খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৯৫ হাজার ৮৫ কোটি টাকা

খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৯৫ হাজার ৮৫ কোটি টাকা
করোনা মহামারি বিবেচনায় ঋণ পরিশোধে দেওয়া হয়েছে কিছু বিশেষ সুবিধা। এতে ঋণ পরিশোধ বাড়বে, এমন আশা করা হয়েছিল। কিন্তু এই সুবিধা দেওয়ার পর উল্টো ঋণ পরিশোধ না করার প্রবণতা বেড়েছে ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে। ফলে লাগামহীনভাবে বাড়ছে খেলাপি ঋণ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, দেশে এখন খেলােপি ঋণের পরিমাণ ৯৫ হাজার ৮৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।

খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াকে ভালো চোখে দেখছেন না অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের ঋণ আদায়ে শিথিলতা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ কারণে সে সময় শেষে মোট খেলাপি কমেছিল। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এ বিষয়ে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ তাদের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, সব শেষে (জানুয়ারি-মার্চ) ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৬৫৮ কোটি। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ৯৫ হাজার ৮৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। কিন্তু তিন মাস আগেও খেলাপি ঋণের হার ছিল ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

সরকারি ব্যাংক ঋণ বিতরণ করেছে দুই লাখ সাত হাজার ৭৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ৪৩ হাজার ৪৫০ টাকা। বেসরকারি ব্যাংক আট লাখ ৭৯ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৫ হাজার ৯০ কোটি টাকা।

বিশেষায়িত ব্যাংক ৩০ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা বিতরণ করেছে, এর মধ্যে খেলাপি চার হাজার ৮৬ কোটি টাকা। বিদেশি ব্যাংক ৫৯ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। তাদের খেলাপি দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা।

তিন মাস আগে খেলাপি ঋণের পরিমাণ পাঁচ হাজার ৫৯৭ কোটি ২৬ হাজার টাকা কমে ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি ছয় লাখ টাকা ছিল, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ।

২০২০ শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ১১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৭৫ কোটি ৫৩ লাখ। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি ৬ লাখ টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। কিন্তু তিন মাস আগেও খেলাপি ঋণের হার ছিল ৮.৮৮ শতাংশ।

জানা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ঋণ খেলাপির শীর্ষে রয়েছে জনতা ব্যাংক। মার্চ শেষে ব্যাংকটির মোট বিতরণ করা ঋণের ১৩ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা, বা ২৩ শতাংশ খেলাপি। বেসরকারি ব্যাংকের টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি খেলাপি এবি ব্যাংকের। এই ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা, বা প্রায় ১৭ শতাংশ। বিদেশি খাতের সবচেয়ে বেশি খেলাপি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের। তাদের মোট ঋণের প্রায় ৯৮ শতাংশ বা ১৩৫৯ কোটি টাকাই খেলাপি।

এদিকে খেলাপিদের জন্য জারি করা নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, যেসব চলমান ঋণের মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে এবং নতুন করে নবায়ন করা হয়নি, এসব ঋণের শুধু সুদ পরিশোধ করলেই ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত নিয়মিত রাখতে হবে। এছাড়া যেসব গ্রাহকের ২০২০ সালের সুদ বকেয়া রয়েছে, তারা চলতি বছরের মার্চ থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে ৬টি ত্রৈমাসিক কিস্তির মাধ্যমে বকেয়া পরিশোধ করতে পারবেন। একইসঙ্গে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত যে সুদ আসে, তাও ত্রৈমাসিক কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। আগে চলমান ঋণের কিস্তি প্রতি মাসে পরিশোধ করতে হতো। এছাড়া তলবি ঋণ চলতি মার্চ থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮টি ত্রৈমাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করা যাবে। এভাবে শোধ হলে ঋণ খেলাপি করা যাবে না।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

বিদেশি ডেবিট কার্ডে অর্থ তোলা বন্ধ করল ইবিএল
এসবিএসি ব্যাংকের নতুন এএমডি নূরুল আজীম
বছরজুড়ে আলোচনায় খেলাপি ঋণ, সুদহার ও বিনিময়হার
বিকাশের প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা মাহফুজ মারা গেছেন
ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন পর্ষদের ৩ কমিটি গঠন
ব্যাংকে চাকরির আবেদনের বয়সসীমা শিথিল
মাসিক সঞ্চয় হিসাব খোলা যাচ্ছে বিকাশ অ্যাপে
ফের এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন
অফিসার পদে ৭৮৭ জনকে নিয়োগ দেবে সরকারি ৫ ব্যাংক
ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন পরিচালক হলেন যারা