আন্তর্জাতিক বাজারে কমতে শুরু করেছে স্বর্ণের দর। এক টানা চার সপ্তাহ দরবৃদ্ধির পর অবশেষে নিম্নমুখী হলো ধাতুটির সাপ্তাহিক বাজারে। কারেন্সি মার্কেটে ডলারের বিনিময় মূল্য ও ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বৃদ্ধি এতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।
গতকাল স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। আউন্সপ্রতি মূল্য নেমেছে ২ হাজার ৩৮ ডলার ৪৯ সেন্টে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফিউচার মার্কেটেও স্বর্ণের দাম দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। প্রতি আউন্সের মূল্য স্থির হয়েছে ২ হাজার ৪৫ ডলার ৪০ সেন্টে।
বাজার তথ্য মতে, গত বছর স্বর্ণের দাম ১৩ শতাংশ বেড়েছে। আউন্সপ্রতি বছরটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ১ হাজার ৮০০ ডলার ও সর্বোচ্চ ২ হাজার ১৩৫ ডলার ৪০ সেন্ট, যা ছিল ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামের রেকর্ড। ঊর্ধ্বমুখিতায় শেষ করলেও নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে দাম কমার পথে রয়েছে স্বর্ণের বাজার।
ডেনিশ বিনিয়োগ ব্যাংক স্যাক্সো ব্যাংকের কমোডিটি স্ট্র্যাটেজির প্রধান ওলে হ্যানসেন বলেছেন, বছরের প্রথম সপ্তাহে স্বর্ণের দাম ১ শতাংশের সামান্য কিছু কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশিত অর্থনৈতিক তথ্য-উপাত্ত বন্ডের সুদহার বাড়িয়েছে এবং শিগগিরই ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) সুদহার কমানোর সম্ভাবনাকে দূরে ঠেলে দিয়েছে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ইউবিএসের বিশ্লেষক জিওভানি স্টাউনোভো জানিয়েছেন, স্বর্ণের দর আবারো সর্বোচ্চে দেখতে হলে বিনিয়োগকারীদের চাহিদা বাড়তে হবে। এর জন্য প্রয়োজন দুর্বল মার্কিন অর্থনৈতিক ডাটা ও নিম্ন মূল্যস্ফীতি, যাতে ফেড সুদহার কমিয়ে দেয়।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ১০ বছর মেয়াদি মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের সুদহার তিন সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চে উঠেছে। একই সময়ে ডলারের বিনিময় মূল্য দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে, যা গত মে মাসের পরে সর্বোচ্চ সাপ্তাহিক প্রবৃদ্ধির খবর। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে ভিন্ন মুদ্রার গ্রাহকের কাছে স্বর্ণ ক্রয় খরচ বেড়ে যায়। এতে বাজারে চাহিদা কমে ধাতুটির।
এদিকে আগামী মার্চে ফেডের সুদহার কমিয়ে আনার পূর্বাভাস সংশোধন করেছে বাজার বিশ্লেষক সংস্থা সিএমই ফেডওয়াচ। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ২০ মার্চের নীতিনির্ধারণী বৈঠকে ফেডের সুদহার কমানোর সম্ভাবনা ৬৬ শতাংশ। এক সপ্তাহ আগেও এ সম্ভাবনা ৯০ শতাংশে রেখেছিল ফেডওয়াচ।
অন্যদিকে স্পট মার্কেটে গতকাল রুপার দাম কমেছে দশমিক ১ শতাংশ। আউন্সপ্রতি মূল্য নেমেছে ২২ ডলার ৯৬ সেন্টে। একই সময়ে প্লাটিনামের মূল্য কমেছে ১ শতাংশ। প্রতি আউন্সের দাম ঠেকেছে ৯৪৭ ডলার ৭৭ সেন্টে। টানা নয়দিন ধরে কমছে প্যালাডিয়ামের দাম। গতকালও ধাতুটি ১ দশমিক ৩ শতাংশ মূল্য হারিয়েছে। আউন্সপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৩ ডলার ৮৯ সেন্টে।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের বিশ্লেষক সুকি কুপার জানান, পর্যাপ্ত উদ্বৃত্ত নিয়ে নতুন বছর শুরু করেছে প্যালাডিয়াম। বিদ্যুচ্চালিত গাড়িতে (ইভি) ব্যবহার কমায় ধাতুটি মূল্য হারাচ্ছে। ২০২৪ সালজুড়ে মোটামুটি একই প্রবণতায় যেতে পারে প্যালাডিয়ামের বাজার।