টিআইবি এই বিপুলসংখ্যক কোম্পানি এত দিন কীভাবে করব্যবস্থার আওতার বাইরে ছিল এবং এর মাধ্যমে ঠিক কী পরিমাণ কর ফাঁকির ঘটনা ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখার দেখার আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দুর্বলতা চিহ্নিত করে তা নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এনবিআরের করপোরেট কমপ্লায়েন্স নিয়ে গঠিত টাস্কফোর্সেও করজালের বাইরে থাকা বিপুল পরিমাণ কোম্পানি খুঁজে বের করাই প্রমাণ করে দেশে আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও সুশাসনের ঘাটতি কতটা প্রকট। একটি নিবন্ধিত কোম্পানি অর্ধশতাব্দী ধরে ব্যবসা করছে অথচ কখনোই কর দেয়নি; আবার মাত্র দুটি ঠিকানায় ১ হাজার ৪০০ কোম্পানির নিবন্ধন কিংবা একই ব্যক্তি ৪৬টি কোম্পানির পরিচালক কিন্তু টিআইএন আছে মাত্র ৪টির—এসব তথ্য রূপকথার অনিয়ম ও আর্থিক অব্যবস্থাপনাকেও হার মানায়।
ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, এক দিনে বা রাতারাতি এই বিপুলসংখ্যক কোম্পানি কর ফাঁকি দেওয়ার সংস্কৃতির চর্চা যেমন শুরু করেনি তেমনি স্বল্প সময়ের ব্যবধানেও তারা এই অনৈতিক সুযোগ গ্রহণ করছে না। সংশ্লিষ্ট অনেকেরই যোগসাজশে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার পাশাপাশি প্রক্রিয়াগত প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা চিহ্নিত করে তা দ্রুত নিরসন করা জরুরি।
এদিকে টিআইএনবিহীন কোম্পানি সম্পর্কে টাস্কফোর্সের প্রাথমিক প্রতিবেদনে ‘দুর্নীতিতে নিমজ্জিত বেদনাক্রান্ত দেশের করুণ চিত্র’ এবং ‘দেশের আর্থিক খাতের সুশাসনের ঘাটতি’ শীর্ষক মন্তব্য দুটির সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।
তিনি বলেন, এর দায় সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান ও কর্তৃপক্ষের। কেননা এক ঠিকানায় শতাধিক কোম্পানির নিবন্ধন দেওয়া হলেও তা চিহ্নিত করার ব্যবস্থা যে যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের (আরজেএসসি) নেই, তা স্পষ্ট। তেমনি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সহযোগিতাকারী একশ্রেণির ‘ল ফার্ম’–এর দায়হীন আচরণও সমভাবে দায়ী। আবার ৭৮ হাজারেরও অধিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের টিআইএন থাকা সত্ত্বেও মাত্র ২৬ হাজারের (প্রতিবেদনে ছাপা হয়েছে ২৮ হাজার কোম্পানি) আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া এবং এর মধ্যে অর্ধেক প্রতিষ্ঠানই ভুয়া নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দিয়ে বিপুল কর ফাঁকি দেওয়ার বিষয় আলোচিত হলেও এত দিন এসব যাচাইয়ে এনবিআরের কার্যকর উদ্যোগের ঘাটতি ছিল। তাই ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে এখনই কার্যকর কর্মকৌশল নির্ধারণ ও সংস্থাগুলোর মধ্যকার প্রযুক্তিগত সংযোগ ও সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ সবাই যাতে হয়রানিমুক্ত পরিবেশে সহজ পদ্ধতিতে কর প্রদানের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা রাখতে পারে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা জরুরি। একই সঙ্গে করের আওতায় আনার চলমান প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যাতে হয়রানি বা হেনস্তার শিকার না হয়, সে ব্যাপারেও সচেষ্ট থাকার আহ্বান জানান ইফতেখারুজ্জামান।