অর্থনীতি
রিজার্ভ থেকে সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলার বিক্রি

আশানুরূপ রেমিট্যান্স না আসায় দেশের বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। এটি সামাল দিতে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত (রিজার্ভ) থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রপ্তানির আয় দিয়ে আমদানির ব্যয় মেটানো যাচ্ছে না।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস (জুলাই-ডিসেম্বর) সময়ে ৬৭০ কোটি (৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সময়ে বাণিজ্যিক কিছু ব্যাংক থেকে এক বিলিয়ন ডলারের মতো অর্থ কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সরকারের জ্বালানি, সার ও খাদ্য আমদানির জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত পূরণের জন্য ডলার কিনে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও বাজারে এখনো ডলারসংকট চলছে। ডলার বিক্রি করার মতো পরিস্থিতিতে নেই ব্যাংকগুলো। এরপরও কিছু ব্যাংক উচ্চমূল্যে প্রবাসী আয়ের ডলার কিনে তা আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে কম মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে।
ব্যাংকগুলো এখন ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দামে প্রবাসী ও রপ্তানি আয়ের ডলার কিনছে। আর আমদানিকারকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম হচ্ছে ১১০ টাকা। তবে বেশির ভাগ ব্যাংক ডলার বিক্রিতে ১১০ টাকার বেশি দাম নিচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয়ে নিজেদের আড়াই শতাংশ প্রণোদনাসহ প্রতি ডলার কিনছে ১১২ টাকায়। আবার কিছু ব্যাংক ১২৩ টাকা দামেও প্রবাসী আয় কেনে। উচ্চ মূল্যে কেনা ডলার তারা কম মূল্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গত ৩০ নভেম্বর মোট রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলার, যা আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। তবে ২৮ ডিসেম্বর রিজার্ভ বেড়ে ২৭ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে, যা বিপিএম ৬ অনুযায়ী ২১ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের ঋণের কিস্তি ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) থেকে বাজেট সহায়তা এবং বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থছাড় হওয়ার ফলে রিজার্ভ বেড়েছে। তবে নভেম্বর-ডিসেম্বর এই দুই মাসের আকুর বিল জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে দিতে হবে। এতে করে আবারও রিজার্ভ কমে যাবে।
সূত্রে জানা যায়, করোনার সময় দেশে রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয় আসে। তখন ডলারের বাজার ও দাম স্থিতিশীল রাখতে ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজার থেকে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার কিনে নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বেড়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়; যা ছিল ইতিহাসের সর্বোচ্চ।
২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে সব মিলিয়ে ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত অর্থবছর (২০২২-২৩) বিক্রি করে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। এই ধারা অব্যাহত আছে চলতি অর্থবছরও। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ৬৭০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সব মিলিয়ে গত ১৮ মাসে রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার বাজারে ছেড়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অর্থনীতি
স্বর্ণের দাম বেড়েছে

দেশের বাজারে আবারও বেড়েছে স্বর্ণের দাম। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৮ টাকা।
স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বর্ণের এই নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) জানিয়েছে, এই নতুন দাম আগামীকাল রোববার (১৮ মে) থেকে কার্যকর হবে।
শনিবার (১৭ মে) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবর্তীতে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস আরও জানিয়েছে, স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যের সাথে আবশ্যিকভাবে সরকার নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট ও বাজুস নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ যোগ করতে হবে। তবে গহনার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
এনবিআরে কলম বিরতি চলবে কালও, রাজস্ব প্রশাসনে অচলাবস্থা

রাজস্ব অধ্যাদেশ বাতিল ও টেকসই সংস্কারের দাবিতে রবিবারও (১৮ মে) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং এর আওতাধীন ট্যাক্স, ভ্যাট ও কাস্টমস দপ্তরগুলোতে কলম বিরতি পালিত হবে।
শনিবার (১৭ মে) দুপুরে আয়োজিত কর্মসূচি শেষে এ তথ্য জানিয়েছে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’।
শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত টানা পাঁচ ঘণ্টার কর্মবিরতি শেষে তারা রবিবার আরো জোরালোভাবে ছয় ঘণ্টার কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়।
রবিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলবে এই কর্মসূচি।
তবে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, রপ্তানি কার্যক্রম এবং আসন্ন জাতীয় বাজেট প্রণয়ন— এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম আগের মতোই কলম বিরতির আওতার বাইরে থাকবে।
ঐক্য পরিষদের নেতারা জানিয়েছেন, এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব প্রশাসনকে দুই ভাগে ভাগ করে—রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ চালুর লক্ষ্যে যে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে, সেটি বাস্তবতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি হাজারো কর্মকর্তার মতামত উপেক্ষা করে চূড়ান্ত করা হয়েছে। সংস্কার কমিটির সুপারিশও গোপন রাখা হয়েছে, যা প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণমূলক সংস্কারের পরিপন্থী।
শনিবারের কর্মসূচিতে সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত থাকলেও কোনো দাপ্তরিক কার্যক্রম হয়নি। তবে অফিস কার্যক্রম স্থবির হলেও আন্দোলনকারীরা করদাতা ও সেবাপ্রার্থীদের সাময়িক ভোগান্তির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি তারা জানিয়েছেন, যৌক্তিক দাবি পূরণ হলে অতিরিক্ত সময় দিয়ে পেছানো কাজ দ্রুত সম্পন্ন করবেন।
ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়, আন্দোলনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষ্যে বহিরাগতদের জড়ানোর অপচেষ্টা চালানো হয়েছে।
তারা এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এ সময় তারা বিসিএস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন এবং বিসিএস কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনের অনির্বাচিত ও কার্যকরিহীন কমিটিকে ‘প্রতিনিধিত্বহীন’ বলে অভিহিত করেন। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এই কমিটিগুলোর নামে কোনো বক্তব্য বা কার্যক্রম শুধু ব্যক্তিগত বিবেচিত হবে এবং সংশ্লিষ্টরা দায় বহন করবেন।
এদিকে এনবিআরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আলোচনার মাধ্যমে চলমান সংকটের সমাধান চান তারা। প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপে সরকার শিগগিরই আলোচনায় বসবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেছেন।
তাদের দাবি, আন্দোলনের দরজা এখনো খোলা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মে রাতে সরকার ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ ২০২৫’ জারি করে, যার ফলে প্রায় পাঁচ দশকের পুরনো এনবিআর বিলুপ্ত হয়। এরপর থেকেই রাজস্ব প্রশাসনের তিন শাখার কর্মকর্তারা ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা’ নামে দুটি বিভাগ গঠন করে জারি করা অধ্যাদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জুয়েল আজাদ হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছেন।
আজ শনিবার আইনজীবী জুয়েল আজাদ সাংবাদিকদের জানান, বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর হাইকোর্ট বেঞ্চে এই রিটের ওপর শুনানি হতে পারে।
উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকার গত ১২ মে এনবিআর এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ নামে দুটি নতুন বিভাগ প্রতিষ্ঠা করে একটি অধ্যাদেশ জারি করে।
রিট আবেদনে এই অধ্যাদেশটিকে কেন সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক এবং আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। প্রাথমিক শুনানির পর আদালত রুল জারি করলে, সেই রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় অধ্যাদেশের কার্যক্রম স্থগিত রাখারও আবেদন করা হয়েছে। রিটে আইন সচিব ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে।
আইনজীবী জুয়েল আজাদ মনে করেন, অংশীজনদের সাথে কোনো প্রকার আলোচনা ছাড়াই এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এনবিআরকে বিলুপ্ত না করে বরং সংস্কার করা যেত।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
রাজস্ব ব্যবস্থা নির্বাহী বিভাগের করায়ত্ত হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে: টিআইবি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিষয়ক দুটি আলাদা বিভাগ তৈরি করতে তড়িঘড়ি করে অধ্যাদেশ জারি এবং এর ফলে রাজস্ব ব্যবস্থা নির্বাহী বিভাগের করায়ত্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
শনিবার (১৭ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি উদ্বেগ জানিয়ে বলে, নীতির স্বাধীনতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি, কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানো ও রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনার পৃথকীকরণের যে যৌক্তিক ভিত্তির ওপর ভর করে এ পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে, তার স্থলে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় নির্বাহী বিভাগ থেকে যে ন্যূনতম স্বাধীনতা ভোগ করার কথা তার সুযোগ থাকলো না।
উল্লেখ্য, এনবিআর সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত পরামর্শক কমিটির সুপারিশসমূহ পাশ কাটিয়ে তড়িঘড়ি অধ্যাদেশ জারির সিদ্ধান্ত নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে বলে মনে করে টিআইবি। রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যকে সমুন্নত রাখতে অবিলম্বে অধ্যাদেশটিকে যথোপযুক্ত সংশোধনের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি ।
এদিকে, সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘রাজস্ব খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কাজ একই কাঠামোর মধ্যে থেকে বের করে আনার দাবি বহুদিনের। কারণ একক কাঠামোর মধ্যে এই দুটি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া চলমান থাকায় অনেক সময় স্বার্থের দ্বন্দ্ব, যোগসাজশের দুর্নীতি, দীর্ঘসূত্রতার পাশাপাশি রাজস্ব লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থতা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিব্রতকর অবস্থায় নিমজ্জিত ছিলো। বিভিন্ন অংশীজন ও বিশেষজ্ঞসহ সর্বশেষ রাজস্ব বিষয়ক পরামর্শক কমিটিরও রাজস্ব ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণের পরামর্শ ছিলো। এ প্রেক্ষিতে অন্তবর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগের পেছনের নীতিগত সিদ্ধান্তকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখতে চাই। তবে রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত পরামর্শক কমিটির সুপারিশসমূহকে পাশ কাটিয়ে অধ্যাদেশ জারির উদ্দেশ্য কী? কার স্বার্থেই-বা অধ্যাদেশ প্রণয়নের ক্ষেত্রে এই সুপারিশসমূহ উপেক্ষা করা হলো? রাজস্ব ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার নামে যে বিকেন্দ্রীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সে প্রক্রিয়াটিই স্বচ্ছ কি-না, এমন প্রশ্ন ওঠাও অমূলক নয়। তা ছাড়া, এই তুঘলকি পরিবর্তনের ফলে এর মূল উদ্দেশ্য রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি কতটুকু বাস্তবায়িত হবে এ বিষয়ে নির্মোহ সংশ্লিষ্ট জ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ কতটুকু করা হয়েছে? ’
ড. জামান বলেন, ‘অধ্যাদেশে রাজস্ব বোর্ডের বিকেন্দ্রীকরণের নামে সরকারের, বিশেষত অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক উন্নত চর্চা অনুযায়ী, একটি দেশের রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও ব্যবস্থাপনার জন্য আইনি সুরক্ষা নিশ্চিতপূর্বক স্বতন্ত্র সংস্থা, বোর্ড বা এজেন্সি করা প্রয়োজন, যাতে তা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাবের আওতামুক্ত থাকে। অথচ, পরামর্শক কমিটির মূল সুপারিশকে উপেক্ষা করে দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাকে নির্বাহী বিভাগের অধীনস্ত দুটি বিভাগে পরিণত হয়েছে। ফলে কর নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও স্বার্থের সংঘাতসহ বিভিন্ন অনিয়মের সুযোগ থেকেই যাচ্ছে। এ সুযোগ আরো বাড়তে পারে- এমন সম্ভাবনাও অমূলক নয়। প্রত্যাশিত রাজস্ব অর্জন, রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে নবগঠিত বিভাগ দুটিকে আইনি সুরক্ষার মাধ্যমে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব বলয়ের বাইরে রাখার কোনো বিকল্প নেই। সরকারের এই সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে চলমান আন্তঃক্যাডার টেনশনে নতুন ইন্ধন জুগিয়েছে- তাও অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই।’
আবার রাজস্ব ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ করলেই প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যাবে- এমন ভাবার সুযোগ নেই উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘রাজস্ব নিরূপণ ও আদায়ে অনিয়ম এবং যোগসাজশমূলক জালিয়াতি যে বাংলাদেশে কর ফাঁকির অন্যতম মাধ্যম- তা মোটেও অজানা নয়। বিভিন্ন সময়ে নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও আমরা দেখেছি, আয়কর রিটার্ন দাখিল ও ভ্যাট আদায়-প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে অনলাইন করা যায়নি, হয়রানি ও দুর্নীতি কমেনি, চালান জালিয়াতি নিয়ন্ত্রিত হয়নি, করফাঁকি আর অর্থপাচার নিয়ন্ত্রিত হয়নি। দেশের কর জিডিপির অনুপাতও বাড়েনি বরং কমে গেছে এক যুগে। এর মধ্যেই পাবলিক অডিট অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর মাধ্যমে সরকার সিএজি’র রাজস্ব নিরূপণ নিরীক্ষার এখতিয়ার কেড়ে নিয়ে এ ক্ষেত্রে অনিয়মকে জবাবদিহির বাইরে রাখার অবারিত সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এসবের পেছনেও আমলাতন্ত্রের ভেতরে থাকা সংস্কার প্রতিরোধক স্বার্থান্বেষী মহল, যার প্রভাবে আরো একবার নীতি ও ব্যবস্থাপনাকে পৃথকীকরণের নামে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হলো। শুধু অধ্যাদেশ করে বা নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে আলাদা বিভাগ সৃষ্টি করে প্রত্যাশিত ফল আসবে না। রাজস্ব বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখার পাশাপাশি রাজস্ব ব্যবস্থায় নিয়োজিত লোকবলের নৈতিকতার চর্চা সমুন্নত রাখা, অটোমেশন, প্রত্যক্ষ কর আহরণে উদ্যোগী হওয়া অপরিহার্য।’
অবিলম্বে অধ্যাদেশটি স্থগিত করে বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে স্বাধীনভাবে সম্ভাবনা ও ঝুঁকি বিশ্লেষণপূর্বক ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বিকেএমইএর নতুন সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম

বিকেএমইএ পরিচালনা পর্ষদের ২০২৫-২৭ মেয়াদে অফিস বেয়ারার্স পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মোহাম্মদ হাতেম। নির্বাহী সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ফজলে শামীম এহসান। এছাড়া সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে অমল পোদ্দার, সহ-সভাপতি (অর্থ) পদে মোরশেদ সারোয়ার এবং পাঁচজন সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) নারায়ণগঞ্জে বিকেএমইএ’র প্রধান কার্যালয়ে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষে নির্বাচন বোর্ড কর্তৃক পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দেন প্রার্থীরা। এতে দেখা যায়- সভাপতি, নির্বাহী সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি, সহ-সভাপতি (অর্থ) ও পাঁচজন সহ-সভাপতি মিলিয়ে মোট নয়টি অফিস বেয়ারার পদের জন্য নয়টি মনোনয়নপত্র জমা পড়ে। নির্বাচন বোর্ড তা যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে।
যেহেতু নয়টি পদের বিপরীতে নয়টিই মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে, সেহেতু আলাদা করে নির্বাচনের প্রয়োজন হয়নি। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সব পদের প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। পাঁচজন সহ-সভাপতির মধ্যে রয়েছেন মো. সামসুজ্জামান, গাওহার সিরাজ জামিল (চট্টগ্রাম), আশিকুর রহমান, ফকির কামরুজ্জামান নাহিদ এবং মোহাম্মদ রাশেদ।
এছাড়া আগেই পরিচালক পদে নির্বাচিত হয়েছেন ২৬ জন। তাদের মধ্যে রয়েছেন- মনসুর আহমেদ, আহসান খান চৌধুরী, বেলায়েত হোসেন, ইমরান কাদের তুর্য, খন্দকার সাইফুল ইসলাম, এম. ইসফাক আহসান, আহেমদ নূর ফয়সাল, মো. আব্দুল হান্নান, মোহাম্মদ জাকারিয়া ওয়াহিদ, মহসিন রাব্বানি, শাহরিয়ার সাইদ, মোহাম্মদ শামসুল আজম, আব্দুল বারেক, মো. জামাল উদ্দিন মিয়া, নন্দ দুলাল সাহা, রতন কুমার সাহা, মো. মনিরুজ্জামান, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, মো. ইয়াসিন, রাজীব চৌধুরী, ফৌজুল ইমরান খান, মোহাম্মদ সেলিম, মিনহাজুল হক, মামুনুর রশিদ, রাকিব সোবহান মিয়া, সালাহ উদ্দিন আহমেদ।