Connect with us

মত দ্বিমত

প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুইডেন প্রবাসীর খোলা চিঠি

Published

on

শেয়ারহোল্ডার

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কেমন আছেন? আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব, অনুপ্রেরণা ও চেতনায় গড়ে উঠা ১৯৭১-এর এক শিশু মুক্তিযোদ্ধা যে তার বাবা এবং বড় তিন ভাইয়ের অবর্তমানে মার দিক-নির্দেশনায় ছোট পাঁচ ভাইবোন নিয়ে দীর্ঘ নয় মাস নিজ দেশে শরণার্থী হয়ে জীবন-মরণের সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে দেশ স্বাধীনের ফেরিওয়ালা হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের, বাপ-চাচাদের বার্তাবাহক হয়ে কাজ করেছি ও সাহায্য করেছি।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

চোখের সামনে দেশ স্বাধীন হতে দেখেছি, বহু আত্মীয়-স্বজনের জীবনের বিনিময়ে বাংলাদেশ পেয়েছি সাথে হারিয়েছিও অনেক কিছু। আমরা বর্তমান ৯ ভাইবোন, সবাই দেশের বাইরে শুধু একজন ছাড়া। অল্প বয়সেই দেশ ছেড়েছি নিজেকে, পরিবার এবং দেশকে সোনার বাংলা করে গড়ে তুলব বলে। বাবা-মার নির্দেশনা এবং অনুপ্ররণায় দেশের জন্য সব করতে প্রস্তুত এমনটি মনমানসিকতায় এখনও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। চল্লিশ বছর দূরপরবাসে বসবাস হলেও দেশের উন্নয়নে বদ্ধপরিকর হয়ে কাজ করে চলছি। আমার দেশের বাড়ি মাগুরা জেলার (মাগুরা ২ আসন) নহাটা গ্রামে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আমরা অতি সহজেই পরনিন্দা এবং পরচর্চা করে থাকি অথচ নিজেদের মধ্যে যে একই সমস্যা রয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করাও যে অপরিহার্য সেটা ভুলে যাই।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আমরা বাংলাদেশে ধর্ষণ, ঘুস, মাদক, দুর্নীতি এসবের বিরুদ্ধে সব সময় লিখি, কথা বলি, সংগ্রাম করি। কিন্তু আমরা কখনো বলি না বা বলতে চাই না যে এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত তারা আর কেউ নয়, আমাদের সমাজেরই পরিচিত মুখ।

আজ আমি আমার পারিবারিক সমস্যা তুলে ধরতে চাই সরাসরি আপনার কাছে আমার এই খোলা চিঠির মাধ্যমে। আমার পরিবার শিক্ষা এবং অর্থে দেশে-বিদেশে সুনামের সঙ্গে চললেও আমার পরিবারে রয়েছে ভাই-বোনদের বঞ্চনাকারী এক বা একাধিক সদস্য। আমার পারিবারিক সমস্যা আমি দুঃখের সঙ্গে তুলে ধরছি শুধুমাত্র পরিবর্তনের জন্য। কারণ যদি এমনভাবে চলতে থাকে তবে পুরো দেশ এক সময় অচল হয়ে যাবে এসব কুৎসিত চরিত্রের মানুষের জন্য। আর এ ধরনের কুৎসিত চরিত্রের মানুষ বর্তমানে বাংলাদেশে দ্রুত বর্ধনশীল।

বাংলাদেশের যৌথ পরিবারের সংখ্যা দিন দিন কমতে শুরু করেছে। পরিবারে বড় ভাই-বোনদের সচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও বাবা-মা এবং ছোটদের ছেড়ে আলাদা হয়ে যাওয়া, খোঁজখবর না রাখা, এখন এসব ঘটনা সর্বত্র দেখা যাচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

দেখা যায় যে ভাইয়ের ওপর ছিল ভালোবাসা এবং মধুর স্মৃতি যখন সে বিয়ে করেনি। পরবর্তীতে সে মস্ত বড় অফিসার হয়ে সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে। সে পরিবার ছেড়ে নিজেকে লোভী করে ফেলেছে আর গড়েছে তার চারপাশে এক আত্মকেন্দ্রিক প্রাচীর। যে প্রাচীর বন্ধ করে রেখেছে তার মনুষ্যত্বকে, দিনের পর দিন আর বছরের পর বছর।

ছোট ভাই-বোনদের জন্য কিছু করে যদি কোনো বড় ভাই-বোন তা সুদে-আসলে তুলে নেয় এবং সারাক্ষণ কঠিনভাবে মানসিক অশান্তিতে রাখে তখন ভালোবাসার সম্পর্ক ঘৃণায় পরিণত হয়। অর্থনৈতিকভাবে ঋণগ্রস্ত ছোট ভাই-বোনের ওপর বড়দের জুলুমের পরিমাণ যখন সীমা লঙ্ঘন করে এবং তারা যখন ছোটদের প্রতি অত্যাচার এবং অবিচার করতে শুরু করে, তখন ঘৃণা ছাড়া ছোটদের আর কিছু করার থাকে না। সেক্ষেত্রে ব্যর্থ হয় ভালোবাসা, সেইসঙ্গে সম্পর্কেরও অবনতি হয়। তখন সম্পর্ক আর ভাই-বোনের থাকে না।

সে সামান্যতম ত্রুটি-বিচ্যুতি বড় করে তুলে ধরে সবাইকে নিচু করতে দ্বিধা করে না। আবার অনেকে পরিবারের সবকিছু ভোগ-দখল করে আসছে বছরের পর বছর, তারপরও খুশি নয়। এরা সেই বর্ণচোরা মুখোশধারী মানুষ নামের দানব যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুরো ফ্যামিলিকে ঠকিয়ে চলছে বহু বছর ধরে। এরা যখন সবে চাকরিতে ঢুকেছে কিন্তু বিয়ে করেনি তখন যা করেছে, শুধু সেই ইতিহাস বলে বেড়ায়। অথচ অনেক বছর পার হয়ে যায়, কারো খোঁজখবর নেয় না।

বাংলাদেশের লাখ লাখ পরিবারে প্রতিনিয়ত এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এর একটা বিহিত করা প্রয়োজন। তবে পাছে লোকে কিছু বলে এই ভয়ে কেউ কিছু করছে না। সরাসরি কিছু করতে বা বলতে গেলে পরিবারের গুডউইল নষ্ট হবে।

আমরা সবাই দানবের নয়; মানবের সমাজ ফিরে পেতে চাই। কিন্তু এই দানবদের আলোর পথে না আনতে পারলে সমাজ এবং দেশে এদের সংখ্যা এত বাড়তে থাকবে যে, শেষ পর্যন্ত সৎ মানুষ খুঁজে পাওয়া কষ্টকর হবে।

যে চরিত্রহীন, অসৎ ও দুর্নীতিগ্রস্ত তাকে লজ্জা দেওয়া যায় না। যে উলঙ্গ তাকে কে লজ্জা দেবে? কী করে সে দাবি করে সবার ভালোবাসা, শ্রদ্ধা? একজন শিক্ষিত এবং ক্ষমতাবান ব্যক্তি যে শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবে, এমন স্বার্থপর আপনজন কেউ চায় না। সবাই সু-শিক্ষায় গড়া ভালোবাসার সমন্বয়ে ভরা সাধারণ পরিবার চায়।

দুর্নীতি হয় না এমন দেশ সারাবিশ্বে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এখন প্রশ্ন কীভাবে দুর্নীতিবাজদের সৎ চরিত্রে ফিরিয়ে আনা সম্ভব? যদিও পরিবারের মধ্যে যে ক্ষতি হয়েছে সেটা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে না। তাহলে কীভাবে পরিবারে এ ধরনের মানুষদের চরিত্রের পরিবর্তন করা সম্ভব? পারবে কি এরা নতুন করে প্রমাণ করতে যে তারা পরিবার ও সমাজের সত্যিকার আপনজন? তাহলে তাদের প্রমাণ করে দেখাতে হবে, যে অন্যায় তারা করছে, তার জন্য তারা লজ্জিত ও অনুতপ্ত।

আমি সবকিছু বিচার বিবেচনা করে আজ আপনার কাছে আমার এই বার্তাটি তুলে ধরছি। কারণ বাংলাকে সোনার বাংলা করতে হলে আমাদের মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে এবং সে পরিবর্তন নিজ এবং নিজের পরিবারকে দিয়ে শুরু করতে হবে। সেক্ষেত্রে এগুলো পারিবারিকভাবে বসে মীমাংসা করতে চেষ্টা করার উদ্যোগ নিতে হবে এটাই সবাই বলবে।

এতে সীমিত সময়ের জন্য হয়তো পরিবারের সম্মান ক্ষুণ্ণ হবে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এটা পরিবারের তথা সমাজের জন্য সুফল বয়ে আনবে। সুশিক্ষা এবং মানবতার ধ্বংস নয়, ধ্বংস হোক তার নিজের কুশিক্ষা।

জীবনে চলার পথে কিছু লক্ষ্য থাকা দরকার যা শিক্ষণীয় এবং যা সোনার বাংলায় আদর্শ মানুষ হতে সাহায্য করবে। আমি গত চল্লিশ বছর ধরে চেষ্টা করেছি একটি সুন্দর পরিবার তৈরি করতে। চল্লিশ বছর প্র্যাক্টিস করেছি সৎ পথে চলতে, সত্য কথা বলতে, অন্যায় না করতে এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে। আমি পরিবারের ভালো-মন্দ সব কিছু জানি, জেনে শুনেও অনেক সময় চেষ্টা করেছি চুপ থাকতে, অনেক সময় সমাধানে ঢুকেছি, সমাধান করেছি।

অনেকবার আমি চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি পারিবারিক সমস্যাগুলোর পুরো সমাধান করতে। শেষে সবার সঙ্গে কথা বলে এবার ভেবেছিলাম বাবা-মা মারা গেছেন হয়তো আমরা পারব সব মেটাতে। কথা ছিল সবাই দরকারে একটু ছাড় দেবে। আমরা সকল ভাই-বোন যা কিছু করেছি দেশে তার সমস্ত দায়ভার আমাদের একমাত্র ভাই লে. কর্নেল (অব.) হান্নান মৃধার ওপর ন্যস্ত করি। কারণ সেই শুধু দেশে থাকে। আমরা তার ছেলেকে পর্যন্ত বিদেশে এনে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছে।

তারপরও সে আমাদের বিশ্বস্ততাকে ভঙ্গ করে আমাদের দেশের প্রায় সকল সম্পদ ভোগদখল করে চলছে। বয়স এবং সময়ের সাথে যখন আমরা সবাই দেশে ফিরে নিজেদের সম্পদের অংশবিশেষ ফেরত পেতে তাকে অনুরোধ করি ঠিক তখনই সে তার ক্ষমতার অপব্যবহার এবং প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে আমাদের সকল ভাই-বোনকে সবধরনের সুযোগ সুবিধা খেকে বঞ্চিত এবং ভয় দেখিয়ে সব কিছু ভোগ দখল করে চলছে।

আমরা নানাভাবে বোঝাতে এবং তার পাওনার চেয়ে বহুগুণ বেশি দিয়েও তাকে সৎপথে আনতে ব্যর্থ হয়েছি। শেষে তাকে এও বলেছি দরকারে আপনার সাহায্য নেব তবুও দুর্নীতিকে পরিবার থেকে আজীবনের জন্য দূর করবো। লে. কর্নেল (অব.) হান্নান মৃধা কথা দিয়েও শেষে অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে, এটাই আমাকে কষ্ট দিয়েছে। সে তার চাকরি জীবনে ডিজিএফআই, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ নানা দায়িত্বে কাজ করেছে।

সে নিজেই যখন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, আমার প্রশ্ন কোথায় আমরা সাধারণ মানুষ যাব? শেষে অন্য কোনো উপায় না পেয়ে আপনার এবং সমস্ত দেশবাসীর কাছে আমার এই লেখা। আশা করি আপনি আমাদের একটি ন্যায্যবিচার এবং অনীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে দুর্নীতিমুক্ত পরিবার দরকার, আশা করি আপনি সেটা করতে পারবেন। আপনার সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করি।

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মত দ্বিমত

চেহারায় মানুষ, চেতনায় অমানুষ: আমরা কি হারিয়ে যাচ্ছি?

Published

on

শেয়ারহোল্ডার

বর্তমানে আমরা মানুষ হয়ে অমানুষের পরিচয় দিচ্ছি। আরও বিস্ময়কর হলো, পশুপাখিদের আচরণকে যখন তুলনামূলকভাবে শ্রেষ্ঠ বলে দেখানো হয়, আমরা তাতেও দ্বিধা করি না। কেন এমন হচ্ছে?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আমরা বলতে সাহস পাই না যে আমরা অমানবিক, নিষ্ঠুর ও আত্মমগ্ন হয়ে উঠেছি। আমরা স্বীকার করতে চাই না যে আমাদের পথচলা বিবেকবর্জিত, যুক্তিহীন, অথচ আমরা দিব্যি সমাজে মাথা তুলে চলছি। এমনকি আজকাল এমন কাজ, যা মানুষের করা উচিত, সেটাও পশুপাখিরা তাদের সহজাত প্রবৃত্তি দিয়ে করে দেখিয়ে দিচ্ছে। তারা প্রযুক্তি ছাড়াও নৈতিকতা, সহানুভূতি আর শৃঙ্খলার পরিচয় দিচ্ছে, অথচ আমরা—শিক্ষিত, আধুনিক মানুষ—সেই গুণগুলোর চর্চা করছি না।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

যেমন ধরা যাক, যুগ যুগ ধরে আমরা ধর্ম, নীতি, মানবিকতার কথা বলে এসেছি, কিন্তু এসবের আসল অনুশীলন কোথায়? আমরা জ্ঞানার্জন করছি, উচ্চশিক্ষিত হচ্ছি, সমাজে নাম কুঁড়াচ্ছি, অথচ মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলছি। অমানুষের মতো আচরণ করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত—এবং তার পরেও নিজেদের মানুষ বলে দাবি করছি।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এখন যদি এমন কিছু অলৌকিক ঘটনা ঘটে—যেমন, আমরা যেহেতু পশুর মতো আচরণ করছি, হঠাৎ আমাদের চেহারাও যদি পশুর মতো হয়ে যায়? তাহলে কী হবে? কী প্রতিক্রিয়া হবে আমাদের সমাজের? তখন কীভাবে আমরা নিজেদের মানুষ বলে পরিচয় দিতে পারব?

এই ভাবনা হঠাৎ আমার মধ্যে জন্ম নিয়েছে। জানেন কেন? আমি প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটাই। আমি মানুষের থেকে অনেকটাই আলাদা হয়ে, সুইডেনের মাঠে কৃষিকাজ করি, খোলা আকাশের নিচে হাঁটাহাঁটি করি, পরিবেশবান্ধব কাজ করি। আর এই জীবনের মধ্যেই আমি মানুষের বদলে যাওয়া দেখে ফেলি—মানুষ কীভাবে তার প্রাকৃতিক ক্ষমতা হারাচ্ছে, কীভাবে সে নিজের মূল সত্তাকে ভুলে যাচ্ছে।

এই ‘দেখা’ আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি উপলব্ধি করছি, মানুষ শুধু নিজের জন্য তৈরি হয়নি। মানুষের সৃষ্টি একটি উদ্দেশ্যমূলক ঘটনা—তার মধ্যে জ্ঞান, দায়িত্ব, নৈতিকতা ও ভালোবাসা ঢেলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের জীবন শুধুমাত্র ইঁদুর দৌড়ে অংশ নেওয়ার জন্য নয়। আমাদের দায়িত্ব আছে, উদ্দেশ্য আছে, যা পশুর মধ্যে নেই—তবু তারা তাদের স্বভাব অনুযায়ী ভারসাম্য রক্ষা করে চলে, আর আমরা?

এই জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আমাদের ভাবতে হবে—মানুষের মতো দেখতে হলেই কি মানুষ হওয়া যায়? নাকি মানুষ হওয়া মানে হলো চেতনায়, আচরণে এবং পারস্পরিক দায়বদ্ধতায় একটি সত্তা হয়ে ওঠা?

জানি, এই প্রশ্ন কিছুটা কল্পনাপ্রসূত শোনায়, তবু ভাবুন—যদি আমাদের অমানবিক আচরণের প্রতিফলন আমাদের চেহারায় ফুটে ওঠে? যদি হিংস্র, লোভী, নিষ্ঠুর মানুষের মুখে পশুর রূপ এসে পড়ে? তখন কি আমরা নিজেদের দিকে তাকাতে পারব?

এই প্রশ্নগুলো আমার মধ্যে আসে, কারণ আমি প্রকৃতির সঙ্গে নিরবধি সময় কাটাই। সুইডেনের খোলা মাঠে কৃষিকাজ করি, প্রকৃতির ছন্দে হাঁটি, ভাবি, দেখি। সেখানে প্রকৃতির মধ্যে যে ভারসাম্য, সহনশীলতা ও শান্তি—তা মানুষের সমাজে ক্রমশ অনুপস্থিত। প্রকৃতি আমার মনে করিয়ে দেয়: মানুষ শুধু নিজের জন্য নয়, এক বৃহত্তর উদ্দেশ্যের জন্য সৃষ্টি।

আমাদের জীবন ইঁদুর দৌড়ে শেষ হবার জন্য নয়। মানবসত্তার মূল ভিত্তি দাঁড়িয়ে আছে দায়িত্ব, সহানুভূতি ও সৃষ্টির সঙ্গে সংযোগের উপর। কিন্তু আমরা কি সে পথে আছি? নাকি মানুষ নামের মুখোশ পরে পশুর মতো আচরণ করছি?

উগান্ডার বুদোঙ্গো জঙ্গলে শিম্পাঞ্জিদের নিয়ে গবেষণায় দেখা যায়, তারা শুধু নিজের নয়, অপরের ক্ষতও সারাতে গাছের পাতা বা প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে। গবেষক এলোডি ফ্রেইম্যান এই আচরণকে এক ধরনের ‘social healing’ বলে অভিহিত করেন—যা মানুষের সহানুভূতির প্রতিফলন মনে হয়।

এছাড়াও, অন্যান্য অনেক প্রজাতির মধ্যেও এমন আচরণ দেখা যায়, যেখানে তারা গোষ্ঠীর দুর্বল সদস্যদের রক্ষা করে, খাবার ভাগ করে খায়, বিপদে পাশে থাকে। এর মানে, সহানুভূতি ও নৈতিকতা শুধু মানুষের একচেটিয়া সম্পত্তি নয়।

বলা হয়, মানুষ দিনকে দিন নিষ্ঠুর হচ্ছে। কিন্তু গবেষণায় দেখা যায়, যুদ্ধ, দাসত্ব বা খুনের হার ইতিহাসের তুলনায় অনেক কমেছে। তবে আমরা এত বেশি নেতিবাচক তথ্যের মুখোমুখি হই (বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে), যে মনে হয় সমাজ ভেঙে পড়ছে।

এটি ‘biased exposure effect’ নামে পরিচিত—যেখানে আমরা নেতিবাচকতাকে বেশি গুরুত্ব দিই। তবুও, এই বাস্তবতা আমাদের দায়বদ্ধতা কমায় না। বরং আমাদের আরও সজাগ ও আত্মসমালোচক হতে শেখায়।

আধুনিক প্রযুক্তি যেমন আমাদের জীবন সহজ করেছে, তেমনি মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে করেছে দূরত্বপূর্ণ। ভার্চুয়াল সংযোগের ছায়ায় হারিয়ে যাচ্ছে আসল সহানুভূতি ও চোখের ভাষা। মোবাইল স্ক্রিনে আমরা জীবন দেখি, কিন্তু জীবনের ছোঁয়া হারিয়ে ফেলছি।

আপনার অভিজ্ঞতা যেমন বলে, প্রকৃতি আমাদের বদলে দিতে পারে। প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত হলে মানুষ তার মূল সত্তার সংস্পর্শে আসে—জাগে সহানুভূতি, শ্রদ্ধা ও ভারসাম্যের বোধ। বিজ্ঞানও বলে, প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানো মানসিক স্বাস্থ্য, দায়িত্ববোধ ও সামাজিক সচেতনতা বাড়ায়।

মানুষ হয়ে জন্মানোর পরও আমরা সারাজীবন মানুষ হতে কত কিছুই না করি—তবুও কী আমরা সত্যিই মানুষ হতে পেরেছি?

এই প্রশ্নের উত্তর সহজ নয়। তবে এটুকু নিশ্চিত—শুধু মানুষের দেহ ধারণ করলেই মানুষ হওয়া যায় না। মানুষ হওয়া মানে হলো আচরণে, চেতনায়, সহানুভূতিতে এবং দায়বদ্ধতায় মানুষ হয়ে ওঠা।

আমি যখন এই প্রশ্ন তুলি— ‘আমরা কি সত্যিই মানুষ হচ্ছি?’—তখন আমি শুধু একজন দর্শক নই। আমি নিজেকেই প্রশ্ন করছি, সমাজকেও ডাক দিচ্ছি। আমি এই সমাজে চেতনার এক দূত হতে চাই।

আমার ভাবনা শুধু ব্যক্তিগত নয়—এটি আমাদের সময়, সমাজ ও সভ্যতার সামনে একটি জরুরি জবাবদিহি তৈরি করে। আমি চাই, আমরা সবাই মুখোমুখি হই সেই প্রশ্নের— আমরা কোন মানুষ হতে চাই? কেবল দেহধারী, না কি আত্মসচেতন, দায়িত্বশীল মানুষ?

এই লেখার প্রতিটি শব্দে আমি চেয়েছি নিজের ভেতরের আলো ও অন্ধকারকে সামনে আনতে, যাতে আপনিও আপনারটা খুঁজে পান। যদি আমরা সবাই আমাদের ভিতরের মানুষটিকে প্রশ্ন করি—তবে হয়তো এখনও সময় আছে সত্যিকার মানুষ হয়ে ওঠার।

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

বাজেট: বাস্তবতা, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

Published

on

শেয়ারহোল্ডার

২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জন্য জাতীয় বাজেট প্রণয়নের প্রাথমিক কাজ প্রায় শেষ র্পযায়ে। জাতীয় বাজেট একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা এবং রাষ্ট্রের আর্থিক পরিকল্পনা। সরকার কর্তৃক উপস্থাপিত বাজেট একটি রাষ্ট্রীয় দলিল। জাতীয় সংসদ কার্যকর না থাকায় জুনের প্রথম সপ্তাহে প্রস্তাবিত বাজেট অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের কাছে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। সাধারনত: প্রতিবছরই বাজেট জাতীয় সংসদের মাধ্যমে অনুমোদিত হয়েছে। তবে সামরিক শাসনামল এবং ২০০৭-২০০৮ ও ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ হয় নাই। রাজনৈতিক সরকারের বাজেট, সামরিক শাসনামলের বাজেট এবং অন্তর্বর্তী সরকার বাজেট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এক একটি বাজেট এক এক ধরনের।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

গণঅভ্যুত্থানে পতিত সরকারের নানা ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে দেশের অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে। জুলাই-আগস্টের গণ-আন্দোলন এবং আন্দোলন-পরবর্তী সামাজিক অস্থিরতার কারণে রাজস্ব আদায় বিঘ্নিত হয়। ফলে চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার কোনোই সম্ভাবনা নেই। ফলে বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধা থাকবে। তবে দলিয় সরকার না থাকায় একটি যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মতভাবে বাজেট রূপ দেওয়ার সম্ভব। বাস্তবমূখী বাজেট এবং এই বাজেট বাস্তবায়নের একটা রূপরেখাও থাকা উচিত। আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপলক্ষে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ট্যাক্স আদায় হয়। বর্তমানে দেশে ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। বাজেট অর্থায়নের জন্য স্থানীয় সূত্র থেকে অর্থ সংগ্রহের ওপর বেশি মাত্রায় নির্ভর করতে হয়। আগামী বাজেটে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরোপিত করের হার কমিয়ে করের পরিধি বাড়ানোর উদ্যোগ নিলে রাজস্ব আদায় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অটোমেশন নিশ্চিত করে তথ্য প্রযুক্তির ওপরে আরও গুরুত্ব দিয়ে অনলাইনের ব্যবস্থা করলে রাজস্ব আদায় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।উচ্চ মাত্রায় কর নির্ধারণ করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা বাড়ে। অভ্যন্তরীণ সুশাসনের অভাবে রাজস্ব আদায় যেভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার কথা তা হচ্ছে না। মফস্বলে কর দেওয়ার মতো অনেক ব্যবসায়ী আছেন। তাদের করের আওতায় আনা যায় কিনা তা ভাবা দরকার।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২০২৫) মূল বাজেট বরাদ্দ ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা, যা সংশোধন করে সাড়ে ৭ লাখ কোটি টাকায় সীমিত রাখা হচ্ছে। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের মূল বাজেট বরাদ্দ ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা পরবর্তীকালে ৭ লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছিল। বিভিন্ন সূত্র মতে, আগামী অর্থবছরের (২০২৫-২০২৬) বাজেটের আকার হতে পারে ৮ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত আছে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ, যা আগামী বাজেটে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হতে পারে। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় বরাদ্দ আছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, আগামী অর্থবছরে এটা সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। বেতন-ভাতা বাবদ বর্তমান বছরের বাজেটে বরাদ্দ আছে ৮২ হাজার কোটি টাকা, যা আগামী বছর ৯০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হতে পারে। বৈদেশিক ঋণের সুদ বাবদ চলতি অর্থবছরে পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত আছে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য এ খাতে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। মূল্যস্ফীতির হার চলতি অর্থবছরের জন্য ৬ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারিত ছিল। আগামী অর্থবছরের জন্য এটা ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে।

রাজনৈতিক সরকারের আমলে দলীয় বিবেচনায় অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করা হতো। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনার পরিবর্তে বাস্তবতার নিরিখে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রতিবছর দেখা যায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় যেসব প্রকল্প গ্রহণ করা হয় তার বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয় এবং ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এ প্রবণতা রোধ করা দরকার। কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যদি নির্দিষ্ট সময়ে প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তার দায়ভার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকেই বহন করতে হবে। জনগণ কেন তার দায়ভার বহন করবে? প্রকল্প বিলম্বিত হওয়া এবং ব্যয়বৃদ্ধির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জরিমানা আকারে আদায় করা যেতে পারে।

আগামী অর্থবছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ না দিয়ে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত । ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা ফেরানো, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখা জরুরি। এ সময় অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা না থাকলে অর্থনীতিতে আরো নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কর পরিশোধিত আয় থেকে একজন ব্যক্তি ব্যাংকে টাকা জমা রাখলে মুনাফার ওপর ১০-১৫ শতাংশ কর কাটা হয়। আবার ব্যাংকের জমা স্থিতির ভিত্তিতে আবগরী শুল্ক কাটা হয়। এমনিতেই মানুষের সঞ্চয় সক্ষমতা কমেছে। আবার বিভিন্ন ভীতির কারণে অনেকে ব্যাংকে টাকা রাখতে চাইছেন না। এরকম অবস্থায় ৫/১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জমার ওপর আবগরী শুল্ক প্রত্যাহার এবং মুনাফার ওপর কর কমানো যেতে পারে। আগামী অর্থবছরের মূল্যস্ফীতি কমানোর দিকে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন । উচ্চ মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনায় নিয়ে করমুক্ত আয়সীমা অন্তত ৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা। যেখানে ভারতে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে কোনও কর দিতে হয় না।

শিক্ষা হচ্ছে একটি জাতির সবচেয়ে মূল্যবান ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ। শিক্ষা খাতের ওপর যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে অধীত শিক্ষার মানোন্নয়ন ঘটানো না গেলে কোনোদিনই টেকসই উন্নয়ন অর্জন করা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে সরকারি বরাদ্দ (জিডিপির অনুপাতে) গত ২০ বছর ধরে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্য সর্বনিম্ন। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতিবছরই বাজেটে শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেখানো হয়। কিন্তু সেখানে শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে। শিক্ষা খাতের সঙ্গে আরও দু-একটি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করে ব্যয় বরাদ্দ দেওয়া হয়। শিক্ষা খাতে বাজেটের বড় অংশই অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যয়িত হয়। ফলে শিক্ষা গবেষণা খাতের জন্য অর্থ সংকুলান করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ইউনেস্কোর মতে, একটি দেশের মোট জিডিপির অন্তত ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশে প্রতিবছর বাজেটে শিক্ষা খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তার পরিমাণ জিডিপির ২ শতাংশের কম। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যাতে গবেষণা কাজে বেশি অর্থ বরাদ্দ করা হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষায়িত অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেখানে সাধারণ বিষয়ও পড়ানো হচ্ছে। এতে শিক্ষার মানের অবনতি ঘটছে। দেশে বর্তমানে ৫৫টি সরকারি এবং ১১৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকেই আমাদের শিক্ষার মানের অবনতি ঘটতে শুরু করে। এখন তা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বিগত সরকারের আমলে শিক্ষার মানোন্নয়নের চেয়ে শিক্ষিতের হার বেশি দেখানোর প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। অনেকের ধারণা, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করার জন্য শিক্ষার মানের অবনতি ঘটানো হচ্ছে। বর্তমানে যারা উচ্চশিক্ষা অর্জন করছেন, তারা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে গুণগত মান নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষা খাতে প্রতিবছর যে বাজেট বরাদ্দ, এর কত অংশ গবেষণা খাতে ব্যয় করতে হবে, এটা নির্দিষ্ট করে দেওয়া যেতে পারে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা শুধু তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। শিক্ষার ওপর কর কোনোভাবেই কাম্য নয়; বরং সংবিধান পরিপন্থি। সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির ১৫তম অনুচ্ছেদে মৌলিক চাহিদা হিসেবে নাগরিকের জন্য শিক্ষা নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া কর আরোপিত হয় বাণিজ্যিক পণ্য বা সেবার ওপর। শিক্ষা প্রথমত পণ্য নয়। দ্বিতীয়ত, বেসরকারি উদ্যোগের উচ্চশিক্ষা কোনো বাণিজ্যিক তৎপরতাও নয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী ট্রাস্টের অধীন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত। ট্রাস্ট আইন ১৮৮২ অনুযায়ী ট্রাস্টের অধীন পরিচালিত হওয়ায় অলাভজনক প্রতিষ্ঠান করযোগ্য নয়। কোম্পানি আইন ১৯৯৪-এর আওতায় লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত মেডিকেল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সঙ্গে ট্রাস্ট আইনে অলাভজনক হিসেবে পরিচালিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর একই আওতায় সমভাবে আয়কর আরোপের প্রস্তাবনা আইনের পরিপন্থি এবং তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আরোপিত করের বোঝার সিংহভাগই শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে এসে পড়বে, এমনকি কর যদি সরাসরি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে না নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও নেওয়া হয়। দেশে ১১৫টি অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। বাড়তি করের চাপ একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের পরিবারের ওপর একটা অমানবিক বোঝা হয়ে দাঁড়াবে, অন্যদিকে দেশে উচ্চশিক্ষার প্রসারকে বাধাগ্রস্ত এবং নিরুৎসাহিত করবে।

বর্তমানে যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তাদের অধিকাংশেরই অবকাঠামো, গবেষনাগার,নিজস্ব শিক্ষকের স্বল্পতা রয়েছ ।সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দিয়ে থাকেন। এতে বেসরকারি ও সরকারি উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। এ প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনেকের মাঝেই শিক্ষা বিস্তারের চেয়ে ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হওয়ার প্রবণতা কাজ করে, এর অন্যতম কারণ আর্থীক স্বচ্ছলতা না থাকা ফলে বিশ্ববিদ্যালয়কে সাধারণ ব্যবসার মতো বিবেচনা করে থাকেন। কেউ যাতে বিশ্ববিদ্যালয়কে সাধারণ ব্যবসার মতো মনে করতে না পারেন, সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখতে হবে।

মানসম্পন্ন ও যুগোপযোগী কারিগরি শিক্ষাকে সহজলভ্য এবং যথাসম্ভব সাশ্রয়ী করতে হবে। দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টিতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ, প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বিদেশি বাংলাদেশের শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। অন্যদিকে, দক্ষতার অভাবে বাংলাদেশিরা চাকরি পাচ্ছে না। প্রয়োজনে পিপিপির মাধ্যমে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বেসরকারি খাত উপযোগী জনবলকে দক্ষ করে তুলতে হবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন খাতে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু কোন খাতে কোন ধরনের সংস্কার হবে, তার প্রভাব অর্থনীতি ও জনজীবনে কতটা পড়বে-সে সম্পর্কে কেউ ধারণা করতে পারছেন না। তাই সরকার তার মেয়াদে কোন কোন সংস্কার করতে আগ্রহী এবং তার সম্ভাব্য প্রভাব কি হবে, তা বাজেট বক্তব্যে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগে গতি নেই। ফলে বর্ধিত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। বিভিন্ন শিল্প কারখানা বন্ধের কারণে লাখো শ্রমিক বেকার হয়েছে। কর্মসংস্থান ও অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতে বাজেটে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া দরকার। কর ছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা ও জবাবদিহি থাকতে হবে। প্রতি করছাড়ের আদেশ এর সাথে কত রাজস্ব ক্ষতি হলো তার একটা প্রাক্কলন দেওয়া।

বাজেট কাঠামো, বরাদ্দ এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। বাজেটকে একটি উদ্ভাবনী এবং ব্যবসা-বান্ধব করার আকাঙ্ক্ষা সরকারের থাকলেও শেষ মুহূর্তের বিভিন্ন কারনে বিচ্যুতি ঘটে। যারফলে অনেক হতাশার সাথে, এটি কেবল সংখ্যার সমন্বয় সাধনের একটি এলোমেলো অনুশীলনে পরিণত হয়। সন্দেহ নাই আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট নানা কারণেই ভিন্নতর হবে। এবার বাজেট জনবান্ধব,জাতীয় স্বার্থ সামাজিক উন্নয়ন ও মূল্যস্ফীতি প্রাধান্য পাবে, এটাই প্রত্যাশিত।

লেখক: ড. ইসরাত জাহান, অধ্যাপক এবং ডীন ব্যবসায় প্রশাসন সাউর্দান ইউনির্ভাসিটি

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

শেষ যত্ন!

Published

on

শেয়ারহোল্ডার

আমার শ্বশুর আন্তোনিও বার্সেলো ৭৯ বছর বয়সে এক কঠিন জীবনের সন্ধিক্ষণে পৌঁছেছিলেন। তিনি বাবা ছিলেন, স্বামী ছিলেন, নানা ছিলেন—আর শেষ সময়ে ছিলেন একজন অসুস্থ, ভীষণ দুর্বল মানুষ, যিনি একাধিক জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি ছিলেন স্টকহোমের সেন্ট জর্জান হাসপাতালের হৃদ্‌রোগ বিভাগে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এক অসহনীয় ভার
আন্তোনিওর শরীরে দীর্ঘদিন ধরেই একসঙ্গে বাসা বেঁধেছিল বেশ কয়েকটি কঠিন রোগ: হৃদ্‌যন্ত্রে পেসমেকার, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ওজন (মোটা), হৃদ্‌রোগ (হার্ট ফেইলিউর), কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস (রেনাল ফেলিওর)। এই জটিলতা তাঁকে করে তুলেছিল সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের একজন। বার্ধক্য ও এই রোগগুলোর সংমিশ্রণে তাঁর শরীর ক্রমাগত ভেঙে পড়ছিল।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

কেন এত ভয়াবহ?
৭৯ বছর বয়সী এক দেহ সহজে সেরে ওঠে না, বিশেষ করে পানি-লবণের ভারসাম্য বা সংক্রমণের মতো জটিলতায়। ডায়াবেটিস কিডনি ও হৃদ্‌যন্ত্রকে আরও দুর্বল করে, ফুসফুসের ওপর বাড়তি চাপ ফেলে মোটা শরীর। আর যখন হার্ট ও কিডনি উভয়ই দুর্বল হয়, তখন এক অশুভ চক্র শুরু হয়—যেখানে পানি জমে শরীরে, নিঃশ্বাসে কষ্ট হয়, হৃদ্‌পিণ্ড আরও দুর্বল হয়। এই ধরনের রোগীদের মধ্যে এক বছরের মধ্যে মৃত্যুর হার ৪০–৫০% পর্যন্ত। মুখ শুকিয়ে যাওয়া—একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

চিকিৎসার এক পর্যায়ে আন্তোনিওর মুখ একেবারে শুকিয়ে গিয়েছিল। এই ছোট বিষয়টি ছিল আসলে গভীর সংকটের প্রতিচ্ছবি। এর পেছনে ছিল— পানির পরিমাণে কঠোর নিয়ন্ত্রণ, কিডনি বিকল হয়ে যাওয়া, ইউরেমিয়া (রক্তে বিষাক্ত পদার্থ জমে যাওয়া), ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

মুখের শুষ্কতা থেকে তৈরি হয় বিভ্রান্তি, বমি ভাব, অসহ্য দুর্বলতা। শরীর যখন আর সামলাতে পারে না, তখন এই সামান্য লক্ষণগুলো হয়ে ওঠে জীবন-মৃত্যুর পূর্বাভাস। যখন চিকিৎসা থেমে যায়… চিকিৎসকেরা একপর্যায়ে জানিয়ে দিলেন—আন্তোনিওর শরীর আর কোনও আগ্রাসী চিকিৎসা নিতে পারবে না। হয়তো তাঁর দেহ এখন আর সহ্য করতে পারবে না নতুন চিকিৎসা, কিংবা এসব চিকিৎসার সম্ভাব্য ক্ষতি এর উপকারকে ছাপিয়ে যাচ্ছে।

এমন সিদ্ধান্ত কয়েকটি জিনিস নির্দেশ করে:
১. চিকিৎসার দৃষ্টিভঙ্গি এখন প্রশমনে (palliative care)। লক্ষ্য এখন যন্ত্রণানাশ, শ্বাসকষ্ট, উদ্বেগ আর মুখের শুষ্কতা প্রশমিত করা—জীবন টেনে দীর্ঘ করার জন্য নয়। ২.কিছু চিকিৎসা ক্ষতিকরও হতে পারে। যেমন ডায়ালাইসিস বা শক্তিশালী ওষুধ—যা দুর্বল দেহে আরও ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। ৩. রোগীর ইচ্ছাকেও সম্মান দেওয়া হয়। সম্ভবত আন্তোনিও নিজেই বলেছিলেন—আর নয়, এবার শুধু শান্তি চাই।

আমাদের, প্রিয়জনদের করণীয় কী?
এই অসহায়তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। কিন্তু কিছু জিনিস আছে, যা আমাদের হাতেই— ১. উপস্থিতি। একটি উষ্ণ হাত, একটুখানি ছবি, চেনা কণ্ঠ—এগুলো জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে অমূল্য। ২. প্রশ্ন করা। চিকিৎসা কোন পর্যায়ে? প্রশমনের বাইরে কিছু কি আর করা সম্ভব নয়? আর কত সময় আছে আমাদের হাতে? ৩. পরস্পরের পাশে থাকা। একজনের কাঁধে ভর দিয়ে আরেকজন এগোতে পারে। হয়তো কাউন্সেলরের দরজায়ও কড়া নাড়তে হতে পারে। ৪. সম্মান বজায় রাখা। মুখের পরিচর্যা, আরামদায়ক পরিবেশ, পছন্দের সংগীত—এ সবই জীবন শেষ হওয়ার আগের মুহূর্তগুলোকে অর্থবহ করে তোলে। এক নিঃশব্দ সংগ্রাম, এক মর্যাদাপূর্ণ বিদায়।

আমরা চাই না আমাদের প্রিয়জন কষ্টে থাকুক। আমরা পাশে থাকতে চাই, বুঝতে চাই, জড়িয়ে ধরতে চাই শেষ মুহূর্তে। জীবন যদি আর রক্ষা করা না যায়, সম্মান অন্তত যেন রক্ষা পাই।

আমরা এই লেখা লিখছি তাঁদের জন্য—যাঁরা এমন বাস্তবতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, কিংবা যাবে। এইসব কথা সাধারণত বলা হয় না, অথচ বলা দরকার। প্রতিটি রোগাক্রান্ত শরীরের ভেতরে বাস করে একজন মানুষ। একজন বাবা, একজন জীবনযোদ্ধা, একজন প্রিয়জন। আর পাশে থাকি আমরা—জেগে থাকি, ভালোবাসি, বিদায় জানাই।

এপিলগ: আন্তোনিও বার্সেলো (১৯৪৬–২০২৫) স্পেনের ভ্যালেন্সিয়া থেকে মাত্র ১৬ বছর বয়সে সুইডেনে আসেন আন্তোনিও। কেটিএইচ থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে জীবনের অনেকটা সময় দিয়েছেন খাদ্যশিল্পে। স্ত্রী ছিলেন বিরগিত লিন্ড বার্সেলো, যিনি কোভিড-১৯-এ মারা যান ২০২০ সালে। আন্তোনিও বার্সেলো ৮ মে ২০২৫, দুপুর ২টায় স্টকহোমের ’St. Göran’ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

মা দিবসে মা নেই, আছে শুধু স্মৃতি

Published

on

শেয়ারহোল্ডার

আলো নিজে কোনো ছায়া সৃষ্টি করে না। কারণ সে আলো—সে শুধু দেখায়, জাগিয়ে তোলে, প্রাণের আভায় আমাদের বিস্মিত করে। অথচ অন্ধকার ছাড়া আলোও বুঝে ওঠা যায় না। তেমনি, ভালোবাসা শুধু মিলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়—বিরহেও জন্ম নেয় এক অনির্বচনীয়, গভীর ভালোবাসা।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আজ মা দিবস। চারপাশে ফুল, ছবি আর ভালোবাসার উচ্ছ্বাসে মুখর চারপাশ। অথচ আমার দিনটা যেন এক অদৃশ্য নিস্তব্ধতায় মোড়ানো। কারণ আমার মা আর এই পৃথিবীতে নেই। আছেন শুধু স্মৃতি হয়ে—আর কিছু এমন অভিজ্ঞতা হয়ে, যা আজও হৃদয়ের গভীরে গাঁথা, যা কোনোদিন মুছে যাওয়ার নয়।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

প্রায় ২৫ বছর আগের এক হজযাত্রা আজও আমার জীবনকে নাড়িয়ে দেয়। বাবা-মা তখন সুইডেনে থাকতেন। দু’জনই সুস্থ ছিলেন মোটামুটি, যদিও বাবার মাঝে মাঝে অ্যাজমার সমস্যা দেখা দিত। সে বছর কোরবানির ঈদের আগে তাঁরা বাংলাদেশে যান, সেখান থেকে হজের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব। আমি ছিলাম সুইডেনে, কিন্তু মন পড়ে ছিল তাঁদের সাথেই।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

মক্কায় পৌঁছানোর কিছুদিনের মধ্যেই হোটেল থেকে এক পাকিস্তানি চিকিৎসকের ফোন। জানালেন, বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন—সম্ভবত অ্যাজমার ওষুধটি সঙ্গে না নেওয়ায় শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে। সুইডেন থেকে কীভাবে সাহায্য করা যায়? তিনি জানান, হজ মৌসুমে অনেক হাফেজ মক্কায় আসেন যারা তীর্থযাত্রীদের সহায়তা করেন।

আমি সঙ্গে সঙ্গে রিয়াদে থাকা আমার খালাতো ভাইয়ের ছেলে রিপনকে ফোন করি। রিপনের সহায়তায় দ্রুতই দুইজন হাফেজের ব্যবস্থা হয়, যাঁরা বাবা-মাকে হুইলচেয়ারে করে হজের প্রতিটি আনুষ্ঠানিকতায় সহায়তা করেন। আমি জানতাম, বাবার কোন ওষুধ প্রয়োজন, চিকিৎসককে তা জানাতেই তিনি ব্যবস্থা করে দিলেন। ধীরে ধীরে বাবা সুস্থ হয়ে উঠলেন।

সেই মুহূর্ত থেকে হোটেল ম্যানেজার, চিকিৎসক, দুই হাফেজ এবং বাবা-মার সঙ্গে আমার এক অবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ তৈরি হয়। প্রতিদিন ফোনে জানতাম—আজ কী করলেন, কোথায় গেলেন, শরীর কেমন লাগছে।

উট কোরবানি, পাথর নিক্ষেপ, আরাফাতের ময়দানে অবস্থান, চুল কাটা, মক্কা থেকে মদিনায় যাত্রা, কবর জিয়ারত—সবকিছুর প্রতিটি পর্ব যেন আমি দূর থেকেই তাঁদের পাশে থেকে অনুভব করেছিলাম। বাস্তবে ছিলাম সুইডেনে, কিন্তু হৃদয়ে, আত্মায় আমি তখন মক্কা-মদিনাতেই।

বাবা হজের নিয়মমাফিক চুল কাটালেন। মা চুল কাটাননি, কিন্তু কণ্ঠে ছিল সেই প্রশান্তির ঢেউ—যেন জানিয়ে দিলেন, ‘হজ্জ পালনে সকল রকম কাজ সম্পন্ন হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।’ সেই কণ্ঠস্বরের স্নিগ্ধতা আজও কানে বাজে।

তখনই প্রথমবারের মতো বুঝেছিলাম—ভালোবাসা মানে শুধু একসাথে পথচলা নয়, বরং হৃদয়ে হৃদয়ে গভীরভাবে যুক্ত থাকা। তখনও ভাবিনি, এই ভ্রমণ আমাদের একসাথে শেষ ভ্রমণ হবে। বহুবার তাঁদের সঙ্গে আমি ভ্রমণ করেছি। কিন্তু এই হজের যাত্রাটি ছিল একেবারে ভিন্ন—এটা ছিল শুধু শারীরিক ভ্রমণ নয়, এক আত্মিক অভিষেক।

এরপর সময় এসেছে, যখন আর কোনোদিন মা-বাবাকে একসঙ্গে নিয়ে কোথাও যাওয়া সম্ভব হয়নি। সেই হজের মতো করে আর কখনোই আমরা একসাথে মিলিত হতে পারিনি। কিছু ভ্রমণ জীবন বদলে দেয়। আর কিছু ভ্রমণ… চিরতরে বিদায় দেয়।

আজ মা দিবসে সেই মায়ের কথা মনে পড়ে, যার কণ্ঠে ছিল কাবা ঘরের প্রশান্তি, যার গলায় ছিল এক নিঃশব্দ সন্তুষ্টি—‘সব হয়েছে, আল্লাহর রহমতে।’ আজ আর মা নেই। নেই সেই চিরচেনা ফোন, চোখ, হাসি—তবু স্মৃতির আলোয় তিনি জেগে আছেন, এক অদৃশ্য দীপ্ত আলো হয়ে।

আজ আমি আর ফোন করে জিজ্ঞেস করতে পারি না—‘মা, তুমি কেমন আছো?’ তবে মাঝেমাঝেই আমি লিনশোপিং যাই—স্টকহোম থেকে দুই ঘণ্টার গাড়ি পথ—মায়ের কবর জিয়ারতে। সেই নীরব গোরস্থানে দাঁড়িয়ে আমি খুঁজি সেই চিঠিমুখি কণ্ঠ, যেখানে ভালোবাসা শব্দে শব্দে ফোটে। আমি ফিরে যেতে চাই সেই মুহূর্তে, যেখানে সুইডেন থেকে ফোন করে মক্কাকে ছুঁয়ে ছিলাম।

আলো যেমন শেষ হয় না, তেমনি মায়াও শেষ হয় না। তারা শুধু রূপান্তরিত হয়—ভিন্ন রূপে, ভিন্ন আলোয়। আজ মা নেই, কিন্তু তিনি আছেন আমার প্রতিটি দোয়ায়, প্রতিটি নিঃশ্বাসে। আর ভালোবাসা? সে তো রয়ে গেছে চিরকাল—আলো হয়ে, স্মৃতির সেই হজযাত্রা হয়ে।

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ: প্রশ্ন, গোপনীয়তা ও জনআস্থার সংকট

Published

on

শেয়ারহোল্ডার

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ও অস্পষ্টতা বিদ্যমান, যার কেন্দ্রে রয়েছে কিছু মৌলিক প্রশ্ন—যেগুলোর উত্তর না পাওয়া মানে জাতির সামনে একটি অন্ধকার পথ খোলা রাখা। জনমনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে: কোথায় দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, এবং কে বা কারা এখন প্রকৃত ক্ষমতার মালিক?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

গণআন্দোলনের মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক পর্বের অবসান ঘটলেও, নীতিনির্ধারকদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি জনগণের মধ্যে এক ধরনের অবিশ্বাস ও হতাশার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে সেনাপ্রধান এবং সংশ্লিষ্ট সামরিক নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে যেভাবে নীরবতা বজায় রাখা হয়েছে, তা শুধু দুঃখজনক নয়, বরং তা রাষ্ট্রব্যবস্থার ওপর আস্থা হারানোর অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

শেখ হাসিনার ‘সেফ এক্সিট’ ইস্যু, কিছু রাজনৈতিক নেতার দেশত্যাগে সেনা ক্যান্টনমেন্টের সম্ভাব্য সংশ্লিষ্টতা, এবং পরবর্তীতে ভারতের সঙ্গে কৃত্রিম উত্তেজনা তৈরি—সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, একটি অদৃশ্য ও অগোচর ক্ষমতাকাঠামো বাংলাদেশকে একটি নির্দিষ্ট পথে নিয়ে যেতে চায়, যেখানে গণতন্ত্রের চেয়ে “নিয়ন্ত্রিত স্থিতিশীলতা”কেই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো, জাতির সামনে এই গোপন অধ্যায়গুলোর সত্য প্রকাশ করা। সত্যকে প্রকাশ্যে না আনলে ইতিহাসে যেমন বিভ্রান্তি তৈরি হয়, তেমনি জনগণের আস্থাও স্থায়ীভাবে ক্ষুণ্ন হয়। ড. ইউনূসের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের নীরবতা বা ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। যেখানে তিনিই বহুবার গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলেছেন, সেখানে এই সন্ধিক্ষণে তার সক্রিয়তার অভাব বিস্ময়ের উদ্রেক করে।

নির্বাচন প্রশ্নে কিংবা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার ক্ষেত্রে শীর্ষ নেতৃত্বের যে অনীহা বা নিরবতা দেখা যাচ্ছে, তা কেবলমাত্র রাজনৈতিক সংকট নয়—এটি একটি রাষ্ট্রীয় নৈতিকতার সংকটও। জনগণ এখন এমন এক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে, যেখানে প্রশ্ন করা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহের সমান; অথচ প্রশ্নের উত্তর না পেলে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎই অনিশ্চিত।

সুতরাং, এখন সময় এসেছে একটি নিরপেক্ষ, শক্তিশালী এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত তদন্ত কমিশন গঠনের—যা সেনাপ্রধান, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং বিদেশি সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কিত যাবতীয় গোপন অধ্যায় জনসমক্ষে প্রকাশ করবে। একইসাথে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা ও গণমাধ্যমের স্বাধীন অভিমত প্রকাশের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

এই জাতি অনেক কিছু সহ্য করেছে, এখন সে প্রশ্ন করছে। প্রশ্নের উত্তর না দিলে ইতিহাস নিজেই একদিন তার বিচার করবে। তবে এখানে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করলেই চলবে না—দাবি করতে হবে জোর গলায়। তাই আজ সময় এসেছে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রত্যাশা ও জবাবদিহির মুখোমুখি করার।

প্রথমত, সেনাপ্রধান ও সংশ্লিষ্ট সামরিক নেতৃত্বের গোপন তৎপরতা আদৌ কি তাদের সাংবিধানিক দায়িত্বের পরিসরের মধ্যে পড়ে? যদি পড়ে না থাকে, তবে এই বিষয়ে স্পষ্ট তদন্ত হওয়া প্রয়োজন—স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করে, যা কেবল সামরিক নয়, বেসামরিক পর্যায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হবে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী হিসেবে রাষ্ট্রপতির ভূমিকাও এখানে প্রশ্নবিদ্ধ। সংবিধান অনুযায়ী তিনিই সামরিক বাহিনীর প্রধান, তাহলে এই “গোপন রাষ্ট্রচালনা”র দায়ভার থেকে কি তিনি মুক্ত? তার কাছ থেকে কি কোনো জবাবদিহি আশা করতে পারি?

দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক দলগুলোর নিরবতা কী নির্দেশ করে? এটি কি ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার কৌশলগত প্রতিযোগিতা, না তারা আদৌ জানে না কীভাবে জনগণের পক্ষ নিতে হয়? একথা ভুলে গেলে চলবে না, রাজনীতি যদি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, তবে তা দখল হয়ে যায় অদৃশ্য শক্তির হাতে। আজ জনগণ এই রাজনৈতিক নেতাদের কাছে জবাব চায়—তাদের ভূমিকা কি ছিলো, কোথায় তারা দাঁড়িয়ে আছেন?

তৃতীয়ত, জনগণের কী কিছুই বলার নেই? এই রাষ্ট্র তো তাদেরই; এই ভূখণ্ড, এই সংবিধান, এই পতাকা—সবই জনগণের। তাহলে কেন তারা শুধুই দর্শক হয়ে থাকবে? আমাদের দাবি করতে হবে—স্বাধীন বিচারব্যবস্থা, সেনাবাহিনীর সাংবিধানিক অবস্থান পুনর্ব্যাখ্যা, রাজনৈতিক দলের জবাবদিহিতা এবং রাষ্ট্রপতির স্পষ্ট অবস্থান।

আমাদের দাবি স্পষ্ট:
১. একটি নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন হোক—যা সেনা নেতৃত্ব, শেখ হাসিনার সেফ এক্সিট, ভারতের ভূমিকা ও রাজনৈতিক দলের নিরবতা বিষয়গুলো পর্যালোচনা করবে।
২. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা ও পুনঃগঠন।
৩. রাষ্ট্রপতির একটি প্রকাশ্য বিবৃতি, যাতে তিনি তার অবস্থান পরিষ্কার করবেন—গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে তিনি দাঁড়ান, না নীরব প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে থাকবেন।
৪. রাজনৈতিক দলগুলোর যৌথ সংবাদ সম্মেলন ও অবস্থান স্পষ্ট করা।
৫. জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ—শান্তিপূর্ণভাবে, কিন্তু দৃঢ়তার সাথে—জনসভা, গণশুনানি, এবং তথ্যের দাবিতে সোচ্চার হতে হবে।

শেষ কথা, ইতিহাস অপেক্ষা করে না। যারা আজ নীরব থাকবেন, কাল ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াবেন। আর যারা আজ প্রশ্ন করছেন, তারা আগামীর ভিত্তি নির্মাণ করছেন।

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

পুঁজিবাজারের সর্বশেষ

শেয়ারহোল্ডার শেয়ারহোল্ডার
পুঁজিবাজার16 hours ago

শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেবে না ফিনিক্স ফাইন্যান্স

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফিনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড গত ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত...

শেয়ারহোল্ডার শেয়ারহোল্ডার
পুঁজিবাজার19 hours ago

ব্র্যাক ব্যাংকের ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন করা হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।...

শেয়ারহোল্ডার শেয়ারহোল্ডার
পুঁজিবাজার19 hours ago

এবি ব্যাংকের পর্ষদ সভার নতুন তারিখ ঘোষণা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এবি ব্যাংক পিএলসি পর্ষদ সভার নতুন তারিখ ঘোষণা করেছে। আগামী ৩১ মে, সন্ধ্যা ৬টায় কোম্পানিটির পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত...

শেয়ারহোল্ডার শেয়ারহোল্ডার
পুঁজিবাজার20 hours ago

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ সভার নতুন তারিখ ঘোষণা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি পর্ষদ সভার নতুন তারিখ ঘোষণা করেছে। আগামী ২৯ মে, দুপুর ২টা ৪৫মিনিটে কোম্পানিটির পর্ষদ...

শেয়ারহোল্ডার শেয়ারহোল্ডার
পুঁজিবাজার20 hours ago

এনআরবি ব্যাংকের পর্ষদ সভার নতুন তারিখ ঘোষণা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এনআরবি ব্যাংক পিএলসি পর্ষদ সভার নতুন তারিখ ঘোষণা করেছে। আগামী ২৯ মে দুপুর ২টা ৩০মিনিটে কোম্পানিটির পর্ষদ সভা...

শেয়ারহোল্ডার শেয়ারহোল্ডার
পুঁজিবাজার20 hours ago

ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের সর্বোচ্চ দরপতন

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯১ কোম্পানির মধ্যে ২০০টি কোম্পানির শেয়ার কমেছে। এদিন দরপতনের শীর্ষে...

শেয়ারহোল্ডার শেয়ারহোল্ডার
পুঁজিবাজার21 hours ago

দর বৃদ্ধির শীর্ষে সোনারগাঁও টেক্সটাইল

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯১ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১৪টির শেয়ারদর বেড়েছে। এর...

Advertisement
AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সোশ্যাল মিডিয়া

তারিখ অনুযায়ী সংবাদ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০
১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭৩০৩১
শেয়ারহোল্ডার
জাতীয়4 minutes ago

সৌদি পৌঁছেছেন ৫৪ হাজার ৪৯৭ হজযাত্রী

শেয়ারহোল্ডার
রাজনীতি18 minutes ago

জুলাইয়ের বিদ্রোহের পর গত রাতটি ছিল সবচেয়ে কঠিন: তাসনিম জারা

শেয়ারহোল্ডার
জাতীয়50 minutes ago

প্রবাসীসহ তিন ছকে বিভক্ত হচ্ছে এনআইডি সেবা

শেয়ারহোল্ডার
অন্যান্য1 hour ago

বর্ণাঢ্য আয়োজনে পর্দা উঠলো বালার বাজার গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের

শেয়ারহোল্ডার
আন্তর্জাতিক1 hour ago

লন্ডনে সালমান এফ রহমানের ছেলে শায়ানের সম্পত্তি জব্দ

শেয়ারহোল্ডার
জাতীয়2 hours ago

ঈদযাত্রা: ২ জুনের ট্রেন টিকিট বিক্রি শুরু

শেয়ারহোল্ডার
আবহাওয়া2 hours ago

দুপুরের মধ্যে ৭ অঞ্চলে ঝড়ের আভাস

শেয়ারহোল্ডার
অর্থনীতি2 hours ago

দৈনিকভিত্তিক শ্রমিকদের মজুরি বাড়ালো সরকার

শেয়ারহোল্ডার
জাতীয়12 hours ago

ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নেওয়া সেই ৬২৬ জনের তালিকা প্রকাশ

শেয়ারহোল্ডার
অর্থনীতি12 hours ago

দেশের রিজার্ভ আরও বাড়ল

শেয়ারহোল্ডার
জাতীয়4 minutes ago

সৌদি পৌঁছেছেন ৫৪ হাজার ৪৯৭ হজযাত্রী

শেয়ারহোল্ডার
রাজনীতি18 minutes ago

জুলাইয়ের বিদ্রোহের পর গত রাতটি ছিল সবচেয়ে কঠিন: তাসনিম জারা

শেয়ারহোল্ডার
জাতীয়50 minutes ago

প্রবাসীসহ তিন ছকে বিভক্ত হচ্ছে এনআইডি সেবা

শেয়ারহোল্ডার
অন্যান্য1 hour ago

বর্ণাঢ্য আয়োজনে পর্দা উঠলো বালার বাজার গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের

শেয়ারহোল্ডার
আন্তর্জাতিক1 hour ago

লন্ডনে সালমান এফ রহমানের ছেলে শায়ানের সম্পত্তি জব্দ

শেয়ারহোল্ডার
জাতীয়2 hours ago

ঈদযাত্রা: ২ জুনের ট্রেন টিকিট বিক্রি শুরু

শেয়ারহোল্ডার
আবহাওয়া2 hours ago

দুপুরের মধ্যে ৭ অঞ্চলে ঝড়ের আভাস

শেয়ারহোল্ডার
অর্থনীতি2 hours ago

দৈনিকভিত্তিক শ্রমিকদের মজুরি বাড়ালো সরকার

শেয়ারহোল্ডার
জাতীয়12 hours ago

ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নেওয়া সেই ৬২৬ জনের তালিকা প্রকাশ

শেয়ারহোল্ডার
অর্থনীতি12 hours ago

দেশের রিজার্ভ আরও বাড়ল

শেয়ারহোল্ডার
জাতীয়4 minutes ago

সৌদি পৌঁছেছেন ৫৪ হাজার ৪৯৭ হজযাত্রী

শেয়ারহোল্ডার
রাজনীতি18 minutes ago

জুলাইয়ের বিদ্রোহের পর গত রাতটি ছিল সবচেয়ে কঠিন: তাসনিম জারা

শেয়ারহোল্ডার
জাতীয়50 minutes ago

প্রবাসীসহ তিন ছকে বিভক্ত হচ্ছে এনআইডি সেবা

শেয়ারহোল্ডার
অন্যান্য1 hour ago

বর্ণাঢ্য আয়োজনে পর্দা উঠলো বালার বাজার গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের

শেয়ারহোল্ডার
আন্তর্জাতিক1 hour ago

লন্ডনে সালমান এফ রহমানের ছেলে শায়ানের সম্পত্তি জব্দ

শেয়ারহোল্ডার
জাতীয়2 hours ago

ঈদযাত্রা: ২ জুনের ট্রেন টিকিট বিক্রি শুরু

শেয়ারহোল্ডার
আবহাওয়া2 hours ago

দুপুরের মধ্যে ৭ অঞ্চলে ঝড়ের আভাস

শেয়ারহোল্ডার
অর্থনীতি2 hours ago

দৈনিকভিত্তিক শ্রমিকদের মজুরি বাড়ালো সরকার

শেয়ারহোল্ডার
জাতীয়12 hours ago

ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নেওয়া সেই ৬২৬ জনের তালিকা প্রকাশ

শেয়ারহোল্ডার
অর্থনীতি12 hours ago

দেশের রিজার্ভ আরও বাড়ল