জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে দ্বন্দ্ব নয় দরকার প্রতিযোগিতার

জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে দ্বন্দ্ব নয় দরকার প্রতিযোগিতার
আচ্ছা বলো তো, একটি ইলিশ মাছের পেটে কতগুলো ডিম থাকে? দশ থেকে পনের লাখ ডিম থাকে। ইলিশ মাছের পেটের লাখ লাখ ডিমের সবগুলোই মাছে পরিণত হয়, যার কারণে ইলিশের সংখ্যা লাখ লাখ গুণ বেশি মানুষের চেয়ে। বলো তো আকাশে কি পরিমাণ তারা রয়েছে? লক্ষ কোটির বেশি হবে! ভাবো তো একজন পুরুষের একবার যৌন মিলনে যে পরিমাণ বীর্য নির্গত হয় তাতে কতগুলো শুক্রাণু থাকে? যদি বলি পুরুষের বীর্যে ৪০ কোটি শুক্রাণু থাকে, তাহলে সে অনুযায়ী মেয়েদের গর্ভে যদি সমপরিমাণ শুক্রাণু স্থান পেতো তাহলে কোটি কোটি বাচ্চার জন্ম হতো। কিন্তু এই কোটি কোটি শুক্রাণু মায়ের জরায়ুর দিকে দ্রুততার সঙ্গে ছুটে গিয়ে মাত্র একটি শুক্রাণু ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিত হয় এবং সে মহা শক্তিশালী। সে ডিম্বাণুকে ফার্টিলাইজ করে বা ডিম্বাণুতে আসন গ্রহণ করে।

জানিনা এ শুক্রাণু ভাগ্যবান, নাকি জীবনযুদ্ধে জয়ী! যাইহোক না কেন তাদের মধ্যে মাত্র সেই ভাগ্যবান শুক্রাণুটি আমি, তুমি এবং সে মানে আমরা।

কোটি কোটি শুক্রাণুর মধ্যে মাত্র একজন মানুষের সৃষ্টি যা বিস্ময়কর ব্যাপার। সে শুক্রাণুর জন্মের শুরু থেকে মায়ের গর্ভ হতে বের হওয়া, তারপর তিলে তিলে বড় হওয়া, জীবনযুদ্ধে প্রতিযোগিতার মাঝে টিকে থাকা এক বিশাল ব্যাপার, যা ভাবতেই গা শিউরে উঠে। এত বড় দায়িত্ব নিয়ে আমাদের আগমন, আমরা সত্যিই বিশাল ভাগ্যবান মানুষ জাতি। তাইতো আমাদের জন্ম হয়েছে পৃথিবীর দায়িত্ব নেয়ার জন্য।

এত বড় ভাগ্য নিয়ে যাদের জন্ম তাদের জীবনের আত্মবিশ্বাস বিশাল সাগরের মতো হওয়ার কথা। অথচ অল্পতেই কেন যেন আমাদের মধ্যে ভেঙ্গে পড়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। কেন এত হতাশা আর কেনোই বা নিরাশা? যদি প্রশ্ন করি কী আছে জীবনে বা কী নেই জীবনে? জানিনা কী হবে উত্তর! হয়তো শুধু নেই, নেই আর নেই। মনে হবে আমি নেই, আমার কিছু নেই শেষে আমি নিজেই নেই, আমি হারিয়ে গেছি নেইয়ের মাঝে।

আমি হারবো, আমি হার মানবো। আমি জিতবো, জেতার উল্লাসে উল্লাসিত হবো। কিন্তু হঠাৎ যদি জীবন চলার পথে বাঁধা আসে আর সে বাঁধার কারণে যদি ভেঙে পড়ি বা বাঁচতে না চাই, তাহলে তো চলবে না। আমাদের জীবনে মাঝে মধ্যে এমন ধরনের ঘটনা দেখা দেয় বা দিতে পারে। ঠিক তখন ভাবতে হবে সেই কোটি কোটি শুক্রাণুর মধ্যে আমি ছিলাম সেই শক্তিশালী, যে ডিম্বাণুকে ফার্টিলাইজ করে জিতেছিল। আমাদের চিন্তায় সবসময় রাখতে হবে যে আমি শুরুতে জিতেছি, আমি মাঝপথেও জিতবো, আমি শেষেও জিতবো।

আমি আমার মনকে মাঝে মধ্যে প্রশ্ন করি, কী প্রতিভা আছে আমার মধ্যে? আমি আমার মনের চাওয়াকে সব সময় মূল্য দিই, সব সময় স্রষ্টাকে স্মরণ করি। কারণ কী জানো? আমি যখন মায়ের গর্ভে ছিলাম তখন কিন্তু আমার কিছুই করা লাগেনি শুধু একটি নাড়ির সংযোগে মায়ের সঙ্গে একটি সুমধুর সম্পর্ক সৃষ্টিকর্তা এমনভাবে যুক্ত করে দিয়েছেন যে যা দরকার সব পেয়েছি। কখনও বুঝতে পারিনি যে একদিন হাত দিয়ে খেতে পারবো, পা দিয়ে হাঁটতে পারবো, কথা বলতে পারবো ইত্যাদি। বুঝতে পারিনি যে আমার চারিপাশ জুড়ে মা বিরাজমান, মা কী বিশাল জিনিস। পরে মায়ের গর্ভ থেকে পৃথিবীতে যখন এলাম তখনও কিন্তু মা-ই সব দায়িত্ব নিয়ে আমাকে লালন পালন করেছেন।

আস্তে আস্তে বুঝতে এবং শিখতে শুরু করলাম। পরে কোনো এক সময় এই উপলব্ধিটা হয়েছিল হৃদয়ে সেটা হলো ভাবতে শেখা, কে সব কিছুর পেছনে জড়িত এবং কে সেই মহাশক্তির অধিকারী? তখনই বুঝতে পেরেছি স্রষ্টার রহমত এবং তাঁর অদৃশ্য অস্তিত্ব। এর ফলে দেখা যাচ্ছে আমি বেশ ভালোই আছি। মনের জোর নিয়ে যুদ্ধ করতে করতে দেখা যাচ্ছে আমি জিতেই চলেছি।

আচ্ছা এগুলো গেল আমার কথা, কিন্তু নতুন প্রজন্মের অবস্থা কি? তাদের তো জীবন চলার পথ শুরুই হয়নি। তবে তারা কেন নিরাশ আর হতাশ? তারা কেন পরাজিত? তারা তো সেই শক্তিশালী শুক্রাণু যারা যুদ্ধে জয়ী হয়ে ফার্টিলাইজেশনে জিতে পৃথিবীতে এসেছে। তাদের কাজ এখন পৃথিবীকে সুন্দর করে গড়ে তোলা। যেখানে সুশিক্ষা এবং সুপরিবেশে থাকবে ভরপুর এবং তাদের কাজ হবে শুধু নিজের দেশ নয় পুরো পৃথিবীকে স্বাধীন রাখা।

ওগো হে নতুন প্রজন্ম; মনে রেখো তোমরা পরাজিত সৈনিক নও, তোমরা বিজয়ী। বিজয়ের পতাকা তোমাদের হাতে থাকার কথা। অথচ ইয়াবা, ছুরি, বন্দুক নিয়ে তোমরা অন্ধকারে কী করছো? তোমরা না সেই বীর সৈনিক, যারা জয়ী হয়েছিলে ৪০ কোটি শুক্রাণুর মধ্যে! ইয়াবা, ছুরি, বন্দুক মানায় কী তোমাদের হাতে? ওসব ছাড়ো, ভয়কে জয় করতে দরকার আত্মবিশ্বাসের, তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে শেখো, জয় তোমাদের হবেই।

মনে রেখো জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে দ্বন্দ্ব নয় দরকার প্রতিযোগিতার কারণ, You are the world, You are the children. You are the ones who's going to make a brighter day, so let's start giving. There's a choice you're making..!

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন।rahman.mridha@gmail.com

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

খেলাপির ফাঁদে ব্যাংক খাত: সমাধান কোন পথে
বাণিজ্যিক বিবেচনায়  ‘সৌরবিদ্যুৎ’ টেকসই এবং অনেক বেশি লাভজনক
কক্সবাজার: বাংলাদেশে অফুরন্ত পর্যটন সুযোগ উন্মোচন
বাংলাদেশে ঈদ উৎসব ও ব্যাংক ব্যবস্থাপনা
অর্থনৈতিক উন্নয়ন তরান্বিত করতে বন্ধ করতে হবে মানিলন্ডারিং
ওএসডি কোন নীতিমালার মধ্যে পড়ে
নেট দুনিয়ার ব্যাংকিং
সর্বজনীন কল্যাণে ইসলামী ব্যাংক: আন্তরিক সেবার ৪০ বছর
সুইডেনের ইনফ্লেশন ১২ শতাংশ, গোল ২ শতাংশ
ব্যাংকের নাম: লিমিটেড থেকে পিএলসি