অর্থনীতি
চীনের কাছে এক বিলিয়ন ডলার ঋণ চায় বাংলাদেশ

বাংলাদেশের আইসিটি ও টেলিকম খাতে যাতে চীন সরকার ও কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ বাড়ে, তা নিশ্চিত করতে চীন-বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। এছাড়া এসব খাতে ছয়টি প্রকল্পে চীনের কাছে নতুন করে আরও এক বিলিয়ন ডলার চেয়েছে বাংলাদেশ।
আজ বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সচিবালয়ে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ কথা জানান ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
তিনি বলেন, গত ১০ বছরে আমরা লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে মোট পাঁচটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। আমরা এখন ১ লাখ ৯ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ভূমি অফিস, কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক, প্রাইমারি স্কুল, হাই স্কুল ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবলের আওতায় সংযুক্ত করছি। তাছাড়া ৫৫৫টি স্মার্ট এমপ্লয়মেন্ট ট্রেনিং সেন্টার করছি। পাশাপাশি পূর্বাচলে একটি ৪১ তলা স্মার্ট টাওয়ার করছি। এসবগুলোই ইডিসি (চীনের ঋণ) প্রজেক্টের আওতায় হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) যে মডানাইজেশন অব টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক, টেলিটকের ফোরজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং এস্টাবলিশমেন্ট অব ডেটা সেন্টার রয়েছে, এগুলো ৬ প্রজেক্টের আওতায় গত ১০ বছরে এক বিলিয়ন ডলার আমরা চাইনিজ লাইন অব ক্রেডিট থেকে ব্যবহার করেছি। সেখান থেকে আয় করে আমরা এখন ঋণ ফেরতও দিচ্ছি।
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভিশন-২০৪১ হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সেই স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি পিলার- স্মার্ট সিটিজেন, ইকোনমি, গভার্নমেন্ট এবং সোসাইটি; সেখানে আমরা চাইনিজ সরকার, চাইনিজ এক্সিম ব্যাংক এবং চাইনিজ বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানির বিনিয়োগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করছি।
সেখানে ৬টি প্রজেক্ট ইআরডির মাধ্যমে চাইনিজ সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মডানাইজেশন অব আরবান অ্যান্ড রুরাল লাইফ হচ্ছে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প। তাছাড়া টেলিটকের ফোরজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ প্রকল্প ও আমাদের বিটিসিএল টেলিফোন শিল্প সংস্থা এবং কম্পিউটার কাউন্সিলের আরও প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের লাইন অব ক্রেডিট চেয়ে ছয়টি প্রজেক্ট আমরা জমা দিয়েছি।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য রাজনৈতিক কূটনীতি না, বরং অর্থনৈতিক কূটনীতি। আমরা চাচ্ছি, চীন-বাংলাদেশের বন্ধুত্বের যে ৫০ বছর, তা ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে চাইনিজ সরকার এবং চাইনিজ কোম্পানিগুলো যাতে আইসিটি এবং টেলিকমকে তাদের বিনিয়োগের একটি সর্বোত্তম জায়গায় হিসেবে চিহ্নিত করে। এজন্য আমরা বাংলাদেশ-চায়না ইনভেস্টমেন্ট সামিট করব। সেটির ব্যাপারেও কথা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি স্মার্ট ইকোনোমি এবং ইনভেস্টমেন্ট পার্টনারশিপ স্ট্রাটেজিক এমওইউ করব। সেখানে আমাদের চারটি লক্ষ্য আছে- রফতানি আয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং গবেষণা ও উদ্ভাবন। এই চারটি অঞ্চলে বাংলাদেশ ও চীন একসঙ্গে কাজ করবে।’

অর্থনীতি
ব্যাংকে কোটিপতির সংখ্যায় নতুন রেকর্ড

দেশের ব্যাংক খাতে কোটি টাকার বেশি জমা থাকা হিসাবের সংখ্যায় রেকর্ড গড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের মার্চ শেষে এই ধরনের হিসাবের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২১ হাজার ৩৬২টি। জুন শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৩৬টিতে। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৯৭৪টি কোটিপতি হিসাব।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোটি টাকার হিসাব মানেই সব সময় কোনো ব্যক্তি কোটিপতি—এমনটি নয়। অনেক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংস্থা এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও কোটি টাকার বেশি অর্থ ব্যাংকে জমা রাখে। তাছাড়া, একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান একাধিক ব্যাংক হিসাব খুলতে পারেন, ফলে একই ব্যক্তির নামে একাধিক কোটিপতি হিসাব থাকতে পারে। কোটিপতি হিসাব বৃদ্ধির এই প্রবণতা নতুন নয়।
এদিকে, মার্চ শেষে সব হিসাব মিলিয়ে মোট আমানত ছিল ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা। জুন শেষে তা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৯৬ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকায়। তিন মাসে আমানত বেড়েছে প্রায় ৭৩ হাজার ৭৫ কোটি টাকা।
এই সময়ের মধ্যে দেশে ব্যাংক হিসাবের মোট সংখ্যা ১৬ কোটি ৫৭ লাখ ৬৮ হাজার ৮২১টি থেকে বেড়ে হয়েছে ১৬ কোটি ৯০ লাখ ২ হাজার ৬৭১টি। অর্থাৎ, নতুনভাবে প্রায় ৩২ লাখ ৯৫ হাজার ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে। একই সময়ে ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণও বেড়েছে।
বিশেষভাবে লক্ষ্য করার বিষয় হলো, কোটি টাকার বেশি জমা থাকা হিসাবগুলোতে জমার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। মার্চ শেষে এসব হিসাবে মোট জমা ছিল ৭ লাখ ৮৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা, যা জুন শেষে দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৮০ হাজার ৭৭২ কোটি টাকায়। অর্থাৎ তিন মাসে কোটিপতি হিসাবগুলোতে জমা বেড়েছে প্রায় ৯৭ হাজার ১১৯ কোটি টাকা।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে মাত্র ৫টি কোটি টাকার হিসাব ছিল। ১৯৭৫ সালে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৭টিতে, ১৯৮০ সালে হয় ৯৮টি। এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকে।
১৯৯০ সালে ছিল ৯৪৩টি কোটি টাকার হিসাব ছিল। ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২টি এবং ২০০৮ সালে বেড়ে হয় ১৯ হাজার ১৬৩টি। ২০২০ সালের শেষে কোটিপতি হিসাব দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৮৯০টিতে। এরপর ২০২১ সালে তা বেড়ে হয় ১ লাখ ৯ হাজার ৭৬টি, ২০২২ সালে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০২৩ সালে দাঁড়ায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টিতে। ২০২৪ সালের শেষে হিসাবের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২১ হাজার ৮১টি, যা ২০২৫ সালের মার্চে দাঁড়ায় ১ লাখ ২১ হাজার ৩৬২টিতে এবং জুনে এসে পৌঁছায় ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৩৬টিতে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ব্যাংক খাতে কোটিপতি হিসাব বাড়ার বিষয়টি দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। এটি ব্যবসা-বাণিজ্যে টাকার প্রবাহ এবং জনগণের আমানত রাখার সক্ষমতা বৃদ্ধিকে নির্দেশ করে।
অর্থনীতি
১৩ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা

চলতি মাস সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৩ দিনে দেশে ১৩০ কোটি ৬০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ১৩ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩০ কোটি ৬০ লাখ ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের (২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের ৬ দিন) চেয়ে ১৫ কোটি ৬০ ডলার বেশি।
বিদায়ী বছরের একই সময়ে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছিলেন ১১৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স।
চলতি অর্থবছরের (২০২৫-২৬) প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ ১০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা।
এ ছাড়া সদ্য বিদায়ী আগস্টে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার বা ২৯ হাজার ৫৪৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
অর্থনীতি
ডিজিটাল লেনদেনে দুর্নীতি-অর্থপাচার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব: গভর্নর

ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমে দুর্নীতি ও অর্থপাচার কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেছেন, স্বচ্ছ লেনদেন ব্যবস্থায় অপচয় কমবে, সাশ্রয় হবে সময়ের আর জনগণের ভোগান্তিও হ্রাস পাবে।
আজ সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে মোবাইল অপারেটরদের আন্তঃব্যাংকিং লেনদেন বিষয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
গভর্নর বলেন, লেনদেনের নানা ডিজিটাল প্রক্রিয়া চালু হলেও ব্যাংকিং খাতে প্রতিবছর নগদ অর্থের চাহিদা ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। এটি অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদে চাপ তৈরি করছে। নগদ অর্থ ব্যবস্থাপনায় সরকারের প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। তাই আমরা এমন একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফরম গড়ে তুলতে চাই, যেখানে রিকশাচালক থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী-কেউ বাদ যাবে না।
তিনি আরও বলেন, সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিতে নগদবিহীন অর্থনীতিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। এ জন্য ব্যাংক, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ও বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বিত লেনদেন ব্যবস্থা চালুর কাজ চলছে।
অর্থনীতি
চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন মাশুল কার্যকর, গড়ে খরচ বাড়লো ৪১ শতাংশ

চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন মাশুল নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এ গেজেট প্রকাশিত হয়। নতুন এ মাশুল সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) থেকে কার্যকর হবে বলে গেজেটে উল্লেখ করা হয়।
প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী, প্রত্যেকবার বন্দর এলাকায় প্রবেশের জন্য প্রতি গ্রজ টনের জন্য পয়েন্ট ৩০৬ ডলার, পোর্ট লিমিটের মধ্যে লাইটার ও ট্যাংকারের ভ্যাসেল ওয়ার্কিং চার্জ ধরা হয়েছে প্রতি গ্রজ টনে পয়েন্ট জিরো ১৭ ডলার। এরসঙ্গে ডেঞ্জারাজ গুডস ভ্যাসেলের ক্ষেত্রে ঘোষিত চার্জের ২৫ শতাংশ, ডেড ভ্যাসেলের জন্য ৫০ শতাংশ, লাইটারেজের জন্য ৫০ শতাংশ, ডিলে/ওভার স্টে চার্জ হিসেবে ৫ শতাংশ অতিরিক্ত মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছে।
বন্দরে জাহাজ প্রবেশের জন্য জাহাজের প্রতি মুভমেন্টের জন্য সর্বনিম্ন পাইলটিং চার্জ ধরা হয়েছে ৮০০ ডলার। তাছাড়া ১০ হাজার গ্রজ টনের উপরের ভ্যাসেলের জন্য প্রতি গ্রজটনে পয়েন্ট জিরো ৮ ডলার চার্জ ধরা হয়েছে। এরসঙ্গে ব্রেকিং জার্নি হলে ঘোষিত চার্জের সঙ্গে ৫০ শতাংশ, ডেড ভ্যাসেলের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ, প্রবেশ বাতিলের জন্য প্রতিবারের জন্য ২০০ ডলার, নাইট নেভিগেশন ভ্যাসেলের জন্য ২৫ শতাংশ, বার্থ শিফটিংয়ের জন্য প্রতি মুভমেন্টে ৮০ ডলার, কর্ণফুলী নদীর বাইরের অংশে পাইলটিংয়ের জন্য ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত মাশুল নির্ধারণ করা হয়।
টাগ ব্যবহারের চার্জ হিসেবে প্রত্যেক মুভমেন্টে প্রতি ২০০টন থেকে ৫ হাজার গ্রজটনের জন্য কর্ণফুলী নদীর মধ্যে ৬১৫ ডলার, বাইরে ১২৩০ ডলার, ৫০০০ টন থেকে ১০ হাজার গ্রজটনের জন্য কর্ণফুলীর মধ্যে ১২৩০ ডলার, বাইরে ২৪৬০ ডলার, ১০হাজার থেকে ২০ হাজার গ্রজটনের জন্য ভেতরে ২০৫০ ডলার, বাইরে ৪১০০ ডলার এবং ২০ হাজার গ্রজটনের ওপরের জন্য ভেতরে ৩৪১৫ ডলার ও বাইরের জন্য ৬৮৩০ ডলার নির্ধারণ করা হয়। এরসঙ্গে ডিজেবল কিংবা ডেব ভ্যাসেলের ক্ষেত্রে মূল চার্জের বাইরে ১০০ শতাংশ. বাতিলের জন্য ৫০ শতাংশ, শিফটিংয়ের জন্য ৫০ শতাংশ, কর্ণফুলী নদীর মধ্যে ৪ ঘণ্টার বেশি সার্ভিসের জন্য ২৫ শতাংশ, কর্ণফুলী নদীর বাইরে ৬ ঘণ্টার বেশি সার্ভিসের জন্য ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত চার্জ ধরা হয়েছে।
জাহাজ বন্দরের জেটিতে বার্থিংয়ের জন্য প্রতি গ্রজটনে প্রতি ঘণ্টায় পয়েন্ট জিরো জিরো ৪ ডলার, প্রতিবারে বার্থিং আনবার্থিংয়ের জন্য ৯৪ পয়েন্ট ৩২ ডলার, সমুদ্রগামী জাহাজের ক্ষেত্রে প্রতি জাহাজে দৈনিক ২২৪ দশমিক ৮৫ ডলার এবং সমুদ্রগামী নন এমন জাহাজের ক্ষেত্রে জাহাজপ্রতি দৈনিক ২২ দশমিক ৪৯ ডলার মাশুল নির্ধারণ করা হয়। এরসঙ্গে নোটিশ করার পর বার্থ ত্যাগ না করলে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ১০০ শতাংশ ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ৩০০ শতাংশ, ৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত ৪০০ শতাংশ, ৩৬ ঘণ্টার বেশি ডিলে করলে ৯০০ শতাংশ অতিরিক্ত চার্জ নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে শিফটিংয়ের জন্য প্রতিবারে ৪৭ দশমিক ১৬ ডলার মাশুল ধরা হয়।
জাহাজে পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে মেইন সাপ্লাই লাইন থেকে প্রতি ১০০০ লিটারের জন্য ২ দশমিক ৯২ ডলার, বন্দরের লরি দিয়ে (৫ কিলোমিটারের নীচে) প্রতি ১০০০ লিটারের জন্য ৬ পয়েন্ট ২৩ ডলার, ৫ কিলোমিটারের উপরে প্রতি ১০০০ লিটারের জন্য ৮ দশমিক ২৩ ডলার, বন্দরের ওয়াটার বোট ব্যবহার করে কর্ণফুলী নদীর মধ্যে প্রতি ১০০০ লিটারের জন্য ১২ দশমিক ৪৬ ডলার এবং পতেঙ্গা লাইট হাউজ থেকে ৭ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে ১০০০ লিটারের জন্য ১৮ দশমিক ৬৯ ডলার, পতেঙ্গা লাইট হাউজ থেকে ৭ নটিক্যাল মাইলের বাইরে প্রতি ১০০০ লিটারের জন্য ২৪ দশমিক ৯৬ ডলার এবং বন্দরের বাইরের কোন পক্ষ থেকে পানি সরবরাহ নিলে প্রতি ১০০০ লিটারে ওয়াসার দরের ২০ শতাংশ বেশি হারে ওভারহেড চার্জ ধরা হয়েছে।
ওয়েস্ট হ্যান্ডলিং চার্জের ক্ষেত্রে কর্ণফুলী নদীর মধ্যে স্বল্পদূরত্বে প্রতিবারের সেবায় ২৪৫৬ দশমিক ৯৯ ডলার, কর্ণফুলী নদীর বাইরে প্রতিট্রিপের সেবায় ৪০৬৩ দশমিক ১৫ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।
বন্দরের ক্রেন ব্যবহারের জন্য (কী গ্যান্ট্রি, মোবাইল হার্বার, একই ধরণের অন্য যন্ত্র) প্রতি মুভমেন্টে পণ্যভর্তি কন্টেইনার প্রতি ২১ ফুটের নীচে ২০ দশমিক ৮০ ডলার, ২১ থেকে ৪০ ফুটের জন্য ৩১ দশমিক ২০ ডলার এবং ৪০ ফুটের উপরের জন্য ৩৫ দশমিক ১০ ডলার, খালি কন্টেইনারের ক্ষেত্রে প্রতি ২১ ফুটের নীচে ১০ দশমিক ৪০ ডলার, ২১ থেকে ৪০ ফুটের জন্য ১৫ দশমিক ৬০ ডলার এবং ৪০ ফুটের উপরের জন্য ১৭ দশমিক ৫৫ ডলার, জেটি ক্রেন ব্যবহারের জন্য ক্রেনপ্রতি প্রতি ৮ ঘণ্টার জন্য ১০ টনের নীচে ৫৮ দশমিক ২৪ ডলার, ১০ থেকে ৪০ টনের জন্য ১৭৪ দশমিক ৭২ ডলার এবং ৪০ টনের উপরে ২৯১ দশমিক ২০ ডলার এবং হ্যাজ কভারের জন্য প্রতিবারে প্রতি প্যানটনে ৩৫ দশমিক ১০ ডলার চার্জ নির্ধারণ করা হয়।
অর্থনীতি
রিজার্ভ বেড়ে ৩০.৫৯ বিলিয়ন ডলার

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে ৩০ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রোববার দিনশেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে হিসাব করলে এই অঙ্ক দাঁড়ায় ২৫ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারে।
এর আগে গত সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) কাছে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধ করায় রিজার্ভ নেমে যায় ৩০ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে। তখন বিপিএম-৬ হিসাব অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেকটি নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব রয়েছে, যা কেবল আইএমএফকে দেওয়া হয় কিন্তু প্রকাশ করা হয় না।
বিশ্ব মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমপরিমাণ রিজার্ভ থাকা প্রয়োজন। সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ এখন প্রায় সীমান্তরেখা অতিক্রম করে কিছুটা ভালো অবস্থায় আছে। প্রবাসী আয়, রপ্তানি আয়, বৈদেশিক ঋণ ও বিনিয়োগ থেকে আসা ডলারই মূলত রিজার্ভ গড়ে তোলে। অন্যদিকে আমদানি ব্যয়, ঋণের সুদ, বিদেশি কর্মীদের পারিশ্রমিক, শিক্ষা ও ভ্রমণ খরচসহ নানা খাতে ডলার ব্যয় হওয়ায় রিজার্ভ হ্রাস পায়।
সম্প্রতি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্বস্তি ফিরেছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হয়নি, বরং উল্টো বাজার থেকে ডলার কিনেছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর পাঁচটি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ১৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার এবং ২ সেপ্টেম্বর আটটি ব্যাংক থেকে ৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে এসেছে ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স (প্রায় ৩০ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা)। আগস্টে এসেছে ২৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার বা ২৯ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। এর আগে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মার্চে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল, যা ছিল ওই অর্থবছরের রেকর্ড। পুরো ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার— যা আগের বছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই অঙ্ক ছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে মাসভিত্তিক রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল- জুলাই: ১৯১.৩৭ কোটি ডলার, আগস্ট: ২২২.১৩ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বর: ২৪০.৪১ কোটি ডলার, অক্টোবর: ২৩৯.৫০ কোটি ডলার, নভেম্বর: ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বর: ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারি: ২১৯ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারি: ২৫৩ কোটি ডলার, মার্চ: ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিল: ২৭৫ কোটি ডলার, মে: ২৯৭ কোটি ডলার এবং জুন: ২৮২ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৩ সালের জুন শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। পাঁচ বছর পর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারে। এরপর ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায় এবং একই বছরের অক্টোবরে অতিক্রম করে ৪০ বিলিয়ন ডলার। কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও রিজার্ভ রেকর্ড গড়ে ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। তবে পরে ডলার সংকট দেখা দেওয়ায় রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে।