সুশৃঙ্খলভাবে মানুষের বসবাসের জন্য দলপ্রধান বা জনপ্রতিনিধি করা জরুরি। যিনি বৃহত্তর একটি গোষ্ঠী বা জাতিকে সুচারুভাবে পরিচালনায় ভূমিকা রাখবেন। সুখ-সমৃদ্ধিতে বসবাসের জন্য যোগ্য জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা জরুরি। যোগ্য নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। ইসলামের দৃষ্টিতে যোগ্য জনপ্রতিনিধি বা দল প্রধান বলা হয়েছে, আমানতদার, সৎ ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিকে।
একইসঙ্গে যিনি কর্তব্য পরায়ণ, নিজের অধীনস্থদের ভালো-মন্দের ব্যাপারে খোঁজ-খবর রাখেন তিনিও দলপ্রধান বা জনপ্রতিনিধি হবার যোগ্য। আওফ ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেতে শুনেছি, তিনি বলেন, তোমাদের সর্বোত্তম শাসক হলো তারা, যাদের তোমরা ভালোবাস এবং তারাও তোমাদের ভালোবাসে। তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও এবং তারাও তোমাদের সাথে মিলিত হয়। আর তোমাদের সর্বনিকৃষ্ট শাসক হলো তারা, যাদের তোমরা ঘৃণা কর এবং তারাও তোমাদের ঘৃণা করে। তোমরা তাদের লানত কর এবং তারাও তোমাদের লানত করে।’ (মুসলিম, হাদিস, ১৮৫৫)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আবু আউফা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা একজন বিচারকের সাথে ততক্ষণ থাকেন, যতক্ষণ তিনি বিচারকাজে জুলুম-অত্যাচারের ঊর্দ্ধে থাকেন, যখন তিনি জুলুম ও বেইনসাফি করেন তখনই আল্লাহ তার থেকে পৃথক হয়ে যান এবং শয়তান এসে তার সাথী হয়ে যায়।’ (তিরমিজি, ১৩৩০)।
আরও পড়ুন: বিয়ে করা সুন্নত নাকি ফরজ, যা বলেছে ইসলাম
ভোট প্রদান বা নেতার নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যিনি নেতা হবেন তিনি একটি জাতি বা সমাজকে পরিচালিত করবেন। তাই নেতা যদি ভালো ও সৎ হন তাহলে তিনি তার সমাজ ও অধীস্থদের সঠিকভাবে পরিচালনা করবেন। সমাজ সুখ শান্তি বিরাজ করবে। আর নেতা সৎ না হলে সমাজে বিরাজ করবে অশান্তি। বর্তমান সময়ে সমাজপতি বা দলপ্রধান যেহেতু জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে থাকেন তাই জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের আগে সবাইকে সচেতন হতে হবে। কারণ অযোগ্য কাউকে নির্বাচিত করলে তার মাধ্যমে সমাজে যত অরাজকতা সৃষ্টি হবে এর কারণে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহিতা করতে হবে ভোটার বা দিলপ্রধান নির্বাচনকারীকে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যে লোক সৎকাজের জন্য কোনো সাক্ষ্য দেবে, তা থেকে সেও একটি অংশ পাবে। আর যে লোক মন্দ কাজের জন্য সুপারিশ করবে, সে তার পাপের একটি অংশ পাবে।’ (সূরা নিসা, আয়াত, ৮৫)।
এই আয়াতে সুপারিশকে ভাল ও মন্দ দু’ভাগে বিভক্ত করে বলা হয়েছে, প্রত্যেক সুপারিশ যেমন মন্দ নয়, তেমনি প্রত্যেক সুপারিশ ভালোও নয়। আরও বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি ভালো সুপারিশ (নির্বাচন) করবে, সে সওয়াবের অংশ পাবে এবং যে ব্যক্তি মন্দ সুপারিশ করবে, সে আজাবের অংশ পাবে। সুতরাং যে ব্যক্তি কারো বৈধ অধিকার ও বৈধ কাজের জন্য বৈধ পন্থায় সুপারিশ করবে, সেও সওয়াবের অংশ পাবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন সৎকাজে অপরকে উদ্বুদ্ধ করে, সেও ততটুকু সওয়াব পায়, যতটুকু সৎকর্মী পায়।’ (মুসলিম, হাদিস, ১৮৯৩)
কোরআনুল কারিমে আরও ইরশাদ হয়েছ, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকো এবং ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান করো, তাতে তোমাদের নিজের কিংবা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজনের যদি ক্ষতি হয় তদাপিও।’ (সূরা নিসা, আয়াত, ১৩৫)।
অর্থসংবাদ/এমআই