অর্থনীতি
দেশে আমদানি পণ্যের ৬৫ শতাংশই এসেছে নয় দেশ থেকে

দেশে ২০২৩ সালে বিশ্বের ২১৫টি দেশ থেকে ৬ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ বা ৪ লাখ কোটি টাকার পণ্যই এসেছে নয় দেশ থেকে। দেশগুলো হলো চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, মালয়েশিয়া, রাশিয়া, জাপান ও সিঙ্গাপুর। প্রত্যেকটি দেশ এককভাবে সরবরাহ করেছে ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি পণ্য। কাস্টম হাউজ ও শুল্ক স্টেশনের শুল্কায়ন মূল্যের হিসাব পর্যালোচনায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আমদানি তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশে আমদানি পণ্যের সবচেয়ে উৎস চীন ও ভারত। দেশে শিল্পের মেশিনারিজ ও খাদ্যশস্যের বাজার যত বড় হচ্ছে, পণ্য সরবরাহে এ দুই দেশের অংশীদারত্ব ততই বাড়ছে। পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশের বাজারে ৬০ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকার মেশিনারিজসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য সরবরাহ করেছিল চীন। গত বছর সেখান থেকে এসেছে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার পণ্য। অর্থাৎ পাঁচ বছরের ব্যবধানে দেশের আমদানি পণ্যের বাজারে চীনের অংশীদারত্ব বেড়েছে ৫০ শতাংশেরও বেশি।
পণ্য আমদানিতে চীনের পরই ভারতের অবস্থান। পাঁচ বছর আগে ভারত থেকে ২৬ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকার ৪৭ লাখ টন পণ্য আমদানি করেছিল। গত বছর আমদানি হয়েছে ২ কোটি ৮৭ লাখ টন। যার অর্থমূল্য ৮৯ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা। সে হিসাবে পাঁচ বছরের ব্যবধানে ৭০ শতাংশ অংশীদারত্ব বেড়েছে ভারতের।
তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪১ হাজার ৩৮২ কোটি টাকার ১ কোটি ৭৬ লাখ টন পণ্য আমদানি হয়েছে ইন্দোনেশিয়া থেকে। আমদানীকৃত ভোজ্যতেলের বড় একটি অংশই আসে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ দেশ থেকে। এছাড়া গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৭ হাজার ২১১ কোটি টাকার, ব্রাজিল থেকে ২৬ হাজার ৪১৩ কোটি, মালয়েশিয়া থেকে ২৩ হাজার ৯২১ কোটি, রাশিয়া থেকে ২৩ হাজার ৩০৫ কোটি, জাপান থেকে ২২ হাজার ২৪১ কোটি এবং সিঙ্গাপুর থেকে ২১ হাজার ৫২৭ কোটি টাকার পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ।
এনবিআরের তথ্য মতে, বাংলাদেশের মোট আমদানি ব্যয়ের বড় একটি অংশই এলএনজি বা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস, এলপিজি, পুরনো লোহার টুকরো (রড তৈরির প্রধান কাঁচামাল), ক্লিংকার (সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল), অপরিশোধিত সয়াবিন তেল, সার, অপরিশোধিত চিনি, তুলা (বস্ত্র খাতের কাঁচামাল), গম, পাম তেল, ফার্নেস অয়েল ও ডিজেলের দখলে।
চীন থেকে বাংলাদেশ শিল্প-কারখানার যন্ত্র, কেমিক্যাল, বস্ত্র খাতের কাঁচামাল, ইলেকট্রনিক পণ্য ও আসবাবপত্র আমদানি করে। আবার পোশাক তৈরির বেশির ভাগ কাঁচামালও আসে চীন থেকে। যদিও আমদানির বিপরীতে চীনে নামমাত্র পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ। ফলে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি সর্বোচ্চ। বর্তমানে দেশের মোট পণ্য রফতানির মাত্র ১ শতাংশের কিছুটা বেশি যায় চীনে। প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে গত বছর খাদ্যশস্য, মসলা, তুলা, মোটরযান, চিনিজাতীয় পণ্য ও জ্বালানি আমদানি হয়েছে বেশি। ইন্দোনেশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি এসেছে পাম অয়েল। দেশটি থেকে বিভিন্ন ধরনের মসলা ও টায়ারও আমদানি করা হয়েছে।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয়েছে ইস্পাতের কাঁচামাল, খনিজ জ্বালানি, তেলবীজ, তুলা ও বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তিনির্ভর পণ্য। কাতার ও ওমান থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি আমদানি হলেও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বড় পরিসরে জ্বালানিটি আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এনবিআরের তথ্য মতে, গত বছর ব্রাজিল থেকে গম, চিনি, মাংস এবং নানা ধরনের শুকনো ফল ও মসলা আমদানি করেছে বাংলাদেশ। মালয়েশিয়া থেকে এসেছে ভোজ্যতেল, রাবার, দুগ্ধপণ্য, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, রাসায়নিক পদার্থ, জুতা ও চামড়াজাত পণ্য। খাদ্যশস্য ও বীজ, গম এবং ডালের উল্লেখযোগ্য আমদানি হিস্যা ছিল রাশিয়ার হাতে। জাপান থেকে আমদানি হয়েছে গাড়ি, ইস্পাতের কাঁচামালসহ শিল্পের যন্ত্র। সিঙ্গাপুর থেকে মূলত জ্বালানি আমদানি করা হয়। পাশাপাশি দেশটি থেকে কাঁচা তুলা, ডাল, গম, তেলবীজ ও পাম অয়েলসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য এসেছে।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অর্থনীতি
২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার এডিপি বিবেচনায় বৈঠক আজ

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির আকার ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। উন্নয়ন বাজেটে বরাবরের মতো এবারও বড় ৫ খাতেই ৭০ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে শুধু পরিবহন ও যোগাযোগ খাতই ২৫ শতাংশ বরাদ্দ পেয়েছে।
আজ রবিবার (১৮ মে) পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এনইসি সভায় উন্নয়ন বাজেট চূড়ান্ত করা হবে। এডিপির খসড়া এনইসির সভায় অনুমোদন দেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বর্ধিত সভা সূত্রে জানা যায়, এবার অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে এক লাখ ৪৪ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
জানা যায়, বরাবরের মতো এবারও অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। মোট বরাদ্দের ২৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ বা ৫৮ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে এ খাতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ বা ৩২ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। ১২ দশমিক ৪২ শতাংশ বা ২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে শিক্ষা খাত। গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলি খাতে ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ বা ২২ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। আর স্বাস্থ্যখাত পেয়েছে ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ বা ১৮ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা।
এছাড়া স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ১৩ হাজার ৪৭২ কোটি, কৃষি খাতে ১০ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ খাতে ১০ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা, শিল্প ও অর্থনীতিক সেবাখাতে ৫ হাজার ৩৮ কোটি টাকা, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৩ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা, ধর্ম, সংস্কৃতি ও বিনোদন খাতে ৩ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা, জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষা খাতে ২ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা, সামাজিক সুরক্ষা খাতে ২ হাজার ১৮ কোটি টাকা, সাধারণ সরকারি সেবাখাতে এক হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা ও প্রতিরক্ষা খাতে ৪৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তবে সংশোধিত এডিপিতে তা কমিয়ে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেট মূল এডিপির তুলনায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা কম হলেও সংশোধিত এডিপির তুলনায় ১৪ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো চাহিদা দিয়েছে ২ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে সরকারের অর্থায়ন ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, আর বিদেশি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছর উন্নয়ন কর্মসূচিতে সরকারের অর্থায়ন কমে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকায় নেমেছে, আর বিদেশি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১৪ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৮৬ হাজার কোটি টাকায় নামানো হয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
দেশের বাজারে বাড়ল সোনার দাম

দেশের বাজারে আবারও বেড়েছে স্বর্ণের দাম। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৮ টাকা।
স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বর্ণের এই নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) জানিয়েছে, এই নতুন দাম আগামীকাল রোববার (১৮ মে) থেকে কার্যকর হবে।
শনিবার (১৭ মে) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবর্তীতে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস আরও জানিয়েছে, স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যের সাথে আবশ্যিকভাবে সরকার নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট ও বাজুস নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ যোগ করতে হবে। তবে গহনার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
এনবিআরে কলম বিরতি চলবে কালও, রাজস্ব প্রশাসনে অচলাবস্থা

রাজস্ব অধ্যাদেশ বাতিল ও টেকসই সংস্কারের দাবিতে রবিবারও (১৮ মে) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং এর আওতাধীন ট্যাক্স, ভ্যাট ও কাস্টমস দপ্তরগুলোতে কলম বিরতি পালিত হবে।
শনিবার (১৭ মে) দুপুরে আয়োজিত কর্মসূচি শেষে এ তথ্য জানিয়েছে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’।
শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত টানা পাঁচ ঘণ্টার কর্মবিরতি শেষে তারা রবিবার আরো জোরালোভাবে ছয় ঘণ্টার কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়।
রবিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলবে এই কর্মসূচি।
তবে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, রপ্তানি কার্যক্রম এবং আসন্ন জাতীয় বাজেট প্রণয়ন— এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম আগের মতোই কলম বিরতির আওতার বাইরে থাকবে।
ঐক্য পরিষদের নেতারা জানিয়েছেন, এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব প্রশাসনকে দুই ভাগে ভাগ করে—রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ চালুর লক্ষ্যে যে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে, সেটি বাস্তবতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি হাজারো কর্মকর্তার মতামত উপেক্ষা করে চূড়ান্ত করা হয়েছে। সংস্কার কমিটির সুপারিশও গোপন রাখা হয়েছে, যা প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণমূলক সংস্কারের পরিপন্থী।
শনিবারের কর্মসূচিতে সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত থাকলেও কোনো দাপ্তরিক কার্যক্রম হয়নি। তবে অফিস কার্যক্রম স্থবির হলেও আন্দোলনকারীরা করদাতা ও সেবাপ্রার্থীদের সাময়িক ভোগান্তির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি তারা জানিয়েছেন, যৌক্তিক দাবি পূরণ হলে অতিরিক্ত সময় দিয়ে পেছানো কাজ দ্রুত সম্পন্ন করবেন।
ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়, আন্দোলনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষ্যে বহিরাগতদের জড়ানোর অপচেষ্টা চালানো হয়েছে।
তারা এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এ সময় তারা বিসিএস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন এবং বিসিএস কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনের অনির্বাচিত ও কার্যকরিহীন কমিটিকে ‘প্রতিনিধিত্বহীন’ বলে অভিহিত করেন। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এই কমিটিগুলোর নামে কোনো বক্তব্য বা কার্যক্রম শুধু ব্যক্তিগত বিবেচিত হবে এবং সংশ্লিষ্টরা দায় বহন করবেন।
এদিকে এনবিআরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আলোচনার মাধ্যমে চলমান সংকটের সমাধান চান তারা। প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপে সরকার শিগগিরই আলোচনায় বসবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেছেন।
তাদের দাবি, আন্দোলনের দরজা এখনো খোলা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মে রাতে সরকার ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ ২০২৫’ জারি করে, যার ফলে প্রায় পাঁচ দশকের পুরনো এনবিআর বিলুপ্ত হয়। এরপর থেকেই রাজস্ব প্রশাসনের তিন শাখার কর্মকর্তারা ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা’ নামে দুটি বিভাগ গঠন করে জারি করা অধ্যাদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জুয়েল আজাদ হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছেন।
আজ শনিবার আইনজীবী জুয়েল আজাদ সাংবাদিকদের জানান, বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর হাইকোর্ট বেঞ্চে এই রিটের ওপর শুনানি হতে পারে।
উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকার গত ১২ মে এনবিআর এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ নামে দুটি নতুন বিভাগ প্রতিষ্ঠা করে একটি অধ্যাদেশ জারি করে।
রিট আবেদনে এই অধ্যাদেশটিকে কেন সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক এবং আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। প্রাথমিক শুনানির পর আদালত রুল জারি করলে, সেই রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় অধ্যাদেশের কার্যক্রম স্থগিত রাখারও আবেদন করা হয়েছে। রিটে আইন সচিব ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে।
আইনজীবী জুয়েল আজাদ মনে করেন, অংশীজনদের সাথে কোনো প্রকার আলোচনা ছাড়াই এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এনবিআরকে বিলুপ্ত না করে বরং সংস্কার করা যেত।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
রাজস্ব ব্যবস্থা নির্বাহী বিভাগের করায়ত্ত হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে: টিআইবি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিষয়ক দুটি আলাদা বিভাগ তৈরি করতে তড়িঘড়ি করে অধ্যাদেশ জারি এবং এর ফলে রাজস্ব ব্যবস্থা নির্বাহী বিভাগের করায়ত্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
শনিবার (১৭ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি উদ্বেগ জানিয়ে বলে, নীতির স্বাধীনতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি, কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানো ও রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনার পৃথকীকরণের যে যৌক্তিক ভিত্তির ওপর ভর করে এ পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে, তার স্থলে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় নির্বাহী বিভাগ থেকে যে ন্যূনতম স্বাধীনতা ভোগ করার কথা তার সুযোগ থাকলো না।
উল্লেখ্য, এনবিআর সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত পরামর্শক কমিটির সুপারিশসমূহ পাশ কাটিয়ে তড়িঘড়ি অধ্যাদেশ জারির সিদ্ধান্ত নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে বলে মনে করে টিআইবি। রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যকে সমুন্নত রাখতে অবিলম্বে অধ্যাদেশটিকে যথোপযুক্ত সংশোধনের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি ।
এদিকে, সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘রাজস্ব খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কাজ একই কাঠামোর মধ্যে থেকে বের করে আনার দাবি বহুদিনের। কারণ একক কাঠামোর মধ্যে এই দুটি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া চলমান থাকায় অনেক সময় স্বার্থের দ্বন্দ্ব, যোগসাজশের দুর্নীতি, দীর্ঘসূত্রতার পাশাপাশি রাজস্ব লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থতা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিব্রতকর অবস্থায় নিমজ্জিত ছিলো। বিভিন্ন অংশীজন ও বিশেষজ্ঞসহ সর্বশেষ রাজস্ব বিষয়ক পরামর্শক কমিটিরও রাজস্ব ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণের পরামর্শ ছিলো। এ প্রেক্ষিতে অন্তবর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগের পেছনের নীতিগত সিদ্ধান্তকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখতে চাই। তবে রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত পরামর্শক কমিটির সুপারিশসমূহকে পাশ কাটিয়ে অধ্যাদেশ জারির উদ্দেশ্য কী? কার স্বার্থেই-বা অধ্যাদেশ প্রণয়নের ক্ষেত্রে এই সুপারিশসমূহ উপেক্ষা করা হলো? রাজস্ব ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার নামে যে বিকেন্দ্রীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সে প্রক্রিয়াটিই স্বচ্ছ কি-না, এমন প্রশ্ন ওঠাও অমূলক নয়। তা ছাড়া, এই তুঘলকি পরিবর্তনের ফলে এর মূল উদ্দেশ্য রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি কতটুকু বাস্তবায়িত হবে এ বিষয়ে নির্মোহ সংশ্লিষ্ট জ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ কতটুকু করা হয়েছে? ’
ড. জামান বলেন, ‘অধ্যাদেশে রাজস্ব বোর্ডের বিকেন্দ্রীকরণের নামে সরকারের, বিশেষত অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক উন্নত চর্চা অনুযায়ী, একটি দেশের রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও ব্যবস্থাপনার জন্য আইনি সুরক্ষা নিশ্চিতপূর্বক স্বতন্ত্র সংস্থা, বোর্ড বা এজেন্সি করা প্রয়োজন, যাতে তা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাবের আওতামুক্ত থাকে। অথচ, পরামর্শক কমিটির মূল সুপারিশকে উপেক্ষা করে দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাকে নির্বাহী বিভাগের অধীনস্ত দুটি বিভাগে পরিণত হয়েছে। ফলে কর নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও স্বার্থের সংঘাতসহ বিভিন্ন অনিয়মের সুযোগ থেকেই যাচ্ছে। এ সুযোগ আরো বাড়তে পারে- এমন সম্ভাবনাও অমূলক নয়। প্রত্যাশিত রাজস্ব অর্জন, রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে নবগঠিত বিভাগ দুটিকে আইনি সুরক্ষার মাধ্যমে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব বলয়ের বাইরে রাখার কোনো বিকল্প নেই। সরকারের এই সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে চলমান আন্তঃক্যাডার টেনশনে নতুন ইন্ধন জুগিয়েছে- তাও অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই।’
আবার রাজস্ব ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ করলেই প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যাবে- এমন ভাবার সুযোগ নেই উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘রাজস্ব নিরূপণ ও আদায়ে অনিয়ম এবং যোগসাজশমূলক জালিয়াতি যে বাংলাদেশে কর ফাঁকির অন্যতম মাধ্যম- তা মোটেও অজানা নয়। বিভিন্ন সময়ে নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও আমরা দেখেছি, আয়কর রিটার্ন দাখিল ও ভ্যাট আদায়-প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে অনলাইন করা যায়নি, হয়রানি ও দুর্নীতি কমেনি, চালান জালিয়াতি নিয়ন্ত্রিত হয়নি, করফাঁকি আর অর্থপাচার নিয়ন্ত্রিত হয়নি। দেশের কর জিডিপির অনুপাতও বাড়েনি বরং কমে গেছে এক যুগে। এর মধ্যেই পাবলিক অডিট অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর মাধ্যমে সরকার সিএজি’র রাজস্ব নিরূপণ নিরীক্ষার এখতিয়ার কেড়ে নিয়ে এ ক্ষেত্রে অনিয়মকে জবাবদিহির বাইরে রাখার অবারিত সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এসবের পেছনেও আমলাতন্ত্রের ভেতরে থাকা সংস্কার প্রতিরোধক স্বার্থান্বেষী মহল, যার প্রভাবে আরো একবার নীতি ও ব্যবস্থাপনাকে পৃথকীকরণের নামে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হলো। শুধু অধ্যাদেশ করে বা নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে আলাদা বিভাগ সৃষ্টি করে প্রত্যাশিত ফল আসবে না। রাজস্ব বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখার পাশাপাশি রাজস্ব ব্যবস্থায় নিয়োজিত লোকবলের নৈতিকতার চর্চা সমুন্নত রাখা, অটোমেশন, প্রত্যক্ষ কর আহরণে উদ্যোগী হওয়া অপরিহার্য।’
অবিলম্বে অধ্যাদেশটি স্থগিত করে বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে স্বাধীনভাবে সম্ভাবনা ও ঝুঁকি বিশ্লেষণপূর্বক ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।