চলতি বছর কিছু দুর্বল তফসিলি ব্যাংককে একীভূত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান ভবনের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান গভর্নর।
গভর্নর বলেন, চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরা হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। একই সঙ্গে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশ কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ আর সরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ৩১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৭ দশমিক ৮ শতাংশ করা হয়েছে। তবে নীতি সুদহার ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে।
বাজারে ডলার সরবরাহের বিকল্প নেই জানিয়ে তিনি জানান, সার্বিক পরিস্থিতিতে আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে আর্থিক খাতের অবস্থা ভালো হবে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি কমানোর লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ কমানো হলেও বিনিয়োগ বা কর্মসংস্থানে প্রভাব পড়বে।
তিনি বলেন, দেশে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে দাম নির্ধারণ করা হবে। এক অর্থবছরেই ১৮ বিলিয়ন ডলার কমেছে অবকাঠামো উন্নয়নে। এক বছরে এতটা ব্যয়ের জন্যই রিজার্ভ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। গত তিন বছরে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে ২৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। তবে সে অনুযায়ী ডলার আসছে না। ব্যাংকগুলো প্রয়োজনে ডলার কেনার কারণে নগদ সংকটে পড়েছে। এটাও সমাধান হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, অর্থনীতির ভাষায় ক্রলিং পেগ হলো নিজের দেশের মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয়ের একটি পদ্ধতি; যেখানে একটি নির্দিষ্ট বিনিময় হারসহ একটি মুদ্রাকে একটি সীমার মধ্যে ওঠানামা করার অনুমতি দেয়া হয়। অস্থিরতার সময় দেশীয় মুদ্রার মূল্য এবং হারের সীমাও ঘনঘন সমন্বয় করা হয়। এখানে মুদ্রার হারের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণ করা থাকে। ফলে একবারেই খুব বেশি বাড়তে পারবে না, আবার কমতেও পারবে না।
মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে গভর্নর আরও বলেন, এবারের মুদ্রানীতির মূল লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি প্রশমন করা। মুদ্রানীতির প্রভাব অর্থনীতিতে পড়তে অনেক সময় লেগে যায়। এতে মূল্যস্ফীতি কমতে সময় লেগেছে। তবে নভেম্বর থেকে মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করেছে।
আর বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের রিজার্ভ ২৫.৫৬ বিয়িলন ডলার। আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী (বিপিএম৬) রিজার্ভ ২০.৩২ বিলিয়ন ডলার।
এর আগে নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসের আমদানি বাবদ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার দায় পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ। এতে ৯ জানুয়ারি বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ২৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলারে।
আকু হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যকার একটি আন্তঃ আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিব্যবস্থা। এর মাধ্যমে এশিয়ার ৯টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রফতানি হয়, তা প্রতি দুমাস পরপর নিষ্পত্তি করা হয়। এ ছাড়া অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন হয়ে থাকে।