরকার—

– রাজনৈতিক সদিচ্ছা
– জবাবদিহিমূলক প্রশাসন
– স্বাধীন মিডিয়া
– সচেতন নাগরিক সমাজ
– এবং জাতিগত আত্মসমালোচনার সাহস

এটি কেবল যান্ত্রিক সংস্কার নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লব।

অন্তরের গভীরে এক প্রশ্ন
১৯৪৫ সালে হিরোশিমা ধ্বংস হয়েছিল। তারা ঘোষণা দিয়েছিল, “We shall not repeat the evil.”

আমরা কি দাঁড়িয়ে বলতে পারি— “আমরা আর নিজের সন্তানদের হাতেই জাতিকে ধ্বংস হতে দেব না”?

আমরা কি গড়তে পারি এমন একটি বাংলাদেশ— যেখানে ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মা নিশ্চিন্তে বলতে পারে— “আমাদের রক্ত বৃথা যায়নি”?

যেখানে জুলাই মাস ফিরে আসবে স্বাধীনতার রোদের মতো— ভয়, গুম, দমন আর রক্ত নয়, বরং গণমানুষের গর্ব, মুক্তচিন্তা ও ভালোবাসার প্রতীক হয়ে উঠবে।

যেখানে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর রক্তের নয়, বরং মুক্তির জয়গান।

উপসংহার
প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (PR) কেবল একটি ভোট গণনার পদ্ধতি নয়— এটি একটি পরিবর্তনের ঘোষণা, একটি নতুন মানসিকতার অব্যাহত যাত্রা, একটি সাহসিকতার প্রতীক, এবং এক মানবিক চেতনার পুনর্জন্ম।

যদি আমরা সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র চাই— যেখানে ক্ষমতা হবে দায়িত্বের প্রতীক, নেতৃত্ব হবে অক্লান্ত জনসেবার অঙ্গীকার, তাহলে সেই কাঠামোই হবে আমাদের ঐক্যের মূর্তি, আমাদের স্বপ্নের দিশারি।

আজ, এই ক্ষণে— আপনি কি প্রস্তুত নিজের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের জন্য? আপনি কি দৃঢ় সংকল্পে বলতে প্রস্তুত— “আমরা বেছে নেব সক্রিয়, দায়বদ্ধ, নিখুঁত গণতন্ত্রের পথ”?

রহমান মৃধা, গবেষক, লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

অযোগ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: আস্থার ভঙ্গ, লুটের শাসন

Published

on

ডরিন পাওয়ার

অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও দেশের সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমানোর প্রত্যয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। কোটি কোটি মানুষ জীবনের নানা চ্যালেঞ্জে জর্জরিত, তাদের কষ্টের মাঝে সরকার দুর্নীতি ও সুযোগ-সুবিধার কারসাজিতে লিপ্ত ছিল।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

মানুষের কষ্টের অবমূল্যায়ন
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করেছিল জনগণের ভোগান্তি কমাবে, কিন্তু দেশের অগণিত মানুষ আজও বিদ্যুৎ, পানি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও নিরাপত্তার মতো মৌলিক সেবা থেকে বঞ্চিত। করোনাকালীন এবং পরবর্তী সময়ে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের জীবনের মান উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ ছিল সীমিত। বরং ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা কর্মকর্তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

দুর্নীতির বেড়ে ওঠা
সরকারের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা নিজেদের আর্থিক ও সামাজিক স্বার্থ হাসিলের জন্য দুর্নীতি বাড়িয়েছেন। সরকারি তহবিলের অপব্যবহার, প্রকল্পে অনিয়ম, নিয়োগ ও কর্মসংস্থানে অস্বচ্ছতা—এসব দেশের দুর্নীতি হার বাড়িয়েছে। দুর্নীতিবাজরা একে অপরের পৃষ্ঠপোষকতা ও মিত্রতা নিয়ে ক্ষমতার খেলা চালিয়েছেন, যার কারণে সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার ও সেবার অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়েছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

কথা বিক্রি, কাজের অভাব
বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতি দমন এবং সেবা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা রাজনৈতিক বক্তৃতা ও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। কার্যত কোনো পরিবর্তন বা সংস্কার আনা হয়নি, বরং কথার পেছনে কথা বিক্রি হয়েছে। জনসমর্থন বৃদ্ধির জন্য নানা প্রকল্প ঘোষণা হলেও বাস্তবায়নে ন্যূনতম মনোযোগ দেওয়া হয়নি। সাধারণ মানুষের আশা ও বিশ্বাস ধূলিসাৎ হয়েছে।

সুযোগ-সুবিধার প্রলেপে ক্ষমতার বিকৃতি
অপরদিকে, নেতাকর্মীদের জন্য সুযোগ-সুবিধার বন্যা বইতে শুরু করেছে। ক্ষমতার শীর্ষে থাকা ব্যক্তিরা নিজেদের দলের অনুগত লোকজন নিয়োগ, প্রকল্প বরাদ্দ ও আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে সুবিধাভোগী করেছেন। ফলে ক্ষমতার দখল একদলীয় হয়ে ওঠে। এই সুযোগ-সুবিধার ফলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়েছে, আর জনগণের ন্যায্য দাবিগুলো উপেক্ষিত হয়েছে।

লুটপাটের মহোৎসব: সাপ ছেড়ে খেলা দেখছে সরকার
গত দশ মাস ধরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিএনপির লুটপাট এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে একটুও পদক্ষেপ নেয়নি। তারা সাপ ছেড়ে শুধু খেলা দেখেছে—দেখেও অন্ধের মতো মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। দেশের সম্পদ লুটে নেওয়া ও জনগণের চরম দুর্ভোগকে তারা শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ হাসিলের সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করেছে। ক্ষমতার মোহে তারা দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়েছে, আর সাধারণ মানুষ হয়ে উঠেছে তাদের নির্লজ্জ লুটপাটের নীরব দর্শক।

ড. ইউনূস: জনগণের জন্য নয়, নিজের সুনাম ও লাভের ব্যবসায়ী
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মুখ্য ব্যক্তিত্ব ড. ইউনূসের কাজের মূল উদ্দেশ্য ছিল জনগণের আস্থা অর্জন নয়, বরং নিজের নাম-ডাক আর আন্তর্জাতিক সুনাম গড়ে তোলা। দেশের দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফোটানো বা তাদের বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানে তিনি একটুও সময় দেননি। বিদেশি সম্মেলন, পুরস্কার আর গ্লোবাল মিডিয়ার সামনে নিজের ইমেজ তুলে ধরাই ছিল তার একমাত্র লক্ষ্য। জনমতের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে, সরকারি সুযোগ-সুবিধার পেছনে লুকিয়ে নিজের স্বার্থ পূরণ করেছেন। দেশের দরিদ্র জনগণ তাকে বিশ্বাস করেনি, কারণ তিনি তাদের জন্য নয়, নিজের সুবিধা ও খ্যাতির জন্য কাজ করেছেন।

গ্রামীণ ব্যাংকও গরিব-দুঃখী মানুষের মুক্তির প্রতীক হিসেবে পরিচিত হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। অসহায় গ্রামের মানুষ আজো গরিব থেকেই গেছে, আর গ্রামীণ ব্যাংক ও তার নেতারা বড় ধরনের ‘মানি মেকার’ হয়েছে—যারা সাধারণ মানুষের কষ্টকে ব্যবসায়িক সুযোগে পরিণত করেছে। ড. ইউনূস নিজেই সেই ব্যবসায়ীর প্রতীক, যিনি আন্তর্জাতিক সম্মান আর খ্যাতির পেছনে ব্যস্ত থেকে দেশের দরিদ্র মানুষের জীবন বদলের জন্য কিছুই করেননি। এক কথায়, ড. ইউনূস “ওনস এ মানি মেকার, অলওয়েজ এ মানি মেকার।”

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন পর্যন্ত যা দিয়েছে, তা ছিল কেবল আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি, কিন্তু বাস্তবে তা সফল হয়নি। দেশের সাধারণ মানুষ আজো জীবনের নানা সমস্যায় আটকে আছে। দুর্নীতি ও সুযোগ-সুবিধার কারসাজি থেকে মুক্তি না পেয়ে দেশের গণতন্ত্রের ভিত্তি শিথিল হয়েছে। তাই এখন সময় এসেছে সত্যিকার অর্থে জনগণের স্বার্থ রক্ষায় সৎ ও দক্ষ নেতৃত্বের জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের।

রহমান মৃধা. গবেষক, লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

পুঁজিবাজারের সর্বশেষ

ডরিন পাওয়ার ডরিন পাওয়ার
পুঁজিবাজার7 minutes ago

ডরিন পাওয়ারে কোম্পানি সচিব নিয়োগ

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানি ডরিন পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেডে কোম্পানি সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।  AdLink...

ডরিন পাওয়ার ডরিন পাওয়ার
পুঁজিবাজার52 minutes ago

আফগানিস্তানে ওষুধ রপ্তানি করবে ইন্দো-বাংলা ফার্মা

পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের ইন্দো বাংলা ফার্মাসিটিউক্যালস লিমিটেডের কর্তৃপক্ষ আফগানিস্তানে ওষুধ রপ্তানির উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে দেশটির একটি...

ডরিন পাওয়ার ডরিন পাওয়ার
পুঁজিবাজার1 hour ago

দেড় ঘণ্টায় দর বেড়েছে ২৯১ শেয়ারের

সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় চলছে লেনদেন। এদিন লেনদেন শুরুর প্রথম দেড়...

ডরিন পাওয়ার ডরিন পাওয়ার
পুঁজিবাজার1 hour ago

নগদ লভ্যাংশ পাঠিয়েছে আইডিএলসি ফাইন্যান্স

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আইডিএলসি ফাইন্যান্স পিএলসি গত ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ সমাপ্ত হিসাববছরে জন্য ঘোষিত নগদ লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীদের কাছে পাঠিয়েছে।  AdLink...

ডরিন পাওয়ার ডরিন পাওয়ার
পুঁজিবাজার2 hours ago

পাঁচ শতাংশ করছাড়ে পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানি আসবে না: বক্তারা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর কোম্পানিগুলোর নানা খাতে খরচ বাড়ে। যেকারণে মাত্র ৫ শতাংশ কর–সুবিধা পেতে সেই খরচ বাড়িয়ে কোনো কোম্পানি...

ডরিন পাওয়ার ডরিন পাওয়ার
পুঁজিবাজার13 hours ago

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের লভ্যাংশ নিয়ে তেলেসমাতি, ঘোষণার ১৪ মাস পর বাতিল

বিভিন্ন কেলেঙ্কারির জন্ম দেওয়া পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি এবার লভ্যাংশ ঘোষণা নিয়ে তেলেসমাতি কাণ্ড ঘটিয়েছে। শেয়ারহোল্ডারদের জন্য...

ডরিন পাওয়ার ডরিন পাওয়ার
পুঁজিবাজার18 hours ago

ছয় মাসের মধ্যে আইপিও প্রক্রিয়া শেষ করা হবে: ডিএসই চেয়ারম্যান

প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে ৬ মাসের কম সময়ের মধ্যে আইপিও প্রক্রিয়া শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের...

Advertisement
AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সোশ্যাল মিডিয়া

তারিখ অনুযায়ী সংবাদ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১৩১৫১৬১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭৩০৩১  
ডরিন পাওয়ার
পুঁজিবাজার7 minutes ago

ডরিন পাওয়ারে কোম্পানি সচিব নিয়োগ

ডরিন পাওয়ার
পুঁজিবাজার52 minutes ago

আফগানিস্তানে ওষুধ রপ্তানি করবে ইন্দো-বাংলা ফার্মা

ডরিন পাওয়ার
পুঁজিবাজার1 hour ago

দেড় ঘণ্টায় দর বেড়েছে ২৯১ শেয়ারের

ডরিন পাওয়ার
পুঁজিবাজার1 hour ago

নগদ লভ্যাংশ পাঠিয়েছে আইডিএলসি ফাইন্যান্স

ডরিন পাওয়ার
সারাদেশ2 hours ago

ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙন, ৩০ গ্রাম প্লাবিত

ডরিন পাওয়ার
জাতীয়2 hours ago

জুলাইয়ে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন হাসিনা

ডরিন পাওয়ার
পুঁজিবাজার2 hours ago

পাঁচ শতাংশ করছাড়ে পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানি আসবে না: বক্তারা

ডরিন পাওয়ার
প্রবাস3 hours ago

কুয়েতে ই-ভিসা চালু, সুবিধা পাবেন বাংলাদেশিরাও

ডরিন পাওয়ার
আবহাওয়া3 hours ago

দুপুরের মধ্যে সাত অঞ্চলে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস

ডরিন পাওয়ার
জাতীয়3 hours ago

বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা শিল্পের বিকাশে সহায়তা দেবে তুরস্ক

ডরিন পাওয়ার
পুঁজিবাজার7 minutes ago

ডরিন পাওয়ারে কোম্পানি সচিব নিয়োগ

ডরিন পাওয়ার
পুঁজিবাজার52 minutes ago

আফগানিস্তানে ওষুধ রপ্তানি করবে ইন্দো-বাংলা ফার্মা

ডরিন পাওয়ার
পুঁজিবাজার1 hour ago

দেড় ঘণ্টায় দর বেড়েছে ২৯১ শেয়ারের

ডরিন পাওয়ার
পুঁজিবাজার1 hour ago

নগদ লভ্যাংশ পাঠিয়েছে আইডিএলসি ফাইন্যান্স

ডরিন পাওয়ার
সারাদেশ2 hours ago

ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙন, ৩০ গ্রাম প্লাবিত

ডরিন পাওয়ার
জাতীয়2 hours ago

জুলাইয়ে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন হাসিনা

ডরিন পাওয়ার
পুঁজিবাজার2 hours ago

পাঁচ শতাংশ করছাড়ে পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানি আসবে না: বক্তারা

ডরিন পাওয়ার
প্রবাস3 hours ago

কুয়েতে ই-ভিসা চালু, সুবিধা পাবেন বাংলাদেশিরাও

ডরিন পাওয়ার
আবহাওয়া3 hours ago

দুপুরের মধ্যে সাত অঞ্চলে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস

ডরিন পাওয়ার
জাতীয়3 hours ago

বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা শিল্পের বিকাশে সহায়তা দেবে তুরস্ক

ডরিন পাওয়ার
পুঁজিবাজার7 minutes ago

ডরিন পাওয়ারে কোম্পানি সচিব নিয়োগ

ডরিন পাওয়ার
পুঁজিবাজার52 minutes ago

আফগানিস্তানে ওষুধ রপ্তানি করবে ইন্দো-বাংলা ফার্মা

ডরিন পাওয়ার
পুঁজিবাজার1 hour ago

দেড় ঘণ্টায় দর বেড়েছে ২৯১ শেয়ারের

ডরিন পাওয়ার
পুঁজিবাজার1 hour ago

নগদ লভ্যাংশ পাঠিয়েছে আইডিএলসি ফাইন্যান্স

ডরিন পাওয়ার
সারাদেশ2 hours ago

ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙন, ৩০ গ্রাম প্লাবিত

ডরিন পাওয়ার
জাতীয়2 hours ago

জুলাইয়ে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন হাসিনা

ডরিন পাওয়ার
পুঁজিবাজার2 hours ago

পাঁচ শতাংশ করছাড়ে পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানি আসবে না: বক্তারা

ডরিন পাওয়ার
প্রবাস3 hours ago

কুয়েতে ই-ভিসা চালু, সুবিধা পাবেন বাংলাদেশিরাও

ডরিন পাওয়ার
আবহাওয়া3 hours ago

দুপুরের মধ্যে সাত অঞ্চলে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস

ডরিন পাওয়ার
জাতীয়3 hours ago

বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা শিল্পের বিকাশে সহায়তা দেবে তুরস্ক