বিশেষ সুবিধায় কালোটাকা শেয়ারবাজারে আনতে নতুন আইন

বিশেষ সুবিধায় কালোটাকা শেয়ারবাজারে আনতে নতুন আইন
শেয়ারবাজার ও আবাসন খাতকে চাঙা করতে কালোটাকা বিনিয়োগের বিশেষ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এর জন্য নতুন বিধান করা হচ্ছে। এ টাকা বিনিয়োগের ফলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বা অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করতে পারবে না। এ জন্য আয়কর অধ্যাদেশে সংশোধনী আনা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের সূত্রমতে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বিশেষ সুবিধা বাতিল হচ্ছে, কিন্তু আগের ৩ পদ্ধতিতে টাকা সাদা করা যাবে। এ জন্য কোনো সংস্থা যাতে আয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইতে না পারে সে জন্য আয়কর অধ্যাদেশে প্রভিশন রাখা হচ্ছে। অর্থাৎ নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে কালোটাকা পুঁজিবাজার ও আবাসন খাতে বিনিয়োগ করলে কোনো সংস্থা প্রশ্ন করবে না।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান অর্থসংবাদকে বলেন, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। তবে বাস্তবতার আলোকে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখলে অর্থপাচার কমার সম্ভাবনা থাকে। ফলে দেশের টাকা দেশেই থাকবে এবং অর্থনীতিতে এর অবদান থাকবে। শেয়ারবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ রাখা ইতিবাচক। তবে এ সুযোগ প্রতিবছর দেয়া উচিৎ নয়।

মূলধারার অর্থনীতিতে কালোটাকা আনতে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটে বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ১০ শতাংশ কর দিয়ে শেয়ারবাজার ও আবাসন খাতে এ টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়, যা চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। তবে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ সুযোগের মেয়াদ না বাড়ানোয় আইনগতভাবে তা বাতিল হচ্ছে। এ সুযোগ বাতিল করার কারণ হচ্ছে- দেশে ব্যক্তিশ্রেণির সর্বোচ্চ কর হার ২৫ শতাংশ। কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ অব্যাহত রাখলে করদাতারা নিয়মিত কর না দিয়ে তা পরে ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে টাকা বৈধ করার চেষ্টা করতে পারেন। এতে রাজস্ব আদায় কমার পাশাপাশি সৎ ও নিয়মিত করদাতাদের নিরুৎসাহিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

তাই শেয়ারবাজার ও আবাসন খাতে কেউ কালোটাকা সাদা করতে চাইলে স্বাভাবিক যে হারে কর দিতে হয়, তাকে এর অতিরিক্ত আরও ১০ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে। এতে দুদক বা অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করবে না। এজন্য ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে আয়কর অধ্যাদেশে নতুন দুটি ধারা যুক্ত করা হয়। ১৯এএএএ ধারায় ১০ শতাংশ কর দিয়ে শেয়ারবাজারে অপ্রদর্শিত বিনিয়োগ রিটার্নে দেখানোর সুযোগ দেওয়া হয়। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্টক, শেয়ার, মিউচ্যুয়াল ফান্ড, বন্ড, ডিবেঞ্চার ও অন্য সিকিউরিটিজ এবং শেয়ারবাজারে ক্রয়-বিক্রয়যোগ্য সব সরকারি সিকিউরিটিজ ও বন্ডে এ সুযোগ থাকবে।

এক্ষেত্রে শর্ত দেওয়া হয়, ঘোষণা দেওয়ার পর এক বছর বিনিয়োগকৃত অর্থ শেয়ারবাজার থেকে ওঠানো যাবে না। একইভাবে একই হারে কর দিয়ে ১৯এএএএএ ধারায় জমি-ফ্ল্যাট ও নগদ অর্থ প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়। ১০ শতাংশ কর দিয়ে টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ায় একে ‘বিশেষ সুবিধা’বলা হচ্ছে।

এর বাইরেও আরও ৩ পদ্ধতিতে কালোটাকা সাদা করা যায়। আয়কর অধ্যাদেশের ১৯(ই) ধারা অনুযায়ী, নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে যে কোনো খাতেই কালোটাকা বিনিয়োগ করা যায়। শুধুমাত্র আবাসন খাতের জন্য ১৯বিবিবিবিবি নামে আয়কর অধ্যাদেশে আলাদা একটি ধারা আছে। এ ধারা মতে, এলাকাভিত্তিক নির্ধারিত হারে কর পরিশোধের মাধ্যমে কালোটাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ দিয়ে ফ্ল্যাট কেনা যায়। ১৯ডিডি ধারা অনুযায়ী, ১০ শতাংশ কর দিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ করা যায়।

কালোটাকাকে অর্থনীতির মূল ধারায় আনতে স্বাধীনতার পর থেকে নানাভাবেই এই টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের একাংশ এর বিরোধিতা করে আসছে। ’৭১-৭৫ সাল পর্যন্ত ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা সাদা করা হয়েছে। তৎকালীন সময়ে এ থেকে সরকার মাত্র ১৯ লাখ টাকা আয়কর পায়। পরে এ সুবিধা বহাল থাকায় প্রতি বছরই কালোটাকা সাদা করার পরিমাণ বাড়তে থাকে। ’৭৬-৮০ সাল পর্যন্ত ৫০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা সাদা করা হয়, সরকার আয়কর পায় ৮১ লাখ টাকা। ’৮১-৯০ পর্যন্ত ৪৫ কোটি টাকা সাদা হয়, সরকার আয়কর পায় ৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। ’৯১-৯৬ পর্যন্ত ১৫০ কোটি টাকা সাদা হয়, আয়কর আদায় হয় ১৫ কোটি টাকা।

পরবর্তীতে ধারাবাহিকভাবে কালোটাকার পরিমাণ বাড়তে থাকে। ১৯৯৭-২০০০ সাল পর্যন্ত এক লাফে ৯৫০ কোটি টাকা সাদা হয়, আয়কর আদায় হয় ১৪১ কোটি টাকা। পরের ৭ বছর অর্থাৎ ২০০১-০৭ পর্যন্ত ৮২৭ কোটি টাকা, ২০০৭-০৯ পর্যন্ত এক হাজার ৬৮২ কোটি টাকা, ২০০৯-১৩ পর্যন্ত এক হাজার ৮০৫ কোটি টাকা ও ২০১৩-২০ পর্যন্ত ১১ হাজার ১০৭ কোটি টাকা মূল ধারার অর্থনীতিতে প্রবেশ করে। এ থেকে সরকার রাজস্ব পায় যথাক্রমে ১০২ কোটি, ৯১১ কোটি, ২৩০ কোটি ও এক হাজার ৭৩ কোটি টাকা।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ফু-ওয়াং সিরামিকের লভ্যাংশ অনুমোদন
এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা
ডিএসইতে মোবাইল গ্রাহক-লেনদেন দুটোই কমেছে
বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে ৯ কোম্পানি
পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আজ
বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪০ শতাংশ
রবিবার পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলেও চলবে দাপ্তরিক কার্যক্রম
লোকসানে ৮ খাতের বিনিয়োগকারীরা
সাপ্তাহিক রিটার্নে মুনাফায় ১০ খাতের বিনিয়োগকারীরা
খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে প্রকৌশল খাত