চিকিৎসা ও সুরক্ষা সামগ্রি তৈরি শুরু করেছে দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো

চিকিৎসা ও  সুরক্ষা সামগ্রি তৈরি শুরু করেছে দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো
চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস এখন মহামারী আকার ধারন করেছে। ইতোমধ্যে চীনে কিছুটা স্বস্থিকর অবস্থা বিরাজ করলেও ইতালি, স্পেন ও যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বাংলাদেশেও ইতোমধ্যে ৪৭ জন করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়েছে। এই ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। একই সঙ্গে এদিয়ে আসছে দেশের পোশাক কারখানা ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। ইতোমধ্যেই করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রি তৈরি শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। স্মার্ট গ্রুপ, কনফিডেন্স গ্রুপ, বিপপা ও বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশন (বিআইপিপিএ) পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই), মাস্ক ও অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রি তৈরি শুরু করেছে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কেন্দ্রীয় ঔষুধালয় ইপিজেডের বিশেষায়িত পোশাক কারখানা স্মার্ট জ্যাকেট লিমিটেড ইতোমধ্যেই এক লাখ পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) তৈরি করেছে। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি তৈরিকৃত ৫০ হাজার পিপিইর প্রথম চালান ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ পিপিইগুলো চিকিৎসক, নার্সরা ব্যবহার করবেন। স্মার্ট গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানটি এ ধরনের পিপিই বানাতে অভিজ্ঞ বলে পরিচিত।

কারখানা সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের কেন্দ্রীয় ঔষধালয়ের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি কার্যাদেশের মাধ্যমে এক লাখ পিপিই তৈরির অর্ডার দেয়া হয়। গতকাল এ কার্যাদেশ পেয়েই কারখানার শ্রমিকরা কাজে নেমে পড়েন। একদিনেই ৫০ হাজার পিপিই তৈরি করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আগামীকালের মধ্যেই বাকি সব পিপিই তৈরি শেষ করার কথা জানিয়েছেন কারখানা সংশ্লিষ্টরা।

স্মার্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানকেই সরকার পিপিই তৈরির জন্য পছন্দ করেছে। সরকারের কার্যাদেশ পাওয়ার পর থেকে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পিপিই তৈরির নির্দেশনা দিয়েছি। সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে পিপিই তৈরি করা হচ্ছে। সরকারও এই পিপিই তৈরিতে আমাদের পর্যাপ্ত সহযোগিতা করছে। পিপিই তৈরির মাধ্যমে আমরাও করোনা মোকাবিলায় সরকারের পাশে দাঁড়াতে পেরে আনন্দিত। সিইপিজেডে স্মার্ট জ্যাকেটের কারখানায় চতুর্থ তলায় একটি বিশেষায়িত ফ্লোরের ১৩টি লাইনে ৭৩০ শ্রমিক পিপিই তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধারদের নির্দেশ আছে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করার। ১৩টি লাইনের আলট্রাসনিক মেশিনে পিপিইগুলো তৈরি করা হচ্ছে। কোন ধরনের সেলাই ছাড়াই তিনটি রঙের পিপিই তৈরি হচ্ছে, যেগুলো পানি ও বায়ু প্রতিরোধক।

একই সঙ্গে ডাক্তার, নার্স এবং অন্যান্য চিকিৎসা সহায়তা কর্মী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সংবাদ কর্মীদের মধ্যে পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) বিতরণ শুরু করেছে দেশের অন্যতম প্রধান শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান কনফিডেন্স গ্রুপ এবং বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশন (বিপপা)। প্রাথমিকভাবে ৪ হাজার পিপিই বিতরণের কাজ শুরু হয়েছে। বিপপা এর পক্ষ থেকে পুলিশ বাহিনীর সদস্যের জন্য ২০০০ সেট পিপিই সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সচিবালয়ে তার দফতরে হস্তান্তর করেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং বিপপা-এর প্রেসিডেন্ট ও কনফিডেন্স গ্রুপের ভাইস চেয়াম্যান ইমরান করিম। এরপর বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ও ইমরান করিম স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পিপিই বিতরণে তাদের উদ্যোগের কথা জানান এবং এই উদ্যোগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা কামনা করেন।

পিপিই তৈরি সঙ্গে যুক্ত রয়েছে তুসুকা গ্রুপের একটি কারখানা। তুসুকা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বিজিএমইএর সহ-সভাপতি আরশাদ জামাল দিপু বলেন, এ ধরনের পোশাকের জন্য বিশেষায়িত কাপড়ের প্রয়োজন হয়। ওয়ান নাইনটি টি টাফেডা কাপড় যা শতভাগ পলিয়েস্টার। এসব কাপড়ের জোগানও চ্যালেঞ্জিং। তবে অনেক উদ্যোক্তা এগিয়ে এসেছেন। গতকালও বন্দরে এ ধরনের কাপড়ের চালান খালাস হয়েছে। সব মিলিয়ে এটি হাতে আসতে এক সপ্তাহ সময় লাগবে।

এ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িতরা জানিয়েছেন, যে পিপিই তৈরি হচ্ছে, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) শতভাগ মান হয়তো পূরণ করে না। কিন্তু এর মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে। কেননা ডাক্তারদের বাইরেও চিকিৎসা সেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের বড়ো অংশের জন্যও পোশাকের প্রয়োজন রয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পিপিই মূল চিকিৎসকদের জন্য সরবরাহ করা হলেও এর সঙ্গে যুক্ত অন্যরা দেশে উৎপাদিত এসব পিপিই থেকে উপকৃত হবেন।

এ কার্যক্রমে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী ও মোহাম্মদী গ্রুপের পরিচালক নাভিদ উল হক গতকাল বলেন, প্রাথমিকভাবে ২০ থেকে ২৫ হাজার পিপিই তৈরি করা হচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যে এটি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। তবে একবার সরবরাহ পর্যায়ে গেলে পরবর্তী ধাপে আরও বেশি হারে তৈরির কাজ দ্রুত এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। এই পিপিই ডব্লিউএইচও’র শতভাগ মান অনুযায়ী না হলেও করোনার বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহায়ক হবে। কাপড় হুবহু এক না হলেও এটি শতভাগ পানিরোধী। অর্থাৎ করোনাভাইরাস রোধে এই ডিজাইন ও ফেব্রিকের পিপিই কাজে দেবে।

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দেশও বাংলাদেশের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ইতোমধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্তে চীন সরকারের সহায়তা হিসাবে টেস্ট কিট ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণসহ (পিপিই) বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম বাংলাদেশে পৌঁছেছে। চীনের কুনমিং থেকে আসা একটি কার্গো উড়োজাহাজ গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের হাতে সরঞ্জামগুলো তুলে দেন ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি. জিমিং।

অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ জানান, চীন থেকে দ্বিতীয় দফায় আসা এই মেডিকেল সরঞ্জামের মধ্যে ১০ হাজার টেস্ট কিট, চিকিৎসক-নার্সদের জন্য ১০ হাজার পিপিই, ১৫ হাজার এন৯৫ মাস্ক এবং এক হাজার ইনফ্রারেড থার্মোমিটার রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের এই মহাপরিচালক বলেন, দুই দেশের বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসাবে আমরা এ ধরনের উপহার বিনিময় করেছি। বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম কার্গো বিমানে এসেছে, আমরা সেগুলো গ্রহণ করলাম। চিকিৎসক ও নার্সদের সমন্বয়ে একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর অনুরোধ আমরা করেছিলাম। আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি, মান্যবর রাষ্ট্রদূত চীন সরকারের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

নতুন সুদহার নির্ধারণ করল বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাগেজ রুলের অপব্যবহারে ধ্বংস হচ্ছে জুয়েলারি শিল্প
বছর ঘুরলেও প্রবাসী আয়ে গতি ফিরেনি
বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার
পা-বিহীন টিকটিকিসহ শতাধিক নতুন প্রজাতির আবিষ্কারের বছর ২০২৩
গ্রাহক সংখ্যায় দেশসেরা প্রতিষ্ঠান নগদ
বছরজুড়ে আলোচনায় খেলাপি ঋণ, সুদহার ও বিনিময়হার
প্রথম দিনেই ২ লাখের বেশি পণ্যের অর্ডার পেলো ইভ্যালি
তিন মাসের মধ্যে সব দেনা পরিশোধ শুরু করবো
পোশাকশিল্পকে রাজনৈতিক হাতিয়ার না বানানোর অনুরোধ