পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিলে বোনাস লভ্যাংশ জমা দেওয়ার নির্দেশ বিএসইসি’র

পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিলে বোনাস লভ্যাংশ জমা দেওয়ার নির্দেশ বিএসইসি’র
পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও তারল্য সংকট দূর করতে কাজ করে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরই ধারাবাহিকতায় ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড’ বা ‘পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিল’ গঠন করেছে সংস্থাটি। ফান্ডে ইতোমধ্যে নগদ লভ্যাংশের টাকা জমা পড়েছে। এবার বোনাস লভ্যাংশ জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে বিএসইসি।

এ বিষয়ে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ অর্থসংবাদকে বলেন, বোনাস লভ্যাংশ বিতরণ হয়নি এমন শেয়ার পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিলে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কোম্পানিগুলোকে ”ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে” এই অর্থ জমা দিতে বলা হয়েছে।

বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, বুধবার (২৪ নভেম্বর) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি জারি করা এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা ও পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল বিধিমালার বরাত দিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, অদাবীকৃত বা অনিষ্পত্তীকৃত কিংবা বরাদ্দ করা হয়নি এমন বোনাস লভ্যাংশ বা অদাবীকৃত রাইট শেয়ার ঘোষণা, অনুমোদন কিংবা রেকর্ড ডেটের পর তিন বছর সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে এসব শেয়ার পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলের বিও হিসাবে জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে জমা দেয়ার আগে অবশ্যই ইলেকট্রনিক শেয়ারে রূপান্তর করে জমা দিতে হবে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, লভ্যাংশ বিতরণ প্রতিবেদন এবং এসব শেয়ারধারীর বিস্তারিত তথ্য কমিশন, স্টক এক্সচেঞ্জ ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) কাছে জমা দিতে হবে। শেয়ার হস্তান্তরের আগে শেয়ারধারীদের ৩০ দিনের আগাম নোটিস দিতে হবে। নোটিসের সময়সীমা শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে শেয়ার হস্তান্তর কার্যক্রম শেষ করতে হবে। তবে শেয়ার হস্তান্তর কার্যক্রম আগামী বছরের ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। একই সাথে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে” (সিএমএসএফ) একটি বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব খোলার জন্য বলা হয়েছে।

বিএসইসির এ চিঠিটি পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) প্রেসিডেন্ট, ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটের কোম্পানিসহ তালিকাভুক্ত সব কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী, সব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী, দুই স্টক এক্সচেঞ্জ, সিডিবিএল ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি দুই স্টক এক্সচেঞ্জ, সিডিবিএল ও আইসিবিকে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলের বিও হিসাব খোলা ও তালিকাভুক্ত কোম্পানির কাছ থেকে শেয়ার জমা করার বিষয়টি তদারক করা এবং কমিশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

কমিশনের কাছে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জমা দেয়া তথ্যানুসারে, বোনাস ও নগদ লভ্যাংশ মিলিয়ে এ পর্যন্ত পুঞ্জীভূত অপরিশোধিত লভ্যাংশের মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৯৪২ কোটি ৩৯ লাখ ৫৫ হাজার ১০৩ টাকায়। এর মধ্যে স্টক লভ্যাংশ ১৯ হাজার ৯৮৬ কোটি ও নগদ লভ্যাংশ ৯৫৬ কোটি টাকা। মোট অপরিশোধিত লভ্যাংশের মধ্যে ১০ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকাই রয়েছে শীর্ষ ১০ কোম্পানির কাছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে এককভাবে সবচেয়ে বেশি ৮ হাজার ৮০৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকার অপরিশোধিত লভ্যাংশ রয়েছে তামাক খাতের বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেডের (বিএটিবিসি) কাছে। এর মধ্যে ৮ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা স্টক লভ্যাংশ।

এছাড়া ন্যাশনাল টি কোম্পানির কাছে ৯২৩ কোটি ৬৮ লাখ, আইসিবির ২২২ কোটি ৯১ লাখ, ইসলামী ব্যাংকের ২৪৯ কোটি ৩৭ লাখ, উত্তরা ব্যাংকের ১৯৬ কোটি ৪৫ লাখ, ন্যাশনাল টিউবসের ১৯০ কোটি ১৩ লাখ, রাষ্ট্রায়ত্ত এটলাস বাংলাদেশের ১৫০ কোটি ৩৮ লাখ, ইলেকট্রনিকস ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স খাতের বহুজাতিক কোম্পানি সিঙ্গার বাংলাদেশের ১৪২ কোটি ৪৮ লাখ ও ব্যাংক এশিয়ার কাছে ৯৩ কোটি ২৫ লাখ টাকার অপরিশোধিত স্টক লভ্যাংশ রয়েছে।

অপরদিকে এরই মধ্যে কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে যেসব কোম্পানি পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলে অপরিশোধিত নগদ লভ্যাংশের অর্থ জমা দেয়নি তাদের প্রত্যেকের বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) বিএসইসির কাছে এ বছরের ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিবেদন পাওয়ার পর লভ্যাংশ জমা না দেয়া এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এর আগে চলতি বছরের ৩ মে কমিশন সভা করে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। গত ২৭ জুন এ তহবিলের গেজেট প্রকাশ করা হয়। তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিতরণ না হওয়া প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার লভ্যাংশ নিয়ে এ তহবিল গঠন করা হচ্ছে। এ তহবিলটি পরিচালনার জন্য ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড রুলস, ২০২১’ প্রণয়ন করা হয়েছে।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ফু-ওয়াং সিরামিকের লভ্যাংশ অনুমোদন
এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা
ডিএসইতে মোবাইল গ্রাহক-লেনদেন দুটোই কমেছে
বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে ৯ কোম্পানি
পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আজ
বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪০ শতাংশ
রবিবার পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলেও চলবে দাপ্তরিক কার্যক্রম
লোকসানে ৮ খাতের বিনিয়োগকারীরা
সাপ্তাহিক রিটার্নে মুনাফায় ১০ খাতের বিনিয়োগকারীরা
খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে প্রকৌশল খাত