অর্থনীতি
চালের পর এবার চড়া ডিম-মাছের বাজার

প্রধান খাদ্যশস্য চালের পর এবার ডিম-মাছের বাজারও চড়া। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম ডজনে ৫ টাকা বেড়েছে। গরু ও মুরগির মাংসের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে মাছের বাজারে। তাতে দর বেড়েছে সব ধরনের মাছের। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের এমন চড়া দামে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। তাদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীরা একের পর এক পণ্যের দর বাড়াচ্ছে। নামকাওয়াস্তে বাজারে অভিযান হলেও কার্যত এর সুফল পাচ্ছে না ভোক্তারা। তাই পণ্যের সরবরাহ ও বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারকে নতুন করে ভাবতে হবে।
ভরা মৌসুমেও বাজারে এখন সব ধরনের সবজির দাম চড়া। গতকাল মগবাজার, সেগুনবাগিচা ও মালিবাগ বাজারে দেখা গেছে, ছোট আকারের একটা লাউ কিনতে গেলে গুনতে হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। শিমের কেজিতে খরচ করা লাগে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। ফুল ও বাঁধাকপির পিস আকারভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আলুর কেজি এখনও ৫০ টাকার বেশি। সবজির চড়া দামের কারণে ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছে ডিমের দোকানে। তাতে তেতে উঠেছে ডিমের বাজার। গত বছর ডিমের বাজার বেশ বেসামাল হয়েছিল। বিশেষ করে গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে দর বেড়ে এক পর্যায়ে ডিমের ডজন ছুঁয়েছিল ১৭০ টাকা। এরপর সরকার আমদানির অনুমতি দিলে বাজার অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসে। ১৭০ টাকার ডিমের ডজন কমে নেমে আসে ১২০ টাকায়। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২০ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করেছে। তবে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের পর বাজারে প্রায় সব নিত্যপণ্যের দর বেড়ে যায়। ডিমের বাজারও কিছুটা নড়েচড়ে ওঠে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি ডজন ফার্মের ডিমের দর বেড়েছে ৫ টাকা। ফলে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে এখন ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। তবে পাড়া-মহল্লার দোকান থেকে কিনতে গেলে ডজনে আরও ৫ টাকা বেশি খরচ করতে হয়। অর্থাৎ ডজনে গুনতে হচ্ছে ১৪০ টাকা। সেই হিসাবে ডজনে বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা।
গত বছরের শেষ দুই মাস মাংস বিক্রেতারা কিছুটা স্বস্তি দিয়েছিল ক্রেতাদের। স্ব-উদ্যোগেই তারা দর কমিয়ে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা বিক্রি শুরু করে গরুর মাংস। তবে নির্বাচনের পর তারা আবার কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বাড়িয়ে দেন। তাতে প্রতি কেজির দাম দাঁড়ায় ৭০০ টাকা। দুই দিন ধরে দেশি গরুর মাংস তকমা দিয়ে কেউ কেউ ৭৫০ টাকা দরেও বিক্রি করছেন।
ব্রয়লার মুরগির দরও বাড়তি। গত ১৫ থেকে ২০ দিনে ধীরে ধীরে বেড়ে ব্রয়লারের কেজি ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে। কেজিতে ২০ টাকার মতো বেড়ে সোনালি জাতের মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা দরে।
গরুর মাংস ও ব্রয়লারের দাম বাড়ার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে মাছের বাজারে। কিছু দিন ধরে বাড়তি সব ধরনের মাছের দাম। স্বল্প আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি কিনেন পাঙাশ, তেলাপিয়া ও চাষের কই।
বাজারে এই তিন পদের মাছের দর বেড়েছে। প্রতি কেজি পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া তেলাপিয়ার কেজি ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা এবং চাষের কই মাছের কেজি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহ আগে এ তিন জাতের মাছ অন্তত ৩০ টাকা কম দরে কেনা গেছে।
বাজারে প্রতি কেজি রুই আকারভেদে ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা এবং কাতলার কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া পাবদার কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, শিং মাছ আকারভেদে কেজি ৪৮০ থেকে ৬০০, চিংড়ির কেজি আকারভেদে ৫৫০ থেকে ৮০০, ছোট ট্যাংরা মাছের কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ এবং বোয়াল মাছের কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছ-মাংস, সবজি ছাড়াও বাজারে সব ধরনের ডালের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে ছোলা, অ্যাংকর ও মুগ ডালের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। ছোলার কেজি মানভেদে ১০০ থেকে ১১০, অ্যাংকর ডাল ৭৫ থেকে ৮০ এবং মুগ ডালের কেজি ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অর্থসংবাদ/এমআই

অর্থনীতি
ডলারের দাম বাড়লো

টানা চারদিন কমার পর আজ (মঙ্গলবার) আবার বাড়ল ডলারের দাম। বাজার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপের পর এই উল্টো পরিবর্তন দেখা গেছে। মঙ্গলবার একদিনেই ডলারের দাম বেড়েছে ১ টাকা ৪০ পয়সা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, দেশের মুদ্রাবাজারে মঙ্গলবার ডলারের সর্বোচ্চ দাম ১২১ টাকা ৫০ পয়সা এবং সর্বনিম্ন ১২০ দশমিক ৮০ টাকা, সোমবার যা ছিল যথাক্রমে ১২০ দশমিক ১০ টাকা ও সর্বনিম্ন ১১৯ দশমিক ৫০ টাকা। আজ ডলারের গড় দাম ১২১ দশমিক ১১ টাকা, অর্থাৎ ডলারের বিক্রয়মূল্য বেড়েছে ১ টাকা ৪০ পয়সা।
রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়লেও আমদানি খরচ খুব একটা বাড়েনি। তাই ডলারের চাহিদা কিছুটা কমে গিয়েছিল। ফলে টাকার বিপরীতে ডলারের মান কমতে শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে অর্থাৎ ডলারের দর ধরে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামের মাধ্যমে বাজার থেকে ডলার কেনা শুরু করে।
গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ১৭ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার কিনেছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এই উদ্যোগের ফলে ডলারের দাম কমার প্রবণতা থেমে গেছে এবং আবার দাম বাড়তে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, গত কয়েক মাসে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ বাড়ায় ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা এসেছে। পাশাপাশি, জুন মাসে আইএমএফ, এডিবি, জাইকা এবং এআইআইবি থেকে বড় অঙ্কের অর্থ সহায়তা আসায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভেও ডলার বেড়েছে। এসব কারণে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের চলতি হিসাবে ঘাটতি কমেছে এবং ডলারের ওপর চাপ কম থাকায় দাম কমছে।
এর আগে, গত বছরের ডিসেম্বরে ডলারের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল। মাত্র দুই কার্যদিবসে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম রেকর্ড ভেঙে ১২৮ টাকায় ওঠে যায়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে বাজার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। তখন ১৩টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক দামে রেমিট্যান্স কেনার অভিযোগ ওঠে এবং তাদের ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। সেসময় গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছিলেন, কয়েকটি ব্যাংকের ভুল সিদ্ধান্তে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো ইচ্ছেমতো ডলারের দাম বাড়াচ্ছিল, যা সহ্য করা হবে না।
তিনি বলেন, ডলারের দাম ঠিক হবে বাংলাদেশের বাজারেই।
চলতি বছরের ১৫ মে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনার পর ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণে নতুন পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন ব্যাংক ও গ্রাহক নিজেরাই দর নির্ধারণ করছে। অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন, এতে ডলারের দাম বেড়ে যাবে, কিন্তু বাস্তবে তা কমেছে।
দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে চলতি হিসাবের নেতিবাচক অবস্থার পরিমাণ কমেছে। ফলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে— এই ১১ মাসে বৈদেশিক লেনদেনে যে ভারসাম্যহীনতা ছিল, তা এখন অনেকটাই কমে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে চার হাজার ৮৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। অন্যদিকে আমদানি হয়েছে ছয় হাজার ২৫ কোটি ডলার। ফলে এক হাজার ৯৩৮ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল দুই হাজার ২২ কোটি ডলার। সেই হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বাণিজ্য ঘাটতি ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ কমেছে। এই সূচক আমাদের অর্থনীতির জন্য ভালো সংবাদ। পাশাপাশি এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে রেকর্ড প্রবাহ এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই অংক এক অর্থবছরে দেশে আসা রেমিট্যান্সের মধ্যে সর্বোচ্চ। প্রবাসী আয়ের এমন ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ও ডলারের জোগানে স্বস্তি এনে দিয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে দেশের মোট রিজার্ভ দাড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের এই অংক গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২৩ সালে জুনে রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার ছিল। এ ছাড়া, আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে মোট রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার।
অর্থনীতি
চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক

ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ, মানিলন্ডারিং ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এস এম মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন।
দুদক সূত্রে জানা যায়, অনুসন্ধান করার জন্য দুদকের সহকারী পরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত-৫) মো. নওশাদ আলী ও উপসহকারী পরিচালক মো. ইমরান আজানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া মনিরুজ্জামানের বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুদক। নির্বাচন কমিশন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ একাধিক সংস্থার কাছে চাওয়া হয়েছে তথ্য।
যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- কর্নফুলী নদীর ড্রেজিং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অনুমোদনপত্র আর্থিক বরাদ্দপত্র টেন্ডার ডকুমেন্ট, টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি, দাখিল করা দরপত্র, দরপত্র উন্মুক্ত ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন, তুলনামূলক বিবরণী, কার্যাদেশ, চুক্তি, বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন, বিল পরিশোধ সংক্রান্ত বিল-ভাউচারসহ সংশ্লিষ্ট সব রেকর্ডপত্র, এস এম মনিরুজ্জামানের ব্যক্তিগত নথির ছায়ালিপি ও এসএম মনিরুজ্জামান তার স্ত্রী এবং সন্তানদের জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্মনিবন্ধন/পাসপোর্টের সত্যায়িত ছায়ালিপি।
এসব রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ছায়ালিপি আগামী আগামী ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে দুদকে জমা দিতে বলা হয়েছে। এস এম মনিরুজ্জামানের নামে অভিযোগের বিষয়ে দুদকের চিঠিতে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ, মানিলন্ডারিং ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নিম্নবর্ণিত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন।
অর্থনীতি
বদলির আদেশ ছিঁড়ে ফেলায় ১৪ এনবিআর কর্মকর্তা বরখাস্ত

বদলির আদেশ অমান্য করে প্রকাশ্যে চিঠি ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ১৪ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) এ-সংক্রান্ত পৃথক আদেশ জারি করেছে। আইআরডি সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান আদেশে সই করেন। দুপুরের পর থেকে তাদের নামে আদেশ জারি শুরু হয়। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত মোট ১৪ জন শুল্ক, ভ্যাট ও কর কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার আদেশ জারি হয়।
বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন—মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার, ঢাকার কর অঞ্চল-৮–এর অতিরিক্ত কর কমিশনার মির্জা আশিক রানা, ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক সিফাত ই মরিয়ম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দ্বিতীয় সচিব শাহাদাত জামিল, ঢাকা কর অঞ্চল-২-এর যুগ্ম কর কমিশনার মাসুমা খাতুন, কর অঞ্চল-১৫-এর যুগ্ম কর কমিশনার মুরাদ আহমেদ, কুষ্টিয়া কর অঞ্চলের মোরশেদ উদ্দীন খান, নোয়াখালী কর অঞ্চলের যুগ্ম কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা, কক্সবাজার কর অঞ্চলের যুগ্ম কর কমিশনার আশরাফুল আলম প্রধান, খুলনা কর অঞ্চলের উপকর কমিশনার শিহাবুল ইসলাম, রংপুর কর অঞ্চলের উপকর কমিশনার নুশরাত জাহান ও কুমিল্লা কর অঞ্চলের উপকর কমিশনার ইমাম তৌহিদ হাসান, খুলনা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের রাজস্ব কর্মকর্তা শফিউল বশর ও ঢাকা উত্তর কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের রাজস্ব কর্মকর্তা সবুজ মিয়া।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, গত মাসে এনবিআরে যে আন্দোলন হয়েছে, তারা সবাই ওই আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন। কেউ কেউ নেতৃত্বও দিয়েছেন। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এই আন্দোলন হয়। বরখাস্ত হওয়া মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার এনবিআর ঐক্য পরিষদের সভাপতি এবং ঢাকার কর অঞ্চল-৮–এর অতিরিক্ত কর কমিশনার মির্জা আশিক রানা সহসভাপতি পদে আছেন।
বরখাস্তের আদেশ অনুসারে, ২২ জুন জারি করা বদলির আদেশ অবজ্ঞাপূর্বক প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার মাধ্যমে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করায় তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক বিভাগীয় কার্যধারা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৩৯(১) ধারা অনুযায়ী এনবিআরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগপূর্বক চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন বিধি মোতাবেক খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন।
গত মাসে রাজস্ব খাতে যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেছেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ২৮ ও ২৯ জুন সারা দেশে কাজ বন্ধ করে দেন তারা। এরপর ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় আন্দোলন প্রত্যাহার করেন তারা।
এরপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়। আন্দোলন প্রত্যাহারের পরে এই পর্যন্ত তিনজন সদস্য ও একজন কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। কাজ বন্ধ রাখার দায়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তৎকালীন কমিশনারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া এনবিআরের দুজন সদস্যসহ ১৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুদক। তাদের বেশির ভাগই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
গত ১২ মে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা—এই দুটি বিভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এর পর থেকে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে প্রায় দেড় মাস আন্দোলন করেন।
অর্থনীতি
নীতি সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৮ শতাংশ

মুদ্রানীতি কাঠামোর ইন্টারেস্ট রেট করিডোরের আওতায় আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার কার্যক্রম আরো গতিশীলকরণ এবং তারল্য ব্যবস্থাপনা সুসংহত করার লক্ষ্যে নীতি সুদহার করিডোরের নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামীকাল বুধবার (১৬ জুলাই) থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
মঙ্গলবাল (১৫ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটারি পলিসি বিভাগ থেকে জারীকৃত এক প্রজ্ঞাপন দেশের সকল তফসিলি ব্যাংক কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী বরাবর পাঠানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, নীতি সুদহার করিডোরের নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি শতকরা ৮.৫০ শতাংশ হতে ৫০ বেসিস পয়েন্ট হ্রাস করে ৮ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা হলো। এছাড়া, নীতি সুদহার করিডোরের উর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) বিদ্যমান শতকরা ১১.৫০ শতাংশে এবং ওভার নাইট রেপো নীতি সুদহার বিদ্যমান শতকরা ১০ শতাংশে অপরিবর্তিত থাকবে।
তারল্যের প্রয়োজনে বাণিজ্যিক ব্যাংক যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করে, তখন তার সুদহার ঠিক হয় রেপোর মাধ্যমে। আর রিভার্স রেপোর মাধ্যমে বাংকগুলো তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখে। রেপো রেটকে নীতি সুদহার নামে অভিহিত করা হয়।
অর্থনীতি
৫৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে কাতার থেকে কেনা হচ্ছে এক কার্গো এলএনজি

দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে আগস্ট মাসের জন্য এক কার্গো এলএনজি আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কাতার থেকে এই এলএনজি আনতে ব্যয় হবে ৫৫৬ কোটি ৭৬ লাখ ৫০ হাজার ৯০৬ টাকা।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এই এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮’ অনুসরণে আন্তর্জাতিক কোটেশন প্রক্রিয়ায় স্পট মার্কেট থেকে ১ কার্গো (৪-৫ আগস্ট ২০২৫ সময়ে ৩৩তম) এলএনজি আমদানির প্রত্যাশাগত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি কমিটি।
জানা গেছে, পেট্রোবাংলা কর্তৃক ১ কার্গো এলএনজি সরবরাহের জন্য মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) স্বাক্ষরকারী চুক্তিবদ্ধ ২৩টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হলে ৩টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। দাখিল করা ৩টি প্রস্তাবই কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়।
দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান কাতার এনার্জি ট্রেডিং এলএলসি, কাতার থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রতি এমএমবিটিইউ ১৩.২৪ মার্কিন ডলার হিসেবে এক কার্গো বা ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হবে ৫৫৬ কোটি ৭৬ লাখ ৫০ হাজার ৯০৬ টাকা।